তুমি হলেই চলবে পর্ব-০৬

0
985

#তুমি_হলেই_চলবে
#part_6…
writer : #Mahira_Megha

আর্শ আরুহীর দিকে তাকিয়ে আছে।
রিহানাঃ এই মেয়ে টাও না কখন কি বলতে হয় কিছু জানে না। এখনো সেই ছোটই রয়ে গেলো।

নিলিমা আরুহীর মাথায় টোকা দিয়ে ও একটা মানুষ, বুঝলি? আইসক্রিম কেনো হবে।

আরুহী দুষ্টু হাসি হেসে সরি সরি ভুল বলেছি ভাইয়াকে ব্লাক কালারে প্রিন্সের মতো লাগছে।কথাটা বলে আরিয়ানে দিকে তাকিয়ে ওর মায়া ভরা মুখটা দেখে নিলো। যদিও ওর মুখটা আসলেই মায়াবি নাকি শুধু আরুহীর কাছেই মায়াবি লাগে সেইটা আরুহী জানে না। আরুহী আবার বলতে শুরু করলো,” ছোট বেলায় দাদি আমাকে আর আর্শকে গল্প শোনাতো রুপকথার রাজকুমারের, ভাইয়াকে ঠিক তেমনি লাগছে। রুপকথার রাজকুমার।

আরিয়ানের মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে।সবার দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলো সবাই মুখে হাত দিয়ে হাসছে।
আর্শ হাসি আটকাতে না পেয়ে জোড়ে জোড়ে হেসে দিলো।
আরিয়ান কিছু বুঝতে পারলো না। সবাই এসব শুনে হাসছে কেনো?
রিহানাঃ আর কথা বলতে হবে না চুপচাপ খেয়ে নে সব সময় বাচ্চামি করা।
আরিয়ান ওর কথায় কিছু মনে করিস না। ময়েটা আর বড় হলো না। ছেলেমানুষি করে যাচ্ছে সারাদিন।
নিলিমাঃ বয়সেই শুধু বড় হয়েছে কথা এখনো বাচ্চাদের মতোই আছে।

আরুহী মুচকি হাসছে কারন আরুহী জানে ও এতদিন যা ছেলেমানুষি করেছে ওর ফ্যামিলির কেউ ওকে সিরিয়াসলি নিবে না।

আরিয়ানঃ সবাই তোমাকে ছোট বাচ্চা ভাবে আর এর এডভান্টেজ নিচ্ছো তুমি। বাট এরা কি করে জানবে তুমি যে গুলো করো এগুলো বাচ্চামি না বেহায়াপনা।
মেয়ে বলে সবাই তোমায় মাথায় তুলে রাখে।

আরুহী আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে যাচ্ছে যা আরিয়ানকে রাগান্বিত করে দিচ্ছে।

খাওয়া শেষে একটা ভদ্রলোক এলো।
আরুহী লোকটাকে দেখে আর্শের পেছনে লুকিয়ে পরলো।
লোকটা রাগান্বিত ভাবে বলে উঠলো ” আপনাদের মেয়ে কি করেছে জানেন? ”
নিলিমাঃ আরু আবার কি করলো!
-আমার বাগানের পেয়ারা পারতে গিয়েছিলো। আমার নাতি দেখেছে।
রিহানাঃ আরু তুই পেয়ারা পেরেছিস ওনার গাছের?
আরুহী কোনো কথা না বলে দাড়িয়ে আছে।

লোকটা আবার বলতে শুরু করেছে, ” শুধু কি তাই আমার নাতি টাকে মেরেছে অব্দি।

আরুহী কোমরে হাত গুজে বললো, ” আম্মু বড়আম্মু তোমরাই বলো ওনার নাতিকে মানে ওই দামরা রোহনকে আমি মারতে পারলাম?আমার থেকে কত বড় বলো ও।

-বড় হয়েছে তো কি হয়েছে আমার নাতি তো আর তোমার মতো গুন্ডি না।আপনারা ওর একটা বিচার করেন।

আরুহীঃ আপনি দেখি খুব কিপটে আর হিংসুটেও। এতো বড় বাগান থেকে শুধু দুটো পেয়ারায় তো পেরেছি তার জন্য বিচার চায়তে আসছেন?

রিহানাঃ আরু তো ঠিকই বলেছে বাচ্চা একটা মেয়ে দুটো পেয়েরা খেয়েছে তার জন্য বিচার চাইতে চলে আসছেন। আর রোহান আরুর থেকে কত বড় ওকে কিনা আরু মেরেছে। আর এত বড় একটা দামরা ছেলে কিছু বলেনি এটা কি বিশ্বাস যোগ্য।

লোকটা ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে চলে গেলো।

আরিয়ানঃ আম্মু তোমরা ওকে শাসন না ওনাকে কেনো বললে। আরুহী চুরি করেছে আর তোমরা,,,,

রিহানা আর কিছু বলতে না দিয়ে, ” চুরি কি হুমমম দুটো পেয়ারা খেয়েছে শুধু।

আরুহী একটা বিজয়ীর হাসি হেসে আরিয়ানের কানের কাছে গিয়ে বললো, ” রোহানকে এমন মরেছি না ব্যাট দিয়ে বিছানা ছেড়ে 3 দিনে উঠতে পারবে না। ”

আর্শঃ আম্মু দ্যাটস নট ফেয়ার। সেদিন আমি শুধু একটা আম পেরেছিলাম তার জন্য আমায় কত বকা দিলে। আর রুহি পেয়ারা পেরেছে আর রোহানকে ও মেরে এসেছে। তাও ওকে কিছু বলছে না।

রিহানাঃ তুই তো ওর থেকে বড়। ও তো বাচ্চা মেয়ে।
কথাটা বলেই নিলিমা রিহানা চলে গেলো।

আরুহী স্টাইল নিয়ে বলতে শুরু করলো, ” আমি এই ফ্যামিলির একমাত্র মেয়ে। তাই সবাই আমাকে মাথায় করে রাখে। আমি কি তোর আর ভাইয়ার মতো নাকি। আমি হলাম প্রিন্সেস। আমি স্পেশাল। না হলে কি আর আমি মেয়ে হয়ে জন্মাতাম বল? আমাদের ফ্যামিলিতে আমি এক মাত্র মেয়ে। দাদু রা 3 ভাই ছিলো কোনো বোন ছিলো না। আব্বু রা 2 ভাই কোনো বোন নেয়। তোরা ও 2 ভাই বোন নেই। আমার মামাদের ও কোনো মেয়ে নেয়। তো তারমানে কি দাড়ালো আমি প্রিন্সেস তাই না। যা আর্শ আমার জন্য পানি নিয়ে আয়।

আরিয়ান মনে মনে,” মেয়ে বলে বলে মাথা কিনে নিয়েছে?আম্মুদের আদরেই এমন হয়েছে আরুহী। কেউ ওকে কিছু বলেই না। মানলাম ও একমাত্র মেয়ে তাই বলে মাথায় তুলে রাখতে হবে? ”

বিকেলে সবাই মাঠে খেলছে আরুহীকে ডাকতে এসেছিলো বাট ও যায় নি। আর্শ ও যেতে চায়ছিলো না বাট জোর করে নিয়ে গেছে।

আরুহী বেলকুনিতে বসে আরিয়ানকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। কারন আরুহী জানে আরিয়ান যদি ওকে দেখতে পায় তাহলে আরিয়ান চলে যাবে নিজের রুমে।

ক্রিকেট মাঠ থেকে আরুহীকে লক্ষ্য করছে আর্শ।আর্শের কাছে সবটা কেমন যেনো এলোমেলো লাগছে। এভাবে আরিয়ান ভাইয়ার দিকে কেনো তাকিয়ে আছে রুহি। রুহির চোখের ভাষা অন্যরকম কেনো লাগছে? দুষ্টু চেহারাটায় আজ অন্যরকম কিছু দেখতে পাচ্ছে আর্শ যার কারন ওর জানা নেই।

-এই আর্শ ব্যাট কর কি ভাবছিস এতো?

ছেলেটার কথায় ঘোর কাটে আর্শের। চোখটা নামিয়ে আরুহীর থেকে সরিয়ে,” তোরা খেল আমি খেলবো না। ”
-এই খেলবি না মানে কি? আর্শ কই যাচ্ছিস, আর্শ…

কারো কথা কানে আসে না আর্শের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে হাজারো ভাবনা।মনে অজানা ভয় বাসা বেধেছে। চারদিকে যেনো কালো মেঘে ঢাকা।

আরিয়ান ঘাড় ঘুরাতেই আরুহীকে দেখতে পায়। আরুহী
হা করে ওকে দেখছে। আরুহীর চোখে মুগ্ধতার ছোয়া। বাট আরিয়ানের কাছে তা বিষাক্ত ধোয়ার মতো লাগে।

আরুহী জোরে বলে উঠলো,” ভাইয়া শীতের রোদ কেমন লাগে? ”
আরিয়ান ওর কথার মানে বুঝতে পারলো না। এই মেয়েটা কখন কি করবে তা বলা যায় না। আদরে আদরে বাদর হয়েছে মেয়েটা।

আরুহী উওর না পেয়ে আবার বলে উঠলো, “কি ভাবছো ভাইয়া, বলো কেমন লাগে?

আরিয়ান বিরক্ত মাখা মুখে, ” আবার কি পাগলামি শুরু করলে আরুহী।তুমি বুঝতে পারো না তোমার সাথে কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। বুঝতে পারো না আমি তোমাকে সহ্য করতে পারি না।

আরিয়ান আর কথা না বাড়িয়ে ল্যাপটপ টা নিয়ে চলে যায় নিজের রুমে।

আরুহী বসে পরে। মন খারাপ হয়ে যায় ওর। চুপচাপ বসে আছে।
হঠাৎ কাধে কারো হাতের ছোয়া অনুভব করে।

পেছন ফিরে নিলিমাকে দেখে অবাক হয়ে যায় আরুহী।
-আম্মু তুমি এখানে কি করছো?
নিলিমাঃ আমি তো তোকে দেখতে এলাম।তুই ঠিক আছিস তো? খেলার মাঠে ও গেলি না। একা একা বসে কি করছিস?

-ওহহো আম্মু তুমি না বেশি চিন্তা করো। আমি ঠিক আছি। বলেই একটা হাসি দিলো।

রিহানাঃ ঠিক ই যদি থাকবি তাহলে একা একা বসে আছিস কেনো মুখ গোমরা করে।
সত্যি বলতো আমার ছেলের সাথে কি হয়েছে তোর?

কথাটা শুনে আরুহী একটা শুকনো ঢোক গিললো মনে মনে,” আমার কথাটা আবার বড়আম্মু সিরিয়াসলি নিয়ে নিলো না তো? ভয়ে মুখ শুকিয়ে গিয়েছে আরুহীর।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে