তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব~৪

0
2324

#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
……..{সিজন-২}
৳#ফাবিহা_নওশীন

পর্ব~৪

??
সামু রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।
“এটা কি হলো?লজ্জার উপর লজ্জা।ছিহ!!
ছিহ কেন বলছি আমি কি ইচ্ছে করে পড়েছি।উনার জন্য ই তো।ব্যাটা খবিশ।পড়ে গেলে কি হতো?একবার এক্সিডেন্ট করিয়ে স্বাধ মিটেনি?এই লোক কি আমাকে মার্ডার করার সুপারি নিয়েছে?”

তখনই সামান্তার ফোন বেজে উঠলো।সামান্তা ফোন হাতে দেখে রাজ ফোন করেছে।
সামান্তা বিরক্তি নিয়ে বললো,
“এই রাজ এখন আবার কি চায়?ঘুম পাচ্ছে কই ঘুমাবো।”

সামান্তা ফোন রিসিভ করে।ওপাশ থেকে রাজ বললো,
—–হায় সুইটি সামু!!

—–আমি সুইটি?হাহা!
আমার কথা নিমের মতো তেতো।সুইটি কেন বলছেন?

——আমি তোমার নিমের মতো তেতো কথার প্রেমে পড়েছি তাই তুমি সুইটি।
কথার প্রেমে,তুমি আবার অন্য কিছু মনে করে মাইন্ড করোনা।

——না না সামু এতো সহজে মাইন্ড খায়না।তবে আপনি ভালো ফ্লার্ট করতে পারেন।

——তোমার এসব ফ্লার্ট মনে হচ্ছে? আমি মোটেও ফ্লার্ট করছিনা।

——আচ্ছা যাইহোক কেমন আছেন?

——খুব ভালো এখন তো আরো ভালো।মানে তোমার সাথে কথা বলে এখন আরো ভালো লাগছে।চলো মিট করি আগামীকাল।

—–আগামীকাল আমার ক্লাস আছে।সন্ধ্যা হবে বাসায় ফিরতে ফিরতে।আজকে মিস গেছে।ডক্তরের কাছে গিয়েছিলাম।

—–কেন শরীর খারাপ?

——গতকাল মাথা ব্যথা ছিলো তাই সবাই টেনশনে পড়ে গেছে।ডক্তরের কাছে নিয়ে গেছে।সবাই একটু বেশি ভালো বাসে কিনা।

আরো কিছুক্ষণ কথা বলে সামু ঘুমাতে গেলো।

আদি ড্রাইভ করছে আর ভাবছে কিছুক্ষণ আগে কি হলো ওর সাথে।এমন অনুভূতি কখনো হয়নি।আদি বারবার চেষ্টা করেও সেই অনুভূতি থেকে বেরুতে পারেনি।অনুভূতি গুলো মাতোয়ারা করে দিচ্ছে।সেই মাদকতা এখনো আচ্ছন্ন করে রেখেছে।

আদি মুচকি হেসে নিজেকে নিজেই বলছে,
“আদি ব্যাপারটা একটু বেশিই ফিল্মি হয়ে গেলোনা? একটু ছোয়ায় পাগল হয়ে যাচ্ছিস।প্রেমে ট্রেমে পড়ে গেলি না তো?প্রেমে ওই পাজি মেয়ের?নো ওয়ে!
আদি একদম না।প্রেম ভালোবাসা নেভার।”

আদি রাত ২টায় বাড়িতে ফিরলো।ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই দুপুরের ঘটনা মনে পড়লো।আদি থমকে গেলো।আদির এই মুহুর্তে সামুকে দেখতে ইচ্ছে করছে।কেমন যেনো আকর্ষিত হচ্ছে।আদি গেস্ট রুমের দিকে গেলো।দরজায় হাত দিতেই বুঝতে পারলো ভিতরে থেকে লক করা।
আদি নিরাশ হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

সামু আর রাজ একটা কফিশপে বসে আছে।সামু কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে রাজ সামুর দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

রাজ ব্যাপকভাবে মোহিত হচ্ছে।
রাজ মনে মনে ভাবছে,
—-অনেক মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করেছি।দুচাটে প্রেমও করেছি।কিন্তু কারো প্রতি এমন ফিলিংস হয়নি।সামুকে দেখলেই কিংবা ওর কথা শুনলেই কেমন অদ্ভুত ফিলিংস হয়।নেশা ধরে যায়।মনে হয় আরো শুনি,আরো কিছুক্ষণ ওকে দেখি।

সামু রাজের সামনে হাত দিয়ে চুটকি বাজাতেই রাজের হুশ হলো।
—–কি কোথায় হারিয়ে গেলেন?

রাজ হালকা হেসে বললো,
—–তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?

রাজের এমন প্রশ্নে সামু চমকে গেলো।রাজের দিকে অদ্ভুতভাবে চেয়ে মৃদু হেসে বললো,
—–না।

রাজের বুকের উপর থেকে ভারী পাথর সরে গেলো।
রাজ তারপর বললো,
—–কি বলো বয়ফ্রেন্ড নেই?কাউকে পছন্দ অন্তত…

সামু সোজাসাপটা বললো,
—–না তেমন কেউ নেই।

রাজ কফিতে নিশ্চিত মনে লম্বা একটা চুমুক দিলো।

আদি নিজেকে যাই বলুক মনকে দমাতে পারেনা।ওর চোখ শুধু সামুকেই খোজে।
আদি রাতের বেলায় লিভিং রুমে বসে ফোন চাপছে।নিশি ওর পাশে বসে আছে।সামু নিজের রুম থেকে বেরুতেই নিশি ওকে ডাকলো।

সামু বেখেয়ালে আসতে গিয়ে ডাইনিং এর সাথে ধাক্কা লেগে পানির জগ ফ্লোরে পড়ে যায় আর সামুর পা আকস্মিক ভাবে পানিতে পড়ায় ধপাস করে পড়ে যায়।
আদি আর নিশি ওর দিকে চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে।নিশি উঠে দৌড়ে সামুকে ধরতে গেলো।আদি বিস্ময়ের নীরবতা কাটিয়ে হোহো করে হেসে দিলো।আদি হাসতে হাসতে নিশির পেছনে গেলো।
নিশি সামুর হাত ধরে তুলছে আর আদি হেসেই যাচ্ছে।
সামু আদির দিকে চেয়ে রাগে ফুসফুস করছে।ইচ্ছে করছে ওকে গিলে খেতে।

নিশি বললো,
——ভাইয়া স্টপ লাফিং।একটা মানুষ পড়ে গেছে আর তুমি হাসছো?

আদি হাসি থামিয়ে বললো,
—–এর যখন তখন যেখানে সেখানে পড়ে যাওয়ার রোগ আছে।

সামু বললো,
—–নিশিপু তোমার এই গন্ডার ভাইকে চুপ থাকতে বলো।

নিশি আদিকে বললো,
—–ভাইয়া তুমি কয়দিন ওকে পড়ে যেতে দেখেছো?হুহ বলো।

আদি সামুর দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললো,
——ওকে আমি একটা ছেলের উপর পড়ে যেতে দেখেছি।

আদির কথা শুনে সামুর চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো।বিস্ময়ে মুখ অলরেডি হা হয়ে গেলো।

নিশি বললো,
——ভাইয়া আজাইরা কথা বইলোনা।

আদি আবারো সামুর দিকে চেয়ে বললো,
——জিজ্ঞেস কর ওকে।

নিশি সামুর দিকে তাকাতেউ সামু বললো,
——না আপু।মিথ্যা কথা।

নিশি ভ্রু কুচকে আদির দিকে চেয়ে নিশির জন্য স্পে আনতে গেলো।পা বারবার নাড়াচ্ছে হয়তো ব্যথা পেয়েছে।

নিশি যেতেই সামু আদিকে বললো,
——আপনি তো ভারী অসভ্য লোক।

আদি সামুর কথা শুনে হেসে ফেললো।তারপর বললো,
——তুমি কি করে জানলে?
বাই এনি চান্স টেস্ট করে দেখেছো?(সামুর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো)

সামু আদির দিকে চোখ বড়বড় করে চাইলো।ওর কান জ্বলে যাচ্ছে আদির কথা শুনে।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।ইচ্ছে হচ্ছে আদির গলা টিপে ধরতে।

সামু আদির দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি দিয়ে চলে গেলো।
সামু যেতেই আদি হেসে দিলো।
উফফফ ওর সাথে ঝগড়া করতে যা লাগেনা।রাগী রাগী ফেস,,ফুসফুস করে উঠা,নাক ফুলে উঠে কিছুক্ষণ পর পর।আ’ম জাস্ট ফিদা।

আজ নিশির এংগেজমেন্ট।পুরো বাড়ি আলোয় ঝলমল করছে।অর্কিড দিয়ে বাড়ি সাজানো হয়েছে।শহরের নামি-দামি মানুষকে ইনভাইটেশন করা হয়েছে।পুরো বাড়ি গমগম করছে।

আদি ব্লাক স্যুট পড়েছে।ব্লাক বুট,স্পাইক করা চুল,ব্যান্ডের ওয়াচ,চোখে সানগ্লাস,
ব্যান্ডের পারফিউমের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে।রেডি হয়ে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে ওর চোখ শুধু সামুকে খোজছে।কিন্তু কোথাও পাচ্ছেনা।
আদি ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।তখনই লাইট অফ হয়ে গেলো।
সিড়িতে হালকা শেডের আলো জ্বলে উঠলো।সবার দৃষ্টি সেদিকে।নিশি নামছে।ব্রাউন কালার গাউন পড়েছে।গ্রাউনের মধ্যে দামি পাথর বসানো যা এই অন্ধকারের মধ্যেও চকচক করছে।গলায় ডায়মন্ডের নেকলেস।কানে ডায়মন্ডের এয়ারিং।চুলগুলো কার্লি করে বাধা তাতে ছোট ছোট সাদা পাথরের ফুল বসানো।আদির চোখ নিশির পাশের মেয়ের উপর আটকে গেলো।পাশে সামু ব্লাক-ব্লু কম্বিনেশনের লেহেঙ্গা পড়েছে।সাথে ম্যাচিং করে গয়না পড়েছে,একহাতে চুড়ি অন্য হাতে ব্রেসলেট।চুলগুলো একপাশে বেনি করে রেখেছে।বেনির উপর ছোট ছোট ফ্লাওয়ার লাগানো।লাইট মেকাপ।অসম্ভব সুন্দর লাগছে।আদি বুকে হাত দিয়ে বললো,
——হায় এই মেয়ে কি আমায় মেরে দেবে?
আদি পড়ে যেতে নিলেই ওর বন্ধু ধরে ফেলে।

——আরে পড়ে যাচ্ছিলি তো।

——ভাই অলরেডি পড়ে গিয়েছি।জাস্ট একটু ঝুলে আছি।

আদির ফ্রেন্ড আদির কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।আদি কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছেনা।ওর মাথার উপর দিয়ে রকেট এর গতিতে চলে গেলো।
——মানে!!!

আদি নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
——কিছুনা দোস্ত।কিছুনা।

আদি বন্ধুদের সাথে বসে থেকেও ওর চোখ সামুর দিকে।কোল্ড ড্রিংক পান করছে আর সামুকে দেখছে।

সামু নিশিকে বসিয়ে দিয়ে এসে ড্রিংক নিয়ে পান করছে তখনই একটা ছেলে এসে এহেম এহেম করতে লাগলো।আদি পেছনে এসে দাড়ালো।সামু মুখের ড্রিংক গিলে বললো,
—–কি ভাই প্রব্লেম কি?গলা শুকিয়ে গেছে?শুকিয়ে গেলে ওয়েটারের থেকে নিয়ে খান এখানে কি?

ছেলেটার মুখ ছোট হয়ে গেলো।ছেলেটা অন্য কিছু বলতে যাবে কিন্তু সামু তো ওকে ছোট খাটো অপমান করে দিলো।
ছেলেটা দাত কেলিয়ে একটা গোলাপ বের করে কবিদের মতো বললো,
—–ওহে বালিকা তোমার মনের জমিতে একটু জায়গা দেবে আমি ভালোবাসা চাষ করবো?

সামু ভড়কে গেলো।চেনা নেই জানা নেই একটা ছেলে এসে কবিগিরি শুরু করে দিলো।প্রপোজের কি বাহার?

সামু টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—–ভাইয়া আমার বাপ জমিদার নয় যে সেখান থেকে জমি নিয়ে আপনাকে চাষ করতে দেবো।
আপনি বরং জমিওয়ালা একটা মেয়ের কাছে যান ইচ্ছে মতো ভালোবাসা চাষ করুন।
এক্সকিউজ মি..এঞ্জয়।

সামু চলে গেলো।ছেলেটা হা করে দাঁড়িয়ে আছে।আদি পেছনে দাঁড়িয়ে হাসছে।
তারপর আদি ওর ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডায় মনোযোগ দিলো।

সামু নিশির কাছে যেতেই রাজের সাথে দেখা।রাজ সামুকে দেখে হা করে আছে।
বিস্ময় নিয়ে বললো,
—–হায় বিউটিফুল লেডি,,হোয়াটস আপ?

সামু রাজকে রাজের মতো উত্তর দিলো।
—–গুড মি.হ্যান্ডসাম বয়।

রাজ মুচকি হেসে বললো,
—–তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

—– থ্যাঙ্কিউ।
ওরা কথা বলতে বলতে স্টেজের দিকে গেলো।
জয় আর নিশিকে পাশাপাশি দাড় করানো হয়েছে।একজন মাইক নিয়ে জয় আর নিশির এংগেজমেন্টের এনাউন্স করলো।দুজন দুজনের দিকে চেয়ে আছে।ওদের প্রেমের পরিনতি স্বার্থক হতে যাচ্ছে।দুজনেই হাসিমুখে রিং এক্সচেঞ্জ করলো।

তারপর ড্রান্স করার জন্য মিউজিক অন করলো।মিউজিক স্যাকশনে স্লো সং অন করা হয়েছে।
আদির পেছনে মেয়েরা ঘুরঘুর করছে বিশেষ করে ওর ফুপাতো বোন নওমী।এ মেয়েটা যখন ওর পেছনে ঘুরঘুর করে আদি মনে মনে আনন্দ পায়।কিন্তু পাত্তা দেয়না।

আদি চলো ড্রান্স করি।
নওমী আদির হাত ধরে বললো।

আদি হাতের দিকে চেয়ে বললো,
—–নওমী কতবার বলেছি আমার গায়ে হাত দিবেনা।যা বলার মুখে বলবে।

নওমী আদির হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
—–চলো ড্রান্স করি প্লিজ।সবাই ড্রান্স করছে।

—–সরি আ’ম বিজি নাও।

নওমী মন খারাপ করে চলে গেলো।আদি সামুকে খোজছে।
সামু এক জায়গায় চুপ করে বসে সবার ড্রান্স দেখছে।আদি সামুর পেছনে গিয়ে দাড়ালো।তখনই রাজ সামুর কাছে এসে বলে,
——লেটস ডান্স।

সামু কপালে হাত দিয়ে বললো,
—–এতো মানুষের ভীর,মিউজিক চলছে আমার মাথাটা ধরেছে।আপনি যান।প্লিজ সরি।

রাজ ইটস ওকে বলে চলে গেলো।আদি পেছনে থেকে সেটা শুনে হাফ ছেড়ে বাচলো।সামু উঠে দাড়িয়ে অন্ধকারের মধ্যে আদিকে দেখে কয়েকশ ক্রাশ খেলো।তারপর ওর বিহেভিয়ার মনে করে নিজেকে মনে মনে গালাগাল করলো।

আদিকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে তখনই আদি ওর হাত ধরে ফেললো।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে