প্রেমময় আসক্তি ২ পর্ব-০১

0
2085

#প্রেমময়_আসক্তি_২❣️
#পর্ব_১
#নন্দিনী_চৌধুরী

১.

২মাস পর,,
দেখতে দেখতে আদ্রিয়ানের চলে যাওয়ার ৩ মাস পার হয়ে গেছে। এখন সবাই অনেকটা স্বাভাবিক। মুন রাফসান, কাশু, রুবা মিলে অনেক খেয়াল রাখছে রোদেলার। রোদেলার এখন ৫মাস চলছে। পেটটা কিছুটা ফুলছে। রোদেলার শারীরিক অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগের রোদেলা আর এখন রোদেলা একদম আলাদা। রোদেলার চোখের নিচে কালো দাগ বসে গেছে। শরীর এখন মাতৃত্ব কালের গলুমলু দেখানোর বদলে রোগারোগা লাগে। মুন আর রুবা ২৪ ঘন্টা ওর পাশে আঠার মতো লেগে থাকে। সব সময় ওকে হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করে। খাওয়া দাওয়ায় নজর রাখে। কিন্তু রাত যখন আসে রোদেলার মনের আকাশে কালো মেঘ একদম ধেয়ে আসে। রাত যত গভির হয় রোদেলার চোখের পানি ততো বাড়ে। আরাভ জুঁই ও তূর্যের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। এখন সে রুবাকে বিয়ে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাউসার চলে গেছে দেশের বাহিরে। কাশুর সাথে অনলাইনে যোগাযোগ হচ্ছে। সবাই ভালো আছে শুধু ভালো নেই রোদেলা।

রোদেলা নিজের রুমে বসে পেটে হাত বুলাচ্ছে। এখন এই বাচ্চাটাই তার দুনিয়া। আদ্রিয়ানের শেষ চিহ্ন এই বাচ্চা। রোদেলা পেটে হাত বুলাচ্ছে আর কথা বলছে,

রোদেলাঃ আমার সোনা বাচ্চাটা। আর কয়েমমাস পর তুমি মাম্মামের কাছে চলে আসবে। তুমি আর মাম্মা মিলে অনেক ভালো থাকবো। তুমি মাম্মাকে ভুল বুঝবেনাতো সোনা। তোমাকে তোমার বাবার থেকে আলাদা করে দিয়েছি বলে। মাম্মাকে ভুল বুঝিসনা কেমন।

রোদেলা এভাবে পেটের উপর হাত বুলিয়ে নানা কথা বলছে।

খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে সবাই। মুন আগে রোদেলাকে খাইয়ে আসছে। রাফসান খাবার মাঝে রুবাকে বলে,

রাফসানঃ রুবা, আরাভতো তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। তুমি তোমার বাসায় জানাবা না?
রুবাঃ জ্বি জানাবো।
রাফসানঃ হ্যাঁ জানিয়ে দেও।
মুনঃ শুনো রোদেলাকে নিয়ে কাল হাসপাতালে যাবো চেকাপ করাতে।
রাফসানঃ আচ্ছা ঠিক আছে। কখন যাবা?
মুনঃ সকালে।
রাফসানঃ আচ্ছা।

খাবার শেষে যে যার যার রুমে চলে যায়। রাতে রোদেলা কানে হ্যাডফোন লাগিয়ে রেডিও শুনছে। ইদানিং একটা এফেম বেশি শুনে সেটা হলো ৯৪.৫ এফেম। আজকে রাতে এফেমের একটা RJ সো আছে। অনেকের মুখে শুনছে এই RJ নতুন আসছে। তাই আজকে রোদেলা তার সো শুনবে। রাত ১২টায় শুরু হয় তার সো।

_____________________________________

Hello Everyone’ It’s Your RJ. Rj Farhan Khan Niladro. চলে আসলাম আপনাদের সবার পছন্দের সো Love TO Heart Connection. রোজ রাত ১২ টা হতে ২টা পর্যন্ত আপনাদের মাঝে এই সো নিয়ে আমি আসি। তো এখন চলুন শুনে আসি একটা গান তারপর চলে আসবো আমাদের প্রথম কলারকে নিয়ে। পাশে থাকুন আর জুরাও তোমার হৃদয় ৯৪.৫ এফেমের সাথে।

রোদেলা লোকটার গলায় আওয়াজ শুনে চমকালো। আসলেই ছেলেটার ভয়েসটায় একটা যাদু আছে। গান শেষ করে নীলাদ্র চলে আসলো আবার।

“সো আমি বলেছিলাম গান শেষ করে আমরা প্রথম কলারকে নিয়ে আসবো। তো আমাদের সাথে কলের ওপারে আছে আমাদের প্রথম কলার।”

নীলাদ্র: সো কে আছেন আমাদের সাথে কলে?
কলার: জ্বী। আসসালামু আলাইকুম। আমি ধানমন্ডি থেকে ইফা বলছি।
নীলাদ্র: ওকে মিস ইফা। বলুন।
ইফা: জ্বী ভাইয়া। আমি আপনার এই সো টা সব সময় শুনি। আজকে কল করার ভাগ্য হয়েছে। আমি আপনার থেকে একটা কথা জানতে চাচ্ছি।
নীলাদ্র: জ্বী করেন।
ইফা: ভাইয়া আমি আমার লাভারকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু সে আমাকে বিশ্বাস করেনা ভালো করে। সব সময় সন্দেহ করে আমাকে। তাই আমি এখন তার সাথে ব্রেকাপ করেছি। কিন্তু আমি নিজেই এতে অনেক কষ্ট পাচ্ছি। আমি কি করবো এখন?
নীলাদ্র: well, ভালোবাসায় ভরসা, বিশ্বাস, অবিশ্বাস, রাগ, অভিমান, কেয়ার সব থাকতে হবে। কিন্তু সেটা প্রয়োজনের থেকে বেশি নয়। ভালোবাসায় বিশ্বাস থাকতে হবে। এবং সেই বিশ্বাস ধরে রাখার চেষ্টাও করতে হবে। অবশ্যই অবিশ্বাস করে কারো কথায় নিজেদের সম্পর্ক নষ্ট করা যাবেনা। তুমি তোমার লাভারকে এটা বুঝাবা যে তুমি তার বিশ্বাস তুমি নষ্ট করছোনা। আর তাও যদি সে বেশি করে সে ক্ষেত্রে তুমি ব্রেক নিতে পারো। তবে বিশ্বাস রাখতে হবে। কারন, “Trust Is The piller Of Every Relationship.
ইফাঃ জ্বী ভাইয়া বুঝতে পারলাম। আর একটা প্রশ্ন সেটা আমি তোমাকে করতে চাই।
নীলাদ্র: হ্যাঁ, বলো।
ইফা: ভাইয়া তুমি কি কাউকে ভালোবাসো? মানে তোমার কোনো লাভার আছে?
নীলাদ্রঃ এটা সিক্রেট থাকুক কেমন।
ইফাঃ আচ্ছা।

কল কাঁটার পর নীলাদ্র কিছু কথা বলে আবার গান দেয়। তারপর আবার ফিরে আসে বাকি দুইটা কল নিয়ে সো শেষ করে।
রোদেলা সো শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যায়।

নীলাদ্র সো শেষ করে বেরিয়ে আসে আর চলে আসে ক্লাবে। ক্লাবে ওর বন্ধুরা অপেক্ষা করছে। নীলাদ্র যেতেই ওরা পার্টিতে মেতে উঠে। ড্রিংকস করছে নীলাদ্র তখন ওর পাশে এসে দাঁড়ায় একটা মেয়ে শর্ট একটা ড্রেস পরা বুক, পিঠ, রানের উপরে জামাটা। নীলাদ্র একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে আসতে করে বলে,

“চিপ গার্ল।”

মেয়েটা অনেকভাবে নীলাদ্রকে ইম্প্রেস করতে চাচ্ছে কিন্তু নীলাদ্র সেদিকে পাত্তা দিচ্ছেনা। নীলাদ্র ড্রিংক করা শেষ করে বাইকের চাবি নিয়ে বেরিয়ে আসে।

খোলা রাস্তায় বাইক চালাতে ভালোই লাগছে তার। খোলা আকাশ আর বাতাস সব মিলিয়ে মূড ফ্রেশ একদম। নীলাদ্র বাইক চালিয়ে বাসায় আসে। মাস্টার কি দিয়ে দরজা খুলে আসতে করে নিজের রুমে চলে আসে সে। ফ্রেস হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায় সে। বডি স্প্রে লাগিয়ে গেঞ্জি পরে বিছানায় শুয়ে পরে সে।

__________________________

সকালে মিসেস খান আর নন্দিনী মিলে নাস্তা সাজাচ্ছে টেবিলে। মিস্টার খান এসে বসলেন টেবিলে সবার আগেই তিনি জিজ্ঞেশ করলেন,

মিস্টার খানঃ Where is Niladro?
মিসেস খানঃ ঘুমাচ্ছে।
মিস্টার খানঃ এখনো?
নন্দিনীঃ ‘হ্যাঁ, পাপা কাল নীলাদ্র সো শেষ করে আসতে আসতে লেট হইছে।
মিস্টার খানঃ ওকে। নদী মা যা ওকে ডেকে নিয়ে আয়।
নন্দিনীঃ ওকে পাপা।

ফারহান খান নীলাদ্র। ফায়াজ খানের এক মাত্র সন্তান। খুব আদরের ছেলে তার। নীলাদ্র ছোট থেকে RJ হবার শখ। তাই ওর বাবা ওর এই শখে বাধা দেয়নি। নীলাদ্র সো এর পাশাপাশি এখন ওর বাবার বিজনেস দেখা শুনা করে। নন্দিনী নীলাদ্রের ফিয়ন্সি। নন্দিনীর মা বাবা দুই বছর আগে মারা গেছে। নন্দিনীর বাবা আর নীলাদ্রের বাবা অনেক ক্লোজ বন্ধু ছিলেন। তারা অনেক আগে থেকেই নীলাদ্র আর নন্দিনীর বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন।

নন্দিনী তাদের সাথেই থাকে। খুব তাড়াতাড়িই ওদের বিয়ে দিবে ভাবছেন মিস্টার খান।

নন্দিনী নীলাদ্রের রুমে এসে দেখে নীলাদ্র মাথার উপর একটা বালিশ দিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে আছে। নন্দিনীর মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। সে ওয়াশরুম থেকে এক মগ পানি এনে ঢেলে দেয় নীলাদ্রের গায়ে। হঠাৎ গায়ে পানি পরায় লাফ দিয়ে উঠে নীলাদ্র। আশে পাশে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে নন্দিনী কোমরে হাত দিয়ে হাঁসছে। নীলাদ্র তা দেখে রেগে বলে,

নীলাদ্রঃ তুইইইই! ওই আমার গায়ে পানি দিলি কেন।
নন্দিনীঃ হাতির মতো পরে পরে ঘুমাচ্ছিস। কয়টা বাজে খেয়াল আছে। অফিস যেতে হবেনা। পাপা ডাকছে নিচে তাড়াতাড়ি আসো। নয়তো আজ তোমার খবর আছে মিস্টার আরজে।

বাবা ডাকছে শুনে নীলাদ্র তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। কে জানে কাল রাত করে আসার জন্য আবার কিছু বলে কিনা।

______________________

মুন রোদেলাকে নিয়ে চলে আসে হাসপাতালে। ডাক্তার দেখিয়ে চেকাপ করিয়ে নেয় তারা। ডাক্তার জানায় রোদেলা অনেক উইক হয়ে যাচ্ছে। এতে বাচ্চা আর তার ক্ষতি হতে পারে। আর বাচ্চা সম্ভবত টুইন আল্ট্রাসোনা করে তাই দেখা গেছে। ডাক্তার রোদেলা খাবারের প্রতি যত্নশীল হতে বলেছে। আর পাশাপাশি সব সময় টেনশন ফ্রি থাকতে বলেছে।

রোদেলাকে নিয়ে মুন বাসায় আসলো। রোদেলাকে রুমে রেখে ওর জন্য কিছু খাবার আনতে গেলো মুন। রোদেলা উঠে আলমারি থেকে আদ্রিয়ানের একটা ছবি বের করলো। এটা নতুন কিছুনা সবসময় আদ্রিয়ানের ছবি রোদেলা দেখে আদ্রিয়ান থাকা অবস্থায় ও দেখতো। রোদেলা শুনেছে বাচ্চা পেটে মা যার ছবি বেশি দেখবে বাচ্চা নাকি তার মতোই দেখতে হবে। রোদেলাও চায় তার বাচ্চারা আদ্রিয়ানের মতো হোক। আজ আদ্রিয়ান থাকলে কত খুশি হতো। বাবা হবার আনন্দে হয়তো পাগল হয়ে যেতো। রোদেলা এসব ভাবতেই ওর চোখ জোড়া আবার ভিজে আসে। রোদেলা একটা কথাই এখন ভাবে।

“শাস্তি আমি তাকে যদি না মেরে অন্যভাবে দিতাম। আজ তাহলে সে অন্তত সেই দুনিয়ায় থাকতো।”

নীলাদ্র ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। এসে তার বাবার পাশে চেয়ারে বসলো। বাবাকে গুড মর্নিং জানালো। মিস্টার খান ছেলের প্লেটে পাউরুটি আর ডিম দিলো। নীলাদ্র সেটা খাওয়া শুরু করলো। খেতে খেতে নীলাদ্র ওর বাবাকে বললো,

নীলাদ্রঃ ড্যাড!
মিস্টার খানঃ হুম বলো।
নীলাদ্রঃ ড্যাড তুমি কি রেগে আছো?
মিস্টার খানঃ নাতো।
নীলাদ্রঃ সিওর?
মিস্টার খানঃ হ্যাঁ।

নীলাদ্র খেয়ে ওর বাবার সাথে বেরিয়ে পরে অফিসের জন্য।

রাতে,,,,

রাফসান মুন রুমে বসে কথা বলছে।
রাফসানঃ তুমি যা বলছো ভেবে বলছো মুন?
মুনঃ হ্যাঁ আমি ভেবেই বলছি। আমার মনে হয় বাসায় আমাদের একটা মেড আনা দরকার। দেখো আমি রোদেলা সম্পুর্ন সময় দিতে পারিনা। এই কাজ সেই কাজ লেগেই আছে। কাশু ওর বাসায় গেছে। রুবা ও পড়া নিয়ে বিজি থাকে। ডাক্তার বলেছে রোদেলাকে একদম একা না রাখতে আমার মনে হয় আমাদের একটা মেয়ে আনা উচিত যে সবটা সময় রোদেলার সাথে থাকবে। আর তারপর আমরা তো আছি।
রাফসানঃ হুম বুঝলাম। আচ্ছা আমি দেখছি।
মুনঃ আমাকে ভুল ভেবোনা রাফসান। আমি রোদেলার ভালোর জন্য বলছি। ও মাঝে মাঝে যে ভাবে রিয়েক্ট করে সেটা ওর জন্য ঠিক না। আমি চাইনা ওর বা আদ্রিয়ানে ভাইয়ের শেষ চিহ্নটার কোনো ক্ষতি হক।
রাফসানঃ না ভুল বুঝবো কেন? আমি জানি তুমি কতটা ভালোবাসো রোদেলাকে।
মুন রাফসানকে জরিয়ে ধরলো। রাফসান ও মুনকে জরিয়ে ধরলো। আজ একটু ভালোবাসা পেতে ইচ্ছা করছে মুনের। রাফসান সায় দিচ্ছে তাতে। আস্তে আস্তে এক হচ্ছে তাদের ছোঁয়া।

______________________

রোদেলা আজকেও নীলাদ্রের সো শুনতে বসেছে। সো টা ভালোই লাগে তার। ঠিক ১২টায় নীলাদ্র চলে আসে সো তে। আজকের সো তে একটা কুইজ রেখেছে সে।

কুইজটা হলো,,,

ভালোবাসলে একজন মানুষকে ঠিক কিভাবে তার ভালোবাসার মানুষকে আগলে রাখতে হয়?

১.শাষন ও ভালোবাসা দিয়ে।
৩.বিশ্বাস ও ভালোবাসা দিয়ে।
৩.ভালোবাসাকে ভরসা করে।
৪.শুধু বিশ্বাস করে।

রোদেলা ভাবছে উত্তর দেবে তাই সে কুইজের উত্তর দিলো।

#চলবে

কথা ছিলো এক্সামের পর দিবো। কিন্তু সবার আবদারে দিলাম😽।

সিজন-০১
প্রেমময় আসক্তি সিজন-০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে