দু মুঠো বিকেল পর্ব-২৭+২৮+২৯

0
1956

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_২৭
Writer-Afnan Lara
.
আমার না আসলে খেয়াল ছিল না,সরি
.
সমস্যা নেই,ফ্রেশ হয়ে নাও,তারপর নাস্তা করবা আমার সাথে,তবে চা কিন্তু তোমাকেই বানাতে হবে
.
রিম মুচকি হেসে চলে গেলো,এদিকে স্পর্শর বাবা আবার ফোন দিয়েছে ওকে
.
বাবা এসময়ে ফোন দিচ্ছে কেন???
হ্যালো বাবা
.
স্পর্শ!!! রিমের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না,এদিকে ওর কারনে আঁখি আর রিহাবের বিয়েটাও আটকে আছে,কি করি বলতো
.
আমি কি বলবো বাবা,আমাকে কেন বলতেছো??
রিমঝিম আমার কাছে নেই,তোমার যদি বিশ্বাস না হয় তোমরা চোদ্দ গুষ্টি এসে দেখে যাও
.
আরে কথা সেটা না,তোকে তো বিশ্বাস করি কিন্তু রিহাব নাকি আঁখিকে বলে যে সে তোকে সন্দেহ করছে
.
বেশ তো,ওকে বলো এসে দেখে যেতে,তাহলেই তো যত মিসআন্ডারস্টেন্ডিং আছে সেসব মিটবে
.
বলেছি কিন্তু সে একবার এক কথা বলছে,বুঝিস তো,একটামাত্র বোন ওর
.
বুঝি বুঝি,আচ্ছা বাই,আমি এখন নাস্তা করে অফিসে যাব
.
ঠিক আছে,ভালো থাকিস
.
রিম চুলগুলো বাঁধতে বাঁধতে রান্নার রুমে চলে গেছে,তারপর চা বসাতে বসাতে বললো”এত সিউর হয়ে যে সবাইকে আপনার বাসায় আসতে বলছেন যদি বাই চান্স কেউ এসে যায় তখন কি করবেন আপনি?”
.
চাবি তো আমার কাছে,আমার কাছে ওরা যাবে চাবির জন্য তার আগেই আমি তোমাকে সরিয়ে ফেলবো
.
আপনার চাচার কাছে এক্সট্রা চাবি থাকলে?
.
দুটো ছিল,এখন সেই দুটোই আমার কাছে,একটা তোমাকে দিয়েছিলাম,আরেকটা আমার কাছে
.
আরেকটা কথা,যদি পাশের ইউনিটে জিজ্ঞেস করে এই বাসায় কোনো মেয়ে থাকে কিনা তখন?
.
তুমি হয়ত খেয়াল করোনি,আমি বাসা থেকে বের হলে দরজা লক করে যাই
বাসায় কেউ থাকলে তো আর লক করতাম না,তাই না?
.
আপনাকে বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব না,শুধু এটাই বলছি প্লেটে পরোটা ভাজি নিয়েছি,এসে প্লেটটা নিয়ে খাওয়া শুরু করেন,আমি চা বসাচ্ছি
.
স্পর্শ রিমের পাশে দাঁড়িয়ে প্লেট টা হাতে নিয়ে রিমের দিকে তাকালো একবার
খয়েরী রঙের সুতির জামা রিমের গায়ে,,ওড়নাটা সে সামনে দিয়েছে,তারপর দুপাশে দিয়ে পিছনে ফেলেছে
জামার পিঠের উপর দুটো ফিতাতে গিট্টু লাগানো
স্পর্শ সে ফিতাটার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বললো”আমাদের ফিউচার কি রিমঝিম?”
.
রিম চমকে পাশে তাকালো স্পর্শর দিকে তারপর মুখটা ছোট করে বললো”ফিউচার দিয়ে কি হবে?”
.
স্পর্শ কপালটা কুঁচকে প্লেট হাতে নিয়ে চলে যেতে যেতে বললো”কি আর হবে,গাড়ী গাড়ী বাচ্চা হবে”
.
রিমঝিম চোখ বড়বড় করে দাঁড়িয়ে আছে,,আগে স্পর্শকে সে মুখের উপর না করে দিতো আর এখন না টা বলতে পারলো না
চা পাতা দিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সে কাপ হাতে নিলো
.
স্পর্শ মুখটা গোমড়া করে পরোটা খেয়ে যাচ্ছে
.
রিম ওর পাশে এসে বসতেই ও একটু সরে বসলো,রিম ব্রু কুঁচকে বললো”ঢং করতে হবে না”
.
কথাটা শুনে স্পর্শ দাঁত কেলালো তারপর রিমের দিকে হুট করে এগিয়ে গেলো সে
রিম তো ভয়ে ফ্লোরে আধশুয়ে গেছে
তারপর ঢোক গিলে বললো”কককককি এরকম এত কাছে আসলেন কি জন্যে?”
.
দূরে সরে গেলো বলো ঢং,এখন কাছে আসলাম,অঢং বলবা না?
.
সরুন আপনি,আমার দম আটকে আসছে
.
আচ্ছা সরলাম
.
রিম উঠে চলে গেলো চা আনতে,রান্নাঘরে এসে বুকে থুথু দিয়ে একটা নিশ্বাস ফেলে সে চা হাতে নিলো
স্পর্শ কঠিন একটা চাহনি নিয়ে রিমের দিকে তাকিয়ে আছে
এই চাহনি দেখে রিমপের হাত কাঁপছে অনবরত
স্পর্শ আরেকটু গভীর করে তাকালো,রিম মনে হয় এবার থমকে যাবে,হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলবে,শেষে বিরক্ত হয়ে সে বললো”আপনি একটু ঐদিকে তাকাবেন??চোখ দিয়ে তো আমাকে গিলে খাচ্ছেন রীতিমত”
.
স্পর্শ হেসে হেসে বললো”কি আর করবো,আসবাবপত্র বলতে তো আমার এই একটা জিনিসই আছে”
.
আমি জিনিস?
.
তোমাকে কই বললাম,বললাম আমার হাতের ঘড়ির দিকে চেয়ে,অফিস টাইম হয়ে গেছে,জলদি করে চা খেয়ে রেডি হয়ে যেতে হবে আমায়,দাও দাও,চা দাও”
.
স্পর্শ চায়ে চুমুক দিয়ে কাপ সাথে করে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো রেডি হতে
রিম পিছু পিছু এসে বললো”আজ সারাদিন কি করবো আমি?”
.
স্পর্শ টিশার্টের উপর দিয়ে হালকা নীল শার্ট পরতে পরতে বললো”কেন?রান্না করবা,কাজ তো দিলামই”
.
সেটা তো বারোটায় শেষ হয়ে যাবে,তারপর?
.
স্পর্শ ইসতিয়াক সাড়ে বারোটায় আসবে,চলবে??
.
এত জলদি আসবেন?
.
লাঞ্চ টাইমে আসব,খেয়ে আবার চলে যেতে হবে
.
তো তারপর বিকাল পর্যন্ত কি করবো?
.
কি করবা??আমার রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ো,আমার রুমের বারান্দা দিয়ে মিষ্টি আলো আসে
.
মিষ্টি হাওয়া শুনছি,কিন্তু আলো ও হয় নাকি?
.
মিষ্টি সব কিছু হয়,তুমি কি করে উপভোগ করবা সেটা তোমার ব্যাপার বুঝলে?
.
কথাটা বলে স্পর্শ পায়ের জুতার ফিতা লাগাতে লাগাতে আবার বললো”আমার কাছে আমার সামনের মানুষটার সবকিছু মিষ্টি লাগে”
.
রিম চোখ বড় করে বললো “মানে কি বুঝাতে চান আপনি?”
.
“আবারও নেগেটিভ??সবকিছু মিষ্টি মানেটা হলো…”
.
স্পর্শ ব্যাগ নিয়ে আবারও রিমের দিকে চেয়ে বললো”মানে ধরো তোমার কথা,তোমার হাসি,তোমার কাজ”
.
স্পর্শ বাসা থেকে বেরিয়ে দরজা লাগাতে লাগাতে বললো”আর শেষে তোমার ঠোঁটজোড়া”
.
রিম এপারে থেকে মুখে হাত দিয়ে চুপ করে আছে,কি অসভ্য লোকটা

আজকে রিম দোটানায় পড়ে গেছে,হাতে শিম আর টমেটো,মাছ আছে ইলিশ,আবার ফুলকপিও আছে,সবগুলো দিয়ে রাঁধবো??
রাঁধি!সাথে কিছু থাকলে ভালো হতো,,হুম ভালো বুদ্ধি!শিমের ভর্তাও বানাবো,কিন্তু ভর্তা করবো কিসে??
.
রিম নিজের ফোনটা খুঁজে হাতে নিলো স্পর্শকে ফোন দেওয়ার জন্য তখনই ওর মনে পড়লো তার কাছে স্পর্শর নাম্বারই তো নেই
এখন কি হবে?আবার আদা রসুন বাটাও তো লাগবে,ধুর ধুর!!
রিমঝিম ভাবতে ভাবতে ওর মনে পড়লো স্পর্শর রুমে সে লোহার হাতুড়ির মতন কি একটা যেন দেখেছিল যেটা হাতে নিয়ে স্পর্শ ব্যায়াম করে
তাই এক দৌড়ে সে স্পর্শী রুমে এসে হাজির হয়েছে
সেটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখে দাঁত কেলালো সে
এটা দিয়েই আদা রসুন থেতো করে তরকারিতে দেবো,ব্যস হয়ে গেলো,ইয়ে!!
.
সব রান্না শেষ করে রিম স্পর্শর অপেক্ষা করতেছে,সাড়ে বারোটা বাজতে দুই তিন মিনিট বাকি আর,এখনও আসছে না কেন?এত একা বাসায় থাকা যায় এত?বিরক্তি লাগছে প্রচুর

মা আমি কাল পরশুর দিকে স্পর্শ যে ফ্ল্যাটে থাকে সেটাতে গিয়ে চেক করে আসব,আমি ঐ স্পর্শকে একটুও বিশ্বাস করি না
আর তুমি ভাবো একটু,, যে ছেলে রিমঝিমের জন্য এতবছর ধরে পাগল ছিল সে কিনা এখন এত চুপচাপ??তা কি করে হতে পারে?
.
আসবো??
.
আঁখি?তুমি এসময়ে?
.
একটা কথা বলার ছিল,আপনি যে ভাইয়াকে এত সন্দেহ করছেন, ভাইয়া কিন্তু রিম এই বাসায় থাকা অবস্থাতেই উত্তরায় চলে গেছিলো,কারণ রিম ভাইয়ার থেকে হয়তবা দূরে সরতে চেয়েছে আর তাই ভাইয়াও ওর কথা রেখেছে তাহলে আপনি কেন ওকে সন্দেহ করছেন শুধু শুধু?
.
রিহাব আঁখি কিন্তু ঠিক বলছে
.
রিহাব চুপ করে থাকলো,আর কিছু বললো না
.
আঁখি রিহাবের কাঁধে হাত রেখে বললো”কদিন ধরে অফিস যাচ্ছেন না,খাচ্ছেন না,নিজের খেয়াল রাখুন অন্তত
.
আমার বোন কেমন আছে তা জানি না আমি, আমার নিজের খেয়াল রাখার কোনো মনমানসিকতা আপাতত নেই

রিম গালে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে,স্পর্শ ঠিক সাড়ে বারোটায় বাসায় ঢুকেছে,রিম ওকে দেখেই মুচকি হাসলো তারপর আবার মুখটা গোমড়া করে বললো”এটা কেমন কথা বলুন তো?আমার কাছে আপনার নাম্বার নেই কেন?”
.
সেটা তো তুমি জানো,এতটা বছরে কয় লাখ বার কল দিসিলাম তোমায়,জীবনে সেভ করো না এখন আবার আমাকে চোখ রাঙাতে এসেছে!!!
.
স্পর্শর ধমকে রিমের চোখে পানি এসে গেছে,বাচ্চাদের মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো সে,তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো
.
স্পর্শ এক হাতে ব্যাগ আর আরেক হাতে নিজের টাইটা ধরে দাঁড়িয়ে আছে
পথে দাঁড়ানো অসহায় ভিখারী মনে হচ্ছে নিজেকে,কি বললাম আমি??
ধমক দিলাম না তো,তাহলে ছলছল চোখে তাকিয়ে চলে গেলো কেন?সামান্য দু লাইনও বলা যাবে না?
ছেলেরা বউকে কথা বলার আগে ভেবেচিন্তে বলে এটা বিশ্বাস করতাম না এতদিন তবে আজ কেন যেন খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে কথাটা
আসলেই ভেবে শুনে বলতে হবে

রিম গুটিশুটি দিয়ে নিচে বিছানো তোষকে বসে আছে
স্পর্শ দরজার কাছে এসে বললো”অবউ!খিধে পেয়েছে,খেতে দিবা না?”
.
ধমক দেওয়ার আগে ভাবা উচিত ছিল
.
তুমি খাবার না দিলে আমি কিন্তু নিয়ে খাব না বলে দিলাম,আর দরকার পড়লে চাচার বাসায় গিয়ে খেয়ে আসব,আমার ও রাগ কম না হুহ
.
কথাটা বলে স্পর্শ উল্টো পথে হাঁটা ধরলো
.
রিম পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো স্পর্শ চলে যাচ্ছে দরজা খুলে
ওকে চলে যেতে দেখে ওড়না নিয়ে ছুটলো রিম সেদিকে তারপর চিৎকার করে বললো”দিচ্ছি খাবার!বসুন”
.
স্পর্শ মুচকি হেসে হাত ধুতে চলে গেলো,রিম মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে বললো”এই লোকটার সাথে রাগ করেও পার পাওয়া যাবে না,আগেই বুঝা উচিত ছিল আমার”
.
রিম খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো”আদা রসুন বাটা বা ভর্তার করার তো পাটা নেই আবার মিক্সার ও নেই,আমার আজ অনেক কষ্ট হয়েছে”
.
সবুর করো,এনে দেবো,,আস্তে আস্তে সাজাচ্ছি সব,তাড়াহুড়ো করলে খারাপ জিনিস পড়বে কপালে
.
রিম হালকা আড় চোখে তাকালো একবার তারপর নিজে খাবার মুখে দিতে দিতে বললো”আমার জন্য না কিসের সারপ্রাইজ আছে?
.
যখন দিব তখন দেখবা
.
রিম এবার প্রচণ্ড রেগে গেছে,দাঁতে দাঁত চেপে বললো”কথা সব এমন ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারছেন কি জন্যে??কি করছি আমি??সুন্দর করে কথা বলতে পারেন না?”
.
আবার বড় বড় কথা,এবার আমি চড় মেরে বসিয়ে রাখব তোমায়,খুব পাকা পাকা কথা শিখেছো
.
আপনি মারবেন আমায়???
.
রিম চড় বসিয়ে দিলো স্পর্শর গালে,তারপর বললো”নিন আমি মেরে দিলাম,এবার কি করবেন করেন”
.
স্পর্শ খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললো”যাক আরেকটা চড় হাসিল করে নিলাম তাহলে!
.
রিম যেন আকাশ থেকে পড়লো,তার খাওয়াই বন্ধ হয়ে গেছে,জেদের বসে সে কিনা বিপদের মুখোমুখি এসে গেলো
“কি বোকা আমি,ধুর ধুস,অসহ্য!”
.
আরও মারো,ভাল্লাগছে
.
কথা বলবেন না একদম,আপনি একটা গুটিবাজ
.
স্পর্শ খালি প্লেট নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বললো”সেঞ্চুরি পূর্ন হলে- এই স্পর্শ তোমাকে স্পর্শ করবে মনে রেখো অবউ”
.
রিমঝিম কথাটা শুনে ঢোক গিললো,আর প্রতিজ্ঞা করলো যে সে আর জীবনেও স্পর্শর গায়ে হাত তুলবে না,
“কি একটা বিপদে আছি আমি ধুর!”
.
স্পর্শ হাত ধুয়ে আবার বেরিয়ে গেছে অফিসের জন্য,রিম স্পর্শর রুমের দরজার কাছে এসে ওর বিছানার দিকে চেয়ে আছে
উনি বললেন মিষ্টি আলো আসে,তা তো বুঝলাম কিন্তু আলো আসলে ভালো ঘুম হয় সেটা বুঝলাম না আমি
যাই হোক,একবার ট্রাই করে দেখি কি হয়
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_২৮
Writer-Afnan Lara
.
রিমঝিম নিচে বিছানো তোষকের উপর বসে বারান্দার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো
মিষ্টি আলো যে বলেছিল সত্যিই কিন্তু তাই,,এবার ঘুম আসে কিনা সেটাই দেখার বিষয়
.
রিমঝিম অনেকক্ষণ বসে থাকার পর ওর মনে হলো খুব করে ঘুম আসছে,কিন্তু কেন?চারটা বেজে এসেছে আমার তো এ সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস নেই
তাও এসব ভাবতে ভাবতে রিমঝিম ঘুমিয়েই পড়লো শেষমেষ

স্পর্শ ঠিক সাড়ে পাঁচটার দিকে বাসায় ফিরলো তাও সাথে নিয়ে ১৫/২০টার মতন ফুল গাছের টব
রিমের বারান্দা সাজাবে তাই,এটাই সেই সারপ্রাইজ
রিমঝিম যে ফুলগাছ পাগলি তা স্পর্শ ভালোমতন জানে তাকে আর মুখ ফুটে বলার প্রয়োজন নেই,অবশ্য স্পর্শ রিমের ব্যাপার এ টু জেট সব জানে,,কোনো কিছুই অজানা নয়
তো সে চুপি সারে দরজা খুলে এদিক ওদিক তাকালো,
রিমঝিমের রুমটার দরজা খোলা,ভেতরে সে নেই,তার মানে যা ভেবেছিলাম তাই
রিম আমার রুমেই ঘুমাচ্ছে,যাক ভালো হয়েছে,এ সুযোগে আমি ফুলগাছগুলো নিয়ে সাজাই
দারোয়ান না থাকলে এতগুলো টব আনতে আনতে আজ আমার ভোররাত লেগে যেতো
.
ভেতরে ঢুকে স্পর্শ আলতো করে দরজা লাগিয়ে সোজা গেলো রিমঝিমের রুমের বারান্দার দিকে,পাক্কা এক ঘন্টার মধ্যে সে বারান্দাটা প্রায়য়ই সাজিয়ে ফিটফাট করে ফেললো
তারপর কপালের ঘাম মুছতে মুছতে নিজের রুমে এসে দেখলো রিম ওর কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে মুখটা ভেতরে গুজে ঘুমাচ্ছে,যেন এক ছোট্ট শিশুর মতন
.
স্পর্শ ওর কাছে এসে ওর কপালটা ছুঁতেই রিমঝিম চোখ বড় করে তাকালো ওর দিকে তারপর সরে গিয়ে উঠে বসে পড়লো সে
এরকম সাথে সাথে জেগে যাওয়ার কারণ আছে আর তা হলো স্পর্শর হাত ঠাণ্ডা ছিল
.
স্পর্শ হালকা কেশে বললো”জাস্ট একটু গালটা ধরে দেখতে চাইলাম,তা আর ভালোমতন হলো না”
.
রিম উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো”আর হবেও না”
.
স্পর্শ মুচকি হেসে রিমের কাছে এগিয়ে আসতেছে
রিম ভয়ে দেয়ালের সাথে লেগে গেছে ততক্ষণে
তারপর ও মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই স্পর্শ ওর চোখে একটা গোলাপি ফিতা বাঁধা শুরু করে দিলো
.
এই এই কি করছেন আপনি,চোখ বাঁধছেন কেন?
.
বললাম না সারপ্রাইজ দেবো
.
ওহ,,তাহলে ঠিক আছে,চেঁচাবো না আর
.
চেঁচালে দাঁত ভেঙ্গে দিব তোমার
.
স্পর্শ রিমের হাত ধরে টেনে ওর রুমে নিয়ে আসলো তারপর বারান্দায় এসে ওর চোখ থেকে ফিতাটা খুলে ফেললো
রিমঝিম হা করে তাকিয়ে আছে,পুরো বারান্দার গ্রিল জুড়ে ছোট বড় ফুলের টব,নানান প্রজাতির
খুশিতে রিমঝিমের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না,স্পর্শ ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো”সারপ্রাইজ ”
.
রিম মুচকি হেসে ওর দিকে তাকিয়ে এক লাফ দিয়ে বললো”জলদি করে ফ্রেশ হয়ে আসেন,বাঁধা কপির পাকোড়া আর চা খাওয়াবো এই খুশিতে”
.
স্পর্শ মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে বললো”হাত পা টিপে দিবা,অনেক কষ্ট করেছি”
.
রিমের সেদিকে খবর নেই,সে ফুলগুলো সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে যাচ্ছে

স্পর্শ ফ্রেশ হয়ে বের হতেই নাকে পাকোড়ার ঘ্রান আসলো,আর এক দৌড়ে সে রান্নাঘরে এসে হাজির
রিম পাকোড়া ভাজছে
স্পর্শ বাটি থেকে গরম গরম একটা নিয়ে মুখে পুরে হা হু করতে করতে বললো””এটা দেখি খুব গরম”
.
সবেমাত্র নামিয়েছি,আপনার দ্বারা কি সবুর জিনিসটা হয় না একদমই?
.
কে বলে হয় না,এতটা বছর ধরে তোমাকে কিছু করি নাই সেটা কি আমার সবুর হওয়ার প্রুভ দেয় না?
.
আমাকে কিছু করেননি মানে কি বুঝাতে চান?
.
রিম হাতে চামচ নিয়ে নাড়িয়ে নাড়িয়ে স্পর্শের দিকে চেয়ে কথাটা বললো
.
স্পর্শ ঢোক গিলে বললো”না মানে ধরো প্রেম করলাম না সেটা আর কি,নেগেটিভ ভাবো কি জন্যে?”
.
আপনার সাথে পেঁচাল করাই বেকার,যান তো এখান থেকে
হুদাই বিরক্ত করতে আসে
.
আমার বাসা!! আমার রান্নাঘর,আমার….
.
রিম চোখ বড় করে চেয়ে বললো”খোঁটা দিচ্ছেন??চলে যাবো??”
.
না না,থাকো,হুমকি দিও না,যাচ্ছি আমি
.
রিমঝিম চুপচাপ সব পাকোড়া বানিয়ে চা বসিয়ে দিয়ে স্পর্শর কাছে গেলো
স্পর্শ নিজের রুমে গালে হাত দিয়ে বসে রিমের ছবির সাথে কথা বলছে
.
এই রিম,মাই অবউ!!!
তোমার কি দিলে দয়া হয় না??
এত হ্যান্ডসাম একটা রেডিমেড ছেলে পেয়েও তোমার কোনো কিছুই ফিল হয় না?
মানে আমার সাথে রেডিমেড বাসাও ফ্রি,সব ফ্রি জাস্ট তুমি হ্যাঁ বললে বাচ্চাও ফ্রি হয়ে যাবে
বাট তুমি???যাকে বলে সুখে থাকতে ভূতে কিলায়
তোমার হয়েছে সেটা,আরে এখন সময় হলো আমাদের সংসার করার,হ্যাঁ মানছি আমরা অলরেডি সংসার করছি কিন্তু সংসার পূর্নতা পায় তখন যখন সেখানে স্বামী এবং স্ত্রী থাকে,বাচ্চাকাচ্চা থাকে
সো ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড
একা রুমে শুতে তোমার কেমন লাগে??খারাপ তাই তো?
খারাপ লাগবেই,ভয় ও লাগবে
কিন্তু ধরো যখন আমরা বিয়েটা করে নেবো তখন না ভয় লাগবে না একা একা লাগবে
তাই না রিম???
.
রিম দরজার কাছে দাঁড়িয়ে স্পর্শর সব কথাগুলো শুনলো,তারপর কপালটা কুঁচকে বললো”চুলার তাকটার নিচে একটা ঝাড়ু দেখেছিলাম,আপনি দেখেছেন?”
.
স্পর্শ রিমের ছবির দিকে তাকানো অবস্থায় বললো”দেখেছি,তো??”
.
তো সেটা দিয়ে পিটিয়ে পিঠের ছাল তুলে দেবো
.
স্পর্শ ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে হকচকিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে রিমকে দেখতেই ভয়ে গলাটাই শুকিয়ে গেলো তার
রিম এগিয়ে এসে পাকোড়ার বাটিটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে দূরত্ব বজায় রেখে বসে বললো”আচ্ছা আপনার কাছে কোনো উপায় না পেয়ে থাকতে আসাটা কি অপরাধ ছিল আমার??আপনি সেই শুরু থেকে বিয়ে বিয়ে করে যাচ্ছেন,আমার দূর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন??এতটাই অসহায় আজ আমি যে কিছুই করতে পারছি না”
.
স্পর্শ মুখটা ছোট করে বললো”তোমার দূর্বলতার সুযোগ আমি নিই নাই কখনও,আর নেবো ও না, অন্তত এই অপবাদ দিও না,আমি তিনটা বছর ধরে তোমাকে চেয়ে এসেছি,কিন্তু তুমি কখনও চাওনি আমাকে,তুমি আমার থেকে মুক্তি চেয়েছো বলে আমি আমার পরিবার ছেড়ে এখানে চলে এসেছিলাম
কারণ তোমাকে কাছে রেখে তোমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখা আমার কাম্য নয়
কদিন ধরে নিজেকে মানিয়েও নিয়েছিলাম
কিন্তু তার পরেও তুমি আমার কাছে ফিরে এলে,এমন অবস্থাতে ফিরে এলে যেসময়ে তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কেনো ওয়ে ছিলো না আমার হাতে
সেই তুমি আবারও আমার কাছে,এমনকি এখন আগের চেয়েও বেশি কাছে,সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে আমি তোমাকে দেখি,এখন এর পরেও তোমাকে সামনে পেয়েও না ছোঁয়ার বা অনুভব না করার ধৈর্য আমি রাখতে পারছি না রিম
.
তাহলে আমি চলে যাব,আপনার যাতে এত কষ্ট হচ্ছে
.
থাক!আমি নাহয় নিজেকে অন্য নেশায় আসক্ত করে নেবো যাতে তোমার নেশা আমাকে না ধরতে পারে,চেষ্টা করবো
তাও আমার থেকে চলে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে এনো না
.
রিম কিছু না বলেই উঠে চলে গেলো
.
স্পর্শ ওর চলে যাওয়া দেখছে,রিম দরজা পর্যন্ত গিয়ে থামলো তারপর পিছন ফিরে বললো”যাব না,আপাতত রান্নাঘরে যাচ্ছি,চা বসিয়েছিলাম তো তাই”
.
স্পর্শ মুচকি হেসে পাকোড়ার বাটিটা হাতে নিলো সাথে সাথে
.
🕥🌥️
.
স্পর্শ একটা বই হাতে নিয়ে ওলট পালট করছে আর চা খেয়ে যাচ্ছে
রিম তার বারান্দা বিলাসে বেশ ব্যস্ত, মাঝে মাঝে চায়ে চুমুক ও দেয় যদিও,শীতকালে আবার জলদিতে চা ঠাণ্ডা হয়ে যায়
তাই রিম এত ব্যস্ততার মাঝেও চায়ে চুমুক দিতে ভুলছে না
এখানে একটা চেয়ার নিয়ে উপন্যাস পরলে মন্দ হতো না
কিন্তু এই লোকটার বাসায় তো কিছুর ছিঁটেফোটাও নেই
গিয়ে যে জিজ্ঞেস করবো সেটাও হবে না
শুরু করবে বিয়ে নিয়ে আলাপ,এতগুলো চড় মারলাম তাও বুদ্ধি খুললো না লোকটার,অসহ্যকর
.
রিম খালি চায়ের কাপটা এনে রান্নাঘরে রেখে সব রুমে লাইট জ্বালালো কারণ সন্ধ্যা হয়ে গেছে
স্পর্শর রুমে বাতি জ্বলছে না আর এর ভেতরে কোনো সাড়াশব্দ ও আসছে না,কি ব্যাপার কি হলো?
রিম জলদি করে ওর রুমের দরজার কাছে আসতেই দেখলো
মহাশয় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছেন,হাতের বইটাও আগোছালো করে রেখেছে
অবশ্য অফিসে যে কাজ করে তাতে এমনটাই হওয়ার কথা
আর প্রাইভেট কোম্পানি গুলোর কথা নাই বললাম
.
রিম কাছে এসে স্পর্শর হাত থেকে বইটা নিয়ে ওর গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে পাশে বসলো,তারপর বইটা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখা শুরু করলো সে
বইটা একটা ইংলিশ বই
নাম হলো-“Emma Illustrated”
কভারে একটা লোক বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়ে আছে,তার পাশে একটা মহিলা,মনে হচ্ছে তারা স্বামী স্ত্রী আর কোলের এটা তাদের বেবি
একটা নোবেল বই,এটা লিখেছেন “Jane Austen”
যাই হোক সব কৌতুহল এখান পর্যন্ত সীমিত ব্যস!
আমি পরবো না এটা
ইংলিশ বইগুলো পড়তে হলে ইংরেজীতে পারদর্শী হওয়া লাগে
আমার আবার এত জ্ঞান বুদ্ধি নাই,আমি বাংলা মিডিয়ামে পড়েছি,পড়লে বাংলা উপন্যাসই পড়বো,এসব এই করলা টাইপ লোকটা পড়ুক,হিহি করলা!
রিম ফিক করে হেসে দিলো,তারপর উঠে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে
গালে হাত দিয়ে সে এখন বারান্দায় একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছে
কি একটা বোরিং লাগছে সব
বাসায় সবার মাঝে থেকেও এই লোকটাকে মিস করতাম আর এখানে এই লোকটার কাছে থেকে বাকি সবাইকে মিস করছি,,
রিমঝিম ফোনটা খুললো,তারপর কিসব ভেবে আবার অফ করতে যেতেই কল আসলো বাসার ল্যান্ড লাইন থেকে
রিমের তো চোখ কপালে,সে ঢোক গিলে ভাবনায় পড়ে গেলো ধরবে কি ধরবে না
তারপর অনেক ভেবে কলটা ধরলো
ওপাশ থেকে ছোট্ট আওয়াজ ভেসে আসলো
আর সেটা হলো”রিম আপু”
.
রিমের কলিজাটা যেন ঠাণ্ডা হয়ে গেছে,চোখে পানি চলে এসেছে তার
কিছুক্ষন চুপ থেকে সে বললো”তামিম?কেমন আছিস?”
.
আপুু!!
.
তামিম কেঁদে ফেললো,আর কিছু বলতে পারছে না সে
.
রিম নিজেও কাঁদছে,তাও নিজেকে সামলে বললো”কাঁদিস কেন,কান্না থামা,আপুর সাথে কথা বলবি না?”
.
আপু খেয়েছো?
.
হুমম,তুই খাচ্ছিস তো ঠিকমত?
.
হুম,খাচ্ছি,,মা বলেছে তুমি আমার না খাওয়ার কথা শুনলে রাগ করবে তাই খাচ্ছি,আসবে কবে??
.
আসব একদিন,বাকি সবাই কেমন আছে?আর তুই ঠিক এসময়ে আমাকে কল করলি কি করে?তুই জানলি কি করে আমি ফোন খুলেছি?
.
সবাই প্রথমদিন তোমাকে ফোন করার পর বন্ধ পেয়ে আর ফোন করেনি,কিন্তু আমি রোজ এসময়ে তোমাকে ফোন করি,ফোন প্রতিবার বন্ধ বলে,তবে আজ খোলা বললো
.
কথাটা শুনে রিমের বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে,,তারপর সে শক্ত গলায় বললো”আপু জলদি ফিরে আসব,কাউকে বলবি না আমার সাথে যে তোর কথা হয়েছে,রোজ এসময়ে আমাকে ফোন দিস কেমন?”
.
আচ্ছা,বাই
.
রিম লাইন কেটে দিয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো
.
জীবনটা কি কঠিন,গোলকধাঁধার মতন,মানুষ কি চায় তা সে নিজেই জানে না
আসলে বর্তমান নিয়ে খুশি হতে পারে খুব কম মানুষ
কেউ অতীত মনে করে বর্তমান ভবিষ্যত দুটোই নষ্ট করে আর কেউ ভবিষ্যত মনে করে বর্তমান নষ্ট করে
এখন মনে হচ্ছে সেদিন স্পর্শর থেকে মুক্তি না চাইলে আজ এতকিছু হতোই না
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_২৯
Writer-Afnan Lara
.
স্পর্শ ঠিক সাতটার দিকে উঠে পড়লো আবার,,মাথার পাশে বইটা বন্ধ করে রাখা দেখে তার আর বুঝতে বাকি নেই যে রিম এসেছিল
বিছানা ছেড়ে উঠে সোজা রান্নাঘরে গেলো সে,,পানি এক গ্লাস হাতে নিয়ে খেতে খেতে রিমের রুম পর্যন্ত এসে বললো”আসবো?”
.
রিম বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দূরের একটি বাড়ির ছাদ দেখছিলো,,স্বাভাবিক গলায় সে বললো”আসুন”
.
বোরিং লাগে?
.
রিম জানালার গ্রিল থেকে মাথাটা উঠিয়ে বললো”প্রচুর”
.
তাহলে চলো যাই?
.
কোথায়?
.
স্ট্রিট ফুড খেতে আর স্ট্রিটে হাঁটতে
.
রিম মুচকি হেসে বললো”আপনার চাচা যদি দেখে ফেলে?”
.
অন্য গলিতে যাব দরকার হলে,এখন যাবা কিনা সেটা বলো নাহলে আমি যাই,,সিগারেট কিনতে
.
রিমঝিম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো”যাব তো,চলুন”

রাত ৮টার ঢাকা শহর,তবে গলি আর কি
মেইন রোডে তারা আর গেলো না,গলি গলিতেই হাঁটছে
রিমের চোখ আশেপাশের রাস্তা গুলোর দিকে,আর স্পর্শর চোখ রিমের দিকে কিন্তু যখন রিম ওর দিকে তাকায় মাঝে মাঝে তখনই সে মুখটা ফিরিয়ে নিচে রোডের দিকে নেয়,মানে সে বুঝাতে চায় যে সে রোড দেখতে দেখতে হাঁটছে,রিমের দিকে নয়
.
রিম একটা শব্দ কথাও বলছে না,শেষে স্পর্শ বলে উঠলো”তুমি জানো আমরা কতদূর চলে এসেছি?”
.
কতদূর?
.
ফুলবাড়িয়া
.
আমাকে জায়গার নাম বলে লাভ নাই,আমি ধানমন্ডি ছাড়া আর কিছুই চিনি না
.
সে যাই হোক এবার তো মেইন রোডে চলো,মেইন রোড না গেলে ঝালমুড়ি -চটপটি কই পাবা?
.
আমার দিকে তাকিয়ে দেখুন,বাসায় পরা জামা আমায় গায়ে
মানুষ কি বলবে?
.
সয়ং আমি কিছু বলছি না আর তুমি মানুষ কি বলবে তা নিয়ে ভাবছো?
.
আপনার সাথে সামান্য কথা বলাও পাপ আমার,চলুন এখন,শুধু ভেলপুরি খাওয়ালেই হবে,এমনিতেও বিকালবেলা পাকোড়া খেয়েছিলাম
.
আগে চলো
.
দুজন মিলে এই গলি ছেড়ে মেইন রোডে আসতেই এক কাতারে স্ট্রিট ফুডের দেখা পেয়ে গেলো
রিম একটা চেয়ার টেনে বসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,তার মনে হচ্ছে তাকে বাসার জামাতে জরিনা সখিনা মনে হচ্ছে,ইস কি লজ্জা,এমন জানলে বোরকাটা পরে আসতাম,এদিকে এই মহাশয়কে দেখো কি সুন্দর জিন্স,আর হুডি পরে নায়ক নায়ক লুক নিয়ে রোডে ঘুরঘুর করছে
.
স্পর্শ ভেলপুরি আর ঝালমুড়ির অর্ডার দিয়ে আসতে আসতে বললো”আমাকে ওমন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলা কেন?”
.
গিলবো না?আপনাকে তো আগে চিবানো উচিত
.
তো আমি আগেই বলেছিলাম আমরা স্ট্রিট ফুড খেতে বের হচ্ছি,তুমি তৈরি হয়ে নিলেই পারতা,আমি তো আর মানা করিনি,আর এখানকার মানুষরা নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায়,,আরেকজন কি পরলো না পরলো,ভালো জামা পরলো নাকি উল্টো জামা পরলো তাতে তাদের কিছু যায় আসে না
.
রিম পাল্টা জবাবে কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা ছেলে দূর থেকে আসতে আসতে বললো”স্পর্শ!!”
.
রিম নিজের মুখের কথা মুখের ভেতরই রাখলো আর বের করলো না কারণ যে ছেলেটা এদিকেই আসছে,এবং তার কোলে একটা বাচ্চা আর পাশে তার বউ,তাও কি স্মার্ট,এদিকে রিম জরিনা হয়ে বসে আছে,এখন কোনদিকে পালাবে সে
.
আরে সিয়াম যে,আসো আসো,বসো,,আড্ডা হবে তাহলে
.
পাশে কে??তোমার ওয়াইফ?
.
কথাটা শুনে রিম চোখ বড় করে না বলতে যাবে তার আগেই স্পর্শ দাঁত কেলিয়ে বললো”হ্যাঁ,যার কথা বলেছিলাম”
.
রিম রীতিমত টাসকি খেয়ে স্পর্শর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আর এদিকে স্পর্শ ভুলেও ওর দিকে তাকাচ্ছে না
.
সিয়াম তার বউকে নিয়ে স্পর্শ আর রিমের সামনা সামনি বসলো
স্পর্শ আর সিয়ামের কথাবার্তায় বোঝা গেলো সিয়াম হলো স্পর্শের অফিসের কলিগ
সিয়ামের ওয়াইফ হিয়া চেয়ার টেনে রিমের পাশে বসে বললো”তা বিয়ে তো হলো নতুন,,,হানিমুনে কোথায় গেলা??”
.
রিম কি বলবে না ভেবে পেয়ে বাচ্চাটার গাল টেনে বললো”আপনার বাবুটা কিউট”
.
তুমিও কিউট,খুব কম বয়সে বিয়ে করছো মনে হয়??
.
স্পর্শ মুখে একটা হাসি রেখে রিমের দিকে তাকাচ্ছে আর সিয়ামের কথার উত্তর দিয়ে যাচ্ছে,এদিকে মূহুর্তেই বিবাহিত এওয়ার্ড পেয়ে রিম আবোলতাবোল উত্তর দিয়ে যাচ্ছে হিয়াকে
যেমন হিয়া বললো”বিয়ের পর হানিমুন গিয়েছিলো কিনা ওরা,গেলেও কোথায় গিয়েছিল”
.
রিম কপালটা কুঁচকে বললো”কি আর বলবো ভাবী,আপনার ভাই এত কিপটা আমাকে বিয়ের পর আজকেই বাসা থেকে বের করেছে তাও এখানে ভেলপুরি খাওয়ানোর জন্য
.
একি স্পর্শ ভাইয়া,রিম এসব কি বলছে?
.
কি বলছে?
.
বলছে আপনি নাকি কিপটা?
.
কিছু ছেলে তো বাসা থেকেই বের হয় না,অফিস টু হোম,হোম টু অফিস
আমি তেমন হয়নি বলে ওকে বলেন মাথা ঠুকরিয়ে শুকরিয়া বলতে
.
হিয়া মুখটা ছোট করে বললো”ঠিক বলেছেন,, হোম টু অফিস আর অফিস টু হোম টাইপের ছেলে যদি দুনিয়াতে থেকে থাকে,,তবে সেই সারির প্রথমজন আমার হাসবেন্ড”
.
স্পর্শ দাঁত কেলিয়ে সিয়ামের কাঁধে হাত রেখে বললো”তাও তো আপনি ওকে পরী একটা গিফট করেছেন,নাহলে এমনি এমনি মানুষ কি বা গিফট করে,আজকালকার মেয়েরা বিয়ের পাঁচ ছয় বছরেও বাচ্চা নিতে বললে বলে ফিগার নষ্ট হয়ে যাবে”
.
রিমের গায়ে লাগলো কথাটা,স্পর্শ এমন খোঁচা মেরে কথা বলছে কেন??আমাকে কি বিয়ে করেছে?বিয়ে করলে নাহয় পরেরদিনই না মানে এক বছর পরই বাচ্চা গিফট দিতাম,তাই বলে খোঁচাচ্ছে কেন??
.
থাক থাক,এমন কম বয়সের বউ থেকে এত জলদি এসব আশা করবেন না ভাইয়া,একে আগে ম্যাচিউর হতে দিন
.
আমি তো এখনই গিফট চাচ্ছি না,,কথার কথা বললাম
.
আচ্ছা ভাই শপিং করতে বেরিয়েছিলাম এমনিতেও লেট হচ্ছে আমরা আপাতত যাই,তুমি কিন্তু তোমার বউরে নিয়া আমাদের বাসায় আসবা অবশ্যই
.
আচ্ছা আসবো
.
রিম কোমড়ে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে স্পর্শের হুডির রশি টান দিয়ে বললো”বাচ্চা???পাঁচ ছয় বছরেও না???বাসায় চলো তোমার হাড় গুড়ো করে তাতে হরলিকস মিক্স খাওয়াবো,বেয়াদব কোথাকার”
.
ওমা,তোমার গায়ে লাগলো কেন??আমি তো আমার বউকে বললাম,মানে যে ফিউচারে হবে,তুমি তো আমার বউ না তাহলে এত গরম দেখাচ্ছো কেন?
.
উনাদের কাছে তো আমি আপনার বউ
.
আমার কাছে তো না,সমাজের কাছে তো না,তাহলেই তো হয়
.
তাহলে আর উনাদের কাছে আমাকে আপনার বউ বানালেন কেন??ফ্রেন্ড বললেই হতো
.
আরে বিষয়টা হলো নতুন বিবাহিত কর্মচারীকে বোনাস দেওয়া হয় আমাদের অফিস থেকে,আর এসময়ে আমার টাকার প্রয়োজন ঘরটা সাজানোর জন্য,আর তাই আমি কাল বলেছি আমার হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেছে,যে কারণে এ মাসের শেষে আমাকে বোনাস সমেত বেতন দেওয়া হবে,বুঝছো খুকি?
.
আচ্ছা,আর বাচ্চা হলে বোনাস দেয়?
.
স্পর্শ ব্রু কুঁচকে বললো”মজা করছো?”
.
একদমই না
.
ওকে চলো এখন,বাসায় ফিরি,রাত হয়ে গেছে
.
হুম

হাঁটতে হাঁটতে বাসা পর্যন্ত এসে দুজনে এবার লিফটের ভেতর ঢুকলো,স্পর্শ লিফটের ৩য় তলার বাটনে চাপ দেওয়ার আগেই রিমঝিম হাত বাড়িয়ে লাস্ট যে তলা আছে সেটাতে টিপ দিয়ে দিলো
.
একি করলা!!
.
ছাদে গিয়ে ঘুরে আসবো,এই বিল্ডিংয়ের ছাদ দেখা হয়নি আমার
.
আমি তো ভাবলাম কি না কি
.
এতসব ভাবতে কে বলে আপনাকে?
.
এদের ছাদে কিন্তু ফুল গাছ নাই
.
এ কেমন মালিক,,ফুলগাছ একটাও নাই?
.
এটা কি আমার বাবা আসাদুজ্জামান নাকি?এটা আসাদুজ্জামানের ভাই,দুই ভাইয়ের মধ্যে তফাৎ দেখো এবার

দুজন মিলে এবার ছাদে এসেছে,রিমের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে এমন ছাদ দেখে,একটা গাছও নাই,শুধু দড়ি আর দড়ি, জামাকাপড় রোদে শুকানোর
রিম আর কি করবে কিনারায় এসে নিচে তাকিয়ে দেখা শুরু করে দিলো
স্পর্শ দূরে গিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে মুখে দিয়েছে তারপর লাইটার দিয়ে সেটা জ্বালালো সে
রিমঝিম পিছন ফিরে স্পর্শর দিকে তাকিয়ে যখন দেখলো সে সিগারেট খাচ্ছে ওমনি সে মুখটা আবার ফিরিয়ে নিয়েছে
.
রাত পনে দশটা বাজে এখন,হালকা পাতলা বাতাস লেগেই আছে,আর অন্ধকার আকাশ,তারার মেলা সেখানে
রিম নিজের অবাধ্য চুলগুলোকে বারবার বাঁধছে আর ঐ হালকা বাতাসে সেটা এলোমেলো হয়ে বাধ্য থেকে অবাধ্য হচ্ছে,খোঁপার কাঠি নেই তাই এমন হাল
.
স্পর্শ সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সেটা ফেলে পা দিয়ে মাড়াতে মাড়াতে আরেকটা ধরালো
রিমঝিম চুলগুলো হাত দিয়ে ধরে সরাতে সরাতে বিড়বিড় করে চুলকে বকছে
স্পর্শ লাইটার জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,ধরাচ্ছে না সিগারেটটা
রিমের চুলের প্রতি বিরক্তি ভাবটা যেন খুব করে ডাকছে স্পর্শকে
সিগারেটটা না ধরিয়ে সে সোজা হেঁটে রিমের কাছাকাছি চলে আসলো তারপর হঠাৎ হাতটা উঠিয়ে রিমের সব চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলো
রিম চমকে পিছন ফিরতে চেয়েও পারলো না কারন স্পর্শ খুব শক্ত করে ওর চুল ধরেছে যাতে করে ও এখন মাথাটাও নাড়াতে পারছে না
স্পর্শ চুলগুলো ধরে অবাক চোখে রিমের পিঠের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ,,,ছাদের কোণায় থাকা দুটো হলুদ বাতির আলোয় মোটামুটি রিমের পিঠটা স্পষ্টই লাগছে
রিম মাথাটা একটু নাড়িয়ে বললো”চুল ওমন ধরেছেন কেন,আমি কি বলেছি ধরতে?”
.
চুলকে বকছিলা যে,আমার গায়ে লাগছিলো তো!!!
.
আমার চুল,আমি বকবো,আপনার তাতে কি?
.
কথাটা বলা শেষ হতেই রিমের শরীরের ভেতরটায় হালকা একটা কম্পন হলো,,,গায়ে কাঁটা দিলো মনে হয়
কারণ ঠিক সেই মূহুর্তে স্পর্শ তার ঠোঁট জোড়া রিমের ঐ পিঠে লাগিয়েছে
রিম ঢোক গিলে হাত দিয়ে নিজের চুল থেকে স্পর্শর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা শুরু করে দিলো
.
স্পর্শর হুস আসতেই সে দুই কদম দূরে সরে গেলো রিমের চুল ছেড়ে দিয়ে
রিম সাথে সাথে পিছন ফিরে চোখ অগ্নিবর্ণ করে হনহনিয়ে স্পর্শের সামনে এসে ওর দুই গালে দুইটা চড় মেরে বললো”আপনার সাহস হলো কি করে এমনটা করার,আমি আজ এখন এই মূহুর্তে চলে যাব”
.
কথাটা বলে রিম আর থামলো না,চলে গেলো ছাদ থেকে
.
স্পর্শ নিজের মাথার চুল টেনে নিজেকে অজস্র গালি দিয়ে রিমের পিছু পিছু ছুটলো
রিমের মেজাজ এতটাই বিগড়ে আছে যে সে লিফটে না উঠে সিঁড়ি বেয়েই নিচে যাচ্ছে
.
রিম দাঁড়াও,সরি আর হবে না,রিম!!
.
রিম দরজা পর্যন্ত এসে নিজের ওড়নায় বাঁধা চাবিটা দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে চলে গেলো সোজা নিজের রুমে,তারপর জামাকাপড় সব গুছানো শুরু করে দিলো সে
এক হাত দিয়ে চোখ মুছতেছে আর আরেক হাত দিয়ে জামাগুলো নিয়ে ব্যাগে ভরছে সে
.
স্পর্শ রুমে ঢুকে বললো”রিম,আমার দিকে তাকাও,কান্না করছো কেন?”
.
রিম চুপচাপ জামাগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে এবার ব্যাগের চেইন লাগাচ্ছে
.
স্পর্শর রিমঝিমের রুমের দরজাটা লাগিয়ে ফেললো,রিম ব্যাগটা হাত থেকে নামিয়ে স্পর্শর দিকে তাকিয়ে বললো”আর কি করতে চান আপনি?দরজা লাগালেন কেন?”
.
স্পর্শ এগিয়ে আসছে,রিমের ভয় করছিল কিন্তু পরে ভাবলো স্পর্শ আর কিছু করবে না ওর অমতে
.
স্পর্শর রিমের সামনে এসে নিচে হাঁটু গেড়ে বসে গেলো তারপর হাত জোড় করে বললো”আই এম সরি,তোমার নেশা কাটাতে তখন সিগারেট ধরিয়েছিলাম তার পরেও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না,মাফ করে দাও
আর কখনও এমন হবে না,নিজেকে কন্ট্রোল করবোই করবো আই প্রমিস,তাও এভাবে একা একা চলে যেও না
ঢাকা শহরকে এতটা ইজিলি নিও না,আমি তোমার কিছু হলে নিজেকে মাফ করতে পারবো না
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে