প্রেমময় প্রহরে তুমি পর্ব-১২

0
2361

#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১২

অন্যদিকে রিয়ান সিগারেট টানছে।প্রথম বার খাওয়ার ফলে কাশতে হচ্ছে।তাও সে খাচ্ছে।চোখ লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে।ভালোবাসা বড্ড অদ্ভুত!একদিকে কেউ খুশি হচ্ছো তো আরেকদিকে কেউ কষ্টে ভেঙে পরছে।রিয়ান তিনটা সিগারেট খেলো এই নিয়ে।ফাহা ছাদ থেকে রিয়ানকে দেখে তার খারাপ লাগে।কারণ সে ও জানতো রিয়ানের পছন্দ করার বিষয়টা।আসলে জিরিশাও জানে।কিন্তু কখনো পাত্তা দেয়নি।সে নিচে বাগানে রিয়ানের কাছে আসে।পেছন থেকে কাধে হাত রাখে।

রিয়ান চমকে ওঠে।সে পেছনে ফিরে তাকায় ফাহাকে দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে।অন্যকেউ দেখলে কেলেংকারী হয়ে যেতো।সে হাতের সিগারেটটা ফেলে পা দিয়ে পিশে ফেলে।ফাহা রিয়ানকে বলে,,
“ভাইয়া আপনি তো সিগারেট খান না তাহলে আজকে খাচ্ছেন যে”

রিয়ান তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,,
“তুমি কি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছো না আপু”

ফাহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,
শুনুন ভাইয়া কিছু কথা বলি। আমি ছোট আপনার থেকে তাও এই কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন।দেখুন আপনার জন্য হয়তো আল্লাহ জিরিশাকে বানায়নি তাই আপনি ওকে পাননি।জিরিশার জন্য হয়তো আমার ভাইয়াই পারফেক্ট। আর আপনার জন্যও আল্লাহ অন্যকাউকে রেখেছে যে আপনাকে ভীষণ ভালোবাসবে।এই যে আপনি এখন কষ্ট পাচ্ছেন আফসোস করছেন একটা সময় এমন করবেন আল্লাহ তায়ালাকে ধন্যবাদ দিবেন।আর ভালোবাসার মানুষকে যে পেতে হবে তার কোনো কথা নেই।আল্লাহ যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করে।ভালোবাসার মানুষকে সুখে থাকতে দেখাতেও একটা শান্তি আছে।তাই অন্যের জন্য নিজের জীবন নষ্ট করবেন না এই ছাইপাঁশ গিলে।অনেক কথা বললাম যদি খারাপ লাগে তো ছোট বোন হিসাবে ক্ষমা করে দেবেন।

ফাহা কথাগুলো বলে আর দাঁড়ায় না।সোজা চলে যায়।রিয়ান ভাবতে থাকে ফাহার কথাগুলো কতো সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো ছোট মেয়েটা।ও তো ঠিকই বলেছে।আল্লাহ যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন।রিয়ান বিয়ের কাজে লেগে পরে।সে আর ভাবতে চায় না।ভুলতে একটু কষ্ট হবে কিন্তু সে পারবে।

১৪.
সকালে জিরিশা উঠে দেখে সবাই কাজে ব্যস্ত।সে ফ্রেশ হয়ে নেয়।রুম থেকে বেরিয়ে মাহাজকে এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে।সে মাহাজ যেই রুমে থাকে সেই রুমের সামনে গিয়ে উুকিঝুঁকি মারতে থাকে।হঠাৎ ফাহা তার সামনে আসে।সে চমকে কিছুটা দূরে সরে যায়।প্রচন্ড ভয় পেয়েছে জিরিশা।ফাহা হাসতে থাকে দাঁত বের করে।

জিরিশা রেগে যায় ফাহার এমন কার্যকলাপে।সে ফাহার সাথে কথা না বলে ওখান থেকে হনহন করে চলে যায়।ফাহা হাসে জিরিশার যাওয়ার পানে তাকিয়ে।ফাহা বুঝতে পেরেছে জিরিশা রাগ করেছে।মাহাজ রুম থেকে বের হতে ফাহাকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় ওর দিকে।অতঃপর বলে,,,
“তুই এই রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো”

ফাহা দাঁত কেলিয়ে বলে,,,
“তোমার বউ উুঁকিঝুঁকি মারছিলো তাই আমি একটু ভয় দেখাতেই রেগেমেগে আগুন হয়ে চলে গেলো”

মাহাজ ফাহার মাথায় মেরে বলে,,,
“খালি আকাজ না।যা এখান থেকে”

ফাহা মাহাজকে বকতে বকতে চলে যায়।মাহাজ মুচকি হাসে।সকালের খাবার খেয়ে সবাই শাড়ি পরে নেয়।জিরিশা আজকে খুব সুন্দর করে শাড়ি পরেছে।হুমাইরাকে সকালে হলুদ ছোঁয়াবে মেয়েরা।ফাহাও শাড়ি পরেছে।সবাই হুমাইরাকে নিয়ে পুকুর পারে যায়।বড়রা হলুদ মাখিয় চলে যায়।এরপর ছোটরা তো ফটো সুট করতে থাকে বিভিন্ন ভাবে।দু’জন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জিরিশার দিকে আর জিরিশা সে তো কিছুই জানে না নিজের কাজে ব্যস্ত সে।

বোনেদের সাথে হাসাহাসি করছে।হলুদ মাখামাখি করছে।জিরিশা ফাহাকে ডাকতে বাগানের দিকে যেতেই কেউ তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।জিরিশা ভয় পেয়ে যায়।চেঁচাতে যাবে তার আগে কেউ তার মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে,,,
“হুস।কি করতে চাইছিলে তুমি।তুমি তো আমাকে ফাঁসিয়ে দিতে এখন।সবাই ভাবতো আমি তোমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করছি”

জিরিশা মাহাজকে দেখে স্বস্থি পায়।মাহাজ জিরিশার মুখের থেকে হাত সরালে ও বলে,,,
“হুট করে কেউ এমন করে বলিন তো আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।বড্ড খারাপ আপনি”

মাহাজ আলতো হেসে বলে,,,”জানি আমি”

জিরিশা অবাক হয়ে যায়।মাহাজ হাসছে।তাও আবার তার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।আচ্ছা সে কি সপ্ন দেখছে নাকি সত্যি।নাকি বাস্তব।নিজেই নিজেকে চিমটি কাটে তারপর উফ বলে চেচিয়ে উঠে। মাহাজ জিরিশার কান্ডে নাক মুখ কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“কি করছো কি তুমি”

জিরিশা বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলে,,,
“মানে আপনি তো কখনো হেসে কথা বলেন না কারো সাথে তাই”

মাহাজ এবারও হাসে।জিরিশা আজকে শুধু অবাকই হয়ে যাচ্ছে।সে আনমনে বলে ওঠে,,,
“আপনাকে হাসলে সত্যি সুন্দর লাগে তাহলে আপনি কেনো হাসেন না”

মাহাজ এবারও হাসে।সে জিরিশার কানে ফিসফিস করে বলে,,,
“আমার হাসার কারণটাই যে তুমি জিরিশা পাখি”

জিরিশা কেঁপে উঠে।সে বুঝতে পারে সে কি বলেছে।সে দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।মাহাজ দাঁড়িয়ে হাসে।কেনো যেনো এখানে আসার পর তার হাসতে ইচ্ছা করছে বেশি বেশি।যাকে কিনা আগে হাসতেই দেখা যেতো না সে এখন হেসেই চলেছে।প্রেমে পরলে যা হয় আরকি।মাহাজ মাথা চুলকে হেসে চলে যায়।

রাতে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়।জিরিশা আর ফাহা ছবি তুলছে।মাহাজ এক কোনায় বসে ফোন টিপছে।চারিদিকে মেয়ের ছড়াছড়ি যা দেখে মাহাজের বিরক্ত লাগছে।জিরিশাও ছবি তুলে বেরাচ্ছে।হুট করে আসফি এসে তার পাশে বসে।আসফির সাথে কিছুসময় গল্প করে।সবাই হুমাইরাকে বসিয়ে হালকা হলুদ দিচ্ছে।এখন সবাই নাচ গান করছে।জিরিশা মাহাজের পাশে এসে বসে বলে,,,
“আপনার কি কিছু লাগবে”

মাহাজ বাঁকা হেসে বলে,,,”লাগবে তো”

“বলুন কি লাগবে আমি এনে দিচ্ছি”

মাহাজ ফিসফিস করে বলে,,
“তোমাকে লাগবে আমার”

মাহাজের এমন কথায় জিরিশা হকচকিয়ে যায়।ভীষণ লজ্জা পায় সে।মাহাজের দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে আসে।মাহাজ জিরিশার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে।হুট করে তার কি হয়ে গেলো!এখন মনে হচ্ছে বিয়েটা এখনই করে নিলে হতো।মাহাজ মাথা চুলকে হাসে।মাহাজ দেখে জিরিশা ওর কাজিনদের সাথে বসে খিলখিলিয়ে হাসছে।হাসির শব্দে চারপাশ মুখরিত হচ্ছে।মাহাজ ভীষণ ভালো লাগছে জিরিশাকে ওভাবে হাসতে দেখে।

মাহাজ জিরিশার দিকে স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,
“পাগল করে ছাড়লে আমায় জিরিশা পাখি”

১৫.
আজকে হুমাইরার বিয়ে।সবাই ব্যস্ত।মাহাজও টুকিটাকি কাজ করে দিচ্ছে।জিরিশা,ফাহা আর জিরিশার সব কাজিনরা গিয়েছে পার্লারে হুমাইরার সাথে সাজতে।সব মেয়েরা সেজে চলে আসে ১২:৩০। মাহাজে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো।গাড়ি থেকে নামা জিরিশার দিকে তাকাতেই থমকে যায় সে।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জিরিশা নামক রমনীর দিকে।যে হিজাব ঠিক করতে করতে গাড়ি থেকে নামছে।জিরিশা সিঁদুর লাল রঙের লেহেঙ্গা পরেছে।সাথে লাল হিজাব।

এক কথায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে।জিরিশা বাকি মেয়েদের মতো অতো সাজগোছ করেনি।পার্লার থেকে সেজেছে ঠিকই কিন্তু বেশি না হালকা।জিরিশার চোখ পরে দূরে দাড়িয়ে থাকা মাহাজের দিকে।যে তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।জিরিশা লজ্জা পায়।আড়চোখে মাহাজকে পর্যবেক্ষণ করে নেয়।মাহাজও লাল রঙের পাঞ্জাবি পরেছে সাথে সাদা জিন্স।সিল্কি চুলগুলো বাতাসে চোখে মুখে এসে পরছে।

চলবে..!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে