তোমাতেই বিমোহিত পর্ব-১৮

0
1178

#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ১৮
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

আরোহি এমন একটা আবদার করবে ভাবতে পারেনি ইহানের বাবা।তিনি চান আরোহি পড়াশোনা করুক তবে এভাবে পরিবার থেকে দূরে গিয়ে থাকবে এটা তিনি চান না।তবে আরোহির কথা তিনি ফেলতে ও পারবেন না।তাই বললেন,

“আমি তোমার সব ধরনের আবদার পূরণ করার চেষ্টা করেছি আরোহি। তাই আজ ও তোমার বিরুদ্ধে যাব না।তোমার যদি মনে হয় দূরে গিয়ে পড়াশোনা করা তোমার জন্য ভালো হবে তাহলে আমি মানা করব না।”

কথাগুলো বলেই সেখান থেকে চলে গেলেন ইহানের বাবা।আরশি বেগম ও করুন চোখে তাকালো। তার চোখ স্পষ্ট বলছে এমন কাজ করিস না মা।এতে কেউ ভালো থাকবে না।

নিজের ঘরে মুখ টা বেজার করে বসে আছেন আরশি বেগম। তার পাশেই তার স্বামী বসে আছেন।গভীর ভাবে কিছু ভাবছেন।তখন ইহান এলো সে ঘরে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে নক করল সে। বাবার অনুমতি নিয়ে ঘরে ঢুকল ইহান। ইহান এসে একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে বাবাকে বলল,

” আমাকে ডেকেছে বাবা!”

ইদ্রিস সাহেব ইহানের বাবা নড়ে চড়ে বসলেন।বললেন,

” আরোহির সিদ্ধান্তে তোমার কি মত ইহান?”

ইহান জানত তার বাবা এই ব্যাপারে কথা বলবে বলেই তাকে ডেকেছে। কিন্তু সে কি উত্তর দেবে সেটা বুঝতে পারছে না।ইহানকে চুপ থাকতে দেখে ইদ্রিস সাহেব আবার ও বলে উঠলেন,

“এমনি এমনি এমন একটা সিদ্ধান্ত আরোহি নেবে না আমি জানি। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ আছে। তবে সেটা তোমাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার।আমি জানতে চায় না।আমি শুধু এটুকু বলব যে আরোহি কে আমি আর তোমার মা অনেক ভালোবাসি তাই ওর সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব।ওকে আটকাবো না।তবে এই সিদ্ধান্ত যদি তোমার ওপর রাগ বা অভিমান থেকে আরোহি নিয়ে থাকে তাহলে সেটা ভাঙানোর দায়িত্ব তোমার। আমি বলছি না তুমি মেয়েটাকে কোনো ভাবে জোর করো তবে তোমাদের উচিত নিজেদের মধ্যে ব্যাপার টা মিটিয়ে নেওয়া।”

তখন আরশি বেগম বলে উঠলেন,

” আমি কিছু জানি না ইহান। তুই আমার মেয়েকে আর নাতিকে আটকা।”

ইহান নিজের বাবা মায়ের কথা টা বুঝলো।তবে কি করবে সেটা ভেবে পেল না।আস্তে আস্তে বাইরে বেরিয়ে এলো।

ড্রয়িং রুমে বসে আছে ইহান।রাত তখন ২ টার বেশি। নিজের ঘরে যায় নি সে।আরোহি ও ঘুমায় নি।সে ভেবেছিল ইহান হয়তো তাকে ঘরে এসে কিছু বলবে। কিন্তু ইহান এখনো ঘরেই আসেনি।তাই আয়ানকে সতর্কতার সাথে শুয়িয়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। ড্রয়িং রুমে এসে দেখল ইহান সোফায় বসে আছে। অবাক হলো আরোহি। ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে ইহানের কাছে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,

“আপনি এখানে?”

আরোহির কথায় ইহান একটু নড়ে চড়ে বসল।আরোহির দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।আরোহি বুঝল ইহানের অভিমান।তবে সেটা বুঝে ও না বোঝার ভান করে আবারও জিজ্ঞেস করে উঠল,

“আজ রাতে কি এখানে ঘুমাবেন? ”

“সেটা তোমার না ভাবলে ও চলবে! তা কখন যাচ্ছেো তুমি?কালকেই? ”

বলে উঠল ইহান।

“হুম ”

বলেই ঘরের দিকে চলে গেল আরোহি।

ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল আরোহি। প্রচন্ড অভিমান হচ্ছে তার।যদিও এ অভিমান এর কোনো অর্থ নেই। তবে আরোহি সেটা বুঝতে চাইলো না।আরোহি একটু আগের কথা ভাবতে লাগল।

খাওয়া শেষে নিজের ঘরে এসে বসেছিল আরোহি। মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা ইহানকে কষ্ট দিতে গিয়ে বাড়ির লোকগুলোকে কষ্ট দিয়ে ফেলছে না তো সে।নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করল,

“আমার সিদ্ধান্ত কি ঠিক!! রাগের মাথায় কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেই নি তো আমি!!”

তখনই দরজায় আওয়াজ হলো।আরোহি ভেবেছিল ইহান কিন্তু না আরশি বেগম আর ইদ্রিস সাহেব এসেছেন। আরশি বেগম ঘরে এসে বললেন ,

“তোর বড় বাবা খুব দুশ্চিন্তা করছে আরোহি। তাকে সবটা বল!”

আরশি বেগম এর এমন কথা শুনে অবাক হলো ইদ্রিস সাহেব। একটু আগেই আরশি বেগম এর মুখটা বাংলার পাঁচের মতো হয়ে ছিল কিন্তু ঘরে ঢুকেই তার কি হলো!!

আরোহি ধীর পায়ে গিয়ে তার বড় বাবার পাশে গিয়ে বসল।তিনি সোফাতে বসে ছিলেন। তারপর অপরাধী সুরে বলল,

“আম সরি বড় বাবা। আসলে এটা আমার দোষ না।এটা আমাকে খালামনি শিখিয়ে দিয়েছে।”

আরোহির কথা কিছুই বুঝল না ইদ্রিস সাহেব। তখন আরোহি বলে উঠল,

“আসলে তোমার ছেলের সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে। আমি মন খারাপ করে ছিলাম। তখন খালামনি আমার কাছ থেকে মন খারাপের কথা শুনে, আমাকে বলল এভাবে সকলকে ভয় দেখাতে। আমি তোমাকে আগে থেকে জানিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু খালামনি দেয় নি।বলল, বাবা ছেলেকে নাকি একসাথে টাইট দিবে! ”

কথাগুলো বলেই চোখ নামিয়ে নিলো আরোহি।আর ইদ্রিস সাহেব বড়বড় করে আরশি বেগম এর দিকে তাকালেন। তার বউ যে এত ড্রামা করবে ভাবেন নি তিনি। সবাই চুপচাপ। হঠাৎই ইদ্রিস সাহেব হো হো করে হেসে উঠলেন।বললেন,

“ঠিক করেছিস,মা।মাঝে মাঝে বরদের টাইট দিতে এমন ভয় দেখাতে হয়।তোর খালামনি আমাকে কম টাইট দিয়েছে নাকি!”

মজার সুরে বলে উঠলেন ইদ্রিস সাহেব। বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেছে যেন। মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসেন তিনি। হঠাৎ এভাবে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার কথা শুনে কষ্ট পেয়েছিলেন। আর সে জন্যই তো নিজের স্ত্রী কে নিয়ে এ ঘরে এসেছিলেন যাতে আরোহি কে বোঝাতে পারে।

“আচ্ছা এখন কি করবি ভাবছিস?সত্যি সত্যি চলে যাবি নাকি!”

জিজ্ঞেস করলেন ইদ্রিস সাহেব।

“হুম। কিছু দিনের জন্য তোমাদের উত্তরার ফ্লাটে গিয়ে থাকব।তারপরই চলে আসবো।আর এখান থেকেই ভার্সিটিতে যাতায়াত করব।”

“ঠিক আছে মা।তোর যেটা ভালো লাগে সেটাই করিস।তবে আমার ছেলেটাকে বেশি কষ্ট দিস না যেন!”

লাজুক হাসল আরোহি। মাথাটা নিচু করে নিলো।ভাগ্যিস বড় বাবার সাথে আর খালামনির সাথে ছোট বেলা থেকেই তার বন্ধুর মতো সম্পর্ক। না হলে নিজের শ্বশুর শ্বাশুড়ি এর সাথে এই ভাবে কথা বলতে পারত না।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল আরোহি। আর ইহান সে ড্রয়িং রুমে বসে একটা নির্ঘুম রাত পার করল।

_____________

আরোহির আজ ও সকালে ঘুম ভাঙল মিষ্টি রোদের ছোঁয়ায়। তবে ইহানকে প্রতিদিনের মতো সোফায় না দেখে ভ্রু কুচকে গেল আরোহির। তবে কি সারারাত ঘরে আসেনি ইহান।ভাবতে লাগল আরোহি। ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হলো সে।তবে ড্রয়িং রুমে ও নেই। মোটামুটি সব জায়গায় খুঁজল আরোহি ইহানকে তবে সেটা নিরবে কাউকে না বুঝতে দিয়ে।
রান্নাঘরে সকালের নাস্তা বানাচ্ছেন লতা বেগম।অন্য দিনের তুলনায় আজ তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছে আরোহি।মূলত দুশ্চিন্তায় ঘুম ভেঙে গেছে ওর।বাড়িতে এখন ও কেউ উঠে নি।এমন কি আয়ান ও ঘুমাচ্ছে। আরোহি রান্নাঘরে এসে লতা বেগম দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিল তবে সে হাসিতে প্রাণ ছিল না। ইহানের জন্য চিন্তা হচ্ছে। তাই লতা বেগম কে জিজ্ঞেস করল আরোহি,

“ফুফু ইহান ভাই কে দেখেছ?”

আরোহির কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন লতা বেগম। বললেন,

“তুমি এখন ও ইহান কে ভাই ডাকো আরোহি?”

লতা বেগম এর কথায় লজ্জা পেল আরোহি ইহানের সাথে তো আরোহি কথায় বলত না।তাই ডাক নিয়ে কখনো কোনো অসুবিধা হয় নি। তবে এখন লতা বেগম এর কাছে ইহানকে ভাই না ডেকে শুধু ইহান ডাকতে ও সংকোচ হচ্ছিল তাই ভাই বলে ডাকল আরোহি।

আরোহি যে লজ্জা পাচ্ছে সেটা বুঝতে পারলেন লতা বেগম। তই বললেন,

“আমি বাড়িতে ঢোকার সময় দেখি ইহান বাবা কোথাও যাচ্ছে। সিড়িতে দেখা হয়েছিল। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কোথায় যাচ্ছে। বলল, কি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরে গেল হঠাৎ, তাই সেখানে যাচ্ছে। আমি যেন সকলকে জানিয়ে দেয়।”

লতা ফুফুর কথায় আরোহি ভালো ভাবে বুঝতে পারল যে ইহান রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।রাগে অভিমানে চোখে পানি চলে এলো আরোহির। তাই কিছু না বলে ঘরে চলে গেল সে।সে সত্যি সত্যি চলে যাবে।ব্যাগ গোছাতে শুরু করল আরোহি।

“কেন থাকব আমি এখানে? আমার ওপর তো শুধু রাগই দেখানো যায়।আমি বলেছি চলে যাবো সত্যি সত্যি গেছি নাকি! কাল রাতে আমাকে একবার বলতে পারত আরোহি যে ও না।দেখত আমি তার কথা শুনি কিনা।আমার ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে তো এবার আমি ও আয়ানকে নিয়ে চলে যাবো।”

জল ভরা চোখে কথাগুলো
নিজে নিজে বিরবির করতে লাগল আরোহি।

_______________

রাফসান নিজের ডেস্কে বসে আছে। অন্য দিনের তুলনায় আজ দিনটা যেন কেমন লাগছে রাফসানের। আর তার কারণ হলো রিনি।রাফসান অনেক বার বারণ করার পর ও রিনি প্রতিদিন রাফসান অফিসে ঢোকার কিছুক্ষণ পরই কফি আনতো রাফসানের জন্য। কিন্তু আজ মেয়েটা রাফসানের কেবিনে আসেনি।এমন কি ঢোকার সময় রিনির চোখে চোখ পড়লেও রিনি চোখ টা নামিয়ে নিয়েছিল। অথচ অন্য সময় মেয়েটা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকত।

আসলে একটা মানুষ কে অপছন্দ করলেও সাথে সাথে তাকে ভোলা যায় না।আর এ কদিনে রিনির ব্যাবহারগুলো রাফসানের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আজ হঠাৎ ব্যাতিক্রম হওয়ায় মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে রাফসানের। তবে রিনির এমন ব্যাবহার রাফসানের কাছে অদ্ভূত হলে ও রাফসান খুশি। মেয়েটা যে সরে গেছে এটা ভেবেই রাফসান খুশি।বাইরে হঠাৎ চেঁচামেচির শব্দে রাফসানের রিনির কথা ভাবনার ছেদ ঘটে। বাইরে বেরিয়ে দেখে,

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে