প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৩+৪

0
2363

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানারা সবাই শান্তদের আগেই গুহা থেকে বেরিয়ে জিপে করে চলেও গেছে
শান্ত খালি এদিক ওদিক তাকিয়ে আহানাকে খুঁজতেছে
লাস্টবার এক টাইট দিয়ে তারপর আমি ফিরবো
কিন্তু সবাই গুহা থেকে বেরিয়ে দেখলো তাদের জিপ বাদে আর কারো জিপ নেই তার মানে তারা চলে গেছে,ধুর!!
.
নওশাদ দাঁত কেলিয়ে বললো”চল হোটেলে ফিরে যাই”
.
শান্ত জিপে উঠতে উঠতে বলতেছে” সূর্য আসে নাই কেন আমাদের সাথে?”
.
সে তো ঘুমাচ্ছে,বহুত টানছি উঠাতেই পারলাম না,থাক গে আমাদের কি,আজকের সব ট্রিপ মিস গেলো ওর
.
এই জিপ থেকে বাস স্টেশন গিয়ে বাসে উঠে ফিরে যাবো আমরা
.
কিন্তু শান্ত আরও দুদিন থাকলে হতো না?
.
না হতো না,মাকে দেখতে যেতে হবে আমার আর নিতু কি করছে না করছে সব দিক খেয়াল রাখতে হবে তো,এত বাইরে থাকলে তাদের খেয়াল কে রাখবে?মাকে ছাড়া এমনিতেও দূরে কোথাও গেলে আমি শান্তি পাই না
.
আচ্ছা ফাইন
কিন্তু এটা মনে রাখিস তোকে তো আমরা বছরে কটা দিনের জন্যই ফ্রি পাই শুধু নাহলে আপনি তো একজন বিজি বিজন্যাসম্যান
.
তা নয়!তোরা আমাকে বললেই আমি কিন্তু রাজি হয়ে যাই
.
তাহলে আমাদের কথা ধরে এবার বিয়েটাও সেরে নে,তুই তো আমাদের কথা খুব মানিস
.
তা হচ্ছে না, আমার মা যে মেয়েকে পছন্দ করবে সেই হবে আমার ওয়াইফ
.
আন্টির যে কবে কোনো মেয়েকে পছন্দ হবে আর কবে যে আমরা শান্তর বিয়েটা খাবো
.
আমাকে নিয়ে না পড়ে নিজেরা বিয়ে করে নিলেই তো পারেন,আপনারাও তো আমার মত ম্যাচিউর হয়ে গেছেন
বিয়ে করেন নেন
কথায় আছে টিমের একজন ফ্রেন্ড বিয়ে করে নিলে টিমের সব ফ্রেন্ডের ওয়ান বাই ওয়ান বিয়ের পালা এসে যায়
.
হাহা!১বার ছ্যাকা খেয়ে ব্যাঁকা হইছি
আমার আর মনে হয় না কাউরে চোখে ধরবে
.
নে বাস স্টেশন ও এসে গেছে,সূর্য কখন আসবে সেটা বল আগে
.
রিয়াজ আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বললো”ওকে তো আমরা জিপে উঠার আগেই কল করে বলেছিলাম হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়তে, এতক্ষণে তো চলে আসার কথা”
.
সূর্য ১০মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলো
তারপর সবাই মিলে বাস ধরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো
ঢাকায় আসতে আসতে রাতের ১১টা বেজে গেছে
শান্ত বাস থেকে নামতেই একটা ছেলে বাইক নিয়ে এসে আগে ওকে সালাম দিয়ে তারপর বাইকের চাবিটা ওর হাতে দিলো
শান্ত মুচকি হেসে বললো”কেমন লাগলো তাহসান?”
.
স্যার এই বাইকটা জাস্ট ওসাম!!আপনি বললেন বাসা থেকে নিয়ে আসতে
তারপর আপনি বাইক চালিয়ে বাসায় আসবেন সায়দাবাদ থেকে তাই আনলাম,আমার তো এত ভাল্লাগছে কি বলবো!
.
তাহলে বাইকটা এখন থেকে তোমার!নাও চাবি
.
কিন্তু স্যার!
.
এত ইমোশনাল হওয়ার কিছু নাই,আমি নিউ কিনবো হাহা!!
.
স্যার এটাও তো নতুন,১০/১২দিন চালিয়েছেন শুধু
.
তাতে কি,তোমার পছন্দ হয়েছে তুমি নিয়ে যাও
.
স্যার আপনি আপাতত এটা চালিয়ে বাসায় যান তারপর না হয়
.
না,আমি রিকসা করে যাবো,আজ মন চাচ্ছে রিকসায় উঠি,বাই তাহসিন
.
তাহসিন হা করে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছে,শান্ত একটা রিকসা ডেকে উঠে পড়েছে ততক্ষণে

যাক বাবা!! আজ ভালোই বাজার হলো,খাটের নিচে কবেকার জমানো ১০০টাকার নোট পেয়েছিলাম হিহি,এটা দিয়েই বাজারটা হয়ে গেছে আমার
টাকাটা দিয়ে পেঁয়াজ আর আলু কিনলাম
এবার এগুলা দিয়ে রাঁধবো,মা আমার জন্য এখনও না খেয়ে আছে
আহানা এক হাতে পেঁয়াজ আর আরেক হাতে আলু নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে
সায়দাবাদে যে ওভারব্রিজ আছে তার ডান পাশের মোড়ে গেলে যে টিনের ঘরগুলো আছে তার মধ্যে একটা হলো আহানাদের বাসা,গলিটা পেরিয়ে ২টা মোড় পার হলেই তাদের বাড়ি
টিনের ৩রুমের একটা বাড়ি,সামনে একটা নারকেল গাছ,তারপর সিড়ি বাসাটার সামনে,বসার সিড়ি,লাল রঙ করা
মা,খালা আর সে থাকে বাসায়,খালা সবসময় থাকে না, মাঝে মাঝে এসে থাকে
আহানা একটা ছোট্ট স্কুলে পড়ায়,এই পাড়ার সব ছোট বাচ্চাকে সে পড়ায়,যে যা পারে তাকে দেয়
তার এই কামায় থেকেই সংসারটা চলে আর তার ভার্সিটির খরচ চলে
ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত পড়ায় সে,তারপর খেয়ে ভার্সিটিতে চলে যায়
ওর যখন ১৪বছর তখন বাবা কার এক্সিডেন্টে মারা যান,তখন ওরা অনেক বড়লোক ছিল,ওদের নিজেদের গাড়িও ছিল কিন্তু ওর চাচারা সব বাজেয়াপ্ত করে ওদের আজ এই অবস্থা করেছে,মাকে নিয়েই তার পৃথিবী
বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই পুরো সংসারের দায়িত্ব আহানা আর তার মায়ের উপর এসে পড়েছে,এখন আর মা শরীর খারাপের জন্য কাজ করতে পারেন না বলে আহানাই সব কাজ করে,আগে মা সংসার চালাতো
আহানা একদম উল্টা পাল্টা খাতে খরচ পছন্দ করে না
বান্দরবনেও সে যেতে চায়নি,রুপা ওকে না বলেই ওর টাকাটা দিয়ে দিয়েছিলো,তাই সে গেছে সেখানে,যাদের পড়াতো তাদের ও ছুটি ছিল,শীতকালের
আর বান্দরবনে যাওয়ার আরেকটা কারন ছিল সেটা হলো সুইসাইড
এখানে তো সবার সামনে সুইসাইড করা যাবে না তাই সে রুপার কথায় বান্দরবন যেতে এক পায়ে খাড়া হয়ে গেছিলো
মৃত্যুটা সে চায় কারণ!সংসারের জন্য টাকা আয় করতে গিয়ে সে ক্লান্ত!এটা কিনলো তো ওটা শেষ
মায়ের কষ্ট সে আর সহ্য করতে পারে না,সে তার সবটা দিয়ে টাকা কামাই করার চেষ্টা করে,ভার্সিটি শেষ করে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিউশনি করায় তাও টাকাটা আসে না,যা আসে তা দিয়ে চলে না
তারা যে বাড়িটায় থাকে সেটাও ভাড়ার,তাই সে এসব থেকে চলে যেতে চায়
সে মরে গেলে তার মাকে তার খালা দেখবে,এসব ভেবেই সে মরতে চায়
কিন্তু মরতেই পারে না
এসব ভাবতে ভাবতে সে এসে পড়লো একদম শান্তর রিকসার সামনে আর দুম করে রোডে পড়ে গেলো
রিকসাআলা রিকসা বাঁকা করে আরেকদিকে নিয়ে গেছে নাহলে আজ সাত পাঁচ হয়ে যেতো
.
মামা থামান তো!
শান্ত রিকসা থেকে নেমে পিছনের দিকে এসে দেখলো আহানা হাত পায়ের বালু ঝাড়তেছে তারপর উঠে পেঁয়াজ আর আলু টোকাচ্ছে,টুকিয়ে টুকিয়ে পলিথিনে ঢুকাচ্ছে
.
আপনি!
.
কথাটা শুনে আহানা চোখ বড় করে সামনে তাকিয়ে শান্তকে দেখতে পেলো
.
আবারও মরতে এসেছিলেন তাও আমার রিকসার সামনে?বেয়াদ্দপ একটা মেয়ে তো আপনি!
.
শুনুন,আমি মরতে চায়নি,আমি হেঁটেই যাচ্ছিলাম,অন্যমনস্ক ছিলাম বলে রিকসার সামনে এসে পড়েছিলাম
.
আপনাকে আমি হারে হারে চিনি!নির্ঘাত মরতে এসেছিলেন
.
আপনার সাথে ঝগড়া করার মন মানসিকতা নাই আমার, যান এখান থেকে
.
এটা তোমার বাপের রাস্তা?
.
বাপ তুলে কথা বলবেন না একদম!আপনার বাপের রাস্তা?
.
আমার বাবা নিয়ে কিছু বলবা না!বাপের না হলেও আমার চাচার রাস্তা,হ্যাপি?
.
ইহ!!!বললেই হলো
.
আহানা!
.
আহানা ঢোক গিলে পিছন ফিরে তাকালো একজন মহিলার ধমকে
গায়ে সাদা ময়লা শাড়ী পরা একজন মহিলা এগিয়ে আসতেছেন,চোখে মুখে বয়সের ছাপ,হাতে গলায় কোনো অলংকার নেই,পায়ে ছেঁড়া জুতা সেটা আবার সেলায় করা
এগিয়ে এসে আহানার কান টেনে ধরলেন তিনি তারপর চোখ রাঙিয়ে ওকে চুপ হতে বললেন
এরপর শান্তর দিকে তাকিয়ে মুখটা অসহায়ের মত করে হাত জোড় করে ধরে বললেন”বাবা মাফ কইরা দাও,আর এমন হবে না,আমার মাইয়া অবুঝ,না জাইনা বড় বড় মানুষের সাথে লাগতে আসে,মাফ করো বাবা”
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে চলে গেলো

কি সমস্যা তোর?যাকে পাবি তার লগেই ঝগড়া লাগায় দিবি??তোর এই তেজি ভাবের লায় রতন তোর জন্য পাগল হইয়া গেছে!বেশি ত্যাজ দেখাস মাইনসেরে
এসব দেখায় রতনরে পাগলা বানাইছত
.
মা!আমি কি জানি রতন কুত্তাটা আমার রাগ দেখে প্রেমে হাবুডুবু খাবে!
.
যা সর এখন,আমি ভাত রাঁইন্দা লইছি এবার তুই আলু ভাজি করে লও তারপর খামু,ঘুমাতেও তো ওইবো কত রাত ওইছে সেদিকে তোর খবর আছে,খবর কেন থাকবে সারাদিন তো ঝগড়াই করস

শান্ত বাসার সামনে এসে রিকসা থেকে নামলো,দারোয়ান ওকে সালাম দিয়ে ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে ভিতরের দিকে দৌড়ে চলে গেছে
শান্ত বাসার ভিতর পা রাখতেই একটা ৭বছরের মেয়ে দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো
শান্ত মুচকি হেসে ওকে কোলে তুলে নিয়েছে,তারপর বললো”আমার বোনটা এত রাতে ঘুমায়নি কেন?”
.
ভাইয়া আমি তো তোমাকে রিসিভ করার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই কখন থেকে
.
গুড গার্ল,তা আমার বোন কি খেয়েছে কিছু?
.
হুমমম!রিপা আন্টি খাইয়ে দিয়েছে
.
তবে এখন তো তোমাকে ঘুমাতে যেতে হবে
.
হুম যাচ্ছি যাচ্ছি!
.
শান্ত জ্যাকেটটা খুলে সোফায় রেখে মায়ের রুমের দিকে গেলো,দরজাটা নক করে খুলতেই চোখ গেলো তার জানালার ধারের দিকে
সেখানে হুইল চেয়ারে বসা একজন মহিলা বসে আছেন,চোখে চশমা,হাতে একটি উপন্যাস,উনি শান্তর মা
শান্ত পা টিপে টিপে এগোচ্ছে
কিছুদূর যেয়ে যেই না মাকে জড়িয়ে ধরতে যাবে
তখনই মা টের পেয়ে ওর দিকে তাকালো
শান্ত মুখটা ব্যাকা করে বললো”মা!!!দিলে তো সারপ্রাইজটা নষ্ট করে!”
.
মা মুচকি হাসলেন!তারপর শান্তর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন
শান্ত হাঁটু গেড়ে মায়ের সামনে বসলো,তারপর বললো খেয়েছো তো?
.
মা মাথা নাড়ালো
.
শান্ত হেসে বললো”আচ্ছা হ্যাঁ জানালা,, তার মানে খাওনি,আমি জানি তুমি আমাকে ছাড়া খাও না”
.
মা মুচকি হাসলেন,শান্ত মায়ের হুইল চেয়ারটা টেনে মাকে নিয়ে ডাইনিংয়ে চলে আসলো
তার মা বিগত ৭বছর ধরে কথা বলতে পারেন না,কত ডাক্তার দেখিয়েছে ওর চাচা,মামারা মিলে
বাবার মৃত্যুর পর থেকেই মা এমন হয়ে গেছে
তখন নিতু জন্ম নিয়েছিলো!মাকে নিয়ে আমি হসপিটালে ছিলাম
হসপিটাল থেকে বের হতে না হতেই দেখলাম বাবার লাশবাহী গাড়ী হসপিটালের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে
তারপর থেকে কোনো কথা আসে না মায়ের মুখ দিয়ে,এত বড় শক তিনি নিতে পারেননি,তবে পাশের জন কি বলে তা তিনি শুনেন এবং বুঝতে পারেন
শান্ত মায়ের হাতে খাচ্ছে আর বান্দরবনের সব বলেই যাচ্ছে
তারপর মুখ ফসকে আহানার কথাও বলে দিলো
মা তো চোখ বড় করে চেয়ে মুচকি হেসে বারবার হাত দিয়ে ওকে খোঁচাচ্ছে
.
মা শুনো,মেয়েটা কে?কি রে?আমি জানি না
জানতেও চাই না,এমনি বললাম তোমাকে আর তুমি শুরু করলা ওর পিক নিয়ে
পিক পাবো কই,আর ওকে আমি বিয়েও করবো না,এরকম ঝগড়ুটে নাছোরবান্দাকে বিয়ে করলে জীবন ত্যানত্যানা করে ফেলবে আমার
.
স্যার খুঁজে বের করেন,এমন ও হতে পারে এই মেয়েটাই ম্যাডামের পছন্দ হলো!
.
রিপা!দরকার নাই,আমাকে সুখে থাকতে ভূতে কিলায় নাই যে আমি খাল কেটে কুমির আনবো,মা আমার খাওয়া শেষ আমি যাই ঘুমাতে
শান্ত উঠে চলে গেলো
রিপা মাকে নিয়ে মায়ের রুমের দিকে গেলো,রিপা হচ্ছে নার্স,মায়ের দেখাশুনা করে,মায়ের পা অবশ হয়ে যাওয়ায় হাঁটা চলা পারেন না,২/৩বছর হলো হুট করে পায়ের সব কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে গেছে তার
তারপর থেকে বিছানা থেকে নামলেই হুইলচেয়ারে থাকতে হয়
.
শান্ত নিজরে রুমে এসে দরজা লাগালো,তারপর পকেট থেকে ছোট্ট একটা মদের বোতল নিয়ে বারান্দার দিকে চলে গেলো
মা যেন না জানে,মদ খেয়ে সব সাফ করে তারপর ঘুমাবে সে
কাল থেকে আবার অফিস!

আহানা আলু ভাজি করে ভাত নিয়ে মায়ের সাথে খেয়ে নিলো
তারপর ঘুমাতে গেলো
একটা রুমে বিছানা,আরেক রুমেও বিছানা আছে,খালা আসলে সেখানে থাকে,আর আরেকটা রুম বলতে সেখানে চুলা আর একটা কাঠের মির্ছিফ আছে,হাঁড়ি পাতিলের জন্য
মা আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন,আহানা ছাড়া তার আর কেউ নেই,আত্নীয় বলতে মা বাবা ছিল তারাও এক এক করে মরে গেছে,পরিবারের আর একটা বোন বাকি আছে,রোকেয়া,তারও সংসার নেই,গার্মেন্টসে চাকরি করে,মাঝে মাঝে আমাদের সাথে এসে থাকে
শেষ সম্বল স্বামী ছিল আর সেও চলে গেলো,কত সুখের দিন ছিল সেসময়ে,কিছুর অভাব ছিল না,মজনু ভাই সব নিজের নামে কি করে নিয়েছে জানি না
আহানার বাবা মারা যাওয়ার ২দিন বাদেই আমি আমার মেয়েটাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম,বাধ্য হয়েছিলাম
হাতের সোনার বালা দিয়ে সব কিনেছি এই বাসার
আমি গার্মেন্টসে কাজ করে আহানাকে পড়িয়েছি এতদিন
জীবনে পড়ালেখাটাই সব!
এখন আমার মেয়ে নিজের খরচ নিজে চালাতে পারে বলেই আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি,শরীর ও আর মানে না,কতটা বছর আমি সংসারের জন্য লড়েছি,আমার আর আহানার মুখে খাবার তোলার জন্য
আর এখন ২/৩বছর ধরে কাজই করতে পারি না,মেয়েটা আমার একা হাতে টাকা কামায় করে,আর কত করবে,ওর মুখের ফ্যাকাসে ভাব দেখে আমার কষ্ট হয়
তার উপর মেয়েটা শান্তিতে থাকতেও পারে না ঐ রতনের জ্বালায়,তার কুনজর পড়েছে আমার মেয়ের উপর
ওরে বিয়ে দিয়ে দিলো আমি কি নিয়ে থাকবো সেটাই ভাবি
সবে ২১বছর,তবে আশেপাশের সবাই বলতেছে ওর নাকি বিয়ের বয়স হয়েছে,এত তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে আমি দূরে ঠেলে দিব?আর তার স্বামী যদি ভালো না হয়?
আল্লাহ!আমার মেয়েটার কপালে একটা ভালো ছেলে রেখো সে যেনো আমার মেয়েকে কখনও কাঁদতে না দেয়
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
ভোর ৫টা বাজে,হাতে আম গাছের পাতা নিয়ে আহানা হাঁটতেছে তাও ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে,দাঁত ঘষতে ঘষতে বাতাসে ওড়না উড়িয়ে এবার সে ফ্লাইওভারে উঠেছে
এই সময়টা হলো আহানার সময়,সে এসময়ে নিজের মন মতো করে কাটায়,৬টা বাজা পর্যন্ত
হেলেদুলে হাঁটতেছে সে,বাসার পাশে বলেই এখানে সে হাঁটতে আসে
ভোরের আলো চারিদিকে,দু একটা গাড়ী দেখা যাচ্ছে অনেকক্ষণ বাদে বাদে দেখায় যাচ্ছে দূর পাল্লার বাস,মালবাহী ট্রাক
প্রাইভেট কার খুব কমই দেখা যায়,এসময়ে কোন বড়লোকে বাসা থেকে বের হতে যাবে!
আহানা এবার ফ্লাইওভারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো,বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে ভাবলো দুনিয়াটা কত সুন্দর তাই না?আর আমি কিনা মরতে চাই!
সুন্দর পৃথিবীটা দেখার সৌভাগ্য সবার থাকে না,যেমন আমার নেই তাই আমি চলে যেতে চাই
আহানা আম পাতার ঢালটা নাড়াতে নাড়াতে ভাবতেছিলো উল্টা পাল্টা সব ভাবনা
হঠাৎ ঢালটা গেলো হাত থেকে পড়ে
নিচু হয়ে আম গাছের ঢালটা হাতে নিতে যেতেই এবার হাতের আম পাতাটাই উড়ে গিয়ে রোডের মাঝখানে চলে গেলো
.
ধুর!এসব কি হচ্ছে,একটু শান্তিতে চিন্তাভাবনা করতে চাচ্ছিলাম তা আর হলো না!
আহানা বাম পাশে তাকালো একবার
না কোনো গাড়ী নেই,ডান পাশেও নেই,এক দৌড়ে পাতাটা নিয়ে চলে আসবো তারপর নিচে নেমে যাবো
আহানা ঢাল আর ওড়নাটা নিয়ে ফ্লাইওভারের কিনারায় রেখে মাঝখানের দিকে দৌড় মারলো

আমি বুঝি না সকালবেলায় কাজ কেন থাকবে,কোথায় ভাবছিলাম একটু ঘুমাবো,তারপর ঘুম থেকে উঠে ৯/১০টার দিকে অফিসে যাওয়া যাবে তা না সকাল সকাল কাজ এসে ঘাড়ে পড়লো আমার!
ক্লাইন্টটা ৭টার আগেই ফ্লাইট ধরে চলে যাবে লন্ডনে,তাই তার সুবিধামতন আমাকেও এখন এত ভোরবেলা মিটিংয়ের জন্য বের হতে হচ্ছে!!অসহ্যকর!
শান্ত একটা সফট মিউজিক প্লে করে সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে রোডের মাঝখানে
চোখ বড় করে দমটম সব বন্ধ করে গাড়ী থামিয়ে ফেললো শান্ত
আহানা ভয়ের চোটে এক দৌড়ে কিনারায় চলে গেছে ততক্ষণে
আমপাতাটা আর নেওয়া হলো না তার
শান্ত গালি দিতে দিতে গাড়ী থেকে নামতেই দেখলো আহানা তড়িগড়ি করে ওড়না পরতেছে
.
আপনি!!
আপনার সমস্যা কি বলুনতো!!ঘুরে ফিরে আমার সামনেই মরতে আসেন আপনি,আসলে আমি যদি জানতাম আপনি রোডে তাহলে উপর দিয়া গাড়ী চালায় দিতাম,আপনার তো মরার অনেক শখ
.
আহানা ব্রু কুঁচকে চেয়ে আছে তারপর চোখটা হালকা বড় করে বললো”শুনুন,আমি মরতে চাইনি,আমি তো”
.
কাজের বাহানা দিবেন না একদম,আপনাকে আমি হারে হারে চিনি
.
কাজের বাহানা দিচ্ছিনা আমি,আমি আম পাতা নিতে গেসিলাম,ঐ যে আপনার গাড়ীর নিচে তাই দেখাতে পারছি না আপাতত
.
আর ইউ কিডিং উইথ মি?
.
নো!কিডিং কেন করবো,আপনি কি কিড?যে আপনার সাথে বাচ্চামো করবো
.
আপনার মতন বেয়াদব মেয়ে আমি আর দুইটা দেখিনি,আপনার তো মরে যাওয়াই উচিত
.
মরবো না,কি করবেন??জোর করে মারবেন?
.
হ্যাঁ,সেটাই করতে হবে,সবসময় আমার সামনেই মরতে আসেন আর আমি বাধ্য হয়ে আপনাকে বাঁচাতে হয়,আজ এই খোলা ফাঁকা ফ্লাইওভার থেকে ফালাই দিয়া আমার অসম্পূর্ণ কাজটা পূর্ণ করবো
শান্ত গায়ের কোর্টটা খুলে কারের ভিতর ছুঁড়ে ফেলে এগিয়ে গেলো
আহানা ভয় পেয়ে দৌড় মারতে যেতেই শান্ত ওর হাত মুঠো করে ধরে ফেললো সাথে সাথে
.
কই পালাও চান্দু!তোমার না মরার শখ??দাঁড়াও তোমার জীবন নিচ্ছি আমি
.
আমাকে তুমি বলতেছেন কেন,আদরকদর কিছু শিখেন নাই দেখছি
.
লাইক সিরিয়াসলি??ফ্লাইওভারে সাহস ছাড়া মানুষ উঠে না,আর আপনি বলছেন আপনি আম পাতার জন্য রোডের মাঝখানে এসেছেন তাও ফ্লাইওভারের উপর আর সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে!!
.
হাত ছাড়ুন,দেখুন আমি মরতে চাই না,অন্তত আপনার হাতে না
.
আপনি মরতে চান নাকি মরতে চান না তা ভালো করে জানা হয়ে গেছে আমার
আমাকে আর সার্টিফিকেট দিয়ে বুঝাতে হবে না,চলুন নিজেও একটু হালকা হোন আমি আপনাকে উঁচু করে ফ্লাইওভার থেকে ফেলতেছি
.
না একদম না,বাঁচাও!!মায়ায়ায়ায়া,!!খালায়ায়ায়ায়ায়া
.
বাবায়ায়ায়ায়ায়া এটা কইবেন না?
.
বাবা এখানে নাই,যারা আছে তাদেরই তো ডাকবো
.
শান্ত আহানাকে ফালানোর জন্য শক্ত করে ধরতেই ফোনটা বেজে উঠলো তার
তারপর আহানাকে ছেড়ে ফোন রিসিভ করলো সে
.
আমার আম পাতা!!ঢালে একটা পাতাও নেই,আম পাতা ঐ একটাই ছিল কত কষ্ট করে গাছে উঠে নিয়েছিলাম
আহানা হামাগুড়ি দিয়ে কারের নিচে উঁকি দিলো,পাতাটা চাকার সামনে আর একটু চাকারের নিচে,হাত দিয়ে টান দিলে ছিঁড়ে যাবে
.
শান্ত কথা বলা শেষ করে দেখলো আহানা কোমড় উপরে তুলে মাথা রোডে লাগিয়ে রোডে শুয়ে ওর কারের নিচে উঁকিবুকি দিয়ে যাচ্ছে
.
এই মেয়েটা!!!
সরেন এখান থেকে,আপনার জন্য আমার অফিসে লেট হয়ে গেলো
.
শুনুন না,আমার আম পাতা আপনার কারের চাকার সামনে
একটু কারটা পিছনে নেন না আমি পাতাটা নিব
.
আহা!!আপনি আমার রিলেটিভ হোন নাকি বন্ধুবান্ধব? কোনটা?
আপনার জন্য আমি এত কষ্ট কেন করবো!এমনিতেও আমার অফিসে লেট হচ্ছে বাই
সি ইউ নেভার!
.
তার মানে আপনি আমার আম পাতাটা মাড়িয়ে যাবেন?
.
দরকার হলে ঘষে রোডের সাথে মিশিয়ে তারপর যাবো
.
শান্ত কারের দরজা খুলে ভিতরে বসে সিট বেল্ট লাগাচ্ছে
আহানা মুচকি হেসে ফ্লাইওভারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো
শান্ত আহানার হাসির কারণ কি বুঝলো না
গাড়ী স্টার্ট দিয়ে জাস্ট ৬সেকেন্ড গিয়ে কারটা থেমে গেছে
টায়ার পাঞ্চারড,এতক্ষণ তো ঠিক ছিলো
শান্ত কার থেকে নামতেই দেখলো আহানা দাঁত কেলিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে
.
শান্ত টায়ারটা ভালো করে চেয়ে দেখলো একটা পিন আটকে আছে
.
আহানা পিছোতে পিছোতে বললো”আমপাতাটা নিতে দিলে হয়তবা আপনার টায়ার পাঞ্চার হতো না!”
.
তার মানে আপনি!!
.
আহানা এক দৌড় দিলো আর পিছনে তাকালো না
সে কারের সামনে পিনটা ছুঁড়ে মেরে ভালো মানুষের মত দাঁড়িয়ে পড়ছিল যার কারণে কার পিনের উপর দিয়ে যেতেই পিনটা টায়ারে লেগে পাঞ্চার হয়ে যায়
পিনটা দিয়ে তার জামার ছেঁড়া অংশ জোড়া তালি দিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল সে
.
এই মেয়েটা এত বেয়াদব,আমার জীবনে আমি এরকম মেয়ে দেখিনি,আজ নির্ঘাত দেরি হয়ে যাবে
শান্ত আপাতত ১০মিনিট অপেক্ষা করে একটা রিকসা নিয়ে অফিসে গেলো আর তাহসিনকে ফোন করে বললো যেন সে এসে এখান থেকে কারটা নিয়ে যায়

আহানা হাঁপাতে হাঁপাতে ফ্লাইওভার থেকে নিচে নেমে গলির দিকে গেলো,ভালো করে মুখ ধুয়ে পড়াতে আসতে হবে আবার
কিছুদূর যেতেই সামনে পড়লো রতন,এই পাড়ার এক নাম্বারের বখাটে সে
পরনে ফ্লাওয়ার ফ্রিন্টের লুঙ্গি,আর একটা পাতলা শার্ট,দাঁত কেলিয়ে সে আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতেছে
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”সামনে থেকে সরবি না লাত্তি মেরে তোর এই হাড্ডি মুখ ভেঙ্গে গুড়োগুড়ো করে দিব”
.
দে না আহানা!!তোর শরীরের ছোঁয়া পাইলে আমার অনেক ভালা লাগবে,দে না দে,কলিজাটা একটু জুড়াক
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে পাশ দিয়ে চলে গেলো
একটা বেয়াদব!!এরে বিয়ে করার চেয়ে আমি বরং সেদিনই মরবো!
আহানা পুকুর ঘাটে গিয়ে মুখ ধুয়ে দৌড় মারলো বাচ্চাদের পড়াতে
ওদের পড়িয়ে তারপর ভার্সিটিতে যেতে হবে
.
শান্ত মিটিংটা শেষ করে কলার টানতে টানতে চেয়ারে এসে বসতেই শুনতে পেলো নওশাদ আর রিয়াজ,সূর্য আসতেছে তেড়ে
.
স্যার উনাদের কি ভিতরে আসতে বলবো?
.
এটা জিজ্ঞেস করার কি আছে ঊষা??আসতে দাও ওদের
.
দোস্ত,গেস হোয়াট!!!
.
ঊষা কফির ব্যবস্থা করো,আমার জন্য বড় মগে দিও,,আমার মাথা ধরেছে
আর শুন নওশাদ গেস করার মুড নাই তুই বল আমি শুনি
কথাটা বলে শান্ত ল্যাপটপ টিপায় মন দিলো
.
আরেহ শুনস না,আমাদের ইউটিউব ব্লগটা একটা কন্সার্ট পার্টি দেখেছে
.
তো?
.
তো তারা তোর ভয়েস শুনে মুগ্ধ!! আজকে বিকালে যমুনা ফিউচার পার্কে যে কনসার্ট হবে সেখানে তোকে গান গাওয়ার জন্য ইনবাইট করেছে
এই দেখ আমরা তাদের সাথে কন্টাক্ট করে ইনভিটেশান কার্ড ও নিয়ে এসেছি😎
.
জি না,আমার সময় নাই,আর আমার গলা এত আহামরি না যে কনসার্টে গান গাইবো
আমার কাছে এত সময় ও নাই
.
প্লিস প্লিস রাজি হয়ে যা
তুই কনসার্টটা করলে আজকেই 200k এর মত সাবস্ক্রাইবার পেয়ে যাবো আমরা তাহলে বুঝতে পারছিস??200k প্লাস করলে আমাদের আজকেই 2M ডান হয়ে যাবে,ও মাই গড আমি তো ভাবতেই পারছি না তার উপর ১০হাজার টাকার চেক এডভান্স করেছে তারা
টাকাটা সামান্য আমাদের কাছে বাট মজা হবে এটাই অনেক,প্লিস শান্ত রাজি হ
.
না,বের হও এখান থেকে,আমার এমনিতেও অনেক কাজ
.
আন্টিকে বান্দরবনের সেই মেয়েটার পিক দেখাই দিব
.
শান্ত ল্যাপটপ থেকে চোখ উঠিয়ে রিয়াজের দিকে তাকালো
.
৩জন মিলে ওর দিকে দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে
.
তোরা ওর পিক পাইলি কই?
.
মনে আছে সে ওড়ানায় করে পানি এনে তোর গায়ে ঢালতেছিলো?তখন আমাদের ক্যামেরা অন ছিল কারন তুই তখন ব্লগটা করতেছিলি,😎এন্ড আমি ভিডিওটা থেকে সেই মেয়েটার ছবি নিয়ে নিয়েছি,হুহাহাহা
.
হারামি!!তোর মত বন্ধু থাকলে আর মানুষের শত্রু লাগে না
.
আমরা এটাও জানি তোর আজকে ভোরবেলায় মিটিং ছিল
আপাতত আজ আর মিটিং নাই,ঊষা বলছে
.
আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতেছিস!
.
প্লিস শান্ত,মজা হবে একটু,চল না প্লিস,তুই আজকে গান গাইলে বিজন্যাসম্যান শাহরিয়ার শান্ত থেকে সবাই তোকে গায়ক শান্ত হিসেবে চিনবে
.
ফাইন,যা তোরা,আমি নিতুকে নিয়ে চলে আসবো
.
ইয়াহু!!!!!
.
শান্ত মাথার চুল টানতে টানতে কফি খাচ্ছে,কি একটা ঝামেলা!

হ্যালো আহানা!কিরে ভার্সিটিতে আসবি না?
.
আসবো!আমার পায়ে ব্যাথা পেয়েছি পড়ে গিয়ে,ঠিকমত হাঁটতে পারি না,তাও আসবো,তেমন একটা মারাত্মক না
.
ওকে,বাই
.
আহানা ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে
তারপর ভার্সিটিতে আসতেই রুপা ঝাপটে ধরেছে
ঝাপটে ধরার কারণ হলো তার সাথে আজ একজায়গায় যেতে হবে
আহানা বলছে তার বিকাল থেকে টিউশনি,রুপা বললো টিউশনির সময়ের আগেই ঘুরাফিরা শেষ করে বাড়ি ফিরবে
||
কন্সার্ট রেডি
মানুষে হইহই রইরই,তার উপর নওশাদ একটা পোস্ট দিয়ে চ্যানেলের সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে তারা আজ যমুনা ফিউচার পার্কের কনসার্টে আসতেছে আবার শান্ত গান ও গাইবে
দলে দলে সব আসতেছে কনসার্টটায়
শান্ত বাসায় এসে রিপাকে বললো নিতুকে তৈরি করে দিতে,সে নিতুকে নিয়ে ঘুরতে যাবে
তারপর নিজের রুমে এসে একটা ব্ল্যাক টি শার্ট আর খয়েরী রঙের জ্যাকেট বের করে পরে নিলো,সাথে ব্ল্যাক জিন্স
সানগ্লাস হাতে নিয়ে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে নিতুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সে
ঐদিকে রুপা আহানাকে নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এসে সবে থেমেছে
আহানা মুচকি হেসে বললো”বাবার সাথে শেষবার এখানে এসেছিলাম!”
.
এখন আমার সাথে আসলি
.
এখান থেকে শপিং করবি?একটা হালকা গেঞ্জির দাম ৫০০০টাকা এখানে
.
জানি জানি!আসছি তো কনসার্ট দেখতে,চল!আজ নাকি কনসার্টে শাহরিয়ার শান্ত আসবে গান গাইতে
.
কে সে?
.
আরে ঐ যে Shanti Group of industry এর মালিক সে
আর সে একজন ইউটিউবার ও
.
শান্তি?কিন্তু তার নাম তো শান্ত বললি
.
হয়ত বোন বা মায়ের নামটাম হবে,শান্তর গানের গলা জাস্ট ওসাম!আর তার বেস্টফ্রেন্ডের মধ্যে একজন আছে,নাম নওশাদ শেখ!!
কি বলবো!আমি তো এই দুটোর উপর ক্রাশিত,তবে যা মনে হয় মেইন শান্তকে পটানো আমার দ্বারা পসিবল না বাট নওশাদকে পটাতে পারবো
.
তুই সারাদিন এসব নিয়েই পড়ে থাকিস!
.
আচ্ছা চল যাই
.
শান্ত স্টেজে উঠে দাঁড়িয়েছে
তার সামনে ৩০০/৪০০জনের মতন দর্শক
গিজগিজ করতেছে,সবার মুখে শান্ত নাম
শান্তর গিলটি ফিল হচ্ছে না কারণ সে একবার সিরাজগঞ্জ গেছিলো সেখানে ওর চ্যানেলের অনেক সাবস্ক্রাইভার এসেছিল হাতে ফুলের মালা নিয়ে তার সাথে দেখা করতে
সেদিনও এমন মানুষ ছিল
নিতু দূরে চেয়ারে বসে তার ভাইয়ের গানটা ভিডিও রেকোর্ড করতেছে হাতে জুস নিয়ে
পরনে সাদা ফ্রক আর জিন্সের কোটি,শান্তর বোন বলে কথা
একটু স্টাইলিশ তো হতেই হবে
শান্ত জিভ দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে গানটা শুরু করলো

চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হও
পাবে না কেউ তোমাকে, তুমি কারো নও
চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হও
পাবে না কেউ তোমাকে, তুমি কারো নও
তুমি তো আমার-ই, জানো না হো-ও-ওও
এ হৃদয় তোমার-ই
ও-হো-ওও
তোমাকে ছাড়া আমি, বুঝি না কোনো কিছু যে আর
পৃথিবী জেনে যাক, তুমি শুধু আ..মার
তোমাকে ছাড়া আমি, বুঝি না কোনো কিছু যে আর
পৃথিবী জেনে যাক, তুমি শুধু আমার
(C’mon, yo yo)
হৃদয়ের নীল আকাশে স্বপ্ন আমার ওড়ে
ভেঙ্গে যায় আমার-ই মন অভিমানী ঝড়ে
হৃদয়ের নীল আকাশে স্বপ্ন আমার ওড়ে
ভেঙ্গে যায় আমার-ই মন অভিমানী ঝড়ে
তুমি তো আমার-ই, জানো না হো-ও-ওও
এ হৃদয় তোমার-ই, ও-হো-ওও…
(এটা প্রেমের পাঁচফোড়ন সিজন ২ এর থিম সং
সূচনা পর্বে যেটা দিয়েছিলাম সেটা নয়)
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে