দহন ফুল পর্ব-০৫

0
97

#দহন_ফুল -৫

আরে ভাবী তুমি উঠে এলে কেনো?
ঘুম ভেঙে গিয়ে দেখি ভাবী রান্নাঘরে গরুর মগজ ভুনছে অন্যচুলায় আলু ভাজা হচ্ছে।
— শুয়ে বসে থেকে বোরিং লাগছে তাই চলে এলাম।
মনির মা রুটি বেলে দিতেই আমি সেকে নিয়ে ডিম ভেজে কোয়ার্টার প্লেটগুলো নিয়ে গিয়ে টেবিল সাজালাম।

সাত দিন রেস্ট নেবার কথা থাকলেও পাঁচদিন পরে রান্নাঘরে এসে জুটলেন মাসুমা ভাবী। আমি যদিও বাঁধা দিলাম অন্যদিকে স্বস্তিও পেলাম, ভোজনরসিক মানুষগুলো কষ্ট আর মেনে নেয়া যাচ্ছিলো না। একদিন লবন কম তো আরেকদিন মুখে দেয়া যায় না, ঝাল খেয়ে নাজেহাল, হলুদের গন্ধ সব মিলিয়ে হযবরল অবস্থা।

আজ ধর্মীয় দিবসের কারণে অফিস বন্ধ সামির বাসায় ছিলো, ভাইয়াও লাঞ্চ টাইমে বাসায় চলে এলো, দুপুরে জম্পেশ রান্না আর খানাপিনা হলো। আজ বহুদিন পর সবাই চেটেপুটে খাবার খেলো। আমি ভাবীর আশেপাশেই থাকলাম সব পারফেক্টভাবে শেখার জন্য। ভাবীর শরীরের দুর্বলতা কাটেনি তাই তার যত্নের প্রয়োজনে কাজের চাপ যেনো না পড়ে তার সর্বাত্মক চেষ্টা ছিলো আমার।

ভাই, ভাবী ১০০টাকা দে,
— ১০০ টাকাই দেয়া লাগবে?
সামিরের কথায় আমি হাসলাম
— হ তোরা না দিলে আমরা খামু কি?
পকেট থেকে একশো টাকার একটা নোট বের করে বৃহন্নলাকে দিলো।
চীনাবাদামের খোসা ছাড়িয়ে মুখে দিলাম, সামিরের হাত থেকে আবার বাদাম নিলাম। আমরা রবীন্দ্র সরোবরের অর্ধচন্দ্রাকার মঞ্চের বেদিতে বসে আছি।

দুপুরে হালকা ভাত ঘুম শেষে সামির তার বাহুডোর আলগা করে বললো,
— প্রভা চলো কোথাও ঘুরে আসি।
আমি চোখ পিটপিট করে আশ্চর্য হয়ে তাকালাম,
— তুমি বলছো?
— হ্যা, অনেক দিন হয়ে যাচ্ছে একসাথে ঘুরতে বের হই না, অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি।
— হুমম মনে আছে তাহলে রোবট সামির! ওকে চলো।
আমি একটা আকাশী জমিনে হলুদ কাঠগোলাপ হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি পড়লাম, সামির পড়লো একটা আকাশী পাঞ্জাবি।
বাসা থেকে বের হয়ে দুজনের হাঁটা ধরলাম, লেকের পকেট গেইটের কাছে আসতেই, একটা বাচ্চা মেয়ে বেলীফুলের মালা নিয়ে আসলো,
— আপা মালা নেন না, আপনারে সুন্দর লাগবো।
— আচ্ছা… তাই নাকি? কি নাম তোর?
— ময়না,
— মা কই তোর, বাবা কি করে?
— ওইযে মা… মালা বানায় আর আমি বেঁচি, বাপ বাস এক্সিডেন্ট কইরা মইরা গেছে।
দেখলাম গেইটের ভেতরের মাঠে ঘাসে বসে একজন নারী মালা বানাচ্ছে,
লাল চুল আর ধুসর চোখের দুইঝুটি বাঁধা টুকটুকে মেয়েটি খুব সুন্দর, অথচ যদি ধনীর সন্তান হতো, ফুলের বিছানায় থাকতো।
সামির মালা কিনে আমাকে পরিয়ে দিলো। আমি ওর দিকে চেয়ে মৃদু হাসলাম
সামিরের এই খোলতাই রূপ আমার ভালোই লাগছে।

একটা কথা শোনো সামির..
— হুমম বলো
— নামাজ পড়লে, সেজদায় গেলে মানুষের মন নরম হয় শুনেছি, এখন বাস্তব প্রমান পাচ্ছি।
সামির জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, যেমন?
— আমার খুব অনুশোচনা হয়, জানো তো? আমি ভাবীকে আন্ডার এস্টিমেট করতাম, শুধু মাত্র একটু কাজ করা থেকে বাঁচতে। আর আমার শাশুড়ি মা তাতে ঘি ঢালতো।
— আর এখন?
— এখন মনে হয় কাজগুলো ঠিক হয়নি? এখানে তোমার ভুমিকা কম ছিলো না।
— আমিইই…আমি আবার কি করলাম?
— তুমি তো কখনো আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দাওনি।
— দেখো তুমি যে পরিবার থেকে পরিবেশ থেকে এসেছো, তোমাকে কিছু বললে যদি রেগে যাও তাই আর কি…।
— একটা কথা সত্যি করে বলো তো? তুমি কি সত্যিই আমায় ভালোবাসো? নাকি আমার স্ট্যাটাস দেখে আমাকে বিয়ে করেছো?

সামির থতমত খেয়ে গেলো, একদম চুপ হয়ে রইলো অনেকক্ষণ। আমি আবার বললাম,
— কি হলো উত্তর দাও…
— ইয়ে মানে…
— সত্যটা বলো, আমার সত্য জানার দরকার? আমি আমার মায়ের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ?
— আসলে তোমাকে আমি প্রথম যখন দেখি তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। জানো তো আমি প্র‍্যাকটিকাল মানুষ রোমান্টিকতা বুঝতাম কম। যখন দেখলাম দামী গাড়ী বাড়ির মালিক,বর্ণাঢ্য বাবার সন্তান, ফ্যামিলি স্ট্যাটাস সব মিলিয়ে টু মাচ বেটার। আর তোমার বাবার কাছে প্রস্তাব দিতে উনি রাজী হয়ে গেলেন, আর না চাইতেই বিয়েতে অনেক কিছু দিলেন। আরো দেবেন ভবিষ্যতে।

আমার ভেতরে শূল বিদ্ধ হলো, চোখের কোল ভিজে উঠলো। মায়ের কথাই তো পুরোপুরি সত্য, আমার একার একক মূল্যায়ন হয়নি। ফ্যামিলি স্ট্যাটাস, বাবার সামাজিক অবস্থান প্রতিপত্তি, সুন্দরী শিক্ষিতা সব মিলিয়ে আমি। এসব বাদ দিলে আমিতো কিছু নয় এ বিগ জিরো। আর ভাবী! শুধু ভাবীকে ভালোবেসে সমাজ ব্যবস্থাকে তুড়ি মেরেছে ভাইয়া। সংসারে শাশুড়ীর কাছে অবহেলিত হয়েও ভাইয়ার মাথার তাজ হয়ে আছে সে।

আমার চোখে পানি দেখে, সামির আমার হাত দুটো মুঠোতে নিলো,
— প্রভা… কিন্তু এখন আমি তোমাকে শুধু তোমাকেই ভালোবাসি, তুমি চাইলে আমি সব ত্যাগ করতে পারবো। তুমি যখন বললে ভাইয়ার মতো ভালোবাসতে হবে। আমি দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম, একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম৷ ভাবতাম ভাইয়ার মতো ভালোবাসা! মানে কি? কিন্তু দিনেদিনে উপলব্ধি করেছি… সমক্যকে পেতে হলে সমস্তকে বিসর্জন দিতে হবে। আমি তেমন হয়ে উঠতে চাই, প্লিজ প্রভা আমাকে সাহায্য করো তোমার মনের মতো হয়ে উঠতে। পারবে না?
আমি চোখ মুছে ওর কাঁধে মাথা রাখলাম,
— পারবো সামির.. পারতে আমাকে হবেই।

রাতে খাবার টেবিলটা সংসদের মতো, যত রকম আর্জি দাবী দাওয়া উত্থাপন হয়। রাতে সবাই অল্পস্বল্প খারাপ খায় তবে আজ টেবিলে নতুন তরকারি রান্না করা হয়েছে । শাশুড়ী মায়ের দুর সম্পর্কের ভাগ্নে এসেছে তাকে নিয়ে যেতে, উপলক্ষ মামা শ্বশুরের ছেলের বিয়ে।
খাবার টেবিলেই শাশুড়ী আর্জিটা রাখলেন,
— দেখো সাবিরের বাপ, তোমার কথা তো কখনো অমান্য করিনি। আমি মজিদের ছেলের বিয়েতে যেতে চাই, তুমি কি বলো?
(আমি ভাবী একে অন্যের দিয়ে চেয়ে মুখটিপে হাসছি)
শ্বশুর গলাখাকারী দিয়ে বেশকিছু সময় পরে বললেন।
— সে কথা আর বলতে, তোমার মতো বাধ্যগত স্ত্রী কজনার আছে, আমার সাত জনমের ভাগ্য তোমার মতো স্ত্রী পেয়েছি। তা যেতে যখন চাচ্ছো যাও।
— টিপ্পনী কাটছো নাকি?
— না না, সে সাহস কি আমার আছে? ঘাড়ে আমার মাথা একটাই, তা কতদিন থাকবে?

রান চিবুতে চিবুতে ভাগ্নে সফিক বললো,
— খালাকে ১০/১২দিন রেখে দেবো। খালু আপনারা কবে আসবেন?
— আমরা আর যাবো না, তোমার খালা যাচ্ছে মানে আমাদের সবার যাওয়া হচ্ছে। কখন যাবে তোমরা?
— আগামীকাল সকালেই যাবো টিকেট কেটে নিয়ে এসেছি। চিন্তা করবেন না আমি নিজেই এসে খালাকে দিয়ে যাবো।
— না না চিন্তা কিসের? বাবার বাড়ি যাচ্ছে সেখানে তো ভালোই থাকবে। ফি আমানিল্লাহ, ভালোয় ভালোয় যাও।

পরদিন খুব সকালে অল্পস্বল্প নাস্তা খেয়ে শাশুড়ী মা যাত্রা করলেন ভাইয়ের বাড়ি।
একটা জিনিস খেয়াল করলাম, শাশুড়ী মা বাড়ি থেকে বের হতে না হতেই ভাবী উচ্ছল হরিণীর মতো হয়ে গেলেন। কথায় কথায় হাসছেন, সব কাজ কর্ম যেনো উড়ে উড়ে করছেন। শ্বশুর বাবাকে দেখলাম মজার মজার ঠাট্টা করছেন আমাদের সাথে, আর ভাবী হেসে হেসে গড়িয়ে পড়ছেন। আমি ভাবীর এই রূপ আজ দেখলাম, এমন করে হাসতে আমি এই দুইবছরে দেখিনি।
আমি খুব ভালো লাগছিলো আবার অস্বস্তিও হচ্ছিলো, তাহলে কি শাশুড়ী মায়ের চোখ রাঙানীর ভয়ে ভাবী এমন মুষড়ে থাকেন। একজন মানুষের ভালো থাকা মন্দ থাকা যখন অন্য মানুষের মেজাজ মর্জির উপর নির্ভর করে তখন সত্যিই জীবন দুর্বিষহ লাগে।

বিকেলে কুচো সালাদ মাখিয়ে চানাচুর মুড়ি মাখা একসাথে একই বোলে করে সবাই হাতাহাতি করে খেতে দারুণ লাগলো। অথচ অন্য সময় কত দামী নাস্তা খাই কিন্তু এতো পরিতৃপ্তি পাই না।

রাতে সবার খাওয়া শেষে আমি আর ভাবী ছাদে পাটি বিছালাম গল্প করবো বলে। ঝিরিঝিরি বাতাস আর আকাশে থালার মতো চাঁদ মায়াবী জ্যোৎস্না ঢেলে দিচ্ছে পৃথিবীতে। ভাবী আজ নিজেকে মেলে ধরেছে তার ছেলে বেলার কথা বলছে, আরো ককক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাবার খুব শখ তার, আর কি কি অপুর্ণ ইচ্ছে আছে নিজ থেকে অনর্গল বলে যাচ্ছে আর আমি শুনছি মনোযোগী শ্রোতা হয়ে।
পেছনে সাড়া পেলাম কেউ আসার, চেয়ে দেখি সাবির ভাই, আমার লজ্জা লাগাতে উঠে যেতে চাইলাম। ভাই ভাবী বাঁধা দিলেন। হঠাৎ ভাবী গুণগুণ করে গেয়ে উঠলেন, চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে…। আমি মুগ্ধ হয়ে খেয়াল করলাম চমৎকার গানের গলা ভাবীর।
সাবির ভাই কিছুক্ষণ ইতস্তত করে আমাকে বললেন।
— সামির গাধাটা কি করছে একা একা।
আমি হেসে বললাম,
— ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে?
— কাজ পরে হবে ডাকো ওকে। এমন সময় ও পরিবেশ সব সময় পাওয়া যায় না।

ভাইয়ার কথামতো সামির কল করে ছাদে ডাকলাম। কল কাটতেই সাবির ভাইয়া বললেন,
— প্রভা… তুমি যদি কিছু মনে না করো তবে কিছু কথা বলতে চাই।
আমি বললাম,
— না না ভাইয়া, কিছু মনে করবো কেনো?আপনি বলুন?
— প্রথমে তোমাকে ধন্যবাদ, ওইদিন যদি তুমি নিনুকে খেয়াল না করতে সেবা না করতে যেকোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। ও ঘরে মরে পড়ে থাকলেও মায়ের কিছু আসতো যেতো না।
— ধন্যবাদ দিতে হবে না ভাইয়া, আমার কিছু হলে তো ভাবীও এমনটা করতো।
— হ্যা তা ঠিক তবে একটা অনুরোধ, নিনুকে খেয়াল রেখো, আমি তো ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকি আমি ছাড়া ওর এই দুনিয়ায় কেউ নেই। ওকে আমি খুব ভালোবাসি, ওর ভালো থাকার চিন্তায় থাকি, যদি কোনো ভাবে নিনু একটু ভালো থাকে আমি স্বর্গীয় সুখ পাই। ওর পাশে থেকো প্লিজ।
— জ্বি ভাইয়া রাখবো।

সামির নিচ থেকে এসে আমাদের পাশে বসলো, ভাইয়া আবার বলা শুরু করলেন।
— নিনুকে মা কথায় কথায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, ফকিন্নির বাচ্চা, ছোটলোক আরও কিসব বলে। আমি সবই শুনি বুঝি কিন্তু কিছু বলতে পারি না।
— ভাইয়া আমার মনে হয় আপনার প্রতিবাদ করা উচিত।
— না আমি মায়ের সাথে বেয়াদবি করতে পারবো না। নিনু আর কিছুদিন কষ্ট করুক সব সহ্য করুক, তারপর আমি নিনুকে আর এখানে রাখবো না।
— মানে এই কি বলছো তুমি? এখানে রাখবে না মানে কোথায় রাখবে? (ভাবী আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলো)
–সেটা সময় হলেই দেখবে। আচ্ছা যা বলছিলাম প্রভা শোনো, নিনু যখন একা একা সংসার সামলাতো আমার খুব কষ্ট হতো। রাত ১টা ২টার আগে বিছানায় যেতে পারতো না, আবার ভোরে উঠে যেতে হতো। আমি কিছুই করতে পারতাম না, তখন তোমার প্রতি আমার রাগ হতো, মেয়েটা কি একটু সাহায্য করতে পারে না। ও যদি সাহায্য করতো তবে তো আমার নিনুর কষ্ট কম হতো।

আমার খুব লজ্জা লাগতে লাগলো, ভাবীকে দেখলাম কাঁদছে। আমি বললাম,
— আমাকে মাফ করে দেবেন ভাইয়া,আসলে আমি কখনো কাজকর্ম করে অভ্যস্ত ছিলাম না। তার মধ্যে যদি কেউ অনুপ্রাণিত করতো তা হলে হয়তো ভাবীর সমব্যথী হতাম, সামিরও না আমার শাশুড়ী মা তো উল্টো বাঁধা দিতেন।
— না না ক্ষমা চেয়ো না প্লিজ। তুমি আমার ছোট বোনের মতো। আসলে কি জানো নিনু কোনো অশিক্ষিত বা হাভাতে ঘরের মেয়ে নয়, ওর বাবা একজন প্রকৌশলী ছিলেন রোডস এন্ড হাইওয়েতে, এক দুর্ঘটনায় বাবা ও অন্তসত্ত্বা মা মারা যায়। সুযোগ বুঝে যত সহায় সম্পত্তি আত্মীয় স্বজনেরা দখলে নেয়। শুধু অফিশিয়াল টাকা পয়সাগুলো নিতে পারেনি কারণ নিনু আর ওর মা সব জায়গায় নমিনী। ওর মামা ওকে বুকে তুলে নিলেন মানুষ করলেন , এই টাকায় নিনুর যাবতীয় খরচ ও পড়ালেখা সব হতো, আর এখনো ওখান এককালীন কিছু টাকা আছে যার লাভাংশ তিনমাস অন্তর আমি ওকে তুলে এনে দেই।
— চাচা ফুফু এরা কেউ খবর নিতো না।
— নিতো মাঝেমধ্যে, অফিসের টাকাগুলো কিভাবে খরচ হচ্ছে জানতে আসতো। তবে মাস ছয়েক আগে একটা মিরাকল হলো?
— কি?
— নিনুর মামা মৃত্যুশয্যায় আমাকে ডাকলেন, তার উদ্দেশ্য সৎ ছিলো কিনা নাকি পরকালের ভয় জানিনা। আমাকে ডেকে নিয়ে একটা দলিল হাতে দিয়ে বললেন,
— বাবা এটা মাসুমার আমানত, এর দায়িত্ব এখন তুমি নাও।
— এটা কিসের মামা আমি বুঝলাম না?
— এটা মাসুমার বাবা মৃত্যুর একবছর আগে আমার বোনের ও মাসুমার নামে কিনেছিলো। আমার বোন আমার কাছে দলিলটা রাখতে দিয়েছিলো। এখন এটা তুমি কি করবে করো। আমি মরে গেলে হয়তো আমার ছেলেরা লোভী হয়ে উঠতে পারে।

মামার কথায় আমি দলিল খুলে সব পড়ে দেখলাম সাভারের কাছে এক বিশাল কেমিক্যাল ফ্যাক্টরির কাছে প্রায় ৪০ শতাংশ জমি তখন জমিগুলো খুব সস্তা ছিলো । পাশ দিয়ে অনেক বড় রাস্তা গিয়েছে, আশেপাশের মিল ফ্যাক্টরি হয়েছে তাই ওখানকার জমি এখন প্রচুর দাম, আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না সবকিছু।
একেক কাঠা জায়গার দাম কম করে হলেও ৭০/৮০লাখ করে হবে। বেশ অনেকদিন যাবত দেখছো আমি অনেক রাত করে বাড়ি ফিরি। সেটা এই জমির সব কাগজপত্র ঠিকঠাক করার জন্য দৌড়াদৌড়িতে যাচ্ছে।

আমিতো আশ্চর্য হয়েছিই ভাবীর তো আকাশ থেকে পড়ার পালা।
— কি বলো সাবির?
— হ্যা নিনু.. ভেবেছি সব কমপ্লিট করে তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো। কিন্তু আজ কথা প্রসঙ্গে বলেই ফেললাম। কিন্তু তোমাদের সবার কাছে অনুরোধ, মা যেনো ঘুনাক্ষরেও না জানো।

সামির ত্রস্ত্র হয়ে বললো,
— কেনো ভাইয়া? তাহলে তো অন্তত ভাবীকে আর জ্বালাতন করবে না।
সাবির ভাইয়া সামিরের কাঁধে হাত রাখলেন।
— না রে ভাই, মন থেকে ভালোবাসতে না পারলে, সম্পদ দেখে যে ভালোবাসে সে ভালোবাসা আমি চাই না। আমি চাই মা মন থেকে নিনুকে ভালোবাসুক।

সাবির ভাইয়ার আবেগ অনুভূতির ডালপালার বিস্তার আজ দেখলাম, আরো দেখলাম তাদের ভালোবাসার বিস্তৃতি। একের ভাবনায় অন্যের বিহবলতা।৷ সারারাত একটা কথাই ভাবলাম, প্রকৃত ভালোবাসা বুঝি এমনি হয়।

#শামীমা_সুমি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে