ধোঁকা part-3+4

0
2936

#ধোঁকা
Tanjina Akter Misti
part-3+4

আমাকে খাইয়ে দিয়ে সোফায় শুয়ে পরল। আর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
আমি – তুমি সোফায় শুলে কেন এখানে আস।

আদি – তোমার সাথে শুতে যাব আমি। চুপচাপ ঘুমিয়ে পর কাল থেকে অন্য রুমে শুবে।

আমি – কেন অন্য রুমে শুব আমি এখানে থেকে কোথাও যাব না। আর তুমি ও আমার সাথে ঘুমাবে।

বলে উঠে গিয়ে দাড়ালাম আদির সামনে,,, কি হলো আস। খাটে আস তুমি আমার হাজবেন্ট তোমাকে আমার সাথেই ঘুমাতে হবে। ভালো না বাসলে ও।

আদি আমার কথা কানে না নিয়ে চোখ বুজে শুয়ে পরলো। আমি নিরব ভাবে তাকিয়ে দেখছি কি করা যায়। বাথরুমে গিয়ে পানি এনে আদির শরীরের ঢেলে দিলাম। হঠাৎ এমন হওয়ায় চিৎকার করে উঠে দাড়াল। আমি তো হেসেই শেষ আমার হাসি দেখে রেগে তাকিয়ে।

আদি- এটা কি করলে তুমি, আমি এখন ঘুমাবো কোথায়। অন্য রুম ও অপরিষ্কার যে সেখানে যাব। তোমার জন্য এগুলো হয়েছে তুমি নিচে শুবে আর আমি খাটে।

কথাটা বলেই খাটে শুয়ে পরলো। আমি ও খাটের দিকে এগিয়ে গেলাম।

আদি- একদম খাটে আসবে না। নিচে অথবা ভেজা সোফায় শুয়ে পর। তুমি নষ্ট করেছো এখন তুমি কাজ করো।

আমি আদির কথা কানে না তুলে খাটে শুয়ে পরলাম।
আমাকে শুতে দেখে আদি উঠতে লাগল আমি ওর হাত টেনে ধরে রাখলাম।

আমি – প্লিজ আদি যেও না। আমার না খুব খারাপ লাগছে সত্যি অনেক খারাপ লাগছে। তুমি আমাকে ধোঁকা দেবো আমি এখন ও বিশ্বাস করি নি। এগুলো সব মিথ্যা তাই না বলো না সব মিথ্যে তুমি আমাকে ই ভালোবাস।

আদি- সব সত্যি মেঘনা। আমি সত্যি তোমাকে ভালবাসি না।

আমি – কখনো না তুমি আমাকে ঠকাতে পার না। আমি তোমার জন্য পরিবারের সবার বিরুদ্ধে গিয়েছি। কেন এমন করলে ভাল না বাসল কেন ঠকালে বলো প্লিজ।

আদি- বলব কিন্তু এখন না।

আমি – এখন বলো প্লিজ কি এমন কারণ যার জন্য আমার জীবন টা নষ্ট করে দিলে।

আদি- তোমাকে কথা দিতে হবে একটা।

আমি – কি কথা আমি সব দিতে রাজি তবুও বলো আমার কি অপরাধ যার জন্য আমাকে এভাবে ঠকালে।

আদি- এখন আমি কিছু বলব না মেঘনা। যেদিন তুমি সব জানবে সেদিন আমার লাইফ থেকে তোমাকে চিরদিনের জন্য চলে যেতে।

আমি – আদি, এমন একটা কথা তুমি বলতে পারলে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাব। এটা কখনো না তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না প্লিজ অন্য কিছু বলো। আর আমি কোথায় যাব বলো বাড়িতে কেউ আমাকে উঠতে দেবে না। এখন তুমি ছাড়া আর কে আছে আমার।

আদি- তাহলে আমি কিছু বলতে ও পারবো না। যেদিন যেতে পারবে সেদিন শুনতে এসো।

কথাটা বলে উঠতে লাগল।

আমি – আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আদি আমি একটু ঘুমাতে চাই। এতো শক আমি নিতে পারছি না। তোমার বুকে একটু ঘুমাতে চাই।

বলে আদির বুকে মাথা রাখলাম। প্রথমে উঠতে চাইলে ও পরে আর উঠে নি। আমি কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না।

সকালে
নিজেকে মনে হচ্ছে কেউ বেধে রেখেছে তাকিয়ে দেখি আদির বুকে আমি। আর সে আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। এটা দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো কাল তো আমার সাথে শুতেই চাইলো না আর এখন এভাবে ঘুমাচ্ছে।

মাথাটা উচু করে মুখের দিকে তাকালাম কত মায়াবী লাগছে দেখতে। আমি তো এটাই চাইছিলাম সকালে ঘুম থেকে আগে আদির মুখ দেখবো তা আমার পূরণ হয়েছে। কিন্তু কি কারণ আছে যার জন্য আমার সাথে আদি এমন করছে। আমাকে জানতেই হবে।

চলবে…….

#ধোঁকা
#Tanjina_Akter_Misti
part-4
কিছুক্ষণ আদির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ওর কপালে একটা কিস করলাম। সাথে সাথে মনে হলো ভূমিকম্প হলো আর আমি খাট থেকে নিচে পরে গেলাম। কি হলো কিছু বুঝতে পারলাম না। ওফ মাঝায় ব্যাথা পেয়েছি।

উপরে তাকিয়ে দেখি আদি আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ এতো রাগের কি হলো বুঝলাম না আমি অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি আদির দিকে। রাগ মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে আছে।

আমি – কি হয়েছে আদি তুমি আমাকে এভাবে ধাক্কা দিলে কেন।

আদি- তো ধাক্কা দেবো না আদর করবো নাকি কোলে বসিয়ে। তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে টাচ করার।

আমি – মানে কি বলতে চাইছো তোমাকে আমি টাচ করতে পারবো না।( অবাক হয়ে)

আদি- না

আমি – কেন তুমি আমার স্বামী। আমার পুরো অধিকার আছে তোমাকে টাচ করার।

আদি- হুম আছে কিন্তু আমি তোমাকে সেই অধিকার দেয় নি। আর দেবো না আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি কিছুদিন পর তাকে বিয়ে করবো। তোমাকে শুধু কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি বিয়ে করেছি। খুব তারাতারি তোমাকে ডির্বোস দিয়ে নিশি কে বিয়ে করবো। তাই আমার দেখে দূরে থাকবে।

কথাটা বলেই আদি ওয়াশ রুমে চলে গেল। আমার দিকে ফিরে ও তাকাল না এতোটাই ঘৃণা করে। আর কি বলল নিশি কে ভালোবাসে কে এই নিশি। সেদিন রাতে যাকে দেখিছিলাম সেই কি নিশি। এভাবে বলতে পারলো অন্য মেয়েকে ভালোবাসার কথা। আর কি বলল ডির্বোস দেবে আমাকে না এটা কিছুতেই হতে দেবো না আমি কখনো ডির্বোস দেবো না।

শত অপমান করুক কষ্ট দিক আমি আদিকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। আমাকে খুজে বের করতে হবে কি কারণে এতো ঘৃণা আদি মনে আমার জন্য। বাড়ির কথা খুব মনে পরছে মা, বাবা ভাইয়া সবাই কেমন আছে। সবাই আমাকে হয়তো ঘৃণা করছে। আর ভালোবাসবে না কেউ সবাইকে পর করে চলে এসেছিলাম যার হাত ধরে বিশ্বাস করে সে ও তো আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আদি আমাকে বাড়ি থেকে তারিয়ে দিলে কোথায় যাব আমি বাড়িতে যাওয়ার মুখ নেয়। কারো সামনে যেতে পারবো না। খুব তারাতারি সব জানতে হবে।

পুরো শরীর ব্যাথা হয়ে গেছে উঠতে ও পারছি না। আগে আমি একটু ব্যাথা পেলে আদি পাগলের মতো হয়ে যেতো। আর এখন নিজেই ব্যাথা দিচ্ছে। কেন এতো বদলে গেলে তুমি আদি অাবার আগের মতো হয়ে যাও না।

আদি- কি হলো এখন ও সেখানেই বসে আছ কেন। যাও ফ্রেশ হয়ে রান্না করো আমি অফিসে যাব। আর একদম নেকা কান্না কাদবে না আমার অসহ্য লাগে এসব।

আমি – আমার কান্না তোমার কাছে অসহ্য লাগছে।

আদি- হ্যা

আমি – ভালো, আর কি যেন বললে রান্না করতে তুমি ভালো করে জান আমি রান্না করতে পারি না।

আদি- পারো না বললে হবে না। আমার এখন ক্ষিদে পেয়েছে যাও তারাতারি রান্না করো। দরকার পরলে অনলাইনে দেখে নাও তবুও তোমাকে ই রান্না করতে হবে।

আমি – আমার পুরো শরীর ব্যাথা করছে আদি। আমি রান্না করতে পারবো না। তুমি অন্য কাউকে বলো।

আদি- অন্য কাকে বলবো। এখানে আমি আর তুমি ছাড়া কেউ নেই। সো তোমাকেই রাধতে হবে।

আমি – কেউ নেয় মানে তাহলে কাজ করবে কে।

আদি- কেন তুমি করবো।

আমি – আমি করবো।

আদি- হুম তুমি তারাতারি যাও নয়লে আমি তো বাইরে গিয়ে খেতে পারবো কিন্তু তুমি কি খাবে। নিজের খিদে লাগলে রান্না করো।

বলেই আদি রেডি হতে লাগল। আমি কষ্ট করে উঠে বাথরুমে গেলাম গোসল করে পরলাম মহা বিপদে এখন কি পরবো আমার তো এখানে জামা কাপড় ও নেয়। শীত করছে কিন্তু বের হতে পারছি না আদি রুমে আছে।

আদি- কি হলো আজ কি আর বের হবে না নাকি। এতোক্ষন লাগে কারো আমি কিন্তু বসে আছি না খেয়ে যাবো না। তারাতারি আস রান্না তোমাকে করতেই হবে।

আমি – আমার ড্রেস গুলো আনিনি প্লিজ দেন না নয় বের হতে পারবো না।

আদি- কি মেয়ে তুমি কেউ ড্রেস ছাড়া গোসল করে।

আমি -প্লিজ দাও না আমার মনে ছিল না।

আদি- দরজা টা খুল

আমি – দরজা খুলবো কেন। আপনি না আমাকে বউ বলে মানেন না তাহলে এটা কিন্তু ঠিক

আদি- আহ আমার এতো তোমাকে দেখার ইচ্ছে নেই। তোমার ড্রেস নেওয়া জন্য দরজা খুলতে বলছি।

আমি – ওহ

দরজা খুলে একটু ফাক করে হাত বের করে জামা নিলাম।

কিছুক্ষণ পর

আদি- এতো সময় লাগে রান্না করতে। এতো অর্কমার ঢেকি তোমার আগে কাউকে দেখি নি।

আমি – নিজে রান্না করে খান তাহলে আমাকে দিয়েছেন কেন রাধতে।

অনেক কষ্ট রুটি আর ডিম বাজলাম জীবনে ফাস্ট রান্না করলাম। রুটিটা পুরে পুরে গেছে কিন্তু রান্না করেছি এই অনেক। হাতে ছ্যাকা ও খেয়েছি।
খাবার নিয়ে আদির সামনে রাখলাম। অনেক খুশি হয়েই গেলাম কিন্তু খুশি বেশিক্ষণ থাকলো না।

আদি- এগুলো কি সব তো পুরে গেছে এসব কি খাওয়া যায়।

বলেই সব ফেলে দিল। আমি ভেবেছিলাম আমার রান্না যেমনি হোক আদি মজা করে খাবে। কিন্তু আমার সমস্ত বিশ্বাস ভেঙে ফেলে দিল। তারপর চলে গেল।

আমি সব আবার উঠিয়ে পিলেটে রাখলাম। চোখের পানি বাধ মানছে না। এতো অবহেলা মেনে নেওয়া যায়। খিদে পেয়েছিল এখন আর খাওয়ার ইচ্ছে ও নেয়।

রুমে এসে শুয়ে পরলাম অনেক খারাপ লাগছে একটু ঘুমানো দরকার।

বিকেলের দিকে ঘুম থেকে উঠে এখন আর নরতে পারছি না।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে