তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব~৩

0
2528

#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
………{সিজন-২ }
#ফাবিহা_নওশীন

পর্ব~৩

আদি বাড়ির ভিতরে ঢুকে এদিক সেদিক চেয়ে বুলাচ্ছে কিন্তু সেই মেয়েটিকে দেখতে পেলোনা।নিশি লিভিং রুমে সোফায় বসে ফোন টিপছে।আদি নিশির সামনে গিয়ে দাড়ালো।কিন্তু সেদিকে নিশির হুশ নেই।ফোনে বেহুশ।

আদি নিশি বলে ডাক দিতেই আদিকে দেখে নিশি চমকে গেলো।তারপর ফোন রেখে দাড়িয়ে চিন্তিত ভংগীতে বললো,
—–ভাইয়া তুমি!!শরীর খারাপ!!ডাক্তার ডাকবো?

আদি বুঝতে পারছে নিশি মজা করছে।আদি নিশির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিলো।নিশি মুখে আংগুল দিয়ে বাচ্চাদের মতো ফেস করে রাখলো।

আদি চারদিকে তাকাচ্ছে তারপর বললো,
—–একটা জিনিস নিতে এসেছি।তার আগে বল বাসায় কেউ এসেছে?মানে মেহমান?

নিশি বললো,
—–কই নাতো কেউ আসেনি।

আদির ডাউট হচ্ছে।মেয়েটা গেলো কই?
আদি বললো,
—–আমি বাড়িতে ঢুকার সময় দেখলাম একটা মেয়ে ঢুকছে।আর তুই বলছিস কেউ আসেনি।

নিশি বললো,
—–ওহহহ,,ওটা তো সামু।সামু ভার্সিটি থেকে ফিরেছে।

আদি অবাক হয়ে বললো,
—–সামু!! এটা আবার কি?কারো নাম?

——হ্যা মানে সামান্তা।ওকে সামু বলে ডাকি।

আদি ভ্রু কুচকে বললো,
—–এই সামান্তা সামুটা কে?

—–তুমি যেই মেয়েকে মার্ডার করে দিচ্ছিলে।মানে তোমার গাড়িতে যার এক্সিডেন্ট হয়েছে তার নাম সামু মানে সামান্তা।

—–কিহ!!ও মাই গড।তো এখানে কি করছে?

—–ও তো এখানেই থাকে।অবশ্য তুমি তো বাড়ির খবর রাখোই না।

আদি অবাকের উপর অবাক হয়ে যাচ্ছে।এতোকিছু হয়েছে আর ও কিছুই জানেনা।
—–ওহ এখানে কেন থাকে?

নিশি এতো প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বললো,
——কারণ এক্সিডেন্টে ওর মেমোরি লস হয়ে গেছে তাই এখানে থাকে।মেমোরি ফিরে এলে চলে যাবে।

নিশি আবার বসে পড়ল।বসে বসে ফেসবুকিং করছে।

আদি বললো,
——ডিরেক্টার হবি?মুভি বানাবি?ফালতু কথা না বলে সব সত্যি সত্যি বল।

—–উফফ ভাইয়া তোমার জন্য শান্তিতে ফেসবুকিংও করতে পারছিনা।
তাহলে শুনো।
নিশি আদিকে সব ঘটনা খোলে বললো।

আদি শুনে মনে মনে বললো,
—–মেয়ে অনেক ডেঞ্জারাস।আমিও কম যাইনা।তোমাকে পাই একবার মজা বুঝাবো।আমাকে ভুলভাল কথা বলা।


সামু ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে।মাথায় যন্ত্রণা করছে খুব।এক্সিডেন্টের পর থেকেই মাঝেমধ্যে ব্যথা করে।
নিশি সামুর রুমে গিয়ে দেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।নিশি পাশে গিয়ে বসতেই সামু চোখ খোলে।
—–কি রে শুয়ে আছিস কেন?

—–মাথাটা ধরেছে।এক্সিডেন্টের পর থেকেই এমন হয়।

—–তাই নাকি?তাহলে তো ব্যাপারটা মা আর বাবাকে বলতে হয়।

—–তাদের বলতে হবেনা,অযথা টেনশন করবে।আমার যখন মাথা যন্ত্রণা হয় তখন ইচ্ছে করে তোমার ভাইয়ার মাথা ফাটিয়ে মার্ডার করে দেই।

নিশি মুচকি হেসে বললো,
—–তাই নাকি সাহসী নারী?এতো সাহস?

—–অবশ্যই আমার সাহস সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই।আমি আমার এলাকার কত ছেলেকে পিটিয়েছি।ওরা সবাই আমার নাম শুনে কাপতো।(ভাব নিয়ে)

—–উলে লেডি গুন্ডি।আচ্ছা আজ তোর সাহসের প্রমাণ দে।ভাইয়া কিছুক্ষণ আগে বাসায় এসেছে।যা সাহস থাকলে মার্ডার করে আয়।

সামু আমতা আমতা করে বললো,
——আজ বাড়িতে?এতোদিন যাবত আছি কোনো দিন তো বাড়িতে দেখিনি।

——কি জানি কি দরকারে এসেছে।এখন যা।

সামু দাত কেলিয়ে বললো,
—–দেখো আমার যথেষ্ট সাহস আছে কিন্তু আমার মাথা ব্যথা করছে তাই বেচে গেলো কিছু বললাম না।

——তাই না!!
নিশি হাসতে শুরু করে দিলো।

আদি আজ আর বাইরে যাবেনা।সামুকে খোজছে একবার পেয়ে গেলে বাকা বাকা কথার ঝাল বুঝাবে।
আদি ফোন টিপতে টিপতে নিচে নামছে।সামু ডাইনিং থেকে পানি খাচ্ছে।আদি ওর মাকে দেখে বললো,
—–মা কফি দেও তো।

সামু কন্ঠ শুনে পেছনে ঘুরে দেখে সেই ছেলেটা যার গাড়িতে এসেছিলো।আদি সোফায় আয়েশ করে বসে ফোন টিপছে।আদির মা সার্ভেন্টকে বললো,
—–আদিকে কফি দিন।

সামু সাথে সাথে পেছন ঘুরে গেলো।
“হায় আল্লাহ এতো সেই সাদা হনুমান।এখানে কি করছে?আন্টিকে মা বলে ডাকছে তারমানে….ওহ নো!!এটা আন্টির ছেলে?নিশিপুর ভাই আদি।”

সামু আদির দিকে একবার চেয়ে পা টিপে টিপে নিজের রুমে নিঃশব্দে চলে গেলো।
তারপর দরজা লক করে বিছানায় বসে পড়ল।
“এই হনুমানটা এই বাড়ির ছেলে আর আমি তাকে এতো কথা শুনিয়ে দিলাম।আর কি বলেছিলাম এটা আমার শ্বশুর বাড়ি? ছিহ ছিহ ছিহ সামু।তোর বেশি কথা না বললে ভালো লাগে না।এমন উল্টো পাল্টা কথা বলতে কে বলেছিলো? এখন আমার কি হবে?উনি আমাকে পেলে জানিনা কি বলবে?লজ্জা লজ্জা।”
উহহ,,সামুর নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।নিজের চুল ধরে কিছুক্ষণ টেনে শান্ত হলো।

নাহ আজ আর রুম থেকে বেরুনো যাবেনা।এই যে গর্তে ঢুকেছি আজ আর গর্ত থেকে বের হবোনা।কিছুতেই না।তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেলেও না।

রাতে সার্ভেন্ট এসে ডেকে গেছে ডিনারের জন্য সামু বলেছে মাথা ব্যথা খাবেনা।
আদি আজ ফ্যামিলির সাথে ডিনার করছে।ওর বাবা-মা আর নিশি।অনেকদিন পর পুরো ফ্যামিলি এক সাথে।আদির বাবা আদিকে দেখে টাস্কি খেলো।আদির সাথে তার দেখা হয়না তেমন একটা।বাট যদি দেখা হয় তো দুচার কথা শুনিয়ে দেন।
আদির বাবা আদিকে বললো,
—–আজ আমার পুত্র মহাশয় ফ্যামিলির সাথে ডিনার করছে।বাহ!
আদির মা ভালো করে দেখো তো এ তোমার আদি কিনা?আদির ডুব্লিকেট নয় তো?

আদি আর আদির মা একে অপরের দিকে তাকালো।আদির মা বললো,
—–তুমি শুধু শুধু নিজের এনার্জি ওয়েস্ট করছো।তোমার ছেলে তোমার কথা শুনার না।

—–তা শুনবে কেন?বাপের রাজভান্ডার আছে তা উড়াবে।ওর বয়সী ছেলেরা নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবে,হার্ড ওয়ার্ক করে।আর ও বাপের পয়সা উড়ায় নাইট ক্লাবে।ছিহ!!

আদি রাগে ফুসছে কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।ও কখনো ওর বাবার মুখের উপর কথা বলে না।

আদির মা পরিস্থিতি সামাল দিতে বললো,
—–আহ থামো।শুধু শুধু নিজের বিপি হাই করোনা।
সামু কই?ডিনার করতে এলোনা?

একজন সার্ভেন্ট বললো,
——খাবেনা বলে দিয়েছে।ওনার মাথা ব্যথা।

নিশি আতংকিত হয়ে বললো,
—–এখনো কমে নি?
ভার্সিটি থেকে আসার পর থেকে বলছে মাথা ব্যথা।এক্সিডেন্টের পর থেকে নাকি মাঝে মাঝেই এমন ব্যথা হচ্ছে।

আদি শুনে চমকে গেলো।আদির বাবা বললো,
—–বিষয়টি ভালো ঠেকছেনা।কোনো সমস্যা থেকে গেলো না তো?

আদির মা বললো,
—–আমি সেটাই ভাবছি।মাথার আঘাতটা গুরুতর ছিলো।আমার তো এখন রীতিমতো ভয় লাগছে।আগামীকাল একবার ডাক্তার দেখিয়ে আনবো।

আদির বাবা বললো,
—–হ্যা তাই করো।এসব বিষয়ে গাফিলতি করতে নেই।

আদির মা বললো,
—–কিছু বেখেয়ালি মানুষের বেখেয়ালি আচরণের জন্য নিরীহ মানুষকে কষ্ট পেতে হয়।

আদি বুঝতে পারছে ওর মা ওকেই এসব কথা বলছে।আদির প্রচন্ড রাগ হচ্ছে সেটা ফেসে ফুটে উঠেছে।আদি প্লেটে পানি ঢেলে উঠে গেলো।

নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক করে দরজায় একটা লাথি মারলো তাতেও ওর রাগ কন্ট্রোল হচ্ছে না।আজ দিনটাই খারাপ।শুধু মানুষ ওকে কথাই শুনিয়ে যাচ্ছে।

~পরেরদিন সকাল~
সামু ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে বেরুতেই নিশি বললো,
—–আজ ভার্সিটি যাওয়া হবেনা।ডক্তরের কাছে যেতে হবে।চল।

সামু কাধে ব্যাগ নিয়ে বললো,
—–কেন??

——তোর মাথা ব্যথার জন্য।আমাদের ঠিক লাগছেনা এত ঘনঘন মাথা ব্যথা।তাই তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো।

——(এরে মাথা ব্যথা তো কিছুক্ষণ ছিলো।ওটা তো ওই জিরাফের সাথে যাতে দেখা না হয় তাই বলেছিলাম।)নিশিপু সামান্য মাথা ব্যথার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কি হলো?শুধু শুধু এত্ত এত্ত ওষুধ খেতে দিবে।

—–সে বললে হবেনা যেতে হবে।

অগত্যা যেতে হলো সামুর।ডাক্তার কিছু টেস্ট করে নিলো।আগামীকাল এসে রিপোর্ট নিয়ে যেতে বললো।

.

নিশি ভার্সিটিতে গেছে,নিশির মা কোনো এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছে।সামুকে বাড়িয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।আজ আর ভার্সিটিতে যাওয়া হলোনা।
সামু দুপুর বেলা বাড়ি ঢুকছে হাই তুলতে তুলতে।ওর প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।আদি ফোন টিপতে টিপতে বাইরে বের হচ্ছে।দুজন দুজনের সামনাসামনি পড়ে গেলো।আদি ফোন থেকে চোখ তুলে সামুর দিকে তাকালো।সামু চোখ বড়বড় করে আদির দিকে তাকিয়ে ওকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।

আদি ভাবছে পাইছি আজ তোমাকে। আদি কড়া গলায় বললো,
—–দাড়াও!!

সামান্তা দাড়িয়ে গেলো।আজ ওর কপালে কি আছে সেটাই ভাবছে।
আদি ওর সামনে গিয়ে ভ্রু নাড়িয়ে বললো,
—–তুমি কি করছো আমার বাড়িতে?
তারপর মনে করার ভান করে বললো ওহ হ্যা মনে পড়েছে এটা তো তোমার শ্বশুর বাড়ি।ভুলেই গিয়েছিলাম।

সামু চোখ বন্ধ করে দাতে দাত চেপে মনে মনে বলছে,
“ছিহ সামু ছিহ!! কিভাবে অপমানিত হচ্ছিস।এই ছেলে গতকালের শোধ নিচ্ছে।”

আদি সামুকে চুপ করে থাকতে দেখে বললো,
—–কি এখন চুপ করে আছো কেন?গতকাল তো মুখে খই ফুটছিলো।

সামু চোখ খোলে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—–শুনুন সেটা কথার কথা ছিলো।আপনি বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন তাই বিরক্ত হয়ে বলেছি।এটা নিয়ে এতো মেলোড্রামা করার কি আছে?

আদি ভ্রু কুচকে বললো,
—–মেলোড্রামা!! তুমি এখানে মেলোড্রামার কি দেখলে?হুহ?

সামু ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে চুপ করে দাড়িয়ে আছে।কোনো কথা বলছেনা।সেটা দেখে আদির রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।একটা মেয়ে ওকে বারবার কথা দ্বারা হেনস্থা করছে।
—–তোমার সাহসের তারিফ করতে হয়।ওয়াহ!

—–সবাই আমার সাহসের তারিফ করে এখন আপনিও করে নিলেন।এ আর তেমন কি?

—–আচ্ছা তাইনা??
আদি সামুর দিকে আগাচ্ছে।সামু ওকে এভাবে আগাতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো।আদির নাকের ডগা লাল হয়ে আছে।রাগে ফুলে ফুলে উঠছে।সামু ভয় পেলেও মুখে প্রকাশ করছেনা।কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভয় পাচ্ছে।সামু আদির দিকে চেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে।
যখনই ভাবলো দৌড়ে সরে যাবে তখনই সেন্টার টেবিলের সাথে ধাক্কা খায়।সেন্টার টেবিল পেছনে থাকায় দেখতে পায়নি।
হাতের ফোন পড়ে যায় সামু পড়তে নেবে তখনই আদি ওকে ধরে ফেলে।সামুও ব্যালেন্স রাখতে না পেরে আদির দুকাধ ধরে ফেলে।
আকস্মিক ভাবে সামু আদির বুকে গিয়ে বাড়ি খায়।
পায়ের ব্যালেন্স ঠিক করে সামু সাথে সাথে সরে যায়।কাচুমাচু করতে করতে ফোন তুলে দৌড় দেয়।

আদি ওভাবেই দাড়িয়ে আছে।কি হলো বুঝার চেষ্টা করছে।একটা মাতাল করা ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়লো।কয়েক সেকেন্ডের মতো সময়ের কাছাকাছি ছিলো দুজন কিন্তু আদি এই কয়েক সেকেন্ডে অনেক কিছু অনুভব করে ফেলেছে।অদ্ভুত মাতাল করা অনুভূতি।আদির সাথে এমন কিছু কখনো হয়নি।
আদি নিজের বুকে হাত দিলো।কেমন ধুকপুক করছে।আদি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।মনে হচ্ছে এখন অক্সিজেন, নাইট্রোজেন,
হাইড্রোজেন সব কিছু লাগবে সব নয়তো মারা পড়বে।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে