প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-১২+১৩+১৪

0
2207

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আর কখনও আপনার ব্যাপার নিয়ে গোয়েন্দাগিরি করবো না,আপনার কসম!!
সরি আর করবো না এমন,বাসায় যাবো,আন্টি আর আম্মু তো অপেক্ষা করছে তাই না??
.
হুম,যাবো তো!
.
শান্ত ক্যামেরাটা দারোয়ানের হাতে দিয়ে বললো ছবি তুলতে
.
কককককি কিসের পিক!
.
শান্ত মুচকি হেসে আহানার কোমড়ে হাত রেখে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলো
তারপর গায়ের থেকে জ্যাকেটটা খুলে দূরে সরিয়ে রেখে দারোয়ানকে বললো এমন ভাবে ছবি তুলতে যেন শান্তর মুখ না উঠে
.
আহানা চোখ বড় করে দূরে সরতে নিতে গিয়েও পারলো না কারণ শান্ত ওকে ভালো করে ধরে রেখেছে
দারোয়ান কয়েকটা ছবি তুলে দিলো তৎক্ষনাৎ
শান্ত ক্যামেরা হাতে নিয়ে হেসে বললো”পারফেক্ট!! এবার এগুলা আমি আহানার বিরুদ্ধে ইউজ করবো”
.
আহানা ছবিগুলো দেখে বললো”এটা তো আপনি!”
.
তো?কথাটা তুমি জানো আর আমি জানি,জ্যাকেট খুলসি কেন?যাতে কেউ আমাকে না চেনে
শান্ত তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে টেবিলের উপর থেকে জ্যাকেট নিয়ে বিল দিতে চলে গেলো
আহানা বোকার মতন চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে
সে এসেছিল একজনকে ফাঁসাতে আর এখন সে নিজেই ফেঁসে গেছে
এসব ভেবে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বেরিয়ে গেলো সে
ধুর!আর জীবনে এর পিছনে গোয়েন্দাগিরি করতে আসবো না আমি
এখন যদি মাকে দেখায় এই ছবিটা?না না মা তো চিনবে উনাকে,মুখ না দেখলেও বডি তো চেনা যায়,হুম!সেটাই
.
এই মেয়ে!
.
আহানা হাঁটা থামিয়ে শান্তর দিকে তাকালো
.
কই যাচ্ছো তুমি?
.
আপনার কি?
.
কথা সুন্দর মার্জিত ভাবে বলবা নাহলে ছবিটা আন্টিকে দেখায় দিব
.
মা আপনাকে দেখলেই চিনে ফেলবে মুখ না দেখলেও
.
চিনবে না দেখিও
.
শান্ত গিয়ে কারে বসলো,আহানা মুখ বাঁকিয়ে হাঁটা ধরেছে সোজা
শান্ত ওকে একবার ডাকলো ও না
আহানার সেদিকে নজর ও নাই তার মাথায় খালি ঘুরতেছে মা কি চিনবে যে এটা শান্ত,যদি না চেনে?
ক্যামেরাটা হাইজ্যাক করতে হবে নাহলে আহানা তুই মস্তবড় বিপদে পড়তে চলেছিস
.
শান্ত কার ঘুরিয়ে কিছুদূর গিয়ে থামালো আবার
আহানা দেখলো না সে এখনও ভাবতে ভাবতে হাঁটতেছে
.
শান্ত গ্লাস নামিয়ে চেঁচিয়ে বললো”এত ভাব না দেখিয়ে কারে উঠো নাহলে তোমার চুল ছিঁড়ে তারপর তোমাকে উঠাবো আমি”
.
আহানা চমকে পাশে তাকিয়ে দেখলো শান্ত রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে কারে বসে
.
আহানা কাছে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”আপনার সাথে যাব না আমি,আপনি যান ”
.
ফাইন!যেও না
কথাটা বলে শান্ত চলে গেলো
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে আবারও হেঁটে চলেছে

শান্ত বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটা চিপস হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে খাচ্ছে আর কোলে ল্যাপটপ রেখে অফিসের খুচরো কাজ করে যাচ্ছে
চিপসটা ফ্যাট ফ্রি,এখন কার যুগে এসব চিপস খাইলেও লাভ
সন্ধ্যা ৭টা বাজতে চললো,আহানার মা চিন্তিত হয়ে এসে শান্তর রুমের দরজায় নক করলো কয়েকবার
.
শান্ত বারান্দা থেকে এসে দরজা খুলতেই উনি সবার আগে জিজ্ঞেস করলেন শান্ত জানে কিনা আহানা কোথায়
আহানার ফোন অফ
.
ও,,,, তো!
শান্ত আর কিছু বললো না সোজা ঘড়ির দিকে তাকালো
৭টা ২বাজে
শান্ত দেরি না করে এক দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে কারে উঠতে যেতেই দেখলো দূর থেকে আহানাকে দেখা যাচ্ছে,কোমড়ে হাত দিয়ে টেরাবেকা হয়ে আসতেছে সে
.
এই মেয়েটা নিজে তো পেরেশানিতে পড়বে সাথে আমাদেরও ফালাবে
.
আহানা কচ্ছপের স্পীডে হেঁটে হেঁটে আসতেছে
শান্তদের বাসার গেটের কাছে এসে হাঁপিয়ে ভিতরে ঢুকতে যেতেই দেখলো শান্ত চোখ বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
.
কি?
.
তখন আমার সাথে আসলে কি হতো তোমার?তুমি জানো আন্টি কত টেনসন করতেছে?
.
আহানা কথার উত্তর না দিয়ে হেঁটে চলতেই শান্ত ওর হাত ধরে আটকিয়ে বললো”এতটা ইরেসপনসিবল কেন হও তুমি?তুমি যা চাও সেটাই হবে সবসময়?তুমি ভুলে যাও কেন যেকোনো সময় তোমার সাথে যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে!এই টুকু জ্ঞান নেই তোমার?”
.
আহানা তার হাতের দিকে তাকিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলো,শান্ত ওর হাতের দিকে চেয়ে দেখলো লম্বাটে লাল দাগ হয়ে আছে ওর হাতে
.
সত্যি করে বলো কি হয়েছিলো??
.
আপনি যেটা ভাবতেছেন সেটা হয়নি,কারোর সাহস নেই আহানার সাথে বেয়াদবি করবে,আমি আসার সময় পড়ে গেসিলাম তাই হাতে ব্যাথা পেয়েছি আর কিছু না
কথা শেষ করে আহানা চলে গেলো
.
শান্ত ও পিছন পিছন আসলো ওর
.
কিরে আহানা কই ছিলি তুই?
.
ঐ আসলে টিউশনিতে ছিলাম,আজ তাই একটু দেরি হয়ে গেলো
কোনোরকম বাহানাটা দিয়ে সে চলে গেলো রুমের দিকে,শান্ত সেখানে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে সে নিজেও রুমে ফেরত গেলো
পরেরদিন ভোর হতেই শান্ত ঘুম থেকে উঠে সবার আগে তার সূর্যমুখী বাগানটার দিকে গিয়ে একবার ভালো করে দেখে নিলো,আহানা নেই,এবার শান্তি
বাগানটা ভালোমতন দেখে এসে শান্ত আবার গিয়ে শুয়ে পড়েছে
আবার সকাল ৯টা বাজতেই শান্ত ঘুম থেকে উঠে পড়লো,রেডি হয়ে অফিসে যাবে
উঠে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে সামনে তাকিয়ে দেখলো তার রুমের সোফায় নওশাদ হাত পা ছড়িয়ে বসে বসে ফোনে গেমস খেলছে আর পাশেই বিন ব্যাগে রিয়াজ বসে কার সাথে কথা বলছে আবার মাঝে মাঝে ফোনে চুমু খাচ্ছে
.
একি রে,তোরা?এ সময়ে?কখন এলি?
.
নওশাদ ফোন থেকে মুখ তুলে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো শান্তর দিকে
তারপর সোফার একটা কুশন নিয়ে শান্তর মুখে মেরে দিলো
শান্ত কুশনটা মুখ থেকে সরিয়ে বললো”গাইস এখন এটা বলবা না যে আহানার সাথে আমার কিছু চলে”
.
হ্যাঁ অবশ্যই চলে,আমরা তো ভাবতাম আহানার সাথে তোর জাস্ট ঝগড়ার কারণে বান্দরবনে মিট হয়েছে বাট এখন তো দেখছি মেয়ে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে
মাই গড!!!
তলে তলে এতো?আর তুই আমাদের ছিঁটে ফোটাও জানালি না,শেম অন ইউ
.
যেটা ঘটেনি সেটা জানিয়ে কি হবে?
.
রিয়াজ ফোনে কথা বলা শেষ দিয়ে শান্তর দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বললো”ঘটছে তো অনেক কিছুই আর আমরা আজ জানলাম,রিয়েলি নওশাদ আমরা শান্তর কিছু হই না”
.
উফ!বললাম তো আহানার সাথে আমার কোনো রিলেশন নাই,ও জাস্ট আমার আব্বুর বেস্ট ফ্রেন্ডের মেয়ে,ব্যস!
.
হইছে হইছে আমাদের বুঝাতে হবে না
.
নওশাদ আর রিয়াজ গাল ফুলিয়ে শান্তদের ডাইনিং রুমের দিকে চলো গেলো
শান্ত কুশনটা নিয়ে এখনও বসে আছে বোকার মতো,এই বন্ধুগুলা সবসময় উল্টা পাল্টা বুঝে,আজব ব্যাপার

আন্টি আজ আসি আমরা,আপনি কিন্তু সময় করে আমাদের বাসায় আসবেন
.
শান্তর মা আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুচকি হাসলেন,উনাকে বিদায় দিয়ে আহানা আর তার মা তাদের বাসায় ফেরত আসলো
বাসায় এসেই আহানা জলদি করে তৈরি হয়ে ভার্সিটির দিকে চলে গেছে
.
শান্ত ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে এসেই দেখলো নওশাদ আর রিয়াজ আপেল খাচ্ছে আর আড় চোখে ওকে দেখছে বারবার
শান্ত ওদের পাশে বসে বললো”কি?তো তোরা কি চাস এখন?এরকম করে তাকাস কেন?”
.
আমরা কিছু চাই না,আমরা জাস্ট বুঝতেছি না তুই আমাদের সাথে আগে সব শেয়ার করতি আর এখন ইয়া বড় বড় টপিক গোপন করে যাচ্ছিস,দিস ইজ আনট্রাস্টেবল
.
সূর্য বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বললো”রিয়েলি হতাশাজনক”
.
আসেন আসেন,আপনারই বাকি ছিল,আপনিও শুরু করেন
.
তো কি করবো আমরা?যাই হোক এরকম খোঁটা দিতে আসিনি আমরা
রিয়াজের পরশুদিন আংটি বদল,তোরে তো ফোন দিলে তুই ব্যস্ত থাকোস
আজ এখানে এসে বুঝলাম কেন এত ব্যস্ততা,আচ্ছা আসিস কিন্তু
.
বিয়ের সব ঠিকঠাক তোর রিয়াজ??কার সাথে?নওমি?
.
হুম
.
হে হে শান্ত!!আহানাকে নিয়ে আসিস নাহলে কণা তোরে একা পেয়ে চিবায় চিবায় খাবে
.
ভাই তাহলে আমি আসবো না,এই কণা মেয়েটা অনেক ডেঞ্জারাস,আই মিন গায়ে পড়া স্বভাব, আমার ভালো লাগে না,রিয়াজের চক্করে মাইনকার চিপায় পড়তে হয়েছে আমাকে
আংটিবদলে সেও আসবে নাকি?
.
আরে কি কস,আমার নওমির একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড হলো কণা,কণা তো সবার আগে আসবে
.
তাহলেই হলো,আমি আমেরিকার ট্রিপে চলে যাবো তাও তোর আংটিবদলে আসবো না,ভিডিও কল দিস লাইভ দেখে নিব
.
তা হচ্ছে না,সরাসরি আসতে হবে তোকে নাহলে তোরে বাসা থেকে লোক ধরিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাব আমি
.
তুই জানিস তো কণা আমাকে কি পরিমাণ ডিস্টার্ব করে
.
তুই ছেলে হয়ে ওকে ধমক দিতে পারিস না?তোর গায়ে লাগে ওকে ধমক দিলে?
.
ধমক?কত বার ধমক দিসি তাতেও যদি ঠিক না হয় তো কি করবো আমি?
.
আহারে শান্ত মিয়া নিজে সুন্দর রুপ পাইয়াও বিপদে পড়সে
.
“যা বের হ তোরা,আমি দেখছি কি করা যায়”
শান্ত রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে কার ড্রাইভ করতে করতে ভাবতেছে কি করে রিয়াজকে বুঝাবে যে তার দ্বারা ওর engagement এ আসা পসিবল না কারণ কণা মেয়েটা ওর জন্য জাস্ট পাগল
এত পাগল যে শান্তকে একবার দেখলে আর ওর পিছু ছাড়ে না!কেমনে কি করবো,!
.
আহানা রুপার সাথে আইসক্রিম খাচ্ছে আর হাসতে হাসতে হাঁটতেছে রোডের কিনারা দিয়ে
শান্ত ভাবনার মধ্যে থেকে কার মোড়ে ঢুকালো
ঠিক তখনই কারের সাথে ধাক্কা লেগে আহানা আর একটুর জন্য এক্সিডেন্ট করতো তাও ভয়ে আর বাতাসেই দুম করে পড়ে গেছে সে
শান্তর হুস আসতেই কার থামিয়ে ফেললো সে,তারপর নেমে এদিক ওদিক তাকালো,কারোর কোনো ক্ষতি হলো না তো
আহানা নিচ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”চোখ কি আল্লাহ দেয় নাই??”
.
শান্ত আহানার কথা শুনে পিছনে তাকালো
আহানা এবার শান্তকে দেখতে পেয়ে চোখ বড় করে বললো”ও!আমার তো ভাবা উচিত ছিল এই বাঁদরামি আর কে করতে পারে,আপনি ছাড়া আর কে হতে পারে!”
.
আহানা!মেজাজ গরম করবা না আমার
.
আরে এটা শান্ত না!???ও মাই গড,!!
.
রুপা থাম আমাকে কথা বলতে দে
আপনি ইচ্ছে করে এমন করছেন তাই না??
.
এমনিতেও মেজাজ গরম আমার, মেজাজ আরও বিগড়াবা না
.
কেন কি করবেন?
.
শান্ত আর কিছু বললো না, কারে উঠে বসতেই রুপা চিল্লাইতে চিল্লাইতে বললো”শান্ত ভাইয়া প্লিস ওর কথায় কিছু মনে করবেন না,ওর মাথায় তো শুকনো গোবর ঠাসা আছে
আমার সাথে কথা বলুন না প্লিস
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”তোমাকে একটা এডভাইস দিই,তোমার বান্ধুবীকে একটু মানুষের মত মানুষ করো,এরকম ঝগড়ায় লেগে থাকলে কবে না জানি মাথা ফেটে মরে যায়
.
কথাটা শুনতে পেয়ে আহানা কাছে এসে বললো”কি বললেন আপনি?আমার মাথা ফেটে আমি মরে যাবো?
তুই মরবি দেখিস”
.
নাউজুবিল্লা! আহানা এসব কি বলিস তুই,কথার কি ছিরি তোর,কার সাথে কি বলতেছিস
.
শান্ত চলে গেছে ততক্ষণে
রুপা আহানাকে ঝাঁকিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করতেছে আহানা এরকম করে কথা বলে কেন শান্তর সাথে
আহানা কিছু না বলেই হাঁটা ধরলো উল্টো দিকে
.
শান্ত অফিস রুমে এসে বসতেই কল আসলো সূর্যের
.
হ্যাঁ বল সূর্য!
.
আমরা এখন রিয়াজের বিয়ের শপিং করতে এসেছি,আই মিন আংটি বদলের,তুই আসবি?
.
ধুর কিছু ভাল্লাগে না আমার,তোরা কর শপিং
.
তুই এখনও কণাকে নিয়ে ভাবছিস,আচ্ছা শুন এক কাজ কর কণাকে বলিস তোর engagement হয়ে গেছে তাহলেই তো হলো
.
আর ও বিশ্বাস করবে?
.
আহানাকে নিয়ে আসিস,বলিস আহানা তোর হবু বউ,তাহলেই হয়
.
আমাকে ভূতে ধরে নাই,আর আহানা রাজিও হবে না,এত বড় মিথ্যার দরকার ও নাই
.
ফাইন আসিস না পরশু, রিয়াজ তোকে কাঁচা গিলে খাবে সেদিন
কথাটা বলে সূর্য লাইন কেটে দিলো
.
শান্ত অনলাইনে একটা গিফট চুজ করে অর্ডার দিয়েছে রিয়াজের আংটিবদলের দিন দিবে ওকে
কথা হলো কণার থেকে রক্ষা পাবে কি করে,সূর্য যে বুদ্ধিটা দিলো তাতে কাজ হবে কিন্তু আমি রাজি না
আর ঐ আহানাকে এখন অফারটা দিলে ভাব দেখাবে প্রচুর,ঝগড়া শুরু করে দিবে তার উপর আমার হবু ওয়াইফের অভিনয় ও কেনোই বা করতে যাবে?
সারাদিন ধরে অফিসে থেকে শান্ত ভাবলো কি করে কি করবে
সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসায় ফিরতেই দেখলো নিতুর রুমে আহানা নিতুকে পড়াচ্ছে
শান্ত রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে বসে খাবার খেতে খেতে ভাবলো কণার জ্বালানো থেকে আহানার সাথে ঝগড়া করবো সেটাই বরং ভালো হবে
শান্ত খাওয়া শেষ করে সোফায় বসে আহানাকে ডাক দিলো
আহানা শুনেও না শুনার ভান করে নিতুকে পড়াচ্ছে
.
আপু!ভাইয়া তোমাকে ৩বার ডাকছে এই নিয়ে
.
হুম শুনলাম,, তুমি পড়ো,আমি এখন ব্যস্ত তাই যাবো না
.
শান্ত তো নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করার সব চেষ্টা করছে এরকম ভাবওয়ালি মেয়ে সে আর দুটো দেখেনি
এক দেখেছে ছেঁসড়া কণাকে আর এক দেখতেছে এই আহানাকে,যে ভাবের ফ্যাক্টরি খুলে বসে আছে
মেয়েরা শান্তর জন্য পাগল হয়ে যায় আর এই মেয়েকে দেখো ঘুরেও তাকায় না
.
এই মেয়ে!!!
.
আহানা নিতুকে বাংলা প্রতিশব্দের কয়েকটা উদাহরণ লিখতে দিয়ে উঠে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”কি সমস্যা?গরুর মত ডাকতেছেন কেন?”
.
আমি গরু??
.
হুম
.
তাইলে তুমি গাভী!
.
আমি গাভী?কি বললেন আপনি?আমাকে এত বড় কথা বলে অপমান করতে পারলেন??
.
আমাকে যে গরু বললা?সেটা অপমান হলো না
.
গরু তো ঠিক আছে,গাভী কিরকম শুনায়
আপনি নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে দেখেন একবার,ছিঃ ছিঃ আমার ইজ্জত একটুও রাখলো না
.
শান্ত গালে হাতে দিয়ে ভাবতে লাগলো”যে গাভীই তো বললো জাস্ট তাই বলে এমন সিনক্রিয়েট করার কি আছে,এটা বুঝি অপমান হলো!
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানার রাগ বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে
হাতের কাছে যা পাবে তাই ছুঁড়ে মারবে আর এক লেভেল পার হয়ে গেলেই
কথা হলো শান্তকে মেরে নিজের মার খাওয়ার শখ নেই বলেই আহানা ঠাণ্ডা হয়ে বললো “কিসের জন্য ডেকেছেন সেটা বলেন”
.
আসো না আমার পাশে বসো
.
আহানা তো মনে হয় আকাশ থেকে দুম করে মাটিতে এসে পড়েছে
কান কি ঠিক আছে ওর??ভুল শুনলো?নাকি স্বপ্ন দেখছে সে
সয়ং শান্ত কিনা ওকে পাশে বসতে বলছে
আঙ্গুল দিয়ে কান গুতিয়ে তারপর চোখ ডলে আবারও তাকালো সে
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে আহানার কাণ্ডকারখানা দেখে যাচ্ছে,শেষে হালকা করে নিশ্বাস ফেলে বললো”সত্যি সত্যি বসতে বললাম,এত ঢং করার কিছু নাই”
.
আহানার কেন জানি সন্দেহ সন্দেহ হচ্ছে,যার কারণে সে শান্ত থেকে সব চেয়ে দূরে যে সোফার সিট আছে,সেখানে গিয়ে বসে পড়েছে
.
শান্ত ওর দিকে ফিরে বললো”কাল বাদে পরশুদিন আমার সব চাইতে প্রিয় বন্ধু রিয়াজের আংটিবদল
তো আমি সেখানে যেতে চাই
.
তো যান,আমি কি ধরে রাখছি নাকি
.
পুরো কথা তো শুনবা!
সেখানে রিয়াজের যার সাথে বিয়ে হবে আই মিন নওমি সেই নওমির একটা বেস্টফ্রেন্ড আছে নাম হলো কণা,কণা আমাকে অনেক ডিস্টার্ব করে
.
আচ্ছা তাহলে সে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলে
.
শান্তর মাথা চরগ গাছ,উঠে এসে দুহাত দিয়ে আহানার গলা টিপে ধরে ওকে সোফার সাথে লাগিয়ে ধরতে মন চাচ্ছে কিন্তু না,নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো
শান্ত দুহাতের আঙ্গুল ঘুরাতে ঘুরাতে বললো”তোমার থেকে আমার একটা হেল্প লাগবে”
.
কি?
.
তুমি আমার সাথে পরশুদিন যাবে অনুষ্ঠানে
.
কি জন্যে?আমার আর কাজ নেই?পরশুদিন আমার ভার্সিটিতে যেতে হবে,পারবো না আমি হুহ!তার উপর বিকাল থেকে টিউশনি
.
হইছে?আর কিছু আছে?
.
আবার ৬-৭টা নিতুকে পড়ানোর পর আর কোনো কাজ নেই
.
বেরি গুড,আংটিবদল সন্ধাতেই হবে,তুমি তাহলে যাচ্ছো আমার সাথে
.
না যাবো না আমি,কেন যাবো?
আপনার মতো ঝগড়ুটে একটা লোকের সাথে আমি কেন যাবো?
.
কেন যাবে?আচ্ছা ভাবতে দাও,হুম ভাবলাম,তোমার আর আমার তোলা ছবিটা মনে হয় এবার প্রয়োগ করার সময় এসে গেছে
.
আহানা ঢোক গিলে উঠে দাঁড়িয়ে চুপচাপ শান্তর মায়ের রুমের দিকে ছুটলো,রুমের মাঝখানে এসে বকবকবক করে শান্তর নামে এক গাদা নালিশ করলো সে
তারপরেও শান্তর মায়ের কোনো সাড়া না পেয়ে এগিয়ে এসে দেখলো শান্তর মা হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছেন
আহানা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে পিছন ফিরতেই দেখলো শান্ত ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে ঘুরাচ্ছে
.
দেখুন আপনাকে আমি ভয় পাই না,এই ছবি দেখে মা চিনে যাবে এটা আপনি
.
ওকে তাহলে চলো,সামনা সামনি আন্টিকে দেখাই ছবিটা তারপর দেখি উনি কি বলেন
.
আহানা নিতুর রুম থেকে ব্যাগটা নিয়ে চলে যেতে যেতে বললো”আমার বয়ে গেছে আপনার হেল্প করার!”
.
বাসা থেকে বেরিয়ে আহানা রিকসা নিলো না
হেঁটেই চললো,ভাড়া যেটা আছে সেটা দিয়ে কাল ভার্সিটিতে যাবে,কোনোমতে বাসায় পৌঁছে গেলো সে তখন ৭টা ২৩বাজে,হাঁপাতে হাঁপাতে এক গ্লাস পানি খেয়ে হাতের ব্যাগটা বিছানায় রেখে বসলো সে
মা মুড়ি আর বিসকিট আনতে আনতে বললেন”তোর কি কোনো ছেলেকে পছন্দ?”
.
আহানা ভূত দেখার মত মুখ করে মায়ের দিকে চেয়ে আছে,তারপর থতমত খেয়ে বললো”কই না তো”
.
তাহলে শান্ত যে বললো তোকে নাকি কোন ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে দেখেছে,ছবি নিয়েও কি সব বলছিলো
.
(শান্ত হারামি,তোরে আমি কেটে টুকরো টুকরো করে পাটায় বেটে কিমা বানাবো)ওহ,উনি তো আন্দাজেও কথা বলেন
.
শুন আহানা এসব নিয়ে তোকে বলি একটা কথা এতদিন আমি ভাবতাম হয়ত শান্ত আর তা মাকে কখনও খুঁজে পাবো না
তাই আশা করতাম তোর জন্য যেন একটা ভালো ছেলে পাই কিন্তু যখন শান্তকে পেয়েই গেছি তো আমি নিশ্চিন্ত
বিয়ে হলে তোর শান্তর সাথেই হবে তাই অন্য কারোর সাথে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হইস না কেমন?
.
এসব কি বলো তুমি?আমি?তাও বিয়ে করবো ঐ ঝগড়ুটে টারে?
দরকার হলে বিয়ের দিন পালাবো তাও ওরে বিয়ে করে জীবন নষ্ট করবো না,সারাদিন খালি ঝগড়াই করে
.
আহানা মুড়ির বাটি নিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসলো
মা কাছে এসে আহানার সামনে বসে বললেন”শান্ত কিসের ছবির কথা বলতেছিলো রে?তুই কি সত্যি সত্যি প্রেম টেম করতেছিস?
এটা কিন্তু ঠিক না আহানা,আমরা দুই পরিবার মিলে ঠিক করেছিলাম তোদের বিয়ে দিব আর তুই কিনা বাড়া ভাতে ছাই দিতে চাচ্ছিস!
.
মা শুনো আমি ঐ শান্তকে বিয়ে করবো না ব্যস,শুনে রাখো কথাটা,এখন ভাত দাও ভাত খাবো,মুড়িতে পেট ভরে নাই আমার
.
মা রান্নাঘর থেকে আলুর ভর্তা আর খালি ভাত এনে দিলো
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”আর কিছু নাই?”
.
আর কি পোলাও থাকবে?মাসের কয় তারিখ খবর আছে তোর??এই আলু টাও আমি পাশের বাড়ি থেকে ধার করে এনেছি
বলেছিলিস না চাকরি খুঁজবি,টিউশনির টাকাতে তো চলে না আর
.
ক্যান তোমার শান্ত না বললো তোমার সব ফেরত দিয়ে দিব
.
সেটা যেদিন ফেরত দিবে সেদিন,বললেই তো আনা যায় না
কত বড় ব্যাপার,তুই বরং চাকরি খোঁজা শুরু কর
.
শুনো মা,আইএ পাসের সার্টিফিকেট দিয়া এই জামানায় কোনো চাকরি পাওয়া যায় না,তাও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি
.
হুম,সামান্য বেতনের হলেও হবে
.
আহানা আলুর ভর্তা দিয়ে কোনো রকম ভাত খেয়ে শুয়ে পড়লো
পরেরদিন ভোর হতেই আম পাতা হাতে করে সে হাঁটা ধরেছে
মা পাতিল সব নিয়ে পুকুর ঘাটের দিকে যাচ্ছেন,এগুলো মেজে তারপর ভাত বসাবে,এতদিন শান্তদের বাসায় থাকায় এগুলো মাজা হয়নি
আহানা ভাত খেয়ে তারপর ভার্সিটিতে যাবে
আহানা এখন হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে হঠাৎ ওর মনে হলো সে শান্তকে দেখেছে
শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে গলির ভিতরের দিকে যাচ্ছে,নিশ্চয় আমাদের বাসায় যাচ্ছে?কিন্তু কেন?
আহানা তড়িগড়ি করে হাতের আমপাতা ফেলে দৌড় দিয়ে শান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
.
শান্ত পকেট থেকে হাত উঠিয়ে সেটা গুটিয়ে নিয়ে বললো”লাস্ট টাইম বলতেসি আমার সাথে কাল রিয়াজের আংটিবদলে যেতে রাজি হও নাহলে এখন পিকটা আমি আন্টিকে দেখাতে যাচ্ছি
.
হুম দেখান,আমার মা আপনাকে ঠিকই চিনে ফেলবে
.
শান্ত আহানার কথাটা তাচ্ছিল্য করে হেঁটে চললো
আহানা ঢোক গিলে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সেও আসতেছে
আহানার মা পাতিল সব মেজে হাতে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেছিলেন তখনই শান্তকে দেখে থেমে গেলেন তিনি
তারপর মুচকি হেসে বললেন”কখন এলে বাবা”?
.
শান্ত গম্ভীর গলায় বললো”আন্টি আপনাকে আমি বলেছিলাম না আহানাকে দেখে শুনে রাখবেন,এখন দেখেন আহানা একটা ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে গেছে ছবিও তুলেছে
.
মা চোখ বড় করে এগিয়ে এসে ছবিটা দেখতে চাইলেন
শান্ত ক্যামেরা থেকে ছবি তার ফোনে নিয়ে এসেছিল,ছবিটা বের করে দেখালো সে আহানার মাকে
.
মা বিশ্বাস করো এটা উনি,আমাকে ফাঁসাচ্ছে
.
কি বলিস এসব,এটা তো দেখি অন্য ছেলে
.
আহানা মনে হয় শক খেয়েছে এরকম অবস্থা
এগিয়ে এসে বললো”না মা এটা উনি,ভালো করে দেখো”
.
শান্ত না এটা,দেখ গায়ে অন্য জামা,এরকম তো শান্তকে কখনও বের হতে দেখিনি,ও তো সবসময় জ্যাকেট পরে বের হয়
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে আহানার দিকে
মা আহানার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে শান্তকে বললেন”ভিতরে আসো বাবা,আর তুই ও আয়,বেয়াদব!
.
আহানা মাকে বুঝাতে এক কদম ফেলতেই শান্ত ওকে আটকে ফেললো
.
আর কি চান আপনি?
.
তুমি রাজি হয়ে যাও তাহলে বলবো ছবির ছেলেটা আমি
.
আহানা কিছুক্ষন চুপ হয়ে থেকে ভেবেচিন্তে বললো”ঠিক আছে”
.
তাহলে কাল অনুষ্ঠান শেষ হলেই আমি আন্টিকে বলবো ছেলেটা আমি
.
আপনাকে বিশ্বাস করি না আমি,এখন বলতে হবে,নাহলে অনুষ্ঠান শেষ হলে বলবেন ছেলেটা অন্য কেউ
.
আমি যদি এখন বলি ছেলেটা আমি তাহলে তুমি যে কাল আমার সাথে আংটিবদলে যাবা তার গ্যারান্টি কি?
.
😒আমি জানি না আমার মাথা ঘুরাচ্ছে
আপনি ভাবুন,আমিও আপনাকে বিশ্বাস করতে পারছি না আর আপনিও আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না
.
আন্টি!
.
হ্যাঁ বাবা বলো
.
আন্টি আমি এই ছেলেটার খোঁজ বের করছি আপনি আহানাকে কিছু বলবেন না কেমন?
.
আহানা মনে মনে শান্তকে গালি দিয়েই যাচ্ছে,মা ওকে এক ধমক দিয়ে বললেন চা বসাতে
শান্ত মানা করে বললো তার কাজ আছে সে এখন চলে যাবে
এটা বলে সে চলে গেলো
আহানা ভয়ে মায়ের দিকেও তাকাচ্ছে না,মুখটা কোনোমতে ধুয়ে বাচ্চাদের পড়াতে চলে গেলো সে
২৪টা বাচ্চার একটা ছোট্ট স্কুল চালায় আহানা,সবাই ১০০করে দেয় মাসে,তারাও গরীব,এর চেয়ে বেশি দেওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের
তো এখন আহানা তাদের পড়াচ্ছে মনোযোগ দিয়ে
এর মধ্যে ঘটে গেলো বিপত্তি
রতন তার কিছু দলবল নিয়ে এসে বাচ্চাদের সাথে বসে পড়েছে
আহানা চোখ রাঙিয়ে ওদের বললো এখান থেকে চলে যেতে
রতন হেসে হেসে বললো”জায়গা কি তোমার বাপের নাকি? আমার মন চাইছে বসছি,কি করবা?”
.
আহানা বাচ্চাদের ছুটি দিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে হেঁটে চলতেই রতন ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে দেখতে বললো”কতদিন ছুটি দিয়ে দিবা,আমি তো প্রতিদিন আসবো জানেমান”
.
আহানা আর কিছু বললো না,বললেই তিল থেকে তাল হয়ে যাবে তাই সে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো,বাসায় এসে ব্যাগ ছুঁড়ে মারলো বিছানায়
মা ভাত বাড়তে বাড়তে বললেন”আবারও রতন জ্বালিয়েছে?”
মা ভালো করেই জানেন রতনই সবসময় এমন এমন কাজ করে যাতে আহানার মেজাজ বিগড়ে তারপর সে বাসায় ফিরে
.
আহানা মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে বললো”আর কতো??আর কতো সহ্য করবো আমি?”

তাই তো বলছি চাকরি একটা খোঁজ তাহলে আর তোকে দিনে বেশি দেখবে না, জ্বালাবেও কম
.
হুম তাই তো মনে হয় করতে হবে
.
আহানা আজ আর ভার্সিটিতে গেলো না,সারাদিন টইটই করে চাকরি খুঁজে গেলো,কিন্তু তার যোগ্যতা দিয়ে কোনো চাকরি পাচ্ছে না সে
যদি ইন্টারমিডিয়েটে এ+ পেতো তাও হতো আর তার তো গ্রেট ছিল এ গ্রেট যার কারণে চাকরির ধারের কাছেও নেই সে
মন খারাপ করে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল সে হঠাৎ মনে হলো শান্তর অফিসে যাবে,যদি চাকরি পায়?কিন্তু শান্ত তো ওকে দেখলেই শুরু করবে খোঁচানো,কি করা যায়!
আর সেদিন শান্তকে ফোনে কথা বলতে শুনেছিল তাদের নাকি একটা সহকারী এসিস্টেন্ট লাগবে যে ক্লাইন্টদের সাথে সব মিটিং এটেন্ড করবে সহকারী হিসেবে
আমি যদি ছদ্দবেশেও যাই তাও তো আওয়াজ শুনে চিনে ফেলবে,ধুর,এই আশাও গেলো
.
আচ্ছা এক কাজ করলে হয় না?অফিসে কে চাকরি তে ঢুকলো তার ইন্টার্ভিউ তো আর শান্ত নিবে না,তাহলেই তো হয় কেউ চিনবে না আমাকে,জলদি করে বোরকা একটার ব্যবস্থা করে নিতে হবে
আহানা দৌড়ে বাসায় ফিরে গেলো,খুঁজে খুঁজে একটা কালো বোরকা পেলো সে,ইন্টারে পড়ার সময় রতন অতিরিক্ত জ্বালাতো বলে আহানা এই বোরকা পরে বের হতো সবসময়
তো যেমন ভাবা তেমন কাজ! বোরকা পরে সে “Shanti’s Group of industry ” এর সামনে এসে হাজির
গুনে গুনে ১২তলার একটা দালান
আহানা দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো মেইন ফ্লোর কোনটা উনি বললেন শান্ত যে ফ্লোরে থাকে সেটা হলো ৯তলায়
আহানা তাই হিজাব ঠিক করে লিফটে গিয়ে দাঁড়াতেই ৪৪০ভোল্টের একটা শক খেলো
ওর পাশেই শান্ত আর তার পিএ ঊষা দাঁড়িয়ে কথা বলতেছে
আহানার মন চাচ্ছে লিফট থেকে লাফ দিয়ে মরে যেতে
শান্ত ফোনের দিকে তাকিয়ে ঊষাকে বলছে”আজ সে ৬টার আগেই বাড়ি ফিরে যাবে
কথাটা বলে সে আহানার দিকে তাকালো,পরনে কুচকুচে কালো বোরকা,ইয়া বড় হিজাব,মুখ তো দূরে থাক চোখ ও দেখা যাচ্ছে না
শান্ত চোখ নামিয়ে ফোন কানে ধরে বেরিয়ে গেলো লিফট থেকে
আহানাও বের হয়ে গেলো ওদের সাথে,ঊষা অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে আহানা ওদের পিছু পিছু আসতেছে
ঊষা থেমে গিয়ে আহানাকে বললো”কিছু লাগবে আপনার?”
.
আহানা হালকা কেশে গলা মোটা করার চেষ্টা করে বললো”আমি আসলে ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং এটেন্ড করতে যে এসিস্টেন্ট খুঁজতেছিলেন আপনারা আমি সেটার ইন্টার্ভিউ দিতে এসেছি
.
ওহ তাহলে সোজা গিয়ে ডান পাশের কেবিনে সিরিয়ালে বসুন,আমি আসতেছি
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে ছুটলো সেদিকে,শান্ত চলে গেছে তার অফিস রুমের দিকে
ঊষা শান্তকে কফি দিয়ে এসে ইন্টার্ভিউ নিতে এসেছে
একটা চেয়ার টেনে বসে বললো”মিনিমাম বিএ পাস হতে হবে এবং ইংরেজীতে দক্ষ হতে হবে আর কথা মার্জিত হতে হবে,যারা যারা এসব কিছুর যোগ্য তারা যেন এক এক করে আসে
আহানা থ হয়ে বসে আছে,একে তো সে বিএ পাস না আরেকেতো ইংরেজী বলায় মোটামুটি বলতে পারবে সমস্যা না,ছোট থেকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছে সে,বাবা যখন মারা যায় তখন সে ক্লাস নাইনে পড়তো তার পর থেকে সে বাংলা মিডিয়ামে পড়েছে কারণ মায়ের কাছে এত টাকা ছিল না যে ইংলিশ মিডিয়ামের ফিস জোগাড় করবে
তাই বলতে গেলে ইংরেজীতে ভালোই পারদর্শী আহানা
কথা হলো বিএ পাস নিয়ে
আহানা মুখের পর্দা উঠিয়ে ঊষার কাছে এসে ভ্যাত করে কেঁদে দিলো
বললো”আমার সব ঠিক তবে বিএ পাস ঠিক নেই,আমি আইএ পাস আর অনার্সের ছাত্রী,প্লিস আমাকে চাকরিটা দেন😭
.
আরে আরে মঘেরমুলুক নাকি,এমন করে চাকরি পাওয়া যায় না,আপনি প্লিস যান
.
না প্লিস আমাকে চাকরিটা দেন,আমার ৩টা বাচ্চা না খাইয়া আছে😂😭
.
কিহ!এ বয়সে ৩টা বাচ্চা?আপনি প্লিস অন্য কোথাও দেখুন
.
অন্য কোথাও যাবো কি করে আমি??
এই কোম্পানির অনেক নাম ডাক শুনেছি,আপনারা নাকি যোগ্যতা দেখে চাকরি দেন
তো আমার তো খালি আই আর বিএ এর মধ্যে তফাৎ
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহা আপনি বুঝতেছেন না,এভাবে চাকরি পাওয়া যায় না
এখন আপনাকে চাকরি দিলে অন্যদের সাথে বেইমানি করা হবে
আপনি প্লিস অন্য কোথাও ট্রাই করুন,আমাদের সময় নষ্ট করবেন না
.
প্লিস!!!রিকুয়েস্টটা রাখুন আমার
.
এক মিনিট স্যার ফোন দিয়েছে
হ্যালো স্যার!!
.
কি সমস্যা?এত চেঁচামেচি শুনা যাচ্ছে কেন?কি হয়েছে?
.
স্যার একটা মেয়ে এসে চাকরির জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে
মানতেই চাচ্ছে না
তার নাকি ৩টা বাচ্চা না খেয়ে আছে
.
উনার যোগ্যতা কতদূর?
.
স্যার সব ঠিকঠাক তবে আইএ পাস
বিএ পাস না
.
ইংলিশে কথা বলতে বলো,দেখো কত স্পীডে বলতে পারে তারপর নাও
.
ওকে স্যার
.
আহানা চোরের মতন ঊষার মুখের দিকে চেয়ে আছে,শয়তানটা কি বলছে কে জানে
ঊষা ফোন রেখে আহানাকে বললো ইংরেজীতে নিজের পরিচয় দিতে
আহানা বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে ফটরফটর করে ইংরেজীতে নিজের পরিচয় দিতে থাকলো
My name is Suhana Yasmin, I am married, I have two children, my husband has left me
.
এক মিনিট,তোমার সার্টিফিকেটে লেখা আহানা,তাহলে নাম সুহানা হলো কেমনে?
.
ইয়ে আসলে সার্টিফিকেটে সুহানার জায়গায় আহানা লিখে ফেলেছে কম্পিউটারের লোকটা,পরে ঠিক করতে ৫০০টাকা চাইছিলো বলে ঠিক করাইনি,আপনারা আমাকে সুহানা ডাকিয়েন
.
ওকে ডান,তোমার কথা আমার ভালো লাগছে,তোমার চাকরি কনফার্ম
.
থ্যাংক ইউ সো মাচ!!
.
এক মিনিট ম্যাম,তাহলে আমরা কি দোষ করলাম?আমাদের ও তো ফ্যামিলি আছে,আমরাও ইংরেজীতে পারদর্শী
.
আহানা ব্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে চেয়ে বললো”তো?তোমার কি আমার মত ৩টা বাচ্চা আছে?তোমারেও কি তোমার বউ ছাইড়া দিসে?আজব সাজব কথা কয়
.
ছেলেটা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো
.
ওকে সুহানা,তুমি এখন চলো স্যারের সাথে কথা বলবে
.
আহানার কাশি উঠে গেলো ঊষার কথা শুনে
কাশতে কাশতে বললো”আমার না ভয় করে,আমি আসলে…
.
আরে কিছু হবে না,আর চাকরি এটাতে তো তোমাকে সারাক্ষণ স্যারের সাথে এদিক ওদিক যেতে হবে,স্যারের তো ক্লাইন্ট পার্টনার তুমি এখন থেকে
.
আহানা কথাটা শুনে দেয়ালের সাথে লেগে গেছে
কি বলতেছে এই মেয়েটা!আমি তো ভেবেছিলাম একা আমি গিয়ে ক্লাইন্ট সামলাবো,এখন দেখি আমার সাথে উনিও যাবেন
একেই বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়
.
কি হলো চলো!
.
ঊষা আহানার হাত মুঠো করে ধরে হেঁটে চলেছে
আহানা কি করবে!! কি করে পরিস্থিতি সামলাবে সেটার মারপ্যাঁচ বের করছে
ঊষা করিডোর পেরিয়ে সবার শেষের একটা বিরাট অফিস রুম আছে সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো,দরজায় নক ৪বার করে বললো “স্যার আসবো?”
.
শান্ত ল্যাপটপ থেকে চোখ উঠিয়ে বললো আসতে
.
ঊষা ভিতরে ঢুকে বললো “স্যার ঐ ক্লাইন্ট মিটিং এটেন্ড করার জন্য আপনার নিউ পার্টনার কে এনেছি,ওকে কি ডাকবো?”
.
হ্যাঁ ডাকো
.
সুহানা!
.
শান্ত চমকে দরজার দিকে তাকালো
সুহানা??নামটা ওকে মনে হয় গলা ধরে বলতেছে সুহানা না এটা হবে আহানা
শান্ত থ হয়ে দরজার দিকে চেয়েই আছে
আহানা পা টিপে টিপে ভিতরে ঢুকলো,সে একটা কথা ভালো করে ঠিক করে নিয়েছে আর সেটা হলো মুখ খুলবে না,মুখ খুললেই শান্ত ওকে চিনে ফেলবে,কোনো কথা বলবে না
.
শান্ত ব্রু নাচিয়ে বললো”বোরকা??
.
ঊষা আহানাকে খোঁচা দিয়ে বললো মুখ থেকে পর্দা সরাতে
আহানা মাথা নাড়িয়ে “না” জানালো
.
শান্ত আবার ল্যাপটপে মনে দিয়ে বললো”ঊষা ২কাপ কফি নিয়ে আসো,একটাতে চিনি বেশি আরেকটা উইথ আউট সুগার
.
ওকে স্যার
.
আহানা ঢোক গিলে রোবটের মত রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে,দোয়াদরুদ সব পড়া শেষ তার
.
ঊষা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই শান্ত চোখ তুলে তাকালো আহানার দিকে
শান্তর এই চাহনি দেখে আহানা মনে হয় এখনই মরে যাবে
শান্ত তার চেয়ার থেকে উঠে এগিয়ে আসতেছে এদিকে
আহানা ভয়ে এদিক ওদিক তাকালো তারপর ভাবলো নাহ এমনি হয়ত কথা বলার জন্য আসতেছে এদিকে
.
শান্ত সোজা গিয়ে দরজাটা লক করে ফেললো
এটা দেখে আহানার ভয় এবার চরম শিখরে
.
শান্ত আহানার একদম কাছে এসে দাঁড়ালো এবার
আহানা কাঁপতে কাঁপতে চেয়ার একটা টেনে বসে পড়েছে ততক্ষণে
শান্ত মুচকি হেসে টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো
তারপর টাই টানতে টানতে বললো”কি ব্যাপার আহানা সরি সরি সুহানা ম্যাডাম!!আমাকে এত ভয় পেলে চলে?আমার সাথেই তো আপনার এখন থেকে সব মিটিং এটেন্ড করতে যেতে হবে”
.
আহানা মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে আছে,শেষমেষ ধরা খেয়েই গেলো,কথা হলো গিয়ে চিনলো কি করে
.
শান্ত আহানার মাথার থেকে হিজাবটা টান দিয়ে উঠিয়ে বললো”তোমাকে চিনতে আমার কোনো সার্টিফিকেট লাগবে না বুঝছো?তোমাকে আমি হারে হারে চিনি!!
এ কদিনে তোমার গায়ের ঘ্রান তোমার হাঁটা চলা,এবং মোস্ট ইমপরট্যান্ট থিংক তা হলো তোমার পায়ের বড় তিলটা ওটা দেখেই আমি সিউর হলাম এটা সুহানা নয় আহানা
.
আহানা এখনও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে
.
আগে বলো এরকম বেশে আসছো কেন?কি হইছে?এত নাটকের মানে টা কি?
.
আহানা ব্রু কুঁচকে উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”চাকরির দরকার কিন্তু কোথাও পাচ্ছিলাম না বলে এখানে এসেছি,আপনি তো আমাকে দেখলেই খোঁচাতেন তাই এমন বেশে আসছি আর দেখেন সেই খোঁচাচ্ছেনই
.
চাকরি দরকার মানে?কি করবা টাকা দিয়ে?
.
সংসার কি আপনি চালান?আমি একা চালাই,টাকা দিয়ে কি করবো?
নুন আনতে পান্তা পুরোয় আর আপনি বলতেছেন কি করবো?
এতদিন পর আপনার পরিবারের সাথে আমাদের দেখা হয়েছে,আমাদের অবস্থা সম্পর্কে সবটা জেনেও আপনি কোন মুখে জিজ্ঞেস করেন যে টাকা দিয়ে কি করবো?
নাচবো,খুশি?
.
আমি জাস্ট জিজ্ঞেস করেছি,তাই বলে এত হাইপার হচ্ছো কেন?
তোমার চাকরি করতে হবে না,তোমাদের সংসার আমি চালাবো
.
ঢং করার দরকার নাই,আপনার হেল্পের কোনো দরকার নাই আমাদের,আমি এই চাকরিটাও করবো না

কি ব্যাপার ভিতর থেকে দরজা লক কেন?
স্যার!!!কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
.
আহানা ঊষার কথা শুনতে পেয়ে টেবিলের উপর থেকে হিজাবটা নিয়ে পরতে পরতে দরজা খুলে বেরিয়ে চলো গেলো
ঊষা চিন্তিত হয়ে ভিতরে ঢুকে বললো”কি হয়েছে স্যার?”
.
কিছু না,জাস্ট ফর গেট ইট!
.
আহানা যেতে যেতে পথেই কেঁদে দিলো
এই লোকটার কাছে আমরা ভালো আছি নাকি খারাপ আছি সে ব্যাপারে কোনো কিছু যায় আসে না,টাকা দিয়ে কি করবো মানে?কি করে এটা বললো আমাকে!আমাদের অবস্থা কি দেখে না?
না খেয়ে মরবো তাও এই অফিসে আমি চাকরি করবো না বেয়াদব একটা!!
শুধু শুধু সময় নষ্ট করছে আমার
.
আহানা বাসায় ফিরতেই দেখলো মা দরজা খুলে ওর জন্য দাঁড়িয়ে আছে আগে থেকেই
আহানা কিছু না বলেই ভেতরে চলে গেলো
.
কিরে?চাকরি পেলি?
.
চাকরি তো আর হাতের মোয়া না যে পেয়ে যাবো আর তোমার ঐ শান্ত!!বললো আমার আবার টাকার কিসের দরকার,টাকা দিয়ে কি করবো এসব বললো আমাকে
.
শান্ত?ওকে পেলি কই?আর ও এসব বললো মানে?
.
বাদ দাও,কেমন পরিবারের ছেলে উনি?আমাদের অবস্থা তো নিজের চোখে দেখেছে তাও বলে আমার টাকা কেন দরকার,কেন চাকরি খুঁজতেছি এসব বললো আমায়
.
আরে হ্যাঁ আমার তো মাথায় আসেনি,তুই তো শান্তর অফিসেই কাজ করতে পারিস
.
তোমার মাথা ঠিক আছে?এত অপমানিত হয়ে এলাম আর তুমি বলতেছো ঐ হারামির অফিসে আমি চাকরি করবো?মরে গেলেও না
না খেয়ে থাকবো এখন থেকে
.
শুন,মজা করিস না,হাতের কাছে সুযোগ আর তুই জেদ ধরে বসে আসিস,জীবনে নিজের জেদ নিয়ে বসে থাকলে উপরে উঠা যায় না আহানা
তুই আবার যা শান্তর অফিসে,ও তোকে ভালো চাকরি দিয়ে দিবে,তাতে আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে কিছুটা হলেও
.
না আমি যাব না
.
তুই রতনের ভয়ে সকালে বাচ্চাদের পড়াতে পারবি না বিকালে টিউশনি করাতে পারবি না তারমানে তুই চাস আমি না খেয়ে মরি?এতদিন নিজে খেটে আমি তোকে খাইয়েছি আর বুড়ো বয়সে এসে তুই আমাকে এই দিন দেখাবি এটা জানলে আমি কত আগেই তোর বাবার সাথেই মরে যেতাম
.
মা প্লিস!থামো
আচ্ছা ঠিক আছে,আমি যাচ্ছি,তুমি যা চাও তাই হবে,ঐ শান্তর পা ধরে বসে থাকবো তাতে যদি তুমি খুশি থাকো তো ভালো
কথা শেষ করে আহানা বোরকা খুলে ওড়না হাতে নিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো
সন্ধ্যা ৬টা বেজে এসেছে,, শান্ত অফিস রুম থেকে বের হতেই দেখলো আহানা আসতেছে তেড়ে
.
শান্ত হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”আবার কি?তোমার সাথে তো এখন আর কথাই বলতে ইচ্ছে করে না আমার, যাই বলি তা নিয়েই শুরু করে দাও”
.
শুনুন,আমার যথেষ্ট আত্নসম্মান আছে কিন্তু মায়ের ভরণপোষনের জন্য বাধ্য হয়ে আমাকে সেই আপনার অফিসেই আসতে হলো
তাই বলে এই নয় যে আপনি আমাকে যা তা বলে কথা শুনাবেন,ভুলে যাবেন না আমি আপনার কে হই সম্পর্কে
.
তুমি আমার কিছু হও না,তোমার বাবা আমার বাবার বেস্টফ্রেন্ড এই সূত্র ছাড়া আর কিছু না
.
চাকরি দিবেন নাকি চলে গিয়ে মাকে বলতাম তার সো কলড শান্ত আমাকে চাকরি দেয়নি
.
এক শর্তে দিব
.
কি?
.
আমার সব কথা শুনতে হবে
.
আমি এখনই মা কে ফোন করে বলতেছি যে আপনি চাকরি দেওয়ার নাম করে আমাকে কিসব শর্ত দিচ্ছেন
.
তুমি কেন?আমি ফোন করছি
শান্ত ফোন বের করে আহানার মাকে কল করলো
মা ফোন ধরতেই শান্ত বললো”সে আহানাকে জাস্ট বলেছে অফিসের কাজে আহানা যেন তার কথা শুনে কিন্তু না আহানা আবারও রাগ দেখাচ্ছে, চাকরি করবে না বলতেছে
.
আহানা চোখ বড় করে বললো”এসব কি উল্টা পাল্টা বলে আমার মায়ের মাথা খাচ্ছেন আপনি??”
.
মা শান্তকে বললো ফোন আহানাকে দিতে
আহানা ফোনটা নিয়ে কানে ধরতেই মা কেঁদে কেঁদে বললেন”তোর জায়গায় আমার একটা ছেলে থাকলে আজ চাকরি করে আমাকে খাওয়াইতো আর তুই এইটুকু পারতেছিস না আমার জন্য
.
এসব কি বলতেসো তুমি?২বছর ধরে আমি সংসার চালাচ্ছি আর তুমি আমাকে এখন খোঁটা দিচ্ছো?
.
মা লাইন কেটে দিলেন আর কিছু বললেন না
আহানা রেগে শান্তর ফোন ওর গায়ে ছুঁড়ে মারলো
.
আউচ!
বসকে কেউ এমন করে মারে?একদম চাকরি খাবো তোমার
.
বিশ্বাস করেন আপনার মতো ফালতু লোক আমি আর দুটো দেখিনি
.
তো দেখো এখন,সূবর্ণ সুযোগ
.
আহানা রেগে মেগে চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়লো
শান্ত ঊষাকে ডেকে বললো আহানাকে অফিসের ফর্মটা দিয়ে যেতে আহানা সেটা ফিল আপ করবে
.
আহানা মাথার চুল টানতেছে আবার গলা ঘষতেছে,
সারাদিনে কিছুই খয়নি সে,পাগলের মত চাকরি খুঁজে গেছে এখন শরীর খারাপ করছে,গলা জ্বলতেছে
.
আহানা ফর্ম হাতে নিয়ে টেবিলে মাথা রেখে পূরন করতেছে
শান্ত দূরে চেয়ার টেনে বসে পায়ের উপর পা তুলে একটা কর্মচারীকে ডেকে বললো একটা বার্গার আর চা আনতে
.
আহানার সামনে এনে কর্মচারী বার্গার আর চা রাখলো
শান্ত দূর থেকে বললো”ভেবো না তোমার প্রতি আমার মায়া আছে,নতুন কর্মচারীদের আমরা এমন করে ওয়েলকাম করি,কিছু খাইয়ে,খালি মুখে যেতে দেই না
.
আহানা ফর্ম একপাশে রেখে গাপুসগুপুস করে পুরো খাবার সাবাড় করে দিয়ে পানি খেয়ে এবার চা খেতে খেতে ফর্ম পূরন করছে
শান্ত মুচকি হেসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে হাসি থামানোর জন্য
আহানা ফর্মটা পূরন করে শান্তর হাতে দিয়ে ব্রু কুঁচকে চলে যাচ্ছে
.
এই মেয়ে!!
.
কি?
.
বস কে আসতে যাইতে সালাম দিবা বুঝছো?
.
সবাই গুড মর্নিং,গুড ইভেনিং,গুড নাইট এসব বলে,আমিও নাহয় ওসব বলবো
.
না তুমি সালাম দিবা আমাকে
.
আপনার……👿
.
ডিল ইজ ডিল,চাকরি দেওয়ার আগে বলেছিলাম আমার সব কথা তোমাকে শুনতে হবে
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে শান্তর সামনে এসে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে অনেক কষ্টে দাঁত কেলালো,তারপর হেসে দিয়ে বললো”স্যারররর,আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে