প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-১৫+১৬+১৭

0
2092

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
ওয়ালাইকুম আসসালাম!
.
আহানা এবার চলে যাচ্ছে,আবারও শান্ত ডাক দিলো ওরে
ধীরে ধীরে আহানার রাগ আরও বাড়তেছে
ধমক একটা দিয়ে বললো “আবার কি?”
.
মিস সুহানা!আপনার নাকি ৩টা বাচ্চা আছে?তাদের জন্য চকলেট চিপস কিনেছি কিছু নিয়ে যান
.
আহানা কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে এসে বললো”তুই রাখ তোর কাছে”
.
শান্ত মুচকি হাসতেছে বসে বসে
আহানা বাসায় ফিরে গোসল করে নিলো তারপর জলদি করে আবার বেরিয়ে পড়লো নিতুকে পড়ানোর জন্য
শান্তদের বাসার গেট দিয়ে ঢুকতে যেতেই সবার আগে শান্তকে দেখলো সে
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিয়ার খাচ্ছিলো,আহানাকে দেখে সাথেসাথে লুকিয়ে ফেলে আরেকদিকে ফিরে গেছে সে
আহানা ব্যাপারটায় খেয়াল না দিয়ে নিতুর রুমের দিকে চলে গেছে সোজা
শান্ত বিয়ারের বোতলটা লুকিয়ে আলমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করে নিতুর রুমে যেতে গিয়েই থেমে গেলো
ওখানে না গিয়ে মায়ের রুমে গেলো সোজা,মা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছেন,হাতে একটা বই
বই পড়ার অনেক নেশা উনার,সারাদিনে ফ্রি টাইম পেলেই হাতে বই নিয়ে বসেন তিনি
শান্ত মাকে বললো প্যাকেটটা আহানাকে দিতে,ও দিলে আহানা নিবে না কিন্তু মা দিলে নিতে পারে
কাল রিয়াজের আংটিবদলে সে আহানাকে নিয়ে যাবে সাথে করে
আহানার ভালো জামা শাড়ী নেই বলে শান্ত আসার সময় একটা শাড়ী আর কিছু অরনামেন্টস কিনে এনেছে আহানার জন্য
যাতে ও কাল এগুলো পরে আসতে পারে
মা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালেন
প্যাকেটটা মায়ের পাশে রেখে শান্ত নিজের রুমে চলে আসলো
.
আহানা নিতুকে পড়িয়ে চলে যেতে নিতেই রিপা এসে বললো মা নাকি ওকে নিজের রুমে ডাকছে
আহানা তাই সেদিকে গেলো
শান্তর মা একটা ফটো এলবাম নিয়ে বসে আছেন,আহানা গিয়ে উনার পাশে বসলো
উনার হাতে যে এলবামটা আছে তাতে একটা ছবি যেটাতে আহানা শান্তর পিঠে উঠে বসে চিজ পোজ দিয়ে আছে আর শান্ত মরার মত ঘুমাচ্ছে,আহানা হেসে দিলো ছবিটা দেখে
মা ও হাসলেন,তারপর পাশ থেকে প্যাকেটটা নিয়ে আহানার দিকে বাড়িয়ে ধরলেন
আহানা চমকে তাকিয়ে থেকে প্যাকেটটা নিয়ে বললো”এটা কি?”
.
মা কিছু বলতে পারলেন না,রিপা পাশে থেকে বললো”ম্যাডাম তোমাকে উপহার দিয়েছেন”
.
আহানা খুশি হয়ে শান্তর মায়ের হাত জড়িয়ে ধরে হেসে দিলো
শান্ত দিলে সে নিতো না,শান্ত ভালো করেই জানে তাই মাকে দিয়ে দেওয়াইছে
আহানা শান্তর মায়ের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো,একটু থেমে পিছন ফিরতেই শান্তকে দেখলো সে
এতক্ষণ ধরে শান্ত ওর দিকেই চেয়ে ছিলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে
আহানাকে দেখে আরেকদিকে মুখ করে নিয়েছে সে
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা বাজে,আহানা হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে,বেশি অন্ধকার হলেই বিপদ,মাসের শেষে এসে গেলে হাতে কানাকড়ি ও থাকে না
জলদি করে বাসায় ফিরেই বিছানায় গোল হয়ে বসে সে প্যাকেটটা খুললো,ভিতরে একটা ক্রিম কালারের জর্জেট শাড়ী,মুক্তোর কাজ করা,সাথে গলার কানের সেট,মা তো রীতিমত অবাক,ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতেছেন সব আর বলতেছেন “শান্তর মায়ের চয়েস অনেক ভালো”
আহানা হেসে বললো”ভালো তো,অন্তত ঐ হারামির চয়েসের থেকেও ভালো”
.
পরেরদিন সকালে বাচ্চাদের পড়ালো না সে রতনের ভয়ে সময় হতেই রেডি হয়ে ভার্সিটির দিকে গেলো,কাল যে একটা চাকরিতে সে জয়েন করেছে সেটাই ভুলে গেছে,মন মত সে ক্লাস করে যাচ্ছে
ফোন বাজতেছে কিন্তু ক্লাস টাইম বলে সে ধরলো না,ভাইব্রেশন দেওয়া
ব্রেক টাইমে রুপার সাথে কথা বলতে বলতে আহানা ক্যামপাসে বের হতেই ওর নজর গেলো ভার্সিটির গেটের দিকে, শান্ত হনহনিয়ে এদিকেই আসতেছে
আহানা চোখ ডলে আবারও তাকালো
না এটা তো সত্যি সত্যি শান্ত,এত রেগে কেন!
ইয়া আল্লাহ!আমার তো অফিসের কথা মনেই নেই,ধুর!
.
এই মেয়ে!বেয়াদব!
কাল যে চাকরির জন্য ফর্ম ফিল আপ করে আসছো সেটা কি মনে নেই তোমার?অফিস কে করবে?
.
এরকম ধমকান কেন??আমার মনে ছিল না,যাচ্ছি এখন
.
কারে গিয়ে বসো যাও
.
আমার বয়ে গেছে আপনার সাথে অফিসে যেতে
আমি রিকসা একটা নিয়ে তারপর যাবো
.
তোমার চাকরি হলো ক্লাইন্টদের সাথে মিটিংয়ে আমাকে হেল্প করা,আর এখন আমি রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি যেখানে আমার ক্লাইন্ট ওয়েট করতেছে,এবং তাই তুমি আমার সাথে যাবে
.
ওহ!
.
আরে এটা যে শাহরিয়ার শান্ত!!!
ও মাই গড!!আপনি আমাদের ভার্সিটিতে,আমি কই যাবো!!!কি করবো
.
সীমান্ত সম্ভারে যাও,নওশাদ সেখানে😉
.
🙈আপনি জানলেন কি করে যে আমি উনাকে লাইক ইউ করি
.
নওশাদ বলেছে তুমি আমাকে দেখে হাসো আর ওকে দেখে পিলারের সাথে লেগে যাও,তোমাকে নাকি” ক্রাশ যখন বর”এর তনুর মত লাগে ওর কাছে
.
হ্যাঁ আমি তো তনুর মত,বিয়া না করলে গলা টিপে ধরে বিয়া করে নিব জোর করে
.
তো যাও ধরে বিয়ে করে নিয়ে আসো,আমি চাই আমার আগে ওদের সবার বিয়েটা হয়ে যাক
.
সত্যি!আপনি মজা করছেন না তো?
.
একদমই না,তুমি যাও, আমি নওশাদকে ফোন করে বলে দিচ্ছি ও তোমার সাথে মিট করবে
শান্ত কথাটা বলা শেষ করে আর রুপাকে কোথাও দেখলো না, সে তো উধাও,দুনিয়াতেও নেই
.
আহানা অবাক হয়ে বললো”এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না,সত্যি সত্যি সীমান্ত সম্ভারে চলে গেছে মনে হয়
.
হ্যাঁ এখন আমরাও সেখানে যাচ্ছি
.
কেন?
.
বললাম না ক্লাইন্ট আসতেছে
.
“ওহ”
আহানা নিজের গায়ের দিকে তাকালো একবার
ফ্যাকাসে একটা হলুদ রঙের জামা পরে আছে সে,মনে হয় সখিনা জরিনা লাগতেছে
শান্ত কারের ভেতর থেকে একটা কোট নিয়ে আহানার গায়ে ছুঁড়ে মেরে ভিতরে গিয়ে বসলো ড্রাইভিং সিটে
.
আহানা কোটটার দিকে চেয়ে বললো”কি করবো এটা দিয়ে?
.
খাও বসে বসে
কোট মানুষ কি করে?পরে জানো না??আর এটা লেডিস কোট,স্পেশালি তোমার জন্য কেনা,মিটিং এটেন্ড করার সময় সবসময় এটা পরে থাকবা
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে এরপর দাঁত কেলিয়ে পরে নিলো কোটটা
তারপর দরজা খুলে ভিতরে এসে বসে পড়লো
শান্ত গাড়ী স্টার্ট করতেই আহানা বললো”আমরা যেহেতু সীমান্ত সম্ভারে যাচ্ছি,রুপাও তো যেতে পারতো আমাদের সাথে?”
.
না পারতো না,রুপা আমাদের সাথে গেলে সে জেনে যেতো তুমি আমার অফিসের কর্মচারী,সে এই কথাটা নওশাদকে বলতো,তারপর নওশাদ রিয়াজ আর সূর্য মিলে আমার মাথা খাইতো এই বলে যে তোমার আর আমার অনেক কিছু চলে
.
ওহহ!তো যখন আমি আজ আপনার সাথে আপনার বন্ধুর আংটিবদলে যাবো তখন কিছু ভাববে না?
.
আইডিয়া ওরাই দিয়েছিলো,কারণ ওখানে একটা মেয়ে আছে নাম কণা, সে আমাকে ডিস্টার্ব করে তাই ওরা বলেছিল এমনটা করতে
.
আচ্ছা
.
নামেন এখন,এসে গেসি আমরা
.
আহানা গাড়ীর দরজা খুলে নেমেই শান্তর পিছন পিছন আসতেছে,শান্ত এত জলদি জলদি হাঁটে
লিফটে ঢুকে আহানা বড় করে শ্বাস একটা নিলো মনে হয় যেন তার পরীক্ষা হবে এখন
তারপর একটা কথা মাথায় আসতেই সে শান্তকে জিজ্ঞেস করলো “তার ভার্সিটির কি হবে?”
.
শান্ত লিফট থেকে বের হতে হতে বললো”দুটোর একটা বেছে নাও”
.
আরে কি বলতেসেন,আমার পড়ালেখা তো চালিয়ে যেতে হবে
.
তুমি ভার্সিটির ক্লাস করো,চাকরির দরকার নেই,সংসার খরচ আমি দিব
.
না😒ফ্রিতে টাকা নিব না আমি
.
তাহলে পড়ালেখার কথা ভুলে যাও,যেকোনো একটা করো
.
আহানা মন খারাপ করে একটা চেয়ার টেনে বসলো
কিছুক্ষণ বাদেই ২জন লোক আসলেন,শার্ট প্যান্ট পরা,দেখতে শান্তর মতোই,ওর বিজনেস পার্টনার,উনারা বসে আহানার দিকে চেয়ে “হ্যালো” বললো
.
শান্ত আজ কিছুই বললো না শুধু চেয়ে চেয়ে আহানার প্রতিটা কাজে মুগ্ধ হয়েছে
অনেক সুন্দর করে আহানা কাজটা সম্পর্কে দুজন লোককে সবটা বুঝিয়ে দিয়েছে,শান্ত আসার সময় কারে ওর হাতে টপিকটার একটা শিট দিয়েছিলো,আহানা শিটটা পড়ে সে অনুয়ায়ী বিশ্লেষণ করলো সবটা
লোকগুলো খুশি হয়ে ডিলে সাইন করে চলে গেলো
মিটিং শেষ হতেই শান্ত দুপুরের খাবার অর্ডার করেছে,আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে আশেপাশের মানুষের চলাচলতি দেখতেছে,সবাই সবার খাওয়া দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত
শান্ত ফোনে রিয়াজের সাথে কথা বলতেছে
আহানা চুপ করে চারিদিক দেখে যাচ্ছে শুধু
আবার মাঝে মাঝে শান্তর দিকেও তাকাচ্ছে
এ্যাশ কালারের কোট, তার ভিতরের নীল শার্টে ওকে বেশ লাগতেছে,আহানা ঠিক ভাবে ওকে তেমন করে কোনোদিনই দেখে না
আজ বোরিং লাগতেছিলো বলে একটু তাকালো সে
শান্ত তার ফোন টেবিলের উপর রেখে টেবিলের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো”এই মেয়ে শুনো,এভাবে তাকাইও না,আমি তোমাকে বিয়ে করবো না”
.
আহানা চোখ নামিয়ে আরেকদিকে ফিরে গেলো,তারপর গম্ভীর গলায় বললো”এই যে শুনুন!আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হলেও আমি বিয়ের পিড়ি থেকে পালাবো”
.
এই মেয়ে শুনো!আমাকে “এই যে শুনুন” বলবা না
.
কেন?
.
এমনি!
.
শান্ত আর কিছু বললো না,ফোনে একটা গান প্লে করে টেবিলে আবারও রেখে দিলো ফোনটা,খাবার আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন!!
গানটা হলো “♥দিল সামাল যা জারা,ফের মোহাব্বত কারনে চালা হে তু♥”
.
আহানার হুট করে খারাপ লাগা শুরু হলো,গায়ের থেকে কোটটা খুলে কোলে রাখলো সে
.
শান্ত আরেকদিকে ফিরে বসে আছে
দুজনেই দুজনের মুখের উপর বলে দিয়েছে তাদের মনের কথা আর এখন নিজেদেরই মন খারাপ হয়ে গেছে
কেন মন খারাপ হয়েছে তার কারণ তারা জানে না,জানতেও চায় না
আহানার বরাবর একটা মেয়ে আর একটা ছেলে বসে হাসছে আর খাচ্ছে,আহানা ওদের দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে
আর শান্তর বরাবর বসেছে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে সাথে তাদের ছোট্ট একটা মেয়ে,তারা দুজন মিলে না খেয়ে বাবুটাকেই খাওয়াচ্ছে শুধু
শান্তর মনে হলো ওর মনটা জুড়ে গেছে,হঠাৎ করে ভালো লাগা কাজ করতেছে
এপাশে আহানা আর ওপাশে শান্ত একসাথে দুজনেই হাসলো,তারপর দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখটা আবারও কালো করে খাওয়ায় মন দিলো
শান্ত খেতে খেতে বললো”সন্ধ্যায় রেডি থেকো,আমি তোমাকে তোমাদের বাসা থেকে পিক আপ করে নিব”
.
নিতুকে পড়াতে আসবো না?
.
আজ পড়াতে হবে না,নাহলে যেতে যেতে লেট হয়ে যাবে
.
ঠিক আছে
.
প্রতিবার চিকেনের হাঁড় খাওয়ার সময় ছাড়িয়ে খেলেই হয়,বসে বসে একটা একটা করে হাঁড় সরাচ্ছো,তোমার এই অভ্যাস এখনও গেলো না
.
আপনি জানেন কি করে?
.
বাহ রে,ছোটবেলায় আন্টি তোমাকে ইয়া বড় প্লেটে খাবার ধরিয়ে দিয়ে আমার পাশে বসিয়ে দিতো,আর আমি তোমার খাওয়া দেখতাম
বসে বসে চিকেনের হাঁড় আগে সরিয়ে ফেলে তারপর একসাথে সব মুখে দিয়ে খেতে তুমি,এত বড় হয়ে গেছো এখনও এই অভ্যাস গেলো না তোমার
.
আমার নিজেরই মনে নেই,আর আপনার সব মন আছে?
.
কারণ আমি তখনও তোমার চেয়ে বড় ছিলাম,আর এখন ও
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”আপনি নিজের চরকায় তেল দেন না,আমার খাওয়ার দিকে তাকানোর কি আছে?”
.
শান্ত তাচ্ছিল্য করে একটু হাসলো তারপর চামচ দিয়ে রাইস নাড়াতে নাড়াতে বললো”আমার খুনসুটি তো তোমার সাথেই,অন্য কারোর সাথে আসে না,আসবেও না হয়ত!
দেখো না,,,,আমেরিকা থেকে সেই ৭বছর আগে ঢাকায় ফিরেছি,আজ পর্যন্ত কারোর সাথে এরকম ঝগড়া হয়নি,হতেও যায়নি,আর সেই হলো তো তোমার সাথেই হলো যার সাথে ছোটবেলা থেকেই হয়ে আসতেছিলো”
.
আহানা শান্তর মুখ থেকে চোখ সরিয়ে খাবার দূরে ঠেলে দিয়ে পানি নিলো খাওয়ার জন্য
.
আন্টির জন্য ও অর্ডার করেছি, প্যাকেট আসলে ব্যাগে নিয়ে নিও,আর খাবারটা শেষ করো,অনেক কাজ বাকি,আমি কিন্তু কর্মচারীদের বেশি খাওয়াই না প্রয়োজন ছাড়া
.
কথাটা শুনে আহানা মুখ বাঁকিয়ে খাবারের প্লেট টেনে বাকিটাও খাওয়া শুরু করে দিয়েছে
শান্ত উঠে চলে গেছে বিল দিতে,আহানা পানি খেতে খেতে ভাবলো আজ কি সূর্য উঠেছে?ঝগড়ুটে লোকটা কিনা এত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতেছিলো?
আহানা পানি খেতে খেতে সামনে তাকাতেই দেখলো একটু দূরে রুপা দাঁত কেলিয়ে নওশাদের সাথে হাসতে হাসতে কফি খাচ্ছে
এটা দেখে আহানার কাশি উঠে গেলো,ওড়না মুখে রেখে কাশি থামিয়ে শান্তকে খুঁজতে লাগলো সে
শান্ত বিল পে করে এগিয়ে এসে বললো”চলো যাই,লেট হচ্ছে,প্যাক করা খাবার নিয়েছো তো?”
.
আহানা ইশারা করে বললো “নওশাদ ভাইয়া আর রুপা ঐ দিকে”
.
শান্ত চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখলো সত্যি তো তাই
তাই সে আহানার হাতে চাবি দিয়ে বললো “নিচে গিয়ে কারে বসতে,সে আসতেছে নওশাদকে হালকা টাইট দিয়ে”
আহানা মাথা নাড়িয়ে চাবি নিয়ে চলে গেলো
শান্ত দাঁত কেলিয়ে নওশাদের দিকে আসতেছে,এসেই নওশাদের ঘাড়ে হাত রেখে বললো”কি ও ভাই??প্রেম হচ্ছে নাকি?”
.
নওশাদ তো একপ্রকার ঝটকা খেয়ে গেলো তারপর হেসে হেসে বললো”আরে না,রুপা তো আসলে এমনি”
.
বুঝি বুঝি,এতদিন আমার পিছনে লাগতেন এবার আমি আপনার পিছনে লাগবো
ভিতরে ভিতরে টেম্পু চালান তাই না?
.
কথাটা বলে শান্ত হেসে চেয়ার টেনে বসলো
রুপা তার কানের পিছনে এলোমেলো চুলগুলো গুজে দিচ্ছে বারবার আর লজ্জা পাচ্ছে শুধু
.
শান্ত নওশাদকে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বললো”নট ব্যাড!! রুপার সাথে ভালোই মানাবে তোকে,চটপটা স্বভাবের মেয়েটা
আমারই পছন্দ হয়েছে তোর জন্য তাই তো পাঠিয়ে দিলাম”
.
ধুরু মিয়া!!কই থেকে কই নিয়ে যাচ্ছিস কথা রে
.
রুপা ভ্রু কুঁচকে বললো”কি বললেন?তার মানে এতক্ষণ ধরে যে আমরা কথা বললাম সেটা কিছুই না?”
.
নওশাদ হালকা কেশে বললো”না মানে,ইয়ে আসলে”
.
শান্ত হাসি থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে,তারপর হাসিটা এক সাইড করে বললো”ভাই আর লুকাতে হবে না,আমি সব বুঝছি আর ছবিও তুলছি😎
এবার দেখি তুমি আমারে নেক্সট টাইম কেমনে ব্ল্যাকমেইল করো”
.
এটা কেমনে?কখন করলি?
.
তোর বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা!!একটু একটু ফটোগ্রাফি তো জানতেই হবে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা কারের সামনে এসে চাবি নিয়ে চেয়ে আছে ড্যাবড্যাব করে
তারপর অনেকক্ষণ ভেবে কারের কাছে এসে ফুটো খুঁজতে লাগলো যেটাতে চাবি ঢুকিয়ে সে কারের দরজাটা খুলবে
অনেকক্ষণ দেখাদেখির পর বুঝতে পারলো কোনো ফুটো নেই,তারপর ভাবলো এটা আবার কেমন গাড়ী,আমি এখন কেমনে খুলবো এটা?
.
এই আহানা!
.
আহানা পিছন ফিরে দেখলো তিয়া এগিয়ে আসতেছে এসেই বললো “এখানে কি করিস তুই?”
তিয়া হলো আহানার ক্লাসমেট
.
ওর প্রশ্নের উত্তরে আহানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে বললো”গাড়ীটা পছন্দ হয়েছে বুঝি?হুম বেশ দেখতে,কালো গাড়ী এমনিতেই জোস আর গরজিয়াস হয়,এভাবে গুরগুর করে দেখিস না মানুষ তো তোকে চোর ভাববে
.
আহানা মুখটা ছোট করে বললো”আমি তো এটা ”
.
বুঝছি তো তোর পছন্দ হয়েছে,তাই বলে পাবলিক প্লেসে এমন করে দেখবি?মানুষ কি বলবে?আমি তো দেখে চোরনি ভাবসিলাম
.
এক্সকিউজ মি!
.
তিয়া পাশে তাকিয়ে দেখলো শান্ত আসতেছে,”এক্সকিউজ মি” ঠিক কাকে বললো তা বুঝলো না তিয়া
শান্ত আসতে আসতে তার হাতে থাকা ছোট্ট একটা রিমোটের বাটনে ক্লিক করে কার অানলক করে দরজা খুলে বললো”ঢুকে বসো,আমি ইচ্ছে করেই তোমাকে ভুল চাবি দিয়েছি নাহলে তুমি যে দুষ্টু পরে আমার কার চালিয়ে রোডে নেমে যেতা”
শান্ত তিয়ার দিকে তাকাচ্ছেও না, পাত্তাও দিচ্ছে না,তিয়া থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আহানা বোকার মত শান্তর কথা শুনতেছে
শান্ত ওর হাত ধরে টেনে কারের ভিতরে বসিয়ে দিয়ে নিজেও গিয়ে বসলো তারপর জানালা দিয়ে মাথা বের করে বললো”আপু সরুন এখান থেকে,পার্কিং প্লেসে এমন করে দাঁড়িয়ে থাকবেন না,আমি তো পাগল ভেবেছিলাম”
.
তিয়া চোখ বড় করে সরে দাঁড়ালো সেখান থেকে
শান্ত গাড়ী স্টার্ট দিয়ে চুপ করে কার চালাচ্ছে,আহানা তিয়ার কথাগুলো মনে করে কাঁদতেছে
চুপিচুপি চোখ মুছতেছে সে,জানালার দিকে ফিরে বসেছে শান্ত যাতে ওকে কাঁদতে দেখে না ফেলে
শান্ত নিশ্চুপ হয়ে ফাঁকা রোড দিয়ে গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছে
আহানার হাতের চুড়ির ঝুনঝুন শব্দ হচ্ছে যতবার সে চোখ মুছে ঠিক ততবারই
শান্ত গাড়ী থামিয়ে ফেললো,২মিনিট চুপ করে থাকলো তারপর আহানার মাথায় হাত দিয়ে টান দিয়ে বুকে নিয়ে আসলো ওকে
কেন এনেছে সে জানে না তবে তার দায়িত্ব
কিসের দায়িত্ব সে জানে না তবে এটা তার করতেই হতো
কেন হতো সে জানে না,কিন্তু আহানার চোখের পানি তার তার গায়ে কাঁটার মত লাগছিল
আহানা খুব জোরে কেঁদে দিলো,শান্তর বুকে সে তার সেদিকে খেয়াল নেই,কাঁদার জন্য একটু জায়গা পেয়েই কেঁদে দিয়েছে সে
.
আমি শুনেছি মেয়েটা কি বলেছে তোমাকে,কিছু মানুষ থাকে মনে আঘাত করে কথা বলার,জাস্ট ইগনর দেম,নাহলে কখনও উপরে উঠতে পারবা না
.
আহানা অনেকক্ষণ কাঁদার পর তার মনে হলো সে কোথায়,এক ঝটকায় সরে গেলো সে
শান্ত ঠিক হয়ে বসে আবারও গাড়ী স্টার্ট করলো
.
আহানা জানালার দিকে ফিরে ওড়না দিয়ে মুখ মুছে নিলো ভালো করে
খারাপ লাগতেছে এই ভেবে যে সে এতক্ষণ শান্তর বুকে ছিলো,কি লজ্জাকর!
.
শান্ত গলার টাই হালকা টেনে ঢিল করে চুপচাপ কার চালাচ্ছে,টু শব্দ ও নেই দুজনের মুখে
আহানা এতক্ষন ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো তারপর হুট করেই মাথা তুলে শান্তর দিকে তাকালো সে
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো”আমাকে আর কখনও ছুঁবেন না আপনি”
.
শান্ত ঠাণ্ডা স্বরে বললো”তাহলে আর কখনও আমার সামনে কাঁদবা না”
.
কান্না পেলে কাঁদতে হয়
.
না হয় না,নিজেকে শক্ত করতে শেখো
.
বাইরের মানুষের কথা বাদ দেন,আপনি নিজেই তো কাঁদান আমাকে
.
আমি সব পারবো,আমি বাদে অন্য কেউ পারবে না তোমাকে কাঁদাতে
বরং আমি কাঁদাবো,সারাদিন সারাক্ষণ, সারাজীবন ধরে!!স্টুপিড !!!!
.
আহানা শান্তর চিৎকারে কেঁপে উঠলো,চোখ নামিয়ে আরেকদিকে মুখ নিয়ে গেলো সে,কি বলতে নিয়েছিলো সেটাই ভুলে গেছে সে
হাত কাঁপতেছে তার,কখনও এমন করে কেউ কথা বলেনি ওর সাথে তাই হয়ত এমন লাগছে
শান্ত অফিসের সামনে এসে কার থেকে নেমে হনহনিয়ে চলে গেলো
আহানা কার থেকে নেমে আস্তে আস্তে অফিসে আসতেছে
শান্ত ততক্ষণে নিজের অফিস রুমে চলেও গেছে
ঊষা আহানাকে ওর কেবিন দেখিয়ে দিলো,একদম শান্তর অফিস রুমের পাশেই,হালকা ঝাপসা কাঁচের দেয়াল মাঝখানে
ওপারে কি চলে তা দেখা যায় না তবে মানুষটা দাঁড়িয়ে আছে নাকি বসে আছে তা বুঝা যায়,আহানা একটিবারের জন্য ও তাকালো না সেদিকে
চুপ করে তার সামনে থাকা টেবিলের দিকে চেয়ে আছে সে

স্যার এই ফাইলগুলো তো সুহানাকে দিব তাই না?
.
হুম,ও কি করছে এখন?
.
কেবিন দেখিয়ে দিয়েছি,গিয়ে বসেছে সে
.
ওকে
.
আহানা গাল ফুলিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,ওর পাশে আরও ১৩/১৪টা কেবিন,সবাই সবার কাজে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে
মাঝে মাঝে একটা লোক ট্রেতে করে কফি এনে দিয়ে যায়
তারা সেটা হাতে নিয়ে খায় আর কাজ করে,এত কাজ?বেতন কত এদের!
.
ঊষা হেসে বললো”তোমার বেতনই তো ৩০হাজারের উপরে হবে
.
কিহহহ!
.
হুম,তবে তোমার পোস্টের বেতন ২০হাজার কিন্তু স্যার চেকে ৩০হাজার সাইন করেছে
.
কেন?আমি তো বারতি টাকা নিব না
.
সুহানা,এসব কেমন কথা?স্যার তোমাকে নিজ থেকেই টাকা দিতে চায় আর তুমি নিতে চাচ্ছো নাহ?
.
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে হনহনিয়ে শান্তর রুমের দিকে ছুটলো
ঊষা দৌড়ে এসে ওকে থামালো সাথে সাথে
.
আরে আরে এমন করিও না স্যার রেগে যাবে,তোমার না ৩টা বাচ্চা আছে?টাকা পেলে তো তাদেরই ভালো হবে তাই না?
.
আমি যেটা পাওয়ার কথা সেটাই নিব এর বেশি আমি নিব না!
আহানা শান্তর রুমের দরজার সামনে এসে নক করলো কয়েকবার
ঊষা আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে,শান্ত এসে দরজা খুলতেই দেখলো আহানা ঊষাকে বলতেছে ওর শান্তর সাথে কথা আছে
.
ঊষা!ওকে আসতে দাও
.
শান্তর কথা শুনে ঊষা আহানার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো”ঠিক আছে”
.
শান্ত আবার ভিতরে চলে গেলো,আহানাও আসলো কিছুক্ষণ পর
.
কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো আমার কাজ আছে
.
আমার বেতন ২০হাজার থাকার কথা আপনি ৩০হাজার ঠিক করলেন কেন??
আমি এমনি এমনি টাকা নিব না
.
শান্তর কিছুক্ষণ আগে একটা পার্টনারের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে
মন মেজাজ এমনিতেও বিঘড়ে আছে এর ভিতরে আহানা নিউ টপিক নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে
.
শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে আহানার হাত ধরে এক ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিলো
আহানা গিয়ে ফ্লোরে পড়ে গেছে ওর ধাক্কায়
শান্ত রুম থেকে বেরিয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো”আমি আন্টির ঔষধ আর ভালো থাকা খাওয়ার জন্য ১০হাজার বাড়িয়ে লিখেছি আর হয়ত তোমার মতো মেয়ের এইটুকুও যোগ্যতা নাই যে ৩০হাজার তো দূরে থাক ২০হাজারেরও চাকরি পাবে!
আমার রিলেটিভ বলেই তুমি চাকরিটা পেলে!নাহলে আইএ পাস তাও এ গ্রেটের কেউ এরকম পোস্টের জব পায় না বুঝেছো??
আবার বড় বড় কথা বলতেছো!টাকা কত দিব কারে দিব দ্যাটস নন অফ ইউর বিজন্যাস!জাস্ট গেট আউট ফ্রম হিয়ার,নাও!!
.
আহানা মুখটা ছোট করে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে
তারপর ফ্লোর থেকে উঠে করিডোর দিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাথায় হাত দিয়ে দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে দিলো তারপর আহানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে
আহানা চোখ মুছতে মুছতে বললো”আমি এই চাকরি করবো না!পথ ছাড়ুন,আমি চলে যাবো এখন”
.
আই এম সরি!মেজাজটা গরম ছিল আর তুমি সবসময় এক কথায় অটল থাকো যে এমনি এমনি তুমি টাকা নিবে না
.
আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না,অনেক বলেছেন
.
আহানা পাশ কেটে চলে যাচ্ছে শান্ত ওর হাত মুঠো করে ধরে আটকালো ওকে
.
হাত ছাড়ুন নাহলে চেঁচাবো!
.
শান্ত এখনও ধরে রেখেছে আহানার হাত
আরেক হাত দিয়ে নিজের মাথাটা একটু টিপে নিজেকে ঠিক করলো সে,তারপর আহানাকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে আসলো
.
আপনি অতিরিক্ত করতেছেন!! একবার বের করে দিয়ে এখন আবার এখানে আনলেন,কি চান কি আপনি?
.
বসো এখানে
.
আমার এতো সময় নেই,আমি গিয়ে আরেকটা চাকরি খুঁজবো তাও আপনার কাছে চাকরি করবো না আমি
.
ও তাই নাকি?তুমি অন্য কোথায় চাকরি পাবে?ঠিক আছে যাও তাহলে,কাল সকালেই তুমি ফিরে আসবে,আমি চ্যালেঞ্জ করতেছি তোমায়!
.
আহানা চোখ মুছে মাথা উঁচু করে চলে গেলো আর কিছু বললো না
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,বেশি রুঢ হয়ে গেছে সে
আহানা তো সবসময় এরকমই ঝগড়া করে আজ বেশি বকলাম নাকি!
যাই হোক কাল আবার ফেরত আসবে আমি সিউর!কোথাও চাকরি না পেয়ে ঠিকই ফেরত আসবে
.
আহানা গাল ফুলিয়ে চলে গেলো তখন দুপুর ২টো বাজে
সে হেঁটে হেঁটে যতদূর পারছে যত কোম্পানি পেয়েছে খোঁজ নিয়েছে তাও কোনো চাকরি পেলো না সে
বিকাল ৫টার দিকে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরলো আহানা
মা জিজ্ঞেস করলো প্রথমদিনের অফিস কেমন লাগলো
আহানা কিছু বললো না উত্তরে
শান্তর দেওয়া শাড়ীটা হাতে নিয়ে চুপচাপ সেটা পরায় মন দিলো সে
শাড়ীটা ক্রিম কালারের আর লাল পাড়ের, মুক্তোর কাজ করা,আহানা পরার পর মা হা করে বললেন”রাণী রাণী লাগতেছে তোকে”
.
আহানার সেদিকে খবর নেই,চাকরির কথা ভেবে যাচ্ছে সে
গলায় নেকলেসটা পরে কানে দুল পরতে পরতে বেরিয়ে গেলো সে
শূন্য রোডে দাঁড়িয়ে আছে আহানা,মাথার উপরে ফ্লাইওভার, শো শো করে তার উপর দিয়ে গাড়ী যাচ্ছে,আহানা চোখ বন্ধ করে রইলো কিছুক্ষণ
তারপর একটু পিছিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে ফ্লাইওভার থেকে চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো সে
এ শহরে চাকরি পাওয়া মুখের কথা নয়!আর যদি হই মেয়ে তো চাকরি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার!
.
আহানা!
.
নামটা শুনে আহানার ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠেছে,পাশে তাকাতেই দেখলো রতন দাঁড়িয়ে আছে,পরনে সেই ফ্রিন্টের থার্ড ক্লাস লুঙ্গি আর হাফ হাতার শার্ট,সে আহানাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত এমন ভাবে দেখছ যেন গিলে খাবে এখনই
আহানা সরে দাঁড়ালো
.
এতো সেজেগুজে কই যাও তুমি?তাও এসময়ে??কিছুক্ষন পর সাঁঝ হবে এখন কই যাও??শুনলাম তুমি নাকি চাকরি পাইছো?সেখানে যাচ্ছো নাকি?বড়লোক দেখে নতুন পটাইছো মনে হয়?
.
আহানা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রতনের তিক্ত করা শুনতেছে
.
কিরে?কথা বলস না কেন?এতদিন তোরে তুমি কইয়া সম্বোধন করতাম এখন মনে হয় তুই সেটার যোগ্য না!!তোরেও বড় লোক ছেলেদের হাওয়া ধরছে নাহলে এত সেজেগুজে এ সময়ে কই যাস তুই?তোর মা তো বাড়িতে!!
ইজ্জত রাখমু না তোর মনে রাখিস!আমাকে যদি ধোকা দেস সব শেষ করি দিমু তোর!
.
আহানা হাত মুঠো করে চড় দেওয়ার আগেই কারের আওয়াজ পেয়ে থেমে গেলো,পিছন ফিরে দেখলো শান্তর কার
আহানা দেরি না করে সেদিকে ছুটলো,শান্ত বের হওয়ার আগেই ও দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে বসে পড়লো
রতন দাঁড়িয়ে সব দেখতেছে
আহানা শান্তকে শুধু বললো “চলুন!দেরি হয়ে যাচ্ছে”
.
শান্ত রতনকে দেখেছে,সেদিকে তাকাতে তাকাতেই সে গাড়ী স্টার্ট করলো
কিছুদূর গিয়েই সে বললো”ছেলেটা কে”?
.
আপনার বিষয় না এটা
.
ডিস্টার্ব করে?
.
আমার দায়িত্ব আমার নিজেরই, কারোর এতো ভাবতে হবে না
.
শান্ত আহানাকে আর কিছু না বলে গাড়ীর ডেস্ক ওপেন করলো এক হাত দিয়ে
আরেক হাত দিয়ে গাড়ী চালাচ্ছে
ডেস্কের ভেতরে ছিলো এক মুঠো লাল চুড়ি আর একটা ঘড়ি
শান্ত চুড়ি গুলো নিয়ে আহানার দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো”চুড়ি দিতে ভুলে গিয়েছিলাম,নাও ধরো পরে নাও”
.
আহানা চুড়ি হাতে নিয়ে পরতে পরতে থেমে গেলো হঠাৎ,শান্তর দিকে ফিরে বললো”দিতে ভুলে গেসিলাম মানে?এগুলো তো আমাকে আন্টি দিয়েছিল,তার মানে আপনি!!!”
.
শান্ত তার ঘড়িটা পরতে পরতে বললো”মা তোমার জন্য চুড়ি কিনতে ভুলে গেসিলো বলে আমাকে কিনতে হলো,আমার আর কাজ নেই তোমার জন্য শপিং করবো”
.
আহানা চুড়িগুলো পরে জানালার দিকে মুখ করে বসলো
.
শান্ত তার ঘড়িটা ভালোমতন পরে এরপর নওশাদকে ফোন দিলো
নওশাদ জানালো সে আর সূর্য রিয়াজদের বাসায় পৌঁছে গেছে অলরেডি
কণা ও এসে গেছে,সে নাকি পাগলের মত শান্তকে খুঁজতেছে
শান্ত লাইন কেটে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে সবটা পানি খেলো
এই কণা মেয়েটার থেকে কি করে বাঁচবো!
.
আহানার সেদিকে খবর নেই,সে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে
একটা সেতু পেরিয়ে যাচ্ছে তারা
সম্ভবত কাঁচপুর ব্রিজ এটা,দূর পর্যন্ত নদী দেখা যায় শেষ সূ্র্যের আলোয় চিকচিক করছে পানি,আহানা মুগ্ধ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে,পানি এমন ভাবে চিকচিক করতেছে মনে হয় নদীর পানি সোনার
ব্রিজ থেকে নামতেই তারা পড়লো জ্যামে,ইয়া বড় জ্যাম
আহানা গালে হাত দিয়ে বাইরের একটা যাত্রীবাহী বাসের দিকে তাকিয়ে আছে
.
আপা আমড়া খাবেন??শশা খাবেন?
.
আহানা মুচকি হেসে আবারও মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো”না খাবো না”
.
শান্ত ছেলেটাকে ইশারা করে বললো ২টো দিতে,পকেট থেকে টাকা বের করে ছেলেটাকে টাকা দিয়ে সে শশা একটা আর আমড়া একটা হাতে নিলো ছেলেটার থেকে
তারপর একটু আহানার কাছের দিকে এসে বসে আরামসে সাউন্ড করে সে শশা খাচ্ছে
আহানা পাশে তাকাতেই দেখলো শান্ত লবণ মরিচ ডলে ডলে ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে আর বলতেছে”কেউ চাইলে নিতে পারে,আমি আবার একা একা খাই না”
.
আহানা শান্তর দিকে খেয়াল করলো এবার,,শান্ত আজ ক্রিম কালারের সিল্কি কাপড়ের একটা পাঞ্জাবি পরেছে তারউপর দিয়ে লাল কোটি পরেছে
মনে হয় যেন আহানার সাথে মিলিয়েই পরেছে সে
আহানা শান্তর হাত থেকে থাবা দিয়ে আমড়া নিয়ে নিলো
বেয়াদবের মত এমন ভাবে দেখিয়ে খাইতে পারে যেন মানুষকে পাগল করে দিয়ে ছাড়বে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আর কতদূর??আর এই জায়গার নাম কি?যাত্রাবাড়ী??
.
নাহ যাত্রাবাড়ী না,,যাত্রামুড়া মনে হয়,আমি আরও কয়েকবার আসছি এখানে
আর অল্প একটু পথ আছে,এসে গেছি প্রায়ই
এই গলিতে ঢুকলেই মাটির একটা রোড পড়বে সেটা দিয়ে যেতে হবে,হেঁটেই যেতে হবে,কার ঢুকবে না সেদিকে
.
শান্ত কার থামিয়ে নামলো সেখান থেকে,আহানাও নেমে গেছে,শান্ত কার লক করে হাঁটা ধরেছে ওকে নিয়ে
আহানা শাড়ী ঠিক করতে করতে হাঁটতেছে,তারপর চুলের খোঁপাটা খুলে চুল ছেড়ে দিয়েছে সে
বাসা থেকে জলদি করে বের হতে গিয়ে চুলের দিকটা সে খেয়ালই করে নাই
একটা এক তলা বাসার সামনে এসে হাজির হয়েছে দুজনে
হালকা গোলাপি রঙ করা বাড়িটটা,বিরাট বড়,আশেপাশে এবং ভিতরে মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে হালকা পাতলা
শান্ত দূর থেকে কাকে যেন দেখে পিছনে তাকিয়ে আহানার হাত টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলো ওকে
আহানা তখন চুলে ক্লিপ লাগাচ্ছিলো
ভয় পেয়ে বললো”কি হয়েছে?”
.
কিছু না,চলো!
.
কণা দৌড়ে এসে শান্তর সামনে দাঁড়ালো
পরনে হালকা নীল রঙের নেটের একটা লেহেঙ্গা,চুল বাঁধা,দেখতে অনেক স্মার্ট
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে সবাইকে দেখতেছে
.
শান্ত!!!তুমি জানো কত ওয়েট করছিলাম তোমার!
.
আহানা এবার কথা শুনে কণার দিকে তাকালো,কণা শান্তর হাতের দিকে চেয়ে মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেললো,কারণ শান্ত আহানার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে
.
মেয়েটা কে শান্ত?
.
শান্ত মুচকি হেসে বললো”মিট মাই উড বি ওয়াইফ,আহানা ইয়াসমিন”
.
আহানা চোখ বড় করে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে
এসব কি বলতেছে শান্ত!
.
শান্তর কথা শুনে কণা তো রীতিমত শকড্!!
.
এসব কি বলছো তুমি?তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?এটা মিথ্যা,আমি বিশ্বাস করি না!
.
এটাই সত্যি কণা!আচ্ছা ফরগেট ইট!
রিয়াজ কোথায় যার জন্য এই বাড়িতে আসলাম এতদূর থেকে
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বাসার ভিতর দিকে
কণা ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,তারপর নরম গলায় বললো”আমি আহানার সাথে কিছু কথা বলতে পারি?”
.
শান্ত বললো”না! আমি আহানার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিব এখন,পরে কথা বলিও”
.
শান্ত আর থামলো না সেখানে,আহানাকে নিয়ে চলে গেলো সে
কণা রাগে ফুলতেছে,প্রচণ্ড রাগে হাতের কাছে থাকা একটা ফুলের টব ভেঙ্গে ফেললো সে
.
বাসার বাইরে ওপাশে বিরাট খোলা মাঠ একটা আছে সেখানে,সেখানে ছোটখাটো করে একটা স্টেজ খুব সুন্দর ভাবেই সাজানো হয়েছে
শান্ত সেদিকে আসলো আহানাকে নিয়ে,রিয়াজ স্টেজে থাকতেই শান্তকে দেখতে পেয়ে হেসে হেসে নেমে আসতেছে
.
থ্যাংকস এ লট শান্ত!!তুই আমার কথা রেখে এসেছিস এর জন্যে
.
আসতে তো হতোই,নিন আপনার আর আপনার বউয়ের গিফট,ধরুন
.
থ্যাংক ইউ!!আরে আহানা যে,কি খবর?
.
ভালো
.
নওশাদ আর সূর্য আসতেছে,এসেই শান্তকে চেপে বললো “কিরে!!শান্তর মনে এখন কি চলে?”
.
ফগ চলে
.
হাহা,দোস্ত!!!কণার চেহারার এক্সপ্রেশন একটু যদি দেখতাম
.
আহানার সাথে একা কথা বলতে চাইছে কিন্তু আমি দিই নাই
এটা বলেই শান্ত পাশে চেয়ে দেখলো আহানা উধাও!
একি!মেয়েটা গেলো কই?
.
ছাড়ুন আমার হাত!!কণা আপু,এমন করতেসেন কেন?
.
কণা আহানার হাত ধরে টেনে ওকে দূরে নিয়ে আসলো,তারপর নিজের হাত বাড়িয়ে আহানাকে দেখালো
তার পুরো হাত কাটা দাগে রক্তাক্ত হয়ে আছে
.
আহানা চোখ বড় করে সেদিকে চেয়ে আছে
.
দেখো আমি শান্তকে কতটা ভালোবাসি আর তুমি কি আমার ব্যাপারে জানতা না?প্লিস তুমি শান্তকে বিয়ে করো না প্লিস
আমি মরে যাবো,আই লাভ হিম সো মাচ,প্লিস ট্রাই টু অ্যান্ডারস্ট্যান্ড!
.
আহানা টেবিলের উপর থেকে টিসু বক্স নিয়ে টিসু বের করে কণার হাত মুছে দিতে দিতে বললো”এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবেন না,আমি উনার সাথে কথা বলবো,আপনি প্লিস আর নিজের ক্ষতি করবেন না”
.
শান্ত নওশাদ মিলে আহানাকে খুঁজতেছে সব খানে
.
প্লিস আমার কথাটা রেখো আহানা!
.
আচ্ছা,ডোন্ট ওয়ারি!
.
আহানা ফিরে আসতে আসতে ভাবলো”যাক বাবা,এই পাগলের সাথে ঐ পাগলের বিয়ে দিয়ে দিলে আমি বেঁচে যাবো
নাহয় তো মা এতদিন ঐ বেয়াদবটার সাথে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো,পাইছি একটা সুযোগ,হাতছাড়া করা যাবে না
.
আহানা খুশিতে আটখানা হয়ে পিছন ফিরে কণার দিকের চেয়ে হাঁটতে হাঁটতে শান্তর বুকের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিতেই শান্ত ওকে ধরে ফেললো
.
এই তুমি আমাকে না বলে কই গেছিলে?
.
আহানা ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে বললো”আপনার সাথে আমার কথা আছে”
.
ওসব পরে,চলো আমার সাথে,নওমির সাথে মিট করিয়ে দিব তোমায়
.
আগে বলুন আপনি সবাইকে বলতেছেন কেন যে আমি আপনার উড বি?
.
পরে সব পরে,আগে চলো
.
শান্ত আহানাকে টেনে স্টেজে নিয়ে আসলো
আহানা ইতস্তত হয়ে নওমির পাশে গিয়ে বসেছে,নওমি ওকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করতেছে শুধু
অথচ ওর জিজ্ঞেস করার কথা
.
দূরে সোফায় নওশাদ,রিয়াজ,সূর্য আর শান্ত বাম পা ডান পায়ের উপর রেখে গালে হাত দিয়ে বসে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে
.
রিয়াজ নওমির দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বললো”আহানাকে কিছুক্ষন আগে কণা উধাও করেছিল আই এম Damn শিওর”
.
নওশাদ মাথা নাড়িয়ে তার দুহাতের আঙ্গুল নাড়াতে নাড়াতে বললো”আর এতক্ষণে সে আহানার কানে হাবিজাবি কথা ঢুকিয়ে কস্টিভ ও মেরে দিছে”
.
সূর্য তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো”আবার হাত কাটে দেখায়নি তো?আহানা তো তাহলে তোর সাথে কণাকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে”
.
মাই গড!!এটা কি শুনাইলি!আমি জানি না
আহানা যে শয়তান একটা মেয়ে,ও আমার জীবন নষ্ট করে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হলেও কণার সাথ বিয়ে দিয়ে ছাড়বে
.
নওশাদ ফোন বের করে কয়েকটা সেলফি তুলতে তুলতে বললো”তো তাহলে কি করা যায়?”
.
রিয়াজ দাঁত কেলিয়ে শান্তর দিকে চেয়ে আছে
.
শান্ত তার পাঞ্জাবির উপর পরা কোটির বোতাম কয়েকটা খুলে ঢিল করে রিয়াজের দিকে আড় চোখে তাকালো তারপর স্টেজের দিকে মুখ করে বললো”এরকম হারামির মত চেয়ে আছিস কেন?”
.
তোরে একটা আইডিয়া দিব?
.
হোয়াট?
.
আহানাকে ধরে কিস করে দে
.
নওশাদ তখন জুস খাচ্ছিলো,রিয়াজের কথা শুনে পুরুত করে সব ফেলে দিলো,সূর্য পাকোড়া খাচ্ছিলো কথাটা শুনে গালে কামড়ই পড়েছে তার,গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে সে বললো”তুই তোর নওমিরে কিস করছিস বলে কি শান্ত ও আহানাকে করবে?মেয়াদ ছাড়াই গাঞ্জা খেয়েছিস মনে হয়
.
নওশাদ ব্রু কুঁচকে বললো” মনে হয় ৫বছর আগে মেয়াদ শেষ হওয়া গাঞ্জা খেয়েছিস তুই ”
.
রিয়াজের মাথা গেছে!!
এখনও ওর আংটিবদল হয়নি এখনই পাগল হয়ে গেছে বিয়ের পর নির্ঘাত ওকে নিয়ে আমাদের পাগলা গারতে ঘুরতে হবে
.
শান্ত বি সিরিয়াস!আই এম নট জোকিং
.
সিরিয়াস মানে?আহানাকে আমি কিস কেন করবো?
.
যাতে আহানার ভিতরে একটা ফিল আসে,সে তোকে কণার হতে দিবে না তাহলে
মেয়েদের কিস করে কাবু করা যায় বুঝলি
.
নওশাদ মুখ বাঁকিয়ে বললো”তো আমার এক্সকে আমি কতবার কিস করেছি সে আমারে ছাড়লো কেন?”
.
শুন রিয়াজ! আমার আর কাজ নাই তোর কি মনে হয়?
আমার কণাকেও চাই না,আহানাকেও না,ওকে?
.
এখন কথা হলে কণা থেকে কি করে বাঁচবি আহানা তো পরের কথা,আহানা তোকে পছন্দ করে না
.
তো?তুই তো বললি কিস করলে পাগল হয়ে আমাকে কণার হতে দিবে না
.
আরে সেটা না!কিস করলে কণার সাথে তোর জন্য লড়াই করবে পরে তুই কণার থেকে রেহায় পেয়ে গেলে বলে দিবি তুই আহানাকে লাভ তো দূরে থাক লাইক ও করিস না,ব্যস হয়ে গেলো
.
নওশাদ মাথা নাড়িয়ে বললো”ব্রো!!রিয়াজের আইডিয়ায় কারেন্ট আছে”
.
দেখতে হবে না কার বিয়ে হচ্ছে😎
.
না না,আমার দ্বারা হবে না,ঐ ধানিলঙ্কারে আমি কিস করতে পারবো না,দরকার নেই এসবের
.
তাহলে যা কণার কোলে বসার জন্য রেডি হ
আমাদের কি,ভালোই ভালোই একটা জোস আইডিয়া দিলাম
.
দেখ আহানার থেকে ছাড়া পাওয়া সহজ কিন্তু কণা তোকে ছাড়বে না সহজে
তোর আগে ১০/১২টা ছেলেকে সে ধুয়ে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে তারপর ছেড়েছিলো তোকে তো একদম কাঁচা গিলে তারপর ছাড়বে
.
ভাবতে দে আমাকে!
.
সূর্য একটা মেয়েকে দেখে উঠে সেদিকে যেতে যেতে বললো”পাগলের প্রলাপ পাগলে শুনে”
.
রিয়াজ হাতে থাকা গোলাপ ফুল একটা সূর্যের মাথায় মারলো
“হারামি তুই পাগল!”
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,কণা এসে সূর্যের জায়গায় বসে পড়েছে শান্তর পাশে
শান্ত চোখ বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে একটু সরে বসলো
.
কেমন আছো??নিতু কেমন আছে?
.
শুনো কণা! একটা কথা ক্লিয়ারলি বুঝে নাও,আমি তোমাকে না লাইক করি না লাভ করি,কোনোটাই না,যারেই তোমার লাইক হবে তারেই পাবা এমন তো না!আমার থেকে দূরে থাকো,তুমি মেয়ে বলে আমি বেশি রুঢ হচ্ছি না বাট বুঝার চেষ্টা করো
.
দেখো আমি হাত কেটেছি
.
তোহ??
তুমি তো আরও কতজনের জন্যই কাটসো!আর আমি কি তোমাকে বলেছিলাম যে হাত কাটো!আর আমার সাথে কথা বলবা না,আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,স্টে এওয়ে ফ্রম মি
.
শান্ত উঠে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো,আহানা নওমির সাথে কথা শেষ করে স্টেজ থেকে নেমে শান্তর সামনে এসে দাঁড়ালো
.
কি?
.
কি মানে,আপনার জন্য কণা আপু জাস্ট পাগল!
.
জাস্ট পাগল তো আমি কি করবো?এটাকে পাগলামি বলে না এটাকে ছেঁসড়ামি বলে
ও এরকম আরও অনেক ছেলের জন্যই করে,সো এটা ছেঁসড়ামি,আমাকে বুঝাতে হবে না আর
.
আপুটা সত্যি আপনাকে ভালোবাসে
.
আমার এরকম মেয়ে পছন্দ না,আমাকে হুদাই বুঝিয়ে লাভ নেই বুঝছো
.
বুঝিয়েন না,আমার কি!আমি কণা আপুকে বলতেছি আপনি কিছু বুঝতে চান না
.
যাও বলো গিয়ে!
.
আহানা বিরক্ত হয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে আছে গাল ফুলিয়ে
.
শান্ত এটাই মোক্ষম সুযোগ!! আহানাকে করিডোরের দিকে নিয়ে গিয়ে কিস করে দে,আজীবনের জন্য তোকে কণা থেকে বাঁচিয়ে দিবে
.
না,আমি এই ফকিন্নিরে কিস করবো না,কোনোদিন ও না
.
করিস না,কণা তোকে নিজের জামাই বানিয়েই ছাড়বে দেখিস,, ঐ তো আসতেছে আবার
.
শান্ত চোখ বড় করে দৌড়ে আহানার কাছে এসে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো
.
আরে আরে হাত ছাড়ুন আমার!কই নিয়ে যাচ্ছেন,কি হলো টা কি??এমন করতেছেন কেন?
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে বাড়ি পেরিয়ে মাটির রাস্তায় নেমে গেছে
একটু দূরে গেলেই কাশফুলের বিরাট বিস্তার,পাশেই শীতলক্ষা নদী,শান্ত আহানাকে নিয়ে সেদিকে ছুটছে
.
আরে আমি বুঝতেছি না আপনি এত অন্ধকারের ভিতরে আমাকে নিয়ে কই যাচ্ছেন,হঠাৎ কি হলো যে এত ছোটার প্রয়োজন হলো?
আর আপনার কার তো মাটির পথটা ধরে গিয়ে সামনে পার্ক করা আছে তাহলে আপনি আমাকে এদিকে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছেন আর কেন??আশ্চর্য কিছু বলছেন না কেন
.
শান্ত আহানাকে কাশফুলের বাগানে নিয়ে এসেছে,পাশেই থাকা নদীতে চলা লঞ্চ,স্টিমারের,আর ফ্যাক্টরি থেকে আগত আলোয় দুজন দুজনের মুখ স্পষ্ট দেখতেছে এত অন্ধকারের মাঝেও
.
কি?এবার তো বলুন,এখানে কেন এনেছেন?
.
শান্ত ঢোক গিলে আহানার দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ
.
আহানা ব্রু কুঁচকে আবারও জিজ্ঞেস করলো এখানে কেন এসেছে তারা!
.
নদীর বায়ুপ্রবাহ অতি দ্রুত বয়তেছে,আহানার চুল সব ওর সারামুখে এলোমেলো হয়ে আসতেছে বাতাসে
সে চুল ঠিক করতে করতে এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে,দুপাশে ঘন বন,,চারিদিকে কাশফুল আর কাশফুল,পাশেই নদীতে সব লঞ্চ,স্টিমার,দূরে ব্রিজ দিয়ে গাড়ী যাচ্ছে সেটাও চোখে পড়তেছে
শান্ত এক কদম পেরিয়ে আহানার আরও কাছে আসলো তারপর ফিসফিস করে নিজেই নিজেকে বললো”আই হোপ!তুমি আমাকে কণা থেকে বাঁচাবা”
.
শান্ত আহানার গলার পাশ দিয়ে হাত নিয়ে ওর গলা ধরে ওকে টেনে কাছে নিয়ে আসলো
আহানার আর বুঝতে বাকি নেই শান্ত কি করতে যাচ্ছে
সে চোখ বড় করে দাঁতে দাঁত চেপে একদম দিয়ে দিলো একটা চড়!!!!
.
শান্ত আহানাকে ছেড়ে গালে হাত দিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
.
আপনার এত বড় সাহস!আমাকে ছুঁতে চান আপনি!!এসবের জন্য আমাকে এতদূর নিয়ে আসলেন,আপনার মন মানসিকতা এত খারাপ!ছিঃ!আপনাকে আমি বদমেজাজি আর ঝগড়ুটে মনে করতাম আর এখন দেখি আপনি চরিত্রহীন ও বটে
একা একটা মেয়েকে পেয়ে এটা করতে যাচ্ছিলেন আপনি!আপনি একটা খারাপ লোক!
কথা শেষ করে আহানা কেঁদে দিয়ে পিছিয়ে চলে গেলো
.
শান্ত থ হয়ে দাড়িয়ে আছে,সে আসলেই এটা কি করতে যাচ্ছিলো??
আহানা তাকে বাধা দিলে সে জোর করতো না,কিন্তু আহানা বাধা না দিয়েই গালে চড় বসিয়ে দিলো,কিস তো দূরে থাক!
.
আহানা রিয়াজদের বাসায় ফিরে দূরে একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছে
শান্ত গালে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে আসতেছে বাড়ির দিকে
সূর্য,রিয়াজ আর নওশাদ আহানাকে কাঁদতে দেখে জলদি করে শান্তকে খুঁজতে লাগলো পরে দেখলো শান্ত রোবটের মতন হেঁটে হেঁটে আসতেছে
.
কিরে?তোর কি হয়েছে?এরকম মুখ করে আছিস কেন?তুই আহানাকে কিস করলি নাকি আহানা তোকে করলো?
.
কেউ কাউকে করে নাই,তোদের জন্য আজ চড় খেলাম
.
কিহহহ!তোকে চড় মেরেছে?
.
হুম!
.
হায় রে,এই শান্তর গায়ে পড়ার জন্য মেয়েরা পাগল হয়ে যায় আর আহানা কিনা কিস কে দূরে রেখে চড় মেরে দিলো,আমরা কি ভাবলাম আর কি ঘটে গেলো
.
কণার চক্করে আহানার সামনে আমার চরিত্রটা কালার হলো
.
আমরা আর কি করবো,ভালোই আইডিয়া দিসিলাম,অবশ্য আমরা ভেবেছিলাম আহানা বাকি মেয়েদের মতন
বাট ও যে এরকম করবে তা তো ভাবনার বাইরে ছিল পুরা
.
আহানা আর ৫টা মেয়ের মতন না,আমার এটা বুঝা উচিত ছিল
.
তোর দোষ নাই,তুই তো খালি কিসই করতে চেয়েছিলি তাতে চড় মারার কি আছে?
.
নওশাদ কি বলিস?মেয়েদের হাত ধরে টানলে চড় খাইতে হয় আর শান্ত তো কিস করতে চেয়েছিলো
.
চড় কয়টা দিয়েছে?
.
শান্ত গাল ঘষে চেয়ার একটাতে বসে এক গ্লাস পানি হাতে নিলো টেবিলের উপর থেকে তারপর বললো”চড় তো একটাই দিয়েছে বাট সেটাতে আমার কষ্ট হয়নি,হয়েছে সে আমাকে যখন চরিত্রহীন বলেছে তখন
আমি তো সত্যি সত্যি কিস করতাম না
ইভেন সে আমাকে সরিয়ে দিলে আমি করতামই না
বাট না সরিয়েই থাপ্পড় মেরে দিলো
.
ইস রে,এই মেয়ের সাহস দেখেছিস!শান্তকে আন্টি জীবনে ফুলের টোকা দেয় নাই আর সে কিনা সিধা চড় মেরে দিলো
.
চড় চড় করিস না আমার গা জ্বলতেছে এই ভেবে যে সে আমাকে চরিত্রহীন বলেছে
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে