তৃণকান্তা পর্ব-০৮

0
1303

তৃণকান্তা
পর্ব : ৮
– নিশি রাত্রি

ওয়াশরুমে ঝর্ণাধারার নিচে বসে মাইশা বারবার ভাবছে, এটা কি হয়ে গেলো!
ভাবতেই বুকটা কেমন যেনো ধরাক করে উঠছে। কিন্তু তূর্যের চোখের দিকে তাকিয়ে সে না করতে পারেনি। তূর্যকে হারানোর যন্ত্রণায় বিগত দিনগুলো কিভাবে কাটিয়েছে সেটা তারও অজানা নয়। সেদিকে আজ থেকে তূর্য তার। তূর্যের ইচ্ছায় দুইজন মুসুল্লির সামনে এক আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে নামক অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হলো দুজন।

বিকেলবেলা তূর্যকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ার পর মাইশা ভাবছিলো এটাই তাদের শেষ দেখা। ইচ্ছে না হলেও এটাই বাস্তব। বাস্তবটা মেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। একদিন না একদিন ঠিক হারাতে হবে তূর্যকে। তবে কি দরকার স্মৃতির ডায়রিটাতে এতো সুখকর মূহুর্তের আল্পনা আঁকার? হ্যাঁ। এটা তাকে মেনে নিতেই হবে। সেটা যতো কঠিনই হোক না কেনো।
আজ তূর্যের মাকে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে মাইশা । সব শুনার পর তার ভাবভঙ্গি বরফের ন্যায় কেমন যেনো শীতল হয়ে গেলো। তার আচরণই বলে দিচ্ছে মাইশাকে পূত্রবধূ হিসেবে মেনে নেওয়া তারপক্ষে ততোটাও সহজ নয়। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে একটা সিদ্ধান্তে অটল হলো মাইশা। সে এই সম্পর্ক রাখবে না। কিন্তু চাইলেই কি সম্ভব? এতো স্মৃতি, এতো ভালোবাসা কি চাইলেই ভুলে থাকা যায়? একটা সময় মাইশা নিজেই ভালোবাসার আকাঙ্খা নিয়ে হাত বাড়িয়েছিলো তূর্যের পানে। আজ সে নিজেই সেই সম্পর্কের ইতি টানতে চলেছে!
কথাটা ভাবা যতোটা সহজ করে দেখানো তার থেকে হাজার গুণ কঠিন। তবে চাইলেই কি তূর্য তাকে ছেড়ে দিবে? সম্পর্কের শুরুতেই তূর্য বলেছিলো,
‘এই সম্পর্কের শুরুট তুমি করেছো মাইশা শেষটা যেনো এক আল্লাহর পাঠানো মৃত্যুতেই হয়।’
তাহলে কিভাবে সে সম্পর্কে ইতি টানবে ভেবেই দিশেহারা মাইশা। তবে এটাই যে হবে। আজ হোক কিংবা কাল। একদিন এই দিনটা আসবেই। কথাগুলো ভেবেই অস্থির মাইশা। মনের মধ্যে এক অস্থিরতা বিরাজমান। এটা তূর্যের সাথে শেষ দেখা কথাটা যতোবার ভাবছে ততোবারই চোখ দুটো ঝাপ্সা হয়ে আসছে মাইশার । তূর্যের পিঠে মাথা রেখে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে মাইশা। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর একটা গ্রামে চলে এলো দুজন। তবে গ্রামটা অচেনা। মাইশা এ গ্রামে আগে কখনো আসেনি। কদম ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে। মনেহয় যেনো সে কোনো স্বপ্নপুরে আছে। গ্রামের বাতাসেও কেমন যেনো একটা সুগন্ধি আছে। একটা দীর্ঘ দম নিলো মাইশা। মুখে মৃদু হাসি। কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনের অস্থিরতাটা দুরে চলে গেলো। বাইকটা একটা দোকানের সামনে রেখে দুজন হাটতে শুরু করলো। চলার পথে ছোট একটা পেয়ারা গাছ দেখেই টুপ করে দুটো পেয়ারা পেরে নিলো তূর্য। তা দেখে কপট রাগ মাইশা। কর্কশ গলায় বললো,
– তূর্য কতো করে বলেছি কারো পার্মিশন ছাড়া কিছু ধরবে না।
– গ্রামের মানুষরা অনেক সহজ সরল। আমাদের শহরের মানুষের থেকে অনেকটা ভিন্ন তারা। আচার আচরণ। সব দিক দিয়ে। খুব ভালো আতিথেয়তা করে। ওরা ফিউচার বলে কিছু জানে না। জানে শুধু সবাই মিলেমিশে থাকতে। আমাদের শহরের মানুষের তো চাহিদার শেষ নেই। আজকে বাড়ি কালকে গাড়ি দিন দিন চাহিদা বাড়তেই থাকে তাদের। কিন্তু এই গ্রামের মানুষগুলোকে দেখো, তিনবেলা পেটে খাবার জুটলেই হলো। অন্য কোনো বাড়তি টেনশন তাদের থাকেনা। গ্রামটা আমাদের অপরিচিতো। তুমি যেকোনো একটা বাসায় যাও তোমার সাহায্যের দরকার উঠেপড়ে তোমাকে সাহায্য করবে ওরা। যেটা আমাদের শহরের মানুষের মধ্যে নেই। সামনে এক্সিডেন্ট হয়ে পড়ে আছে কিন্তু কেউ এগিয়ে আসবে না।
মাইশার দিকে তাকিয়ে দেখলো, এই যে এতোক্ষণ বকবক করলো কিছুই তার কান অবধি পৌঁছেছে বলে মনে হয় না তূর্যের। সে চোখ বন্ধ করে প্রকৃতির গন্ধ নিচ্ছে। মাইশার দিকে পেয়ারা বাড়িয়ে দিয়ে,
– নাও পেয়ারা খাও।
– খাই না আমি। তোমার পেয়ারা তুমিই খাও।
– এহ! তোমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাই পড়ে আমার পেট খারাপ হোক।
– আমাকে দেখিয়ে খেলে পেট খারাপ হবে তোমার? খাওয়াই লাগবে না তোমার।
পেয়ারা বলেই পেয়ারা দুটো কেড়ে নিতে গেলেই ভো দৌঁড় তূর্য। মাইশাও পিছু পিছু কিছুক্ষণ দৌঁড়ালো। আশেপাশের মানুষজন কেমন হা করে তাকিয়ে আছে ওদের দুজনের দিকে । কেউ কেউ মুখ টিপে টিপে হাসছেও। ওদের হাসি দেখে কেমন যেনো লজ্জা পেলো মাইশা। একটা সময় না পেরে নিজেই থেমে গেলো। তূর্য হাসতে হাসতে এসে পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
– কি ম্যাম এনার্জি শেষ?
কোনো জবাব নেও মাইশার। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তূর্যের দিকে। তূর্যের হাসিমাখা মুখটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই আবার ভিতর থেকে কেমন যেনো কান্নারা বেরিয়ে আসতে চাইলো। নিজেকে সামলে নিয়ে মাইশা বললো,
– আশেপাশের লোক খারাপ ভাববে এভাবে দৌঁড়ালে।
তারপর আবার দুজনেই পাশাপাশি হাটছে। তূর্য পেয়ারা থেকে একটা কামড় দিয়ে একটা অংশ মুখে নিয়ে সামনের দিক তাকিয়েই বললো,
– তো এবার কতোদিনের জন্য পালাচ্ছো?
– মানে!
– না মানে গতবার তো পনেরো দিন পর খুজেঁ বের করেছি। এবার নিশ্চয়ই যেচে পড়ে ধরা দিবে না। কম করে হলেও তিন চারমাস তো বটেই।
মাইশার আর বুঝতে বাকি রইলো না তূর্য কি বলতে চাইছে। অনেকটা শান্ত গলায়,
– আমাকে কখনোই তোমার বাবা মা মেনে নিবে না তূর্য। একটা সময় ঠিক আমাদের এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তার থেকে বাস্তবতা মেনে নেয়াই ভালো।
প্রতি উত্তরে কিছুই বলেনি তূর্য।
দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ। বাতাসে কিছু পাতার নড়াচড়া শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। মাটির মেঠোপথে মাঝেমধ্যেই দু একটা সাইকেল এসে ক্রিং ক্রিং বেল বাজিয়ে চলে যাচ্ছে। নিঃশ্বব্দে হাঁটছে দুজন। যতোই এগোচ্ছে দুজনের দৃষ্টিও সামনের অদূরের সবুজের সমারোহ ধান ক্ষেতের দিকে। বাতাসের মধ্যে এক তালে সবগুলো ধানগাছ কখনো এদিকে দুলছে তো কখনো ওই দিকে । ক্ষেতের মধ্যে কিছু রংবেরঙের ফড়িং আর নানান পোকামাকড় উঁড়ে বেড়াচ্ছে। দুজনেই আবারো চুপচাপ। হাঁটতে হাঁটতে একটা মসজিদের সামনে এসে থামলো তূর্য। মসজিদের বারান্দায় একজন বৃদ্ধ লোক সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরে হাঁটছে আর তাসবীহ জপছে। হয়তো মোয়াজ্জিন হবে।
সেদিকেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তূর্য।
আচমকা নিরবতা ভেঙ্গে তূর্য বললো,
– বিয়ে করবো আজকে।
কথাটা যেনো বজ্রপাতের ন্যায় মাইশার কানে এসে বাজলো। বুকের মধ্যে কেমন যেনো এক ধাক্কা লাগলো। বুকে হাত দিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে অনেকটা অবাক হওয়ার স্বরে বললো ,
– কি বললে?
– বিয়ে করবো। আজকে। এই মূহুর্তে।
– আনবিলিভেবল! তূর্য…!
– তোমাকে হাড়ে হাড়ে চিনি আমি। হারানোর যন্ত্রণায় আমি ভুগতে পারবো না।
– দেখো…!
– এই বিয়েটা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানবে না। শুধু মাত্র তোমাকে আমার করে রাখতেই আমার এটা করতে হচ্ছে। আম সরি। আর আজকে যদি বিয়েটা না হয়, আমাদের রিলেশনটা এখানেই শেষ হয়ে যায় তাহলে আজকের পর যা হবে তার জন্য তুমি দায়ী থাকবে।
তূর্যের কথায় আঁৎকে উঠলো মাইশা। ভয়ে বুকটা দুরুদুরু করছে। কয়েকটা নিঃশ্বাসের চলনও যেনো মিস করলো মাইশার। কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বললো,
– তূর্য! কি বলছো তুমি?
– বারবার এক কথা বলা আমার পছন্দ না সেটা তুমিও জানো।
– ব্ল্যাকমেইল করছো আমাকে?
– প্রয়োজন হলে তাই । তুমি ব্রেকাপ করে চলে যাবে আমি অন্যসব ছেলেদের মতো বিরহবেদনা বুকে নিয়ে ড্রিংক করবো, ফেইসবুকে স্যাড পোষ্ট দিবো, স্মোক করবো, এদিকে সেদিকে ঘুরে বেড়াবো? এতোটাও গবেট নই। সেদিনই আমি বলেছিলাম সম্পর্কের শুরুটা তবেই করতে পারি যদি শেষটা একমাত্র মৃত্যু দিয়েই হয়।
– তূর্য তখনকার আমি আর এখনকার আমি এক না।
– প্রেমটা আমি তোমার বাবা মা কিংবা তোমার ফ্যামিলি দেখে করিনি মাইশা । তোমাকে দেখে করেছি । আর আজকে ফ্যামিলিং লেশ ধরে তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে এটা কোথাকার সিস্টেম?
মাইশা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। নিজের পাতানো জালে নিজেই ফেসে গেছে। বারবার নিজেকে বকছে,
‘কি দরকার ছিলো এখানে আসার? ‘
মাইশার কোনো উত্তর না পেয়ে হাত ধরে মসজিদের দিকে পা বাড়ালো তূর্য। মাইশা কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে আবারো বললো,
– তূর্য এটা ঠিক হচ্ছে না আমাদের।
কিন্তু সে কথা কানে তুললো না তূর্য। নারীদের সব কথায় কান দিতে নেই সেটা তার বাবা সবসময়ই বলে।
ওদেরকে দেখে এগিয়ে এলো মোয়াজ্জিন সাহেব। তূর্য তাকে দেখে সালাম দিলো।
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
কিছুটা সংকোচের মধ্যে তূর্য বলেই ফেললো,
– আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। এখনি।
মোয়াজ্জিন মাথা তুলে মাইশার দিকে তাকালো। তারপর বললো,
– জোড় করে বিয়ে করাটাও যে কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বাবা। এই যে মেয়েটাকে দেখো, সে কেমন চুপসে আছে। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে বিয়েটা করতে আগ্রহী নয়। ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করাটাও যে একটা পাপ। তারপর গন্যমান্য মুরুব্বি, তোমাদের বাবা মা তাদের দোয়াও প্রয়োজন নতুন জীবনের শুরুতে।
তূর্য মাইশার দিকে তাকালো। তারও মনেহলো মাইশা একেবারেই চাইছে না বিয়েটা হোক। তূর্যের চোখের দিকে তাকিয়েই মাইশার বুকটা কেমন কেঁপে উঠলো। যেনো এখান থেকে বেরোতে পারলেই কিছু একটা করে বসবে তূর্য। কেমন ফুসফাস করছিলো। তূর্যের চোখের দিক তাকিয়ে অজান্তেই অস্পষ্টভাবে মাইশা বললো,
– আমি বিয়ে করবো।
কথাটা কানে গেলেও তেমন কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না তূর্যের। যেনো কিছুই শুনতে পায়নি তূর্য। মোয়াজ্জিনের দিকে তাকিয়ে তূর্য বললো,
– আসি। আসসালামু আলাইকুম।
মোয়াজ্জিন সাহেব তূর্যের মুখের পানে তাকিয়ে রইলো। মাইশার হাত ছেড়ে দিতে গেলে মাইশা আরো শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে হাতটা। যেনো এ হাতটা ছাড়লেই শেষ হয়ে যাবে সব। হারিয়ে যাবে তূর্য। পুরো এলোমেলো লাগছে তূর্যকে। তূর্যকে এমন এলোমেলো আগে কখনো লাগেনি মাইশার কাছে। তূর্য চোখ তুলে মাইশার দিকে তাকালে অসহায় ভাবে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেয় মাইশা। যেনো এক্ষুণি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠবে। হাত দিয়ে মাইশার চোখের পানি মুছে দেয় তূর্য। মোয়াজ্জিন সাহেব মৃদু হেসে নিজ থেকেই বললেন,
– ওইখানে ঘাট। তোমরা দুইজনেই অযু কইরা আসো।
মোয়াজ্জিনের কথা মতো দুইজন অযু করে আসলে আরো দুইজন মুসুল্লির সাক্ষী হিসেবে বিয়ে হয়ে গেলো দুজনের। মোয়াজ্জিন সাহেব মাইশাকে একটা কোরআন আর তূর্যকে একটা তাসবীহ বাড়িয়ে দিয়ে বললেন ,
– কখনোই নামায ছেড়ো না। আল্লাহ কে ডাকবে আল্লাহ সব বিপদ থেকে উদ্ধার করবে। আমার এই ক্ষুদ্র উপহারটা রাখো।
তূর্য হেসে বুক মিলালো তার সাথে। তারপর বললো,
– দোয়া করবেন আমাদের জন্য। আসি।
– ফি আমানিল্লাহ্। আবার আসিও।

সেখান থেকে বেরুতেই তূর্যের মনটা বেশ ফুড়ফুড়ে হয়ে গেলো। যেনো কোনো টেনশনই তার নেই। এতো বড় একটা কাজ করেছে সেদিকে বিন্দুমাত্র টেনশন নাই । তাকে দেখলে যে কেও বলবে, এ নিশ্চয়ই এভারেস্ট জয় করে এসেছে । গুনগুনিয়ে গান গাইছে। কখনো এ গাছের পাতা ছিঁড়ছে কখনো ওগাছের পাতা। কখনো কখনো শিষ বাজাচ্ছে। সেখান থেকে একটানেই মাইশাকে পৌঁছে দিয়ে বাসায় চলে গেলো। আর এটাও বলে গেলো, উল্টাপাল্টা কিছু করলে একদম বাসায় এসে উঠবে। মনে থাকে যেনো।
আসার পর সেই যে ওয়াশরুমে ঢুকেছে এখনো বেরোবার ইচ্ছে হচ্ছে না মাইশার। কেমন যেনো শীত শীত লাগছে। গা টা কেমন কাটা কাটা দিয়ে উঠছে। একদিকে সুখ আরেকদিকে চিন্তা। তূর্যকে সারা জীবনের জন্য পেয়ে গেছে ভেবেই কেমন এক অজানা সুখ অনুভূতি হচ্ছে। আবার তূর্যের বাবা মা কি তাকে মেনে নিবে? সেটা ভেবেও অনেক টেনশন হচ্ছে।
চলবে,,,!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে