তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে পর্ব – ৬

0
1443

#তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে💖
#মিফতা_তিমু
#পর্ব-৬

সন্ধ্যে ছয়টা বেজে গেছে আর এই সময় অনেক গাড়ি পাওয়া যায়।কিন্তু এখানে কোনো গাড়িই নেই। গাড়ি খুজতে খুজতে অনেকটা এগিয়ে এলাম তবুও পেলাম না।অতঃপর ভাবলাম আরও খানিকটা এগিয়ে গিয়ে যদি পাই। যেই ভাবা সেই কাজ।

এগোতে এগোতে অনেকটা নির্জন জায়গা চলে এসেছি।রাস্তা যেন শেষই হচ্ছে না। এখানে কোনো মানুষ নেই।একেবারে জনমানব শূন্য জায়গা। এখানে পদে পদে বিপদ।যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব এই রাস্তা পেরোতে হবে।এখন মনে হচ্ছে ডাক্তার সাহেবের কথামত উনার সঙ্গে আসলেই ভালো হতো।আমি ভালো করে জানি তখন উনি উনার সঙ্গে দেখা করে উনার সঙ্গে আসার কথা বলেছেন।কিন্তু আমার কাছেও যে উপায় নেই।

সন্ধ্যে হয়ে এসেছে কিন্তু এখনও আফরিন এর কোনো দেখা নেই।চিন্তায় চিন্তায় রীতিমত পার্কিং লটে পায়চারি করছে তাহরীম আর ক্ষণে খনে দাত চিবোচ্ছে।মন চাচ্ছে একবার যদি মেয়েটা কে চোখের সামনে পায় তবে আস্ত চিবিয়ে খাবে। তাহরীম কে এরকম করতে দেখে আকাশের রীতিমত প্যান্ট ফাটছে।ভয়ে ভয়ে তাহরীমের দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো,
আকাশ: স্যার এত চিন্তা করবেন না।ভাবী কে পেয়ে যাবো।আপনি একটু পানি খান?

আকাশের সান্তনা মূলক কথা শুনে বোতল টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে দাত চেপে বললো,
তাহরীম: তুই ছুটিতে কেন গিয়েছিলি? আর গেলে আগে ফিরলি না কেন? বলেছি না আফরিন কে চোখে চোখে রাখতে?তুই জানিস না এই মেয়েটার মাথায় ছিট আছে?
আকাশ ভয়ে ভয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। তাহরীম আবার বললো,
তাহরীম: তাহলে কেন আফরিন এর উপর নজর রাখলি না? যাওয়ার আগে ওর পিছনে লোক লাগাতে পারিস নী?
আকাশ: সরি স্যার মাফ করে দিন। আর এরকম ভুল হবে না।আমি জানতাম না ভাবী বলা নেই কওয়া নেই এভাবে হুট করে গায়েব হয়ে যাবেন।

তাহরীম আকাশের কথা শুনে কিছু বললো না শুধু কপালে আঙ্গুল ঘষতে লাগলো।আকাশ বুকে হাত দিয়ে মনে মনে বললো,
আকাশ: ও গড বুকটা কেমন ধুকপুক করছিল।মনে হচ্ছিল এখনই জান বের হয়ে যাবে।এই জামাই বউয়ের জন্য কোনদিন না আমার মত অবলা পুরুষ হার্ট অ্যাটাক করেই মারা যাই খোদা জানে। হে আল্লাহ তাড়াতাড়ি ভাবীরে খুঁজে দাও নাহলে ভাবীরে খুঁজে না পাওয়ার শোকে স্যার বুড়ি গঙ্গায় আমাকে বিসর্জন দিবেন।

‘ এখানে দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই।গাড়ি বের কর।আফরিন কে খুজতে বের হই। ‘ বললো তাহরীম।

আকাশ: কিন্তু ভাবী কে খুঁজব কোথায় স্যার? নিহা রীতিমত ফোন দিয়ে পাগল করে ফেলেছে যে এখনো আসছি না কেন?
তাহরীম: দরকার পরে পাতাল থেকে খুঁজে আনবো।আর নিহার কথা পরে ভাববি।একটু কথা না বললে তোর প্রেমিকা পালিয়ে যাবে না।
আকাশ: ভাইয়া কমসে কম নিজের বোন রে নিয়ে একটু তো লাগাম টানেন। নিহা পালিয়ে গেলে আমার কি হবে?
তাহরীম: নাটক কম কর আগে গাড়ি বের কর….নাহলে তোকে….
আকাশ: সরি সরি বের করছি…

যত বেশি পা চালাচ্ছি ততই মনে হচ্ছে রাস্তা যেন আরও বাড়ছে।জোরে হাঁটতে হাঁটতে হাপিয়ে গেছি।একটু থেমে জিরিয়ে নিতে হবে নাহলে চলতে পারবনা।গলা একেবারে শুকিয়ে এসেছে।আশেপাশে কোনো দোকানও নেই যে পানি কিনে খাবো। পাগুলো ব্যাথা করছে অসম্ভব, মনে হয় ফুলেও গেছে।যাক অনেকক্ষন জিরিয়েছি।এখন তাড়াতাড়ি হেঁটে বের হই এখান থেকে ভেবে এগিয়ে যাই।

‘ ও মামণি! একা একা বাড়ি যাওয়া হচ্ছে? এত কষ্টের কি দরকার।আমাদের বললেই তো হয়।আমরা পৌঁছে দেব তোমায়। ‘

কথাটা কর্ণকুহর হতেই হাত পা জমে গেলো।যেটা আশঙ্কা করেছিলাম সেটাই হলো।অবশেষে পরেই গেলাম খারাপ লোকের পাল্লায়।কিন্তু দাড়িয়ে থাকলে চলবে না।পালাতে হবে।যেই ভাবা সেই কাজ। ওমনি দৌড় দিলাম।

কিন্তু দৌড় দিয়েও কোনো লাভ হলোনা।লোকগুলো বিশ্রী হাসি দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।একজন বললো,
একজন: মামনির দেখি শরীরে অনেক তেজ।এত সুন্দর করে বললাম তাও শুনলো না।
দ্বিতীয়জন: তেজ ছুটতে আমার শুধু দুই মিনিট লাগবে।তুই আমায় দুই মিনিট দে।একেবারে চেটেপুটে খেয়ে তেজ কমিয়ে দিবো বলেই বিশ্রী রকমের অট্টহাসি দিতে লাগলো।

লোকগুলোর কথা শুনে মাথা গরম হচ্ছে কিন্তু মাথা গরম করা যাবে না।মাথা ঠাণ্ডা রেখে সবটা করতে হবে। কোনরকমে এখান থেকে বেঁচে পালাতে হবে।নাহলে এরা আমার অনেক বড় ক্ষতি করে দিবে যেটা আজীবনেও আমি পূরণ করতে পারবো না।
আমি উনাদের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে পিছিয়ে যেতে লাগলাম। পালানোর পথ খুঁজছি।আমি পালাচ্ছি বুঝতে পেরে সাথে সাথে লোক দুটো আমার দুই হাত দুই দিক থেকে ধরে ফেললো।আমি প্রাণপণে চিৎকার করছি বাঁচাও বাঁচাও বলে কিন্তু কেউ নেই আমায় বাঁচানোর।আমি হাতপা ছুড়ছি নিজেকে বাঁচানোর জন্য।সমানে চেচিয়ে যাচ্ছি।

এবার সামনে এগিয়ে এলো আরেকটা লোক।লোকটার আমার গলায় থাকা স্কার্ফের দিকে হাত বাড়ালো।আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম পুলিশ অফিসার আমায় বাঁচান।সাথে সাথে আমার পাশের থাকা লোকগুলোর মন সামনের দিকে চলে গেলো আর আমার সামনে থাকা লোকটাও সামনে ফিরে তাকালো।এই সুযোগে আমি সবগুলোকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আমার ব্যাগ নিয়ে দিলাম উল্টা দৌড়।

‘ এই আমাদের বোকা বানিয়েছে মেয়েটা। ধর ধর একে আজ ধরতেই হবে।একবার শুধু পাই তারপর বোকা বানানোর শোধ তুলবো। ‘

কথাগুলো কানে আসতেই দৌড়ানোর স্পীড আরও বাড়িয়ে দিলাম।লোকগুলো আমার পিছু নিয়েছে।আমি প্রাণপণে দৌড়ে চলেছি আর আয়তুল কুরসী পড়ছি। হঠাৎ প্রচন্ড এক খাম্বার সঙ্গে বারি খেলাম। বারি খেতেই খানিকটা পিছিয়ে গেলাম।বুঝতে পারলাম ওটা খাম্বা নয় আসলে মানুষ। আলোয় মানুষটার মুখটা মুখ পরিষ্কার হলো।মানুষ টা আর কেউ নয় বরং ডাক্তার সাহেব।আমি দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার সাহেব কে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলাম ‘ ডাক্তার সাহেব আমায় বাঁচান। ওরা আমার ক্ষতি করে দিবে আমায় বাঁচান। ‘

ডাক্তার সাহেব আমায় উনার একহাত দিয়ে আগলে নিয়ে বললেন,
তাহরীম: ভয় পেও না আফরীন।তোমার ডাক্তার সাহেব বেচেঁ থাকতে কেউ তোমার চুলও বাকা করতে পারবেনা।
আমায় বাঁচান ডাক্তার সাহেব…আমার ক্ষতি করে দিবে ওরা…আমায় বাঁচ….বলতে বলতেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

ছেলেটা: ভালোবাসা একটা অকৃত্রিম অনুভূতি, যা ধরা যায়না ছোঁয়া যায়না,শুধুই অনুভব করা যায়।তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার তীব্রতাও এতটাই যে সেটা তুমি ছুঁতে পারবে না ধরতে পারবে না,শুধুই অনুভব করতে পারবে। ভালবাসি তোমায় প্রিয়দর্শিনী….কানের কাছে কথাগুলো বেজে উঠতেই ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলাম। আবারও একই কথা,একই সপ্ন অথচ স্বপ্নে কি দেখেছি তার কিছুই মনে নেই।শুধু মনে আছে মানুষটার বলা কথাগুলো।

ঘুম ভেংগে নিজেকে ডাক্তার সাহেবের ঘরে বিছানায় আবিষ্কার করলাম।নিজেকে ভালো করে দেখলাম।তাহলে আমি বেচেঁ গেছি ওই লোকগুলোর হাত থেকে।আজ ডাক্তার সাহেব না এলে আরেকটুর জন্য আমার সবটা শেষ হয়ে যেত। ব্যপারটা ভাবতেই শরীরটা কেপে উঠে।

সেই কখন মেয়েটা ঘুমিয়েছে এখনো উঠেনি।কিছু খাওয়া দরকার নাহলে শরীর খারাপ করবে ভাবতেই খাবার নিয়ে তাহরীমের রুমে এলেন রহিমা বেগম।কিন্তু ঘরে এসে আফরিন কে বসে থাকতে দেখে তড়িৎ গতিতে এগিয়ে গেলেন।

মা আমায় দেখে বললেন,
মা: উঠে গেছো তুমি আফরিন?সেই কখন খেয়েছো এরপর তো আর কিছুই খাওনি। নিশ্চই কাজের ফাঁকে কিছুই পড়েনি পেটে। এত পাকনামি করতে কে বলেছে তোমায়?কিসের এত জেদ তোমার? তাহরীমের সঙ্গে এলে কি হতো?একা একা আসতে গিয়েই তো বিপদ টা বাঁধালে।আজ ঠিক সময় গিয়ে তাহরীম না পৌঁছলে কি হতে পারত ভাবতে পারছ?

জেদ! কার উপর যে কখনো আমার ছিলই না।মানুষটা তো অন্য কারো।আমি তো কেবল মাত্র তার নামে স্ত্রী।তার উপর জেদ দেখানোর মত সামান্যতম অধিকারও আমার নেই।আর তো কটাদিন তারপরই উনি উনার রাস্তায় আমি আমার রাস্তায়।ভাবতেই অবাক লাগছে আগে যার মুখ রোজ দেখতাম, কয়েকদিন পর থেকে তার মুখ আর দেখাই হবে না।বিয়েটা আমায় ভালোবাসার অদৃশ্য বেড়াজালে বেধে দিয়েছে।

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবতেই ঠোঁট ভেঙে ফুপিয়ে কেদে উঠলাম।মুখে চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। আটকাতে না পেরে হু হু করে কেঁদে উঠলাম।আমায় কাদতে দেখে মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন।আমায় জড়িয়ে ধরলেন কিন্তু সাথে সাথে ছিটকে দূরে সরে গেলেন।আমার গলায় কপালে হাত রেখে বললেন,
মা: একি আফরিন তোমার তো অনেক জ্বর।তুমি এখনও এই জ্বর শরীরে বসে আছো? চলো আমরা ডক্টরের কাছে যাই বলে আমায় টেনে উঠাতে লাগলেন কিন্তু আমি উঠলাম না।আমি বিছানায় ঠায় বসে বসে কাদতে লাগলাম। কিছুতেই আমায় উঠানো যাচ্ছে না দেখে মা বিছানায় বসে আমার গালে হাত রেখে বললেন,
মা: এভাবে জেদ করলে চলে নাকি? চলো হসপিটালে যাই নাহলে তোমার যে আরও শরীর খারাপ করবে।

আমি মাকে জড়িয়ে ধরে আরও কাদতে লাগলাম।মা আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করছেন কি হয়েছে।আমি কান্না একটু সংবরণ করে বললাম,
আফরীন: এই দুনিয়ায় কেউ কারোর নয় মা, কেউ কারোর নয়….সবাই শুধু ছেড়ে চলে যায়।সবাই চলে যাওয়ার জন্য আসে,কেউ আজীবন থেকে যাওয়ার জন্য আসে না।কেউ আগলে রাখার জন্য আসে না মা।

মা: এরকম কেন বলছো আফরিন? তাহসানের বাবা, তাহসান, রিমা, তাহরীম তাড়াতাড়ি এসো তোমরা। আফরীন উল্টাপাল্টা বকছে। তাড়াতাড়ি….আর শুনতে পেলাম না। জ্বরের তীব্রতায় আবারও জ্ঞান হারালাম।

মাঝরাতের দিকে একটু জ্ঞান এসেছিল।মনে হচ্ছে কেউ একজন মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে কিন্তু জ্বরের ঘোরে কিছুই দেখতে পেলাম না। আবারও ঘুমিয়ে পড়লাম ।

সকাল হতেই তীব্র ঘাম ছেড়ে দিয়ে জ্বরটা নেমে গেলো।পুরো শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম ডাক্তার সাহেব আমার পাশে বসে বেডের হেডে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছেন।উনার পাশের সাইড টেবিলে পানির বোলে পানি আর কাপড় ভিজানো।তাহলে উনি সারারাত বসে বসে আমার মাথায় জলপট্টি দিয়েছেন।আমার জন্য এত কেয়ার কেন? উনার এত যত্নের কারণ বুঝতে পারছিনা।শুধু মনে হচ্ছে উনার এই যত্নগুলো বুকে কাটার মত বিধছে।আর ভালো লাগছে না।

আমি কোনমতে নিজেকে সামলে উঠে বসলাম।ডাক্তার সাহেব এখনো ঘুমোচ্ছেন।আমি ধীর পেয়ে বিছানা ছেড়ে নামলাম। আস্তে করে বাথরুমে চলে গেলাম।বাথরুমের শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে শাওয়ারের নিচে বসলাম।পানির শব্দে বাথরুমের ভিতরে কি হচ্ছে কিছুই বুঝা যাবে না।আমি শশব্দে কাদতে লাগলাম।অনেক আটকে রেখেছি নিজের কান্না।আর সম্ভব নয়।

মিনিট দশেক কান্নাকাটি আর পানির মধ্যে ভিজে ভেজা গায়েই বেরিয়ে এলাম। কালরাতে হয়তো মা বা ভাবী শাড়ি বদলে দিয়েছিল আর সেটা পড়ে ঝর্নার নিচে দাড়ানোর কারণেই শাড়ি ভিজে গেছে।শাড়ি আর চুল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অজস্র বিন্দু বিন্দু জলকণা।

ঘুম থেকে উঠে বিছানায় না পেয়ে আফরিন কে বাথরুমে চেক করে সিওর হয়েছিলো তাহরীম।বাথরুম থেকে পানির শব্দ আছে তারমানে বাথরুমে।সেই ফাঁকে বিছানা গুছিয়ে নেওয়া যায়।যেই ভাবা সেই কাজ। বিছানা গুছিয়ে রাখতে শুরু করতেই হঠাৎ চোখ গেলো বাথরুমের দিকে।সাথে সাথে তাহরীমের চোখ দুটো রসগোল্লার ন্যায় বড় হয়ে গেলো।আফরিন বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে তাও ভিজা অবস্থায় শাড়ি পরে।

ডাক্তার সাহেব অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন বুঝতে পেরেও আমার মধ্যে কোনো ভাবান্তর। জগৎ সংসার বিরক্তিকর লাগছে।ইচ্ছা করছে সব ছেরে চলে যেতে। আলমারি থেকে শাড়ি নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম।

ডাইনিং টেবিলে সকলে খেতে বসেছে।আমার মনের অবস্থা ভালো নেই বুঝতে পেরে কেউই আমায় বিশেষ ঘাটাচ্ছে না।খাওয়া শেষে মা বললেন,
মা: আফরিন আজ কি কলেজ যাবে?

কলেজের কথা কানে আসতেই মুখটা পুরো বিষাদে ছেয়ে গেলো।এখন কলেজের কথা শুনতেও বিরক্ত লাগছে।ইচ্ছা করছে না কিছু শুনতে।আমি বললাম,
আফরীন: না মা কলেজ যাবনা।ভালো লাগছে না।আমি ঘরে গেলাম শুতে।ঘুম ঘুম পাচ্ছে।

তাহরীম: হ্যাঁ ওই একটাই তো কাজ তোমার।হয় খাবে নয়তো ঘুমোবে। কলেজে যাওয়াও তো ক্যান্সেল করলে।এখন শুয়ে বসে না থেকে গিয়ে মায়ের সঙ্গে কাজ করো।
মা: আঃ তাহরীম এভাবে বলছিস কেন ওকে?
তাহরীম: মা তুমি মাঝে কথা বলনা।তোমার লাই পেয়ে মাথায় উঠেছে।
নিহা: ভাইয়া এরকম কেন করছো নতুন ভাবীর সঙ্গে?একটু সুন্দর করে কথা বল।
তাহরীম: মুখ বন্ধ রাখা নাহলে আকাশের সঙ্গে বিয়ে না দিতে রিকশাওয়ালার সঙ্গে বিয়ে দিবো।

উনার কথা শুনে নিহা চুপসে গেল তবুও আমার মাঝে কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না।আমি উনার কথা পাত্তা না দিয়ে উপরে চলে এলাম।আমি তো ইচ্ছে করেই উনার কথা অগ্রাহ্য করছি।আমি চাইছি উনি আমার উপর বিরক্ত হন আর নিজ হাতে আমায় বের করে দেন উনার জীবন থেকে।

আফরিন ওর কথা পাত্তা দিলোনা দেখে অবাক চরম পর্যায় পৌঁছে গেছে তাহরীম।একদিনের মধ্যে এত পরিবর্তন?একটা মানুষ এতটা তাড়াতাড়ি কি করে বদলাতে পারে?এই পরিবর্তন মোটেই ভালো নয়।

মা: ওকে একটু সময় দে।তারপর দেখবি ও এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।
তাহরীম: ওর ঠিক হওয়ার জন্যই তো ওকে কাজ করতে বললাম।তোমাদের সঙ্গে কাজ করলে হাসি ঠাট্টায় স্বাভাবিক হবে।
মা: আরেকটু সময় দে।ঠিকই কিছু না কিছু একটা হবে।

সারাদিন শুয়ে বসে থেকেই দিন কেটে গেলো।কোনো এক অজানা কারণে আজ ডাক্তার সাহেবও হসপিটালে গেলেন না।সারাদিন হয় রুমের এখান থেকে ওখানে পায়চারি করলেন নাহয় বারান্দার দরজা চাপিয়ে দিয়ে সিগারেট খেলেন।উনি শুধু শুধু আমার আশেপাশে ঘুরছেন বুঝতে পেরেও আমি কিছু বললাম না।ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুম দিলাম।

ঘুম যখন ভাঙলো তখন সন্ধ্যা আটটা বাজে। আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছেড়ে উঠলাম।ঘুমিয়ে ছিলাম বলে আশেপাশে কি হয়েছে কিছুই জানতাম না।ডাক্তার সাহেব আছেন কিনা দেখার জন্য বারান্দায় যেতেই নাকে এসে লাগল তীব্র নিকোটিনের গন্ধ।সাথে সাথে মাথা গরম হয়ে গেলো।এই মানুষটা এত সিগারেট খান কেন? সিগারেট কি ভালো জিনিস?ডক্টর হয়েও সিগারেট খান। বুঝাই যাচ্ছে অনেকগুলো সিগারেট খেয়েছেন।

বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে এলো। বারান্দায় উনি নেই দেখে আবারও ঘরে ফিরে এলাম। বাথরূমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।চুলগুলো আছড়ে বেনি করলাম। শাড়ি টা পাল্টে সেলওয়ার কামিজ পড়লাম।তারপর ধীর পায়ে নিচে চলে গেলাম।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে