প্রিয় ভালোবাসা-সানজিদা তাসনীম রিতু

0
619

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং-৩
প্রেরক: সানজিদা তাসনীম রিতু

প্রিয় ভালোবাসা,
লিখতে শুরু করার পর বেশ কিছুক্ষণ ভাবছিলাম তোমাকে কীভাবে সম্বোধন করবো! অনেকক্ষন ভাবার পরে এটাই খুঁজে পেলাম, জানি না কেন এমন হলো। এটা কী আমার ব্যর্থতা? না কী তোমাকে চিঠিতে ডাকার মতো কোনো সম্বোধন পৃথিবীতে আমার জন্য তৈরি হয়নি? ভেবেছিলাম তোমাকে একটা বিশেষ দিনে খুব সুন্দর করে একটা চিঠি লিখবো কিন্তু পরে তোমার বলা কথা মনে হলো, “কাল কি হবে সেটা ভেবে আজকের দিনটা নষ্ট করো না, কাল হয়তো বেঁচে নাও থাকতে পারি” তাই আর অপেক্ষা করলাম না। আমি আমার ক্ষুদ্র জীবনে অনেক চিঠি লিখেছি, হাতে হাতে মোবাইল তো কদিন মাত্র আসলো কিন্তু তোমাকে চিঠি লিখতে হবে এটা আসলে সেভাবে ভাবিনি কখনও কারণ, যন্ত্র সভ্যতার যুগে চিঠি কল্পনার বিষয়বস্তু না কিন্তু আমার ভাবা উচিত ছিল, এই একমাত্র মাধ্যম যেখানে প্রাপক পুরোটা পড়ার আগে উত্তর দিতে পারে না। এই যাহ! কথা শুরু করার আগেই কথা হারিয়ে ফেলেছি! বারবার আমার সাথে এমনটাই কেন হয়? কেন আমার বাস্তবিক জীবনটাও এমন কোনো কিছু ভালো ভাবে শুরু করার আগেই শেষ হতে চায়? আচ্ছা বলোতো এভাবে আর কতকাল শেষ দেখবো? শেষ দেখতে দেখতে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত আর বিদ্ধস্ত হয়ে পড়েছি। যাইহোক, আমার কথা পরে লিখলেও চলবে, আগে তো চিঠির বিষয়বস্তুতে প্রবেশ করি। জানি না কতদূর লিখতে পারবো। পৃথিবীতে এমন কোনো বস্তু যেমন কাগজ, কলম, কালি তৈরি হয়নি যাতে মনের আবেগ পরিপূর্ণ ভাবে প্রকাশ করা সম্ভব কারণ তোমাকে নিয়ে লিখতে চাইলে সারাজীবন লিখে যেতে পারবো। তবুও চেষ্টা করে দেখি…

পিচ্চি,
হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেলো, “প্রযুক্তি আমাদের দিয়েছে বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ” এটা যদিও অত্যন্ত সত্যি একটা কথা তবুও আমার মনে হয় আবেগ কেড়ে নেওয়া হয়নি, সেটা আমাদের ভিতরেই লুকায়িত আছে, শুধু প্রকাশ করাটাই বড় ব্যপার। জানি, আমি এই চিঠিতে আমার আবেগের খুব অল্পই প্রকাশ করতে পারবো তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নাহ! অনেক কিছু মনে ছিল, এখন আর কিছুই মাথা হয়ে হাতের আঙুলে আসছে না! কী লিখি বলো তো?

আমার রাফিন,
আমার লেখার এতটা শক্তি হয়নি যে আমি লেখার মাধ্যমে তোমাকে প্রকাশ করবো বা আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করবো, এটা সম্ভবই না। আমি তোমার মতো একজনকে এতটা আপন করে পাবো কখনো ভাবিনি। তোমার ভালোবাসার পরিমাণ এতটাই যে, যা শোধ করার সাহস আমি কখনোই দেখাতে পারবো না, এতটা সাহস এখনও হয়নি আমার। তোমাকে নিয়ে আমি সারাজীবন কাটাতে চাই যতদিন মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন। আমি জানি, তোমার বিকল্প কেউ হতে পারে না। পানি ছাড়া যেমন নদী অপূর্ণ তোমাকে ছাড়া আমিও অপূর্ণ। আমি এতদিন বেঁচে আছি শুধু তোমার ভালোবাসায়, আমার অতীত অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক আগেই জীবনের কাছে পরাজিত করে দিয়েছে, বেঁচে থাকার কোনো কারণ বা অবলম্বন অবশিষ্ট ছিল না কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে মহামহিম আল্লাহ আমাকে শক্তি দিয়েছেন তোমাকে উপহার দিয়ে। তোমার মাধ্যমে আমি নিজেকে নতুন করে দেখতে পেরেছি, নতুন করে চিনতে পেরেছি তবুও অকৃতজ্ঞের মতো বারবার তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি যেগুলো আমার মোটেও ঠিক হয়নি, আমি ক্ষমাপ্রার্থী তোমার কাছে।

আমার অর্ধাঙ্গ,
সমাজ বা পৃথিবী তোমার আমার সম্পর্ককে কিভাবে দেখে সেটা আমার জানার প্রয়োজন নেই। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি তুমি আমার অর্ধাঙ্গ, এটা সমাজ স্বীকৃত না আমি জানি, পৃথিবীর কেউই এই কথা কোনোভাবেই বিশ্বাস করবে না তবুও আমি বলছি তুমি আমার অর্ধাঙ্গ। তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে আমি এটা ভাবতে পারবো না, কোনোদিনও না।

আমার পাগলটা,
আমি জানি আমি যতই লিখি না কেন সেটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে কারণ… থাক কারণটা না বলি। আমরা মনুষ্য জাতি, আমাদের জীবনে সব সময় কোনো না কোনো সমস্যা থাকাটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমরা সেই সমস্যার সমাধান না করে সেটাকে ভাঙ্গনের অজুহাত বানিয়ে ফেলি, এটা করা উচিত না তাই না? আমি জানি আমি তোমাকে খুব বেশি ভালো রাখতে পারবো না, তবে আমি একটা জিনিস পারবো, আমার ভিতরে লুকায়িত যত ভালোবাসা আছে সব তোমাকে দিতে পারবো।

প্রিয়,
আর সম্বোধন পাচ্ছি না। আজ একটা কথা খুব বলতে ইচ্ছা করছে,
“তুমি জানলে না, আমার হাসির আড়ালে
কত যন্ত্রনা, কত বেদনা
কত যে দুঃখ বোনা।”
কী ভাবছো? এটা নিতান্তই একটি গানের লাইন? না গো, এটা আমার মনের কথা তোমার জন্য। তুমি সবসময় যথাসাধ্য চেষ্টা করেছো আমার সব কিছু ভুলিয়ে আমাকে আনন্দে রাখতে, আমাকে হাসাতে কিন্তু…

এইযে,
তুমি কি জানো তুমি অদ্ভুত ক্ষমতার অধিকারী? তা না হলে কোনো ভাবেই আমার মতো উদ্ভট, বেয়াড়া, একগুঁয়ে, বদমেজাজী মেয়েকে এতদিন ধরে রাখা অসম্ভব ছিল। আমি নিশ্চিত আর কারোর পক্ষে এটা সম্ভব ছিল না, হবেও না। তাই আমার মনে হয় তুমি অদ্ভুত গুণে গুনান্বিত আর এই জন্য তোমার মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। তুমি নিশ্চয়ই এতক্ষণ পড়তে পড়তে কল্পনার সাগরে ডুব দিয়েছো? ভাবছো আসলেই কী সব সত্যি! তোমার এমন কিছু ভাবা অস্বাভাবিক নয় কিন্তু আমি তোমাকে নিশ্চিত করে বলছি আমার মনের লুকোনো কথাগুলোই আমি তোমাকে বলছি। আমি কোনো জনপ্রিয় লেখকের সাহিত্য থেকে তোমাকে নিয়ে লিখছি না, আমার মন যা বলছে, মনের গহীনে তোমাকে নিয়ে সুপ্ত যেই কথাগুলো আছে সেগুলোই লেখার চেষ্টা করছি। যদিও আমার মন এর থেকেও বেশি কিছু বলছে কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার শব্দভাণ্ডার মনকে শতভাগ প্রস্ফুটিত করতে পারছে না।

আমার লম্বুটা,
তোমাকে কথা দিয়েছিলাম সারাটা জীবন তোমার পাশে থাকবো অন্তত দূর থেকে হলেও। হ্যাঁ, তুমি দেখে নিও আমি যত দূরেই থাকি না কেন ছায়া হয়ে তোমার সাথে সাথেই হাঁটবো। দরকার হলে মরে গিয়ে পেত্নী হয়ে তোমার ঘাড়ে চেঁপে বসে থাকবো তবুও তোমাকে ছাড়বো না। এই প্লিজ, এভাবে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থেকো না, আমি যে তোমার মায়াবী চাহনীর সাগরের ফেনিল ঢেউয়ে হারিয়ে যাবো! যাইহোক, চিঠি এতো দীর্ঘায়িত করতে হয় না, না হলে অনেক জরুরী কথা দৃষ্টিগোচর হয় না।
অনেকটা! না অনেকটা নয় পুরো চিঠিটায় তোমাকে আবেগে ভাসিয়েছে, তুমি পুলকিত আর সাথে প্রচণ্ড শিহরিত আমি বুঝতে পারছি। রাহমানুর রাহিম আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি তোমাকে সৃষ্টি করার জন্য।

আমার রাজপুত্রটা,
আমি জানি তুমি বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকবে, হয়তো আনন্দের অতিশয্যে তোমার দু’চোখের কোণে দু’ফোটা তপ্ত অশ্রুও জমতে পারে তাই আর বিলম্ব না করে বিদায় নিচ্ছি। চিঠি থেকে, তোমার কাছ থেকে না। তোমার জীবন তেজপাতা না করে আমি সহজে বিদায় নিবো না, চিন্তা করো না।
ইতি
তোমার বুড়ি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে