তুমি হলেই চলবে পর্ব-১০

0
990

#তুমি_হলেই_চলবে
#part_10
writer : #Mahira_Megha

আরিয়ান সত্যি পাল্টে যায়। নিজের মাঝে নিয়ে আসে জেদ। যা ওকে কখনো দূর্বল হতে দেয় নি। তবে আংকেলের চোখে ও ছোট ছিলো। বাড়ির সবাই ওকে মেনে নিলেও আংকেল মেনে নিতে পারে নি।

আরিয়ান চলে যায় আমেরিকা। স্টাডি করার জন্য। ওর সাথে আমার মাঝে মাঝে কথা হতো। ও কখনো হয়তো আদ্রিতাকে নিয়ে ভাবেনি নয়তো লুকিয়ে রেখেছে নিজের মাঝে কাউকে বুঝতে দেয়নি। তবে আরিয়ান মেয়েদের সাথে আর কখনো মেশে নি। আরিয়ানের কাছে সব মেয়েই চোখের বালি।

কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাবিদ।

আরুহী মনে মনে বলে ওঠে,” ভাইয়ার কাছে আবার হয়তো প্রমান হয়ে গেলো সব মেয়ে এক তাদের বিশ্বাস করা যায় না। আমি ভাইয়ার মনে আঘাত দিয়েছি।

আর্শ আরুহীর দিকে তাকিয়ে, ” কোথায় হারালি রুহি? কি ভাবছিস?”
আরুহীঃ না কিছু না। নাবিদ ভাইয়া থ্যাংক ইউ আর হ্যাঁ সরি।
-ইটস ওকে তোর আর সরি বলতে হবে না। বাট তুই এত টা পাল্টালি কবে। মেয়েদের কাপড় ও পড়েছিস দেখছি ব্যাপার টা কি হুমমম।
-ভাইয়া তুৃমি সত্যি আমায় ক্ষমা করে দিয়েছো তো?

-এত বার বলার কি আছে। তোকে কি আমি চিনি না নাকি সেই ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি।

-আমরা এবার আসি।

আরুহীঃ ভাইয়া এত কষ্ট সহ্য করেছে। আর কেউ জানেও না। তুই বল আর্শ ভাইয়ার হয়তো পাশে কাউকে প্রয়োজন ছিলো।
বাট যায় বল আমি কিন্তু খুব লাকি তোকে আমার পাশে পেয়েছি।

রাতে

কারো চোখে ঘুম নেই।
আরুহী আরিয়ানের কথা ভাবছে। কেউ কিভাবে আরিয়ানকে কষ্ট দিতে পারে। কি ভাবে এমনটা করতে পারলো আদ্রিতা।
একটু পরেই মনে কোনে মেঘ জমলো। মুখটা মলিন করে বলে উঠলো,” আদ্রিতা কত লাকি ভাইয়া ওকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। আমাকে কেনো ভালোবাসে না ভাইয়া?
আমি পাগল তাই না ভাইয়াকে যে আমি অনেক ভালোবাসি। আচ্ছা ফাস্ট দেখাতে বুঝি কারো প্রেমে পড়া যায়? আমি কেনো ভাইয়াকে এতটা ফিল করছি? ওকে ভুলতে চেয়েও আমি ভুলতে পারি না। বাট হ্যাঁ আমি ও লাকি আর্শকে পেয়েছি যে আমাকে আমার মতো করে বোঝে।
চিন্তা করো না ভাইয়া কাল সকালে সব ঠিক করে দিবো।

আর্শ ডায়রিটা বের করে লিখছে
“কতটা আজব তাইনা আমি তোর পেছনে ছুটছি
আর তুই ভাইয়ার পেছনে।
আমি তোর মুখের মায়ায় পড়েছি
আর তুই ভাইয়ার মুখের।”

তোকে আমি কি করে ভালোবাসার কথা বলবো আমি জানি না। বাট তোকে ছেড়ে যে আমি থাকতেও পারবো না রুহি। ভাইয়াও ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড এর প্রেমে পরেছিলো আমিও পরেছি। এই অব্দি গল্পটা সেম। বাট আদ্রিতা ও ভাইয়াকে ভালোবাসতো কিন্তু তুই তো আমায় ভালোবাসিস না। আদ্রিতা ভাইয়াকে একা রেখে চলে গেছে। তুই আমাকে একা রেখে যাস না প্লিজ।
আমি তোকে ছাড়া কি করে থাকবো।

” ভালোবাসা কেমন জানি
কাউকে পৃথিবীতেই জান্নাত দেখিয়ে দেই
আবার কাউকে জাহান্নাম।
কাউকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়
আবার কারোর থেকে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাও কেড়ে নেয়।

রুহি তুই আমার থেকে দুরে যাস না প্লিজ।

আরিয়ানঃ মেয়েদের কখনো বিশ্বাস করতে নেয়। প্রথমে আদ্রিতা, নামটা বলেই আরিয়ানের মুখ মলিন হয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করে অতীতে ডুব দিলো। চোখ বন্ধ করেই হাসছে আরিয়ান। মনে পরছে আদ্রিতার সাথে হাজারো খুনশুটির মুহূর্ত। বাট ওদের বিচ্ছেদের দিনটা মনে পরতেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো ওর।
চোখ মেলে বলে উঠলো আর না আমার লাইফ আমি কাউকে কন্ট্রোল করতে দিবো না।
আরুহীকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।

সূর্যের কিরনে চারদিক ঝলমল করছে। আরুহী হাসি মুখে ঘুম থেকে উঠলো।
ড্রইংরুমে বসে সবার অপেক্ষা করছে।
আরিয়ান আরুহীকে দেখেও না দেখার ভান করে চেয়ারে বসলো।
আরুহী মুখে হাসি নিয়ে মুগ্ধ নয়নে কিছুখন তাকিয়ে থাকলো তারপর আরিয়ানের সামনে গিয়ে, ” ভাইয়া”।
আরিয়ান চেয়ার থেকে উঠে, ” কি চাও আবার। এবার সবার চোখে আমায় খারাপ বানাতে চাও।
আরুহীঃ তোমার সব কষ্ট ভাগ করে নিতে চায়।
– তোমার মতো মেয়েরা শুধু কষ্ট দিতে পারে ভাগ করে নিতে পারে না।

আবরারঃ কি হচ্ছে এখানে? আরু আবার তোকে কিছু বলছে আরিয়ান? কথাটা বলার সময় আরিয়ানের প্রতি অনেক রাগ ছিলো যা সবার চোখে পরেছে।

আরুহীঃ বড়আব্বু বাবা মায়ের কাছে নাকি সব সন্তান সমান হয় তাহলে তোমার চোখে কেনো নয়?

আবরারঃ কি বলতে চায়ছিস তুই আমি আরিয়ানকে সমান চোখে দেখিনি না? যদি তাই ভাবিস তাহলে একদম ঠিক ভাবছিস। আরিয়ানকে ভালোবাসা যায় না। ও তার যোগ্য নয়।

-কেনো যোগ্য নয় কারন আরিয়ান ভাইয়া নেশা করতো?

-আরু তুই অনেক ছোট তুই বুঝবি না।
-আমি সবটা বুঝি বড়আব্বু আর এটাও জানি সব দোষ তোমার শুধু তোমার একার না তোমাদের সবার। নিলিমা,রিহানা,আরহানের দিকে তাকিয়ে বললো।
– আমাদের দোষ মানে? তোকে কে শিখিয়েছে এগুলো আরিয়ান?
আরুহীঃ দেখলে তো আমার দোষটাও ভাইয়ার ঘারে চাপিয়ে দিচ্ছো। কেনো এমন করো তোমরা।
হ্যাঁ আমি মানছি ভাইয়া নেশা করেছিল। আমি মানছি ভাইয়া ভুল করেছিলো। বাট তোমরা, তোমরা সবাই কি করছিলে ভাইয়া কেনো এমন করেছিলো কেউ একটি বার ও জানতে চেয়েছিলে? না চাও নি কেউ চাওনি। তুমি না নিজেকে ভাইয়ার বাবা ভাবো। একবার ও ওর কাছে এসে বলেছিলে, বাবা তোর কি হয়েছে কেনো এমন করছিস? তুমি ভাইয়াকে বলেছিলে একবার ও, আরিয়ান কিসের এত কষ্ট তোর কেনো নিজেকে তিলে তিলে শেষ করতে চায়ছিস? কেনো কষ্ট দিচ্ছিস নিজেকে?
তোমরা কেউ বলো নি সবাই নিজেদের সম্মান নিয়ে ভাবছিলে। সমাজ কি ভাববে এটা তোমাদের মাথায় ছিলো। বাট একটা হাসিখুশি ভালো একটা ছেলে কেনো এমন করছে তা জানতে চাও নি।

আবরারঃ ও কেনো আমায় বলেনি? কেনো দিনে পর দিন নেশা করছিলো। আমরা তো ওকে বারন করেছিলাম।

-ভাইয়া ডিপ্রেশনে ছিলো। কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। তোমাদের সাপোর্ট প্রয়োজন ছিলো ভাইয়ার। বাট তোমরা কেউ ওকে সাপোর্ট না করে ওকে দোষারোপ করতে ব্যাস্ত ছিলে।
কেউ কখনো বোঝার চেষ্টায় করেনি ওকে। ছেলেটা কতটা কষ্ট পায় জানো? একটা ছেলে যখন জানতে পারে তার নিজের বাবাই তাকে ভালোবাসে না। কতটা ডিপ্রেসড হয়ে যায় সে। ভাইয়া নিজের কষ্ট নিজের মনের মাঝেই লুকিয়ে রাখে কখনো কাউকে বুঝতে দেয় না।

বড়আব্বু তুমি বাবা হিসেবে ব্যর্থ। সেদিন ভাইয়া আমায় থাপ্পড় মেরেছিলো বলে খুব তো বললে ভাইয়া বাজে ছেলে। একবার ও জানতে চেয়েছিলে ভাইয়ার থেকে, কেনো আমায় মেরেছিলো?চাওনি। সেদিনও দোষটা ওর ছিলো না। আমার দোষ ছিলো। বাট তুমি আমায় কিছু না বলে ভাইয়াকে বললে।
তোমরা আমাকে আর আর্শকে যতটা বোঝো ততটা কি ভাইয়াকে বোঝো? না বোঝো না। আমি দোষ করলেও কখনো বলো না। আর ভাইয়া কিছু না করলেও
ওকেই,,,,,

আর কিছু বলতে দিলো না আরুহীকে আবরার ওকে থামিয়ে দিয়ে, সত্যি বলেছিস তুই আরু। কত বড় একটা কথা বললি। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
আমার ভাবা উচিৎ ছিলো আরিয়ান হঠাৎ করে কেনো এতটা পাল্টে গেলো।
আমায় ক্ষমা করে দে আরিয়ান।
আরিয়ান ওর বাবার দিকে তাকিয়ে, আব্বু আমার ভুল ছিলো। আমি ডিপ্রেশন কাটাতে ভুল পথ বেছে নিয়েছিলাম।

কয়েক দিন পর

আরুহী ছাদে বই নিয়ে বসে আছে। আরিয়ান ছাদে উঠতেই আরুহীকে দেখলো।
তাকিয়ে আছে আরুহীর দিকে মনে মনে বলছে,” থ্যাংকস আব্বুকে আমার করে দেওয়ার জন্য। ভাবিনি তুমি আমার জন্য এতটা করবে। আমার বোঝা উচিৎ ছিলো তুমি যে গুলো আমার সাথে করছিলে তা শুধুই তোমার আবেগ। আমিই তোমায় বেহায়া ভাবতাম।
আসলে আমরা মানুষরা এমনি।
“যাকে ভালো লাগে
তার খারাপটাও ভালো লাগে
আর যাকে ভালো লাগে না
তার ভালো টাও ভালো লাগে না। ”

সে জন্যই তো তোমার বিহেভিয়ার বাড়ির সবার কাছে বাচ্চামি ছিলো বাট আমার কাছে বেহায়াপনা।

আরুহী ওর সামনে এসে কোমরে হাত গুজে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে আরিয়ান এভাবে স্ট্যাচু হয়ে কেনো আছে।অনেক খন যাওয়ার পর বুঝতে না পেরে, ” আরিয়ান ভাইয়া কি করছো এখানে। ”

আরিয়ান থতমত খেয়ে, ” কককি কিছু না কককি করবো “।
-না মানে স্ট্যাচু হয়ে কেনো দাড়িয়ে আছো।
– এমনি তুমি তো পড়তে বসছিলে এখানে কি করছো পড়ায় মন দাও।

– আমি তো পড়ছিলাম। বাট তোমায় এভাবে দেখে চলে এলাম।
– পড়তে বসো।
“ওকে”, বলেই দোলনায় গিয়ে বসলো।
আরিয়ান আরুহী বলে ডাক দিলো,” আরুহী “।

ডাকটা শুনেই মনের মধ্যে রং বেরংয়ের বেলুন উড়তে লাগলো। নিজের কান কে যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওর।
চোখ বন্ধ করে নিলো আরুহী অদ্ভূদ ফিলিংস হচ্ছে ওর।
আরুহী আরিয়ানে দিকে তাকিয়ে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে বললো, ” হ্যাঁ ভাইয়া বলো। ”

– থ্যাংক ইউ। আব্বুকে বোঝানোর জন্য।

আরুহী মুখ ফ্যাকাসে করে বিরবির করছে, ” কোথায় ভাবলাম লাভ ইউ বলবে। এতো দেখি থ্যাংক ইউ বলছে।
ধ্যাত ভালোলাগে না।
আরে তাতে কি আজ থ্যাংকস দিয়েছে এর পরে লাভ ইউ ও বলবে। আমার সাথে ভালো বিহেভ তো করছে। নিজের ইচ্ছেতে কথা তো বলছে এটাই অনেক।

আরিয়ান সরু চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে মুখের এক্সপ্রেশন দেখছে। কখনো মুখে হাসি তো কখনো মলিন কখনো দুষ্টু দুষ্টু মুখ আবার কখনো সিরিয়াস মুখ। সাথে তো আছেই ঠোট নাড়ানি।
বিরবির করে কিছু বলছে তা বুঝতে পারছে বাট কি বলতে তা শোনা যাচ্ছে না।
আরিয়ান কিছুখন ওকে অবজার্ভ করে মনে বলছে,” পাগল হয়ে গেলো নাকি কি এতো বিরবির করছে ও।”

আরিয়ানঃ আরুহী আর ইউ ওকে কি বিরবির করছো।

– না কিছু না আর্শ টা সেই কখন খাতা নিয়ে আসতে গেলো এখনো নিয়ে আসলো না কেনো তাই ভাবছিলাম।

আর্শঃ এই তো এসে গেছি নাম নিয়েছিস আর বান্দা হাজির।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে