প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-১৮+১৯+২০

0
2001

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
ওকে বাদ দে সব কিছু,এখন চল স্টেজের দিকে,আমি এখন নওমিকে রিং পরাবো
.
হুম
.
আহানা গাল ফুলিয়ে দূরে বসে আছে,শান্ত স্টেজে গিয়ে রিয়াজের পাশে সোফায় বসতেই কণা এসে হেলান দিয়ে বসে পড়লো ওর পাশে
.
শান্তর রাগ বাড়তেছে অনেক!রাগ আরও যাতে না বাড়ে তাই সে উঠে দাঁড়িয়ে নেমে চলে গেলো
যেতে যেতে বললো”সূর্য!!আমার সাথে যদি কারোর বাসায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকে তো আসতে বল,আমি চলে যাচ্ছি”
.
সূর্য আহানার দিকে তাকালো,আহানা চুপচাপ উঠে দাঁড়িয়ে শান্তর পিছে পিছে যাচ্ছে
এখন মাটির পথটায় দুজনে,আশেপাশের বাড়ির আলোয় পথটা উজ্জ্বল হয়ে আছে তাই তেমন অন্ধকার ও নেই,সহজেই হাঁটা যায়
আহানা শাড়ীর আঁচল ঘুরিয়ে কাঁধ ঢেকে আসতেছে
শান্ত কারে ঢুকে চুপ করে বসে আছে সেই কখন থেকে, কিছুক্ষন বাদে আহানা এসে দরজা খুলে ভিতরে এসে বসলো,সিট বেল্ট লাগানোর আগেই শান্ত খুব জোরে গাড়ী চালানো শুরু করে দিলো
আহানা গিয়ে দুম করে মাথায় একটা বাড়ি খেলো সামনে
মাথা ডলতে ডলতে শান্তর দিকে তাকালো সে
.
শান্ত সামনের ব্যস্ত নগরীর দিকে চেয়ে কার চালাতে চালাতে বললো”আমাকে দেওয়া একটা চড় তোমার উপর খুব ভারী পড়বে মিস আহানা!”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে সিট বেল্ট লাগিয়ে নিলো
একটা বাজারের উপর দিয়ে যাচ্ছে তারা,বাজারটায় সব রিকাশা,অটোরিকশা, বাইক এসবে মিলে রুলস ব্রেক করে জ্যাম সৃষ্টি করেছে,যাত্রামুড়া থেকে একদম কাঁচপুর ব্রিজের কাছাকাছি পর্যন্ত জ্যাম
শান্ত একটু এগোচ্ছে কার নিয়ে তো আরও একটু থেমে থাকছে
পথটাতে চলায় মুশকিল হয়ে গেছে একেতো চিকন রোড তার উপর এত ভিড়!রাত ৮টা বাজে হয়ত
আহানা বাইরের দোকানগুলির দিকে চেয়ে আছে আনমনে
একটা সেলুন তার পাশে মুদি দোকান,তার পাশে ফার্মেসি
সামনেই অনেক লোকেরা মাছের বাজার নিয়ে বসেছে,তরিতরকারি ও আছে
.
বাজারটা পেরিয়ে তারা এবার কাঁচপুর ব্রিজে উঠলো,আহানা একটু নড়েচড়ে বসে মুগ্ধ চোখে শীতলক্ষ্যা নদী দেখছে,কি সুন্দর টাই লাগতেছে,লঞ্চ স্টিমারের আলোয় মনে হয় নদীটা আরও মনমুগ্ধকর হয়ে গেছে
.
এদিকে শান্ত রাগে গজগজ করতে করতে কার চালাচ্ছে,ভাঙ্গচুর করলে রাগ কমতো
মন তো চাচ্ছে আহানাকে ব্রিজ থেকে ফেলে দিতে,সম্ভব হলে শান্ত সেটাই করতো এতক্ষণে
শান্ত ব্রিজ থেকে নামতেই আবারও জ্যাম দেখে কার থামিয়ে নিলো
আহানা একবার কানের থেকে চুল সরাচ্ছে আবার শাড়ী ঠিক করছে,হাতের চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজে শান্তর রাগ আরও শেখরে উঠতেছে
.
শান্ত কারের জানালায় হাত রেখে সেটায় মাথা রাখলো,তাও ঝুনঝুন আওয়াজ হয়েই যাচ্ছে ক্রমাগত
হাতের উপর থেকে মাথা তুলে শান্ত চোখ রাঙিয়ে আহানার দিকে তাকালো
আহানার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ ও নেই,সে নিজের মনমত চুল নিয়ে খোঁপা করে যাচ্ছে
শান্ত আহানার হাত মুঠো করে টেনে ধরলো নিজের দিকে
.
আহানার এবার হুস আসলো,শান্ত তার হাত ধরেছে কেন,আবার কি করবে সে!
.
আহানা হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বললো”আর কি করবেন আপনি?”
.
যাই করি না কেন,আবার চড় দেওয়ার সাহস রাখো?
.
যতবার বেয়াদবি করবেন ঠিক ততবার চড় দেওয়ার সাহস রাখি আমি
.
তোমার হাত ধরেছি তোমার হাতের এই মিউজিক ব্যান্ড অফ করতে
.
মিউজিক ব্যান্ড মানে?
.
চুড়ি,এটার আওয়াজে আমার মাথা ব্যাথা বেড়ে গেছে,এখনই খুলো এটা
কথাটা বলে শান্ত আহানার হাত থেকে টেনে চুড়ি সব খুলে ওর হাতে ধরিয়ে দিলো
.
তারপর আবার মুখ ঘুরিয়ে বসে পড়লো সে
আহানা মনে মনে ভাবলো সামান্য চড়ের জন্য এরকম করতেছে!এত মিসবিহেভ করছে আমার সাথে!
.
জ্যাম আছে এখনও,আহানা রেগে গিয়ে একদম দরজা খুলে বেরিয়ে চলে গেলো
.
শান্ত চুপ করে তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে
কাঁচপুর থেকে সায়দাবাদ বেশি দূর না হলেও আবার কাছেও না,আহানা একটা মেয়ে হয়ে একা এতদূর কি করে যাবে ওর কাছে তো টাকাও নেই,শান্ত নিজের মাথার চুল টেনে এখনও চুপ করে আছে
আহানা হেঁটেই চলেছে,থামাথামি নেই কোনো
.
শান্ত কারটা নিয়ে দূরের একটা ফাঁকা জায়গায় কোনোরকম পার্ক করে রেখে আহানার পিছন ছুটলো
.
আহানা ফুটপাত ধরে হেঁটে চলেছে পাশেই বিরাট বড় জ্যাম লেগে আছে
বাস,বাসের সামনে আরেকটা বাস তার সামনে কার তার পাশে বাইক,সব পেরিয়ে ফুটপাতের উপর দিয়েই আহানা হেঁটে চলেছে
শান্ত ওর হাঁটার গতি বাড়িয়ে আহানাকে শেষ পর্যন্ত ধরেই ফেললো,ওর হাত মুঠো করে ধরে নিজের দিকে ফেরালো সে
.
তোমার সমস্যা কি?
.
আমার হাত ছাড়ুন,আমি আপনার সাথে আর কোথাও যাব না,আমি একাই বাড়ি ফিরতে পারবো,হাত ছাড়ুন,অনেক হয়েছে
.
শান্ত চুপ করে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে তারপর আহানাকে টানতে টানতে নিয়ে আসতে লাগলো
আহানা ওর শক্তির সাথে পারছেই না,নিজের আরেক হাত দিয়ে শান্তর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে সে
শান্ত আহানাকে কারের কাছে নিয়ে এসে দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে কারের ভিতরের সিটে ফেললো ওকে
আহানা সিটের উপর দুম করে পড়ে হাতের কুনুই ধরে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে
.
শান্ত একটা কথাও বললো না
নিচু হয়ে আহানার শাড়ীর আঁচল ভিতরে সরিয়ে দিয়ে দরজা লাগিয়ে নিজেও ভিতরে এসে বসলো,তারপর আহানার দিকে ফিরে ওর কাছে এসে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলো চুপচাপ
.
এত কেয়ার দেখাতে হবে না,আপনাকে চেনা হয়ে গেছে আমার
.
তোমাকে কেয়ার দেখাচ্ছি না আমি,তোমার যদি আজ রেপ হয় বা অন্য কিছু হয় আমি আমার মায়ের সামনে আর তোমার মায়ের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো?
.
তারা যখন জানবে আপনি নিজেই আমাকে জোর করে কিস…করতে চেয়েছিলেন তখন কি ভাববে?
.
আমার কিস আর তোমার সাথে অন্যসব হওয়া সম্পূর্ন ভিন্ন ব্যাপার!
তুমি একা ৪/৫টা ছেলের সাথে পারবা না,এসব না ভেবেই ডেং ডেং করে একা অন্ধকার জায়গায় হাঁটা ধরেছেন উনি
তোমাকে তো দিনে রাতে ২৪টা থাপ্পড় মারা উচিত
.
আহানা রাগে আরেকদিকে ফিরে বসলো
শান্ত সায়দাবাদ এসে কার থেকে নেমে হাঁটা ধরলো সোজা আহানাদের বাসার দিকে অথচ যার বাসা সে এখনও কারের ভিতর,তার খবর ও নেই শান্তর
আহানা কার থেকে নেমে শান্তকে গালি দিতে দিতে পিছন পিছন আসতেছে
শান্ত বাড়ির সামনে এসে দরজায় নক করলো কয়েকবার
তারপর মা এসে দরজা খুলে শান্তকে দেখে খুশি হলেন তারপর বললেন ভিতরে আসতে,শান্ত ভিতরে আসলো না শুধু বললো ছবির ছেলেটা সে ছিলো
.
মা হেসে বললেন “জানতাম আমি,আমি তো শুধু দেখতে চেয়েছিলাম কি হয়,আহানাকে ভালো করে চিনি আমি ও এখন পর্যন্ত এসবে জড়ায়নি”
.
জড়াবেও না,ওর মত মেয়ে কারোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না
কথাটা বলে শান্ত চলে গেলো
আহানা এসে দেখলো শান্ত চলে যাচ্ছে,মা মুখটা ফ্যাকাসে করে তাকিয়ে আছেন সেদিকে
.
উনি কি বলেছে তোমায়?
.
বললো!,,,,,,,,,,, না থাক,আয় ভিতর আয়
.
আহানা শাড়ী পাল্টিয়ে জামা পরলো তারপর ভাবলো যেহেতু সে চাকরি পাচ্ছে না তাহলে আগে যা করতো সেটাই করা উচিত,রতন জ্বালায় তো কিছু করার নেই,চাকরি ও তো পাচ্ছি না,আগের মতন সকালে বাচ্চাদের পরাবো আর বিকাল থেকে টিউশনি
আর যাই হোক এই লোকটার অফিসে আমি চাকরি করবো না
.
শান্ত বাসায় ফিরে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ফেললো
আলমারি থেকে বিয়ারের একটা বোতল নিয়ে বারান্দায় গিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো সে
গায়ের কোটিটা খুলে নিচে ফেলে দিলো
পাঞ্জাবির কয়েকটা বোতাম খুলে চোখ বন্ধ করে আছে সে
আজ আর ঘুমাতে বিছানায় আসেনি শান্ত,চেয়ারেই ঘুমিয়ে গেছে,হাতে বিয়ারের খালি বোতল ঝুলতেছে,সূর্যের আলো চোখে পড়তেই শান্ত জেগে গেলো,হাত থেকে বোতলটা ছেড়ে দিয়ে চোখ ডলে ঠিক হয়ে বসলো,তারপর ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে মাথার চুলগুলো টেনেটুনে উঠে দাঁড়ালো সে,আলমারি থেকে তোয়ালে নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেলো,ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিয়ে ডাইনিংয়ে আসলো এবার
মা টিভি দেখতেছিলেন, শান্তকে দেখে হেসো দিলেন তিনি
শান্ত ও হাসলো,তারপর রিপাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো “নিতু কোথায়”
রিপা বললো “রেডি হচ্ছে”
শান্ত জলদি করে খাওয়া শেষ করে নিতুকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো
পথে নিতুকে তার স্কুলে নামিয়ে দিয়ে শান্ত অফিসে আসলো
ঊষা একটা লেটার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই কখন থেকে,শান্তকে দেখে গুড মর্নিং তো বললো কিন্তু এই লেটারের রহস্যটা বলার সাহস পায়নি সে
শান্ত এই লেটারটা পড়লে অফিসের উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে যাবে এখন
ঊষা পা টিপে টিপে শান্তর অফিস রুমের সামনে এসে নক করলো,তারপর ভিতরে ঢুকে দেখলো শান্ত তার কোট খুলে চেয়ারে রেখে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে,ঊষা ঢোক গিলে বললো”স্যার আপনার নামে একটা লেটার এসেছে”
.
কে পাঠিয়েছে?
.
সসসসুহানা
.
শান্ত ল্যাপটপ থেকে চোখ উঠিয়ে বললো”রেখে যাও”
.
ঊষা মনে হয় কত বড় ধমক থেকে বেঁচে গেলো,লেটারটা টেবিলের উপর রেখে বলপয়েন্ট দিয়ে চেপে রেখে সে আর এক মূহুর্ত ও থাকলো না সেখানে
.
শান্ত এবার লেটারটা হাতে নিলো,খুলে যা দেখলো তার মেজাজ বিগড়ে ১০তলায় উঠে গেছে
হাতে থাকা পানির গ্লাস ছুঁড়ে মারলো সে
.
লেটারটা হলো Resignation এর
আহানা অফিস কেন ছাড়তেছে সেটার রিজন ও স্পষ্ট করে লিখা আছে,আহানা লিখেছে “Shanti Group of industry ” একটা ভালো নাম করা কোম্পানি বটে তবে এটার কর্মচারী এবং মেইন মালিক একজন ফালতু লোক,ব্যবহার অতি খারাপ!নারীর সাথে কেমন বিহেভ করবে তা তার জানা নেই,মিঃ শাহরিয়ার শান্তর ইমিডিয়েটলি ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন তা না হলে অবস্থার শুধু অবনতিই হবে!
.
এত বড় সাহস মেয়েটার!! আমার অফিসের এরকম বাজে একটা রিভিউ দিলো!!সাহস দেখানো ভালো তবে অতিরিক্ত সাহস অনেক খারাপ!
.
ঊষা কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজ পেয়ে ভয়ে পালিয়েছে ততক্ষণে,শান্তকে সে অনেক ভয় পায়,না জানি সুহানার কি অবস্থা হবে
.
আহানা ভার্সিটিতে গালে হাত দিয়ে বসে আছে,তবে চোখে মুখে চিন্তা নেই তার,শুধু হাসি আর হাসি
.
কিরে আহানা এত হাসতেছিস কেন?
.
সত্যি কথা বললে হাসি তো হাসবেই,হাহা!
.
কি সত্যি বলেছিস?আর কাকে?
.
কিছু না বাদ দে,তোর আর নওশাদ ভাইয়ার কতদূর এগোলো সেটা বল আগে
.
সে তো আমাকে লাইক করে একটু একটু
.
একটু থেকেই অনেক খানি হয়ে যাবে দেখিস
.
তুই তো কাল নাকি নওশাদ ভাইয়ার ফ্রেন্ড রিয়াজ ভাইয়ার আংটিবদলে গেছিলি,কেমন লাগলো?
.
সব চেয়ে বাজে দিন ছিল কাল
.
কেন কি হয়েছিলো?
.
কিছু না বাদ দে,চল আমরা ক্যামপাসে একটু ঘুরি
.
আহানা রুপার হাত ধরে ক্যামপাসে নামতেই সবার আগে যার দিকে চোখ পড়া উচিত তার দিকেই চোখ পড়লো আর সেটা হলে শান্ত
কালো কোট আর তার ভিতরে সবুজ শার্ট পরে আছে,পকেটে হাত ঢুকিয়ে কারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে,তাও গেটের সামনে
আহানা না দেখার ভান করে আরেকদিকে চলে গেলো

সে একটু দূরে গিয়ে আবারও তাকালো,শান্ত এখনও একি জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
গাল এমন ভাবে ফুলিয়ে রেখেছে যেন সামনে যারে পাবে তারেই হত্যা করবে
.
কয়েকটা মেয়ে শান্তর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় থেমে গিয়ে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিলো তারপর ফোন টিপে শান্তর ছবি বের করে মিলিয়ে নিলো
আরে এটা তো সত্যি সত্যি শাহরিয়ার শান্ত!!
ও মাই গড!
মেয়েগুলে লাফিয়ে শান্তর সামনে এসে ও মাই গড বলেই যাচ্ছে এখনও
তারপর শান্তর সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো সবাই
শান্ত রোবটের মত দাঁড়িয়ে থেকে আহানা কি করছে কোথায় যাচ্ছে সেটাই দেখে যাচ্ছে
.
আহানা!
.
জি করিম স্যার বলুন!
.
তোমার ফ্যামিলি থেকে একজন এসেছে তোমাকে নেওয়ার জন্য, যাও,তোমার ছুটি দিলাম
.
কিরে কে এসেছে তোর?
.
আহানা শান্তর দিকে একবার তাকিয়ে কথাটা ইগনর করতে চাইলো পরে ভাবলো গুরুত্বপূর্ণ কিছু যদি হয়?
তাই ব্যাগ হাতে নিয়ে সে এগিয়ে আসতেছে এদিকে
শান্ত আহানাকে আসতে দেখে মেয়েগুলোর সাথে হেসে পিক তুলতে লাগলো,মেয়েগুলো তো মনে হয় খুশিতে মরেই যাবে
আহানা কপাল কুঁচকিয়ে কাছে এসে বললো”কি চাই?”
.
শান্ত কিছু না বলেই পকেট থেকে ফোন বের করে আহানার মাকে ফোন করলো,উনি রিসিভ করতেই ফোনটা সে আহানার কানে লাগিয়ে ধরলো
মা বলতেছে আহানা যেন শান্তর সাথে তাদের বাসায় আসে,শান্তর মা আর আহানার মা মিলে কি কথা বলবে ওদের সাথে তাই শান্তকে বলেছে আসার সময় যেন আহানাকে তার ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসে
.
আহানা ঠিক আছে বলতেই শান্ত তার ফোন পকেটে ঢুকিয়ে কারে গিয়ে বসলো
.
মুখটা কেমন বেলুন বানিয়ে রেখেছে 😂কি যে লাগতেছে,এটাই তো চেয়েছিলাম
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৯
#Writer_Afnan_Lara
🌸
ভিতরে এসে বসার জন্য কি ইনভাইট করতে হবে?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে সাথে সাথে এসে বসলো,শান্ত ওর দিকে তাকাচ্ছে বারবার,তাও ভালো ভাবে না এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন খেয়েই ফেলবে,আহানার একটুও ভয় লাগছে না কারণ তার ধারণা সে যেটা করেছে ঠিক করেছে,রিভিউটা সত্যি ছিল
কিছুদূর যাওয়ার পর আহানা বুঝতে পারলো এটা শান্তদের বাসায় যাওয়ার রোড না,তাহলে এটা কোথায় যাচ্ছেন উনি?
আহানার এবার ভয় করতেছে কারণ শান্ত ওর দিকে চেয়ে দাঁত কেলিয়েছে দুবার
আহানা গায়ের সুতির ওড়না দিয়ে কপালটা মুছে নিলো,সে সবসময় আত্নরক্ষার জন্য ব্যাগে একটা নেইলকাটার রাখে,যেটা দিয়ে নিজেকে সাময়িক ভাবে বাঁচাতে পারবে,তো সেটা হাতে নিয়ে বের করে রেখেছে,শান্ত আবারও কালকের মত কিছু করতে গেলে অবস্থা খারাপ করে দিবে তার
.
শান্ত কার এমন একটা জায়গায় থামালো যেখানের রোডটা সম্পূর্ণ ফাঁকা,পিপড়াও নজরে আসতেছে না,দুপাশে ঝাউ গাছ,রেডের পাশে সব ক্ষেত,দূরদূরান্তেও ক্ষেত,১০মিনিট পর পর একটা প্রাইভেট কার দেখা যায়
আহানা ঢোক গিলে গাপটি মেরে বসে আছে,নামতেছে না কার থেকে
শান্ত নেমে গিয়ে ঘুরে এসে দরজা খুলে আহানাকে টেনে বের করলো
.
এই!আপনি কি করতে চাচ্ছেন টা কি??আমাকে এখানে আনছেন কেন!
.
তোমারে দিয়ে হিউম্যান জুস বানাবো আজ
.
হিউম্যান জুস মানে!
.
শান্ত আহানাকে কারের সাথে চেপে ধরলো ভালো করে
.
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতের নেইল কাটার টা ভালো করে ধরলো,আর কিছু করলে একদম কেটেকুটে দিবে সে
.
শান্ত কপাল কুঁচকে বললো”আমার দিকে তাকাও!তোমার সাহস হয় কি করে আমার সাথে এরকম বেয়াদবি করার??চিঠি দিতে কে বলেছিল?সাহস থাকলে মুখোমুখি এসে বলতা,রিভিউ দিতে কে বলসে তোমাকে?অফিসের সবাই কি ভাবছে??তোমার এত সাহস আসে কই থেকে?
.
আহানা বুঝলো শান্ত উল্টা পাল্টা কিছু করবে না তাই নেইল কাটার যে হাতে আছে সেই হাতটা লুকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো”যেটা সত্যি সেটাই বললাম,আর অফিসে যখন আর আসবোই না,, লেটার তো দিতেই হতো
.
তুমি যা করতেছো সব অতিরিক্ত করতেছো!একবার চড়,একবার এটা,একবার সেটা
.
আমি কি এমনি এমনি করতেছি?আপনি কিছু করেন না?আপনার সাহস হলো কি করে কাল আমাকে একা টেনে নিয়ে গিয়ে কিস করার চেষ্টা করার?
.
আমি তেমনটা করতাম না,রিয়াজ বললো কণা…..
.
কণা কি?মিথ্যা বাহানা দিবেন না একদম,একটা কথা কি জানেন,কণা আপুর সাথেই আপনাকে ভালো মানাবে
.
হ্যাঁ আর তোমার সাথে বাংলাদেশ কেন কোনো রাষ্ট্রের ছেলেকেই মানাবে না
.
সেটা আপনার দেখতে হবে না,কার সাথে মিলিয়েছি আমি সেটা ভেবে দেখুন না,একটা ফুল মেন্টাল মেয়ের সাথে আপনাকে মিলিয়েছি
কথাটা বলে আহানা মুখ বাঁকিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো
অনেক জোরে বাতাস বয়ে যাচ্ছে,আহানা ওড়না টেনে মাথায় দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে নিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো শান্ত কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আহানার চাহনি দেখে আরেকদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
.
আহানা আবারও সামনে তাকালো
এই লোকটা এত খারাপ!
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে তাকালো এবার আহানার দিকে,আহানা হাতে একটা গাছের ঢাল নিয়ে সেটা নাড়তেছে বারবার
পরনে সুতির একটা থ্রি পিস,হলুদ রঙের
শান্ত গাল ফুলিয়ে এখনও তাকিয়ে আছে ওর দিকে
আহানা আবারও ফিরে তাকালো,তাকিয়েই দেখলো শান্ত এতক্ষণ চেয়ে ছিল ওর দিকে
শান্ত আহানার তাকানো দেখে আরেকদিকে ফিরে গেলো আবার
তারপর চুপচাপ কারে উঠে বসলো সে
আহানা ঢালটা ফেলে সেও এসে বসলো,দুজনে এবার কোনো ঝগড়াঝাটি না করে ভালো ছেলেমেয়ের মতন বাসায় ফিরে আসলো
আহানা কার থেকে নেমেই বাসার ভেতর দৌড় দিলো
এসে দেখলো শান্তর মা আর ওর মা সোফায় বসে হাসতেছেন দুজনে
আহানা উনাকে সালাম দিয়ে পাশে এসে বসলো,শান্ত আহানার মাকে সালাম দিয়ে চলে যেতে নিতেই উনি বললেন আহানার পাশে এসে বসতে
আহানা চোখ বড় করলো সাথে শান্ত ও
শান্ত শেষমেষ চেয়ার টেনে বসলো,আহানার সাথে বসার মন মানসিকতা তার নাই
শান্তর মা চোখ বড় করলেন শান্তর দিকে তাকিয়ে
আর কি করবে!! শান্ত বাধ্য ছেলের মতন চেয়ার থেকে এসে আহানার পাশে বসলো
.
শান্তর মা এবার আহানার মায়ের হাত ছুঁয়ে বুঝালেন কথা শুরু করতে
.
তো শুনো তোমরা,আমরা দুই বোন মিলে ঠিক করেছি তোমাদের ছোটবেলার এই মিষ্টি সম্পর্কটাকে একটা বৈধ সম্পর্কে রুপ দিব
আর সেটা হলো তোমাদের দুজনকে বিয়ে দিয়ে দিতে চাই,আমাদের এবার আত্নার সম্পর্কটাও গভীরতর হয়ে যাবে
.
কথাটা শুনে শান্ত আর আহানা একসাথে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো সোফার উপর থেকে
দুজনেই চিল্লিয়ে বললো”অসম্ভব!!! ”
.
শান্তর মা আর আহানার মা হা করে তাকিয়ে আছেন
.
আমি?আমি বিয়ে করবো এই খারাপ অসভ্য লোকটাকে?জীবনেও না
.
আমি?আমি বিয়ে করবো এই বেয়াদব মেয়েটাকে??কখনও না
.
আহানার মা আর শান্তর মা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন
.
আমি বেয়াদব?আপনার সাহস তো কম না,মায়ের সামনে আমাকে বেয়াদব বলেন
.
তুমি আমাকে অসভ্য বলসো সেটার কি হবে?খারাপ ও তো বলছো!তোমাকে তো আমার এখন ধরে বাসা থেকে বের করে দেওয়া উচিত,আমার বাসায় এসে আমাকেই অসম্মান করে কথা বলো তুমি!
.
এই তোমরা দুজনে থামো!আমাদের কথা বলতে দাও
.
শান্ত আহানাকে এক ধাক্কা দিয়ে দূরে গিয়ে বসলো
আহানা সেফায় দুম করে পড়ে মা আর শান্তর মায়ের দিকে তাকালো,তারা বিষয়টা খেয়ালই করে নাই
আহানার মা ফিসফিস করে শান্তর মায়ের সাথে কি নিয়ে যেন আলোচনা করতেছেন
আহানা এবার উঠে এসে শান্তকে এক ধাক্কা মারতে যেতেই শান্ত ওর হাত ধরে ফেললো
.
হাত ছাড়ুন!আপনি আমাকে ধাক্কা দিসেন কোন সাহসে?
.
বাসা থেকে ধাক্কা মেরে বের করা উচিত ছিল আমার
.
আহানা হাত ছাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে জুসের গ্লাস নিয়ে শান্তর মুখে মেরে দিলো
.
শান্ত মুখ মুছে আহানার চুলের মুঠি ধরে টান দিলো এবার,দুজনের মধ্যে মারামারি লেগে গেছে পুরো,অবস্থা ডেঞ্জারাস!
.
আহানার মা আর শান্তর মা ওদের দিকে তাকিয়ে দেখলো
আহানা শান্তর কোট প্রায়ই ছিঁড়েই ফেলেছে,আর শান্ত আহানার চুলের ১২/১৩টা বানিয়ে ফেলেছে
ওদের কাণ্ডকারখানা দেখে দুজনে রোবটের মত তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ ,তারপর ফিক করে হেসে দিলেন
উনাদের হাসি দেখে আহানা আর শান্ত দুজন দুজনকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
শান্তর মা তার আঁচলের ভিতর থেকে একটা কার্ড বের করলেন,লাল রঙের একটা কার্ড,দেখে মনে হচ্ছে বিয়ের কার্ড
মা কার্ডটা বাড়িয়ে ধরলেন শান্ত আর আহানার দিকে
.
আহানা আর শান্ত দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে কার্ডটা একসাথে ধরলো,তারপর দুজনে টানাটানা করে শেষে দুজনের হাতে রেখেই কার্ড খুললো,ভিতরে লিখা আছে
শুভ বিবাহ♥
বরের নাম-শাহরিয়ার শান্ত
বধুর নাম-আহানা ইয়াসমিন
এ দুলাইন দেখে শান্ত আর আহানা চোখ বড় করে তাকালো তারপর ভ্রু কুঁচকে যে যার মায়ের দিকে তাকালো
.
আহানার মা হেসে বললেন “কার্ডটা তোমরা যখন ছোট ছিলে তখন তোমাদের বিয়ের কথা আমরা দুই পরিবার মিলে পাকা করে প্রমাণ স্বরুপ বানিয়ে রেখেছিলাম কার্ডটা,এতদিন বুবুর কাছে ছিলো এটা
তারিখ কিন্তু তোমাদের বিয়ে যেদিন হওয়ার কথা ঠিক সেদিনকার তারিখই লিখা আছে এখানে,আজ থেকে ঠিক ২মাস পরে
.
তো?
.
তো?
.
তো মানে কি?দুজনে একসাথে “তো” বলতেছিস কেন,তোদের বিয়ে ২মাস পরেই হবে ব্যস
.
আন্টি আপনারা অনেক ডিসিশন নিয়ে ফেলছেন আমাকে না জানিয়েই,এখন আমার কথা শুনুন, বিয়েটা হচ্ছে না,আমি এই মেয়েটাকে পছন্দ করি না,সে আমার ওয়াইফ হওয়ার যোগ্যই না
.
এক মিনিট!যোগ্য তো আপনি নিজে না,আমি আপনাকে জীবনেও বিয়ে করবো না
.
আর কিছু না বলে কোনোদিকে না তাকিয়েই আহানা হনহনিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো
শান্ত নিজের রুমের দিকে চলে গেছে ততক্ষণে
শান্তর মা আর আহানার মা মুখটা ফ্যাকাসে করে বসে আছেন
এরা দেখি দুজন দুজনকে সয্যই করতে পারে না,আর আমরা এদের নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতেছিলাম
শান্তর মা চোখ মুছলেন পরে হেসে দুহাত জোড় করে দেখালেন আহানার মাকে
মানে ওরা একসাথ হবে বা একসাথ করতে হবে এরকম কিছু বুঝিয়েছেন তিনি

আহানা বাসায় ফিরছিলো সামনে এসে পড়লো রতন!
ওকে উপেক্ষা করে আহানা পাশ কাটিয়ে যেতে নিতেও পারলো না কারণ রতন ওর পথ আবারও আটকে ফেলেছে
.
দেখ রতন,মেজাজ খারাপ করবি না আমার,পথ ছাড়
.
ছাড়বো না,কি করবি?
.
আহানা পা দিয়ে রতনের পা মাড়িয়ে ধরে বললো”দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারাবি তুই”
.
রতন ব্যাথা পেয়ে সরে গেলো,আহানা আর এক মিনিট ও দাঁড়ালো না,চলে গেলো সে বাসার দিকে
রতন পা ধরে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকলো ওখানে দাঁড়িয়ে
আহানার অনেক অপমান আমি সহ্য করেছি আর না,এবার এরে উঠিয়ে নিয়ে নিজের সব ইচ্ছা আমি পূরন করবো,বহুত ছাড় দিসি
বড়লোক ছেলের গাড়ীতে করে এদিক ওদিক চলা ফেরা করে,সময় থাকতে এরে এখনই আমার আয়ত্তে নিয়ে আসতে হবে
.
শান্ত নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে পড়েছে,ল্যাম্পশ্যাডের টেবিলটার উপরে তার আর আহানার ছোটবেলার ছবিটা রাখা
শান্ত সেটার দিকে তাকিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসলো
.
আমি?আমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করবো?মা এটা ভাবলো কি করে!জীবনেও আমি ওরে বিয়ে করবো না,আমার লাইফ আমি কিছুতেই এভাবে নষ্ট হতে দিব না
.
আহানার মা শান্তর মা কে বিদায় দিয়ে উনিও বাড়ি ফিরে আসলেন,আহানা কাঁথা টেনে ঘুমাচ্ছে মরার মতো,যেনো কিছুই হয়নি
মা রাগ করে ঘরের সব জিনিসপাতি ধুমধাম করে এখান থেকে ওখানে রাখতেছেন
আহানা ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখলো মা পুরো বাড়িতে উথাল পাতাল করতেছে
.
কি ব্যাপার এমন করো কেন?
.
কথায় আছে না মানুষরে সুখে থাকতে ভূতে কিলায়,তোর হইছে সেটা!তুই আমাদের সবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে ভাঙ্গতেছিস
.
আমার জীবন,আমার জীবনের ডিসিশন ও আমারই
.
তোর কপালে রতন জুটবে দেখিস,আইতে যাইতে গায়ে খালি হাত তুলবে,তখন তোর খুব ভালো লাগবে তাই না?
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে ওড়না গায়ে দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে চলে গেলো
বিকাল হয়ে গেছে,আহানা তাই প্রতিদিনকার মতন আগে চিত্রাকে পড়াতে গেলো
তারপর যাবে রিপার বোন রুনাকে পড়াতে,আজকে এসবে একটুও মন নেই তার কিন্তু তারপরেও টাকার জন্য করতে হচ্ছে,শরীর ও দূর্বল লাগতেছে,সকালে দুমুঠো ভাত খেয়ে যে বেরিয়েছিল আর কিছুই খাওয়া হয়নি তার
রুনাকে পড়ানো শেষ দিয়ে এবার সে গেলো সিয়াদের বাসায়,উফ এত ঝামেলা,টিউশনি সব চাইতে বিরক্তিকর!
সবার শেষে নিতুকেও পড়াতে হবে
না আমি নিতুকে আর পড়াবো না,ঐ বাড়িতে গেলেই ঐ লোকটার সাথে ঝগড়ায় পড়তে হয়
আমাকে যা তা বলে কথা শুনায় সবসময়!আর জীবনেও উনার মুখোমুখি হবো না আমি
সব টিউশনি শেষ,এখন বরাবর সন্ধ্যা ৬টা বাজে,নিতুকে যেহেতু আজ পড়াবো না তাহলে বাসায় ফিরি
নাহ!!ফিরবো না,মা সব কিছুতে বাড়াবাড়ি করে, আমি ফিরবো না আজ
ফিরবো কিন্তু দেরি করে,বুঝুক একটু আমাকে বকলে কি হয় হুহ!
.
আহানা আজ আর রিকসা নিলো না, টাকা আছে,বরাবর ৩০টাকা,ওটা দিয়ে বাড়ি ফেরা যাবে কিন্তু ঐ যে দেরি করে ফিরবে সে জন্যে আহানা হেঁটেই বাড়ি ফিরতেছে
১০/১২মিনিটেই ধুসর অন্ধকার নেমে গেছে চারিদিকে
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চলেছে মনের ভিতর কড়া সাহস নিয়ে

ঊষা কাল সকালে মিটিং নেই তাই আমি দেরি করে অফিসে আসবো
.
ওকে স্যার
.
শান্ত ফোন রেখে কার ড্রাইভ করায় মন দিলো,জলদি করে বাসায় ফিরতে হবে,আহানাকে আজ সোজা কথা বলে দিব নিতুকে যেন আর পড়াতে না আসে
.
শান্ত মোড়ে কার ঢুকাতেই ওর মনে হলো আহানাকে দেখলো সে
কিন্তু এখন তো সে নিতুকে পড়াতে যাওয়ার কথা,তাহলে কই যাচ্ছে?
ভাবতে ভাবতে শান্ত কার থামিয়ে কার থেকে নেমে আহানাকে ডাক দিলো
আহানা থেমে গিয়ে পিছন ফিরে দেখলো শান্ত গাল ফুলিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আবার কি?আর কি কোনো কথা শুনানো বাকি আছে আপনার?
.
তোমার সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলার সময় আর ইচ্ছে দুটোই নেই আমার,জাস্ট বলতে এলাম তুমি এর পর থেকে নিতুকে আর পড়াতে আসবা না
.
আপনি বলার জন্য বসে নেই আমি,আমি এমনিতেও পড়াবো না ওকে,ঐ বাড়িতে গেলে আপনার এই চাঁদমুখ দেখতে হবে কিনা এই ভয়ে আমি যাবো না
.
শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে আর দাঁড়িয়ে না থেকে গাড়ীতে উঠে চলে গেলো,হুদাই কথা বললে কথা বাড়ে
আহানা ও মুখ বাঁকিয়ে আবার হাঁটা ধরেছে
সে যে পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সেটার দুপাশে বাড়ি,মাঝখান দিয়ে ফাঁকা রোড,তবে অতোটাও ফাঁকা নয়,বাইক/কার/রিকসা এসবের চলাচলতি আছে খানিকটা
আহানা শান্তকে মনে মনে গালি দিতে দিতে হাঁটতেছে
হঠাৎই ওর সামনে কেউ এসে দাঁড়িয়ে পড়লো
আহানা রোড থেকে চোখ উঠিয়ে উপরে চেয়ে দেখলো রতন দাঁড়িয়ে আছে,ওর সাথপ আরও ৩টা ছেলে,সবার মুখে হাসি,আর এই হাসিতে আহানা নিজের ক্ষতিটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে,চেঁচিয়েও যে মানুষ পাবে না তা আহানা জানে কারণ সে নির্জন এলাকায় আছে এই মূহুর্তে,এতক্ষণ আসার সময় রাস্তার দুপাশে বাড়িঘর ছিল আর এখন শুধু গাছ আছে দুপাশে
আহানার ভয় লেগে উঠলো,কারণ এমন একটা সময়ে রতনকে তার সাথীদের সাথে দেখলে ভয় লাগারই কথা
আহানা তারপরেও শক্ত হয়ে বললো”কি সমস্যা? আমার পথ আটকিয়েছিস কেন?”
.
তোকে নিয়ে যাবো তাই
এটা বলেই রতন আহানার হাত মুঠো করে ধরে ফেললো
.
আহানা হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় বিফল হয়ে চিৎকার দিলো,কিন্তু ততক্ষণে রতন ওর মুখ চেপে ধরে ফেলেছে

আহানা এ অসময়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলো কেন?এই মেয়েটা!!একটা জেদি,নাছোড়বান্দা মেয়ে
বুঝে না কেন দেশের অবস্থা ভালো না মানে ভালো না!সে নিজে যে মেয়ে এটা তার জেদের নিছে সবসময় চাপা রাখে
সাত পাঁচ কিছু হয়ে গেলে তখন?
আমি বুঝতেছি আমার কেন এত ভাবনা ওকে নিয়ে! মরুক!
.
রতন আহানাকে উঠিয়ে নিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে এসেছে,হাত পা মুখ বেঁধে খাটের এক কোণায় বসিয়ে রেখেছে ওকে
আর সে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছেলেগুলোর সাথে ওর আর আহানার বিয়ে নিয়ে কথা বলতেছে,বিয়েটা আজ রাতের মধ্যেই সেরে ফেলবে সে তাই ছেলেগুলোকে জোড় দিয়ে আদেশ দিচ্ছে
আহানা হাত পায়ের বাঁধন কিছুতেই খুলতে পারতেছে না,১০মিনিট ধরে হাত পা বহুত নেড়েছে তাও বাঁধ খুললো না,মজবুত করেই বেঁধেছে রতন,এখন আহানা দূর্বল হয়ে গিয়ে চুপচাপ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,একটা কিছু পেলেই সেটা দিয়ে নিজেকে কি করে রক্ষা করবে সেই ভাবনাই ঘুরতেছে আহানার মাথার ভেতর
এদিকে চিৎকার যে দিবে তার ও উপায় নাই,মুখ ও বেঁধে রেখেছে রতন
মায়ের সাথে রাগ করতে গিয়ে আজ এ ঝামেলায় পড়বো কে জানতো!নির্ঘাত বিয়ের বন্দোবস্ত করতেছে বেয়াদবটা!কি করে বাঁচবো আমি
বিশ পেলে সেটা খেয়ে বসে থাকতাম,জান দিব তাও ইজ্জত দিব না
.
শান্ত কার ঘুরিয়ে আবারও ফিরে আসলো সেই মোড়ে,কিন্তু আহানা কোথাও নেই
ওকে সেখানে না পেয়ে শান্ত বাসায় চলতে আসতে নিয়েও পারলো না
কেন জানি খুব চিন্তা হচ্ছে,তাই সে ফোন নিয়ে আহানার মাকে ফোন করলো,উনি নামাজ পড়তেছেন বলে ধরতে পারলেন না তখন
শান্ত কি আর করবে বাসায় ফিরে আসলো উপায় না পেয়ে
শান্তর মা মুখ ভার করে সোফায় বসে নিতুর বই খাতা দেখতেছেন,নিতু পাশে বসে বিসকিট খাচ্ছে
শান্ত একবার সেদিকে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো
ফ্রেশ হয়ে এসে রিপাকে বললো কফি পাঠাতে,তারপর গিয়ে বারান্দায় বসলো সে
ফোন বিছানার উপর রাখা
এই মেয়েটা আমার জন্মের শত্রু অথচ এখন ওর জন্য এত চিন্তা হচ্ছে

আহানাকে এখানে বেশি রাখা যাবে না,ওর ফিরতে দেরি দেখলে ওর মা সিধা আমার বাড়িতে দেখতে আসবে
.
তাহলে ভাই কি করবা?
.
অন্য কোথাও নেওয়ার জায়গাও তো নেই,তোরা তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা কর, বিয়ে হয়ে গেলে ওর মা কেন!!ওর মরা বাপের ও সাধ্য নাই আর কিছু করার
.
ওকে ভাই
সুমন আর সাজু মিলে হুজুর একজনকে আনতে চলে গেলো
রতন এসে দরজা খুলে দেখলো আহানা খাটের এক কোণায় বসে হাত পা ছাড়ানোর চেষ্টা করতেছে
.
নে নে করে নে,যত চেষ্টা আছে করে নে,তাও আজ আমার থেকে রক্ষা পাবি না তুই,তোকে আজ আমার হতেই হবে
.
মরে যাবো তাও আমি তোর হবো না,তোর এত ভয় কিসের?আমাকে ভয় পাস?হাত পা বেঁধেছিস কেন?সাহস থাকলে এগুলা খুলে দে,দেখি আমার সাথে তুই একা কত পারোস
.
রতন রেগে গিয়ে আহানার হাত আর পায়ের বাঁধন খুলে দিলো
আহানা এবার নিজেই নিজের মুখ থেকে বাঁধন খুলে দূরে সরে গেলো
রতন নিজের থুতনি ঘষতেছে আর হাসতেছে
আহানা রেগে রতনকে এক ধাক্কা দিলো কিন্তু রতন মাটিতে পড়লো না,সে শুধু জোরে জোরে হেসে যাচ্ছে
আর বলতেছে”মাইয়া মানুষ নাকি পুরুষ মানুষের সাথে পারবে”
.
আহানা পুরো রুমে একটা ছুরি তো দূরে থাক একটা লাঠিও পায়নি,পুরো রুমটা খালি,শুধু একটা বিছানা
কোনো উপায় না পেয়ে আহানা পিছিয়ে গিয়ে টিনের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে হাত শক্ত করতেছে
একদম নাক বরাবর মেরে দিবো বেয়াদবটার
.
রতন আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত লালসার চোখে দেখতেছে,লাল বাতির আলোয় তার নেশা বেড়ে আসতেছে ক্রমশ
.
কিরে তোর তো হাত পা খুলে দিয়েছি তাহলে পালিয়ে দেখা,দেখি কেমন পারিস আমার সাথে
.
আহানা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,বাড়াবাড়ি করতে গেলেই গায়ে হাত দিবে,তার চেয়ে বরং দেখি কি করে তারপর নাহয় আঘাত হানবো
.
রতন অনেকক্ষণ চুপ করে চেয়ে থেকে এগিয়ে আসতে লাগলো এবার
আহানা হাত আগে থেকেই মজবুত করে রেখেছে,একটা সুযোগের অপেক্ষাই আছে
রতন আহানার হাতের দিকে তাকিয়েছে,সে বুঝেছে আহানা ওকে হাত দিয়ে মারতে চাইবে তাই সে সবার আগে আহানার হাত দুটো খপ করে ধরে ফেললো
আহানা ভাবতেও পারেনি রতন তার হাত ধরে ফেলবে
রতন তার ঠোঁট এগিয়ে আনতেই আহানা পা দিয়ে রতনকে জোরে একটা লাথি মেরে দূরে সরিয়ে ফেললো
.
হাত ধরেছিস পা কে ধরবে রতন??
.
রতনের মেজাজ গরম হয়ে এবার শেষ সীমানায়,সে মাটি থেকে উঠে আসতে যেতেই আহানা এক দৌড় দিলো
কিন্তু আফসোস,দরজা আটকানো, দরজা খুলতে খুলতেই রতন এগিয়ে এসে আহানার কাঁধ খাঁমছে ধরে টান দিয়ে দিলো,জামা কেটে চামড়াও কাটা গিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে আহানার কাঁধ থেকে
আহানা ব্যাথা পেলো কিন্তু তার এখন আপাতত একটাই উদ্দেশ্য আর সেটা হলো এই দরজাটা যে করেই হোক খোলা
রতন যখন দেখলো আহানার হাত কাটা যাওয়ার পর ও সে দূর্বল হলো না,ভয় পেলো না
তখন সে এবার আহানার দুহাতের কুনুই ধরে নিজের দিকে ফিরালো
আহানা অনেক সহ্য করেছে,হাত খোলা পেয়ে চড় মেরে দিলো রতনের গালে
তারপর আবারও ছিটখিনি খোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে
দরজাটা খুললো শেষমেষ,,খোলার সাথে সাথে আহানা বের তো হলো কিন্তু রতন ওকে আবারও ধরে ফেললো

তোর এত বড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলিস!!
.
রতন আহানার চুলের মুঠি ধরে আবারও টেনে ঘরে ঢুকাচ্ছে,আহানা তার চুল না ছাড়িয়ে হাত দিয়ে নিজের হাতের কাঁচের চুড়ি ভাঙ্গলো সবার আগে
তারপর ভাঙ্গা টুকরা নিয়ে রতনের হাতে ঢুকিয়ে দিলো সে
(NB-কেউ চুল ধরে টান দিলে তার হাত থেকে নিজের চুল ছাড়ানোর চেষ্টা না করে নিজের যে দুহাত খালি আছে সেটা দিয়ে যা করার করবেন আক্রমণকারীকে)
রতন চিৎকার দিয়ে আহানার চুল ছেড়ে দিলো,নিজের হাত থেকে চুড়ির ভাঙ্গা অংশ বের করে দেখলো আহানা উধাও
আহানা প্রান নিয়ে দৌড়াচ্ছে,অনেকদূর এসে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো কেউ নাই,তারপর হাঁপ ছেড়ে সামনে চেয়ে দেখলো সাজু আর সুমন আসতেছে সাথে একজন হুজুরকে মিয়ে
আহানা পাশের একটা টিনের বাড়ির সামনে থাকা রসুইঘরে ঢুকে গুটিশুটি দিয়ে নিচে বসে পড়লো
কাঁধ প্রচণ্ড ব্যাথা করতেছে তার কিন্তু কিছু করার নেই,মুখ চেপে ধরে বসে আছে আহানা
রতন দৌড়ে এসে সাজু আর সুমনকে জানালো আহানা পালিয়েছে
তাদের কে দল গঠন করে তারপর আহানাকে খুঁজতে বললো,এক গলিতে সাজু গেলো,আরেক গলিতে সুমন,আর মাঝখানের গলি দিয়ে রতন ছুটলো
আহানা মুখে হাত দিয়ে রসুই ঘরটাতে বসে আছে

আসসালামু আলাইকুম,,আন্টি কেমন আছেন?
.
ভালো আছি বাবা,তুমি কেমন আছো?
.
ভালো,আসলে এখন ফোন করলাম আহানা বাসায় ফিরেছে কিনা জানার জন্য
.
আহানা?ও তো এখন নিতুকে পড়াচ্ছে তাই না,এখন বাসায় আসবে কেন?
.
মানে!আহানা তো আজ নিতুকে পড়াতে আসেনি,আর আমি অনেকক্ষণ আগে অফিস থেকে আসার সময় দেখলাম ও বাড়ি ফিরতেছে
.
কি বলো?তাহলে এখনও আসলো না কেন?
.
শান্তর এবার খুব টেনসন হচ্ছে,আহানার নাম্বার ও নেই তার কাছে
ওর মাকে ফোন করতে বলে জ্যাকেট পরতে পরতে সে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে
এই মেয়েটাকে এখন আবার কই খুঁজবো!আমি মানা করছিলাম এভাবে বাইরে একা একা না থাকতে,আমার একটা কথা যদি শুনতো!
.
আহানা রসুইঘরটা থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো,এখান থেকে তাদের বাড়ি বেশি দূরে না তবে কয়েকটা মোড় পার হতে হবে এই আর কি,এখন কথা হচ্ছে যদি কোনো মোড়ে গিয়ে ঘুরেফিরে ওদের সামনেই পড়ি??
.
আন্টি আমি পথে আহানাকে কোথাও পেলাম না,কি করবো এখন?ও কোথায় যেতে পারে জানেন?
.
না আহানার তো একটাই বান্ধুবী আর সে হলো রুপা,রুপাকে আমি ফোন করেছি সে বললো আহানা আসেনি,আর আহানা ফোনটা সুইচ অফ বলতেছে,আমি কি করবো বুঝতেছি,একা একটা মেয়ে!! কিছু হয়ে গেলে কি করবো তখন!!
.
আন্টি টেনসন নিয়েন না,আমি পুলিশে খবর দিচ্ছি
.
এটা নির্ঘাত ঐ রতনের কাজ
.
শান্ত ফোন করতে গিয়ে থেমে গেলো তারপর বললো”রতন কে?”
.
আর বলিও না বাবা,ছেলেটা কয়েকবছর ধরে আহানাকে অনেক জ্বালাচ্ছে,আমার মনে হয় ওর কাজ এটা!!
কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদে দিলেন উনি
.
শান্ত চুপ করে থেকে তারপর বললো”ওর বাসা কোথায় জানেন?”
.
এখানেই,সোজা গিয়ে মাঝখানের গলিটা দিয়ে ঢুকলে তারপর ডান পাশে ঘুরে একদম শেষ প্রান্তের টিনের বাড়িটা ওর
.
ফাইন!
.
শান্ত বেরিয়ে গেলো,আন্টির কথামত সেদিকে ছুটছে সে,পুলিশকে খবর দেওয়া হয়ে গেছে ততক্ষণে
শান্ত ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে হাঁটতেছে,চারিদিক শুধু অন্ধকার,কিছু দেখা যাচ্ছে না,শুধু বুঝা যাচ্ছে পথটা ইটের তৈরি
আহানা পা টিপে টিপে হাঁটতেছে,বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারলেই হলো
মাথা চক্কর দিতেছে বারবার,যেকোনো সময় অজ্ঞান হয়ে যাবো মনে হয়,সকালে যে ভাত খাইছিলাম আর কিছু খাইনি তারপর থেকে
আল্লাহ শক্তি দাও,আমি যেন ঠিকঠাক ভাবে বাড়ি পৌঁছাতে পারি
.
এদিক ওদিক ভালো করে দেখতে গিয়ে অন্ধকারে একটা লোকের সাথে ধাক্কা লেগে আহানা নিচে পড়ে গেলো
পিছোতে পিছোতে বললো”খবরদার আমাকে ছুঁবে না!একদম জানে মেরে ফেলবো আমি”
.
শান্ত ফ্ল্যাশ ভালো করে সামনো ধরে দেখলো আহানা কথা বলতেছে,ভয়ে মুখটুখের অবস্থা ওর বেহাল,জামা ছিঁড়ে গেছে অনেকটা,কাঁধ দেখা যাচ্ছে
আহানা মাথা ধরে এখনও বলতেছে”মেরে ফেলবো”
বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো সে
.
শান্ত হাঁটু গেড়ে বসে ওকে কাছে নিয়ে আসলো
মুখ দিয়ে ওর কোনো কথাই বের হচ্ছে না,আর দেরি না করে আহানাকে মাটি থেকে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরলো সে
রতন লুকিয়ে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে,ও আহানাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসা ধরেছিলো কিন্তু তার আগেই শান্ত এসে পড়লো তাই থেমে গেলো সে
শান্তকে দেখে আর তার দলের কোনো লোককেই সে এগোতে দেয়নি,কারণ শান্তকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে সহজে ছাড়বে না কাউকে,কার নিয়ে এসেছে,নিশ্চয় যেনোতেনো মানুষ নয় বৈকি
বরাবরের মতই রতন বড়লোক মানুষদের ভয় পায় খুব
এখন যদি তাদের মধ্যে কেউ আসে আহানাকে ধরতে তাহলে যদি জেলে টেলে যেতে হয়??
তাই তারা গাপটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলো ঐ জায়গায়
শান্ত আহানাকে ওদের বাসায় নিয়ে আনলো,মা তো এক চিৎকার করে আহানার হাত ধরে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললেন”কিছু হয়নি তো?”
.
“জানি না আমি কিছুই”
শান্তর চোখে মুখে যেমন আহানার প্রতি কষ্ট দেখা যাচ্ছে তেমনই রাগে ফেটে যাচ্ছে সে
মা পানি এনে আহানার মুখে ছিঁটা দিলেন
শান্ত দূরে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আহানার দিকে
আহানা চোখ খুলতেই মায়ের মুখ দেখতে পেয়ে সিউর হলো সে নিরাপদ তারপর হকচকিয়ে উঠে বসে পড়লো সে
সামনে শান্তকে দেখে বিছানার উপরে থাকা চাদরটা টেনে গায়ে দিয়ে নিলো সে
একে তো জামা ছিঁড়া আরেকতো ওড়নাও নাই
তারপর মাথা নিচু করে বসে থাকলো
.
শান্ত শুধু জিজ্ঞেস করলো “তোমাকে ছুঁয়েছে?খারাপ ভাবে?”
.
আহানা মাথা তুলে বললো”আপনার কি?”
.
শান্ত এগিয়ে এসে ওর মাকে বললো “আন্টি আপনি একটু বাইরে যাবেন?আমার আহানার সাথে কিছু কথা আছে”
.
আন্টি মাথা নাড়িয়ে হাতে থাকা পানির মগটা নিয়ে চলে গেলেন,তারপর বাড়ি থেকে বের হতেই দেখলেন দূর থেকে কয়েকটা ছেলে চলে যাচ্ছে,এতক্ষণ এখানেই ছিল মনে হয়
.
সোজা প্রশ্নের উত্তর দাও
.
দিব না, বাধ্য নই আমি
.
তার মানে ধরে নিতাম উল্টা পাল্টা কিছু করেছে তোমার সাথে?
.
কারোর সাধ্য নেই আহানার ইজ্জত কেড়ে নেওয়ার,আমি নিজেই নিজের রক্ষা করতে জানি
.
শান্ত আহানার গায়ের থেকে চাদর টান দিয়ে বললো”তাহলে কাঁধের এ অবস্থা কেন?”
.
ঐ রতন বেয়াদব জোরজবরদস্তি করার চেষ্টা করেছিলো
.
ঠিক আছে!
.
কি?নায়কের মত গিয়ে মাইরপিট করে আসবেন নাকি?এটা মুভি না,বাস্তব,আর আপনাকে কিছু করতে হবে না
যা করার আমিই করবো
পুলিশকে খবর দিয়ে লাভ নাই
আমি এই রতনের দলবলের সাথে পেরে তো উঠবো না,মাকে নিয়ে এই জায়গা ছাড়তে হবে যতদূর বুঝলাম
.
আমি কি করবো না করবো সেটা তোমার বলতে হবে না
ঠিক বলেছো!!এটা মুভি নয় বাস্তব!
কথাগুলো বলে শান্ত চলে গেলো,সাথে সাথে মা ভিতরে এসে বললেন”কি বললে রে?”
.
কিছু না বাদ দাও,আমাকে ভাত দাও,ভাত খাবো,সকালে যে খাইসি আর কিছু খাওয়া হয়নি,তাই তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলাম
.
আন্টি চলুন
.
আহানার মা চমকে পিছন ফিরে চেয়ে দেখলো শান্ত হাতে জ্যাকেট নিয়ে তাকিয়ে আছে
.
কোথায় যাবো বাবা?
.
আমাদের বাসায়,সব প্যাক করে নিন
.
আহানা মাথা বাঁকিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে বললো”এত কেয়ার দেখাতে হবে না,আমি যাবো না আপনাদের বাসায়,কথায় কথায় বলেন বাসা থেকে বের করে দিব”
.
হ্যাঁ যেও না,থেকে যাও,রেপ হলে তারপর আমার সাথে পুলিশ স্টেশন যেও কেমন?নাকি একা একা যেতে পারবা?
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে