তুমি হলেই চলবে পর্ব-০৫

0
912

#তুমি_হলেই_চলবে
#part_5..
writer : #Mahira_Megha

দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে আর্শ। বাট আরুহী এখনো বের হয় নি।আর্শ আর ওয়েট না করে আরুহীকে ডাকলো ” রুহি “।

রুমের ভেতর থেকেই আরুহী বলে উঠলো ” এখানে কি করছিস? খেতে যাস নি? ”

-তোকে ছেড়ে আমি একা খাবনা বেড়িয়ে আয়।
-তাহলে খেতে হবে না তোর। নিজের রুমে যা।
-মানে!
আরুহী কোমরে হাত গুজে ” ডাফার নিজের রুমে গিয়ে রেডি হয়ে আয়। একসাথে খেয়ে কলেজ যাবো। ”
-ওওও তাই বল।

দুজন একসাথে খেয়ে কলেজ চলে যায়।

কলেজ গেটে ঢুকতেই তানিয়া মুনিয়ার সাথে দেখা হয়ে যায় ওদের।
আরুহী আর্শের হাত টেনে নিজের সাইটে নিয়ে এসে ” আর্শ ওদের ধারে কাছেও যেনো তোকে না দেখি। ”
আর্শ একটু হেসে ” আরে পাগল নাকি! কাল যে বকা টা খেলো হাহাহা। দুজন হাইফাই দিয়ে চলে গেলো ক্লাস রুমে।

বিকেলে সবাই মিলে ক্রিকেট খেলছে।
আরুহী ব্যাট ঘুরাতেই বল গিয়ে পরলো বেলকুনিতে। আরিয়ান বেলকুনিতে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।

বল দেখে অবাক হয়ে গেলো। বল টা হাতে নিতেই নিচ থেকে ছেলে গুলো বল চাইতে লাগলো। আরিয়ান ও কিছু না বলে বল টা দিয়ে দিলো।

বল নিয়ে এসে ” আরুহী ছেলেটা কে রে? তোর ভাই নাকি যে এতদিন আমেরিকা ছিলো?

আরুহীঃ ওই ভাই কি হুমমম। আমার কোনো ভাই নেয় বুঝলি। ও আর্শের ভাই।
-আর্শের ভাই মানে তো তোর ও ভাই।
-জি না আমার ভাই না। চাচাতো ভাই বুঝলি। কি ভাই বল বল? চাচাতো ভাই। আর যেনো ভাই না শুনি।

খেলা শেষে রোজকার মতো আরুহী আর্শ ডোরেমন দেখছে।
রিহানাঃ আর্শ আরিয়ানকে ডেকে নিয়ে এসো।
আরুহী একলাফে ওঠে বড়আম্মু আমি যাচ্ছি। আর্শ তুই টিভি দেখ।

সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠছে আরুহী মাথায় ঘুরছে হাজারো দুষ্টু বুদ্ধি। দরজা খোলা রেখে আরিয়ান বিছানায় শুয়ে ফোন চাপছে।
আরুহী ওকে এভাবে দেখে হারিয়ে যায় মুগ্ধতার রাজ্যে। চারদিকের কোনো শব্দই ওর কানে আসছে না। ওর মুখের মায়ায় পরে গেছে ও। কোনো কথা না বলে ওকে দেখেই যাচ্ছে।

আরিয়ান আরুহীকে দেখতে পেয়ে “এখানে কি চায় তোমার?নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছো কেনো?

আরুহী মুখে মিষ্টি হাসি এনে বলে উঠলো,” এতো সুন্দর কেনো তুমি? তোমার ফেসটা এতো মায়াবি কেনো? আমায় বারবার তোমার কাছে টানে। মনে হয় এভাবে তোমাকে দেখেই সারাজীবন কাটিয়ে দেয়।”

-থেমে যাও আরুহী তোমার মুখ থেকে আর একটা কথাও আমি শুনতে চায় না। এত বেহায়া কেনো তুমি?

আরুহীর যেনো আরিয়ানের কথায় কিছু যায় আসে না। ওর মুখ থেকে বেহায়া নির্লজ্জ শোনার পর ওর অনুভূতি গুলো একটু ও বদলায় না। আরুহী আবার মুখে সেই মিষ্টি হাসি এনে বলে উঠে ” আমি নির্লজ্জ আমি বেহায়া আমি জানি তো। বাট তুমি কি জানো আরিয়ান ভাইয়া আমি তোমার জন্য আরো বেশি নির্লজ্জ হতে পারি তোমার জন্য আমি বেহায়াপনার সব সিমা অতিক্রম করতে পারি।

আরিয়ান ওর সামনে এসে ওর দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে ” আমার সামনে আর আসবা না আরুহী। তুমি জানো না আমি মেয়েদের কতটা হেইট করি। আর সব চেয়ে বেশি হেইট করি তোমায়।”

-সে তুমি আমায় হেইট করতেই পারো। বাট আমি তোমায় ফিল করি। আর আমি জানি একদিন তুমি ও আমায় ফিল করবে।

আরিয়ান আরো শক্ত করে চেপে ধরলো আরুহীর হাত। আরুহীর হাতে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে। বাট ব্যাথাটাকে প্রশ্রয় দেয় না আরুহী। বরং মুখের হাসিটা আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে তোলে।

আরিয়ান রাগি মুখে হাসছো কেনো তুমি পাগলের মতো ব্যাথা হচ্ছে না তোমার?

আরুহীঃ ব্যাথা, তোমার ছোয়ায় আমার ব্যাথা কি করে লাগবে ভাইয়া। এ যে আমার কাছে ভালোলাগা। উদ্দেশ্য যেটাই হোক, তুমি তো আমায় টাচ করেছো এটাই তো আমার কাছে অনেক।

আরিয়ানের কানে কথাটা আসতেই ওকে ছেড়ে দিয়ে খানিকটা দূরে দাড়ায়।

-এসব পাগলামি অন্য কোথাও গিয়ে করো। আমার সামনে এসব করে কোনো লাভ হবে না তোমার। আমি তোমাদের মতো মেয়েকে খুব ভালো করে চিনি।

-লাভ লস নিয়ে তো আমি ভাবছি না তাহলে তুমি কেনো ভাবছো ভাইয়া? আমি তো শুধু তোমায় দেখতে চায়। তোমার ওই মুখে যে ম্যাজিক আছে ভাইয়া। যা আমায় তোমার প্রতি দূর্বল করে দেয়।

আরিয়ান কিছু বলবে তার আগেই আর্শ এসে ” কি করছিস এখানে? এতখন লাগে ডাকতে? ভাইয়া চলো সবাই ডাকছে।

আরিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে যায়।আর্শ আরিয়ানের মাথায় টোকা দিয়ে ” তোকে কি ইনভাইট কার্ড দিয়ে যেতে বলতে হবে।চল তো ”

আরুহী আর্শের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

আর্শ অবাক হয়ে ” কি দেখছিস হা করে। আমি জানি আমি খুব সুন্দর তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবি। ” বলেই দুষ্টু হেসে দিলো।
আরুহী ও ওর কথায় হেসে দিলো।

রাতে যে যার মত রুমে শুয়ে আছে। আরুহী হাতে বাস্কেটবল নিয়ে খেলছে।
বলটা রেখে বেলকুনিতে দাড়িয়ে চাঁদ দেখছে। আরুহী চাঁদ দেখতে খুব ভালোবাসে। সারারাত জেগে চাঁদ দেখতে বললেও আরুহী একটু ও বিরক্ত হবে না। ওই চাঁদটা আরুহীর সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিলো যা দেখলে আরুহী হারিয়ে যেতো স্বপ্নের রাজ্যে। বাট এখন আরিয়ান কেও ওর চাঁদের মতোই লাগে।
আরুহী হেসে দিয়ে বলতে লাগলো ” আচ্ছা আমার ভালোবাসা গুলো এমন কেনো? শুধু আমিই তাকে ভালোবাসি সে আমায় বোঝেই না। ওই চাঁদটাকে তো আমি ছোট বেলা থেকে ভালোবাসি বাট চাঁদ কি আমায় চিনে? এত যে কথা বলি ওর সাথে ও কি শোনে?ঠিক তেমনি আরিয়ান ভাইয়া। আমি তো আরিয়ান ভাইয়াকেও পাগলের মতো ভালোবাসি। বাট ভাইয়া তো বোঝে না। ওই চাঁদ কে দেখে আমি বারবার মুগ্ধ হই।বাট চাঁদের চেয়েও সুন্দর আরিয়ান ভাইয়া।বা হয়তো না। হয়তো আমি ওকে ভালোবাসি বলে ও আমার চোখে সবচেয়ে সুন্দর।
আবার পাগলের মতো হাসতে লাগলো আরুহী। কোমরে হাত গুজে বলে উঠলো,” ভাইয়া আমি তোমায় ছাড়ছি না। তোমার ভালোবাসা আমার প্রয়োজন নেয়। শুধু তোমার ওই মুখটা আমি দেখতে চায়। আর তুমি আমার থেকে পালাতে পারবে না।

আর্শ ডায়রি লিখছে। ডায়রির পাতা জুড়ে সব লেখা আরুহীকে নিয়ে।

” তুই চোখের সামনে থেকে হয়তো দূরে আছিস।
বাট আমার চোখ থেকে না।
তুই স্বপ্ন থেকে দূরে আছিস
বাট খেয়াল থেকে না।
তুই হার্ট থেকে দুরে আছিস
বাট হার্টবিট থেকে না
তুই আমার থেকে দুরে আছিস
বাট আমার সৃতি থেকে না। ”

লাভ ইউ আরুহী। মাই রুহি।
তোর থেকে দূরে থাকতে একদম ভালো লাগে না আমার। রাত যে কেনো হয়। রাতের এতোটা সময় আমি তোকে না দেখে কি ভাবে থাকি তুই জানিস রুহি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে রোজকার মতো দাড়িয়ে আছে আরুহী। আরিয়ান যখন বের হবে তখন একটি বারের মতো ওকে দেখবে।ওর ওই মায়াবি মুখের নেশায় পরে গেছে। যা ওকে আরিয়ানের থেকে দূরে থাকতে দেয় না।

আরিয়ান রুম থেকে বের হতেই আরুহী সামনে এসে দাড়ালো নেশাক্ত চোখে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে
” গুড মর্নিং “।

আরিয়ান দাতে দাত চেপে মর্নিং টা আর গুড হলো কই তোমার দেখলে এমনিতেই সব কিছু খারাপ ই হবে।
আমি তোমায় কিভাবে বললে বুঝতে পারবে আমি তোমায় সহ্য করতে পারি না।

আরুহী 32 টা দাত বের করে, ” কোনো ভাবে বললেই বুঝবো না। কারন তোমার আমাকে সহ্য করতেই হবে সারা জীবন।এর থেকে ভালো তুমি বলো আমি তোমায় কি ভাবে বললে তুমি আমায় ভালোবাসি বলবে।

– তোমায় ভালোবাসবো আমি! এটা বাস্তব তো ছাড়ো স্বপ্নেও সম্ভব না। তাই সময় নষ্ট না করে অন্য ছেলে দেখো।

-ভালোবাসা একবার ই হয় মিঃ আরিয়ান আর আমার ও হয়ে গেছে।

-তোমার মতো বেহায়া মেয়ের সাথে আমি কথায় বা বলছি কেনো?
বলেই আরিয়ান ড্রয়িংরুমে চলে আসে।

আরুহী ও নিচে চলে আসে।সবাই এক সাথে খেতে বসেছে। আরুহী আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।

নিলিমাঃ খাওয়া বাদ দিয়ে আরিয়ানের দিকে কি দেখছিস আরু।

-আম্মু ভাইয়াকে ব্লাক ড্রেসে একদম চকোবার আইসক্রিম এর মতো লাগছে মনে হচ্ছে খেয়ে ফেলি।

কথাটা শুনেই আরিয়ানের রাগ সপ্তম আসমানে ওঠে গেলো। সবার সামনেও এমন বেহায়াপনা করবে এটা অন্তত ভাবে নি আরিয়ান।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে