নিমাইদা পর্ব : ৪

0
1319
নিমাইদা পর্ব : ৪ গল্পবিলাসী : নিশি -‘ঐ নিমাইদা? বেটা বয়রা কানে শুনোনা? মেয়ে পটানোর ধান্দা নিয়া ভার্সিটিতে ঘুরো শুনবা কেমনে? না? আর আমাদের ভার্সিটিতেও কি মেয়ে পটাতে এসেছো? হি হি জীবনেও পারবানা। জামার কলারে টান দিয়ে আমার মতো মেয়ে যেখানে আছে সেখানে তোমার মতো নিমুর রিলেশন জোক্সস এ পার্ট। আজ অব্ধি আমাকেই পটাতে পারলেনা আর অন্য মেয়ে। ভাবা যায় এইগুলা? বলেই কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো ঋতু।বাই দা রাস্তা শোনো আজকে কিন্তু আমাদের বাসায় যেতেই হবে।আর কোনো বাহানা শুনছিনা।বলো পাক্কা প্রমিজ? বলেই হাতটা বাড়িয়ে দেয় নির্মলের সামনে। কি হলো বলো প্রমিজ।’ নির্মল হাতে হাত রাখছেনা দেখে নির্মলের মুখের দিক তাকাতেই যেনো পুরো আকাশটা তার মাথায় ভেঙে পরলো। কাকে নির্মল ভেবেছিলো সে? সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকাতেই মৃদু হেসে উঠলো লোকটি।এতো নির্মল নয়। এ যে অন্য কেউ।
-‘ সসসরিই।’ বলেই লজ্জায় দৌড়েঁ পালালো ঋতু।ইস কি করলাম এইটা? কে না কোন ছেলে নির্মলদাকে ভেবেই কিসব বলে আসলো। মেয়েটা যেতেই হোহো করে হেসে উঠলো সবাই। -‘বেচারি কাকে না কাকে ভেবে দৌড়েঁ এসেছিলো। তোকে দেখে দৌড়।’হাসতে হাসতে নিয়াজ বলে উঠলো।সীমান্ত তাকিয়ে আছে মেয়েটার চলে যাওয়া পথে। খুব দ্রুত দৌড় দিতে গিয়ে চুলের খোঁপা থেকে কাঠিটা পরে মেঘবরন চুলগুলো কোমড় ছাড়িয়ে নেতিয়ে পরলো। ঋতুকে দৌড়েঁ আসতে দেখে একপ্রকার ছুটে এলো তার বান্ধবী বর্ষা। -‘ কিরে কি হয়েছে? এভাবে ছুটছিস কেনো? ‘ -‘ইস কি ভাববে আমাকে ছেলেটা বলতো? ‘ -‘কোন ছেলে? কি ভাববে?’ -‘ আরে আগে যে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে নির্মলদা ওরা থাকতোনা? মনে আছে তোর?’
-‘ ঐযে তুই নির্মল কঠিন নাম দেখে নিমাইদা ডাকতি ওনি? ‘ -‘হ্যা। নিমাইদা।’ -‘ কি না হ্যান্ডসাম ছিলো দোস্ত । এক্সাইটেড হয়ে এসেছে এখানে?’ -‘ আরে না। সীমান্তকে উদ্দ্যেশ্য করে ঐ দেখ ঐ ছেলেটাকে? পেছন থেকে একদম নিমাইদায়ের মতো দেখতে।আমিতো ভেবেছিলাম নিমাইদাই।’ তারপর পুরো ঘটনা খুলে বলতেই হেসে উঠে বর্ষা। হাসতে হাসতে -‘এক্সপ্রেশন টা কেমন ছিলো তখন তোর?’ -‘ গোলআলুর মতো।’ -‘ ধুর।’ -‘ শুধু মজাই নিচ্ছিস তুই।ভাল্লাগেনা। আমি মরছি টেনশানে।’ বলেই হাটতে লাগলো। -‘ওকে ওকে।’ যতোটা সময় মেয়েটা কথা বলছিলো সীমান্তের দৃষ্টি ছিলো মেয়েটা গলায় ঝুলে থাকা আইডি কার্ডের উপর। জান্নাতুল নাইমা ঋতু। ইকোনোমিকস ২য় বর্ষ। আর যখন লজ্জা পেয়ে সরি বলেছিলো তখন গালদুটো হালকা ফুলে কেমন লাল আভা ছড়িয়ে ছিলো। সীমান্তকে মেয়েটার চলে যাওয়ার পথে চেয়ে থাকতে দেখে পিঠে চাপড় মেরে রনি বলে উঠলো, -‘ কিরে ঘায়েল হয়ে গেলি নাকি?’ হালকা হেসে -‘ধুর বাদদে তো চল। ‘ সার্টিফিকেট নিয়ে বাসায় চলে এলো সীমান্ত। ফ্রেশ হয়ে মিররে তাকিয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছিলাম চোখের সামনে শুধু ঋতুর আইডিকার্ডটা ভাসছে। কলিংবেলটা বাজছে। -‘সীমান্ত? দেখনা কে আসছে।’ সীমান্ত বের হয়ে এসে লুকিং গ্লাসে দরজার ওপাশের লোকটাকে দেখেই ছুটে পালালো। মা নিয়াজ কল দিচ্ছে খুব ইমার্জেন্সি। আমি বেরুলাম।’ বলেই পেছনের গেইট দিয়ে বেরিয়ে গেলাম। মোবাইলের রিংটোনে ভাবনায় ছেদ ঘটলো সীমান্তের। মোবাইল হাতে নিতেই দেখে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা আঁচড়ে যাচ্ছে ঋতু। নেভিব্লু কালারের সাথে গোল্ডেন কালারের হালকা কম্বিনেশন করা একটা থ্রীপিছ পরে আছে। কে বলেছে শ্যামলবর্ণ মেয়েরা সুন্দুরী হয়না? সীমান্তের মতে একমাত্র শ্যামলবর্ণধারী মেয়েরাই সবচেয়ে সুন্দর। মোবাইলে তাকাতে দেখতে পেলো মায়ার নাম্বারটা ভাসছে। মোবাইলটা সাইলেন্ট করে ঋতুর পেছনে গিয়ে দাড়ায় সীমান্ত। মিররে সীমান্তকে কাছে আসতে দেখে -‘ কিছু বলবে? ‘ ঋতুর কোমড় জড়িয়ে ধরে কাধেঁ মাথা রেখে মিররেই দেখছে ঋতুকে।কিছুক্ষন চুপ থেকে, -‘ চোখের নিচে এতো ডার্কসার্কেল হলো কিভাবে?’ একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে -‘খুব যে সুখী মানুষ আমি তাই।’ কথাটাতে তীব্র কষ্ট খুঁজে পেলো সীমান্ত। কিছুনা বলে ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে একটা গভীর চুমু খেয়ে -‘এখন থেকে ঠিক এই মূহুর্ত থেকে কোনো কষ্টের স্পর্ধা নাই আমার বাবুইটাকে ছুঁয়ে দিবে। ‘সীমান্তের স্পর্শে আজ কোনো ভালোবাসা জেগে উঠেনা জেগে উঠে কিছু ভারী নিঃশ্বাস। যার সাথে শুধু বুক ভরা কষ্ট বেরিয়ে আসে। সীমান্তের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে, -‘কাচের প্লেটটা যখন ভেঙে যায় চাইলে তা জোড়া দেয়া যায় কিন্তু দাগগুলো কিন্তু ঠিকই থেকে যায় সীমান্ত। আর তাছাড়া আমি কোনো মাটির তৈরী করা পুতুল নই যে ইচ্ছে হলেই ভেঙে আবারো নিজেকে তৈরি করে নিবো। আমি রক্তে মাংসে গড়া একটা মানুষ।’ গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে -‘এতো অভিমান? ‘ -‘শুনেছি রাগ অভিমান তো মানুষ আপনজনদের উপর করে। আমিতো কারো আপনই হয়ে উঠতে পারলাম না।’ -‘তবে আমি কি পর?’ -‘ জানিনা আমি। দেখি ছাড়ো।’ শক্তভাবে ধরে -‘ পালাচ্ছো কেনো? আমার ক্ষিদে লেগেছে ছাড়ো।’ভ্রু কুঁচকে, -এই অবেলায় খাবে তুমি তাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?’ -‘ বিশ্বাস অনেক কিছুই করতে চাইনা কিন্তু তাই বিশ্বাস করতে হয়। আর ক্ষিদেতো মাত্র একটা অনুভূতি। ঐদেখো মোবাইল জ্বলছে তোমার।’ -‘ জ্বলুক। তোমার থেকেও ইম্পরট্যান্ট নিশ্চয়ই নয়।’হালকা হেসে, -‘ আমি আবার এতো দামী হিরে হলাম কবে থেকে? ‘ -‘এই মিথ্যা হাসি আমার সামনে দিবানা। দুহাতে ঋতুর গাল চেপে কি বলেছে মা তোমাকে? আমি চলে যাওয়াতে কি বলেছে? কি হয়েছে তোমাদের মধ্যে?’ -‘আমাকে কেনো জিজ্ঞাসা করছো তোমার মাকে করো। সরো তো।’ চলে যেতে নিলে ধাক্কা দিয়ে দাড়ঁ করিয়ে -‘আমি তোমার থেকেই শুনবো। ‘ -‘পাস্ট ইজ পাস্ট। পাস্ট টেনে নিয়ে আমি বর্তমান বরবাদ করতে চাইনা। দেখি ছাড়ো।’
-‘ এখন ছাড়ছি। তবে পরে দেখেনিবো।’ বলেই মোবাইলটা নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো সীমান্ত। মাথাটা বিনুনি করে বেরিয়ে এলো ঋতু। রান্নাবান্নার ঝামেলাটা শেষ করে মাত্রই রুমে এলেন ফাতেমা। রাগে শরীর নিশপিশ করছে তার। বাপ মেয়ে দুটার একটাকেও আজ অব্ধি বুঝে উঠতে পারেন নি তিনি। মুখে এক তো মনে আরেক। হাতটা মুছে টাওয়ালটা রাখতে গেলেই ঋতুকে দেখতে পেলেন তিনি। মায়ের চোখে চোখ পরতেই ডায়নিং রুম ছেড়ে মায়ের রুমে এলো ঋতু।মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পিঠে মুখ বুজে দাঁড়িয়ে থাকে। নিঃশ্বব্দে কেঁদে চলছে ঋতু। মেয়ের ফোঁপানি শুনে, -‘ এখন কাদঁছিস কেনো? বাপ মেয়ে তো জীবনকে জীবন মনে করিস না। সবই তোদের কাছে খেলা মনেহয়।’ -‘ মা বাবাতো ভূল কিছু বলেনি। তুমি শুধু দোয়া করো আমি যেনো বাবার কথাগুলো পূরন করতে পারি।’ মেয়েকে টেনে এনে বুকে জড়িয়ে ধরে, -‘ আমিতো সবসময়ই দোয়া করি। কপালে চুমু খেয়ে সুখী হ।যাই করিস না কেনো ভেবে চিন্তে করিস।’ -‘ তুমি আর বাবা ঠিক ভাবে মেডিসিন নিবে কিন্তু আর রান্না তোমাকে করতে হবেনা। তুমি সামনে থেকে রমি মামিকে পুরো দিনের জন্য রেখে দিবে। ছুটা কাজ না করে পুরোদিন করলে ভালো হবে। টাকা বেশি দিয়ে দিলেই হবে।’ -‘ আচ্ছা ঠিকাছে রাখবো। তুইতো কিছুই খেলিনা চল খাবি। ‘ -‘হ্যা খাবো সবার সাথে। মাকে দেখছিনা যে? ওরা কই? ‘ -‘তোর বড় চাচ্চুর ফ্ল্যাটে গেছে।’ -‘ ওহ।’ -‘ আর সীমান্ত, বেয়াই আর তোর বাবারা মসজিদে গেছে।’ -‘ আচ্ছা চলো। খাবার রেডি করি চলে আসবে এখন ওরা।’ মেয়ের দিক তাকিয়ে, -‘ হ্যা রে সীমান্ত কি সত্যিই কিছু জানেনা? ‘ -‘মা আমিও বুঝতে পারছিনা। সীমান্ত বারবার আমাকে জিজ্ঞাসা করছে। নিঃশ্বাস ফেলে বাদ দাওতো এসব।আর কিসব পরে আছো তুমি? উঠে কাবার্ড থেকে একটা উঠিয়ে রাখা কাপড় বের করে দিতে দিতে, বাসায় এতো মেহমান আর তুমি এই বাসার থ্রীপিছ পরে আছো। মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে, যাও চেঞ্জ করে আসো। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।’ -‘ তোকে দিতে হবেনা আমি এক্ষনি আসছি। ‘ -‘আরে যাওতো তুমি।’ বলে ফাতেমাকে ধাক্কিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো ঋতু। টেবিলে সব খাবার ঠিক আচগে কিনা দেখে রুমে পা বাড়াতে নিলেই কলিংবেল বেজে উঠে। শ্বশুর বা শ্বাশুড়ি হতে পারে ভেবে উড়না টেনে ঘোমটা দিয়ে দরজা খুলতে গেলো। দরজা খুলতেই&ল সীমান্তকে দেখতে পেলো ঋতু। সীমান্তের পিছন পিছন বড় চাচ্চু, বাবা, আর শ্বশুরকেও দেখতে পেলো ঋতু। তাদের পেছন পেছন শ্বাশুড়ি আর বড় চাচ্চি চলে এলেন। সবাইকে ডায়নিংয়ে খাবার পরিবেশন করছে ঋতু। ছোট চাচ্চীর মাথা ব্যাথা তাই উপরে চলে গেছে।সীমান্ত ড্রইংরুমে বসে আছে। মোবাইলে কিছু করছে হয়তো। সবাইকে খেতে দেখে সীমান্ত এসে ঋতুর পাশে দাড়ায়। -‘ বাবা? আমি একটু ঋতুকে নিয়ে বেরোচ্ছি। তুমি আর মা বাসায় চলে যেও।’ সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকালে, -‘ চিন্তা করোনা। আমরা বের হচ্ছি।’ ঋতুকে কিছু না বলতে দিয়ে ঋতুর হাত টেনে নিয়ে বেরিয়ে পরলো। নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছেনা সীমান্ত। মাত্র কয়েকদিন। এই কয়েকটা দিনে কি এমন হলো যে একদম সেপারেশন পর্যন্ত চলে গেছে মা। আর ঋতু? বাসা চেঞ্জ নাম্বার চেঞ্জ কিছুই বুঝতে পারছেনা। বাসায় ফিরে ঋতুকে না পেয়ে ছুটে গিয়েছিলো ঋতুর কাছে। কিন্তু বাসা চেঞ্জ করে ফেলার কারনে আর দেখতে পারেনি ঋতুকে।পরদিন শ্বশুড়ের অফিসে গিয়েই জানতে পারে সব। কিন্তু কিছুতেই মুখ খুলছেনা ঋতু।মরবে তাও কখনো কিছু বলবেনা। বাসায় থাকলে কখনো তার মুখ থেকে কথা বের করা সম্ভব না। তাই আজ হোটেলে থাকবে।সব সলুয়েশন করেই বাসায় ফিরবে সে।যেই রুমজুড়ে শুধু ভালোবাসা সেখানে একমূহুর্তও কোনো ভালোবাসাহীন কাটাতে পারবেনা সে। ড্রাইভ করে আড়ন হোটেলে চলে এসেছে সীমান্ত। কিছুক্ষন আগে অনলাইনে এখানে একটা রুম বুক করে নিয়েছে। সীমান্ত কি করতে চাইছে তাই বুঝার চেষ্টা করছে ঋতু। হোটেলে আসতে দেখে, -‘কি হচ্ছে কি?’ -‘ নামো। ‘ -‘এখানে কেনো নামবো?’ ঋতুর হাত ধরে টেনে বের করে এনে, -‘ একদম চুপ। ‘ -‘সীমান্ত এটা পাবলিক প্লেস।’ -‘ হ্যা জানি আমি তাইতো বলছি একদম চুপ।’ হোটেলের পার্কিং প্লটে গাড়ি পার্কিং করে চাবি নিয়ে রুমে চলে আসে। ততোক্ষন পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি কেউ। ইন্টারকমে কল করে খাবার অর্ডার করে সীমান্ত। -ফ্রেশ হয়ে আসো। ‘ সীমান্তের কাছে এসে -‘ কি হয়েছে? এমন করছো কেনো?’ ঋতুর চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে -‘ কিছু না যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।’ কিছু না বলে ওয়াশরুমে পা বাড়ায় ঋতু। ঋতুকে ফ্রেশ হয়ে আসতে দেখে, -‘ খাবার চলে এসেছে এসো খাবে।’ সীমান্তর কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা ঋতু। চলবে,,,,,,,,, আজকে নামের সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পেলেন তো?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে