দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 18

0
984

…………………#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
…………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
…………………………PART:18…………………………

আনাহীর রুমটা খুব গোছালো আর পরিপাটি। সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। বিছানা খালি। ভিরেক্স চারদিকে তাকিয়ে দেখল আনাহী কোথাও নেই। এবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে না খুঁজে জিনিসপত্র, আলমারি সবকিছু খুলে দেখতে শুরু করল সে।
হঠাৎ পায়ে হাঁটার শব্দ পেলো সে। থেমে গেলো। সাধারণভাবে বসে পড়ল সোফায়। দরজাটা আস্তে আস্তে খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো ভদ্র মহিলাটি। ভিরেক্স এর জন্য চা আর আনাহীর জন্য কফি রেখে বললেন, “কোথায় আনাহী?”
ভিরেক্স তাড়াতাড়ি উত্তর দিলো, “মনে হয় ওয়াশরুমে গেছে।”
ভিরেক্স এর কথা শুনে আচ্ছা বলে চলে গেলেন তিনি। তাড়াতাড়ি দরজাটা লক করলো সে। গোয়েন্দার মতো ঘরের আনাচে কানাচে খু্টিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো। মেঝেতে কান পেতে পরীক্ষা, দেওয়ালে টুকা দেওয়া কিছুই বাদ রাখলো না। অবশেষে ক্লান্ত মনে খাটের উপর বসতেই একটা শব্দ হলো। একটু চমকে দাঁড়িয়ে গেল সে। খাটের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। আরেকবার খাটে বসে পরীক্ষা করলো কিন্তু আগেরবারের মতো তেমন শব্দ পাওয়া যায়নি। শব্দটা মেঝেতে অস্ত্র বা লোহা জাতীয় জিনিসপত্র পড়ে যাওয়ার মতো ছিলো। কিন্তু রুমে তো কোনো কিছুই পড়ে যায়নি। চা-কফির কাপদুটোও ঠিকঠাক আছে। তাহলে এমন শব্দ এল কোথা থেকে? ভিরেক্স ভাবলো নিচে ভদ্রমহিলা কাজ করতে গিয়ে বোধয় কোনো জিনিস ফেলে দিয়েছে। সব চিন্তা খানিকের জন্য দূরে ঠেলে সোফায় বসে পড়ল সে। কপালে চিন্তার ঘোরে জমে উঠেছে শিশিরবিন্দুর মতো ঘাম। চোখদুটো চঞ্চল, স্থিরতা পায় না। মস্তিষ্কের কার্যকলাপ প্রায় উন্মাদের মতো। মাথায় ঘুরছে বিতিকিচ্ছিরি সব চিন্তা-ভাবনা।
অথচ পুরো রুম শান্ত। পিন পড়ার আওয়াজও শুনতে পাওয়া যাবে। এসি অন করা। ঠান্ডা হওয়া তবুও ঘেমে একসের। যে মেয়ে বাড়িতেই আসেনি তাকে খুঁজতে এসেছে তার বাড়িতে। তবুও মাত্র একটা রুমে। তবে ভিরেক্স যে ভুলভাল কাজ করবে সেটাও কিন্তু অবিশ্বাস্য। কোনো কথা না বলে চুপ করে কিছুক্ষণ বসে থাকতে লাগল সে। একদিকে চুপটি করে তাকিয়ে বসে আছে। মৃদু একটা শব্দ শুনতে পেয়েই চোখদুটো হালকা নেড়ে উঠলো। খরগোশ এর মতো কানখাড়া করে শুনার চেষ্টা করল শব্দটি। খুব আস্তে শুনা যাচ্ছে। তবুও কান পেতে শুনে শব্দের উৎসের দিকে একটু একটু করে এগোতে লাগল ভিরেক্স। এগোতে এগোতে একেবারে প্রায় খাটের নিচে চলে যাওয়ার অবস্থা। খাটের নিচ থেকেই হিল পড়ে হাটার শব্দ আসছে। শব্দটাও খুব সুক্ষ। আস্তে আস্তে খাটের নিচে যাওয়ার পরই একটা চিৎকার দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল ভিরেক্স। ড্রয়িংরুম থেকে দৌঁড়ে এলেন ভদ্রমহিলাটি। এসে দেখলেন পুরো রুম খালি। ভিরেক্স কোথাও নেই আর আনাহীও নেই। শুধু পড়ে আছে খালি চায়ের কাপটা আর কফিপূর্ণ কাপ। ভয় পেয়ে গেলেন ভদ্রমহিলা। হঠাৎ একটা তাগড়া ছেলে রুমের ভেতর থেকে কোথায় উধাও হয়ে গেল! এ নিয়ে আবার যদি একটা বড় রকমের ঝামেলা হয়! ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে চা আর কফির কাপদুটো নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

এদিকে ট্রুডো এলিনাকে হাজারো প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসার মাঝে ফেলে দিলো। ভালোবাসার মোহজালে জড়িয়ে নিলো তাকে। প্রশ্ন করল এলিনাকে, “তুমি আমাকে পছন্দ করতে?”
এলিনা মাথা নেড়ে বলল, “হুমম, সেই কলেজ থেকেই।”
ট্রুডো চালাকি করে বলল, “তাহলে তো একদিনও বললে না আমাকে। তাছাড়া আমাকে চিনতে পেরেও প্রথম যেদিন ঝর্ণাতীরে দেখা হয়েছিলো তখন ওমনভাবে আচরণ করেছিলে কেন?”
এলিনা ট্রুডোর কথার জালে বন্দি হয়ে গেল। আটকে গেল তার কথায়। অবশেষে ধীরে সুস্থ্যে বলল, ” তখন তো অন্ধকার ছিলো, তাছাড়া তুমি ওমনভাবে জঙ্গলের ভেতরে আসবে আমি ভাবতেই পারিনি। মোটকথা আমাকে স্পর্শ করার পর কেমন একটা লাগছিলো তাই তাড়াহুড়োয় ওমনভাবে বলে ফেলেছি।”
বলতে বলতে শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশ আরও সুমধুর হয়ে উঠলো। মিষ্টি মৃদু বাতাস বইতে শুরু করলো। ট্রুডোর ঘাড়ে মাথা রেখে বসলো এলিনা। চেয়ে রইলো সামনের দূরত্বে থাকা ছোট্ট অবয়বের সেই রাজ্যটির দিকে। ট্রুডো তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ আজব একটা কথা বলে উঠল, “আমি হয়তো তোমার সাথে আজীবন থাকতেন পারব না। আমি অন্যকিছুর ইঙ্গিত পাচ্ছি। আমাকে আমার পরিবারের কাছে চলে যেতে হবে।”

অবাক হলো এলিনা। বিষ্ময়ের দৃষ্টিতে ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে বলল, “কি বলছো এসব? তুমি ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে? তাছাড়া তোমার পরিবার মানে? ভ্যাম্পায়ারদের আবার কিসের পরিবার?”
ট্রুডো চুপটি করে বসে রইলো। খানিকপর নীরবতা নষ্ট করে আলতো করে বলে উঠল, “আমি চলে যাওয়ার আগেই তোমার রক্ত খাওয়ার নেশা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো। আর তোমার পরিবারের সাথে তোমাকে রেখে যাওয়ার চেষ্টা করবো।”
ট্রুডোর মুখে এসব আজব কথাগুলি শুনতে পেয়ে এলিনা অবাক তো হচ্ছেই আরো ট্রুডোকে মনে হচ্ছে তার গোত্রের লোক। হয়তো ট্রুডোর বেশে এসেছে। অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে এলিনা।
স্থির দৃষ্টি। চোখদুটো মারবেলের মতো বড় বড় হয়ে রয়েছে। ফিসফিসিয়ে ট্রুডোর মুখের কাছে গিয়ে বলল, “এসব কি বলছো তুমি? আমাকে আবার আমার গোত্রে ফেরৎ পাঠাবে?? তাহলে আমাকে বাঁচালে কেন?”

ট্রুডো ইতস্তত করে উত্তর দিতে লাগল, “আমি সেটা বলিনি। আমি বলেছি….”
কথা শেষ না করতেই তাকে থামিয়ে এলিনা বলল, “আমি শুনেছি। আমার রক্তের নেশাটা ফেরাতে সাহায্য করবে যাতে আমার কোনো বিপদ হলে আমি নিজেই তার সমাধান করতে পারি। আর তোমাকে ভুলে থাকার জন্য পরিবারের কাছে চলে যাই। তাই তো? ”

ট্রুডো মাথা ঝাকিয়ে বিরক্তির চেহারায় বলল, “কেন বুঝতে পারছো না, তুমি আমাকে যা ভাবছো তা আমি নই। আর আমাকে ভুলে যেতেও বলিনি তোমায়। চাইলে চিরজীবন মনে রেখো আমায়।”

এলিনা উঁচুগলায় কাদোস্বরে বলে উঠল, “আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না তুমি আসলে কি চাইছো। তুমি ভালোবাসো বলে বন্ধুদের সাথে এতোদিনের সম্পর্কটা শেষ করে চলে এলে। এখন আমাকেও ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছো। কি হয়েছে তোমার?”

ট্রুডো আবারো মাথা নাড়িয়ে এলিনাকে বুঝানোর জন্য বলল, “আমাকে যেতে হবে। আমি তোমাকে সেই গোত্রে ফেরৎ পাঠানোর কথা বলছি না। আমি চাই তুমি তোমার বাবা-মার সাথে এখানেই ভালোভাবে থাকো।”
এলিনা তাচ্ছিলতার সাথে চোখের কোণে একবিন্দু অশ্রুজল নিয়ে ট্রুডোকে বলল,”হু। তুমি কি ভেবেছো? গোত্রপ্রধান আমার বাবা-মাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে?”
ট্রুডো বলল, “মানে? এসব কি বলছো?”
এলিনা অন্যমুখ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তাদেরকে বোধয় মেরে ফেলেছে সেই পাষাণ গোত্রপ্রধান। আমাকে না পেয়ে তাদের উপর প্রতিশোধ নিয়েছে সে।”
ট্রুডো বলল, “আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছে না। আমি নিশ্চিত যে তোমার বাবা-মা এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।”
কিভাবে এতো নিশ্চিত হয়ে বলতে পারলে কথাটি? দেখোনি গোত্রপ্রধান কেমন প্রকৃতির লোক নাকি আন্দাজ করতে পারছো না সে কি কি করতে পারে?”
ট্রুডো একরকম নিশ্চিত হয়েই বলল, “আমি জানি সে কি করতে পারে আর না পারে। সে সজ্ঞানে থাকলে তো তোমার বাবা মাকে মেরে ফেলবে কিন্তু তিনি যদি অচেতন থাকেন তাহলে? খেয়াল করেছো যখন তোমাকে বাঁচানোর জন্য তার গলা থেকে চাবিটা টেনে ছিঁড়ে আনি তখন তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। তুমি উড়ে আসার সময় গোত্রের একজন বলছিলো গোত্রপ্রধান নাকি দুইদিন ওভাবে অজ্ঞান হয়ে থাকবেন। তার মানে এখন তার জ্ঞান ফেরার কথা। আমরা চাইলেই তাদের বাঁচাতে পারি। ”
..
..
..
..
..
..
..
..
..(চলবে……………)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে