দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 11

0
1001

………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………..
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………..
…………………….….PART:11……………………………

সবাইকে নিয়ে উড়ে পালাতে লাগলো এলিনা। জঙ্গলের ভেতরে অ্যাডোনিস গাছের নিচে নামলো সে। গাছটা দেখেই ট্রুডো বললো,”এই গাছটা এখানে কিভাবে জন্মালো? আর এর সাথে কি ড্রেকইনসদের কোনো সম্পর্ক আছে?”
এলিনা বললো,”কিভাবে জন্মেছে সেটা জানা নেই তবে এই গাছের একটা অবাক করা বিশেষত্ব আছে। এই গাছ প্রায় হাজার বছরের পুরোনো কিন্তু দেখে তা মনে হয় না। আপাত দৃষ্টিতে এটিকে শত বছরের একটা সাধারণ গাছ বলেই মনে হবে। আর এর সাথে ড্রেকইনস এর তো গভীর যোগসূত্র আছে। কখনো কখনো ড্রেকইনসরা এই গাছের নিচে অন্য কারো রুপ নিয়ে বসে থাকে। মানুষকে বোকা বানানোর জন্য তারা যেকারো সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব করে পরে ভয়ানক বিপদের মুখে ফেলে দেয়।”
ট্রুডো অবাক হয়ে গেলো এলিনার কথা শুনে। তার সাথে ঠিক তেমনভাবেই আচরণ করেছে ড্রেকইনস যেমনটা এলিনা বলছে। ট্রুডো ভাবতে ভাবতে বললো,”একদম মিলে যাচ্ছে। আমি যখন এই গাছের নিচে থেকে জেফারীর রুপ নেওয়া ড্রেকইনসকে তাবুতে নিয়ে যাই তখন তার আচার আচরণ দেখে আমি একটু সন্দেহের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।”
হঠাৎ কথাবার্তা চলতে চলতেই আনাহীর মাথা ধরে গেলো। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো আনাহী। ব্যথায় ভ্রু কুচকে আলতোভাবে বললো, “আহ্! মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার।”
সাথে সাথেই এলিনারও শুরু হলো সমস্যা। ছটফট করতে শুরু করলো এলিনা। চোখ মুখ থেকে রক্ত ঝরতে লাগলো। বিশাল পাখাদুটির ঝাপটানিতে গাছের ডালপালা দুমড়ে মুচড়ে গেলো। কেউ বুঝতে পারলো না এসব কি হচ্ছে। গড়গড় করে বমি করার মতো মুখ থেকে রক্ত বের হতে লাগলো এলিনার।
এদিকে দৌঁড়ানোর আওয়াজ আসতে লাগলো জঙ্গলের ভেতর থেকে। ভিরেক্স জোরে বলে উঠলো,” মনে হয় সেই গোত্রের লোক আসছে। এলিনাকে ধরার জন্য। এক্ষণি এখান থেকে পালাতে হবে নাহলে ঘোর বিপদের মুখে পড়তে হবে আমাদের।”
সবাই ভিরেক্সের কথাটা সমর্থন করলো। আনাহী পালানোর মতো সুস্থ্য আছে কিন্তু সমস্যা হলো এলিনা আর ব্লেডিকোকে নিয়ে। এখনো জ্ঞান ফিরেনি ব্লেডিকোর আর এলিনার শুরু হয়েছে আরেক সমস্যা।
এলিনার মুখ থেকে রক্ত পড়া দেখে ট্রুডো একটু ভয় পেয়ে গেলো। মনে আসা কথাটা বলেই দিলো, “ভ্যাম্পায়ারদের মুখ থেকে তখনই রক্ত ঝরে তখন তাদের রক্ত খাওয়ার নেশাটা চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে যায়। তাহলে কি আপনারও…..”
ট্রুডোর দিকে বিষ্ময়ের দৃষ্টিতে তাকালো সবাই বিশেষ করে এলিনা। এদিকে গোত্রের লোকজন প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। আর কোনো দিক খুঁজে না পেয়ে হাটুর উপর হাত রেখে বসে পড়লো এলিনা। মন্ত্র জপতে শুরু করলো। সাথে সাথে শুরু হলো আবারও সেই আকষ্মিক ধোয়ার সৃষ্টি। মেঘের গর্জন। ধোয়ার মাঝে স্পষ্ট হয়ে উঠলো সেই দানবীয় কালো ছায়া। চোখ মেলে এলিনা বললো,”কাইরো,আমাকে সাহায্য করুন।”
ট্রুডো ভ্রু কুচকে বিরবির করে বললো,”তাহলে ইনিই সেই কাইরো! নেহাৎ ভ্যাম্পায়ার শক্তি নেই নাহলে দেখিয়ে দিতাম আমার সাথে ওমন আচরণ করার ফল কি হতে পারে।”
খিলখিল করে হাসতে লাগলো কাইরো। কাইরোর হাসা দেখে এলিনাও চমকে গেলো। এলিনার কথা বা প্রশ্নের কোনো উত্তর দিচ্ছে না কাইরো। ট্রুডো বুঝতে পারলো যে কাইরো তাদের সময় নষ্ট করাচ্ছে যাতে গোত্রের লোকেরা তাদের ধরতে পারে। সবাইকে দৌঁড়ানোর কথা বলে দিলো ট্রুডো। উঠে দাঁড়ালো এলিনা। সাথে সাথে কাইরো লাল আলোর এক মায়াশক্তি প্রয়োগ করলো এলিনার উপর। মৃদুভাবে আওয়াজ আসলো এলিনার চিৎকারের। বন্ধ হয়ে গেলো এলিনার রক্তঝরা। সবাই দৌঁড়াতে শুরু করলো জঙ্গলের বাইরের দিকে বের হওয়ার জন্য। ব্লেডিকোকে উড়ে নিয়ে যেতে লাগলো এলিনা। কিছুক্ষণ পর শেষ হয়ে এলো জঙ্গলের পালানোর রাস্তা। সামনে বিশাল সৈন্যবাহিনীর সজ্জিত আসরের মতো দাঁড়িয়ে আছে হিংস্র চুপাকাবরার দল। একটা গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে মিউরিসকে। শরীরের অনেক জায়গায় ক্ষত। মিউরিস দেখে সবাই চিৎকার দিয়ে ডাক দিলো। কিন্তু মিউরিসের শরীর পুরো নেতিয়ে গেছে।
আস্তে আস্তে নীচে নেমে ব্লেডিকোকে মাটিতে রাখলো এলিনা। বিশাল শক্তির সাথে সজোরে দাঁড়িয়ে মিউরিসের দিকে লাল চোখদুটো তাক করে প্রচন্ড গতিতে আঘাত করতে গেলো এলিনা। সবাই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, “না…..”
কিন্তু তাতে কোনো কাজ হলো না। এলিনার একটা ডানার আঘাতে ছিটকে দূরে গিয়ে পড়লো মিউরিস। কুকড়ে কুকড়ে উঠে বসে মিউরিস অস্ফট স্বরে বললো,”আমাকে বাঁচা তোরা”
কথাটা বলেই জ্ঞান হারানোর মতো মাটিতে নুয়িয়ে পড়লো মিউরিস। সবাই একরকম এলিনার উপর রাগ করলো। ভিরেক্স রেগে গিয়ে বললো,”কি করছেন আপনি? সে আমাদের বন্ধু মিউরিস। তাকে বাঁচানোর কথা আপনার।”
কারো কথার কোনো জবাব না দিয়ে বারবার মিউরিসকে আঘাত করতে লাগলো এলিনা। মিউরিস বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শরীরের কয়েক জায়গায় মাংস খসে গেলো। রক্ত বের হতে লাগলো মাংস খসা জায়গা থেকে। রক্ত দেখে এলিনার আর খেতে ইচ্ছে করছে না। ট্রুডো অবাক হয়ে তাকিয়ে শুধু দেখছে এলিনার কাজগুলো আর মনে মনে ভাবছে,”এটা কি হচ্ছে? একটা ভ্যাম্পায়ারের সামনে তাজা রক্ত আর সে তা না খেয়ে বরং আঘাত করছে? আমি তো আমার চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। ”
এদিকে সবাই ট্রুডোর কাছে এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,”ওকে থামতে বল, নাহলে তো মিউরিস মরে যাবে। ”
ট্রুডো এলিনার উপর বিশ্বাস রেখে সবাইকে বললো,”সে যখন বলেছে যে মিউরিসকে সে বাঁচাবে তখন সে নিশ্চয় বাঁচাবে। আমাদের একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। ”
ট্রুডোর কথস শুনে সবার চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা। কি বলছে ট্রুডো। তার চোখের সামনে প্রাণপ্রিয় বন্ধু ট্রুডোকে মেরে ফেলছে একটা ভ্যাম্পায়ার আর সে বলছে ধৈর্য্য ধরতে। তাছাড়া দুদিনের মধ্যে পরিচয় হওয়া মেয়েটির উপর এতো বিশ্বাসই করছে কি ভেবে!মিউরিসকে এলিনার হাত থেকে বাঁচানোর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না কেউ। শুধু দেখছে আর ছটফট করছে সবাই।
কিছুক্ষণ চলার পর….। গোত্রের লোকেরা এসে ঘেরাও করে নিলো সবাইকে। তাদের সবার হাতে অস্ত্র। এদিকে মিউরিসের যখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা তখন একটা হুংকার দিয়ে নিজের রুপ বদলে ফেললো মিউরিস। হয়ে গেলো বিশাল এক ড্রাগন। মুখ দিয়ে আগুন বের করে চারদিক পুড়াতে লাগলো। পিছিয়ে যেতে লাগলো সবাই। এলিনাও আর মিউরিসের কাছো গেলো না। মিউরিসের ড্রাগন রুপ থেকে গ্রুপের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। চারদিকে আগুন লেগে গেলো। আগুনের লেলিহান শিখা আস্তে আস্তে গ্রাস করতে শুরু করলো সবকিছু। ভয়ে আতঙ্কে গোত্রের সব লোক পালিয়ে যেতে লাগলো। রাগ থেমে গেলো মিউরিসের। ফিরে এলো নিজের আসল ড্রেকইনসের রুপে। যেন রুপ বদলের খেলা চলছে। মিউরিসের ড্রেকইনস এর রুপ দেখে সবাই বুঝে গেলো যে এই ড্রেকইনস মিউরিসের রুপ নিয়েছিলো। তাই এলিনা এর উপর ক্ষেপে গেছে। আনাহী অবাক হয়ে ট্রুডোকে বললো,”এসব কি? মিউরিসও কি তাহলে ড্রেকইনস? নাকি ড্রেকইনস মিউরিসের রুপ নিয়েছিলো?”
ট্রুডো শান্ত কণ্ঠে বললো,”ড্রেকইনস আমাদেরকে আবার বিপদে ফেলার জন্য মিউরিসের রুপ নিয়েছিলো। এলিনা ভ্যাম্পায়ার আর সে এই ড্রেকইনসদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানে তাই সে বুঝতে পেরেছিলো যে এটা মিউরিস নয় তাই তার উপর ওমন আক্রমণ করেছিলো যাতে তার আসল রুপ সবার সামনে চলে আসে।”
এই প্রথম ড্রেকইনসদের আসল রুপ দেখতে পেলো সবাই। সাধারণত ড্রেকইনসরা মহিলা হয়। তাদের বৈশিষ্ট্য সাধারণ মানুষের মতোই তবে ভিন্ন রুপধারণ করতে পারে।
চারদিকে আগুন আরও বেড়েই চলছে। সবাই তাড়াহুড়ো করে অন্যদিকে যেতে লাগলো কিন্তু চুপাকাবরার দল ধেয়ে আসতে লাগলো তাদের দিকে। ট্রুডো এলিনাকে বললো চুপাকাবরাদের সরে যেতে। এলিনা তার ভ্যাম্পায়ার রুপে লাল চোখদুটো চুপাকাবরাদের দেখাই সব জঙ্গলের ভেতরে দৌঁড়ে চলে যেতে লাগলো। আপাতত বিপদ কাটলো সবার।
স্বস্তিবোধ করে এলিনাকে প্রশ্ন করলো ট্রুডো, “আপনি তো ভ্যাম্পায়ার, রক্ত দেখেও আপনি খেলেন না যে? নাকি ড্রেকইনস বলে রক্ত খাননি?”
এলিনা বললো,”সেটার জন্য নয়। আপনি তখন আমায় বলছিলেন না যে ভ্যাম্পায়ারদের মুখ থেকে রক্ত বের হলে তার রক্ত খাওয়ার নেশা চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে যায় সেজন্যই বোধয় রক্ত খাওয়ার ইচ্ছা হয়নি।”
..
..
..
..
..(চলবে………..)
..
..
গল্পটি কেমন হচ্ছে জানাতে ভুলবেন না। শেয়ার করুন, বন্ধুদের মেনশন করুন। গঠনমূলক মন্তব্য করুন। ধন্যবাদ সকলকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে