প্রিয় প্রকৌশলী সাহেব – Arisha Jannat

0
439

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
#চিঠি_নং_২

প্রিয় প্রকৌশলী সাহেব,
পত্রের প্রথমে এক পড়ন্ত বিকেলে ক্ষণিকের দৃষ্টিবিনিময়ে নিজের মূল্যবান হৃদয় নামক বস্তুটি হারিয়ে ফেলে প্রায় সর্বহারা হয়ে যাওয়া এই মেয়েটির সালাম নিবেন।আশা করি আমার অতিপ্রিয় হৃদয়টিকে দখল করে ভালোই আছেন।অবশ্য আপনাকে ভালো থাকতেই হবে কেননা আপনার ভালোমন্দতেই এই আমি,আমার মতো সামান্য মেয়েটির ভালো থাকা।আপনার কর্মস্থলের আমার এক পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে মাঝেমধ্যেই আপনার খবরাখবর নেওয়া হয়।সেই উপকারী ব্যক্তিটির কাছ থেকে আপনার সহিসালামত থাকার সংবাদ পেয়েছি বলেই তো আমিও এখন অসম্ভব খুশিমনে দিনরাত্রি যাপন করছি।
.
পত্রের শুরুতেই আমার লেখা আবেগপরায়ণ কিছু ইঙ্গিত পূর্ণ সংলাপ দেখেই হয়তোবা আপনি বুঝে গিয়েছেন আমি সাংঘাতিক এক রোগে ভুগছি।রোগটির নাম হলো ‘প্রেম রোগ’।এই রোগের বিস্তার আমার মাঝে উদয় করার জন্য যেমন দায়ী আপনি তেমনি এটির থেকে আমাকে নিস্তার পাওয়ানোর এক এবং একমাত্র উপায়ও আপনি।আমার জানামতে,আমি কে বা আমার পরিচয় কি এই প্রশ্ন তো আপনার চরম কৌতূহলী মনে এতক্ষণে নির্ঘাত উঁকি দিয়ে দিয়েছে।কেননা আপনার মন প্রচুর কৌতূহল আর আগ্রহ দ্বারা পরিপূর্ণ।আপনি যে সবকিছুর প্রতি এভাবে নিজের অতিরঞ্জিত কৌতূহল প্রকাশ করেন তা আমার একদম পছন্দ না,জানেন?
কেনো পছন্দ না তা নিয়েও নিশ্চয় আপনার মনে অনেক প্রশ্ন আনাগোনা করছে।থাক,প্রশ্নদেরকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার দরকার নেই।আপনি বরং
প্রশ্নগুলোকে তাদের নিজেদের ঠিকানায় চলে যেতে বলুন।আমি নিজেই আমার অপছন্দের কারণ বলছি।
শোনেন,আমি চাই যে আপনার বুকের বামপাশে অবস্থিত ওই ভালোবাসা খঞ্জিত মনে শুধুই আমি এবং আমিই বিরাজ করি।আমি চাই না যে আমি ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে আপনার মনে উৎসাহ,উৎকন্ঠা,উদ্দীপনার সৃষ্টি হোক।বকুলগঞ্জে আপনার বিরাজমান থাকা দিনগুলোতে আপনি যখন কিছু নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করতেন তখন সেই বস্তু বা ব্যক্তিটির প্রতি আমি অনেক হিংসা অনুভব করতাম।
অবশ্য এখন যে কৌতূহল অনুভব করছেন তা নিয়ে কোনো হিংসা অনুভব করছি না কেননা এখনকার সৃষ্টিশীল কৌতূহল আমাকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে আর আমাকে ঘিরেই একসময় বাষ্প হয়ে মিলিয়ে যাবে।এতকিছু বলছি বলে আমাকে বেহায়া ভাববেন না আবার,কেমন?যাকে নিজের হৃদয় নামক সম্পদ দিয়েছি তার প্রতি নিজের সকল রকম অধিকার তো জাহির করতেই হবে।
.
জানেন?চিঠিটা লিখতে বসার পর থেকেই একটা গান অনবরত গুনগুন করে গেয়ে চলেছি,
“মিলন হবে কতদিনে
আমার মনের মানুষের সনে”
বড়ই লজ্জাজনক ব্যাপারস্যাপার!
.
আপনার মনে আছে কি না তা জানি না কিন্তু আমার স্মৃতিকথাতে সেই অদ্ভুত সুন্দর দিনটি নিজের ঝলমলানো মহিমা এখনো ঠিক সেই প্রথম দিনের মতোই টিকিয়ে রেখে শীর্ষস্থান দখল করে রয়েছে।বর্ষার সেই মেঘাচ্ছন্ন দিনটিতে যখন দুই বেণী ঝুলিয়ে চিকনচাকন শ্যামবর্ণের আমি কলেজ থেকে নিজ গন্তব্যে ফিরছিলাম ঠিক তখনি নজরকাড়া এক সুদর্শন যুবকের আকর্ষণীয় পুরুষালি কণ্ঠের হাতছানিতে আমি নিজের দৃষ্টি তার দিকে নিক্ষেপ করি।যুবকটিও একবার আমার চোখে চোখ রেখে নজর সরিয়ে ফেলে।
আর দৃষ্টিবিনিময়ের ঠিক সেই মুহূর্তেই আমি সর্বনাশা কাণ্ডটি ঘটিয়ে ফেলি!আকাশপাতাল,রোদবৃষ্টি,গাছগাছালি আর পাখিদের কিচিরমিচির কোলাহলকে সাক্ষী রেখে আমার হৃদয়কে সেই যুবকটি এক প্রকার ছিনিয়ে নেয়।যুবকটি অবশ্য সেই কর্ম নিজের অজান্তেই করে ফেলেছিল।তাই আমি তাকে খুব একটা দোষারোপ করি না।সেদিনকার মতো নিজ গন্তব্যে ফিরে আসলেও পরবর্তীতে ক্ষণেক্ষণে আমার বোধগম্য হয় যে, আমি সর্বহারা হয়ে গেছি।তাই নিজেকে শান্ত করার জন্য হৃদয় ছিনতাইকারী সেই যুবক গ্রামে অবস্থানকালে আমি তার অজান্তেই তার ছায়া হয়ে চলাচল শুরু করি।জানতে পারি শহরের নামকরা একজন প্রকৌশলী সে।সে যেদিন ফিরে যায় তার ঠিকানায়,সেদিন কান্নাকাটি করে নিজেকে বুঝ দিই যে,” বামুন হয়ে চাঁদ ছোঁয়া মানায় না”।এতদিন এই উক্তিটি মেনে চলতে পারলেও আর যে আমি সহ্য করতে পারছি না।তাই লেখা আরম্ভ করে দিলাম আমার মতো সামান্য মেয়ের বাস্তবিক ভালোবাসার অস্তিত্ব দানকারী প্রমাণপত্র।আশা করি আপনি বুঝবেন যে আমার হৃদয় আহরণকারী সেই যুবকটি কে!
.
হঠাৎ করেই বকুলগঞ্জ নামক ছোট পল্লীর এক অজ্ঞাতনামা কিশোরী মেয়ের আবেগময় ভঙ্গিতে নিজ ভালোবাসার বিস্তৃতি সম্পর্কে লিখিত পত্র পেয়ে হয়তোবা নিজের কর্মব্যস্ততার মাঝেও অবসরে পাওয়া কিছু অতি দামি সময় আপনি খুবই বিস্মিত হয়ে অতিবাহিত করছেন।যথাসম্ভব নিজের বকুলগঞ্জে উপস্থিতকালের দিনগুলো অতীতের স্মৃতির পাতা থেকে সরিয়ে বর্তমানে পদার্পণ করিয়ে এই নগণ্য মেয়েটিকে স্মরণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।অযথা চেষ্টা করবেন নাতো।পূর্ববতী স্মৃতিচারণ করে আমাকে আপনি চিনতে পারবেন না,বুঝেছেন?আমাকে চিনতে,জানতে চাইলে বকুলগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান।
.
আজকের মতো এখানেই ইতি টানি।সবসময় ভালো থাকবেন আর আপনার আশেপাশের সবাইকে ভালো রাখবেন।আল্লাহ হাফেজ।

ইতি,
বকুলগঞ্জের সেই মেয়েটি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে