প্রেমময় প্রহরে তুমি পর্ব-১৩

0
2305

#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৩

এক কথায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে।জিরিশা বাকি মেয়েদের মতো অতো সাজগোছ করেনি।পার্লার থেকে সেজেছে ঠিকই কিন্তু বেশি না হালকা।জিরিশার চোখ পরে দূরে দাড়িয়ে থাকা মাহাজের দিকে।যে তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।জিরিশা লজ্জা পায়।আড়চোখে মাহাজকে পর্যবেক্ষণ করে নেয়।মাহাজও লাল রঙের পাঞ্জাবি পরেছে সাথে সাদা জিন্স।সিল্কি চুলগুলো বাতাসে চোখে মুখে এসে পরছে।

ফাহা মাহাজকে জিরিশার দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,,,
“কিরে ভাইয়া তো তোকে দেখে পুরাই ফিদা হয়ে গিয়েছে।কেমন হা করে তাকিয়ে আছে”

জিরিশা ফাহার হাত চেপে ধরে বলে,,
“চুপ থাক চল এখান থেকে”

ফাহার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসে।সে মাহাজের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।মাহাজ ভ্রু কুচকে তাকায় বোনের দিকে।বোন কি করতে চাইছে তাই বোঝার চেষ্টা করছে।জিরিশা আর ফাহা ভেতরে ঢোকার জন্য পা বাড়ায়।মাহাজের সোজাসুজি আসতেই ফাহা জিরিশাকে ধাক্কা মারে।জিরিশা মাহাজের বুকে হুমড়ি খেয়ে পরে।

জিরিশা দ্রুত মাথা উঠিয়ে আশেপাশে দেখে দৌড়ে চলে যায়।মাহাজ বাঁকা হাসে জিরিশা আর ফাহার কান্ডে।বরযাত্রী চলে আসে।মেয়েরা সবাই গেট ধরতে যায়।জিরিশাও যায়।তিশাসহ জিরিশার সব কাজিনরা অনেক তর্ক করে গেট ধরার টাকা নিয়ে।শেষমেষ হুমাইরার বর টাকা দিয়ে ভেতরে ঢুকে।জিরিশা চলে আসে ওখান।মাহাজ তাকে টেনে বাড়ির পেছনের বাগানে নিয়ে আসে।

জিরিশা আমতা আমতা করে বলে,,
“আপনি আমাকে এখানে আনলেন কেনো?”

মাহাজ হেসে বলে,,
“তোমাকে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে চলো কিছু ছবি তুলে দেই”

জিরিশা অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়ায়।মাহাজ ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নেয় জিরিশার।ছবি তোলা শেষ হতেই জিরিশা হাফ ছেড়ে বাঁচে।ওখানে ফোনে কথা বলতে বলতে রিয়ান আসে।মাহাজ রিয়ানকে ডেকে বলে,,
“হেই রিয়ান আমাদের একটু কাপল পিক তুলে দাও তো”

রিয়ান জোরপূর্বক হেসে মাহাজের কাছ থেকে ক্যামেরা নিয়ে পোস দিতে বলে।মাহাজ জিরিশার কাছে গিয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয়।রিয়ান তা অন্যদিকে তাকায়।বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে।সে মাহাজ আর জিরিশার কিছু ছবি তুলে দিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।

মাহাজকে বলে চলে যায় জিরিশা।ভীষণ লজ্জা লাগে মাহাজ যখন তার আশেপাশে থাকে।মাহাজ মুচকি হাসে জিরিশার যাওয়ার পানে তাকিয়ে।

বিয়ে বাড়ি অনেক লোক।জিরিশাকে দেখে চোখ আটকে যায় একটা ছেলের।সে জিরিশার কাছে আসে কথা বলার জন্য।জিরিশা পাত্তা না দিয়ে চলে যায়।ছেলেটা এবার জিরিশার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,,
“হাই আমি সাইফ।বরের চাচাতো ভাই।”

জিরিশা জোরপূর্বক হেসে বলে,,,
“হ্যালো আমি জিরিশা,হুমাইরার কাজিন”

জিরিশা চলে যায় ওখান থেকে কাজের বাহানা দিয়ে।সাইফ হাসে।সে ভাবে হয়তো জিরিশা লাজুক।তাই চলে গিয়েছে।জিরিশা দূরে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচে।বিরক্ত লাগছিলো ছেলেটাকে তার।মাহাজের দিকে চোখ পরতেই দেখে সে একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে।জিরিশার রাগ হয়।

সে চলে যায় ওখান থেকে।মাহাজের পাশে অন্যকোনো মেয়েকে সয্য করতে পারছে না জিরিশা।সে বাড়ির পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একা একা।মাহাজ মেয়েটাকে ইগনোর করে জিরিশাকে খুঁজতে থাকে।জিরিশাকে না পেয়ে অস্থির হয়ে যায় মাহাজ।ফাহা মুচকি হাসে ভাইয়ের কান্ড দেখে।

সে এখন পুরো সিয়র তার ভাই জিরিশা নামক রমনীতে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।মাহাজ পেছনে আসতেই দেখে জিরিশা উল্টোঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।মাহাজ জিরিশার কাছে যায়।জিরিশা একমনে কিছু একটা ভেবে চলেছে।মাহাজ জিরিশাকে টেনে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করায়।জিরিশা ভড়কে যায়।মাহাজকে সামনে দেখে হকচকিয়ে যায় প্রথমে পরে অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

মাহাজ ঠোঁট চেপে হাসে।জিরিশা এমনি তার কাঁধের একটু নিচে।এখন হিল পড়ায় একটু সুবিধা হয়েছে মাহাজের।মাহাজ জিরিশার মুখে হাত রাখে।জিরিশা চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।মাহাজ বলে,,
“জিরিশা পাখি অভিমান করেছে আমার উপর”

জিরিশা মাহাজকে হালকা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।তারপর অভিমানী কন্ঠে বলে,,
“এখানে কেনো এসেছেন আপনি!যান গিয়ে ওই মেয়ের সাথে কথা বলুন”

মাহাজ জিরিশার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে,,
“জেলাস হচ্ছে জিরিশা পাখি”

জিরিশা হকচকিয়ে যায়,ঘাবড়ে গিয়ে উত্তর দেয়,,,
“মোটেও না।আমি জেলাস কেনো হবো”

মাহাজ হেসে বলে,,,
“জানি আমি কে জেলাস আর জেলাস না”

জিরিশা চলে যেতে চায়।মাহাজ হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়।তারপর বলে,,
“ওই মেয়েটা আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো আমি কোন পক্ষের। বিশ্বাস করো আমি বলেছি আমি বিবাহিত আমার বউও আছে ও দেখলে রাগ করবে তারপর ওখান থেকে চলে এসেছি”

মাহাজের কথার ধরন দেখে ফিক করে হেসে দিলো জিরিশা।মাহাজ জিরিশাকে হাসতে দেখে নিজেও হাসে।মাহাজ বুঝেছে জিরিশার অভিমান কমে গিয়েছে।
“চলো এখন বিয়ে শুরু হয়ে যাবে তো।ফাহাও একা আছে”

জিরিশা মাথা নাড়ায়।মাহজ আর জিরিশা চলে আসে।সবাই ব্যস্ত।আশেপাশে লেকজনের ভীড়।মাহাজ জিরিশা হাত ধরে রাখে।জিরিশা ফিসফিস করে মাহাজকে বলে,,
“হাতটা ছাড়ুন হুমাইরার কাছে যাই একটু”

মাহাজ হাত ছেড়ে দেয়।জিরিশা মাহাজের দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে চলে যায়।মাহাজ ও হাসে।সে আসলেই এখন কেমন হয়ে যাচ্ছে।মেয়েটা তাকে এক মায়ায় ফেলে দিয়েছে।জিরিশা হুমাইরার কাছে আসে।ওকে ভীষণ সুন্দর লাগছে।হুমাইরার কাছেই ফাহা বসে ছিলো।হুমাইরা জিরিশাকে দেখে ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

জিরিশাও কাঁদে। তারপর টিস্যু দিয়ে হুমাইরার চোখ মুছে দিয়ে বলে,,,
“ইসস আর কাদিস না এতো টাকার মেকাব করলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তো।দুলাভাই তো পেত্নী ভেবে উল্টোঘুরে দৌড় না দেয়।”

জিরিশার কথা শেষ হতেই ঘরে থাকা সবাই হেসে দেয়।হুমাইরা মিথ্যা রাগ দেখায়।এরপর বিয়ে শুরু হয়।কাজী আসে বিয়ে পড়াতে।জিরিশা খুব মনোযোগ দিয়ে সবটা দেখে।সে ভাবে,তারও মাহাজের সাথে বিয়ে হবে।কবুল বলে মাহাজের হয়ে যাবে।এইটা ভেবেই লাজুক হাসে জিরিশা।ফাহার ও বিষয়টা চোখ এড়ায় না সে বুঝতে পারে তার বান্ধবী তার ভাইয়ের কথা মবে করেই লাজুক হাসছে।

বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ।সবাই কান্নাকাটি করছে।জিরিশা দাঁড়িয়ে আছে একপাশে ফাহার সাথে।মাহাজ কোথাও একটা গিয়েছে।সাইফ নামের ছেলেটা আসে তার কাছে।ফাহাও নেই আশেপাশে।মাত্রই ফোন আসায় কথা বলতে গিয়েছে।

সাইফ দাঁত কেলিয়ে বলে,,
“মিস জিরিশা আপনি একা দাঁড়িয়ে যে।”

জিরিশা বিরক্ত হয়।সে বলে,,
“জি এমনি আমি আসি”

জিরিশা চলে যায়।সাইফ ভাবে,মেয়েটা তাকে দেখলেই শুধু পালাই পালাই করে কেনো!জিরিশা মাহাজকে ফোন করে।মাহাজ ফোন রিসিভ করতেই জিরিশা বলে,,
“আসসালামু আলাইকুম কোথায় আপনি?”

মাহাজ হেসে বলে,,
!ওয়ালাইকুম আসসালাম জিরিশা পাখি এই তো আসছি”

ফোন কাটার কিছুক্ষণ পর মাহাজ এসে হাজির।হাতে একটা বেলি ফুলের গাজরা।মাহাজ জিরিশাকে গাজরাটা পরিয়ে দেয়।জিরিশা মুচকি হাসে।হুমাইরার বিদায়ের পালা এখন।মেয়েটা কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে পরেছে।হুমাইরার বর ওকে সামলাচ্ছে।

বিদায় পর্ব শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে।সবার মন খারাপ।জিরিশা আর ফাহা হুমাইরার রুমে বসে আছে।মাহাজ আসে তখন রুমে।মাহাজ ফাহা আর জিরিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
“চল ঘুরে আসি তিনজন”

ফাহা ক্লান্ত কন্ঠে বলে,,
“তোমরা যাও ভাইয়া আমি ভীষণ ক্লান্ত ঘুমাবো এখন”

জিরিশা ফাহাকে বলে,,
“আরে চল রাতে গ্রাম ঘুরার মজাই আলাদা”

ফাহা বিরক্ত হয়।সে ওদের একা পাঠাতে চাইছে আর ওরা ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করে।সে বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,
“যাও তোমরা বললাম তো যাবো না আমি।”

জিরিশা আর মাহাজ ওকে আর কিছু বলে না।এখন শত চেষ্টা করলেও ওকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।ওরা বেরিয়ে পরে জিরিশার খালামনিকে বলে।জিরিশা মাহাজ হাঁটছে কিছুটা দূরত্ব রেখে।গ্রামে বেশ কিছুটা দূরেই রোড লাইট।তাই মাঝে মাঝে অন্ধকার লাগে চারপাশ।বেশি অন্ধকার না। চাঁদের আলোয় চারপাশ বেশ সুন্দর লাগছে।

#চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে