নিমাইদা পর্ব : ৩

0
1298
নিমাইদা পর্ব : ৩ গল্পবিলাসী : নিশি শাহজাহান সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে আসমা রেহমান। অবশ্য তাকিয়ে না সে কি বলে তা শুনার জন্য একপ্রকার মুখিয়ে আছেন তিনি। ভয়ে বুকটা দুরুদুরু করছে। কি হবে তার সিদ্ধান্ত? কি হতে যাচ্ছে তার সংসারে? শাহজাহান সাহেবকে দেখে মনেহচ্ছে তিনি খালি হাতেই ফিরিয়ে দিবেন কিন্তু তা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবেনা।সুখের সংসারে আগুন তিনিই লাগিয়েছেন আর সেই আগুন তাকেই নিভাতে হবে। শাহজাহান সাহেবকে চুপ থাকতে দেখে আসমা রেহমান পাশ থেকে বলে উঠলো,
-‘বেয়াই সাহেব দয়া করে না করবেন না। আমার ভূলের শাস্তি আমার ছেলেটাকে দিবেন না।’ পাশে থেকে সব শুনছিলেন ঋতুর বড় চাচা শাহরিয়ার সাহেব। পেশায় তিনি একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গনিত শিক্ষক। মেয়েদেরকে নিয়ে সবসময়ই তিনি একটু বেশিই ভাবেন। সেখানে নিজের পরিবারের একজনকে নিয়ে কথা হচ্ছে। সব শুনে তিনি বলে উঠলেন, -‘ আপনি যেমন আপনার ছেলের চিন্তাটা করে এখানে এসেছেন আমাদেরকেও তো আমাদের মেয়ের চিন্তাটা করতে হবে তাইনা? আপনার ছেলের সুখের জন্য আপনি ছুটে এসেছেন আমাদেরকেওতো আমাদের মেয়েটা নিয়ে ভাবতে হবে,বেয়াইন সাহেবা। আপনার ছেলেকে যেমন আপনি গর্ভে ধারন করেছেন আমাদের মেয়েটাকেও কোনো মা তার গর্ভে ধারন করেছে। তারও একটা মতামত আছে নিশ্চয়ই ।কোনো মা বাবাই চায়না তার ছেলে মেয়ে কষ্টে থাকুক। কিন্তু আমরা চাই উল্টো। সন্তানের ভালো বুঝতে গিয়ে আমরা উল্টো ক্ষতি করে ফেলি। এইটা যাচাই করিনা তার সেইটা পছন্দ হবে কিনা? আমি কি বুঝাতে চেয়েছি আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন? আপনার যেমন আপনার ছেলেকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে আমাদেরও হচ্ছে। বরং আমাদের একটু বেশিই হচ্ছে।কারন আমাদের সমাজে ছেলেদের দোষটাকে দোষ বলে মনে করেনা। কিন্তু মেয়েদের বেলায়? উঠতে বসতে কথা শুনায়ে দ্বিধাবোধ করেন না। কথা শুনতে শুনতে এমন অবস্থা হয় শেষ পর্যন্ত আত্ত্বহত্যা করতে মেয়েটা দুইবার ভাবেনা। তাই আমাদেরও মেয়েটাকে নিয়ে টেনশন আছে।’ কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারো বলে উঠলেন, -‘তাছাড়া আপনি যে বলছেন আপনি এই ভূল দ্বিতীয় বার করবেন না।এমন কি প্রমান আছে আপনার কাছে? আমাদের ঋতুমার সাথে উল্টাপাল্টা ব্যবহার করবেন না? কোন ভরশায় আমরা আমাদের মেয়েটাকে দিবো?’ চুপ করে রইলো আসমা রেহমান। কোনো জবাব নেই তার। সত্যিই তো। কি এমন প্রমান আছে তার কাছে? কথার যুক্তিতে পুরোদমে হেরে গেছেন তিনি। পাশে বসে আছেন রফিক রেহমান। কিছুক্ষন আগেই কল করে ডাকা হয়েছে তাকে। সব শুনে স্ত্রীকে চুপ থাকতে দেখে পাশ থেকে বলে উঠলো, -‘ বেয়াই সাহেব। আমরা সত্যি খুবই লজ্জিতো পুরো ব্যাপারটা নিয়ে । তবে একটা মানুষ যখন তার ভূল বুঝতে পারে তখন দ্বিতীয় বার নিশ্চয়ই সে ভূলটা করবেনা। আমরা আসমার কার্যকলাপে সত্যিই দুঃখিতো। আমার অনুপস্থিতিতে ওরা এসব কাজ করে বেড়াবে সত্যিই অভাবনীয়। এখন আপনাদের ইচ্ছা। আপনাদের সিদ্ধান্তই আমরা মেনে নিবো।’
সব শুনে শাহজাহান সাহেব বলে উঠলেন, -‘বেশ। আমি তাহলে আমার মেয়ে দিবো। কিন্তু হ্যা? আমার মেয়ের যদি এতোটুকুও সমস্যা হয় তাহলে এর ফলাফল কতোটা ভয়াবহ হবে তা আপনাদের ধারনার বাহিরে। ‘ আসমা রেহমান যেনো প্রাণ ফিরে পেলেন। খুব বাঁচা বেচেঁ গেছেন তিনি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হাসি ফুটে উঠলো মুখে। যেই পাপ করতে যাচ্ছিলেন আল্লাহর অশেষ মেহেরবানে বেচেঁ গেছেন তিনি। ড্রইংরুমে বসে আছে সবাই। একরকম খোশগল্প করে বেড়াচ্ছেন। রফিক রেহমান উঠে গিয়ে শাহজাহান সাহেবের সাথে বুক মিলিয়ে, -‘তবে তাই কথা রইলো বেয়াই সাহেব। আমরা আমাদের বউমাকে নিয়েই ফিরছি।’ -‘ হ্যা তাই।খাওয়া শেষ করেই যাবেন আপনারা তার আগে নয়।’ ঝগড়া বিবাদ কেইস মামলা বরাবরই শাহজাহান সাহেবের অপছন্দনীয়। যদি মিলেমিশে সমাধানে আসা যায় তো এসবের কি দরকার। খুব ঠান্ডা মাথায় পুরো ব্যাপারটা সামলে নিয়েছে দুভাই। আগে থেকেই পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা হয়েছিলো অফিসে।তাই খুব অল্প সময়েই সমাধান করতে পেরেছেন। -‘ছাড়ো আমাকে।’ দুইহাতে আরো জড়িয়ে, -‘এতোদিন পরে বউকে কাছে পেলে কোনো বেটা নিশ্চয়ই হাত গুটিয়ে বসে থাকবেনা ডিয়ার।’ সীমান্তের দিক তাকিয়ে, -‘একটু ও কি বিবেকে বাঁধেনা তোমার? কেমনে এতো নরমাল বিহেভ করো?’ -‘ নরমান ভাবো তো সব নরমাল হে সুইটহার্ট। নীল শাড়ি পরবে আজকে। নীলরঙে রঙিন হবে আজ। পুরো ঘর জুড়ে তোমার পছন্দের সব থাকবে। নীল চুড়ি, নীল শাড়ি, খোলা চুল, কপালে নীল টিপ, আর আমি? নীল পাঞ্জাবী পরে দুজন একসাথে রঙিন হবো আজ রাতে। ‘ -‘আপনার’ঋতুর মুখে আপনি শুনে ঋতুকে কামড়ে ধরে সীমান্ত। -‘ আহহহ!’ -‘ আরেকবার বলো। ‘ -‘ভালোবাসা না দোকানে কিনা পাঁচ টাকার মোয়া না যে আমি চাইলাম আর পাইলাম। খুব সাধনা করে পেতে হয়। খুব সাধনা। প্রতিটা রাত অপেক্ষার প্রহর গুনেছি হয়তো তুমি কল দিবে। পুরো ব্যাপারটা গুছিয়ে নিবে কিন্তু না দাওনি। নিজের উপর নিজের বিশ্বাস হারানোর যন্ত্রনা তুমি বুঝবেনা। তবে হ্যা এখন বুঝবে। যখন তোমার সামনে একটা জীবন্ত লাশ ঘুরে বেড়াবে। যার কোনো অনুভূতি নাই। কোনো চাওয়া নাই পাওয়া নাই কোনো কিছুই নাই তার। আমার যন্ত্রনাটা হারে হারে টের পাবে তুমি। আনন্দ সবাই পাবে শুধু তোমাকে ছাড়া। মনে রেখো তোমাকে দেখে। শুধু তোমাকে দেখেই তোমার হাতে তুলে দিয়েছিলো আমাকে। তোমার পরিবারের হাতে নয়।আমি যথেষ্ট ম্যাচুয়েড পার্সন। ভেবোনা আমি তোমাকে অবহেলা করবো। আমি ততোদিন তোমার সন্নিকটে আসতে পারবোনা যতদিন না তোমাদের করা ব্যবহার গুলো ভূলতে পারছি।’ বলেই সীমান্তের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে পা বাড়ালো ঋতু।অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সীমান্ত। এই কি সেই মেয়ে? যে কিনা তার সাথ লজ্জায় কথা বলতে পারতোনা? এতোটা পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব? মা এমন কি করেছে যে পাথরের মতো কঠিন করে নিয়েছে নিজেকে? তবে কি মা কিছু আড়াল করছে? নরমালি যে কথা মা তাকে বলেছে তাতেতো তেমন কোনোকিছুই আসেনা।কি হয়েছে ঋতুর সাথে? কেনো এই কঠিন রুপ? চোখে ভেসে উঠছে ঋতুর সাথে প্রথম দেখা হওয়ার সময়টা। কতোটা লজ্জাবতী ছিলো তার ঋতু। কি লজ্জাটাই না পেয়েছিলো সেদিন।মেয়েরা এতোটাও লজ্জাবতী হয় সীমান্ত সেদিনই জেনেছিলো। যখন সে লজ্জাবতী ঋতুকে দেখেছিলো। জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রেজুয়েন্ড প্রাপ্ত সীমান্ত।বেশ মাস্তি করে বেরিয়েছে জীবনের সাতাশটি বছর।এবার তাকে সংসারের হাল ধরতে হবে। বাবা মায়ের আদরের সন্তান। তারা কিছু না বললেও এই বয়সে বাবাকে এতো প্রেশার নিয়ে কাজ করতে দেখে নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনেহয়। তাই বাবার বিজনেসে জয়েন করার জন্য পেপারসগুলো নেয়ার জন্যই ভার্সিটিতে আসা। সীমান্ত, নিয়াজ রনি, নিরব সবাই মিলেই এসেছে। অনেকদিন পর বন্ধুদের পেয়ে খোশগল্প খুব ভালোভাবেই জমে উঠলো। হঠাৎ করেই সবাই স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার কর্মকান্ডে। চলবে,,,


( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???
https://www.facebook.com/nishe.ratri.9809

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে