তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব-১৭+১৮

0
1416

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_১৭
Tahrim Muntahana

হৃদিতা মাঠে সিএম কে এলোপাথাড়ি মেরে চলছে। ভয়ে কেউ কাছে ঘেসতে পারছে না। গার্ড রাও সামনে যেতে পারছে না, না যেতে পারছে পুলিশ। হৃদিতা চৌধুরীকে সবাই চিনে। হৃদান ওরা দৌড়ে গিয়ে হৃদিতাকে থামালো। হৃদিতা রেগে আবার মারতে গেল পরশ হৃদিতাকে জড়িয়ে ধরলো। দূর থেকে মারের দৃশ্যটা দেখে হিয়া কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচে।কিন্তু তা করা যাবে না। ধরা পড়ে যাবে তাই চুপ করে দৃশ্যটা দেখতে লাগলো।

হৃদপাখি কি হয়েছে এত হাইপার কেন। মারছো কেন সিএমকে -পরশ

কথা বলো হৃদিরানী কি হয়েছে -নিশাত

হৃদু বলছিস না কেন কি হয়েছে -রাইসা

হৃদিতা কোনো কথা বলছে ওর ঠিক রাগটা হজম হচ্ছে না মন চাচ্ছে এই সিএমকে মেরে ফেলতে। তখন বাড়ির সবাই ও ওখানে আসলো। হৃদয় আর রিয়ান চৌধুরী তো দৌড়ে গিয়ে তাদের প্রাণভোমরা কে জড়িয়ে নিলো। কেমন বিধ্বস্ত লাগছে।

আমার আম্মুটার কি হয়েছে -রিয়ান চৌধুরী

মামুনি কি হয়েছে তোমাকে এমন লাগছে কেন আর সিএমকে মারছো কেন -হৃদয় চৌধুরী

আহনাফ চৌধুরী এসে ওদের হৃদিতাকে সময় দিতে বলল। ওরা ওখানেই বসলো চেয়ারে। সাহিল আধির ওরা সিএমকে মাটি থেকে তুলে চেয়ারে বসালো। হৃদান সিএম এর সহকারীর কাছে গেল

কি হয়েছে এখানে -হৃদান

স্যার আমি কিছু জানিনা -সহকারী

বলবেন নাকি অন্য ব্যবস্থা নিবো -হৃদান

সহকারী ভয়ে আমতা আমতা করে বলতে লাগলো

আসলে সিএম স্যার আজকে খেলা শুরুর আগে কাউকে খেলার মাঠে ঢুকতে বারণ করেছিলো। আমরা কেউ বুঝতে পারছিলাম না কেন। সিএম এর আদেশ অমান্য করলে তো চাকরী যাবে তাই আর কিছু বলিনি। হঠাৎ হৃদিতা মেম কে মাঠে ঢুকতে দেখে আমরা এখানে এসেছি না করতে কিন্তু আমাদের কথা শুনছিলো না তাই সিএম এসেছে। হঠাৎ হৃদিতা মেম কি যেন দেখে কিছু না বলেই সিএম এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করলো

হৃদানের ও খটকা লাগলো কারণ অহেতুক কোনো কিছু দেখে এত রেগে যায় না হৃদিতা কখনো। তাই সামনে এগিয়ে গেল। গিয়ে দেখলো হৃদিতার লাইন সহ তিন লাইন ছোট করে অনেকটুুকু জায়গা গর্ত করা। গর্তের আশেপাশে অনেকটুকু জায়গায় কাদার সাথে তেল মিশানো যাতে তেল মিশানো কাদায় পা পিছলে গর্তে পড়ে যায়। হৃদান এতক্ষনে বুঝলো হৃদিতার হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারণ। হৃদান রেগে গিয়ে এক ঘুসিতে চেয়ার থেকে ফেলে দিলো সিএম কে। হৃদানের হঠাৎ আক্রমনে সবাই হতবিহ্বল হয়ে গেল। সিএম আর সহ্য করতে পারলো না জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে রইলো। প্রেস মিডিয়া তো নতুন খবর পেয়ে গেল। একেরপর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে

মেম কি এমন হলো যার কারণে আপনি সিএমকে মারলেন

আপনাকে তো এখন খেলা থেকে রাসট্রিকেট করে দিতে পারে

আপনি কিছু বলছেন না কেন। সিএমকে মারলেন কেন। কি ক্ষতি করেছে আপনার

পাপা ভাইয়ু সিএম হেড ডিসি কে ফোন করে বলো এখানে আসতে। আজকে আমিও দেখবো ওই লোকটাকে কে সিএম বানিয়েছে। পাপা কোনো কথা শুনতে চাইছি না যা বলছি তাই করো -হৃদিতা

হৃদয় চৌধুরী কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না মেয়ের রাগ সম্পর্কে ধারণা আছে তাই ডিসিকে ফোন দিলো আসতে। প্রায় আধাঘন্টার মধ্যে ডিসি এসে উপস্থিত হলো। সিএমকে এইভাবে পড়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে সামনে তাকালো। হৃদয় আহনাফ চৌধুরীর সাথে তার ভালো সম্পর্ক।

হৃদয় সাহেব কি হয়েছে এখানে। আর সিএম এর এই অবস্থা কে করলো

আমার সাথে আসুন -হৃদিতা

কোথায় যাবো

মি আরিফ আপনি আসুন পরে দেখবেন বলতে হবে না -হৃদান

মি আরিফ আর কিছু বললো না এগিয়ে গেল ওদের পিছু পিছু। সাথে রিপোর্টার রা তো আছেই। গর্ত টা দেখে মি আরিফ রেগে বোম হয়ে গেলেন। তিনি তার কর্মজীবনে খুব স্ট্রিট। দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেন।

এগুলো কিভাবে হলো -মি আরিফ

সেটা আপনাদের সিএম কে জিজ্ঞেস করুন -হৃদিতা

তার জন্যই সিএম কে মারা হয়েছে

মি আরিফ এসব সিএমের কাজ। তিনি আগে থেকেই জানতেন এখানে এরকম কিছু আছে তাই খেলার আগে কাউকে ঢুকতে দিতে চাইছিলেন না। হৃদিতার খটকা লাগলে জোর করে এসে দেখে এরকম। আর সিএম এসে আজেবাজে বুঝাচ্ছিলো তাই মেরেছে -হৃদান

আমি দেখছি বিষয়টা। এই এগুলো ঠিক করে খেলা স্টার্ট করার ব্যবস্থা করো। আমি নিজে সবকিছুর তদারকি করবো। আর সিএম কে হসপিটাল নেওয়ার ব্যবস্থা করো সাথে পুলিশ নিয়ে যাও যাতে পালাতে না পারে। কার কথায় এসব করেছে সেটাই দেখবো -মি আরিফ

সবাই মাঠের বাইরে চলে গেল। এতক্ষন হিয়া এসব দেখে ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। অন্যকে গর্তে ফেলতে গিয়ে সেই গর্তে নিজেই পড়েছে। হৃদিতা এখন একটু শান্ত হয়েছে। পরশী চৌধুরীর বুকে মাথা এলিয়ে আছে। একটু স্ট্রেস গেছে রেস্ট দরকার নাহলে দৌড়াতে পারবে না। কিছুক্ষন পর মাথা তুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে পাচ্ছে না

কাকে খুজিস তুই হৃদু -রোহানি

সিক্রেট -হৃদিতা

বল না -সাহিল

বলবো না একটু পর দেখতেই পারবি -হৃদিতা

আরে কি দেখবো বল না প্লিজ -রাহি

নো -হৃদিতা

তোর মাথায় কি চলছেরে -আধির

একটুপর যা দেখবি তোরা চমকে যাবি -হৃদিতা

ইশশ বলনা কি এমন করছিস কেন -রাইসা

হৃদপরী কি হয়েছে -হৃদান

কিছু না তো -হৃদিতা

আর যায় বলো তোমার হঠাৎ এইভাবে রেগে যাওয়া ঠিক হয়নি। এত স্টেস নিলে দৌড়াতে প্লবলেম হবে। আমাকে বলতে পারতে -হৃদান

হৃদান ওসব কথা এখন থাক -পরশ

হ্যাঁ ভাইয়া এখন চলো ওইদিকে প্রতিযোগিতা শুরু হবে -নাশিন

ফাটিয়ে দিবে চ্যাম্পিয়ন হৃদিআপু -আনহা

হৃদিরানী আমি জানি তুই এইবারো চ্যাম্পিয়ন হবি। ওল দি বেস্ট মাই কলিজা। আমি তো ভাবতেই পারিনি সেই আগের মতো তোর প্রতিযোগিতা আমি দেখতে পারবো -রিয়া

ইমোশনাল হয়ে যাও কেন এত। এই মেয়ে মানুষ গুলা পারেও বটে -সাগর

ইমোশনাল হইছে দেইখা নাকি বউয়ের কষ্ট তোমার সহ্য হয়না দেইখা বলতেছ -সোহা

হাহাহা -পিয়াস

দাঁত কেলাস না তো সর -সাগর

ওলে বাবা বাবুটা নাগ করেতে -পিয়ানি

বেশী কিন্তু হচ্ছে -সাগর

হইছে থামো তোমরা মাই ডিয়ার সুইট শালিকা বেস্ট অফ লাক -নিয়ন

হুমম গুড লাক হৃদি -আলো

বলো সবাই থ্রি চিয়ারস ফর হৃদিআপু হিপ হিপ হুররে -আনহা

হিপ হিপ হুররে -সবাই

হৃদপরী সবাধান নিজের ক্ষতি করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দরকার নেই। মনে রেখো তোমার উপর আমার প্রাণটাও ডিপেন্ড করে -হৃদান

হৃদরাজ কিছু হবে না আমার। আসি এখন -হৃদিতা

হৃদিতা চলে গেল খেলার মাঠের দিকে। খেলার মাঠে হিয়া কে দেখে ওরা রীতিমতো শকড।

হৃদু কি এই সিক্রেট টার কথায় বললো -রাইসা

মানে হিয়া খেলবে সেটা হৃদি আগে থেকেই জানতো -আলো

আমাদের তো বললো না -রাহি

আর ফুপি ও তো কিছু বললো না -আনহা

তার মানে এইসব হিয়ার কাজ -পরশ

আমি তো ওকে দেখে নিবো -হৃদান

হৃদান খেলার মাঠের দিকে যাবে তার আগেই নাশিন আটকায়

না ভাইয়া হৃদিরানী যদি আগে থেকেই জানতে পারে হিয়া প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে তাহলে বুঝতেও পেরেছে যে এসব হিয়ার কাজ। তাই ও যেহেতু কিছু বলে নায় সেহেতু কিছু প্লেন তো আছেই -নাশিন

আমাদের কিছু করা এখন ঠিক হবে না -সোহান

হুমম দেখি কি হয় আগে -রোহানি

আমার মনে হচ্ছে হৃদিতা চাচ্ছে ওকে খেলায় হারিয়ে পরে শাস্তি দিবে -অরনী

হুমম আগে শাস্তি দিলে তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মজায় পাবে না হৃদি -পিয়াস

চলো আলোচনা না করে খেলা দেখি -রিয়া

হুমম হুমম চলো -আধির

খেলা শুর হবে এখন। সব খেলোয়াড় নিজেদের পজিশন নিয়ে দাড়িয়ে আছে। প্রথম বাশিতে সবাই হুশিয়ার হলো। দ্বিতীয় বাশিতে প্রথম স্টেপ নিলো। মাথা ঘুরিয়ে হৃদিতা হিয়াকে অল দা বেস্ট জানালো হিয়া মুখ ভাঙচি দিয়ে সামনের দিকে তাকালো। তৃতীয় বাশিতে সবাই ছুটলো। চারটা রাউন্ড দিতে হবে। হৃদিতা আর হিয়া সমান সমান। হৃদিতা এবার নিজের মতো দৌড়াতে লাগলো। ওর দৌড়ের গতি এতটাই প্রখর যে খুব তাড়াতাড়ি দৌড়াতে পারে। তবুও হিয়ার সাথে একটু খেলতে ইচ্ছে করলো। তাই ও নিজের গতি কমিয়ে দিলো। হিয়া তো মনে করছে হৃদিতা ওর সাথে পারছে তাই ও খুশি মনে দৌড়াতে লাগলো। তা দেখে হৃদিতা বাঁকা হাসি দিলো। খেলার রাউন্ডের চারপাশে মানুষে গিজগিজ করছে। সবাই হৃদিতা হৃদিতা বলে চিল্লাচ্ছে। কিন্তু হৃদিতা গতি কমিয়ে দেওয়ায় হিয়ার কিছু লোক হিয়া হিয়া বলে চিল্লিয়ে উঠলো। দুই রাউন্ড শেষ। হিয়া আর হৃদিতা প্রায় সমান সমান। হৃদিতার খেলার স্টেপ টা কেউ বুঝতে পারছে না কারণ হৃদিতা চাইলেই এখন শেষ রাউন্ড দিয়ে দিতে পারতো কিন্তু এবার বেশ ঝিমিয়ে খেলছে বলে সবাই দিকভ্রান্ত হয়ে চিৎকার বন্ধ করে দিলো। তিন রাউন্ড লাস্টের দিকে হিয়া বেশ হাপিয়ে গেছে। হৃদিতা এইবার দর্শকদের দিকে ঘুরে চিয়ার্স আপ এর মতো হাত উঠিয়ে ইশারা করেই জোরে দৌড় দিলো। একটুপর ই রাউন্ড শেষ সবাই একসাথে হিরিক দিয়ে উঠলো। হিয়া বুঝে উঠতেই পারলো না হৃদিতা কখন চলে গেল। রেগে পায়ের জুতো খুলে মাঠ থেকে বেরিয়ে গেল। হৃদান ওরা দৌড়ে মাঠে চলে গিয়ে হৃদিতাজঢকে শুভেচ্ছা জানালো অতি উল্লাসের সহিত।
এখন সম্মাননার জন্য ডাকা হলো। হৃদিতা স্ট্রেজে গেল। প্রতিবছর ই ওকে কিছু বলতে বলে ও কিছু বলে না কিন্তু আজ মাইক হাতে নিলো।

হিয়া খান প্লিজ কাম। হিয়া খান আর ইউ হেয়ার মি। ইফ ইউ হেয়ার মি প্লিজ কাম দা স্ট্রেজ

হৃদিতা হিয়াকে কেন ডাকছে কেউ বুঝলো না। হিয়া রেগে পাইচারি করছিলো ওর নাম এনাউন্স করতে শুনে এগিয়ে গেল। হিয়াকে আসতে দেখে হৃদিতা শয়তানি বাঁকা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো

আমি চাই আমার চ্যাম্পিয়ন কাপটি হিয়া খান ওরফে আমার মেইন বিপক্ষ খেলোয়াড় আমার হাতে তুলে দিক

হৃদিতার কথা শুনে সবাই জোরে জোরে চিল্লিয়ে চিয়ার্স আপ করতে লাগলো আর হৃদান ওরা হেসে দিলো এবার বুঝলো কেন ডাকছে কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা যাকে বলে। হিয়া তো রেগেমেগে আগুন কিছু বলতেও পারছে না সহ্যও করতে পারছে না। তাই অপারগ হয়ে গেল। পুরষ্কার টি তুলে দিলো হৃদিতা কুটিল হেসে কাপটি হাত থেকে প্রায় কেড়ে নেওয়ার মতো ছো মেরে নিয়ে নিলো। হিয়া চোখ রাঙিয়ে চলে যেতে নিবে

মিস হিয়া আমাকে উইশ করবেন না। আপনার থেকে আবাদত একটা উইশ আশা করেছিলাম। এতবড় একটা জয় বলে কথা আর এটা নতুন না প্রত্যেক বছর আমিই চ্যাম্পিয়ন হই

হিয়া সব অপমান হজম করে মুখে কৃত্রিম হাসি দিয়ে এগিয়ে গেল

কনগ্রেজুলেশন মিস হৃদিতা। অনেক অনেক শুভেচ্ছা

বলেই চলে আসলো হৃদিতা তাড়াতাড়ি মাইক হাতে নিলো

পরিশেষে একটা কথায় বলবো পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। তাই বলছি সাবধান। আর হ্যাঁ চ্যাম্পিয়ন অলওয়েস চ্যাম্পিয়ন ই হয়

বলেই স্ট্রেজ থেকে নেমে বাড়ির লোকদের কাছে গেল। অনেকক্ষন ঘুরাঘুরি আনন্দ করে সবাই বাসায় চললো। আজকে সবাই হৃদিতাদের বাসায় থাকবে। কালকে দশটা থেকে বাস্কেটবল খেলা তাই সবাইকে জোর করে নিয়ে এসেছে একসাথেই যাবে এখান থেকে। সন্ধায় রেস্ট নিয়ে হালকা নাস্তা করে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তখনি নাশিন আসলো

হৃদিরানী রাহু রোহা ভাবি সাহি আধি চল -নাশিন

নাশিনের কথা শুনে সবাই ভ্রু কুচকালো হৃদিতারা উঠতে যাবে

কোথায় যাবে ওরা -পরশ

প্রেকটিস করতে -নাশিন

এখন কিসের প্রেকটিস -সোহা

কালকের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে না -নাশিন

নাশিন তুই কি বলছিস তোর মাথা ঠিক আছে -সোহান

কেন -নাশিন

কেন মানে এই রাত করে প্রেকটিস করবে রেস্ট নিবে কখন কালকে অসুবিধা হবে তো খেলতে -হৃদান

আরে ভাইয়া আমি ওদের এমন ভাবে তৈরি করিনি যে একটু প্রেকটিসেই অসুস্থ হয়ে পড়বে -নাশিন

আরে নাশিন তুমি বুঝতে পারছো না আমরা কি বলছি -সাগর

হ্যাঁ আজকে একটা প্রতিযোগিতা হলো এখন আবার প্রেকটিস করলে শরীর চলবে না -পিয়ানি

পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে আর খেলতেই পারবে না -নিয়ন

কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে না। ওরা নিজেদের এমন ভাবে তৈরী করেছে যে ব্যাথা পেলে ঘুরে দাড়াতে পারে একমিনিটেই -রিয়া

তুমি কেমনে জানো ভাবি -অরনি

বারে আমিও ওদের মতো একজন আর আমি জানবো না -রিয়া

আজকে প্রকেটিসের দরকার নেই যাও রেস্ট নাও -হৃদান

গাইস তোরা প্রেকটিস করতে প্রস্তুত তো -নাশিন

একদম চলো -রাহি

হুম আমাদের কিছুই হবে না দিনে এর থেকেও আমরা বেশী পরিশ্রম করে রাতে প্রেকটিস করেছি -আধির

আচ্ছা যাও তাড়াতাড়ি এসো -পরশ

আমরাও যাই না -আনহা

হ্যাঁ হ্যাঁ চলো না যাই -আলো

ঘুরাও হবে খেলাও দেখা হবে ওরাও আনন্দ পেলো -সোহান

আচ্ছা চল আমি হৃদপরীকে এমনিও একা ছাড়তাম না তরাও যেহেতু যেতে চাইছিস চল -হৃদান

সবাই বেরিয়ে পড়বে প্রেকটিস স্পটের দিকে এমন সময় হৃদিতা একটা বায়না ধরলো তা দেখে সব মেয়েই সায় দিলো। ছেলেরা মানতে নারাজ

চলবে……?

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_১৮
Tahrim Muntahana

রাস্তা দিয়ে ২৫ টার মতো মটর বাইক যাচ্ছে সমান তালে। এখন সন্ধা হওয়ায় বেশ মানুষ শহরের রাস্তায়। একসাথে এতগুলো গাড়ি দেখে সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
হৃদিতা হৃদান রাইসা পরশ রোহানি পিয়াস রাহি সোহান রিয়া সাগর নাশিন আনহা আলো নিয়ন সোহা অরনি পিয়ানি আধির সাহিল আর ৬ জন গার্ড নিয়ে মটর বাইক করে যাচ্ছে।

হৃদিতা বায়না ধরেছে সবাই যখন যাবে তাহলে মটর বাইক করে যাবে। সবাই যেহেতু বাইক চালাতে পারে কোনো প্রবলেম নেই তো। ছেলেরা প্রথমে রাজি না হলেও হৃদিতার জেদের কাছে হার মেনে নিয়েছে। হৃদিতা বলছিলো ওরাই শুধু যাবে কিন্তু পরশ হৃদান ও শর্ত দিয়ে বসলো গার্ড ছাড়া যাওয়া যাবে না। অগত্যা ওরাও রাজি হয়ে গেল। হৃদান ফোন দিয়ে বাইক আনার ব্যবস্থা করে। রেড়ি হতে গেল। শীত পড়েছে বাইরে। তাই উভয় ই হুডি জিন্স পড়ে রেড়ি হয়ে নিলো। রেড়ি হতে হতে বাইক ও চলে আসলো। সবাই বেরিয়ে পড়লো।
হৃদিতারা প্রথমে যাবে হিয়াদের বাড়ি। এই প্রস্তাব টা শুধু হৃদিতার না সকলের। কালকে বাস্কেটবল খেলা একটু উইশ না করলে কি হয়।

হঠাৎ বাইরে এত শব্দ শুনে ওরা মেইন দরজার পাশে আসলো। হৃদিতারাও বাইক পার্ক করে হেলমেট খুলতেই হিয়া আর সিয়ার মুখ থমথমে হয়ে গেল। হৃদিতারা হেসে ভেতরে চলে গেল। আখি খান ভাইয়ের ছেলে কে দেখে তাড়াতাড়ি ঘরে নিয়ে গেল। একটু খাতির যত্ন না করলে কি হাতে থাকে নাকি। আর সবাইকে দেখে খুশি হয়নি তা তার মুখ দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। অনিচ্ছা সত্তেও নাস্তা বানাতে গেল

মিস সিয়া উইশ করতে আসলাম। খুশি হাননি -হৃদিতা

হ্যাঁ খু খুশি হয়েছি তো -সিয়া

তো মিস হিয়া কেমন আছেন। না মানে শকড টা মেনে নিতে পেরেছেন তো -রাহি

তোমরা কি বাড়ি বয়ে লেইক পুল করতে এসেছ -হিয়া

এমা কি যে বলেন না আমাদের কি সে সাধ্য আছে -আধির

হ্যাঁ হিয়া খানকে লেইক পুল ভাবতেও তো আমার ভয় করে -রোহানি

পরশ বসুন না দাড়িয়ে আছেন কেন -সিয়া

সিয়ার মুখে পরশের নাম শুনে সবাই ভ্রু কুচকে তাকালো। রাইসা তো পারে না গিলবে এমন ভাবে তাকালো। সিয়া পরশের দিকে তাকিয়ে আছে আর মিটিমিটি হাসছে। পরশ তো নাম শুনে থতমত খেয়ে গেছে না জানি রাইসা কি করে।

পরশ বেবী আসো আমার পাশে বসো তো -রাইসা

পরশ আর রাইসা কে ঘাটালো না এমনিই পাগলি তার উপর কখন ওভার রিয়েক্ট করে বসে তার কোনো গ্যারান্টি নেই।

মিস সিয়া দেখো তো আমাকে আর পরশ কে কেমন মানায়। সুন্দর না। খালি সুন্দর নাকি সুপার। পুরো মেইড ফর ইচ আদার তাইনা -রাইসা

রাইসার কথা শুনে সিয়ার মুখটা চুপসে গেল। আর সবাই রাইসার কান্ড দেখে মুখ চেপে হাসছে। এবার হৃদিতা মজা নেওয়ার জন্য জোরেই হেসে দিলো

মিস সিয়া দেখুন না সত্যিই খুব মানিয়েছে তাইনা। আমি তো বসে আছি কবে আমার বান্ধরনীকে মিষ্টি ভাবি করে নিয়াসবো -হৃদিতা

তা আর বলতে নাকি। কবে যে বড় হবে আর বিয়ে হবে -রিয়া

আর সিয়া পরশ তোর থেকে অনেক বড় নাম ধরে ডাকছিস কেন ভাইয়া বলে ডাক -হৃদান

কেন রাইসা যে ডাকছে নাম ধরে ও তো ছোট -সিয়া

আপনার আর রাইসার মধ্যে অনেক তফাৎ মিস সিয়া। রাইসা আমার উডবি আর আপনি জাস্ট আত্মীয়। তাই ভেবে চিন্তে কথা বলবেন। বউ যদি ভাইয়া বলে ডাকে তার থেকে বিয়ে না করায় ভালো -পরশ

ভাইয়া টেনশন করো না রাইসা তো আর পিচ্চি না যে তোমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে -নাশিন

নাশিন আড়চোখে আনহার দিকে তাকালো। আনহা কটমট করে চেয়ে আছে ওর দিকেই। লোকটাযে ওকেই মিন করে বলছে বেশ বুঝতে পারছে আনহা। হিয়া চুপচাপ বসে আছে। হারটা মেনে নিতে পারছে না। এমন সময় আখি খান নাস্তা নিয়ে আসলো।

আরে বাহ মিসেস খান দেখছি আমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসছে -সাহিল

তাই তো দেখছি। আমরা কিছু খাবো না মিসেস খান -নাশিন

মিস সিয়া কালকে দেখা হবে মাঠে -হৃদিতা

হুমম দেখা তো হবেই। তখন দেখে নিবো কে কত বড় খেলোয়াড় -সিয়া

ইয়েস এরকম একটা বিপক্ষ দল ই তো আমার চাই। তাছাড়া খেলায় ঠিক মজা পাইনা। আর যে খেলায় মজা নাই সে খেলা হৃদিতা চৌধুরী খেলে না -হৃদিতা

বাহ বাহ কেয়া বাত হে -সাগর

সুপার -সোহান

সত্যি তো বিপক্ষ দল ভারী না হলে কি খেলায় মজা আছে নাকি -সিয়া

এরআগের বার তো বিপক্ষ দল শক্ত ছিলো না তাই খুব ইজিলি জিতে গেছেন মিস সিয়া এবার হবে খেলা -রোহানি

আজ না খেলে খুব মজা পেয়েছি। বিপক্ষ দলকে নাচাতে খুব ভালোলাগে। যাই হোক অল দা বেস্ট মিস সিয়া এন্ড অগ্রিম কনগ্রেচুলেশন হারের জন্য বাই সি ইউ টমোরো ইন দি ফিল্ড -হৃদিতা

হৃদিতারা চলে গেল হিয়া মন খারাপ করে নিজের রুমে দরজা আটকে বসে রইলো। আর সিয়া তো রেগে প্রেকটিস করতে চলে গেল। প্রায় আধাঘন্টা পর হৃদিতারা প্রেকটিস স্পটে পৌঁছলো। হাতে সময় নেই বেশী তাই তাড়াতাড়ি প্রেকটিস শুরু করলো। সাগর রা বসে আড্ডা দিচ্ছে আর খেলা দেখছে। হুডি পরেই খেলা শুরু করেছে। প্রচন্ড শীত।
নাশিন হৃদান পরশ ওদের প্রেকটিস করাবে। প্রথম স্টেপ থেকে শুরু করলো। এবার ছয়জনের মধ্যে গেইম হবে। প্রেকটিস করতে করতে গরম করছে খুব তাই হৃদিতারা হুডি খুলে ফেললো। নিচে টিশার্ট আছে।
সবার প্রত্যেকটি স্টেপ ই খুব নিখুত। রাইসা ওরা আগে থেকেই আর হৃদিতা ছয়মাস খুব করে প্রেকটিস করার ফল খুব ভালো। কারো থেকে কেউ কম না কিন্তু হৃদিতার পারফোমেন্স একটু বেশী স্টিক যেমনটা রিয়ার ছিলো। আসলে হৃদিতা রিয়ার ডাইরি পড়েছিলো। ওখানে বাস্কেটবল খেলার প্রত্যেকটা ইউনিক স্টেপ রিয়া বর্ণনা করে লিখে রেখেছে। হৃদিতা ওখান থেকেই শিখেছে। শেষ কিছু সময় বাকি আছে কিন্তু কেউ রান দিতে পারছে না। হৃদিতার হঠাৎ করে রাগ উঠে গেল। চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে কিছু একটা মনে করে ফট করে চোখ খুললো। ঝড়ে বেগে রাহির থেকে বল নিয়ে সামনে চলে গেল কিন্তু আধির আটকালো। বলটাকে পাস করে নিজেও পাস হয়ে গেল আর গোলে বলটা ফেলে দিলো। রিয়া এতক্ষন বিষ্ময়ে হৃদিতার পারফোমেন্স দেখছিলো

হৃদিরানী তুই -রিয়া

হ্যাঁ আমি তোমার ট্রিকস এইগুলো তাইতো-হৃদিতা

তুই এইগুলো শিখলি কেমনে ভাইয়া তো এইগুলো শেখায় নি। এইগুলো খুব হার্ড তাই আমিও কিছু বলিনি তাহলে -রিয়া

তুমি না বললেও তোমার ডাইরি তো বলেছে -হৃদিতা

মানে -রিয়া

মানে তোমার ডাইরির সব কথা এন্ড সব ট্রিকস এখন আমার বা হাতের খেল -হৃদিতা

কিন্তু এগুলো খুব হার্ড। তুই এগুলো প্রয়োগ করবি না -রিয়া

তুমি তো করেছিলে -হৃদিতা

হৃদিরানী তুই আমার কথা বুঝতে পারছিস না। প্লিজ এগুলো স্টেপ নিস না রিস্কি খুব -রিয়া

আহ রিয়ু বললাম তো এসব ট্রিকস আমার কাছে কিছুই না ।এখন শুধু দেখতে থাকো কালকে কি হয় -হৃদিতা

শুন হৃদি তুই যদি কালকেও আজকের মতো করস তোর খবর আছে -রোহানি

হুমম তুই চাইলে অনেক আগেই দৌড়ের লাস্ট স্টেপ নিতে পারতি অথচ হিয়ার সাথে সাথে থাকলি -সাহিল

আজকে তো হিয়াকে বুঝালাম সবাইকে সব জায়গায় মানায় না।আর কালকের কথা চিন্তা করিস না কালকে শুরু থেকেই খেলা শুরু করবো।আর গো হারান হারিয়ে এমন অবস্থা করবো কালকে টের পাবে -হৃদিতা

কি করতে চাইছো হৃদপরী -হৃদান

নো টেনশন হৃদরাজ তোমার হৃদপরীর কিছুই হবে না -হৃদিতা

হৃদিপাখি তুমি এমন কিছু জানো তাইনা যেটা আমরা জানি না -পরশ

তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে কালকে বড় কিছু করবে তুমি -নাশিন

আরে তোমরা চুপ করোতো এত প্রশ্ন করো কেন হৃদিতা এমনিই বলবে কি করবে ও -অরনি

রোহানি তোমরা জানো তাইনা আমাদের বলছো না কেন -পিয়াস

ওদের কথা শুনে ওরা আমতা আমতা করছে কি জবাব দিবে।

চলো বাড়ি যাই রেস্টের দরকার। কালকেই সব দেখতে পারবে তাই আর অযথা প্রশ্ন করো না উত্তর এখন পাবে না -হৃদিতা

হ্যাঁ হ্যাঁ চলো চলো -আধির

আচ্ছা চল তো তোরা। ওদের আসলেই রেস্ট দরকার -সোহা

আমি এখন হৃদরাজের সাথে যাবো ভাইয়ু তুমি ওই বাইক টার ব্যবস্থা করো -হৃদিতা

হৃদিতার কথায় হৃদান যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেল। হৃদিতার দেখাদেখি রাইসা রোহানিও বলল পরশ পিয়াসের সাথে যাবে। আলো আর নিয়ন ও সাগর আর রিয়া। হৃদিতা আনহার দিকে তাকিয়ে দেখলো নাশিনের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।

নাশু ভাইয়া তুমি আনহাকে নিয়ে আসো আর রাহি তুই সোহান ভাইয়ার সাথে আয়। আর তোমার কি ডাবল আসবে -হৃদিতা

না না আমি একাই যাবো -পিয়ানি

আমিও একাই। অনেকদিন পর বাইক চালাচ্ছি এই সুযোগ মিস করতে চাইনা -অরনি

ওকে তোরা আয় তাহলে -সাগর

সবাই যে যার প্রেয়সীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। প্রিয়মানুষটাকে আগলে নিয়ে রাতের শহর দেখার আনন্দ আর সুখটা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সত্যি !

চলবে….?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে