প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-২১+২২+২৩

0
1951

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা কিছুটা হলেও ভয় পেলো কিন্তু শান্ত ওকে যে পরিমাণ অপমান করে সেসব মনে করে আহানা বললো সে যাবে না মানে যাবেই না
.
শান্ত নরমালি আহানার মায়ের দিকে চেয়ে বললো”আন্টি আপনি প্লিস আহানার কথা চিন্তা করে অন্তত জামাকাপড় সব গুছিয়ে চলো আসুন”
.
আহানার মা ১সেকেন্ড ও দেরি না করে ব্যাগ নিয়ে জামাকাপড় সব গুছাতে চলে গেলেন
.
মা তোমার কি কিছুই মনে নেই?এই লোকটা আমাকে কত অপমান করে আর তার পরেও তুমি তারই বাসায় যাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছো?
.
তুই তো চুপ থাক একদম!!! কোনো কথা বলবি না
.
মা ১০মিনিটেই সব জামাকাপড় রেডি করে বের হতে হতে বললেন”বাবা তুমি আহানাকে নিয়ে আসো,আমার মনে হয় না ও রাজি হবে”
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে বললো”যান আন্টি,আমি এরে নিয়ে আসতেছি”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে শান্তর দিকে চেয়ে চাদর টেনে সেটা শক্ত করে ধরে বসে আছে
শান্ত এগিয়ে আসতেছে,বাড়ির সামনের ৪টা সিঁড়ি পেরিয়ে সে ভিতরে ঢুকলো
আহানা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে যে শান্ত ওকে কথার যত লজিকই দেখাক না কেন সে কিছুতেই মানবে না,গলবেও না
.
শান্ত কাছে এসে এক ওয়ার্ড কথাও বললো না,শুধু আহানার গায়ের থেকে চাদরটা টেনে সরিয়ে ফেললো
তারপর হাতে থাকা জ্যাকেটটা আহানার গায়ে পরিয়ে দিয়ে ওকে বিছানা থেকে কোলে তুলে নিলো
.
এই এই এসব কি!!!ছাড়ুন আমাকে
.
সোজা কথায় যাবা না যখন কোলে তুলেই তো নিতে হবে
.
শান্ত আর কথা না বাড়িয়ে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে,আহানা ওকে কিল ঘুষি দিয়েই যাচ্ছে একের পর এক,তবে বেশি জোরে দেওয়ার শক্তি নেই তার
মনে হয় আবারো জ্ঞান হারাবে,,খিধায় অসহ্যকর হয়ে উঠছে সব কিছু,তারপরেও যত পেরেছে শান্তকে মেরেছে সে
কিন্তু শান্ত তো ছাড়ার পাত্র না,নিয়ে চলেছে তো চলেছেই
বাড়ি থেকে বের হয়ে তারপর আহানাকে বললো দরজায় তালা লাগাতে
.
আহানা রাগি রাগি লুক নিয়ে চেয়ে বললো”আপনার কোলে থেকে আমি দরজায় তালা দিব?”
.
তুমি আমার কোলে তো আমি তালা কি করে দিব?
.
নামান আমাকে
.
তোমাকে নামালে তুমি এই জন্মেও আমার সাথে যাবে না,তোমাকে হারে হারে চিনি আমি
.
তো দিয়েন না তালা
.
হুম দিলাম না,চুরি হলে তো তোমাদের বাসায় চুরি হবে,আমার কি?
.
আহানা অনেক ভেবে বললো “ঠিক আছে নামান আমাকে,আমি হেঁটেই যাব আপনার সাথে”
.
শান্ত আহানাকে নামিয়ে ওর হাত ধরে রাখলো,কে জানি যদি ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়
.
আহানা দরজা লাগিয়ে পিছন ফিরে বললো”অন্তত আমার হাত তো ছাড়ুন,আজব!”
.
না তা হচ্ছে না
.
নিরুপায় হয়ে আহানা বোকার মত শান্তর সাথে মেইন রোডের দিকে যাচ্ছে,কিছুক্ষন আগে কত বড় বিপদে না পড়ছিলাম আমি,কেমনে বাঁচলাম মাগো মা!ভাবতেই ভয় লেগে উঠে!
.
আহানা চারপাশে তাকাতে তাকাতে হঠাৎ ওর মনে হলো সে রতনকে দেখেছে
শান্ত এতক্ষণ ওর হাত ধরে ছিল এবার আহানাই ওর হাত চেপে ধরলো শক্ত করে,আবার কিছুটা কাছেও এসে দাঁড়ালো
শান্ত বিষয়টা ভালো মতনই খেয়াল করেছে কারণ কিছুক্ষণ আগে রতনকে সেও দেখেছে,অন্ধকারে পাশে কেউ এসে দাঁড়ালে তা টের পাওয়া যায় সহজেই আর তা যদি হয় শুকনো পাতার উপর তাহলে তো কথাই নেই
শান্ত আহানাকে আর ওর মাকে নিয়ে তাদের বাসায় ফিরে আসলো
সবাই একজোট হয়ে শান্তর মাকে সবটা জানালো,মা তো সব শুনার পর মুখটা এত রাগী রাগী করে ফেললো যেন উনি বুঝাতে চাইছেন বিয়েতে রাজি হলে আজ এমনটা হতো না
আহানা তাদের জন্য দেওয়া রুমের মাঝখানে চেয়ার টেনে বসে আছে,বিছানায় বসতেও ভয় করে,১/২ঘন্টা আগে তাকে রতন এমন বিছানায় হাত পা বেঁধে রেখেছিলো
মা তো মনে হয় আন্টির সাথে কথা বলতেছেন,আর শান্ত বাসায় নেই,কোথায় গেছে কে জানে,তাতে আমার কি?
.
শান্ত ঠিক ২ঘন্টা পর বাসায় ফিরে আসলো,তখন রাত ১০টা বাজে,শান্তর মা নিজের হাতে আহানাকে খাইয়ে দিচ্ছেন,শান্ত ঠোঁটের কোণে জমে থাকা রক্ত ভালো করে মুছে তারপর বাসায় ঢুকলো,কোনোমতে মায়ের চোখ এড়িয়ে নিজের রুমে চলে আসলো সে
রুমের দরজা লাগাতে গিয়েও পারলো না কারণ আহানা এসে হাজির,সে শান্তর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার পরোক করে নিলো
জ্যাকেট হাতে ঝুলানো,বাকি সব ঠিকঠাক শুধু ঠোঁটের কোণে রক্ত দেখা যাচ্ছে,কপালে মাটি লেগে আছে,গায়েও কিঞ্চিত মাটি আছে
আহানা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”সেই হিরোর মতন মারপিট করেই আসলেন তাই তো?”
.
তুমি তো বললে এটা মুভি নয় বাস্তব,পুলিশ রতনকে কেমন ভাবে ট্রিট করবে তা জানি আমি,, তাই আমি একটু দেখে আসলাম আর কি
.
কি দরকার ছিল?আমাকে না দুচোখে দেখতে পারেন না তাহলে এসব কি?
.
তোমাকে কে বললো আমি এসব তোমার জন্য করেছি??,আমি তো আমার আন্টির মেয়ের জন্য করেছি
আর টেনসন করো না,ওদের ভালো করে আদর যত্ন করে ব্ল্যাক পেপার স্প্রে করে দ্যান এসেছি
.
ব্ল্যাক পেপার মানে কালো গোলমরিচের গুড়া?
.
হুম!
.
ইয়া আল্লাহ!আপনি তো দেখি অনেক চালু,অনেক নায়কদের দেখতাম মেরে আবার হসপিটালে ভর্তি করে দিয়ে আসে আর আপনি কিনা কাঁটা গায়ে নুনের ছিঁটি দিয়ে এলেন?
.
শুনো!মেরে আবার হসপিটালে ভর্তি করে পাগলে,মেয়েদের গায়ে হাত তুলবে আবার তাদের হসপিটালে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই,বরং ওদের জখমে আরও কষ্ট দেওয়া উচিত আর আমি সেটাই করেছি!
.
কোথায় পেলেন গোলমরিচ?
.
রান্নাঘর থেকে নিয়ে গেসিলাম
.
ভালো😒বসুন আমি আসতেছি
.
শান্ত নিজের বিছানায় গিয়ে বসে জ্যাকেটটা পাশে রাখলো,,কাঁধের নিচ বরাবর একটু চোট আছে,টিশার্টের কারণে দেখাই যায় না,রতনের সাথে ১২/১৩জন ছিল,সবার সাতে পেরে উঠতে কষ্ট হয়েছিল ভাগ্যিস নওশাদ আর রিয়াজকেও সাথে নিয়েছিলাম,রতনকে তো আমি মেরেছি,নওশাদ আর রিয়াজকে ওকে ছুঁতেও দেইনি,ওকে তো আমি নিজের হাতে মেরেছি
ওকে মারায় আমার রাগ কিছুটা হলেও কমেছে,কারেন্টের শক দিলে আরও ভালো লাগতো!!
.
আহানা হাজির,হাতে করে নিয়ে এসেছে ডেটল এন্টিসেপ্টিক আর তুলা,মলম
শান্ত গায়ের থেকে মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে আহানাকে দেখে চোখ ছানাবড়া করে ফেললো তারপর ইয়া বড় হা করে বললো”সূর্য তো মনে হয় আজ অজ্ঞান হয়ে অস্তে গেছে”
.
আমার এত শখ নাই আপনার কেয়ার করার,আপনাকে হেট করি,, অলওয়েজ হেটই করবো,ধরেন,নিজের মলম নিজে লাগান
আহানা শান্তর হাতে ফার্স্ট এইড বক্স ধরিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিতেও পারলো না,পিছন ফিরে আবারও তাকালো শান্তর দিকে
খুব দরদ হচ্ছে, কিন্তু ঐ যে কথায় কথায় আমাকে অপমান করে সেটার জন্য কেয়ার ও আসে না ভিতর থেকে
এর ভিতর দিয়ে আবার দরদ ও হচ্ছে,দোটানায় পড়ে গেলাম!!
.
শান্ত টিশার্ট খুলে মলম লাগাতে গিয়ে দেখলো আহানা এখনও যায়নি,জলদি করে হাত ঢেকে বললো”কি?যাওনি কেন?অবশ্য কারোর যদি আমার জন্য মায়া হয়ে থাকে তো বসে বসে দেখতে পারে”
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ওর মাথা মনে হয় কেউ ঘুরিয়ে টেনে হিঁছড়ে শান্তর সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিলো ফের!
.
শান্ত এবার বিরক্তি নিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে বললো”তুমি আসলে কি চাও বলতো?
.
আহানা শক্ত হয়ে মাথা উঁচু করে বললো”আপনার আম্মু বলেছে আপনার মাথায় মলম লাগিয়ে দিতে”
.
সিরিয়াসলি?
.
হুম!
.
আচ্ছা তাহলে লাগাই দেন
.
আহানা তুলোয় ডেটল নিয়ে রক্ত মুছতেছে মন দিয়ে,আর মাঝে মাঝেমাঝে ফু দিচ্ছে
শান্তর হঠাৎ মনে পড়লো ওর মা তো কথা বলতে পারে না!
.
মা তো কথা বলতে পারে না তাহলে তোমাকে কি করে বললো আমাকে মলম লাগিয়ে দিতে?আর মা জানলো কি করে যে আমি মারামারি করে এসেছি?
.
আহানার কাশি উঠে গেছে,কাশি থামিয়ে বললো”ঐ যে আমি বলেছিলাম আপনার মারামারির কথা,আর উনি হাত দিয়ে বুঝালেন মলম লাগিয়ে দিতে!
.
বাহ! তুমি আমার মায়ের ইশারা ইঙ্গিত এত স্মুথলি বুঝতে পারো?
.
এত কথা বলবেন না তো,চুপ করে বসে থাকুন,ঠোঁটের তো ১২টা বাজিয়ে এসেছেন,রক্ত জমে আছে
এদিক দিয়ে আমাকে প্রতি সেকেন্ডে কথা শুনায় আর ঐ দিক দিয়ে আবার আমাকে কে মারলো তারে গিয়ে মেরে আসে আবার মার খেয়েও আসে
.
ঠোঁটের কোণায় মলম লাগানো শেষ,এখন কপালে মলম লাগাচ্ছো তাহলে বারবার ঠোঁটের দিকে তাকাচ্ছো কেন?
.
আহানা শান্তর মাথায় চেপে ধরে বললো”ফালতু কথা অফ দেন,আমার এত শখ নাই এরকম বিশ্রী ঠোঁটের দিকে তাকানোর
নেহাত রক্তজমে আছে বলে মলম লাগানোর পরেও রক্ত বের হয় কিনা সেটা দেখছিলাম অন্য কিছু না
.
বিশ্রী ঠোঁট??তুমি আসলে সুন্দরই চিনো না সেটা বলো
.
নিজের গুনগান গাইতে হবে না
.
ফাইন!
শান্ত খুব সুন্দর করে হেসে দিলো,এত সুন্দর করে হয়ত আহানার চোখে আর কাউকে সে হাসতে দেখেনি
সে নিজের অজান্তেই হেসে ফেললো
শান্ত এবার আহানার হাসি দেখে নিজের হাসি থামিয়ে নিলো তারপর বললো “যাও এখন”
.
মানে কি?এখনও মলম লাগানোই তো হয়নি
.
তো?কপালে আর ঠোঁটে লাগানো শেষ,যাও এখন
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে উঠে চলে যেতে নিয়ে থেমে গিয়ে আবারও এসে বললো”আপনার হাত এরকম ঢেকে রেখেছেন কেন?”
.
শুনো,একটা মেয়ের সামনে এভাবে উদম গায়ে বসা আমার ভালো লাগে না
.
আহানার ব্যাপারটা ঠিক হজম হলো না,পা টিপে টিপে কাছে এসে ছোঁ মেরে শান্তর গায়ের থেকে টিশার্টটা নিয়ে নিলো সে
একি!!এতটুকু ছড়ে গেছে কি করে?আর আপনি আমার থেকে লুকাচ্ছিলেন এতক্ষণ??
আহানা হুট করেই শান্তর পাশে বসে মলম নিয়ে লাগাতে লাগাতে বললো”সব ক্ষত দেখালেন এটা দেখালে কি টাকা দিতে হতো?”
.
আমি যাকে তাকে আমার ব্যাথা দেখাই না
.
আহানা রেগে শান্তর হাতের ক্ষততে এক চাপ দিয়ে বললো”যাকে তাকে দেখানোর চেয়ে তো ব্যাথা সহ্য করতে পারবেন তাই না মিঃঝগড়াইট্টা!!
.
এক মিনিট!ঝগড়াইট্টা মানে টা কি?আমার নাম শান্ত ওকে?
.
♠আপনি যেখানে ঝগড়ার বিজ বপন হয় সেখানে♠
তাই আপনার নাম দিলাম মিঃঝগড়াইট্টা,নাইস না?
.
নামটা একটুও সুন্দর নাহ,বিরক্তিকর একটা নাম,চেঞ্জ ইট!
.
আহানা পিছোতে পিছোতে বললো”আহারে আমার মিঃঝগড়াইট্টা রে!!”
এটা বলেই আহানা এক দৌড় দিলো
তখনই শান্ত পিছন থেকে এসে আহানার কাঁধ চেপে ধরে ফেললো
.
আহানা কাঁধের চোটে ব্যাথা পেয়ে কুকড়িয়ে উঠতেছে বারবার!!
বারান্দা থেকে শীতের হালকা বাতাস এসে গায়ে লাগতেছে তার সাথে সূর্যমুখী ফুলের একটা চিরচেনা ঘ্রান
আকাশে চাঁদ তার সাথে সূর্যমুখী ফুল বাতাসে নড়তেছে মনে হয় যেনো শান্ত আহানার অজান্তেই তাদের এ সময়ের কাছে আসাকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে যে দেখো সবচাইতে সুন্দর ঠিক তখন লাগে যখন তোমরা মিষ্টি প্রেমে একসাথ হও
চাঁদের আলো আর তার সাথে সূর্যমুখীর সৌন্দর্য তার সাথে বাতাসের সাথে লেগে তাদের দোলখেলা
শান্ত আর আহানাকে কি দেখছে না?
দেখলে হয়তবা কিছুক্ষনের জন্য হলেও হারিয়ে যেতো,ভুলে যেতো ঝগড়া,উজ্জীবিত হতো এক ভিন্নপ্রেমের যে প্রেমের আশেপাশেও থাকবে না একে অপরের প্রতি কোনো ঘৃনা
দুজনের সামনেই ফ্লোর থেকে ছাদ চুম্বি এক বিশাল আয়না
অথচ দুজনের একজনেরও সেদিকে নজর নেই
আচ্ছা!!এদের কবে মিলন হবে?
যেদিন সূর্যমুখী আর চাঁদ এসে বলবে ভাই তাকা আমাদের দিকে!তোদের মিল করার জন্য সয়ং তোদের সামনে চলে এসেছি
হয়ত তখনও এরা ঝগড়াই করে যাবে
সূর্যমুখী তখন সেন্সলেস হয়ে পড়বে চাঁদের গায়ে এটা দেখে যদি আহানা শান্তর প্রেম প্রেম ফিল হয় আর কি!!😂

কি ম্যাডাম!!ব্যাথা লাগলো?আমাকে যে তখন চেপে ধরে ব্যাথা দিলেন,কেমন ফিল হয় বুঝেন!!
.
লাগতেছে ছাড়ুন নাহলে আরও জঘন্য নাম দিব
.
আচ্ছা??আরও ঝঘন্য?দেখি শুনাও তো সাহস থাকলে
.
আগে হাত ছাড়ুন তারপর নাম দিব
.
আমি বোকা তাই না??আমি তোমাকে ছেড়ে দিলে তুমি আমাকে নামটা শুনিয়ে উধাও হয়ে যাবা
.
আচ্ছা দৌড় দিব না
.
শান্ত আহানার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো”হুম এবার বলো”
.
আহানা পা পিছাতে পিছাতে বললো”মিঃআউলাঝাউলা”
ব্যস আহানাকে আর পায় কে!! সে এক দৌড়ে মায়ের কাছে চলে গেছে
.
এই মেয়েটা এত দুষ্টুমি করতে পারে,আউলাঝাউলা মানেটা কি আবার কে জানে,মিঃঝগড়াইট্টাই মাচ বেটার ছিল!
হোয়াটএভার এই রতনকে তো পুলিশের হাতে তুলে দিছি যেন সহজে ছাড়া না পায় তার বন্দোবস্ত কাল করে আসবো
আপাতত আজ একটু রেস্ট নিই
উফ!!বস্তির এই ছেলেগুলো ফাইটিং ভালোই জানে!তারপরেও তো আমার আর নওশাদ, রিয়াজের সাথে পেরে উঠলো না,সবগুলোকে মেরে হাঁড়গোড় ভেঙ্গে তারপর বাসায় ফিরছি!
কত বড় সাহস আমার ছোটবেলার খেলার সাথীকে টাচ করার চেষ্টা করে!!
ছোটবেলায় তিসানের আঙ্গুল ব্যাঁকা করে দিয়েছিলাম কারণ সে আহানার হাত মুড়িয়ে ধরেছিলো
আর এই রতনের বাচ্চা রতন আমার আহানার সাথে খারাপ কিছু করতে চেয়েছিলো!
.
কথাগুলো বলা শেষে শান্ত হঠাৎ আয়নায় চোখ রাখলো
আমার আহানা মানে?এটা কি বললাম!ধুর!ও হচ্ছে জাস্ট ছোটবেলার ফ্রেন্ড আর কিছু না
সে আমার না!

কিরে আহানা এরকম হাঁপাচ্ছিস কেন?
.
না এমনি কিছু না,নিতু কোথায়?ওর সাথে গল্প করবো
.
আচ্ছা যা,ও মনে হয় নিজের রুমে
.
আহানা নিতুর রুমের দিকে চলে গেলো
শান্তি রহমান মুখটা ছোট করে নিচের দিকে চেয়ে আছেন
তার মনটা ভীষণ খারাপ,তার ছেলে তার কথা শুনছে না এমনকি আহানাও না
.
আহানার মা উনার হাতটা ধরে বললেন”চিন্তা করিও না বুবু,ওরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে,একদিন না একদিন ঠিকই বুঝবে,আমাদের ওদেরকে সময় দেওয়া উচিত
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আচ্ছা আহানা আপু!ভাইয়ার দেখি তোমার ছোটবেলার সব মনে আছে,তো তোমার কিছু মনে নেই?
.
না রে,তখন আমি এইটুকুন ছিলাম,আমার তো কিছুই মনে নাই
.
তো শান্ত ভাইয়া কতটুকুন ছিলো?যে উনার সব মনে আছে?
.
ওটা তো বুইড়া খাটাস!মনে হয় উনার ৮বছর ছিলো তখন
.
মানে আমার বয়সি ছিলো?
.
তোমার তো ৭বছর,তুমি আরও ছোট,আরও কিউটি
.
সবাই বলে আমি নাকি ভাইয়ার মতো হয়েছি,ভাইয়া তো আরও কিউট
.
তুমি সুন্দর চিনোনা!তোমার শান্ত ভাইয়াকে তো একটা ঝুলন্ত বাঁদরের মতন লাগে😂
.
শিসসস!আস্তে বলো,ভাইয়া শুনলে রাগ করবে অনেক
.
তোমার ভাইয়াকে ভয় পাই না আমি,আচ্ছা একটা কাজ করো তো,তোমার ভাইয়াকে ধরে বিয়ে দিয়ে দাও,আমিও একটু বাঁচি
.
হুম তাহলে তুমি রেডি হও
.
আরে আমি কেন?আমার কথা বাদ দাও,আমি জীবনেও তোমার ভাইয়াকে বিয়ে করবো না
অন্য মেয়ে খুঁজো
.
না আপু তোমাকেই ভাবী বানাবো
.
কথাটা শুনে আহানা উঠে দাঁড়িয়ে বললো”জিন্দেগি বারবাদ হো গেয়া”
.
নিতু খিলখিল করে হেসে দিলো আহানার গান শুনে

এই আহানা ঘুমাতে আয়,কটা বাজে খবর আছে তোর?
.
আসতেছি মা
.
আহানা নিতুর রুম থেকে বের হতেই এক ধাক্কা খেলো শান্তর সাথে
শান্তর হাতে ছিলো স্যুপের বাটি,সে কোনো মতে বাটিটা ধরে সবদিক সামলিয়ে আহানাকে এক ধমক দিয়ে দিলো
.
কি সমস্যা? চোখ কোথায় তুলে হাঁটো?
.
আপনি?আপনার চোখ কই থাকে?সরুন!ঘুম পাচ্ছে আমার
আহানা পাশ কাটিয়ে চলে গেলো আর একটিবার ফিরেও তাকালো না
অথচ কিছুক্ষণ আগে সে এত এত কেয়ার করছিলো
.
এই মেয়েটা নিজের দোষ কখনও চোখেই দেখে না!
.
রাত শেষ,সকাল সকাল শান্ত রেডি হয়ে অফিসে চলেও গেছে
জ্যাম বেশি হওয়ায় শান্তর আজ অফিসে পৌঁছাতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছিলো
আহানা আজ পরিপাটি হয়ে কাজে বের হয়েছে
তার আজ একটাই উদ্দেশ্য আর সেটা হলো একটা চাকরি,চাকরি পেলেই মাকে নিয়ে সে নতুন বাসায় উঠবে
রতনের ভয়ে সায়দাবাদে আর পা রাখা যাবে না,তার মানে সে বাসাটা বাতিল
কড়া রোদের ভিতর আহানা ঢাকার অলিগলি সব খানে চাকরি খুঁজে যাচ্ছে,সারাদিন ধরে তন্নতন্ন করে অবশেষে আহানা চাকরির দেখা পেলো
কথা হলো গিয়ে বেতন নিয়ে,মাত্র ৫হাজার টাকা, সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দোকানে বসে থাকতে হবে,মেয়েদের কসমেটিকসের দোকান,একটা ছোটখাটো দোকান, আরও অনেক সহকারী আছে আহানার সাথে,
আহানা সেটাতেই রাজি হয়ে গেলো
এখান থেকে ৫হাজার পাবে সেটা দিয়ে নতুন একটা বাসা নিয়ে ভাড়ায় থাকা যাবে,আর বাকি যে ৩টা টিউশনি আছে ওগুলা থেকে ৬হাজার আসবে প্রতিমাসে তাহলে এমনিতেই সংসার ভালোই যাবে
আহানা আজ খুশি খুশি বাসায় ফিরে গেলো
মা শান্তর মায়ের সাথে গন্ধরাজটার বাগানে চা খাচ্ছেন বসে বসে
আহানা দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে চেয়ার থেকে উঠিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বললো”মা আমি চাকরি পেয়ে গেছি”
.
মা তো মহাখুশি,তারপর যখন শুনলেন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করে পাবে মাত্র ৫হাজার টাকা তখনই মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেললেন তিনি তার উপর আহানা বললো সে কিছুতেই শান্তর সাথে এক বাসায় থাকতে চায় না
.
মা মন খারাপ করে বললেন”ওসব নাহয় বুঝলাম,কিন্তু তোর পড়াশুনার কি হবে যদি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজই করিস”
.
মা ওসব বাদ দাও,সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি আবার পড়াশুনা?এতকিছুর খেয়াল রাখতে হলে আর চাকরি করা হবে না,একটা চাকরি পেয়েছি এটাই বা মন্দ কি!
.
আহানার কথায় আজ মা নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেললেন!সংসার চালানোর দায় ভার মেয়ের উপর দিয়ে মেয়ের থেকে তিনি তার সব ইচ্ছা,স্বপ্ন তুলে নিলেন
স্বামী,বাবা ছাড়া সব পরিবারের বুঝি এই হাল হয়
কবে এই দিন গুজবে আমাদের!
তার উপর এমন একটা মেয়ে জন্ম দিলাম যে কারোর থেকে একটা টাকাও এমনি এমনি নেয় না
তার জন্য শান্তর মতো একটা ছেলে,সাজানো গোছানো একটা পরিবার রেডি থাকার পরেও সে এসব কিছু নাকোচ করে তার এই সংসার চালানোয় মনপ্রাণ সবটা দিয়ে রেখেছে
সে বুঝে না এসবেই সব হয়না,মাঝে মাঝে নিজেরও ভাবতে হয়
আত্নসম্মানকে উঁচু করে দেখতে গিয়ে সে আজ তার পড়ালেখাই বিসর্জন দিয়ে দিলো
আজ ওর বাবা বেঁচে থাকলে এমনটা কখনওই হতো না,কেন আমার ভাগ্য একটা কার এক্সিডেন্টের দরুন এভাবে ছারখার হয়ে গেলো
.
আহানা রুমে এসে নিজের জামাকাপড় সব গুছিয়ে ব্যাগে ভরে বিছানার উপর ব্যাগটা রেখে আবারও বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো, সে এবার যাবে বাসা খুঁজতে
.
মা মন খারাপ করে শান্তি রহমানের পাশে বসে আছেন,তিনি মেয়েকে মানা ও করতে পারেন না কারণ আহানা অনেক জেদি একটা মেয়ে,তার কাছে তার সম্মানটাই সব
.
শান্তর সাথে বিয়েটা হয়ে গেলে এতকিছুই হতো না,ভাগ্য এসে দরজায় কড়া নাড়ছে আর এই মেয়ে কিনা দরজা বন্ধ করে বসে আছে
.
আহানা এই গলি সেই গলি খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে একটা বাড়ি পেলো যেটাতে প্রতি ফ্ল্যাটের ইউনিটকে ১৪ভাগ করে ভাড়া দেওয়া হয়,মানে মানুষে গিজগিজ করতেছে চারিদিকে
৩রুমের একটা ইউনিট ভাড়ার জন্য পেলো আহানা
তাও ৫তলাতে,ছাদের সাথে এটাচড ৩রুম,দুটো বেডরুম,আর একটা রান্নাঘর
৫হাজার টাকা শুনে আহানা সেটাতেই হ্যাঁ বলে দিলো,আর দেরি না করে আবার শান্তদের বাসায় ফেরত আসলো সে
মা একবার না করছেন তো একবার হ্যাঁ করছেন,যাওয়ার প্রতি কোনো মতই নেই তার
এদিকে শান্তি রহমান আহানার দিকে তাকাচ্ছেন ও না,তিনি আহানার উপর প্রচণ্ডভাবে রেগে আছেন
কারণ আহানা একে তো বিয়েতে না করেছে তার উপর এই বাসায় থাকতেও চাচ্ছে না সে
আহানা উনাকে সালাম দিলো কিন্তু উনি আরেকদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন সাথে সাথে
আহানা আর কি করবে,,মন খারাপ করে মায়ের হাত ধরে চলে গেলো বাসা থেকে

সন্ধ্যা ৭টা বাজে,শান্ত সবে বাসায় ফিরতেছে,আজ একটু দেরি হয়ে গেছে,কাজের চাপ বেশি ছিলো সকালে লেট করে যাওয়ার কারণে
শান্ত বাসায় ফিরতেই দেখলো বাসার পরিবেশ একদম ঠাণ্ডা,কোথাও কোনো টু শব্দটাও নেই
শান্ত বিষয়টায় নজর না দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেছে
আহানা কি নাই বাসায়??থাকলে তো আমার সূর্যমুখীর বাগানে ঢুকে লণ্ডভণ্ড করে ফেলতো সব, তাহলে কোথায়?নিশ্চয় আম্মুর গন্ধরাজ বাগানটাই গিয়ে ফুল ছিঁড়তেছে
আজ এক ঝাড়ি দিব ওরে
শান্ত টি শার্টটা পরে নিয়ে রুম থেকে বের হলো,রিপাকে নাস্তা দিতে বলে সব রুমে একবার করে চক্কর দিয়ে আসলো কিন্তু কোথাও আহানাও নেই, ওর মাও নেই
শান্ত একটা বিসকিট মুখে দিয়ে রিপার দিকে তাকিয়ে বললো”আহানা কোথায়?”
.
উনারা তো চলে গেছেন কিছুক্ষণ আগে
.
মানে!চলে গেছে মানে?কোথায় গেছে?আমাকে বলেনি কেন?
.
আহানারা নতুন বাসা নিয়ে সেখানে উঠেছে,আহানা নাকি একটা দোকানে চাকরি পেয়েছে
.
হোয়াট!আর আমাকে একবার জানালো ও না?মা ওদের বাধা দেয়নি?
.
আহানা তো শুনে না কারোর কথা
.
শান্ত রেগে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো

আহানা রে এটা কোথায় বাসা নিলি,এরকম চিপা কেন,থাকবো কেমনে?এত মানুষের হইচই কেন? আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেছে
.
তো কি করবো আর!অন্যের বাসায় থাকার চেয়ে এটা হাজারগুন ভালো,তুমি সবসময় অন্যের দয়ায় থাকতে চাও কেন বলোতো?
.
যাতে তোকে ভালো জীবন দিতে পারি,তা তো বুঝবি না তুই
.
আমার ভালো জীবন লাগবে না মা,আমার আত্নমর্যাদাসম্পন্ন একটা জীবন চাই,যেখানে আমি আমার পরিশ্রমের কামায় দিয়ে তোমাকে নিয়ে বাঁচতে পারবো,কারোর কোনো দয়া থাকবে না
.
যা কি রাঁধবি রাঁধ!রাতে কি না খেয়ে থাকবো তোর আত্নসম্মানের জন্য?
.
আহানা মুখটা ছোট করে রান্নাঘরে গেলো,চোখে পানি এসে গেছে তার,চোখ মুছে রান্নাঘরটা একবার পরোক করে নিলো সে,পুরো তাকগুলো খালি,সবই খালি
হাতে টাকা আছে ১৫০০,এগুলো দিয়ে মাসের বাকি দিন মানে ২০দিন কাটাতে হবে,পরের মাসে বেতন পাবো
এখন বরং তরকারি কিনে আনি
আহানা বাসা থেকে বের হতেই শুনতে পেলো নিচে কতগুলো ছেলের হট্টগোল,সবগুলো চিকনার দল
১৭/১৮বছর বয়সি হবে মনে হয়,আহানা মাথার ঘোমটা টেনে চুপচাপ নামতেছে সিঁড়ি দিয়ে,ছেলেগুলো কথা বলা বন্ধ করে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই মিলে
মনে হয় আর এর আগে মেয়ে দেখেনি
এবার সবাই ফিসফিস শুরু করে দিলো একে অপরের সাথে
একজন বললো “মনে হয় নতুন এসেছে মেয়েটা”
আরেকজন বললো “মনে হয় বড় আপু”
আরেকজন বললো “তাহলে আসসালামু আলাইকুম”
আরেকজন বললো”সিনিয়র আপু যখন বউ”
এটা নিয়ে সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে
আহানা পিছন ফিরে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”আরেকটা আছে!”সিনিয়র আপু যখন শাশুড়ি”
এটা বলেই আহানা চলে গেলো
এবার সবাই মিলে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে,এটা কি বললো মেয়েটা!
.
আহানা নিচে নেমে এদিক ওদিক তাকালো,এসময়ে তরকারি পাবো কই,এই এলাকা তো ভালো করে চিনি না আমি
সামনে দোকানপাট আছে,আর এপাশে সব বাড়ি,২তলা,৫তলা,৭তলা এরকম
তো আহানা সামনে রাস্তার ওপাশে গেলো দোকানদারকে জিজ্ঞেস করার জন্য
.
আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম
.
আঙ্কেল এখানে আশেপাশে কোথাও তরকারি বাজার আছে বলতে পারবেন??
.
তুমি তো মনে হয় এখানে নতুন,,তরকারি বাজার তো এখান থেকে দূরে তবে এ সময়ে ভ্যানগাড়ী যায় এই রোড দিয়ে,ওটাতে তরকারি পাবা
.
এখন?আচ্ছা তাহলে আমি অপেক্ষা করতেছি
.
আহানা দালানগুলোর দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতেছে,টিনের ঘর পেলো না,পেলে হয়তবা ভাড়া আরও কম লাগতো,যেহেতু বেতনে সব হয়ে যাবে তাই দালানেই উঠলো
চিকন গলির রোড,মানুষ এত বেশি এই এলাকায়,আহানা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে কয়েকজন বয়স্ক লোক টুলে বসে আজকের খবরের ব্যাপারে আলোচনা করতেছেন হাতে গরম চায়ের কাপ নিয়ে
এরকম জনবহুল এলাকা আমি আর দুটো দেখিনি,মনে হচ্ছে কোনো যৌথ পরিবারে থাকতে এসেছি,এত মানুষ চারপাশে!দু একদিনেই সবার সাথে ভাব হয়ে যাবে,মা তো মনে হয় এতক্ষণে প্রতি ইউনিটের আন্টিদের সাথে ভাব ও করে ফেলেছে
এই সরু পথটা দিয়ে কিছুক্ষন বাদেই সাইকেলে করে কেউ না কেউ যাচ্ছে,বাপরে বাপ এত ব্যস্ত এরিয়া!!
ভ্যানগাড়ী আসতে প্রায়ই ১০/১৫মিনিট লেগে গেছে,দূর থেকে ভ্যানগাড়ী দেখতে পেয়ে আহানা জলদি করে উনার সামনে এসে দাঁড়ালো
পটল/বেগুন/পুঁইশাক/কলমিশাক/লাল শাক/বরবটি/লেবু এসব আছে
আহানা অনেক ভেবে কলমিশাক আর বরবটি নিবে ঠিক করলো
তো ভাইয়া কলমিশাক ২মুঠা কত করে?
.
১৫টাকা
.
এটা আবার কোন হিসাব?এক মুঠা ৫টাকা হলে,২মুঠা ১০টাকা,১৫টাকা হয় কেমনে?
.
আপনি ৩মুঠা নেন ১৫টাকা দিয়ে
.
না,বাসায় ফ্রিজ নাই,রাঁধলে আজকেই রাঁধতে হবে,কাল পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাবে,আমি ২মুঠাই নিব ব্যস
.
আচ্ছা,আর কি নিবেন?
.
বরবটি কেজি কত করে?
.
৮০টাকা
.
ঐদিন না দেখলাম ৫০টাকা
.
কোথায়?
.
আমাদের সায়দাবাদে ৫০টাকা করে পাওয়া যায়,আপনি এত দাম চাচ্ছেন কেন?
.
আমি সায়দাবাদ থেকেই আনছি,তো এতদূর থেকে আনছি একটু বেশি চাইবো না?
.
নিব না আমি বরবটি,কাল সায়দাবাদ যাবো একটা কাজে তখন আসার সময় ৫০টাকা দিয়ে বরবটি নিয়ে আসবো দেখিয়েন আপনি
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
এতক্ষণ পর কলমিশাক দুই মুঠো, চাল এক কেজি আর এসব কি মসলাপাতি,তেল নিয়ে ফিরলি তুই?আজ এগুলা খাবি?
.
কলমিশাক ভাজি করে নাও,ভাত আমি রাঁধবো,কাল সায়দাবাদের বাসায় গিয়ে আমাদের বাকিসব জিনিসপাতি নিয়ে ফিরবো তাহলেই তো হয়ে যায়
.
তোকে আমি একা ওখানে যেতে দিবো না
.
তুমি সহ যেও তাহলে আর নয়ত আমি রুপাকে সাথে করে নিব
ওহ আমি তো ভুলেই গেছি আমি আর ভার্সিটিতে যাব না কোনোদিন,তার উপর সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ আছে,তাহলে তোমাকে নিয়ে বিকালে আরে না ধুর!বিকালেও তো টিউশনি আছে,কি করা যায় বলোতো?
.
নিতুকে পড়িয়ে শান্তকে নিয়ে যাইস তাহলেই তো হয়
.
অসম্ভব! আমি ঐ লোকটার সামনেও যাব না আর
.
তাহলে রাতে আমি নাহয় যাবো তোর সাথে
.
হুম সেটাই,চলো আমি তোমায় শাক কাটায় হেল্প করবো
.
৩টে রুমের মধ্যে সবগুলো বন্ধ শুধু রান্নাঘরেরটা বাদে
আহানা আর তার মা নিচে ফ্লোরে বসে শাক কাটতেছে
পাশের বাসার আন্টির থেকে আপাততর জন্য ২টো পাতিল নিয়ে এসেছে আহানা,কাল পাতিল-টাতিল সব নিয়ে আসতে হবে একেবারে
আহানা শাক বেছে দিয়ে চাল ধুচ্ছে বেসিনে গিয়ে
মা শাক হাত দিয়ে কুচি করতেছেন,দা বটি সব বাসায় রেখে এসেছেন তারা
আহানা ভাত বসিয়ে রুমের দিকে গিয়ে ধুমধাম করে নিমিষেই রুম দুটো পরিষ্কার করে ফেললো সে
তারপর ফ্লোরে গোল হয়ে বসে গালে হাত দিয়ে সামনের জানালাটা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো
অনেকদিন বাদে তার মনে হচ্ছে তাকে আর কেউ জ্বালাবে না
রতন প্রতিদিন জ্বালাতো আর এখন আর জ্বালাবে না,বেশ ভালো
আহানা মুচকি হেসে ফ্লোরে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো
আউ!মাগো!
আহানা উঠে বসে পিঠ ঘষতে ঘষতে ফ্লোরের দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন
এত শক্ত এটা!ঘুমাবো কি করে আমি!
ধুর,কোনো কিছু না এনেই ড্যাং ড্যাং করে নতুন বাসায় এসে পড়লাম
আহানা উঠে গিয়ে জানালার গ্রিল ধরে আনমনে আকাশের দিকে চেয়ে বললো”মিঃঝগড়াইট্টা!!আমাকে আর পাচ্ছেন না আপনি,কিরাম লাগে এখন?
.
আমি বুঝি না এই মেয়েটা এত এত জেদ দেখায় কি করে,আসলে সে কি মানুষ নাকি অন্য কিছু?
মেয়েরা একটু ভাব দেখায় সেটা জানি বাট এরকম ভাব দেখায় জীবনে এ প্রথম দেখলাম আমি,আজব একটা মেয়ে সে
আরে ভাই জেদ দেখানো দরকার তো রতনকে দেখাতা ইটস ফাইন!
তো আমাকে কি জন্যে দেখায় সেটা বুঝি না,আমি ওর কি লাগি সে কি জানে না?
.
কি লাগে ভাইয়া?
.
শান্ত এতক্ষণ বারান্দার বিনব্যাগে আধশোয়া অবস্থায় সূর্যমুখীর বাগানটার দিকে চেয়ে কথা বলতেছিলো নিজেই নিজের সাথে হঠাৎ নিতুর কথায় হকচকিয়ে ঠিক হয়ে বসে দরজার দিকে তাকালো সে
.
না তো!!কিছু লাগে না
.
আসবো?
.
আসেন!আসেন
ভিতরে ঢুকে আবার জিজ্ঞেস করতেছিস কেন?
.
হিহি,তো তোমার কি লাগে বলো,আমিও শুনি
.
শত্রু লাগে,এত পাকনামি করতে হবে না তোকে,কি জন্যে এসেছিস সেটা বল আগে
.
সত্যি সত্যি বলবো নাকি মিথ্যে মিথ্যে?
.
এত ঢং তোকে কে শিখিয়েছে?আহানা?
.
আহানা আপুর নাম নিলাম না তুমি আহানা বলতেছো কেন,আমি তো এমনি এমনি এরকম ডায়ালগ দিই
.
আচ্ছা সত্যিটাই বল!
.
পরশু আমাদের স্কুলে সিন্ড্রেলার অভিনয়ের কম্পিটিশন আছে,মানে সবাই সিন্ড্রেলা সেজে আসবে,যার অভিনয় বেশি ভালো হবে সে উইননার
.
তো?আমাকে বলিস কেন?আমি কি তোকে নাচানাচি শিখাবো?যেমন করে সিন্ড্রেলা জামা ধরে দৌড়াইয়া পালাচ্ছিলো ১২টা বাজার সাথে সাথে?
.
নাইস!তুমি দেখি সবটা জানো,তুমি আমাকে শিখাইয়া দাও কিভাবে সিন্ড্রেলা জামা ধরে দৌড়ে যাচ্ছিলো,আমি অবশ্য কার্টুনে দেখছিলাম তবে অভিনয়টা আসতেছে না ঠিক
.
আমার আর কাজ নাই তাই না?আমার অফিসের কত কাজ,যা এখান থেকে
.
তোমার সত্যিই কাজ নাই,আমি দেখছিলাম তো বারান্দায় বসে বসে “আহানা তোমার কি লাগে”এসব বলতেছিলা
.
এত পাকনা হয়ে গেছিস তুই!যাবি নাকি ধরে দিব এক চড়
.
আমি মায়ের কাছে গিয়ে বলবো তুমি এতক্ষণ আহানা আপুকে নিয়ে কি বলতেছিলা
.
এই এই!দাঁড়া ঠিক আছে আমি তোকে শিখায় দিব,এখন রাত হয়ে গেছে তুই যা,আমি কাল শিখায় দিব
.
ঠিক আছে!
নিতু নাচতে নাচতে চলে গেলো রুম থেকে
.
শান্ত বারান্দা থেকে এসে তার রুমের দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পড়েছে,মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে ফোনটা নিয়ে শুয়ে পড়লো সে
ডাটা অন করে মেসেজ রিকুয়েস্ট চেক করতেই দেখলো ৩২টা মেসেজ দেওয়া কণা তাসনিম আইডি থেকে
এই নিয়ে ওর ১০টা আইডি শান্ত ব্লক দিয়েছে,শান্ত বিরক্ত হয়ে আবারও ব্লক করলো ওকে,জানু বেবি,এসব লিখে রেখেছে
শান্ত সবসময় ফেসবুকে দ্যা পিপল ইউ মে নো চেক করে
নোটিফিকেশন চেক করে না আর ইনবক্সে একটা গ্রুপ আছে,ওর, রিয়াজ,নওশাদ আর সূর্যর
তো আগ্রহ বশত সে গ্রুপের মেসেজ চেক করতে গেলো
নওশাদ আর রিয়াজ মিলে শান্তর আর আহানার ঝগড়ার টাইমের কতগুলো ছবি তুলে গ্রুপে দিয়ে রেখেছে
শান্ত রেগে মেগে গ্রুপ থেকে লিভ নিয়ে নিছে,তারপর গেলো দ্যা পিপল ইউ মে নো তে
সব চেক করতে করতে চোখে পড়লো একটা আইডি
আইডির নাম”আহানার ইচ্ছেঘুড়ি ”
আহানা নামটা অানকমন বলে শান্তর বারবার এটাই মনে হলো যে আইডিটা আহানার হতে পারে
তাই সে ভিতরে গেলো,আহানার নিজের কোনো ছবি দেওয়া না থাকলেও সব ছবি পুতুলের
আর কভারে একটা পিক দেওয়া সেটা হাতে নীল চুড়ির,হাতটা দেখে শান্তর আর ২মিনিট ও দেরি লাগেনি চিনতে
শান্ত এবার সিউর হলো এটা আহানা,সব ছবিতে ১০/১২লাইক
সবগুলো মেয়ের লাইক,শান্ত মুখ বাঁকিয়ে চলে আসলো ওর আইডি থেকে
ও ভাব দেখাতে পারে আমি পারি না?আমিও রিকুয়েস্ট পাঠাবো না হুহ!!

এই যে আত্নসম্মানের রাণী,আসেন খেতে আসেন,কিছুই তো আনেন নাই,পাতিলে রেখেই খান,খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে মায়ের হাতে খাবার খেয়ে নিলো,তারপর কোনোরকম ফ্লোরে মায়ের শাড়ী বিছিয়ে শুয়ে পড়লো ব্যাগ মাথার নিচে দিয়ে
পরেরদিন সকাল হতেই আহানা ঠিক করলো যেহেতু ৯টা থেকে দোকানে বসতে হবে তো এখন গিয়ে সায়দাবাদ থেকে সব জিনিসপাতি নিয়ে আসার মোক্ষম সময়,রাতে যেতে ভয় করে
তাই মাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দুজন মিলে সায়দাবাদ এসে পৌঁছালো
তখন সকাল ৭টা বাজে,এদিক ওদিক বারবার তাকাতে তাকাতে আহানা আর তার মা হেঁটে চলেছে,সম্পূর্ণ ভয় রতনকে নিয়ে
মা দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢুকলেন,তারপর আর দেরি না করে এক এক করে সব জিনিসপাতি নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রিকসায় এনে তুললেন,এখন বাকি রইলো খাটটা সেটা আর রিকসায় আঁটলো না
আহানা বললো রিকসা আরেকটা নিয়ে নিবে খাটের জন্য
খাট খুলে খন্ড গুলো রিকসায় তুলার পর মোট ২রিকসা মালামাল হলো
আহানা আর মা তাই রিকসা আরেকটা নিয়ে ফিরলেন
আহানা রিকসাআলাদের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে মাকে বললো আস্তে আস্তে সব গুছাতে আর নয়ত রেখে দিতে সে এসে সব ঠিক করবে,এখন সে তার কাজে যাবে
মা ঠিক আছে বলে ওকে এক বোতল পানি এগিয়ে দিলো
আহানা এক বোতল পানি ব্যাগে পুরে বের হলো বাসা থেকে
আজ থেকে তার দায়িত্বের ভার বাড়লো, কাজ বেশি টাকা কম,পড়ালেখাও বন্ধ
কত কিছু যে বিসর্জন দিলাম একদিন নিজেকেই বিসর্জন দিয়ে দিব আমি
তাও হাল ছাড়বো না
আহানা আজ হেঁটেই সেই দোকানটায় আসলো,এমনিতেও মালামাল আনতে গিয়ে অনেক টাকা খরচা গেছে তাই বাধ্য হয়ে সে হেঁটেই আসলো
ওদিকে দোকান খুলে দিয়েছে দোকানের মালিক মালিনী রহিম আপু
বাকি সহকারীরাও এসে গেছে দেখছি!
আহানা সালাম দিয়ে ভিতরে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো,মালিনী সবাইকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলো তার কাজে
আহানা গালে হাত দিয়ে বসে আছে,এত বোরিং লাগতেছে ওর,প্রায়ই ২ঘন্টা হয়ে গেছে এখনও একটা কাস্টমার আসলো না

কি ব্যাপার ঊষা!এসব কি?আমি না তোমাকে বললাম মিঃরুপমের ফাইলটা আনতে,তুমি সিরাজের ফাইল এনেছো কেন?
.
কিন্তু স্যার আপনি তে বললেন রুপমের ফাইল না আনতে,ওখানে যে ফাইল আছে সেটা আনতে তাই তো আমি সিরাজের ফাইল এনেছি
.
ওহ,আমি ভুলে গেসিলাম!যাও এখন তুমি
.
স্যার কফি পাঠাবো?
.
না তার দরকার নেই,এসময়ে আবার রিয়াজের ফোন!এবার যদি বলে বিয়ে ঠিক তো বলবো আমি আসবো না,এ কণার বেয়াদবি আর ভাল্লাগে না আমার
হ্যালো!
.
কিরে হারামি!তোরে ফোন দিই এত দেখোস না নাকি? আহানার সাথে অলসেট??গ্রুপেও মেসেজ সিন করে লেফট নিয়েছিস,কি ব্যাপার?
.
ওর কথা তুলবি না,বাদ দে,কিসের জন্য ফোন করেছিস সেটা বল আগে
.
আগামী মাসের ৪তারিখে আমার গায়ে হলুদ,পরেরদিন বিয়ে,আপনি কিন্তু ১০দিন আগেই যাত্রামুড়াতে এসে হাজির হবেন,আমি কিছু শুনতে চাই না,নো এক্সকিউজ
.
বাপের বাড়ির আবদার তাই না?আমার আর কাজ নাই ১০দিন আগে গিয়ে বসে থাকবো তোর বাসায়,আমি তো বিয়ের দিন ও যাব না
.
কণার ব্যাপারটা ভুলে যা,এবার বলে দিবি তোর আর আহানার বিয়ে ডান,তারপর আর কিছু বলবে না দেখিস
.
তার মানে আহানাকে আবারও আমার সাথে তোর বিয়েতে আর গায়ে হলুদে নিয়ে যেতে হবে?
.
তো তাহলে তুই বল কণা থেকে কি করে বাঁচবি
.
আমি তোর বিয়েতে যাবোই না ব্যস
.
তাহলে তোর বিয়েতে আমি নওশাদ আর সূর্যও যাবো না দেখিস তুই
.
আসিস না,বাই
শান্ত কল কেটে দিয়ে ফোন টেবিলে রেখে দিলো,তারপর উঠে গিয়ে ওর অফিসের রুমটার জানালার পর্দা সরিয়ে ফেললো এক টান দিয়ে
নিচের গাড়ী আর মানুষগুলোকে পিঁপড়ার সমান লাগতেছে আর উপরে বিশাল আকাশ,টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে চলে যাচ্ছে
শান্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ টেবিলের উপরে থাকা ফোনের দিকে একবার তাকালো তারপর এসে ফোন হাতে নিয়ে আহানার মাকে ফোন করতে গিয়ে থেমে গেলো
না আমি ফোন করবো না,করলে আন্টি ভাববে আমি আহানাকে পছন্দ করি,হুম থাক ফোন করবো না
ও যেমন তেমনই থাক,আমার কি,বরং ভালোই আছি সে জ্বালাচ্ছে না,ঝগড়া করছে না
.
আহানা আজ সারাদিনে শুধু ২টো কাস্টমারের মুখ দেখেছে,কতবার যে চোখে ঘুম এসে গিয়েছিলো তার খবর নেই কিন্তু চাকরি তো চাকরিই,করতে তো হবেই
বিকাল হতেই সে দোকান থেকে বের হয়ে চিত্রাকে পড়াতে গেলো সোজা তারপর চিত্রাকে পড়ানো শেষ করে রুনা আর সিয়াকেও পড়ালো,এবার শেষে নিতুকে পড়াবে,হাত পা চলছে না,আস্তে করে হেঁটে আসতেছে সে

ভাইয়ায়ায়ায়ায়া!
.
হোয়াট!শান্তিতে কফিও খেতে দিবি না,এমন করে চিল্লাস কেন?
শান্ত টিভি থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকালো,সেখানে নিতু গোলাপি রঙের একটা সিন্ড্রেলা ড্রেস পরে দাঁড়িয়ে আছে,হাতে একটা লুঙ্গি
.
জামা পরেছিস ভালো কথা হাতে লুঙ্গি নিতে গেলি কেন?আমার যতদূর মনে আছে সিন্ড্রেলার হাতে তো লুঙ্গি ছিলো না
.
আরে ভাইয়া তুমি কাল আমাকে বলেছিলা সিন্ড্রেলা কেমনে অভিনয় করে সেটা শিখিয়ে দিবা আর আজ সারাদিন গিয়ে এখন আহানা আপুর আসার সময় ও হয়ে গেলো আর তুমি এখনও ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিচ্ছো না
.
ওহ সরি সরি,আমি কাজের চাপে একদমই ভুলে গেসিলাম
.
শান্ত টিভি অফ করে পকেটে হাত ঢুকিয়ে নিতুর কাছে এসে বললো “চল স্টার্ট করি!!এক মিনিট তোর হাতে লুঙ্গি কেন সেটাই তো বললি না”
.
ওমা,সিন্ড্রেলা ড্রেস পরে অভিনয় করতে হবে না?আর ড্রেসটা যেহেতু আমি পরে আছি সেহেতু তুমি ড্রেস মনে করে এই লুঙ্গিটা পরে নাও
.
আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড?
আমি?আমি শাহরিয়ার শান্ত কিনা লুঙ্গি পরে সিন্ড্রেলা সাজবো?তুই আসলেই কি আমার মায়ের পেটের বোন মনে তো হচ্ছে তোকে ডাস্টবিন থেকে তুলে এনেছিলো
.
আ্যাহ!!!
.
তোকে “আ্যাহ” কে শেখালো?
.
নওশাদ ভাইয়া
.
ওরে আমি পরে বুঝাবো,এটা রাখ তুই এখন
.
ভাইয়া প্লিস আপাততর জন্য এটা পরেই শিখাও না প্লিস, কেউ তো আর দেখছে না,রিপা আপু আম্মুর রুমে,বুয়াও নাই
.
ফাইন
শান্ত ওর থ্রি কোয়াটার প্যান্টের উপর দিয়ে লুঙ্গিটা পরে নিলো,তারপর লুঙ্গিটা হাতে নিয়ে উঁচু করে বললো”দেখ,ডিং ডং,ডিং ডং,ও মাগো ১২টা বেজে গেছে,আমাকে এখনই চলে যেতে হবে,এটা বলে এমন করে দৌড় দিবি”
.
শান্ত লুঙ্গি ধরে নিতুর দিকে চেয়ে সামনে দৌড়াতে গিয়ে আহানার গায়ের সাথে এক ধাক্কা লেগে ওর গায়ে গিয়ে পড়লো
আর আহানা ভার নিতে না পেরে সে সমেত নিচে পড়লো
দুম!!!
.
ওমা সিন্ড্রেলা দেখি উলটে পড়ে গেলো,বাট সে তো পড়েনি আসলে,আমি তো দেখছিলাম দৌড়ে গাড়ী করে চলে গিয়েছিলো, যাওয়ার সময় জুতা একটা রেখে গিয়েছিলো ভুলে
বাট ভাইয়া তোমার জুতা দেখি ২টাই আমার সামনে পড়ে আছে
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে