তেমাতেই বিমোহিত পর্ব-১৭

0
1133

#তেমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ১৭
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

“তুমি সত্যি এখনো আমায় ক্ষমা করতে পারো নি। আচ্ছা ঠিক আছে, বলো কি করলে তুমি আমায় ক্ষমা করবে!! আমি সেটাই করব। ”

ইহানের এমন কথায় যেন ভাবান্তর হলো না আরোহির। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ইহান আর একটু করুন স্বরে বলল,

“সত্যি বলছি তুমি যা বলবে আমি তাই করব আরোহি কিন্তু এভাবে আর ভুলের মাঝে থাকতে পারবো না।তুমি যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেব কিন্তু প্লিজ। ”

আরোহি একটু উঁচু হয়ে ইহানের টাই টা ঠিক করে দিয়ে বলল,

” শাস্তি আপনি পাবেন। তবে এখন বলব না।এখন অফিসে যান আজ সন্ধ্যায় বলব আপনার শাস্তির কথা!”

ইহান বুঝতে পারছে না আরোহির মনে কি চলছে।তবে আরোহি যখন বলেছে এখন কিছু বলবে না তখন বলবে না এটা ইহান জানে। তাই কথা না বাড়িয়ে অফিসে চলে গেল ইহান।
____________________

রাফসানকে টানতে টানতে অফিসের ছাঁদে নিয়ে এলো রিনি।রাফসান সিন ক্রিয়েট করতে চাই নি বলে জোর করে নি রিয়াকে।না হলে রাফসানকে রিনি কখনোই এভাবে আনতে পারত না।ছাঁদে এসে রাফসানকে ছেড়ে দিয়ে ঝাঝালো গলায় প্রশ্ন করল রিনি,

“ওই জয়াকে কেন লিফট দিয়েছেন আপনি রাফসান?ভালোবাসেন ওকে তাই না? আমি আপনাকে এতবার বলেছি আমি আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু আপনি যেন আমার কথা শুনতেই পান না। কেন রাফসান কেন? কি করলে আপনি আমায় ভালোবাসবেন, বলুন আমি তাই করব কিন্তু প্লিজ এভাবে আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।দু মাস হলো আপনি আমাদের অফিস জয়েন্ট করেছেন, এই দুই মাস ধরে আমি আপনাকে বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু আপনি একটা কথায় বলেন আমাকে ভালোবাসা আপনার পক্ষে সম্ভব না। অথচ ওই মেয়েটার সাথে আপনি বেশ ভাব জমাচ্ছেন! কেন করছেন এমন!!”

“তুমি কিন্তু নিজের সীমা অতিক্রম করছো এবার, রিনি!আমি কার সাথে মিশব, কাকে লিফট দেব সটা আমার ব্যাপার। তুমি এটা নিয়ে কথা বলতে পারো না।আমি যেন আর কোনো দিন আমার বিষয়ে তোমাকে এতটা মাথা ঘামাতে না দেখি! আর তুমি যেটাকে ভালোবাসা বলছো সেটা শুধুই এটার্কশান!! তাই এসব ভূত মাথা থেকে নামাও, বুঝেছো!!”

কথাগুলো বলেই রাফসান সেখান থেকে চলে গেল।নিজের ডেস্কে গেল রাফসান।ভীষণ রাগ হচ্ছে রাফসানের। মনে মনে ভাবল,

“এভাবে আর চলতে পারে না। আমার ইহানকে সব জানাতে হবে এবার!”

রাফসানের ফোন পেয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে ইহান। অফিস থেকে আজ এক ঘন্টা আগে ছুটি নিয়েছে ইহান।ইহান পৌছানোর কিছুক্ষণের মধ্যে রাফসান ও এসে পড়ে। রাফসানকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। ইহান সেটা খেয়াল করল। তাই রাফসানকে জিজ্ঞেস করল,

“কি হয়েছে রাফসান? আজ হঠাৎ দেখা করতে চাইলে? আয়ানকে দেখতে তো ও বাড়িতে যেতে পারতে?”

ইহানের কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাফসান বলে উঠল,

“ইহান এই মুহূর্তে আমার সব থেকে কাছের বন্ধু তুমি। তাই একটা বিষয় নিয়ে তোমার সাথে কিছু আলোচনা করার ছিল।আসলে যেহেতু অফিস টা তোমার সাথে রিলেটেড সেহেতু তোমাকে এটা জানানো খুব দরকার।দেখ তুমি যোগাযোগ করে আমাকে এই চাকরি টা পাওয়িয়ে দিয়েছো।সে জন্য আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।কিন্তু? ”

“কিন্তু কি রাফসান? অফিসে কোনো ঝামেলা হচ্ছে?”

জিজ্ঞেস করে ওঠে ইহান।

“না অফিসে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ঐ অফিসে কাজ করে একটা মেয়ে। নাম রিনি।মানে আমার কলিগ বলতে পারো।মেয়েটা খুব ভালো ইহান।কিন্তু অফিস জয়েন্ট এর দিন ১৫ পর থেকেই কান্টিনিয়াসলি আমাকে প্রপোজ করে যাচ্ছে। প্রথমে আমি ব্যাপার টা সেই ভাবে গুরুত্ব দেয় নি। কিন্তু ইদানীং মেয়েটার কাজ কথা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমি অনেক বার ওকে বুঝিয়েছে যে আমি ওকে বিয়ে করতে পারব না। ওর সাথে কোনো রকম সম্পর্কে ও জড়ানো সম্ভব না আমার পক্ষে। কিন্তু মেয়েটা মানতে নারাজ!”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে রাফসান।

ইহান মনোযোগ দিয়ে রাফসানের কথাগুলো শুনছিল।এমন কিছু যে হবে সেটা ইহান ভাবেনি।এমনিতেই ইহান প্রচন্ড টেনশনে আছে যে আজ আরোহি তাকে কি শাস্তি দেবে। তার মধ্যে আবার রাফসান এর সমস্যা।চারিদিক দিয়েই সমস্যা যেন ঘিরে ধরেছে ইহান কে। কি বলবে, কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ইহান। তাই রাফসানকে বলল,

“রাফসান এই বিষয় টা তে আমি কি বলব আমি নিজে ও বুঝতে পারছি না। তবে এটুকু বলতে পারি যা ই করো না কেন একটু ভেবে চিন্তে করো। যদি মেয়েটা সত্যি তোমাকে ভালোবেসে থাকে তাহলে ও কে এক বার সুযোগ দাও।”

ইহানের এমন কথা শুনে রাফসান করুন চোখে তাকালো ইহানের দিকে। ইহান এই দৃষ্টির মানে জানে তাই বলে উঠল,

“আমি জানি মায়াকে তুমি আজ ও ভালোবাসো।আমি কিন্তু মায়াকে ভুলে তোমাকে নতুন জীবন শুরু করতে বলছি না।আমি বলতে চাইছে তুমি মেয়েটাকে একটা সুযোগ দাও। তাকে মায়া এবং আয়ান এর ব্যাপারে ও জানাও।এই মুহূর্তে ডিটেইলস এ না বলো, কিন্তু ওদের নিয়ে মেয়েটার সাথে আলাপ তো করতে পারো।যদি মেয়েটা সত্যি তোমাকে ভালোবাসে তাহলে তোমাকে মেনে নেবে আর যদি এটা শুধুই এটার্কশান হয় তাহলে তোমার থেকে দূরে সরে যাবে। এবার সিদ্ধান্ত তোমার!!”

ইহানের কথা শুনে রাফসান দেখল ইহান ভুল কিছু বলছে না।তাই রাফসান ভাবল রিনিকে সব সত্যি টা জানাবে তারপর যা হয় দেখা যাবে।

নিজেদের কথা শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল ইহান ও রাফসান।রাফসান ভাবছে রিনিকে সত্যি টা জানিয়ে দিলে আর এই সমস্যা টা থাকবে না।মেয়েটা নিশ্চয় এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করতে চাইবে না যে বিবাহিত বা বিপত্নীক।

অন্য দিকে ইহানের বুকের মাঝে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আজ বাড়িতে গেলে আরোহি তাকে কি বলবে এটা ভেবে!অনেক চিন্তা নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল ইহান আর রাফসান।

বাড়িতে ইহানের অপেক্ষায় আছে আরোহি। আজ যে কথা টা বলবে সেটা সবাই কি ভাবে নেবে। ইহান আপত্তি করবে না এটা জানে আরোহি তবে ভেতরে ভেতরে অনেক কষ্ট পাবে। আর বাড়ির লোকজন তারা ও নিশ্চয়ই আরোহির এই সিদ্ধান্ত মানতে চাইবে না।কিন্তু আরোহি এটা করবেই ভেবে নিয়েছে।

একরাশ ভয় নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল ইহান। প্রতিদিনের মতো আজ ও আরোহি আর আয়ান আরশি বেগম এর ঘরে আছে। ইহান নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর ড্রয়িং রুমে এসে বসল।একটু পরেই সেখানে আরশি বেগম, আরোহি আর আয়ান এলো।আরশি বেগম এর মুখ টা কালো হয়ে আছে। যেন কোনো কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় আছেন তিনি। একটু পর ইহানের বাবা ও ফিরে এলো।সকলের মুখ থমথমে হয়ে আছে। প্রত্যেকের মনে আলাদা আলাদা চিন্তা। ইহানের বাবা ফ্রেশ হয়ে এলে সকলে ডিনার করতে বসবেন। হলো ও তাই। ইহানের বাবা ফ্রেশ হয়ে ফেরার পর সকলে রাতের খাবার এর জন্য বসে পড়ল।সকলে চুপচাপ খাচ্ছে। আরশি বেগম এর মুখ টা ও কেমন কালো হয়ে আছে।ইহানের বাবা খেয়াল করলেন শুধু আরশি বেগম নয় ইহানের মুখ টা ও শুকনো।আবার খাওয়ার টেবিলে ও কেউ কোনো কথা ও বলছে না। তাই তিনি ই কথা শুরু করলেন।বললেন,

“ইহান তেমার অফিস কেমন চলছে?”

“ভালো বাবা।”
ছোট্ট করে উত্তর দিল ইহান।

এতক্ষণ কিভাবে কথাটা বলবে বুঝে উঠতে পারছে না আরোহি। তবে যেহেতু সকলে এখানে আছে আর একসাথে আছে তাই নিজের সিদ্ধান্ত টা জানানোর উপযুক্ত সময় এটা ভেবে আরোহি বলে উঠল,

“আমি কিছু বলতে চাই বড় বাবা।”

নিজের খালামনিকে খালামনি বলে ডাকলে ও ইহানের বাবাকে বড় বাবা বলে ডাকে আরোহি।

আরোহির কথায় চমকে ওঠে ইহান। ভাবে এখন কি বলবে আরোহি!তখন আরোহি বলে ওঠে,

“আমি আবার পড়াশোনা টা শুরু করতে চাই। ”

আরোহির এমন কথায় সকলে খুশি হয়।শুধু আরশি বেগম ছাড়া।তিনি আগের মতো মন খারাপ করে থাকেন। ইহানের বাবা বলে ওঠেন,

“সেটা তো খুব ভালো কথা মামনি।তবে এখন তো আর ভার্সিটির ভর্তির ডেট নেই। তোমাকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে থেকে পড়তে হবে।আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তোমাকে প্রাইভেট ভার্সিটিতেই ভর্তি করিয়ে দেব।”

“তোমার কোনো আপত্তি নেই তো আরশি?”আর ইহান তোমার কি মত?” জিজ্ঞেস করে ওঠে ইহানের বাবা।

” আমার কোনো অসুবিধা নেই বাবা।”

বলে ওঠে ইহান।

তখন আরোহি আবার ও বলে,

“বড় বাবা আর একটা কথা বলার ছিল। ”

“হ্যাঁ মা বলো।”বলে ওঠেন ইহানের বাবা।

আরোহি নিজেকে সামলে এক বুক সাহস নিয়ে বলে ওঠে,

“আমি ভার্সিটির আশপাশে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে ওইখানে থেকে পড়াশোনা করতে চায়। আর সাথে আয়ান কে ও রাখতে চায়। ”

কথাটা বলেই মাথা টা নিচু করে নেয় আরোহি। ইহান ও তার বাবা অবাক হয়ে যায় আরোহির এমন সিদ্ধান্তে তবে আরশি বেগম চুপচাপ থাকেন। এতক্ষণে নিজের স্ত্রীর মন খারাপের বিষয় টা স্পষ্ট হয় ইহানের বাবার কাছে। আরোহির পড়াশোনা নিয়ে তার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আরোহি যে এই বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। এটা ভেবেই মন খারাপ করে আাছেন আরশি বেগম।তবে আরোহি এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলো এটাই ভাবতে থাকেন তিনি।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে