তুমি হলেই চলবে পর্ব-০৯

0
984

#তুমি_হলেই_চলবে
#part_9
writer : #Mahira_Megha

আরুহী আর্শ দাড়িয়ে আছে নাবিদের বাড়ির সামনে। কেউ সাহস করে দরজায় নক করার সাহস পাচ্ছে না। একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে দরজায় নক করলো আরুহী।
নাবিদ দরজা খুলে আরুহীকে দেখে অবাক হয়ে তাকালো।
আরুহী একটা জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে, ” কেমন আছো নাবিদ ভাইয়া।
নাবিদ অবাকের চরম সীমায়।আরুহীর দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা অব্দি দেখে জোড়ে জোড়ে হেসে, “কি যেনো বললি শুনতে পায়নি আমি, আর একবার বললে ভালো হয়।”
আরুহীর রাগ উঠছে নাবিদের দিকে তাকিয়ে ওর গলা টিপতে গেলো আর্শ ওকে টেনে নিয়ে এসে, ” কি করছিস রুহি! শান্ত হো। ভুলে যাস না আমরা এখানে কেনো এসেছি।
আরুহী নিজের রাগ টা কন্ট্রোল করে, ” নাবিদ ভাইয়া সরি আমি এমন টা করতে চায় নি। ”

-তোর মতো একটা শাকচুন্নি আমায় তুই থেকে তুমি ডাকছে নাবিদ থেকে ভাইয়া ডাকছে ব্যাপার টা কি হুমমম। এতো সুন্দর করে কথা বলার কারন টা কি। কথাটা বলে ভ্রু কুচকালো।

আরুহীঃ তোমার একটা হেল্প লাগবে।
-হোয়াট!
-প্লিজ ভাইয়া না বলো না।এতোদিন যা করেছি তার জন্য সরি। বাট তোমার হেল্পের খুব প্রয়োজন।
নাবিদঃ কিসের সরি হুমমম। তুই এর আগের বার আমার সাথে কি করেছিলি ভুলে গেলি। আজ হেল্প চাইতে এসছিস।

আরুহী আর্শের হাত থেকে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে, ” ভাইয়া আমি তো তোমার ছোট বোনের মতো। একটা দুষ্টুমি করে ফেলেছি।”
আরুহীর কথায় মাঝেই নাবিদ বলে ওঠে, “কি একটা!!”
আরুহীঃ না মানে অনেক গুলো বাট এই দেখো তোমার জন্য সাদা শার্ট এনেছি। তোমার শার্টের মতোই সেম। সেদিন আমি তোমার শার্টে কালি ছুড়ে মেরেছিলাম তার জন্য আবার ও সরি।
ভাইয়া প্লিজ ছোট বোন ভেবে ক্ষমা করে দেও।

নাবিদঃ ভেতরে আয় আর নাটক করতে হবে না।
আরুহী এক্সাইটেড হয়ে আর্শকে জড়িয়ে ধরে, ” নাবিদ ভাইয়া রাজি হয়ে গেছে।

নাবিদঃ কিরে ভেতরে আয়।

তিনজন সোফায় বসে আছে।
আরুহীঃ তোমার কাছে আরিয়ান ভাইয়ার অতীত সম্পর্কে জানতে চায়।
-আমি কিছু বলতে পারবো না।
-প্লিজ ভাইয়া জানা টা খুব প্রয়োজন। আরিয়ান ভাইয়ার ওপর বড়আব্বুর কেনো এতো রাগ আমি জানতে চায়। না জানতে পারলে ভাইয়াকে বড়আব্বুর ভালোবাসা ফিরিয়ে দিবো কি ভাবে বলো? প্লিজ নাবিদ ভাইয়া বলো।

নাবিদঃ বড় হয়ে গেছিস তো। এতটা ম্যাচিউর্ড কবে হলি।
-তুমি এসব বাদ দেও সবটা বলো প্লিজ।

আচ্ছা শোন তবে।

” আরিয়ান আর আমি ছিলাম বেষ্ট ফ্রেন্ড। কলেজে ওঠার পর আরিয়ানের সাথে আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ের ফ্রেন্ডশিপ হয়। আরিয়ান সব সময় ওর পাশে ছায়ার মতো থাকতো। কখনো ওকে একা ছাড়তো না। ওর আশে পাশেও কোনো বিপদ আসতে দিতো না।

আদ্রিতা, মেয়েটার নাম আদ্রিতা। আরিয়ান ওকে পাওয়ার পর এত হ্যাপি ছিলো যে কি বলবো। সব সময় মুখে হাসি লেগে থাকতো।

আরিয়ান ওর মুখটায় দেখতো সারাদিন। আমায় বলতো, ” আদ্রিতার মুখটা খুব মায়াবি তাই না। মন চায় শুধু দেখতেই থাকি। এটা কি অনুভূতি হচ্ছে আমার। সবটা যেনো ফ্যান্টাসি মনে হচ্ছে। ”

আমিও ওর কথায় সায় দিতাম। আদ্রিতার মুখে আমি কখনো সেই মায়টা দেখিনি যা আরিয়াম দেখতো বাট হ্যাঁ আরিয়ানের চোখে ওর জন্য সীমাহীন ভালোবাসা দেখেছি।আরিয়ান আদ্রিতার মাঝে কি দেখেছিল আমি জানি না। বাট হ্যাঁ আরিয়ানের ভালো থাকার এক মাত্র কারন ছিলো আদ্রিতা।

আদ্রিতার সাথে ওর সম্পর্ক ছিলো বন্ধুত্বের। আদ্রিতা সব সময় ওকে নিজের বেষ্টফ্রেন্ড বলতো।

আমি আরিয়ানকে অনেক বার বলি প্রোপজ কর আদ্রিতাকে। বাট ও আমায় কি বলতো জানো।

নাবিদ আমিও ওকে আমার মনের সব কথা বলতে চায়। বাট কি করবো বল, ভয় হয় আমার। ও যদি আমায় মেনে না নেয়। আদ্রিতা যদি আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙ্গে দেয়।
না আমি ওকে কিছু বলবো না। আমি ওকে হারাতে পারবো না। বন্ধু হয়ে হোক বা ভালোবাসা হয়ে ও আমার পাশে থাকলেই হলো। ওর ওই মায়া ভরা মুখটা আমি দেখতে চায়। ওর সাথে বকবক করতে চায়। ও কথা বলবে আর আমি শুনবো। ওকে দেখেই আমি আমার সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো রে।

আরিয়ান কখনো ওকে নিজের অনুভূতির কথা বলে নি। মাঝে মাঝে এই সবটা আমার কাছে পাগলামি মনে হতো। বাট আরিয়ানের চোখে আমি যেই ফিলিংসটা দেখেছি সেইটা সত্যি ছিলো। হ্যাঁ আরিয়ান পাগল ছিলো আদ্রিতার জন্য।

একদিন সবাইকে অবাক করে ক্যাম্পাসের সবার সামনে আদ্রিতা হাটু গেড়ে প্রোপজ করেছিলো আরিয়ানকে। আরিয়ানের চোখে মুখে সেকি আনন্দ। পুরো মুখ ঝলমল করছিলো। সবার সামনে আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে লাভ ইউ টু বলেছলো।

তারপর থেকে শুরু হয় দুজনের লাভ কেমিস্ট্রি। আমাদের ক্যাম্পাাসে সেরা জুটি ছিলো ওরা। ওদের খুনসুটি পুরো ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে এখনো রয়ে গেছে।

2 টো বছর স্বপ্নের মতো কেটে গেলো।

ফাইনাল এক্সাম শেষের পর।
আদ্রিতা একটা কার্ড হাতে নিয়ে এসে আরিয়ানকে দেয়।
আদ্রিতার বিয়ের কার্ড ছিলো।
আরিয়ানঃ এসব কি আদ্রিতা। তুমি ফান করছো আমার সাথে?

-ফান কেনো করবো। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
-বিয়ে মানে! আর আমাদের ভালোবাসা?
-দেখো আমরা সবে এইচ এস সি এক্সাম দিলাম। তোমার স্যাটেল হতে এখনো অনেক দেরি আছে।আর ছেলেটা খুব ভালো খুব ভালো একটা জব করে। আমরা হ্যাপি থাকবো।

আরিয়ানঃ আদ্রিতা আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। তোমায় ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না। প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না। তুমি চাইলে আমি তোমায় আজকেই বিয়ে করতে পারি। আর আমার আব্বুর অফিসে আমি জয়েন করবো। তোমার কোনো প্রোবলেম হবে না।

-পাগলের মতো কথা বলো না আরিয়ান। নিজের লাইফে ফোকাস করো ভুলে যায় আমায় নতুন করে শুরু করো।

আরিয়ান কান্না ভরা চোখে তাকিয়ে শুনছিলো আদ্রিতার বলা কথা গুলো। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে, ” তাহলে কেনো সবার সামনে প্রপোজ করেছিলে আমায়? কেনো মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়েছিলে?”

আদ্রিতাঃ আবেগ ছিলো। আবেগে পরে ভুল করেছি। বাট একটা ভুলের জন্য নিশ্চয় সারাজীবন সাফার করবো না আমি। তুমি ও আমায় ভুলে যাবে শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

আরিয়ান কাদছিলো আদ্রিতার বলা প্রত্যেক টা কথা তীরের মতো বিধছিলো ওর বুকে।বাট আদ্রিতা কাঁদে নি।
চলে যাওয়ার আগে আরিয়ান কে বলে গিয়েছিলো ও যেনো আদ্রিতাকে কখনো ডিস্টার্ব না করে। আদ্রিতাকে যেনো সুখে থাকতে দেয় ও।
আর এটা ও বলেছিলো আদ্রিতা এখন থেকে আরিয়ানের কেউ না। আরিয়ানের মুখটাও আর দেখতে চায় না ও।

সেদিন লাইফে প্রথম কেঁদেছিল আরিয়ান। ক্যাম্পাসে ঘাসের ওপর হাটু গেড়ে চোখের পানি ফেলছিলো। প্রতিটি পানির ফোটা যেনো চেঁচিয়ে বলছিলো ভালোবাসি আদ্রিতা আমায় ছেড়ে যেও না।

যে ঘাসের ওপর বসে দুজন হাজারো খুনসুটি করতো।আজ সেই ঘাসের ওপর বসেই বুকফাটা আর্তনাদ করছে আরিয়ান। যে ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে পরিপূর্ণ ছিলো ওদের হাসির শব্দে। যে ক্যাম্পাস ওদের ভালোবাসার সাক্ষী ছিলো সেই ক্যাম্পাস আজ ওদের বিচ্ছেদের ও সাক্ষী হয়ে রইলো।

আরিয়ানকে অনেক বুঝিয়েছি ভুলে যা ওকে ওর তোর ভালোবাসার যোগ্য না। বাট আরিয়ান বোঝে নি। মন থেকে ভালোবেসেছিলো ওকে হাজারো স্বপ্ন বুনেছিলো ও।
বাট ওর মনটা আজ ক্ষত বিক্ষত।

জন্ম নিলো এক নতুন আরিয়ান। সারাদিন নেশা করতো। আংকেল আন্টি সবাই ওর ওপর প্রচন্ড রেগে ছিলো।
আংকেল ওকে নেশা করতে বারন করতো বাট ও শুনতো না। দিনের পর দিন চলতেই থাকলো ওর পাগলামি। শেষ হয়ে যাচ্ছিলো একটু একটু করে। পাশে কেউ ছিলো না ওর। আরিয়ানে কষ্ট টা কেউ বুঝতে পারতো না।

আবরারঃ এই দিন দেখার জন্য তোমায় এত বড় করেছি। নেশাখোর হওয়ার জন্য। আমার একটা সম্মান আছে যা তোমার জন্য শেষ হয়ে যাচ্ছে।

-আব্বু একমাত্র এটাই তো আছে যা আমার কষ্টকে ভুলিয়ে রাখে।

আবরার রেগে আগুন হয়ে যায়। বেরিয়ে যায় আরিয়ানের রুম থেকে।

আংকেল ওর ওপর বিরক্ত ছিলো। রিহ্যাভ এ পাঠাটে চেয়েছিলো। আন্টিরা দুজন ওকে অনেক বুঝিয়ে ছে। আরহান আংকেল ও আরিয়ানকে বুঝিয়েছে যেনো পাগলামি বন্ধ করে দেয়।

আমি ওর সাথে কথা বলি সেদিন রাগের কারনে ওকে একটা থাপ্পড় ও মারি।
ও আমায় জড়িয়ে কাঁদছিল আর বলছিলো, ” আমি ওকে ভুলতে পারছি না নাবিদ। আমি কতটা কষ্ট পাচ্ছি তোকে কি করে বোঝাবো বল। ”

-আদ্রিতার জন্য কষ্ট পাচ্ছিস যে তোকে ঠকিয়েছে। তুই ওর জন্য জাস্ট টাইম পাস ছিলি। এই রকম একটা মেয়ের জন্য তুই তোর ফ্যামিলিকে কষ্ট দিচ্ছিস আরিয়ান। যারা তোকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে যারা তোকে হ্যাপি দেখতে চায়।
আদ্রিতা তো হ্যাপি আছে ওর স্বামীর সাথে তাহলে কেনো তুই নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস। কেনো তোর ফ্যামিলিকে কষ্ট দিচ্ছিস।
তুই কি প্রমান করতে চায়ছিস ওর কাছ তুই হেরে গিয়েছিস। ছেলেরা এতো দূর্বল যে একটা মেয়ের কারনে নিজেকে শেষ করে দিবি।

আরিয়ানঃ তুই ঠিক বলেছিস নাবিদ আমি হেরে যাবো না। আমি তো ওকে হারিয়েছি যে আমার ছিলোই না। আমি কষ্ট কেনো পাচ্ছি। আমি ওকে দেখিয়ে দিবো আমিও পারি। ওকে ছাড়া ভালো থাকতে পারি আমি। ও আমায় দেখে আফসোস করবে। ওর বারবার মনে হবে ও আমায় হারিয়েছে । ও তাকে হারিয়েছে যার কাছে ও সব ছিলো। কষ্ট ও পাবে। আমার সাকসেস দেখে ও আফসোস করবে।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে