দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 13

0
989

……………….#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
……………….মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
…………………………PART:13…………………………

এলিনা আবার কাইরোকে প্রশ্ন করলো,”আমার রক্ত খাওয়ার নেশাটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমাকে রক্তের নেশাটা ফেরাতে কি করতে হবে?”
একটু মুচকি হাসলো কাইরো। গম্ভীরতার সাথে বললো, “ঠিক সময়ে আবার ফিরে পাবে।” কথাটা বলেই একটা আলোকীয় মায়া ছুড়ে অন্ধকারে বিলিন হয়ে গেলো কাইরো। মায়াটা শিকলে গিয়ে পড়ার সাথে শিকলের মায়াটা কেটে গেলো। এলিনা ভাবলো হয়তো শিকলটা খুলে গেছে কিন্তু পরে আন্দাজ করতে পারলো যে শিকল খুলেনি বরং শিকলের মায়াটা নষ্ট করা হয়েছে।
এদিকে মিউরিসকে নিয়ে আসা হলো। সবাই মিউরিসকে দেখে খুব খুশি হলো কিন্তু পরে যখন তার পা টা ভাঙ্গা দেখলো তখন সবারই প্রায় কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা। আনাহী এগিয়ে গেলো কিছু করার জন্য। দেখে শুনে বললো,”কেটে ফেলে দিতে হবে। কিছুই করার নেই।”
সবাই আনাহীর কথা শুনে কেঁদে দিলো। আনাহী বললো,”যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে মিউরিসকে কোনো হসপিটালে নিতে হবে নাহলে আরও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
সবাই জঙ্গল থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মিউরিস ব্যথায় লুটিয়ে গেছে। ব্লেডিকো অনেকটাই সুস্থ্য। সবাই রেডি চলে যাওয়ার জন্য।
রওনা দিলো সবাই কিন্তু ট্রুডো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। থামলো সবাই। ভিরেক্স এগিয়ে গিয়ে বললো,”কিরে, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল তাড়াতাড়ি। ”
ট্রুডো বললো,”তোরা যা, আমাকে ছেড়ে দে। আমি যেতে পারবো না। ”
বুঝতে পারলো সবাই ট্রুডো কি বলতে চাইছে। আনাহী এগিয়ে গেলো ট্রুডোকে বুঝানোর জন্য কিন্তু আনাহী কিছু বলার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,”যে আমাদেরকে বাঁচালো তার কথাটা একবারও চিন্তা করলিনা তোরা? কতোটুকু স্বার্থপর হলে এমন করা যায় বলতে পারবি?”
লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলো সবাই। ব্লেডিকো ধীরে ধীরে বললো,”কিছু করার নেই। আমরা চাইলেও এখন তাকে বাঁচাতে পারবো না। তাছাড়া এলিনা তো নিজেই ভ্যাম্পায়ার, সে নিজেকে বাঁচাতে পারে। আর কি চাই?”
ট্রুডো মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠলো,”না, সে ভ্যাম্পায়ার ঠিক আছে কিন্তু সে চাইলেও নিজেকে বাঁচাতে পারবে না। কারণ সেই কালো ছায়াটার (কাইরো) জন্য সে মরতেও পারে। খুব চতুর আর ধুর্ত কাইরো। আমার মনে হচ্ছে কিছু পাওয়ার জন্য সে এলিনাকে ব্যবহার করছে।”
এলিনার প্রতি ট্রুডোর এমন ভাবনা দেখে আনাহী হিংসাত্মকভাবে বললো,” একজন অপরিচিত মেয়েকে নিয়ে আমাদের না ভাবলেও চলবে। তাছাড়া সে তো মানুষ নয়, একজন ভ্যাম্পায়ার। আমরা নিজেদেরকে বিপদে ফেলে কেন তাকে বাঁচাতে যাবো?”
আনাহীর কথা শুনে রেগে গেলো ট্রুডো। যতটুকু যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো আনাহীর কথা শুনে ততটুকু ইচ্ছাও নষ্ট হয়ে গেলো ট্রুডোর। মনে শুধু এলিনার কথাই ভেসে উঠতে লাগলো ট্রুডোর। রেগে গিয়ে আনাহীকে বললো,”আমিও তো ভ্যাম্পায়ার ছিলাম। মেনে নিলাম আমাকে না জেনেই ভালোবেসে ফেলেছিলি, কিন্তু যখন জানলি তখন তো আমাকে ছেড়ে দিতে পারতি। কি করলি! আমাকে ভ্যাক্সিন দিয়ে ভ্যাম্পায়ার শক্তিটাকে দিয়ে দিলি এলিনাকে।”
ট্রুডোর কথা শুনে সবাই হা হয়ে গেলো। একস্বরে সবাই বলে উঠলো, “এলিনাকে!! কি বলছিস এসব? তোর ভ্যাম্পায়ার শক্তি এলিনার কাছে গিয়েছে নাকি?? ”
ট্রুডো মাথা নেড়ে রাগি কণ্ঠে বললো,”হ্যাঁ গিয়েছে শুধু তাই নয় আমার ভ্যাম্পায়ার লকেটটিও এলিনার কাছে।”
সবাই বললো,”কিভাবে?”
ট্রুডো বললো,”যখন ড্রেকইনস জেফারীর রুপ নিয়ে তাবুতে ছিলো আর আমাকে জঙ্গলে পথ দেখিয়ে দিয়েছিলো তখন আমি সেখানে গিয়ে দেখি মিউরিস সেখানে নেই। শুধু চুপাকাবরা হিংস্রভাবে এগোচ্ছে আমার দিকে। ভ্যাম্পায়ারদের দেখলে চুপাকাবরা মাথা নিচু করে দৌঁড়ে পালায়। তাই আমি ভ্যাম্পায়ার রুপে তাদের সামনে যাই কিন্তু জানতাম না যে চুপাকাবরার দল কাইরোর কথামতো চলে। তাই শুরু হলো আমার উপর চুপাকাবরার হামলা। তবে আমাকে মেরে ফেলার জন্য নয় শুধু সেই ভ্যাম্পায়ার লকেটটি নেওয়ার জন্য যাতে আমি আর উড়তে না পারি। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে উড়ে পালাতে শুরু করি আমি কিন্তু চুপাকাবরার দল উড়ে এসে আঘাত করতে লাগল আমাকে। গলা থেকে পড়ে গেলো ভ্যাম্পায়ার লকেটটি। জ্ঞান হারালাম আমি। তারপর আর কি হয়েছে সেটা জানা নেই ?”
ভিরেক্স গোয়েন্দার মতো সঠিক কথাটা বলে দিলো,”তারপর আর কি হতে পারে, লকেটটি গিয়োছে এলিনার গলায়।”
ট্রুডো বললো,”সেটা গিয়েছে বলে ততোটা আক্ষেপ নেই কিন্তু আমার ভ্যাম্পায়ার শক্তি তো ছিলো কিন্তু সেই ড্রেকইনস এর ফাঁদে পা দিয়ে আনাহী এরকম একটা ভুল করে ফেললো এটা আমি এখনো মেনে নিতে পারছি না। ”
আনাহী নিচুগলায় বললো,”আমি শুধু তোকে ভালোবাসি বলেই এমনটা করেছি। আমি চাই নস তুই আমার থেকে দূরে সরে যা। কিন্তু তোর ভ্যাম্পায়ার শক্তি এলিনার কাছে কিভাবে যাবে? তোর ভ্যাম্পায়ার শক্তি চলে গেছে তো ভ্যাক্সিন খেয়ে। ”
ট্রুডো বিরক্তির সাথে বললো,”আমাকে এমনিতেই তুই পাবি না। ভ্যাম্পায়ার থাকার কারণে যতোটুকু কাছে পেয়েছিলি এখন মানুষ হয়ে আরও দূরে ঠেলে দিলি আমাকে।
যখন আবার আমি মিউরিসকে বাঁচানোর জন্য জঙ্গলের ভেতরে যাই তখন কাইরো আমার উপর একটা মায়া প্রয়োগ করেছিলো যাতে ভ্যাক্সিন খাওয়ার পর ভ্যাম্পায়ার শক্তিটা এলিনার কাছে চলে যায়।”
ট্রুডোর কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে জঙ্গলের বাইরের দিকে দৌঁড়ে চলে আনাহী। তার পেছনে পেছনে যেতে লাগলো ভিরেক্স। অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লো ট্রুডো। ব্লেডিকো আস্তে আস্তে হেঁটে ট্রুডোর কাধে হাত রাখতেই ট্রুডো বললো, “চলে যা তোরা। এলিনাকে ছেড়ে যেতে পারবো না আমি। তাছাড়া কাইরোর উপর প্রতিশোধ নিতে হবে আমাকে৷”
ব্লেডিকো ট্রুডোর কথা শুনে কিছু মনে না করে উল্টো তাকে বুঝাতে লাগলো,”দেখ এসব করে কিছুই হবে না বরং তেরসহ আমাদের সকলের ক্ষতি। এলিনাকে আমরা পরেও বাঁচাতে পারবো। আর কাইরো তো একটা ছায়া। বিশাল শক্তি তার। একটা মানুষ হয়ে তার উপর কি প্রতিশোধ নিবি তুই? এখন চল আমাদের সাথে। এটাই ভালো হবে। ”
ট্রুডোর কোনো উত্তর নেই। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাত ধরে টানলো ব্লেডিকো। কিন্তু না, ট্রুডো মানলো না ব্লেডিকোর কথা। রেগে গিয়ে ব্লেডিকো জোরে বলে উঠলো,”এলিনা কে হয় তোর? একটা উপজাতির মেয়ে সে। দুদিনের পরিচয় তার সাথে আর আমারা? কতবছর একসাথে আছি? আমাদেরকে এভাবে ছেড়ে দিবি?”
ট্রুডোও রেগে গিয়ে ব্লেডিকোর কথার জবাব দিলো,”আমি এলিনাকে ভালোবাসি। আমি জানি না সে উপজাতি বলে কি দোষ করেছে৷ আর হ্যাঁ, আমি ছাড়া তে আর সবাই থাকছে গ্রুপে। ছেড়ে দে না আমাকে। আমাকে আমার মতো কাজ করতে দে। ”
ব্লেডিকো বললো,”ঠিক আছে। একটা সম্পর্ক যতো তাড়াতাড়ি মিষ্টি হয়ে উঠে সেটা ভাঙলে ঠিক দ্বিগুণ তিক্ত হয়। আমাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার ফল তুই নিশ্চয় পাবি। এলিনাকে ভালোবাসিস না? তোর ভালোবাসাই তোর মৃত্যুর কারণ হবে।”
কথাটা বলার পর সবাইকে নিয়ে রেগেমেগে চলে গেলো ব্লেডিকো। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো ট্রুডো। সে অনড়, যা ভাবে তাই করে সে। একবার যখন বলেছে তখন তাই করবে। ব্লেডিকোর কথা সত্য হলেও তাই করবে ট্রুডো। রয়ে গেলো জঙ্গলের মাঝে একা। চলে গেলো সবাই। শুরু হলো আরেক অধ্যায়।
..
..
..
..
..
..(চলবে…………..)
..
..
..
..
গল্পটির কাহিনীটা অনেক বড়। চেয়েছিলাম পুরোটা লিখবো কিন্তু পারবো না। শুরুটুকু দিয়েই শেষ করবো। আর মাত্র কয়েকটা পর্ব দিয়েই বন্ধ করে দিবো গল্প। গল্পটা নিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করার আশা করছি। ধন্যবাদ সকলকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে