ধোঁকা part-1+2

0
5330

#ধোঁকা
#Tanjina_akter_misti
part-1+2

৩ বছর রিলেশন করে বিয়ে পর এমন একটা দৃশ্য চোখের সামনে দেখবো কল্পনাতে ও ভাবি নি। নিজের বর অন্য একটা মেয়ের সাথে এমন ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখবো সত্যি ভাবি নি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যাকে এতো ভালবেসে পরিবারের সবাই কে ছেড়ে চলে এসেছি সে আমাকে এভাবে ঠাকালো কিন্তু কেন। ও তো বলতো আমাকে অনেক ভালোবাসে যদি ভালোই বাসে তাহলে এগুলো কি।

সত্যি কি ভালোবাসতো নাকি সব অভিনয় না আর ভাবতে পারছি না। আর দাড়ালাম না নিচে নেমে এলাম।

কাল আমি আদি জন্য পরিবারের সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছি। বাড়িতে সবাইকে আদির কথা বলেছিলাম কিন্তু কেউ আমাদের মেনে নেয় নি। আমাকে সবাই বলেছে আদি ভালো না ওকে যেন বিয়ে না করি। কিন্তু আমি ওকে এতোটাই ভালো বাসি যে সবার কথা না মেনে আদির মিথ্যা ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছিলাম তাই তো আদির এক কথায় সবাইকে ছেড়ে ওর হাত ধরে চলে আসি।

আজ আমরা বিয়ে করেছি কিন্তু রাতে আমার জন্য এমন একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছি সত্যি ভাবতে পারি নি। সবার বিরোধীতা করে যার কাছে আসলাম সে আমাকে এভাবে ঠকালো।

কথা গুলো ভেবে নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইছে কেন আমি সবার বিরুদ্ধে গিয়ে ওকে বিশ্বাস করলাম। ভালোবাসার মানুষকে অন্য একটা মেয়ে সাথে দেখে বুকের ভেতরটা জলে পুরে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।

আজকের এই রাত নিয়ে কতোই না সপ্ন দেখিয়েছিলে। শত সপ্ন কেন মাটি করে দিলো কি দোষ আমার কথা গুলো ভাবছি আর কান্না করছি হঠাৎ চোখ গেল খাটের ঘরে ময়লার ঝুরিতে মনে হচ্ছে গিফট।

আমি কাছে গিয়ে ঝুড়ি উপর করে দিলাম আর সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে থেকে চিঠি আর গিফট প্যাকেট বের হলো যা দেখি আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেল। এগুলো তো আমারি দেওয়া কিছু দিন আগে যখন আমাদের রিলেশন এর তিন বছর হয়েছে তখন দিয়েছি দুইটা গিফট।

ও একটা গিফট ও খুলে দেখে নি সব তো আমি যেভাবে দিয়েছিলাম সেই ভাবেই আছে। যত গুলো চিঠি দিয়েছিলাম সব সেই ভাবেই ভাজ করা তার মানে এগুলো ও খুলে দেখি নি।

যত দেখছি তত মনে হচ্ছে আদি আমাকে একটু ভালোবাসে না যদি ভালোবাসতো তাহলে এগুলো এভাবে ফেলে রাখতে পারতো না। তাহলে কি আদি কোন দিন আমাকে ভালোবাসে নি। ভালো না বাসলে এতো দিন এতো ভালোবাসি বলতে সেগুলো কি ছিলো।

তিন বছর কি কম আমার তো কখনো মনে হয় নি ও আমাকে ভালোবাসে না। আমার কতো কেয়ার করতো ওই তো আমার পেছনে ঘুরতে আমি মেনে নিছিলামনা বলে সুসাইড ও করেতে গিয়েছি সব কি অভিনয় ছিলো।

ভালো না বাসলে বিয়ে কেন করলো ওই মেয়েটাকেই যদি ভালোবেসে থাকে ওকেই বিয়ে করতো আমায় কেন করলো।

বসে কান্না করতে লাগলাম এর উওর দিতেই হবে কেন আমার সাথে এমন করলো কেন। কি অপরাধ এর জন্য এমন করছে ওকে বলতেই হবে।

আমার ভালোবাসা নিয়ে ছিনিমিনি কেন খেললো।

হঠাৎ দরজা খুলে কেউ ভিতরে প্রবেশ করলো আমি চোখ মুছে পেছনে তাকালাম।

আদি এসেছে আমাকে এভাবে দেখে একটু অবাক হলো না স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। কিছু না বলে বাথরুমে চলে গেল। আমি ভেবেছিলাম আমাকে এভাবে নিচে বসে কাদতে দেখলে হয়তো কিছু বলবে কিন্তু ওর স্বাভাবিক চাহনি দেখে মনে হচ্ছে ও এটাই চাইছিল।

এটা ভেবে আর ও কষ্ট লাগছে কেন এমন করছে। আমি উঠে দাড়ালাম আদি বাথরুমে থেকে ড্রেস চেজ্ঞ করে এসেছে এসে আমার দিকে না তাকিয়ে খাটের দিকে গেল।

ওকি শুতে যাচ্ছে মনে হয় আমার সাথে কোন কথা বলছে না আমি নিজেই ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম।

আমি – আদি তুমি কোথায় ছিলো এতোক্ষন।

আদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার হাত ধরে সামনে থেকে সরিয়ে দিলো। আমি আবার গিয়ে দাড়ালাম।

আমি -কি হলো বল। আমি তোমাকে কিছু জিগ্গেস করছি। কার সাথে ছিলে এতোক্ষন আমাকে এখানে একা রেখে। তুমি তো আমায় ভালোবাস তাহলে কেন এমন করছো। আর আমার দেওয়া চিঠি গিফট সব কিছু ফেলে দিছো কেন তুমি তো বলেছিল ওই গুলো যত্ন করে রেখেছো।

আদি- যা খুশি তাই করছি আর আমি তোমাকে থাক এখন প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে সামনে থেকে সরো তো।

আমি – কি বললে তোমার ঘুম পাচ্ছে। আর আমি যে কষ্ট মরে যাচ্ছি কি হয়েছে তোমার বলো না প্লিজ তুমি তো আমাকে ভালোবাস তাই না তাহলে এসব কেন করছো। তোমার জন্য আমি আমার পরিবারের সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছি।

আদি – তো আমি কি করবো। আমি কি তোমাকে জোর করেছি না।

আমি – জোর করবে কেন আমি তো তোমাকে ভালোবাসি তাই এসেছি। কিন্তু তুমি কি আমাকে ভালোবাস।

আমার কথায় আদি এমন কথা বলবে আমি সত্যি ভাবি নি। মুখের উপর এই কথাটা বলতে পারলো কিভাবে বললো তিন বছর রিলেশন করে যাকে বিশ্বাস করে এখানে এসেছি তার কাছে এমন কথা শুনে আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। ঠাস করে নিচে পরে গেলাম তার পর আর কিছু মনে নেয়।

চলবে,,,

#ধোঁকা
#Tanjina_Akter_Misti
part-2
জ্ঞান ফিরে নিজেকে অন্ধকার ঘরে পেলাম। ভালো করে বুঝার চেষ্টা করছি আমি কোথায় আছি। এটা তো সেই রুম যেখানে আদি নিয়ে এসেছে অন্ধকারের জন্য বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিলো। চারপাশে আদি খুজছি কোথাও নেয় আমি তো আদির সাথে কথা বলতেছিলাম।

ঘর অন্ধকার আমাকে একা রেখে আবার কোথায় গেছে ও তো তখন বলছিলো আমায় ভালোবাসে না। ব ছিলো নাটক যা আমি সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায়। কিসের জন্য এই নাটক করলো কেন আমি কি এমন অপরাধ করেছি। কি করব কি করা উচিত কিছু বুঝতে পারছি না।

কেন এমন করছে আমার সাথে আবার আমাকে একা রেখে কোথাও চলে যায় নি। আদির মা নেয়, বাবা চট্টগ্রাম থাকে ওইখানে বিজনেস করে। ঢাকায় আদি একাই থাকে। আমরা বিয়ে করেছি সেটা সে জানে নাকি আমি জানি না।

আমি মেঘনা। আমরা মধ্যবিও পরিবারের বাবা মা আর ভাই। আমি ছোট্ট। বাবা একজন সরকারি চাকরি জীবি ছিলেন র্বতমানে অবসর আছেন। মা হাউজওয়াইফ ভাই পুলিশ অফিসার।

বাড়িতে সবাইকে যেদিন জানিয়েছিলাম।

সকাল থেকে আদির কোন কল আসেনি সারা দিন অনেক বার ট্রাই করেছি। প্রচুর চিন্তা হচ্ছে কেন ফোন দিচ্ছে না আর আমার ফোন কেন রিসিভ করছে না। এইসব চিন্তা করতেছি। রাতে ড্রয়িং রুমে বসে এইসব ভাবছি বাড়ির সবাই অবশ্য ভাবছে আমি এমন করছি কেন সারা দিন কিছু খায় ও নি।

মা অনেক বলেছে কি হয়েছে আমার আমি কিছু না বলেছি। ভাইয়া অফিস থেকে এসে আমাকে গুমড়া মুখ করে বসে থাকতে দেখে অনেক কিছু জিগ্গেস করেছে।
আমি কিছু বলিনি আর বলবো কি করে ভাইয়া জানলে অনেক বকবে আমি জানি।

চিন্তা করতে করতে রুমে এসে বসলাম। ওমনি ফোন বেজে উঠল আমি তো দ্রুত ফোন নিয়ে নিলাম হাতে। হুম এটা আদির কল রিসিভ করে তো কান্না করে দিলাম।

আমি – আদি তুমি আমাকে ভালোবাসনা তাই না। ভালোবাসলে কি আজ সারা দিন আমাকে ফোন না দিয়ে থাকতে পারতে।( বলেই আবার কাদতে লাগলাম)

আদি- ওফ মেঘনা তুমি এতো ছেলেমানুষি কেন বল তো। আর কখন বললাম তোমায় ভালোবাসি না।

আমি – আমি জানি ভালো বাসলে কি কথা না বলে থাকতে পারতে। আমার ফোন ও রিসিভ করো নি।

আদি- আমি অনেক বিজি ছিলাম। তাই তোমার ফোন রিসিভ করি নি। এতে ভাল না বাসা কি হলো।

আমি – তোমার জন্য আজ সারা দিন আমি না খেয়ে আছি। তুমি ফোন রিসিভ করো নি বলে খাই ও নি সবাই বুঝেছে আমার কিছু হয়েছে। তুমি আর কোন দিন এমন করো না কিন্তু।

আদি – আচ্ছা আর না খেয়ে থাকা টা উচিত না কিন্তু। যাও তারাতারি খেয়ে আস। পরে কথা বলবো।

আমি – না এখন খাবো না। আগে আই লাভ ইউ বল।

ওই পাশ থেকে কিছু শুনার আগেই কারো চিৎকার শুনলাম। ভয়ে আমার আত্মা শেষ এটা তো ভাইয়ার কন্ঠ হাত থেকে ফোন পরে গেছে পিছনে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া আগুন চুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

ভাইয়া কি শুনে ফেলেছে আববু আম্মু ও ভাইয়ার চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে। ভাইয়া আমার কাছে এসে ঠাস করে গালে চর বসিয়ে দিল। আমি অবাক হয়ে ভাইয়া মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া এতো সহজে মারে না আমাকে খুব বড় কোন অন্যায় করলে এমন জোরে মারে।

তার মানে ভাইয়া সব শুনেছে। চর খেয়ে যে ব্যাথা পেয়েছি তার থেকে বেশি ভয় লাগছে ভাইয়া সব শুন ফেলেছে বলে।

ভাইয়া- কার সাথে কথা বলছিলি বল। তার জন্য না খেয়ে আছিস। কি হলো কথা বলছিস না কেন তোমাকে আদর দিয়ে বাদর তৈরি করা হয়েছে। নয়লে এইসব করতে পারতে না।

আমি চুপ করে চোখের জল ফেলছি আর ভাইয়া আমাকে কথা শুনিয়েই যাচ্ছে। আববু এসে জিগ্গেস করছে কেন এমন করছে।

ভাইয়া- তোমার মেয়ে কোন এক ছেলে কে আই লাভ ইউ বলছিল ফোন এ। আর তার জন্য নাকি না খেয়ে বসে আছে।

সবাই মিলে আমাকে এত গুলো কথা শুনিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে ফোনটা ও নিয়ে গেল। এতো কথা গুলো শুনেও আমার খারাপ লাগে নি। কষ্ট লাগছিলো ফোন নিয়ে গিয়ে ছিলো বলে।

দুই দিন আদির সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। ফোন কোন ভাবে নিতে পারছিলাম না।

হঠাৎ কারো কথায় বাস্তবে ফিরলাম তাকিয়ে দেখি আদি সাথে একটা লোক মনে হচ্ছে ডাক্তার তাহলে আদি কি ডাক্তার আনতে গিয়েছিল। আমাকে যদি ভালো না বাসে তাহলে ডাক্তার আনতে কেন গিয়েছিল।

ডাক্তার আমাকে দেখে বলল না খেয়ে থাকার জন্য জ্ঞান হারিয়েছিলাম। তারপর ডাক্তার চলে গেল। আদি ও সাথে গেল। সকালে বাড়ি থেকে না খেয়ে বের হয়ে ছিলাম। এখানে আসার পর আদি আমাকে একবার খেতে বলেছিল আমি না করেছিলাম আর খাওয়া হয় নি।

একপর আদি হাতে খাবার নিয়ে এলো আমার সামনে খাবার রেখে খেতে বলল।

আমি – আমাকে ভালো না বাসলে বিয়ে কেন করলে। আবার এখন সেবা যত্ন কেন করছো। ওই মেয়ে কে যাকে নিয়ে তুমি ছাদে ছিলে আর সে গেল কোথায়।

আদি- তোমার কোন কথার উওর আমি দেবো না। শুধু এই টুকু জেনে রাখ আমি তোমায় ভালোবাসি না। আগে যা ছিলো সব নাটক আর সেই নাটক টা করেছি তোমাকে বিয়ে করে কষ্ট দেওয়ার জন্য।

আমি – আচ্ছা কষ্ট না দিয়ে খাওয়াচছ কেন। কষ্ট দাও আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু কেন শিকার করছো না।

আদি-এটা তোমার ভুল ধারনা। তা খুব শিগগিরই বুঝবে আর খাওয়াচ্ছি কেন না খাওয়ালে তোমাকে শাস্তি দেবো কি ভাবে।

বলেই জুড় করে খাওয়াতে লাগল।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে