দু মুঠো বিকেল পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
1941

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_২৪
Writer-Afnan Lara
.
সে যাই হোক আপাতত এই এলাকা ছাড়তে হলে আমাকে একটা বাস ধরতে হবে
.
রিমঝিম হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর এসে পড়েছে তাও কোথাও কোনো বাস পেলো না,সব রিকসা আর প্রাইভেট কার
বাসের খোঁজে ফুটপাতের উপর দিয়ে হেঁটে চলেছে সে,অনেকক্ষণ হাঁটার পর জ্যামের ঠিক মাঝখানটায় একটা বাস পেয়ে গেলো সে
জলদি করে পথের মাঝে ঢুকে গিয়ে সে বাসটাতে উঠে পড়লো,টেনে হিঁচড়ে ব্যাগটাও তুললো সাথে
বাসের কিছু যুবক ওকে দেখে ভাবলো মুরব্বী মানুষ,তাও আবার গর্ভবতী,দেখে তো মনে হয় কাল পরশু ডেলিভারি হবে
ওরা একবার একজনে দাঁড়িয়ে বললো”আপা বসেন,এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকবেন না”
.
রিমঝিম কিছুক্ষন ওদের মুখের দিকে চেয়ে ভাবলো এই অবস্থা মানে???
“ও আচ্ছা আচ্ছা,আমি তো প্রেগন্যান্ট হওয়ার নাটক করছি”
রিমঝিম মাথাটা নাড়িয়ে জানালার ধারের একটা সিটে বসে পড়লো
তার পাশে বসলো একটা মেয়ে
রিমঝিম মেয়েটাকে ড্যাবড্যাব করে দেখতেছে হঠাৎ কন্ডাকটর এসে বললো”আপা যাইবেন কই?”
.
রিম মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো,সে কিছুক্ষন ভেবে সেবে বললো”একটু পরে বলি?আমি একটা কল করবো”
.
আচ্ছা
.
রিমঝিম এবার মহা বিপদে পড়লো,আসলে সে যাবে টা কোথায়??কি এক ঝামেলা,জায়গার নাম কি বলবো??
.
এতসব ভাবতে ভাবতে বাসের সব যাত্রী সময়ক্রমে এক এক করে নেমেও গেছে
.
এমনকি তার পাশে বসা মেয়েটাও নেমে গেছে
এবার কন্ডাকটর আবারও ওর কাছে এসে বললো”আপা আপনি যাবেন কোথায়?বাস তো আর যাবে না”
.
মানে??কেন যাবে না?
.
মানে বাস উত্তরা পর্যন্ত যায়,আর এখন আমরা উত্তরাতে আছি,আপনার খবর আছে??? সেই কখন আপনি বাসে উঠেছেন??রাত ১২টা বাজে এখন
.
কিহ!!
আচ্ছা ধরেন টাকা,আমি যাই
.
রিমঝিম টাকা দিয়ে ব্যাগ নিয়ে ফাঁকা রাস্তায় নেমে পড়লো
দু একটা কুকুর ছাড়া আর কিছু নাই রোডে
মাঝে মাঝে দূরে কাউকে দেখা যায়,পথেই তাদের বাস হয়তবা
রিমঝিম এবার সামনের দিকে চেয়ে হাঁটা ধরলো,যেদিকে যেতে পারি সেদিকে যাব
একটা কলেজের সামনে এসে রিম থামলো,নাম হলো ঢাকা মহিলা কলেজ
রিম কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আবারও হাঁটা শুরু করলো
ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম,ভাগ্য আমাকে ঢাকার এত জায়গা থাকতে এখানে নামিয়ে দিলো
এখানে তো মনে হয় সব অভিজাত এলাকার মানুষরা থাকে
এটা কি আবার!রুপায়ন সিটি!!বাপরে,ঢাকায় এতবছর থাকি তাও তো কখনও এদিকে আসা হয়নি আমার

স্পর্শর সিগারেট শেষ বলে সে বাসায় তালা মেরে পকেটে হাত ঢুকিয়ে হুডি পরে নেমেছে ফাঁকা রোডে
এর আগে ওর রাত করে সিগারেট শেষ হতো না কিন্তু এসময়টায় হুট করে শেষ হয়ে গেলো
অবশ্য দোষটা আমারই,কারণ দুপুরবেলা খেয়াল হয়েছিল সিগারেট শেষ,আমি আলসেমি করে অফিস থেকে বের হইনি,এমনকি আসার পথেও মনে রইলো না
এখন এত রাতে দোকান খোলা পাবো??
.
রিমঝিম হাঁটার গতি বাড়িয়ে চলেছে,রোডের উপর ইটের দু একটা টুকরো পড়ে আছে,এত জোরে হাঁটতে গিয়ে দুম করে রোডের উপর আছড়ে পড়ে গেলো রিম
দুমড়ে পড়ে মরা মানুষের মতন শুয়েই গেছে রাস্তায়
ব্যাগটা পাশেই পড়ে আছে
এমন একজন মুরব্বীকে পড়তে দেখে স্পর্শ দূর থেকে দৌড়ে আসলো,এসেই হাত ধরে উঠাতে উঠাতে বললো”আপনি ঠিক আছেন তো??বেবি ঠিক আছে তো”
.
স্পর্শর কথা শুনে রিম ঝটকা তো খেলোই সাথে ওর মনে হলো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে
পর্দার ভেতর থেকে সে ছলছল চোখে স্পর্শর দিকে চেয়ে আছে
.
কি হলো কিছু বলছেন না যে?আপনি ঠিক আছেন?চোট পেয়েছেন?হসপিটালে নিয়ে যাব?
.
রিমঝিম মাথা নাড়িয়ে না জানালো,তারপর কি ভেবে স্পর্শর গলা জড়িয়ে ধরলো
.
স্পর্শ কিছুটা অবাক হয়ে বললো”আন্টি ইটস ওকে,ভয় পাবেন না”
.
স্পর্শর মুখে আন্টি শুনে রিমঝিমের মেজাজটাই বিগড়ে গেলো সাথে সাথে স্পর্শকে ছেড়ে দিলো সে
তারপর পেট থেকে কুশন গুলো বের করে স্পর্শর মুখের উপর মারলো
.
স্পর্শ ইয়া বড় হা করে তাকিয়ে আছে,কুশন গুলো ক্যাচ নিয়ে
তারপর কুশনগুলোর থেকে চোখ সরিয়ে সামনে থাকা মুরব্বীর দিকে তাকিয়ে বললো”বেবি নাই??মানে!!”
.
রিমঝিম এবার মুখ থেকে পর্দাটাই সরিয়ে ফেললো
ল্যাম্পপোস্টের আলোতে রিমঝিমের মুখটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে
স্পর্শ নিজের চোখকে বিশ্বাস করলো না
এক হাতে কুশন নিয়ে আরেক হাত দিয়ে চোখ ডলে বললো”সব জায়গায় খালি রিম আর রিম”
.
আর এখন যে দাঁড়িয়ে আছে সে সত্যিকারের রিম
.
ওর কথা শুনে স্পর্শ চোখ বড় করে রিমঝিমের হাত ধরে টেনে আলোর কাছে এনে বললো!কিহহহহহ!তুমি??এখন??এসময়ে??এখানে??”
.
রিমঝিম মুখটা বাঁকিয়ে বললো”আমিও জানতাম না আপনি এখানে,যাক ভালো হয়েছে,চলুন,আপনার সাথে আমার কথা আছে”
.
কোথায়?
.
আপনি কি এই রোডে থাকেন?বাসা টাসা নাই?
.
আছে তো,আচ্ছা চলো
.
রিমঝিম হাঁটা শুরু করে দিলো স্পর্শর আগেই
স্পর্শ কুশন গুলো বুকে চেপে ধরে রিমের দিকে তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছে
একবার জড়িয়ে ধরা আবার এসময়ে আমার কাছে চলে আসা তাও ব্যাগ নিয়ে সব কেমন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে
আচ্ছা তুমি ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিলে?
.
রিম হাঁটা অবস্থায় পিছন ফিরে বললো”পালিয়ে এসেছি”
.
বাব্বাহ!তোমার এত সাহস?রিমঝিম কখনও ফ্যামিলির এগেন্সটেও যেতে পারে তা জানা ছিল না
.
জোর করে ধরে বিয়ে দিতে চাইছিলো,প্রথমটা হয়নি,পরেরবারেরটা মনে হয় হয়েই যেতো তাই বাধ্য হয়েই পালালাম
.
ঢাকার এত জায়গা থাকতে উত্তরায় কেন??তোমার কোনো রিলেটিভ বা ফ্রেন্ড আছে নাকি?
.
সেটা অনেক কথা আগে চলুন তো,আমাকে কিছু খাওয়াবেন,আমি বিকাল থেকে কিছু খাইনি
.
স্পর্শ থেমে গেলো,তার বাসায় তো পানি ছাড়া আর কিছু নাই,রিমকে সে কি খাওয়াবে?সে নিজেই তো চাচার বাসায় গিয়ে খায়
.
কি হলো থেমে গেলেন কেন?শুনলাম তো আপনার বাসায় আপনি একা থাকেন,তাহলে এতবার থামছেন কেন?
.
তুমি ধরো এই কুশনগুলো,আমি আসছি
.
কথাটা বলে স্পর্শ ছুটলো সামনের দিকে
রিম কুশনগুলোর দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,কি হলো ব্যাপারটা??কোথায় গেলো?
.
স্পর্শ ছুটতে ছুটতে চাচার বাসায় এসে গেছে,চাচি সবেমাত্র লাইট অফ করবেন বাসার সেসময়ে স্পর্শ দরজা ধাক্কিয়ে বললো”তার লেট নাইট ক্রেবিংস শুরু হয়েছে,তাকে যেন হালকা পাতলা কিছু খেতে দেওয়া হয়
তো চাচি ফ্রিজ থেকে জুসের বোতল আর কেকের বক্সটা ওর হাতে দিতেই ও বললো সে এগুলো বাসায় গিয়ে খাবে,এটা বলেই চলে গেলো আবার
চাচি ভাবলো ছেলেটা আস্ত একটা পাগল
.
স্পর্শ দৌড়ে আসলো,কারন রিম ওখানে একা,রাত বিরাতে কি হয় না হয়
.
রিম তার পিছনে থাকা বিল্ডিংটার দিকে চেয়ে আছে,হঠাৎ ওর নজর গেলো ৩য় তলার বারান্দার দিকে
সেখানে একটা সবুজ রঙের ওড়না বাতাসে বারবার উড়ছে,ওড়নাটা ভালো করে পরোক করে রিমের মনে হলো এটা তারই ওড়না যেটা সে হারিয়ে ফেলেছিল,পরে ভাবলো এরকম তো কত মানুষেরই ওড়না থাকতে পারে
তার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে স্পর্শ ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো”চলো যাই,আমার বাসা এখানে”
.
কোথায় গিয়েছিলেন আপনি??আমি বেশি কিছু খাব না,জাস্ট এক প্লেট ভাত আর ভর্তা হলেই চলবে
.
স্পর্শ ব্যাগ উঠাতে গিয়ে থেমে বললো”ভাত??”
.
হুম,কেন??নাই?তাহলে রেঁধে নিব
.
জুস আর কেক খেয়ে থাকতে পারবা না?
.
আচ্ছা সমস্যা নাই

দুজন মিলে ৩য় তলায় এসে পড়লো,স্পর্শ চাবি দিয়ে দরজা খুলে লাইট অন করলো,রিমও ড্যাং ড্যাং করে দাঁত কেলিয়ে ভেতরে পা রাখতেই ওর মুখটা গেলো ফ্যাকাসে হয়ে
.
একি!আপনার বাসায় দেখি একটা চেয়ার তো দূরে থাক একটা লাঠিও নাই
.
এই জন্যই আনতে চাইছিলাম না
.
ওসব পরে হবে,আগে কিছু খাব,মাথা ঘুরাচ্ছে আমার
.
রিমঝিম ফ্লোরে বসে পড়ে বোরকাটা খুলে স্পর্শর হাত থেকে জুস আর কেক নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলো
স্পর্শ রিমের সামনে বরাবর ফ্লোরে বসে গালে হাত দিয়ে রিমের ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা দেখে যাচ্ছে,কি সুন্দর লাগছে ওকে
কতটা দিন পর ওকে দেখলাম আমি,শুকিয়ে গেছে মনে হয়,বেশ অনেকটাই শুকিয়েছে
.
রিমঝিম খাওয়া শেষ করে মুখ ওড়না দিয়ে মুছে বললো”আপনার বাসায় কিছু নেই কেন?”
.
নতুন জব পেয়েছি,আমি চাই সব আমার হাতের টাকা দিয়ে কিনবো,তাই সব এমন ফাঁকা কারণ এখনও বেতন পাইনি
.
ও,তো ঘুমান কোথায়?
.
আমার রুমে তোষক আছে,,তুমি কি করবা সেটা বলো
.
রিমঝিম মুখটা ছোট করে বললো”যেদিকে দুচোখ যাচ্ছিলো সেদিকেই চলে এসেছি,আমার তো যাওয়ার কোনো জায়গা নেই,তবে একটা কথা বলতে পারি আর সেটা হলো আমি আর ঐ বাড়িতে ফেরত যাব না”
.
আমার সাথে এমন নরমালি কথা বলছো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না
.
এখন আমি কোথায় যাব?
.
স্পর্শ ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তার রুমের দিকে যেতে যেতে বললো”আমার এই ফ্ল্যাটে ৩টে বেডরুম,একটা কিচেন,ড্রয়িং রুম,ডাইনিং,বাথরুমের অভাব নাই
তোমার যেটা পছন্দ সেটায় থাকো”
.
রিমঝিমের খুব করে ঘুম পাচ্ছে,সে তার হাতের কুশনটা ফ্লোরে রেখে ঐ জায়গাতেই শুয়ে পড়লো
.
স্পর্শ নিজের রুমে এসে নিজের আগোছালো রুমটা পরিষ্কার করলো কারণ এমন অবস্থা রিম দেখলে মানইজ্জত সব যাবে
.
রুমটা ভালোমতন মানুষ করে সে আবার রিমের কাছে আসতেই দেখলো রিম ঘুমিয়ে পড়েছে এই ঠাণ্ডা ফ্লোরের উপরেই
টাচ করতে গেলে চেঁচিয়ে মাথা খাবে,আবার এমন করে সারা রাত থাকলে নির্ঘাত কাল ওর জ্বর হবে
কি করি এখন?এত জলদি ঘুমালো কি করে?
.
স্পর্শ নিজের রুম থেকে কম্বলটা এনে রিমের গায়ে জড়িয়ে দিলো তারপর চলে গেলো নিজের রুমে
.
রুমে এসে রিমঝিমের ছবিটার দিকে চেয়ে সে ভাবলো কি থেকে কি হয়ে গেলো
রিমঝিম আমার সামনে,আমারই ফ্ল্যাটে
যার হাত আজ পর্যন্ত জোরপূর্বক ধরেছিলাম আর আজ সে কিনা নিজে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে,ভুলবশত সে আমার কাছেই এসেছে ঠিক তখন যখন তার কাউকে খুব দরকার ছিল
এতদিন সে আমার থেকে পালিয়ে বেড়াতো আর আজ কিনা সে আমারই কাছে ধরা দিয়েছে?
কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না আমার,কাল সকালে উঠে যদি রিমকে দেখি তাহলে হয়তবা বিশ্বাস হবে
এখন আমার ঘুমানো উচিত
কম্বল তো রিমকে দিলাম,এত শীতে আমি কি গায়ে দেবো?
.
বুদ্ধি মাথায় আসতেই স্পর্শ গেলো তোষকের নিচে
এটাই আমার কম্বল
চেয়েছিলাম সিগারেট খেতে তা আর পেলাম না,তবে যা পেলাম তা আজীবনের জন্য পেয়ে গেলে আমার আর সিগারেটের দরকার নাই
এই নেশাই যথেষ্ট!

ভোর পাঁচটা পাঁচ বাজে,ঠাণ্ডার ভেতর ঠাণ্ডা পরিবেশ
রিম উঠে পড়েছে,,গায়ের থেকে কম্বল সরাতেই একটা বাটি ঠুস করে ফ্লোরে গিয়ে গড়িয়ে পড়লো
রিম সেটা নিয়ে ওলট পালট করে বুঝলো ভেতর একটা চিরকুট
চিরকুটটা নিয়ে সে দেখতে লাগলো এবার
সেটাতে লিখা আছে——-
“সকালের নাস্তার বন্দবস্ত করতে গেলাম,খবরদার বাসা থেকে বের হবা না,আমি সাড়ে পাঁচটায় তোমার সামনে থাকবো”
.
রিম চিরকুটটা রেখে ব্যাগ থেকে গামছা নিয়ে গেলো মুখ ধুতে
খুঁজে একটা রুমের বাথরুমে গেলো সে
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_২৫
Writer-Afnan Lara
.
স্পর্শর রুমের বিপরীত পাশে যে রুমটা আছে রিম সেটাতেই গেছে,,,
“রুম নামের কলঙ্ক সব
একটা ঝাড়ু ও নাই,আসবাবপত্র তো দূরেই থাক,মনে হচ্ছে বালু ছাড়া মরুভূমিতে আসছি”
কোনো মতে বাথরুমে ঢুকে ব্রাশের দিকে তাকাতেই রিমের মনে পড়লো সে পেস্ট আনেনি,এখন কি হবে?
আচ্ছা উনার রুম থেকে গিয়ে নিয়ে আসি বরং
.
রিম ব্রাশ হাতে নিয়ে চললো স্পর্শর রুমের দিকে
দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খুলে ভিতরে ঢুকলো সে,,নিচে তোষক একটা এলোমেলো করে রাখা আছে
আবার একটা সোফাও আছে দেখছি আর কয়েকটা মিনারেল ওয়াটারের বোতল ও আছে
পারফেক্ট ব্যাচেলর যাকে বলে,রিমঝিম বাথরুমে গিয়ে পেস্ট নিয়ে চলে যেতে নিতেই ওর চোখ গেলো সামনের দেয়ালের দিকে
বিশাল দেয়াল জুড়ে বিশাল আকৃতির একটা ছবির পোস্টার,আর ছবিটা তারই
নিজেকে বিরাট পর্দায় দেখে রিম কিছুক্ষণের জন্য ফ্রিজড হয়ে গিয়েছিলো
তারপর সামনে এসে ছবিটা ভালোমতন দেখে রিম সোজা হেঁটে চলে গেলো দাঁত ব্রাশ করতে
মনে হচ্ছিলো যেন আমার জমজ বোন ঐ রুমটাতে হেসে তাকিয়ে আছে
কি বুদ্ধি লোকটার,বাপরে বাপ,আমার থেকে দূরে এসেও আমাকে নিজের কাছে রাখার বন্দবস্ত করে রেখেছে
ফ্রেশ হয়ে রিমঝিম এবার রুমগুলো ভালোমতন দেখলো,আর যাই হোক বারান্দা গুলো সব মনের মতন হয়েছে,গাছ লাগালো আরও সুন্দর লাগবে দেখতে,,এই লোকটাকে বলবো সবার আগে বারান্দা সাজাতে
সুন্দর বারান্দা দেখলে এমনিতেই মন ভালো হয়ে যায়

রিম উঠেছিস?,তোর ভাইয়া অফিসে যাবে,নাস্তায় আমাকে হেল্প করবি,আয় জলদি
.
তামিম চোখ ডলে পানির বোতল নিয়ে দরজা খুলতে যেতেই দেখলো দরজা আগে থেকেই খোলা
তামিম চোখ আবারও ডলে বললো”মা দরজা খুললো কে?
.
মা রান্নাঘরে থেকে বললেন”হয়ত তোর আব্বু খুলেছে”
.
রিমের বাবা নিজের রুমে বসে পেপার পড়তে পড়তে বললেন”আমি কেন খুলবো,আমি তো বাসায়,”
.
রিহাব তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতেছে দরজার কাছে এসে
মা আবারও রিমকে ডাকলেন,এবারও রিমের আওয়াজ না পেয়ে রিহাবের মনে সন্দেহ হলো,সে দরজা খুলে রিমের রুমে গেলো,পুরো রুম ফাঁকা,বিছানার মাঝ বরাবর একটা সাদা কাগজে লেখা চিঠি পড়ে আছে
রিহাব চিঠি পড়ে নিয়ে চুপ করে থেকে চিঠিটা ছুঁড়ে মেরে বললো”তোমার মেয়ে পালিয়েছে মা”

রিমঝিম চক্কর দিয়েই যাচ্ছে সবগুলো রুমে,তার এত ভালো লেগেছে পুরো বাসাটা
.
স্পর্শ চাবি দিয়ে দরজাটা খুলতেই দেখলো রিম কোমড়ে হাত দিয়ে রান্নাঘরের তাক গুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে
.
এই যে খুকি
.
রিম পিছনে তাকিয়ে কপালটা কুঁচকে বললো”আপনাকে একটা প্রশ্ন করার আছে”
.
জি বলেন
.
আমাকে খুকি বলেন কেন??
.
কারণ তুমি ছোট তাই
.
আমি হলাম বড় টাইপের, ছোট পেলেন কই?
.
সব সময় আমার কাছে সেই ছোটই থাকবা,নাও নাস্তা করে নাও
.
চা?
.
স্পর্শ মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে একটা ফ্ল্যাক্স বের করলো
তারপর রিমের দিকে চেয়ে বললো”মুখ লাগিয়ে খেতে হবে কিন্তু!,কাপ নেই,পিরিচ ও নেই”
.
আগে তাহলে আমি খাব
.
খাইয়েন,এখন নাস্তা করেন,আমার আবার অফিসে যেতে হবে ৮টার দিকে
.
আমি কি করবো তাহলে?
.
স্পর্শ মুখে পরোটা দিতে দিতে বললো “কারোর যদি আমার বাসা পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে সে আমার সাথে থাকতে পারে,এখানে কেউ এসে বলবে না দুইটা অবিবাহিত ছেলেমেয়ে কেন একসাথে থাকছে,সো নো চিন্তা,ডু ফুর্তি”
.
রিম এক গাল হাসি দিয়ে পরোটা দিয়ে চা খেয়ে নিলো
.
স্পর্শ নিজের রুমে চলে গেছে রেডি হতে
রিমঝিম ফ্লোর পরিষ্কার করতে করতে বললো”দুপুরের কি খবর?
.
স্পর্শ শার্ট পরতে পরতে বললো”চাচার বাসায় গিয়ে বলবা”আসসালামু আলাইকুম,আমি স্পর্শর কলিগ,স্পর্শ আমাকে দুপুরের দাওয়াত দিয়ে নিজেই উধাও,এখন আমাকে একজন বললো এটা ওর চাচার বাসা!ওর খোঁজটা দিতে পারবেন?”
.
তারপর?
.
তারপর আর কিছু করতে হবে না তোমাকে,যা করার আমার চাচি করবে
.
আসবেন কখন?
.
বিকাল সাড়ে পাঁচটায়
.
ওমা এতক্ষণ আমি কি করবো একা একা?
.
স্পর্শ দরজা ফাঁক করে মাথা বের করে বললো”আমি থাকলে ভালো হতো বুঝি?”
.
না মানে কোনো কাজ নাই কিছু নাই,দিনের দুমিনিট যেতেও তো আমার এক বছর লাগবে যা মনে হয়
.
তোমার কাজ করতে ইচ্ছা হয় তাই তো?ওকে ফাইন,,
.
কথাটা বলে স্পর্শ তার রুম থেকে ১৪টার মতন শার্ট এনে রিমের হাতে ধরিয়ে দিলো
.
এসব কাঁচতে হবে?
.
জি না,এগুলা ধোয়া আছে,তুমি বাটন লাগাবা
.
সবগুলোর বাটন ছুটলো কি করে?
.
আমি জলদি করতে গিয়ে টানাটানি করি আর ঠিক সেসময়ে ছুটে যায়
.
ভালো,করবো,কিন্তু এ কাজ তো আমার এক মিনিটেই…..
.
হইচে থামো,কাজ না থাকলে তোমাকে মসুর ডাল আর চাল এক কেজি কিনে দিব,বাটিতে একসাথ করে বসে বসে বাছবা,ঠিক আছে?
.
মন্দ না
.
স্পর্শ মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে চলে গেলো
রিম পিছন পিছন গেলো ওর,স্পর্শ রিমের হাতে চাবি দিয়ে বললো”চাচার বাসায় যাওয়ার সময় লক করে যাবা”
.
বাই
.
বাই,টেক কেয়ার
.
রিম স্পর্শর চলে যাওয়া দেখছে,নিজেকে কেমন বিবাহিত মনে হচ্ছে
মনে হচ্ছে আমার বর অফিসে যাচ্ছে আর আমি তাকে বাই বলছি
বিষয়টা ভেবে রিম মুচকি হেসে দরজা লাগালো
.
স্পর্শ বাসার সামনে এসে তার অফিসের গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করছে,,আজ নিজেকে বিবাহিত মনে হলো কেন জানি,,

তমার বাসায় ও নেই,তাহলে গেলোটা কোথায়???
.
রিহাব আমার মনে হয় একবার ওর ভার্সিটির যাদের সাথে ওর ভালো সম্পর্ক তাদের জিজ্ঞেস করা উচিত
.
আমার মনে হয় তোমার মেয়ে স্পর্শর কাছে
.
আরে না সেটা হতেই পারে না,রিম তো স্পর্শকে দু চোখে দেখতে পারে না
.
তার পরেও আমাদের একবার খোঁজ নেওয়া উচিত,হলেও তো হতে পারে

হ্যালো স্পর্শ??
.
হুম বাবা বলো
.
রিমঝিমের খবর জানিস কিছু?
.
কোথাকার রিমঝিম,ও আচ্ছা আঁখির হবু ননদ??তার খবর আমি জানবো কি করে
.
ওহ ঠিক আছে
.
আসাদুজ্জামান কলটা রেখে দিলেন,তার সামনেই রিহাব আর তার বাবা বসে আছে
.
নাহহ স্পর্শর কথায় তো মনো হলো না রিম ওর কাছে আছে,আর আমি যতদূর জানি রিম তো স্পর্শকে পছন্দ করে না তাহলে ও কেন নিজ থেকে যাবে সেখানে?
.
রিহাব কথাটা বিশ্বাস করে চলে গেলো বাবাকে নিয়ে
.
দুপুর ১টা বাজে,রিমঝিমের খুব খিধে পেয়েছে এবার,,শার্টের বোতাম লাগানোও শেষ
আর দেরি না করে সে দরজা লক করে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বের হয়েছে বাসা থেকে,স্পর্শ বলেছিলেন সোজা গিয়ে ডানে যেতে
রিম তাই করলো,ডানের মোড়ে ঢুকতেই একটা বাড়ি দেখলো সে,স্পর্শর দেওয়া বর্ননার সাথে হুবুহু মিলে গেছে
রিম গিয়ে দরজার পাশের কলিংবেলে চাপ দিলো
কিছুক্ষণ পর একজন বয়স্ক মহিলা এসে দরজা খুললেন
.
রিমকে দেখতে গিয়ে চোখের চশমা ঠিক করে বললেন”কি চাই?”
.
আসসালামু আলাইকুম,,কেমন আছেন?
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম,,ভালো আছি,,তা তোমাকে তো চিনলাম না
.
আমি স্পর্শ ভাইয়ার অফিসের কলিগ,উনি আজ আমাকে দুপুরের খাবারের জন্য দাওয়াত দিয়েছেন,কিন্তু উনি এখন নিজেই উধাও,এখন আপনি কি আমাকে তার খোঁজ দিতে পারবেন?
.
চাচি মুখটা ছোট করে বললেন”আহা সেকি!না খেয়ে আছো??আসো ভিতরে আসো”
.
রিমঝিম উনার পিছু পিছু ঢুকলো,,,ওকে সোফায় বসতে দিয়ে তিনি রান্নাঘরে গিয়ে প্লেট নিতে নিতে বললেন”গরুর গোশত খাও?”
.
খাই
.
ঠিক আছে
.
রিমঝিম মুচকি হেসে চারিদিক টা দেখায় মন দিলো,বেশ ছোটখাটো বাসাটা তবে রুম অনেকগুলো,,আর পরিপাটিও বটে
বয়স্ক মহিলাটি দেখতেও অনেক সুন্দর,,আমার তো এখন মন চাচ্ছে উনার থেকে টিপস নিতে
.
কিছু সময় পরেই স্পর্শর চাচি এক প্লেট খাবার এনে রিমের হাতে দিয়ে বললেন”খিধে পেয়েছে অনেক?”
.
রিম মুচকি হেসে বললো”কিছুটা”
.
আচ্ছা খাও,,লাগলে বলবা আরও দেবো
.
রিম খিধার চোটে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে
চাচি ফোন হাতে নিয়ে স্পর্শকে একটা ফোন দিলেন
ওদিকে স্পর্শ টেনসনে আছে বাবার করা প্রশ্ন গুলো নিয়ে
এরই মাঝে আবার চাচির কল দেখে সে ভাবনা থেকে বেরিয়ে কল রিসিভ করলো
.
কিরে স্পর্শ তুই নাকি তোর কোন কলিগরে আজ দাওয়াতে দিয়েছিলি?
.
স্পর্শ হাত দিয়ে কপাল টিপতে টিপতে বললো”হুম,কাজের জন্য আর আসা হয়নি,,”
.
সে এখন তোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে আমার কাছে এসেছে,আমি খেতে দিয়েছি,গরুর গোশত রেঁধেছিলাম
.
ভালো!!
নায়ায়ায়ায়া!ভালো না,গরুর মাংস দিসো কেন?ওর তো গরুর মাংসে হাই লেভেলের এলার্জি,অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে ওর,একবার ছাদের উপর বিনু আন্টির মেয়ের বিয়েতে ওকে দেখেছিলাম গরুর মাংস খেয়ে কি অবস্থা হয়েছিল
.
তুই ওরে এত ভাল মতন চিনিস?
.
স্পর্শ হালকা কেশে নিজের গালে নিজে চড় দিয়ে বললো”না মানে বাদ দাও ওসব,হাত থেকে মাংস কেড়ে নিয়ে সবজি খেতে দাও বরং
.
সেটা কেমন দেখা যাবে আবার,বাদ দে,খাক,একটু খেলে কিছু হবে না
.
স্পর্শ কফি এক গাল মুখে দিয়ে মাথার চুলগুলো টানতে টানতে ভাবতে থাকলো নেক্সট তার কি করা উচিত
.
এদিকে রিম পানি খেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”আচ্ছা আন্টি যাই আমি,,থ্যাংক ইউ,,খাবারগুলো অনেক মজার ছিল”
.
আবার এসো মা,,
.
রিম কোনোমতে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো,মাথা ঘুরে ভেতর থেকে বমি আসছে তার,গরুর মাংস খেতেই পারে না সে
হাঁচি কয়েকটা দিয়ে পথের কিনারা দিয়ে হেঁটে সে স্পর্শর বাড়ি ফিরছে,,হাঁচির জন্য এবার হাঁটতেও পারছে না
.
কোনোমতে বাসায় ঢুকে ফ্লোরে বসে ওড়না দিয়ে নাক মুছতে মুছতে এদিক ওদিক তাকালো,তারপর লম্বা হয়ে ভাতঘুম দিলো একটা
তারপর যখন সে চোখ খুললো তখন দেখলো একটা ছেলে তার সামনে দিয়ে একবার এদিক যাচ্ছে আবার ওদিক যাচ্ছে
রিম চোখ ডলে উঠে বসে বললো”কখন এলেন?”
.
ঠিক দশ মিনিট আগে
.
কি করছেন?
.
রিমের থাকার জন্য বাসাটা মানুষ করছি
.
রিমঝিম উঠে দাঁড়িয়ে দেখলো রান্নাঘরে পাতিল অনেকগুলো,চাল ডাল,সবজি,মাছ,ফিল্টার,তোষক,বালিশ আরও কত কি
.
এত কিছু?
.
স্পর্শ বোয়ামে চাল ডালতে ডালতে বললো”ভাবলাম বিয়ে ছাড়া সংসারটা শুরু করে ফেলি,কি বলো?”
.
বুঝিনি
.
মানে বললাম আমরা বিয়ে না করে সংসার করবো,যে সংসারে ছোঁয়া ছু্ঁয়ি থাকবে না,থাকবে শুধু খুনসুটি,চলবে?
.
রিম মাথা নাড়িয়ে বললো”দৌড়াবে”
.
ভাবলাম প্রতিদিন তো আর কলিগ সেজে চাচার বাসায় যেতে পারবে না তুমি,পরে সন্দেহের কাতারে এসে পড়বো আমরা দুজন
আর হোটেলের খাবারও আর কত খাব,তাই বাসায় নিয়ে আসলাম,গ্যাস তো আছেই
.
ভালো করেছেন
.
স্পর্শ বোয়ামের ছুপি লাগিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো”গরুর মাংস খেতে গেলে কি জন্যে?”
.
অনেকদিন খাই না তাই মন চাইলো বলে খেলাম,হাঁচি ছাড়া আর কোনো সমস্যা হয়নি
.
তোষক এনেছি ওটাতে শুবে,কাল খালি ফ্লোরে শুয়েছিল কোন সাহসে??
ভেবেছিলাম নিজের উপার্জনের টাকায় সব কিনবো
বাট এসব জরুরি বলে বাবার টাকাতেই কিনে নিলাম
.
বারবার পকেটে হাত ঢুকিয়ে কি দেখছেন এত?
.
স্পর্শ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো”বিয়ে ছাড়া সংসার শুরু করলাম তো,বউকে কিছু না কিছু তো দিতেই হয়,,তাই একটা গোলাপ এনেছি,,উইথআউট কাঁটা,,আর কিছু না”
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_২৬
Writer-Afnan Lara
.
রিম গোলাপটা হাতে নিয়ে ওলট পালট করে দেখে সোজা স্পর্শর রুমের দিকে গেলো
সেখান থেকে একটা খালি প্লাস্টিকের বোতল এনে সেটাতে পানি ভোরে গোলাপটা ঢুকিয়ে রাখলো সে
তারপর গালে হাত দিয়ে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ ধরে
.
স্পর্শ বিসকিট একটা নিয়ে চিবাতে চিবাতে বললো”তোমার জন্য কাল একটা সারপ্রাইজ থাকবে”
.
কি উপলক্ষে?
.
মানুষ সারপ্রাইজের কথা শুনলে বলে কি সেই সারপ্রাইজ,আর তুমি কিনা জিজ্ঞেস করছো কিসের জন্য সারপ্রাইজ?
.
আমি একটু অন্যরকম
.
স্পর্শ এক ঢোক পানি খেয়ে ফ্লোরে বসে বললো”নাহ,তুমি পুরোটাই অন্যরকম,,”
.
সে যাই হোক,আগে বলুন কিসের জন্য সারপ্রাইজ?
.
সেটা নাহয় সারপ্রাইজ দেখার পর বলবো
আচ্ছা যাও আমার বিয়ে না করা বউ আমার জন্য আর নিজের জন্য দুকাপ চা বানিয়ে আনো,ইস্পাহানি মির্জাপুর চাপাতা এনেছি,মার্কস মিল্ক পাউডার এনেছি,চিনিও আছে,ফটাফট বানিয়ে নিয়ে আসো
.
বিয়ে না করা বউ মানে কি আবার,এটা কেমন নাম?
.
হুম,আমারও মনে হয় নামটা বড় হয়ে গেছে,আচ্ছা ছোট করে ডাকি,বিয়ে না করা বউ=অবউ
.
অবউ?
.
মানে বউ না,কিন্তু বউ
.
রিম মাথায় হাত দিয়ে বললো”এতদিন আপনাকে হাফ মেন্টাল মনে করতাম এখন মনে হচ্ছে ফুল মেন্টাল”
.
কথাটা বলে রিম ওড়না গলায় দিয়ে পাশ দিয়ে এনে গিট্টু দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেছে
স্পর্শ মুচকি হেসে রান্নাঘরের দিকে চেয়ে থাকলো,,মন থেকে কিছু চাইলে আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না কখনও
রিমকে যে আমি মন থেকেই চেয়ে এসেছি,আর আজ সে আমার কাছে,আমার বাসায়,আমার সামনে সারাক্ষণ!
এর চেয়ে ভালো দিন আর কি হতে পারে
.
রিম চা বানিয়ে এনে স্পর্শকে দিয়ে বললো”ভাইয়ার কোনো খবর জানেন?আমি কিন্তু ফোন বন্ধ করে রেখেছি”
.
সেটা আর বলতে?তোমার ভাই সোজা গিয়ে বাবাকে ধরেছে,বাবা আমাকে ধরেছে
.
রিম নড়েচড়ে বসে বললো”তারপর তারপর?”
.
এমন ভাব করলাম যেন আমি তোমাকে চিনিই না,,ব্যস তোমার গাধা ভাই সন্দেহের লিস্ট থেকে আমার নামটা বাদ দিয়ে দিলো
.
আপনি ভাইয়াকে চেনেন না,নির্ঘাত এখান পর্যন্ত চলে আসবে
.
সেটা তখন দেখা যাবে,,বাই দ্যা ওয়ে চা কিন্তু ভালো হয়েছে
.
রিমের হাতের চা অলওয়েজ ভালোই হয়,,আচ্ছা শুনুন কাল অফিস থেকে ফেরার সময় আলু আনবেন,আলু সব তরকারিতে লাগে,তরকারিতে সবজি না হলেও শুধু আলু রান্না করে খাওয়া যায়,আপনি দেখি আলু এক্কেবারে কম এনেছেন
.
আচ্ছা আনবো,,তুমি রাঁধতে পারবে তো?
.
সেটা তো পারবো কিন্তু আপনি খাবেন কই??আপনার চাচার বাসাতে খেতে না গেলে উনারা আবার সন্দেহ করলে?
.
আরে সেটা আমি ম্যানেজ করে নেবো,বলবো অফিসে খাওয়াবে,,এখন যাও রাতের রান্নার ব্যবস্থা করো,আজ আমি আমার অবউয়ের হাতের খাবার খাবো
.
রিম চায়ের কাপগুলো নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেছে,,
স্পর্শ ফোন বের করে টিপতে টিপতে নিজের রুমে চলে আসলো
তারপর ফ্লোরে বিছানো তোষকের উপর লম্বা হয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে ওর মনে পড়লো তার রুমটা পুরো সাজানো গোছানো
অথচ জামাকাপড় ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকার কথা,নির্ঘাত এটা রিমের কাজ,ঘরে থেকে কি আর করবে,বসে বসে এসব করেছে

বাবা আমার মনে হয় আমাদের পুলিশে একটা মিসিং কমপ্লেইন করা উচিত
.
না না,রিম নিজ থেকে চলে গেছে,এতে আমরা কি করতে পারি রিহাব?
.
মা এসব কি বলছো,রিম বাচ্চা মেয়ে,ওর এখনও হিতাহিত জ্ঞান হয়নি,হয়তবা আবেগে আর জেদের বশে পালিয়েছে কিন্তু এর মাঝে যদি ওর কোনো বিপদ হয় তখন?বিপদে পড়ে সেই আমাদেরই তো মনে করবে তাই না?
.
যা ভালো বুঝিস কর

এই যে অস্বামী,রান্না হয়ে গেছে,এখন খাবেন?
.
স্পর্শ সেসময়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলো,রিমের মুখে নিজের এমন জঘন্য নাম শুনে তার হাত থেকে চিরুনিটাই পড়ে গেছে
হালকা কেশে রুম থেকে বের হতেই সে দেখলো রিম মুচকি মুচকি হাসতেছে আর প্লেটে ভাত বাড়ছে
.
প্রতিশোধ নিলা তাই না?
.
যা ভাবতে চান ভাবতে পারেন
.
যাই হোক,তরকারিতে কি আছে?
.
আমি আপাততর জন্য সিম কুচি কুচি করে আলু দিয়ে ভাজি করেছি,,খেতে মজার,আর মসুর ডাল রান্না করেছি
.
বাহ,পারফেক্ট,,চাচি সবসময় মাংস রাঁধে,আমার এরকম খাঁটি ছোটখাটো বাংলাদেশি খাবারগুলো জোস লাগে
.
কথা বলতে বলতেই স্পর্শ হাত ধুয়ে এসে খেতেও বসে গেছে
রিম হাতে নিজের প্লেট নিয়ে চুপ করে স্পর্শর মুখের দিকে চেয়ে আছে,জিজ্ঞাসু চোখে
.
স্পর্শ মুখে লোকমা দিয়েই বললো”বেশ হয়েছে”
.
রিম হেসে দিয়ে বললো”খাবার শেষে মাছগুলো সব কাটবো,কিন্তু কথা হলো আপনার বাসায় ফ্রিজ তো নেই”
.
আরে বাসায় ফ্রিজ নেই তো কি হয়েছে,পাশের ইউনিটে তো আছে,গিয়ে রেখে আসব
.
ভালো বুদ্ধি!!
.
খাওয়া শেষ করে রিম রান্নাঘরে গিয়ে মাছ কাটাতে মন দিলো
.
স্পর্শ পলিথিন হাতে বসে আছে রিমের সামনে,রিম সুন্দরমতন মাছ কাটছে
.
নিন কাটাও শেষ,এবার পলিথিন গুলো নিয়ে পাশের ইউনিটে রেখে আসেন,ততক্ষণে আমি ফ্লোর পরিষ্কার করে ফেলি
.
স্পর্শ রিমের কথা মতন চলে গেলো,,,রিম উঠে দাঁড়িয়ে হাতের কুনুই দিয়ে নিজের অবাধ্য চুলগুলো সামলানোর চেষ্টা করছে,খোঁপা করাই ছিল,কেমনে যেন খোঁপার কাঠিটা পড়ে গেছে আর চুলগুলোও খুলে গেছে
তাই রিম চুলগুলো কোনোরকম মুখের সামনে থেকে পিঠের দিকে নিয়ে যেয়ে সামনে পা রাখলো হাঁটার জন্য
তাও পা রাখলো কিসের উপর? মাছের উচ্ছিষ্টের উপর
পিছলিয়ে একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়লো সে
স্পর্শ মাছ রেখে এসে বাসায় ঢুকে দেখলো রিম পা ধরে নিচে বসে আছে আর উঠার চেষ্টা করছে
.
একি রিম কি হয়েছে তোমার?
.
পড়ে গেছি,সাথে ব্যাথাও পেয়েছি
.
বেশি?দেখি
.
পায়ে হাত দিবেন না
.
তো কি হয়েছে,আমিই তো
.
আরে সেটা না,আমার কাতুকুতু লাগে বলে মানা করলাম
.
আমার মনে হয় মচকায় গেছে,দেখি আগে উঠাতে হবে তোমাকে,এসব আমি পরিষ্কার করে নেবো পরে
.
উঠতে পারছি না,পায়ে ব্যাথা করে
.
স্পর্শ নিচু হয়ে রিমকে কোলে তুলে নিলো,তারপর ওকে ওর রুমে নিয়ে এনে নিচে বিছানো তোষকটায় বসিয়ে দিয়ে ড্রয়ার থেকে মলম বের করলো সে
.
রিম চুপ করে বসে আছে,স্পর্শ মলম লাগিয়ে দিতে দিতে বললো”বিয়ে না করার ফল”
.
রিম কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেসা করলো”কেন?বিয়ে করলে বুঝি আজ আমি পড়ে যেতাম না?”
.
পড়তে,কিন্তু আমি সামলে নিতাম অন্য ভাবে
.
এখন সামলাচ্ছেন না?
.
করছি,কিন্তু বউ হলে ব্যাপারটা অন্য রকম ছিল
.
আমার ব্যাগের উপর সাজিয়ে রাখা মাটির ফুলের টব টা দেখছেন?
.
হুম
.
ময়নামতি থেকে নিয়েছিলাম
.
তো?
.
তো ওটা দিয়ে এমন জোরে মাথায় এক বাড়ি দিব আপনার,বিয়ে করার স্বাদ উইড়া যাইবো
.
ওমা,কি দোষ করলাম?
.
যান তো,যান
.
হাত ধুবে না?
.
সেটা পরেরটা পরে,আপনি যান এখন,স্টুপিড!
.
স্পর্শ একটা ভেঁংচি কেটে চলে গেলো
.
রিম হাসতেছে অনবরত,তারপর হাসি থামিয়ে পা টা নাড়ালো চাড়ালো,এখন মোটামুটি আছে,মলম না লাগালেও ঠিক হতো
সামান্য এটা নিয়ে এত হাইপার!আবার বলে বউ হলে নাকি আরও হাইপার হতো,ভাগ্যিস বউ হইনি
.
স্পর্শ রান্নাঘর পরিষ্কার করে নিজের রুমে এসে মায়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলে নিচ্ছে,কারণ মাকে সে কথা দিয়েছিল প্রতিদিন ভিডিও কলে কথা বলবে
.
রিম নিজে নিজে উঠে হাত ধুয়ে কোনোরকম হেঁটে স্পর্শর রুমের দিকে আসলো একটু
স্পর্শ তার মায়ের সাথে কথা বলছে,লাউড স্পিকার দিয়ে রাখায় ওর মায়ের কথা জোরে শোনা যাচ্ছিলো
উনি বলছেন”জানিস রিমঝিম তো পালিয়েছে,কে জানে কোন ছেলের সাথে পালিয়েছে
তবে একেবারে ঠিক হয়েছে,তোর কপাল থেকে গেছে একেবারে,আমি তো মহাখুশি!রিপনকে বলেছি মিষ্টির প্যাকেট কিনে নিয়ে সবাইকে খাওয়াতে,টাকাও দিয়েছি
আমার ছেলের মাথার উপর থেকে শনির দশা বিদায় হয়েছে বলে কথা
.
মা প্লিস,বাদ দাও
.
রিমঝিম মন খারাপ করে আবার নিজের রুমে ফেরত চলে গেলো,,বিছানায় শুয়ে চোখটা বন্ধ করে তামিমের কথা মনে করলো সে
তামিমকে খুব মিস করছে সে
একমাত্র সেই ওকে বুঝতো
.♣
তামিম হা কর,এরকম মুখটা বাংলার পাঁচ করে রেখেছিস কেন?
.
আপু কখন আসবে?আমি আপুর হাতে ভাত খাব
.
মা চোখের পানি মুছে লোকমা বানাতে বানাতে বললেন”তোর আপুকে আমরা বেশি জোর করতে গিয়েছিলাম বলে সে আমাদের উপর রাগ করে চলে গেছে,না জানি কেমন আছে মেয়েটা,কিছু খেয়েছে কিনা কে জানে”
.
আপুকে তোমরা কষ্ট দিয়েছো,আমি দেখেছি আপু শুধু কান্না করতো
.
তোর আপু চলে আসবে,এখন নে হা কর,তোর আপু যদি এসে শুনে তুই খাবার খাসনি ঠিকমত তাহলে কিন্তু তোর সাথে রাগ করবে

স্পর্শ মায়ের সাথে কথা বলে রুমের লাইটটা অফ করতে গিয়ে থেমে গেলো,রিমের কথা মাথায় আসলো হঠাৎ,একবার গিয়ে দেখে আসবো?
না থাক,যদি ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখে রাগ করে?যাব না
কিন্তু মন যে আনচান করছে
গায়ে কম্বল টেনেছে কিনা কে জানে,ওর তো রাতে গায়ে কম্বল কাঁথা দেওয়ার প্রতি ইন্টারেস্ট জীবনে দেখি নাই আমি
স্পর্শ রুম থেকে বেরিয়ে সোজা গেলো রিমকে দেখতে তার রুমে
ওমা মেয়ে কি শেয়ানা,দরজা লক করে ঘুমিয়েছে,মানে সে জানত আমি দেখতে আসব??
এই মেয়েটা আমাকে জীবনেও বিশ্বাস করে না,অথচ আমার সাথে একই বাসায় থাকে
কি জিনিস রে বাবা!
.
ভাবতে ভাবতে স্পর্শ চলে গেলো ঘুমাতে
রিম বালিশে মাথা রেখে সামনের জানালাটা দিয়ে আকাশের চাঁদটা দেখছে,জানালাটায় কোনো পর্দা নেই
রিম তাই তাকালেই খোলা আকাশটা দেখতে পাচ্ছে,সাথে চাঁদ
কি সুন্দর লাগছে,মনটা চায় গিয়ে ছাদে বসি কিছুক্ষন,ছাদে বসে চাঁদটা দেখবো যতক্ষন না চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসে ঠিক ততক্ষণ
.
ইস আজ যদি রিমকে নিয়ে ছাদে যেতে পারতাম,চাঁদটা কি সুন্দরটাই লাগছে
চাঁদ অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত দেখা যেতো,কিন্তু এই আনরোমান্টিক,,অবউকে নিয়ে আমার এসব স্বপ্ন দেখাও সাজে না,,থাকুক গিয়ে
আমাকে নাকি ফুলের টব দিয়ে মারবে,কি সাহস!
আরে ও কি জানে আমি কতজনকে মেরে সেদিন বাসায় এসেছিলাম,জানলে আমাকে দিনে রাতে সালাম করতো
যাই হোক ও আমাকে ভয় পাক আমি সেটা চাই না,শুধু চাই আমাকে ভালোবাসুক,এত বাসুক যে আমি এতবছরের সিগারেটের নেশাটা এমনি এমনি ছাড়তে পারি
কারণ আমার যে ওর নেশা লাগবে,সিগারেটের না!
এই মেয়েটার কবে যে সুবুদ্ধি হবে আর আমার কাছে এসে বলবে! “স্পর্শ আই লাভ ইউ”

ভোর পাঁচটা পাঁচ বাজে অথচ রিমের খবর নাই,স্পর্শ ব্রাশ হাতে নিয়ে রিমঝিমের দরজার কাছে এসে টোকা দিতে গিয়েও দিল না
হয়ত রিম টায়ার্ড বলে আজ উঠতে পারেনি,আমি বরং বাইরে থেকে নাস্তা এনে রাখবো
.
রিমঝিম যখন উঠলো তখন সাতটা দশ বাজে
সে দরজা খুলে ড্রয়িং রুমে থাকা ঘড়িটার দিকে তাকাতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেলো
দৌড়ে রান্না ঘরের দিকে ছুটলো সে,স্পর্শ কানে ইয়ার ফোন গুজতে গুজতে বললো”দৌড়াতে হবে না,আমি নাস্তা এনে রেখেছি ম্যাডাম”
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে