তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে পর্ব – ৪ ও ৫

0
1555

#তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে💖
#মিফতা তিমু
#পর্ব-৪+৫

ছাদে দাঁড়িয়ে একমনে দখিনা হাওয়া উপভোগ করছে তাহরীম। পরিবেশটা বেশ মনোরম।ইচ্ছা করছে এখানেই ঘুমিয়ে পড়তে কিন্তু এখানে থাকতে হলে সারারাত মশার কামড় খেতে হবে যেটা তার পক্ষে সম্ভব নয়। হঠাৎ কারোর পায়ের সূক্ষ্ম আওয়াজ কানে এলো তাহরীমের।

ছাদে এসেছিলাম প্রকৃতি উপভোগ করতে।কালকের পর আর হয়তো কোথাও যাওয়া হবে না।কাল তো বিয়ে, এরপর আমি অন্যকারো হয়ে যাবো।তখন আমার উপর শুধু তার অধিকার থাকবে,আমার উপর আমার নিজের অধিকারও থাকবে না।কিন্তু ছাদে এসে ডাক্তার সাহেব কে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম।উনাকে পিছন থেকেই চিনে ফেললাম।তাই আর এগোলাম না।সোজা ফিরতি পথে হাঁটা দিলাম।

‘ কোথায় যাচ্ছ আফরিন? ‘ – বললেন ডাক্তার সাহেব।

আমি আর ফিরে না গিয়ে উনার পাশে এসে দাঁড়ালাম।আমি ধীর কণ্ঠে বললাম,
আফরিন: কিছু না।এমনই আসলে আপনি দাড়িয়ে আছেন তো তাই ভাবলাম আপনাকে বিরক্ত না করি।
তাহরীম: তোমারই বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছি আর তুমি বলছো তুমি আমায় বিরক্ত করছো?
আফরিন: বাড়িটা যদি আমার হতো তাহলে বিয়েটাও আজ আমার ইচ্ছাতেই হতো।
তাহরীম: বিয়েটা যখন নিজের ইচ্ছেতে করছো না তখন ভেঙে দিলেই পারো।কেউ তোমায় জোর করবেনা।

সবসময় পরের কাধে বোঝা হয়ে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগে না ডাক্তার সাহেব।বিয়েটা করে যদি তাদের মুক্তি দিতে পারি তাহলে ক্ষতি কি? – বলে হাসিমুখে তাকালাম স্যারের দিকে।

স্যার আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললেন,
তাহরীম: অন্যের উপর থেকে বোঝা কমাতে চাইলে আত্মনির্ভরশীল হতে শিখো।বিয়ে সবকিছুর সমাধান নয়। একজন ভালো ডাক্তার হলে তখন তোমার আর উনাদের উপর থেকে বোঝা কমাতে হবে না। উনারা সেধে তোমার বোঝা নিতে চাইবে।
আফরিন: স্যার মুখে বলা যতটা সহজ করা তত সহজ নয়।আপনার বাবার সামর্থ আছে তাই আপনাকে পড়ালেখা করিয়ে ডাক্তার বানিয়েছে।কিন্তু আমার বাবার নেই।
তাহরীম: তুমি না ফরেন থেকে মেডিক্যাল থার্ড ইয়ার অব্দি কমপ্লিট করে এসেছ? তাহলে টাকা পয়সার অভাব তো তোমার দেখছিনা?
আফরিন: ওসব আপনি বুঝবেন না।এখন দোয়া করুন যেন এই পৃথিবীর মায়া তাড়াতাড়ি ত্যাগ করতে পারি?

আমার কথায় হঠাৎ রেগে গেলেন ডাক্তার সাহেব।আমার দিকে তাকিয়ে অনুভূতিহীন চোখে নির্লিপ্ত গলায় বললেন,
তাহরীম: এই ঠান্ডার মধ্যে দাড়িয়ে তোমার এসব বেহুদা কথা শোনার চেয়ে না শোনা ভালো।বলেছিলাম এখনো সময় আছে বিয়েটা আটকে দাও কিন্তু তুমি শুনবে না।নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছো।তুমি না শুনলে আমার কিছু করার নেই বলে ছাদের দরজার দিকে হাটা দেন।

‘ ও স্যার রাগ করলেন? ‘ বলে আমি উনার পিছন পিছন হাঁটা দিলাম।

‘ এই ভর সন্ধ্যায় চুল খুলে জানালার কাছে প্রকৃতির দেবী সেজে দাড়িয়ে আছো কেন? সন্ধ্যায় যে আশেপাশে জীন ঘুরে সেটা কি তোমার অজানা ‘ আমার খোলা চুলে আলগা হাতে বেনি করতে করতে বললেন ডাক্তার সাহেব।

উনার কথায় অতীত ছেরে বেরিয়ে এলাম।উনার কথা শুনে নিষ্প্রভ ভাবে বললাম,
আফরিন: এসব কুসংস্কার আপনি মানেন ডাক্তার সাহেব?
তাহরীম: না মানার কি আছে? আমাদের পূর্ব পুরুষেরা যখন বলতেন তখন নিশ্চই উনারা প্রাক্টিক্যালি সেটা এক্সপেরিয়েন্স করেছেন বলেই বলেছেন।
আফরিন:আপনি আমার চুল বেঁধে দিচ্ছেন? কেন?
তাহরীম: নিজের জিনিসকে কি করে সামলে রাখতে হয় সেটা তাহরীম মেহমাদের জানা আছে।নিজের জিনিসের প্রতি আমার ঝোঁকটা বরাবরই বেশী… কথাটা আমার কানের কাছে এসে খুবই ধীর কণ্ঠে বললেন।

উনার এই ধীর কণ্ঠে বলা কথাগুলো আমার সর্বাঙ্গে যেন শীতল অনুভূতির জোয়ার বইয়ে দিল।আমার হাতপায়ে হিম ধরে এসেছে। নিষ্প্রাণ ভাবে দাড়িয়ে আছি।নিজেকে সামলাতে আমার মিনিট দুয়েক লাগলো।

চুলগুলো বেনি করে চিকন ব্যান্ড দিয়ে বেধে দিলেন ডাক্তার সাহেব।আমি আমার বেনির গোছাটা পিঠে দিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আফরিন: কিছু বলবেন?
তাহরীম: হুম নিচে চলো।সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।আজ ওয়েদার টা অনেক ভালো বলে মা আর ভাবী ভুনা খিচুড়ি আর গরুর মাংস করবে।

ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে আমার মাথায় যেন বাজ পড়লো।আমি কপালে হাত দিয়ে বললাম,
আফরিন: আরে আগে বলবেন না।ভাবী মাকে হেল্প করছে আর আমি এখানে হাওয়া খাচ্ছি।আল্লাহ জানে মা আমার উপর রেগে গেলেন কিনা।আমি বরং যাই।আপনি আসুন বলে আমি নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।

‘ আমার মা এতটাও খারাপ নয় যতটা তুমি ভাবছো আসান। কারোর প্রিয় হয়ে উঠতে গেলে নিজেকে তার মনের মত তৈরি করতে হবে। ‘

কথাটা কানে ভেসে আসতেই আমার চোখ দুটো বিস্ময়ে বড় হয়ে গেলো।আমি বড় বড় চোখে উনার দিকে তাকালাম। কথাটা আমি কি বুঝে বললাম আর উনি কি বুঝলেন।আমি মোটেই ওভাবে বলতে চাইনি।

আমার দৃষ্টি কে পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে গেলেন ডাক্তার সাহেব।অগত্যা মন খারাপ করে আমিও চলে এলাম।রান্নাঘরে এসে দেখলাম মা খিচুড়ির ডাল ভাজছে আর ভাবী সালাদ কাটছে। সিনকের উপর মাংস ভেজানো আছে।
আমি মায়ের কাছে গিয়ে বললাম,
আফরিন: মা মাংসটা আমি রান্না করি?

ডালে চাল দিয়ে পানি মাপছিলেন না।আমার কথা শুনে আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালেন মা।কিছুক্ষণ আমায় পর্যবেক্ষণ করে বললেন,
মা: রান্না করতে পারলে করো রান্না।
ব্যাস মায়ের কথায় আমি সাত আসমানে উড়তে উড়তে মাংস রান্নার প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।

রাত ৮:০০ টা,

সব রান্না শেষ হয়ে গেছে আর খাবারগুলো টেবিলে পরিবেশনও করা হয়েছে।এখন শুধু মাংসটা নেওয়া বাকি।মাংস নিয়ে রাখলেই সবাই একসাথে খেতে বসবো।মাংস যেহেতু আমি রান্না করেছি তাই মা বলেছেন আমাকেই নিতে।মাংস বাটিতে বাড়তে ব্যস্ত তখন আমি।

হঠাৎ পিছন থেকে পানি পড়ার আওয়াজ পেলাম।পিছন ঘুরে দেখলাম ডাক্তার সাহেব ফিল্টার থেকে পানি নিচ্ছেন।আমি আবারও তরকারি বাড়ায় মন দিয়ে বললাম,
আফরিন: কিছু লাগবে?
তাহরীম: না পানি নিতে এসেছিলাম।আজ রাতে অনেকগুলো খাতা দেখতে হবে তারপর কাল ওগুলো দিতে হবে।
আফরিন: খাতা?
তাহরীম: ক্লাস টেস্টের খাতা।আজ ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস টেস্ট নিয়েছিলাম।
আফরিন: ও….

আমি তরকারি বেড়ে সেটা টেবিলে রাখার জন্য বেরিয়ে আসলাম রান্নাঘর থেকে।আমার পিছন পিছন বোতল নিয়ে ডাক্তার সাহেবও এলেন।খাওয়ার টেবিলে মাংস রাখতেই সকলে হামলে পড়লো।প্রথমে তাহসান ভাই এক পিস মাংস উঠিয়ে মুখে দিলেন তারপর বাহবাহ করতে লাগলেন।এরপর একে একে সবাই খেলেন কিন্তু ডাক্তার সাহেব আর শাশুড়ি মা কিছুই বললেন না।

ডাক্তার সাহেবের কাছ থেকে আমাকে নিয়ে কিছু ভালো মন্দ শোনা তো আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো।খেতে খেতে বাবা বললেন,
বাবা: তাহলে আফরিন কাল তোমার বিয়ের পর কলেজে প্রথম দিন তাইতো?
আফরিন: জি বাবা।
বাবা: তাহলে বেস্ট অফ লাক মাই ডটার।
বিনিময়ে আমি শুধু হাসলাম।

খাওয়া দাওয়া শেষে আমি,ভাবী আর মা মিলে সবটা গুছিয়ে যে যার যার ঘরে চলে গেলাম।ঘরে এসে দেখলাম ঘরের কোথাও ডাক্তার সাহেব নেই।চোখ গেলো বারান্দার দিকে।বারান্দার দরজা খোলা আর পর্দা উড়ছে।হয়তো উনি বারান্দায় কারোর সঙ্গে কথা বলছেন।আমি আর সেদিকে গেলাম না।সোজা পড়া রিভিশন করতে বসলাম।

পড়তে পড়তে পড়ায় এতটাই মগ্ন হয়ে পড়লাম যে ডাক্তার সাহেব কখন আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন সেটা চোখেই পড়লো না।উনি এসে আমার মুখোমুখি আড়াআড়ি ভাবে একটা চেয়ারে বসলেন তারপর আমার কাছ থেকে বইটা নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বললেন,
তাহরীম: দেখি নিজের ক্রাশ বয়ের কথা ভাবতে ভাবতে সারাদিনে কি পড়েছ?

উনার কথার জবাবে কিছুই বললাম না কারণ কিছু বলেও লাভ হবে না। কথায় কথা বাড়ে।তারপর উনি আমায় যা যা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন তার সবগুলো ঠিকঠাক ভাবে উত্তর দিলাম। এরপর নতুন পড়া দাগাতে দাগাতে বললেন,
তাহরীম: ওয়েল পড়াশুনা ভালই চলছে তবে আরও বেশি করে পড়তে হবে।এসব পিচ্ছি পিচ্ছি পড়ায় হবে না।আর তোমার ক্রাশ বয়ের কথা একটু কমই ভাবো তাহলে সেটা কাজে দিবে।

উনার কথা শুনে আমার মুখটা গোমড়া হয়ে গেলো।আমি সন্দিহান চোখে উনার দিকে তাকিয়ে ভাবলাম,
আফরিন: এই লোকটা কে কখনোই বুঝতে পারিনা।এই জেলাস তো এই স্বাভাবিক। বেটা যে কি চায় নিজেই জানেনা।

আফরিন: আপনাকে এত ভাবতে হবে না আমাকে নিয়ে।আমারটা আমি বুঝবো।এমনিতেই বিয়ে করে উদ্ধার করেছেন।এখন পড়া পড়া করে মাথা খাবেন না।আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। আমি গেলাম ঘুমোতে বলেই আমি উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে গায়ে কম্বল জড়িয়ে নিলাম।

হঠাৎ গায়ের উপর ঠান্ডা পানি পড়তেই লাফিয়ে উঠলাম।ডাক্তার সাহেব আমার গায়ের উপর থেকে কম্বল সরিয়ে এই ঠান্ডার মধ্যে গায়ে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়েছেন।পুরো কাক ভেজা হয়ে গেছি।ঠান্ডায় হাত পা কাপছে।

মাথায় কানটুপি,গায়ে সোয়েটার আর শাল এবং হাতে পায়ে মোজা পরে গোমড়া মুখে বসে আছি ডাক্তার সাহেবের মুখোমুখি হয়ে।উনার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললাম,
আফরিন: এত ঠান্ডার মধ্যে গায়ে বরফ পানি ঢাললেন কেন?

এবার উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
তাহরীম: ছিঃ আফরিন ছিঃ।তুমি আমাকে, তোমার স্বামী কে ফেলে রেখে ঘুমোতে যাচ্ছ?তোমার স্বামী সারারাত বসে বসে মশার কামড় খেয়ে কাজ করবে আর তুমি পরে পরে ঘুমোবে।এতটা অমানবিক হওয়া কি তোমায় মানায়? বিয়ে করেছ কোথায় না আমার যত্ন আত্মি করবে তানা তুমি ঘুমানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছ।তোমার থেকে এমনটা আমি আশা করিনি।

আমি শুধু লোকটার কথায় অবাক হচ্ছি।একটা মানুষের মুড মিনিটের মধ্যে কি করে চেঞ্জ হতে পারে।এই একটু আগে একরকম আর এখন আরেক রকম।আমি রীতিমত অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
আফরিন: মানে?
তাহরীম: মানে হলো আমি না ঘুমানো অব্দি তুমি ঘুমোতে পারবে না।আমি মোটেই এটা সহ্য করবো না যে আমি এখানে পুরো রাত কাজ করবো ঠান্ডায় আর তুমি ওখানে কম্বলের নিচে আরামে ঘুমোবে।তাই তোমায় এখানেই বসে থাকতে হবে।এন্ড নো মোর ওয়ার্ডস….

আমি আর কথা বাড়ালাম না।এমনিতেই লোকটার মাথার ঠিক নেই। হুটহাট মুড চেঞ্জ হয় উনার।বলা যায়না তর্ক করলে আবার এই শীতে বারান্দা থেকেই না ফেলে দেন।উনার মার্ক করে দেওয়া পড়াগুলো পড়তে শুরু করলাম।

পড়তে পড়তে কখন যে রাত একটা বেজে গেলো বুঝতেই পারলাম না।চোখ যেন ঘড়ির কাটায় পড়লো তখন যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।রাত একটা বাজে আর আমরা এখনো ঘুমোলাম না।আমি আড়চোখে ডাক্তার সাহেবের দিকে তাকালাম।ডাক্তার সাহেব একগাদা বই খাতার উপর মাথা রেখে ঘুমোচ্ছেন।উনার মায়াবী মুখশ্রীর ললাটে এসে জড়ো হয়েছে একরাশ কেশরাশি।চোখে এখনো সরু ফ্রেমের চশমা টা আছে।দেখে মনে হচ্ছে কত রাত এভাবে শান্তিতে ঘুমোন নী।খুব গভীর সেই ঘুম।ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করছে না তাই সন্তপর্নে উনার চোখ থেকে চশমা টা খুলে টেবিলের তাকে রাখলাম।হাত দিয়ে এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলো একটু ঠিক করে আমিও উনার মুখোমুখি টেবিলে মাথা রাখলাম।

উনাকে দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম তার কোনো হদিস নেই।দক্ষিণের জানালা ভেদ করে সূর্য রশ্মি যখন মুখে এসে পড়ল তখন ঘুম ভাঙলো।ঘুম ভেংগে যা দেখলাম সূর্যের সোনালী রশ্মি পর্দার ফাঁক ঠিকরে ডাক্তার সাহেবের মুখে এসে পড়ছে।মুখে সূর্যের আলো পড়াতে ডাক্তার সাহেব কে বড্ড স্নিগ্ধ আর পবিত্র লাগছে।শুধু ইচ্ছা করছে চিরকাল দেখেই যাই।

আমি প্রফুল্ল চিত্তে ডাক্তার সাহেবের মাথার এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতে যাবো তখনই আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠলেন উনি।আমি তড়িৎ গতিতে হাত সরিয়ে নিলাম।উনি আমাকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখে বললেন,
তাহরীম: তুমি এখানে?

উনাকে ভেংচি কেটে শাড়ি ঠিক করতে করতে উঠে দাড়িয়ে বললাম,
আফরিন: কাল রাতে তো আমায় আপনার কাছে বসিয়ে রেখে নিজেই ঘুমিয়ে পড়লেন।সকালে উঠে যদি আমায় বিছানায় কম্বলের নিচে শুয়ে থাকতে দেখে রেগে যান তাই আর বিছানায় ঘুমোই নী।এখন আমায় ঝটপট রেডি হতে হবে।আজ থেকে কলেজে যাবো।অনেক দিন গ্যাপ পড়েছে।

‘ কলেজে যাও ভালো কথা কিন্তু ওই ফারহানের আশপাশ দিয়েও যাবে না বলে রাখলাম ‘ বললেন ডাক্তার সাহেব।

আমি আলমারি থেকে কাপড় বের করে বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে বললাম ‘ আমি তো যাবো।পারলে আটকে দেখান। ‘

আমার কথা শুনে ডাক্তার সাহেব আমার দিকে তেড়ে আসছিলেন তবে আমি ঝট করে বাথরুমের দরজা লাগিয়ে দিলাম।

ঘরের দরজা চাপিয়ে শাড়ির কুচি করছি।ডাক্তার সাহেব বাইরে গেছেন। ভাগ্যিস বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় ঘরে ছিলেন না নাহলে তখন ও ভাবে ত্যাড়া উত্তর দেওয়ার জন্য নির্ঘাত মাথায় তুলে আছার মারতেন।অনেক কষ্টে শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করলাম।এই শাড়ী পড়াটা চিরকালই ভীষণ প্যারার ব্যাপার আমার জন্য।কাল বাথরুমে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মোবাইল থেকে দেখে দেখে শাড়ী পড়েছি তবে আজ আর মোবাইলের দরকার পড়লো না। যাই হোক অনেকক্ষন কুস্তাকুস্তির পর শাড়ি পড়লাম।

শাড়ি পরে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিলাম।নিজেকে দেখে নিজেই বলতে মন চাচ্ছে ‘ হায় মে মার্যাওয়া ‘। আমি কত সুন্দর দেখতে।এখন শুধু একটু সোনার কানেরদুল পড়লে আরও সুন্দর লাগতো,একবারে বউ বউ লাগতো ।কিন্তু সোনার গয়না পরাও প্যারা। যাই হোক এখন নিচে যাই নাহলে পরে নিহা এসে ধরে নিয়ে যাবে।এমনিতেই একবার ডেকে গেছে।

মাথায় ঘোমটা টেনে বের হতে যাবো ওমনি কারোর ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।ভ্রু কুচকে আশেপাশে চোখ বুলালাম। স্টাডি টেবিলের উপর ফোন বাজছে।আমি কাছে এগিয়ে গিয়ে বুঝলাম ওটা ডাক্তার সাহেবের ফোন।ধরবো নাকি না।না ধরলে যদি রাগ করেন আবার ধরলেও যদি রাগ করেন? যাহ ধরেই ফেলি।ফোন ধরার জন্য যেই না হাত বাড়াবো ওমনি ফোন কেটে গেলো। যাহ কেটে গেলো।দেখি তো কে ফোন করেছ।

ফোনটা কে করেছে দেখার জন্য ফোনের স্ক্রিন অন করতেই মনে হলো পুরো ভূমণ্ডল কেপে উঠছে। হাত পা তিরতির করে কাপছে। মনে হচ্ছে মাথায় কেউ এক হাজার মেট্রিক টনের বস্তা চাপিয়ে দিয়েছে। বুকে কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে।ডাক্তার সাহেবের ফোনে লক ছিলনা।ফোনের লক খুলে গ্যালারি তে গেলাম। গ্যালারি খুলতেই আরও অনেক ছবি বেরিয়ে এলো।ছবিগুলোতে কোনোটাতে ডাক্তার সাহেব একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে,আবার কোনোটাতে মেয়েটার হাত ধরে আছে আর মেয়েটা পিছন দিকে ফিরে আছে। কোনোটাতেই মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে না।

ডাক্তার সাহেবের দামী আইফোন টা আমার হাত গলে পরে গেলো।নিচে পড়তেই ফোনটা দুভাগ হয়ে ভেঙে গেলো। ধপ করে বসে পড়লাম বিছানায়।মুখে দুই হাত চেপে নিজের কান্না সংবরণ করছি।তবে এই কারণেই আমার প্রতি উনার এই ব্যবহার।উনি আমার স্বামী তবে সেটা নামে।হয়তো কোনোদিনই উনার স্ত্রী হয়ে উঠতে পারবো না।আমি তবে দুজন ভালোবাসার মানুষের মাঝে এসেছি।

মানুষ টা কোনোদিনই আমার ছিলনা অথচ বিয়ের পরমুহুর্তে নিজেকে উনার ভাবতে শুরু করেছি।বিয়ে জিনিসটা জগতের সবচেয়ে অদ্ভুত সম্পর্ক।বিয়ের আগেও আমাদের মধ্যে শুধু শিক্ষক ছাত্রীর সম্পর্ক ছিল আর সেই সম্পর্কে কোনো অনুভূতি ছিলনা।অথচ বিয়ে হতেই আমাদের সম্পর্ক বদলে গেলো।উনার ছাত্রী থেকে পাত্রী হয়ে গেলাম।যেই মন ছিল উনার প্রতি অনুভূতিহীন সেই মনেই আজ একরাশ অনুভূতি। ভালবাসার কাঙ্গালিনী আমি।

আসলেই উনার সেই কথাটা সত্যি ‘ বিশ্বাস…বিশ্বাস জিনিসটা এত সহজে কাউকে দিতে নেই।কে জানে কেউ আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারে কিনা। ‘

আপনি পারলেন না আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে ডাক্তার সাহেব। পারলেন না।একবার তো বলতে পারতেন আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসতেন তাহলে আপনাদের মাঝে আমি আসতাম না।চলে যেতাম দূরে কোথাও।তবে এখনও সময় আছে।সবটা বিগড়ে যায়নি।সময় থাকতে সবটা শুধরে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।আর আমিও তাই করবো। যে আপন হবার নয় তাকে আটকে রাখার নয়।

ফোন ঘরে ফেলে রেখে এসেছে বুঝতে পেরে তাহরীম ঘরে আসে কিন্তু ঘরে এসে যে এমন একটা কান্ড দেখবে সেটা সে ভাবতে পারেনি।এত সাঁধের ফোনটাকে পড়ে থাকতে দেখেই তাহরীমের মাথা গরম হয়ে যায়। ও আফরিন এর কাছে গিয়ে আফরিন কাধ ধরে ঝাকিয়ে বলে,
তাহরীম: তোমার এত সাহস কি করে হলো আমার ফোন ধরার? আর ধরেছ তো ধরেছ ফোনটা ভেঙ্গেও ফেলেছে।এত সাহস কে দিয়েছে তোমায়?

ডাক্তার সাহেবের কথার জবাবে কিছুই বললাম না। কিই বা বলবো।বলার মত কিছু তো উনি রাখেন নী।উনার ফোন ভেঙে ফেলেছি বলে এত রেগে যাচ্ছেন নাকি প্রেয়সীর ছবি পাবেন না বলে রেগে যাচ্ছেন।

তাহরীম: তোমার কোনো সেন্স আছে তুমি কি করেছ? তুমি বুঝতে পারছ কি করেছ তুমি আফরিন? ওই ফোনে আমার খুব কাছের মানুষের স্মৃতি ছিলো আর তুমি সেটা কেই ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিলে।আমার এখন তোমাকে দেখতেও ইচ্ছা করছে না। খবরদার আমার সাথে একটা কথাও বলবে না বলেই ডাক্তার সাহেব ভাঙ্গা ফোন হাতে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যান।

নিজেকে ধাতস্থ করে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।মুখ একেবারে শুকিয়ে গেছে।মুখে লোশন দেওয়া দরকার।তড়িঘড়ি করে হাতে অনেকগুলো লোশন নিয়ে মুখে, হাতে পায়ে মাখতে শুরু করলাম। লোশন দিতে দিতেই হু হু করে কেঁদে দিলাম।

ঠক ঠক ঠক….দরজায় নক করার শব্দে আমি নিজের চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললাম,
আফরিন: কে?
বাহির থেকে মহিলা স্বরে কেউ বলে উঠলো ‘ আসতে পারি? ‘

মানুষটার গলা শুনে অবাক হলাম।মানুষ টা আর কেউ নয় আমার শাশুড়ি মা।কিন্তু উনি অনুমতি চাচ্ছেন কেন ঘরে ঢোকার জন্য।এটাতো উনারই ছেলের ঘর।

আমার ভাবনার ইতি ঘটিয়ে মা আবারও বললেন আসবেন নাকি।আমি নিষ্প্রভ হয়ে বললাম,
আফরিন: আরে মা আপনি দাড়িয়ে আছেন যেন? আসুন আসুন ভিতরে আসুন। এটা তো আপনারই ঘর।
মা ঘরে ঢুকে দরজা চাপিয়ে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
মা: এই ঘর আমার হলে তোমার থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ত না আফরিন।এটা এখন তোমার আর তাহরীমের ঘর।

মায়ের কথায় আমি চরম পর্যায় অবাক হলাম।বিয়ের পর থেকে এই প্রথম উনি আমার নাম ধরে ডাকলেন।এর আগে মা সবসময় আমায় উনার বউ বলে ডাকতেন।কিন্তু মায়ের পরের কথাগুলো মাথায় আসতেই মাথা নত করে ফেললাম।উনি উনার কথায় সম্পূর্ণ বুঝিয়ে দিয়েছেন উনার ছেলে কে উনার থেকে কেড়ে নিয়েছি আমি। হঠাৎ আমার গলায় কারোর হাতের স্পর্শ পেলাম।সামনে আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মা আমায় সোনার চেইন পরিয়ে দিচ্ছেন।আমি উনাকে কিছু বলার জন্য উদ্যত হলাম কিন্তু উনি আমায় ধমক মেরে চুপ করিয়ে দিলেন,
মা: উফফ নড়ছ কেন আফরিন? পড়াতে দাও, সোজা হয়ে দাড়াও।

শাশুড়ি মায়ের কথায় আমি চুপসে গেলাম। চেইন পড়ানো শেষে মা কানে এক জোড়া ছোটো সোনার কানের দুল পরিয়ে দিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালেন তারপর বললেন,
মা: দেখো আফরিন আমার জীবনটা বরাবরই সহজ।খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল কিন্তু তোমার বাবা আমায় বিয়ের পর পড়াশুনা করিয়েছেন।তারপর বিয়ের এক বছরের মাথায় পড়াশুনা করার সময়ই তাহসান হওয়ার খবর পেলাম। তাহসান হওয়ার পাচঁ বছর পর আবার তাহরীম হলো আর তারও পাঁচ বছর পর নিহা।এরপর আর পাঁচজন মেয়ের মতোই জীবন কেটেছে।সারাদিন ছেলে মেয়েদের ফায় ফরমাশ কেটে রাতে একটু শান্তির ঘুম দিতাম।এভাবেই দেখতে দেখতে সময় কাটলো।তারপর তাহসানের পছন্দ দেখে তাহসানের বিয়ে দিলাম রিমার সঙ্গে।

এরপর যখন তাহরীমের বিয়ের কথা উঠলো তখন ও বেকে বসলো।কত কথা,কত ব্ল্যাকমেইল করলাম কিন্তু ও শুনলো না। ওর এক কথা সে বিয়ে করবে না। কতগুলো দিন নির্বিঘ্নে রাতের আঁধারে নিজেকে সবার কাছ থেকে আলাদা রেখেছে হিসেব নেই।আমরা সবাই চেষ্টা করেও পারিনি ওকে বিয়ে দিতে। হঠাৎ করে প্রচন্ড সিনেমাটিক ভাবেই তোমার বিয়ে হয়ে গেলো ওর সঙ্গে আর সেই সাথে ও মেনেও নিল।আমার সহজ সরল জীবনে এতটা নাটকীয়তা কখনোই ছিলনা।বুঝতেই পারছ আমি একজন মা আর প্রত্যেক মায়েরই ইচ্ছা থাকে ছেলেকে দেখে শুনে নিজের পছন্দমত কোনো মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কিন্তু ও যখন তোমায় বিয়ে করে নিয়ে এলো তখন স্বাভাবিক ভাবেই তোমাকে মেনে নিতে পারলাম না।কিন্তু আমি মানতে না পারলেই তো আর এটা মিথ্যা হয়ে যায় না যে তুমি ওর বিবাহিত স্ত্রী আর আমার ছেলের বউ।তাই না চাইতেও আমায় মেনে নিতে হবে।আমার সেদিনকার ব্যবহারের জন্য আমায় ক্ষমা করে দাও।হুট করে তাহরীমের স্ত্রী হিসেবে তোমায় মেনে নিতে পারিনি।

শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে বুঝলাম উনি উনাকে বাহিরে থেকে যতটা শক্ত দেখান ততটা শক্ত উনি নন।উনি হলেন নারকেলের মত।বাহিরে দিয়ে যতটা শক্ত ভিতর দিয়ে ঠিক ততটাই নরম।আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
আফরিন: এতদিন ছেলের বউ মনে করেছেন,এখন নাহয় মেয়ে মনে করবেন। মেয়েদের দুটো বাড়ি।একটা শশুর বাড়ি আরেকটা বাপের বাড়ি।আমার বাপের বাড়ি নেই তাই আমার বাপের বাড়িও এটা আর শশুর বাড়িও এটা।আপনি আর বাবা আমার মা বাবা।

আমার কথায় মা কিছু বললেন না শুধু অমায়িক হাসলেন।তারপর বললেন,
মা: এই সোনার গয়নাগুলো পরে থেকো।মা হয়ে এখনই কিছু দিলাম না।এক বিশেষ দিনে বিশেষ কিছু দিবো।ততদিন অব্দি এগুলোই পরো।আমার দুধে আলতা রঙের মেয়ের গায়ে সামান্য সোনাই হীরার সমান।

বিনিময়ে আমিও হাসলাম।মা আমায় অনেক কিছু না বলেও অনেক কিছু বলে দিয়েছেন।এই মানুষগুলো কে ছেরে যেতে ইচ্ছা করেনা।এই কয় দিনেই কত আপন হয়ে গেছে কিন্তু যার মাধ্যমে এদের পেয়েছি সেই যদি আমার নাহয় তখন ইনারাও একদিন না একদিন নাগালের বাইরে চলে যাবেন।মায়া বাড়িয়ে যে থাকা যায়না।অপেক্ষা শুধু সঠিক সময়ের।

মা: আফরিন তুমি নীচে এসো।সকলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।আজ তো কলেজও যাবে।খেয়ে যাও।
আমি বিনিময়ে শুধু মাথা নাড়লাম।মা চলে গেলেন। শাড়ি পাল্টে কুর্তি জিন্স আর স্কার্ফ পরে নিলাম।হালকা ঢিলা ব্ল্যাক লং কুর্তির সঙ্গে ব্লু জিন্স আর গলায় সুন্দর করে স্কার্ফ পেঁচানো।

সকলে তখন থেকে বসে আছে আফরিনের জন্য। তাহরীম একেত আফরিন এর সকালের কাজের জন্য রেগে আছে তার উপর দিয়ে এখনো খেতে আসছে না বলে ওর রাগ উপরন্তর বেড়ে চলেছে।মন চাচ্ছে মেয়েটা কে মাথায় তুলে আছার মারতে।বড্ড বেয়াদব হয়ে গেছে।

রহিমা বেগম ( তাহরীমের মা ) এর মুখে চিন্তার আভাস।সেই কখন মেয়েটাকে বলে এসেছে নিচে আসতে কিন্তু এখনও এলোনা।আবার শরীর খারাপ করলো নাতো।দেখা দরকার ভেবে যেই না উঠবেন ওমনি আফরিন নেমে এলো সিড়ি।

আমি সিড়ি দিয়ে নেমে ডাইনিং টেবিলে মায়ের কাছে গিয়ে দাড়ালাম।মা আমাকে দেখে বললেন,
মা: সেই কখন বলে এলাম আফরিন।তুমি এখন এলে? যাই হোক খেয়ে নাও অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আফরিন: মা আজ খাওয়ার সময় নেই।আমার কলেজের লাইব্রেরী থেকে নোটস নিতে হবে।এমনিতেই বিয়ের জন্য অনেক গ্যাপ গেছে।
বাবা: কিন্তু আফরিন অন্তত খেয়ে যাও। অনেকক্ষনের ব্যাপার তো।এতক্ষণ না খেয়ে থাকলে শরীর খারাপ করবে।

‘ থাক বাবা জোর করোনা। যে আটকাবার নয় তাকে আটকে লাভ নেই।ওর শরীর ওকে বুঝতে দাও ‘ বললেন ডাক্তার সাহেব।

উনার কথায় মনটা আরও খারাপ হয়ে এলো কিন্তু সেটা মুখে প্রকাশ করলাম না।শুধু মা বাবা কে বললাম,
আফরিন:আপনারা চিন্তা করবেন না।আমি কলেজের ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিব।আজ আমার আসতে দেরি হবে মা।আজ থেকে ডক্টর ফারহানের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে জয়েন্ট করবো।আমার ক্যারিয়ারের প্লাস পয়েন্ট।
মা: ইনশাল্লাহ্… তাহলে তাড়াতাড়ি যাও আর কিছু খেয়ে নিও। সন্ধায় তুমি এলে তোমাকে ভাত খাইয়ে দিবো।
আমি আচ্ছা বলে একবার সবার দিকে চোখ বুলালাম।সকলে মিটিমিটি হাসছে আর ডাক্তার সাহেব আমার আর মায়ের দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছেন।

আমি কথা না বাড়িয়ে সোজা পায়ে বেরিয়ে এলাম। জানা নেই কোথায় যাবো। গন্তব্যহীন পথিক আমি।সবটাই আমার ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।হাত দেখিয়ে একটা রিক্সা দাড় করালাম।বললাম,
আফরিন: খেয়া ঘাটে যাবেন?
রিক্সাওয়ালা: যাবো।
আফরিন: কত নিবেন?
রিক্সাওয়ালা: এক দাম ৫০ টাকা।

কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়লাম।রিক্সা চার পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে খেয়া ঘাটের দিকে।আসল দাম চল্লিশ টাকা আর আমি যাচ্ছি ৫০ টাকা দিয়ে।আজ তর্ক করার শক্তিও নেই। সকাল আটটায় সূর্যের তেমন কড়া প্রভাব পড়েনি।আরেকটু সময় বাড়লে হয়তো পড়বে।

কলেজে এসেছে তাহরীম।মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে আছে। আফরিনের সঙ্গে সবটা মিটমাট করা দরকার নাহলে ওর রাগ কমবে না তাই কলেজের লাইব্রেরির দিকে হাঁটা দিলো।কিন্তু একি আফরিন কোথায়? লাইব্রেরী তে এসে আফরিনের বন্ধু আর্যাল, আফরা, ফারাহ, ইরহান, ফারহাজ সবাই কে জিজ্ঞেস করলো কিন্তু কেউই বলতে পারলো না।এটা ঠিক যে এখানে ওদের আফরিনের সাথে দেখা করার কথা ছিল কিন্তু আফরিন তো আসেনি।সকলেই ভিতগ্রস্ত কোথায় গেলো মেয়েটা?

পনে দুই ঘন্টা হয়ে গেছে খেয়া ঘাটে এসেছি।আর পনেরো মিনিট পরেই ক্লাস শুরু।প্রথম ক্লাসই ডাক্তার সাহেবের। এখান থেকে বিশ মিনিট পায়ে হেঁটে গেলেই কলেজ।অনেক দেরি হয়ে গেছে।তাড়াতাড়ি যেতে হবে।যেই ভাবা সেই কাজ।উঠে কাধে ব্যাগ নিয়ে হাঁটা দিলাম কলেজের উদ্দেশ্যে।

ক্লাসে পৌঁছতে পৌঁছতে ১০:০৫ বাজলো। মে আই কাম ইন স্যার বলে ক্লাসে উকি দিলাম। ‘ কোথায় ছিলেন এতক্ষণ মিসেস আফরিন? ‘ বললেন ডাক্তার সাহেব ।

উনার কথা কর্ণকুহর হতেই শরীর কেপে উঠলো।উনার গলা শুনেই বুঝা যাচ্ছে উনি তীব্র পরিমাণ রেগে আছেন।কিন্তু আমারও যে কিছু করার নেই।যতটা দূরে থাকবো উনার থেকে ততটাই সহজ হবে উনাকে ছেরে যাওয়া।

আফরিন: লাইব্রেরী তে গিয়েছিলাম।
আমার কথা শুনে বোধ হয় ডাক্তার সাহেব রেগে গেলেন।আমার দিকে হুংকার ছেরে বলেন,
তাহরীম: মসকরা করছো আমার সঙ্গে? তোমার এত বড় সাহস তুমি মিথ্যা কথা বলছো? আমি একটু আগে লাইব্রেরী গিয়েছিলাম কিন্তু তোমাকে তো দেখিনি। কোথায় গিয়েছিলে?

উনার চিৎকারে আমি কেপে উঠলাম।বুকটা ধুকপুক করছে।নিজেকে সামলে নিয়ে কাপাকাপা ঠোঁটে বললাম,
আফরিন: একটা পার্সোনাল কাজ ছিল তাই সেই কাজ মেটাতেই গিয়েছিলাম।
তাহরীম: কি এমন কাজ যার জন্য তোমার এত দেরি হয়েছে? শুনি তোমার কি কাজ?
‘ আপনাকে কেন বলবো? কে হন আপনি আমার? আমার পার্সোনাল কাজের কৈফিয়ত আমি আপনাকে দিতে বাধ্য নই। আর আমাকে খুঁজতেই বা কেন গিয়েছিলেন লাইব্রেরী তে?আমার সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হচ্ছে না আমার।আপনি তো জানেন আমি বিবাহিত,আমার বিয়ে হয়ে গেছে।তাহলে আপনার আমার সঙ্গে কি সম্পর্ক থাকতে পারে? ‘ ডাক্তার সাহেবের দিকে তাকিয়ে তার চোখে চোখ রেখে বললাম কথাগুলো।

এইদিকে আমার কথা শুনে আর্যাল, ফারাহ, ইরহান, ফারহাজ, আফরা সকলেই বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।সবার বুঝা হয়ে গেছে আজ একটা দক্ষ যক্ষ বাঁধতে চলেছে।ক্লাসের সকলে হা করে গোগ্রাসে ডাক্তার সাহেব আর আমার ঝগড়া গিলছে।

এইদিকে আফরিনের উল্টাপাল্টা সব কথায় তাহরীম ভিতরে ভিতরে ফুসছে।ওর মন চাইছে মেয়েটা কে মাথায় তুলে আচার মারতে।মনে মনে বললো এর শাস্তি বাড়ি গিয়ে দিবে।

‘ স্টপ ইউর মাউথ অ্যান্ড গেট আউট। পনেরো মিনিট বাইরে কান ধরে দাড়িয়ে থাকবে তারপর আমি ডাকলে আসবে। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড দেট? ‘ বললেন ডাক্তার সাহেব।

আমি তার কথা শুনে বিনিময়ে কিছুই বললাম না এমন কি আমার স্বপক্ষে কোনো যুক্তিও দিলাম না, সোজা ক্লাসে আমার ব্যাগ রেখে বেরিয়ে গেলাম।বাইরে এসে কান ধরে দাঁড়ালাম।

হসপিটালের করিডোরে ক্লাসের পাশে কান ধরে দাড়িয়ে আছি।করিডোর দিয়ে হাজার রোগী, ডাক্তার-নার্স যাচ্ছে আর সকলেই আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।কেউ কেউ তো আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকাতে তাকাতে যাচ্ছে।আমি দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছি।চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে আর ঠোঁটে ফুটে উঠেছে এক চিলতে হাসি।তাহলে আমি পেরেছি আমার উদ্দেশ্যে সফল হতে।আর কিছুদিন তারপরই আমি উনার থেকে একেবারে দূরে চলে যাবো।

আচ্ছা আমি চলে গেলে কি উনার খারাপ লাগবে? না খারাপ লাগার কি আছে?বরং আমি চলে গেলে উনি উনার প্রেয়সীর কাছে ফিরে যেতে পারবেন।তাহলে আমার একটা পদক্ষেপ দুই হারিয়ে যাওয়া প্রেমিক প্রেমিকাকে আবার জুড়ে দিবে।

ঠিক পনেরো মিনিট পর ডাক্তার সাহেব আমায় ডেকে নিলেন।আমি কোনো কথা না বলে,কারোর দিকে না তাকিয়ে সোজা আমার সিটে গিয়ে বসলাম।একমনে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে পড়া দেখতে লাগলাম,এমন কি ডাক্তার সাহেবের দিকেও তাকাইনি। বাকিটা ক্লাস আমার এভাবেই গেলো।ডাক্তার সাহেব ক্লাস শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বললেন,
তাহরীম: মিসেস আফরিন আপনি বাড়ি ফেরার সময় আমার সঙ্গে দেখা করে যাবেন বলেই উনি সোজা বেরিয়ে গেলেন।

ক্লাস শেষ হতেই সকলে আমার চারপাশে জড়ো হলো। আর্যাল বললো,
আর্যাল: কিরে আফরিন আজ তোর কি হয়েছে?
আফরিন: আমার আবার কি হবে? কিছুই হয়নি। তোরা যা তো।আমার অনেক পড়া আছে।আজ থেকে আবার ডক্টর ফারহানের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে জয়েন করতে হবে।
ফারাহ: তুই এভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছিস কেন আমাদের?
ইরহান: আফরিন বেবী এনিথিং রং? তোর কি হয়েছে? এরকম করছিস কেন?
আফরিন: আজব তো আমি আবার কি করলাম? তোরা যদি পড়াশুনা না করিস তাহলে তোদের বাবার টাকা দিয়ে তোরা চাকরি পেয়ে যাবি কিন্তু সেটা আমার ক্ষেত্রে এপ্লিকেবল না।আমাকে নিজ যোগ্যতায় সবটা অর্জন করতে হবে।

আমার কথার বলার ধরনে কথাগুলো সবারই গায়ে লাগল।সবথেকে বেশি রাগ হলো আর্যালের। ও রেগে গিয়ে আমার দিকে তেড়ে এসে বললো,
আর্যাল: তুই কি এটা বুঝাতে চাচ্ছিস যে আমরা বাবার টাকায় সারাজীবন খাবো? আমাদের ক্ষমতা নেই? আমাদের মধ্যে তো একমাত্র তুইই সবচেয়ে বেশি ব্রিলিয়ান্ট আর আমরা সবাই ফেইল্টু স্টুডেন্ট তাইনা?

আর্যালকে রেগে যেতে দেখে আফরা ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
আফরা: আরে আর্যাল তুই রেগে যাচ্ছিস কেন? ও হয়তো সেটা বলতে চায়নি। ও অন্য কিছু বলতে চেয়েছে আর তোর বুঝতে ভুল হয়েছে।
ফারহাজ: আফরা তুই এখন তোর দুই দিনের বন্ধুর জন্য আমাদের সবাইকে অস্বীকার করবি?আমরা বুঝতে ভুল করেছি? সিরিয়াসলী?
আফরা: আরে আমি এটা কখন বললাম? আমি শুধু এটা বলছি যে ও যেটা বুঝাতে চেয়েছে সেটা হয়তো আমরা বুঝিনি কিংবা ওর বলার ভুল আছে।
‘ আমার বলায় কোনো ভুল নেই আফরা।ওরা যেটা বুঝেছে আমি সেটাই বলেছি।এখন যদি তোদের আমাকে দাম্ভিক,অহংকারী মনে হয় তাহলে তাই। ‘ বললাম আমি।

আর্যাল আমার কথা শুনে রেগে গিয়ে বললো,
আর্যাল: তুই ঠিকই বলেছিস।তুই দাম্ভিক আর অহংকারী।তোর মত মানুষ আমি লাইফে দেখিনি।টপ করিস বলে এত অহংকার। ছিঃ ছিঃ তোকে বন্ধু ভেবেছিলাম কিন্তু তুই তো কুইন এলিজাবেথ এর মত। এলিজাবেথ তো শুনেছিলাম লোকের রক্ত খায় আর তুই আমাদের পিঠে ছুরি মেরে আমাদের রক্ত খেয়েছিস বিশ্বাস ঘাতকের মত।
আফরিন: thank you আমার এত প্রশংসা করার জন্য। বাই দ্যা ওয়ে আমি বরং আমার রাস্তায় যাই তোরা তোদের রাস্তায় যা বলে নিরবে চোখের পানি মুছে নিলাম যেটা ইরহান আর আফরা কারোরই চোখ এড়ালো না।

আর্যালসহ বাকিরা ওদের জায়গায় চলে গেলো। আর্যাল এখনো চেঁচামেচি করছে আর আমাকে অহংকারী দাম্ভিক অনেক কিছু বলছে।ওদের এসব বলে খুব কষ্ট লাগছে তবে কিছু করার নেই।সব ছেরে চলে যাবো মামার কাছে।কোনো পিছুটান রাখবো না।এরপর মামার সাথে আবার ফরেন চলে যাবো।এই অচেনা শহর যে আমার নয়। তাহরীম নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে পরেও তাকে পেলাম না।উনি আমার সাত তারার নক্ষত্র যাকে পাওয়া শুধুমাত্র একটা সপ্ন বৈকি আর কিছু নয়।

এরপর আরও দুটো ক্লাস হলো।টিফিন টাইমে আমি নিজের মতো নিজে গিয়ে ক্যান্টিন থেকে স্যান্ডউইচ নিয়ে এসে খেতে লাগলাম আর সাথে পড়াগুলো একটু পড়ে নিলাম। আর্যাল আমায় দেখেও মুখ ঘুরিয়ে নিল।টিফিন শেষে যখন একটা লাস্ট ক্লাস ছিল তখনই আমার ডাক এলো।ফারহান স্যারের নাকি এখন অপারেশন আর আমার উনাকে এসিস্ট করতে হবে।

আমি টিচারের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এলাম। দুরু দুরু বুকে চেঞ্জিং রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।এর আগে কখনো স্বচক্ষে দেখিনি অপারেশন করা তাই ভয় হচ্ছে।এই প্রথম লাইভ অপারেশন দেখবো। কাপা কাপা হাতে চেঞ্জিং রুমের দরজা খুলতেই রুমের সকলের চোখ আমার উপর এসে পড়ল।সকলে তির্যক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

রুমে ঢুকতেই আমার চোখে পড়লো একটা হাস্যজ্জ্বল মুখ।মানুষটা অমায়িক হেসে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমায় দেখে এগিয়ে এলেন মানুষটা।আমায় দেখে বাম হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, হায় আমি ডক্টর ফারহান ইমতিয়াজ, নাম তো সুনাহি হোগা। নাইস টু মিট ইউ😃

উনার হাস্যজ্জ্বল মুখ দেখে আমার ভয় দূর হয়ে গেলো।মুচকি হেসে উনার হাতের দিকে ইশারা করে বললাম,
আফরিন: কিন্তু আপনি তো বাম হাত এগিয়ে দিয়েছেন ডক্টর ইমতিয়াজ।আমি হ্যান্ড শেক করবো কি করে?
উনি অপ্রস্তুত হেসে বাম হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে ডান হাত এগিয়ে দিয়ে বললেন,
ফারহান: সরি একচুয়ালি আমি লেফটি।তাই ভুল করে বাম হাত এগিয়ে দিয়েছি।

‘ ইটস ওকে। ছোটি ছোটি শেহের মে বারি বারি বাতে হতে রেহতি হ্যা। ‘ বলে হ্যান্ড শেক করলাম।

ডক্টর ফারহান হেসে বললেন,
ফারহান: আপভি মেরি তারা মাজাকিয়া হ্যাজি।
আফরিন: লাগতাহে আপকো অপারেশন নাহি কারনা।কই বাত নাহি হাম সারি রাত বাত কার সাত্তেহে অর আপ সারে দিন হি হিন্ডি মে বাত কারনা।
ফারহান: তোমার সঙ্গে মজা করছিলাম।কলেজের টপ স্টুডেন্টের সঙ্গে মজা করা আমাদের মত ডাক্তারদের হাতে চাঁদ পাওয়ার মত।আর কিছু মনে করো না।আমি এরকমই। খানিকটা হাসি,মজা ঠাট্টা আর অভিমানে ভরপুর। বাই দ্যা ওয়ে তুমি কিন্তু ভয় পেও না।আমি তোমায় সবটা হাতে কলমে বুঝিয়ে দিবো আর যা বলবো সব নোট করবে।সব কিন্তু ফাস্টলি নোট করতে হবে মিস আফরিন।

‘ ওকে স্যার ‘ বলে হাসি মুখে পাশ ফিরতেই আমার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো।আমার থেকে খানিক দূরেই ডাক্তার সাহেব দাড়িয়ে আছেন।উনার জ্বলন্ত, নির্লিপ্ত চাহনিই বলে দিচ্ছে উনি ঠিক কতটা রেগে আছেন।উনি এখানে আছেন সেটা জানতাম না। উনি নিউরো সার্জন কিন্তু উনিও যে অপারেশন অ্যাটেন্ড করবেন জানা ছিলনা।

আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে ডক্টর ফারহানও ডাক্তার সাহেবের দিকে তাকালেন।ডাক্তার সাহেবের দিকে তাকিয়ে বিস্তর হাসি দিয়ে বললেন,
ফারহান: আরে তাহরীম তুই এসেছিস বলবি না আমায়।আমি আর মিস আফরিন কথা বলছিলাম।
ডাক্তার সাহেব বাঁকা হেসে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন আর ডক্টর ফারহান কে বললেন,
তাহরীম: তুই উনার সঙ্গে কথা বলতে এতটাই ব্যস্ত ছিলি যে তোকে আর ডিস্টার্ব করলাম না। বাই দ্যা ওয়ে তুই কি জানিস উনি মিস নন?

ডক্টর ফারহান ভ্রু কুচকে বললেন,
ফারহান: মানে?
তাহরীম: উনার তো দুই দিন আগেই বিয়ে হলো।উনি এখন মিসেস।
ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে ডক্টর ফারহানের মুখের হাসি চলে গেলো।উনি অপ্রস্তুত হেসে বললেন,
ফারহান: ও সরি।আমি আসলে জানতাম না। আই এম ভেরি ভেরি সরি মিসেস আফরিন।
আফরিন: ইটস ওকে স্যার।
তাহরীম: আমার মনে হয় এখন কথা বলে সময় নষ্ট না করে আমাদের অপারেশন স্টার্ট করা উচিত।
ফারহান: এজ ইউ সে…

অতঃপর অপারেশন স্টার্ট করলেন ডক্টর ফারহান। অ্যাসিস্ট্যান্ট ডক্টর হিসেবে ডাক্তার সাহেব ছিলেন।আজ আমার প্রথম দিন হলেও আমি যেরকমটা খারাপ যাবে মনে করেছিলাম সেরকম টা একেবারেই নয়।বরং ডক্টর ফারহানের হেল্প এ অনেকটাই ভালো কেটেছে। অপারেশন শেষে রোগী কে বেডে দেওয়া হলো।ডাক্তার সাহেব উনার কাজে চলে গেলেন আর আমি ডক্টর ফারহানের আরেকটা অপারেশন এ এসিস্ট করার প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে