তোমাতেই বিমোহিত পর্ব-২২

0
1162

#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ২২
#লেখিকা আরোহি জান্নাত( ছদ্মনাম)

চারিদিকে কিচিরমিচির আওয়াজ।তবে পাখির আওয়াজ থেকে মানুষের আওয়াজ বেশি।বালিসের পাশ থেকে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে সকাল ৬ঃ০৭।আরোহির কাছে এটা অনেক সকাল হলে ও গ্রামের মানুষ এই সময়ই ঘুম থেকে ওঠে। ব্লান্কেট এর মধ্যে থেকে বের হতে ইচ্ছে হচ্ছে না।তবে গ্রামের শীতের সকাল টা দেখার লোভ ও হচ্ছে খুব। তাই সকল আলসেমিকে দূরে সরিয়ে উঠে বসে আরোহি।আয়ান পরম আবেশে আরোহির আচল জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। আরোহি ছোট করে আদর দিল আয়ানের কপালে।বাচ্চা ছেলেটা ব্লান্কেটের মধ্যে ঘুমাচ্ছে। তবে আয়ানের পাশে তাকিয়ে অবাক হলো আরোহি। ইহানের জায়গা ফাঁকা। ইহান তো এতো সকালে ওঠে না।তাহলে!

আরোহি ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলো।তবে আসার আগে আয়ানকে দেখে রাখার জন্য একটা বাচ্চা কে বলে গেছে।যদি ঘুম থেকে উঠে যায় আরোহিকে জানাতে বলেছে।
বাইরে বেরিয়ে দেখে সকলে উঠানে বসে আছে। ছোট বড় সকলেই এত সকালে ঘুম থেকে উঠেছে। ভাবতেই বেশ ভালো লাগল আরোহীর। চারিদিকে এখনো বেশ কুয়াশা রয়েছে। এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর পরিবেশ লাগছে আরোহির কাছে। তবে উঠানে মাটির বেশ কয়েকটি খোপ (এক ধরনের মাটির পাত্র) দেখে মনটা আনন্দে ভরে উঠল আরোহির।কারণ আরোহি জানে এটাতে খেজুরের রস রয়েছে। তখনই দিশা আরোহির পাশে দাড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,

“ইহান ভাই ব্যাবস্থা করেছে। বড় ভাইয়া (ইহানের বড় চাচার বড় ছেলে) কে সেই কাকভোরে ডেকে নিয়ে গেছে। চারিদিকে তখন পুরো অন্ধকার।কেউ জানে না এ কথা আমি ছাড়া।”

আরোহি বিষ্ময়ে হা হয়ে গেছে। ইহান এতো কিছু করেছে। তবে সেই সাথে একটা প্রশ্ন উকি দিল আরোহির মনে।তাই দিশাকে জিজ্ঞেস করল,

“তোমাকে এসব কে বলল?
তুমি তো বললে তখন কেউ ওঠে নি।”

আরোহির কথা শুনে আমতা আমতা করছে দিশা।আরোহি সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে।দিশা তখন আরোহি কে এক কোনায় টেনে এনে বলতে লাগল,

“আসলে ভাবি আমি তো রাতে ঘুমাই নি।না মানে বয়ফ্রন্ডের সাথে কথা বলছিলাম।কথা বলতে বলতে সকাল হয়ে যায়। তখনই সব জানতে পারি। তুমি প্লিজ এটা কাউকে বলো না।প্লিজ ভাবি।”

দিশা করুন চোখে তাকিয়ে আছে। আর এদিকে খুশিতে তো আরোহি আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে। দিশাকে নিশ্চিন্ত হতে বলল।বলল সে কাউকে কিছুই জানাবে না।তারপর উঠানে চলে গেল।সকলে মিলে খেজুরের রস ও খেল।মনের মধ্যে এক প্রশান্তি বয়ে চলছে আরোহির।
_______________

ইহানকে বারবার ফোন দিচ্ছে রাফসান। কিন্তু ইহান ফোন ধরছে না।এদিকে চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে রাফসান। আজ অনেক দিন আয়ানকে দেখে না।বড্ড ইচ্ছে করছে রাফসানের ছেলেটাকে একবার দেখতে। রাফসান জানে ইহানের কাছে আয়ান ঠিক আছে কিন্তু তা ও দেখতে বড্ড ইচ্ছে করছে।

নিজের কেবিনে বসেই ইহানকে বারবার ফোন দিচ্ছে। এদিকে রিনি এসেছিল রাফসানের কাছে একটা ফাইল সাইন করাতে তবে রাফসানকে অস্থির দেখে রাফসানের কাছে যায়।জিজ্ঞেস করে ওঠে,

“এনি প্রবলেম রাফসান? ” আপনাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে! কোনো গুরতর সমস্যা নি তো!”

মানুষের মনে অশান্তি থাকলে ভালো কথা ও গায়ে কাটার মতো লাগে।এখন রাফসানের ও একই দশা।রিনি স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করলে ও সামান্য এই কথায় রাফসানের রাগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। রেগে বলল,

“আমার কি প্রবলেম সেটা আমি বুঝে নেব!তুমি কে যে আমায় এসব জিজ্ঞেস করো? আর কখনো আমাকে এসব জিজ্ঞেস করতে আসবে না।বের হও এখান থেকে। জাস্ট গেট আউট!”

শেষের কথাটা বেশ ধমকে বলল রাফসান।

রাফসানের এমন কথা শুনে চোখে জল চলে এসেছে রিনির।তবে কোনো কথা না বলে নিজের কেবিনে চলে গেল সে। কেবিনে গিয়েই ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল সে।

অনেকবার ফোন করে ও যখন ইহান ফোন ধরল না।তখন ইহানের ফোনে ম্যাসেজ করল রাফসান।যেখানে লেখা ছিল,

ইহান, তোমরা কোথায়? আমি একটু আয়ানের সাথে দেখা করব!আমার ছেলেটাকে না দেখে থাকতে পারছি না আমি।প্লিজ আমার ফোন টা একটু ধরো!

ম্যাসেজ টা পাঠিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিল রাফসান।নিজেকে বোঝালো আয়ান ঠিক আছে। এতো হাইপার হওয়ার কিছু নাই।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো রাফসান। এখন কিছুটা ফ্রেশ লাগছে।হঠাৎই রাফসানের খেয়াল হলো সে রিনির সাথে খুবই খারাপ ব্যাবহার করে ফেলেছে।

রিনির কেবিনে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো রাফসান। তারপর নক না করেই ভেতরে ঢুকে পড়ল।ভেতরে ঢুকে দেখল রিনি চুপচাপ কাজ করছে। তবে চোখ মুখ বেশ ফোলা। রাফসানের বুঝতে অসুবিধা হলো না যে রিনি কেঁদেছে। রাফসানকে দেখে রিনি বেশ অবাক হলো তবে কিছু বলল না।রাফসান বুঝল রিনির অভিমান টা।তবে সে নিরুপায়। শুধু সরি ছাড়া আর কিছু বলার নেই তার।একজন প্রমিকের মতো রাফসান রিনির রাগ ভাঙাতে পারবে না।তাই রিনির সামনে গিয়ে বলল,

“আম সরি রিনি। আসলে তখন মাথাটা অনেক গরম ছিল। আমার ছেলের সাথে আজ অনেকদিন যোগাযোগ হয় না। এজন্যই তখন এমন একটা কাজ করে ফেলেছি। তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না।”

কথাগুলো বলেই রিনির অফিস রুম থেকে বেরিয়ে গেল রাফসান।রাফসান এর চলে যাওয়ার দিকে রিনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। মনে মনে ভাবল,

“আমি জানি রাফসান, এই সরিটুকু ছাড়া আমি আর কিছু পাব না।তবে অপেক্ষায় থাকব। একদিন এই সরি ছাড়াও আপনি আরো কিছু বলবেন আমায়।”
___________________

সকাল থেকে আরোহির মন বেশ ফুরফুরে। ইহান সেটা খেয়াল করেছে।শুধু তাই নয়,দিশার সাথে ও বেশ জমিয়ে গল্প করছে সে।আর সে জন্য ইহান একটু অবাক।ইহান সুযোগ বুঝে আরোহিকে নিয়ে ঘরে চলে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে ওঠে,

“কি ব্যাপার! দিশার সাথে এতো ভালো করে কথা বলছো!গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসেছো!”

ইহানের কথায় মুচকি হাসল আরোহি। তারপর বলল,

“আমি আপনাকে অনেক ট্রাস্ট করি। তাই ওকে নিয়ে আর জেলাস হবো না।”

আরোহির কথা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে ইহানের কাছে। ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে এখনো।আরোহি বুঝতে পারছে ইহান তার কথা বিশ্বাস করছে না।তাই বলে উঠল,

“আপনার বোন প্রেম করছে। ”

আরোহির হাসি হাসি মুখের কথা শুনে ইহান পুরো বিষয়টা বুঝতে পারল।সেই সাথে দিশার সাথে এতো মেলামেশার বিষয়টা ও।তারপর আরোহির মাথায় একটা আস্তে করে গাট্টি মেরে বলে উঠল,

“পাগলি একটা।”

ইহানের কথা শুনে আরোহি খিলখিল করে হেসে উঠল।আর ইহান সেই হাসির দিকে বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে রইল।

আজ বিকেলেই বাড়িতে ফিরে এসেছে সবাই। ইহানের মা আরশি বেগম সকলকে নিয়ে চলে এসেছেন। এভাবে হুট করে চলে আসার সিদ্ধান্তে সকলে অবাক হয়।তবে, আরশি বেগম জানান ঢাকাতে তার একটি বিশেষ কাজ পড়ে গেছে আর সেই জন্য ইমারজেন্সি সকলকে চলে আসতে হলো।তবে আরশি বেগম এর মুখ টা বেশ শুকনো।সকলে অনেকবার অনেক প্রশ্ন করেছে। তবে তিনি উত্তর দেন নি।শুধু একটা কথায় বলেছে, বাড়িতে গেলে সবাই সব কিছু জানতে পারবে।

বাড়িতে ঢুকেই সোফায় ধপ করে বসে পড়লেন আরশি বেগম। কাউকে ঘরে যেতে দিলেন না।মায়ের এমন ব্যাবহারের কারণ বুঝতে পারছে না ইহান। তবে আরশি বেগম যে এমন কিছু জিজ্ঞেস করবে তা ভাবতে পারেনি ইহান।উপস্থিত সকলে যেন হতভম্ব হয়ে গেল আরশি বেগম এর কথা শুনে।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে