প্রেমময় প্রহরে তুমি পর্ব-১১

0
2309

#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১১

হুমাইরা লাফিয়ে ওঠে।জিরিশা আর ফাহা খিলখিল করে হাসতে থাকে।হুমাইরা পরে কথা বলবে বলে ফোন কেটে জিরিশার দিকে তেড়ে যায়।জিরিশা হাসতে হাসতে বলে,,,
“কিরে হুমাইরা সিলেটি ফুয়ার সাথে কথা বলছিলি।ডিস্টার্ব করে ফেললাম নাকি”

হুমাইরা বিরক্ত হয়।সে বিরক্তি নিয়ে বলে,,
“তুই কি আমাকে মারতে চাইছিস হ্যা।আরেকটু হলে তো জানটাই বেরিয়ে যেতো বেয়াদপ মেয়ে”

জিরিশা হাসে।হুমাইরা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।হুমাইরা বের হতেই জিরিশা আর ফাহা জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে।ওরা দুজন ফ্রেশ হয়ে নেয়।আজকে হুমাইরার মেহেন্দি।সবাই একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়।মাহাজ কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে দুপুরে খেয়েছে।সবাই অবশ্য তাকে অনেক যত্ন করছে।জিরিশা আর ওর সব কাজিনরা মিলে সাজতে বসেছে।সন্ধ্যা থেকেই বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে।

মাহাজ বাড়ি থেকে বের হয় আশেপাশে ঘুরে দেখার জন্য।আশেপাশে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগে।জিরিশাদের খালামনিদের বাড়িটা দোতলা।তাই কারো ঘুমানোর সমস্যা নেই।মাহাজ বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছু সময় আশেপাশে ঘুরে আবার বাড়ির দিকে যায়।গেট দিয়ে ঢুকতেই কারো সাথে ধাক্কা লাগে মাহাজের।সে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে সে ভ্রু কুচকে বলে,,
“আম স’রি”

মাহাজ কথাটা বলেই চলে যায় ওখান থেকে।যার সাথে মাহাজের ধাক্কা লেগেছে সে হলো হুমাইরার চাচাতো ভাই রায়িন।যে পুলিশের চাকরি করে।আর জিরিশাকে ভীষণ পছন্দ করে ছোটবেলা থেকে।সে চলে যায় তার কাজে।মাহাজ ভীষণ বোর হচ্ছে।তার আম্মু যে তাকে কেনো পাঠালো ভেবে পাচ্ছে না সে।

১৩.
সূর্য ডুবছে অনেক সময়।সন্ধ্যা নেমেছে।চারদিকে আলো আলোয় ভরে গিয়েছে।বাড়ির একমাত্র ছোট মেয়ের বিয়ে বলে কথা।সবাই কাজে ব্যস্ত যার যার।জিরিশা সাজ সম্পূর্ণ করে মাহাজকে খুজতে বের হয়।সেই দুপুরে খাওয়ার পর থেকে আর দেখা পায়নি।পাবেও বা কি করে সে তো সাজতে বসেছিলো।সে অবশ্য বেশি সাজেনি কিন্তু তার সাজের তুলনায় অনেকটা বেশিই সেজেছে।চুল স্ট্রেট করতে করতেই সময় চলে গিয়েছে।

জিরিশা সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠলো।খুঁজে দেখলো কোথাও নেই মাহাজ।তাই নিচে নেমে বাগানে খুঁজার জন্য যেতে থাকে।বাগানে যেতেই সে মাহাজকে দেখতে পায়।ফোন হাতে কি যেনো দেখছে খুব মনোযোগ দিয়ে।জিরিয়া চুপিচুপি এগিয়ে যায় মাহাজের দিকে।মাহাজ তার থেকে অনেক লম্বা হওয়ায় সে দেখতে পারছিলো না।উঁকি মেরে দেখতে গিয়ে পরে যেতে গেলো আর মাহাজ তাকে ধরে ফেলে।মাহাজ নিজেও হকচকিয়ে যায় এমন হওয়ায়।

জিরিশা লজ্জায় পরে যায়।সাথে বিব্রতও হয় কিছুটা।মাহাজ তাকে সোজা করে দাঁড় করায়।জিরিশা মাথা নিচু করে আছে।মাহাজ গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,
“তুমি কখন আসলে আর কি উঁকি মেরে দেখতে চাইছিলে”

কথাটা বলেই মাহাজ জিরিশাকে গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করে।জিরিশা একটা সবুজ রঙের সারারা পরেছে।সাথে সবুজ হিজাব।ঠোঁটে মেরুন লিপস্টিক।মাহাজ চোখ সরিয়ে নেয় জিরিশার থেকে।সে জিরিশাকে নিজের কাছে টেনে নেয় কোমড় জড়িয়ে ধরে।হুট করে এমন হওয়ায় জিরিশা হকচকিয়ে যায়।মাহাজের দিকে তাকায়।দুজন দু’জনের দিকে তাকায়।জিরিশা চোখ সরিয়ে নেয় তাড়াতাড়ি।

মাহাজ জিরিশাকে ছেড়ে দেয়।তারপর ওর দিকে ঝুঁকে ওর কানেকানে ফিসফিস করে বলে,,,
“শোন মেয়ে আমার সামনে আর এভাবে সেজে আসবে না”

মাহাজ কথাটা বলে চলে যায় ওখান থেকে।জিরিশা হা করে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে।তারপর আলতো হেসে নিজের কাজে চলে যায়।অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে।সবাই মেহেন্দি লাগাতে ব্যাস্ত।মেহেন্দির মেয়েটা জিরিশাকে বলে,,,
“আপু কার নাম লিখবো”

জিরিশা কিছু বলবে তার আগেই ফাহা বলে উঠে,,,
“মাহাজ লিখুন ওর বরের নাম”

জিরিশা লজ্জা পায়।সে মাথা নিচু করে বসে থাকে।মেহেদী মেয়েটা মাহাজ নামটা সুন্দর করে লিখে দিয়েছে।সবাই মেহেদী দেওয়া শেষ।সব ছেলেরা এতো সময় কাজ করছিলো।এখন এসেছে সব ছাদে।ছাদেই অনুষ্ঠান হচ্ছে। মাহাজ একটা চেয়ারে বসে আছে।সবাই নাচছে।জিরিশাও বসে বসে দেখছে।হঠাৎ ফাহা এসে জিরিশাকে টেনে মাহাজের পাশের চেয়ারে বসিয়ে দেয়।জিরিশা একটু বিব্রত হলো।

রিয়ান দূর থেকে বিষয়টা খেয়াল করলো।তার মোটেও পছন্দ হয়নি জিরিশার মাহাজের পাশে গিয়ে বসা।সে তো আর জানে না জিরিশার হবু বর মাহাজ।রিয়ানের শরীর জ্বলে যাচ্ছে।মাহাজ জিরিশার কানে ফিসফিস করে বলে,,,
“এতো সেজেছো কেনো তুমি!কাকে দেখাতে সেজেছো এরপর থেকে আমার সামনে ছাড়া আর কখনো সাজবে না”

জিরিশা মাথা নাড়ায়।মাহাজ হাসে।জিরিশা যদি এই হাসি দেখতো তাহলে তো সে বলতো এই গম্ভীর লোকটাও হাসতে পারে।রিয়ান বিষয়টা দেখে আরো রেগে যায়।সে জিরিশার কাছে চলে যায় সোজা।তারপর বলে,,,
“জিরিশা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে একটু এদিকে আসো”

মাহাজ ভ্রু কুচকে তাকায় রিয়ানের দিকে।তার সামনে তার হবু বউকে ব্যক্তিগত কথা বলবে বলে আলাদা ডাকছে।মাহাজ প্রচুর বিরক্ত হয় এতে।জিরিশা বলে,,,
“ভাইয়া যা বলবেন এখানেই বলুন আমি শুনছি”

রিহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,
“আমার তোমার সাথে কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে যা বাইরের মানুষের সামনে বলা যাবে না”

জিরিশা আলতো হেসে বলে,,,
“ভাইয়া আপনি হয়তো জানেন না উনি আমার হবু বর আপনি উনার সামনেই সব বলতে পারেন”

মাহাজ রেগে যায় তাকে বাইরের মানুষ বলায়।সে প্রচন্ড বিরক্ত হয় রিয়ানের উপর।সে নাক মুখ কুচকে বলে,,,,
“আপনার ইচ্ছা হলে বলুন আমার সামনে নাহলে যেতে পারেন”

রিয়ান অবাকের শীর্ষ পর্যায়ে চলে যায়।জিরিশার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।জিরিশাকে আর তার পাওয়া হলো না।সে ওখান থেকে চলে যায়।মাহাজ জিরিশাকে বলে,,,
“এই ছেলোর থেকে দূরে থাকবে সবসময়”

জিরিশা মাথা নাড়ায়।সবাই ওদের কাছে এসে কাপল ডান্স করতে বলে।জিরিশা না না বলে কিন্তু ওরা অনেক জোড় জিরিশা আর মাহাজকে।পরে মাহাজ রাজি হয়।জিরিশা মাহাজকে আমতা আমতা করে বলে,,,
“আসলে আমি নাচতে পারি না”

মাহাজ বলে,,”তুমি চিন্তা করো না আমি সামলে নেবো”

মাহাজ আর জিরিশা “ভালোবাসি বলে দাও” গানটায় নাচে।মাহাজ খুব সুন্দর করে জিরিশাকে হেন্ডেল করে।ওদের নাচ শেষ হলে সবাই তালি দেয়।যখন মাহাজ জিরিশাকে স্পর্শ করছিলো তখন জিরিশার শরীর কাঁপছিলো।নাচ শেষ হতেই জিরিশা দৌড়ে চলে যায় ওখান থেকে।অস্বস্তি লজ্জা তাকে ঘিরে ধরেছিলো।

জিরিশা চলে যেতেই মাহাজ মুচকি হাসে।ফাহা নিজের ভাইয়ের কান্ড দেখে চোখ বড়বড় করে তাকায়।সে তার ভাইকে বুঝতে পারছে না।আসলে কি সে যা দেখায় তা কি সে!ফাহা চিন্তায় পরে যায়।সে তো এখন পর্যন্ত কলেজে বা এই বিয়ে বাড়িতে কোনো মেয়ের দিকেই তাকাতে দেখেনি মাহাজকে।পুরোটা সময় জিরিশাকেই দেখেছে।ফাহা কি করবে ভেবে পায় না।

অন্যদিকে রিয়ান সিগারেট টানছে।প্রথম বার খাওয়ার ফলে কাশতে হচ্ছে।তাও সে খাচ্ছে।চোখ লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে।ভালোবাসা বড্ড অদ্ভুত!একদিকে কেউ খুশি হচ্ছো তো আরেকদিকে কেউ কষ্টে ভেঙে পরছে।

#চলবে,,,,!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে