তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব-২৫+২৬

0
1443

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২৫
Tahrim Muntahana

হৃদান দৌড়ে অফিসে ঢুকেই হৃদিতাকে জড়িয়ে ধরলো। হৃদিতা খুব অবাক হয়েছে। এখন কেউ ই হৃদান কে আশা করেনি। কারণ হৃদান নিজেও মিটিংয়ে ছিলো।

হৃদপরী এখন কেমন লাগছে? ঠিক আছো তুমি? খারাপ লাগছে তোমার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমাকে। নিজের প্রতি এত হেয়ালি কেন হৃদপরী। আমার তো নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছিলো যখন তোমার অসুস্থতার খবর শুনলাম। আমাকে মেরে ফেলতে চাইছো তুমি?

একদমে কথাগুলো বলে জোরে দম নিলো। একটুর জন্য আত্মা টা বেরিয়ে যাচ্ছিলো। হৃদানের ব্যকুলতা দেখে হৃদিতা মলিন হাসলো। হাসিটা হৃদানের একদম পছন্দ হয়নি। কোলে তুলে নিলো। আচমকা কোলে তুলাতে হৃদিতা হকচকিয়ে উঠলো।

পরশ আমি ওকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। চিন্তা করিস না তুই এদিকটা সামলে তারপর আয়। রিয়ু বনু চল -হৃদান

পরশ হৃদিতার কপালে চুমু দিতেই নাশিন ও আদর করে দিলো। রিয়াকে বাদ যাবে কেন রিয়াকেও দুজন আদর দিলো। তারপর হৃদান হৃদিতাকে নিয়ে বের হয়ে এলো রুম থেকে পিছুপিছু রিয়া এলো। অফিস স্টাফদের সামনে দিয়ে যেতেই সবাই কে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিয়া হালকা হাসলো। ওরা এতক্ষণ হৃদানকে নিয়েই কথা বলছিলো। এতবড় বিজনেস ম্যান এইভাবে হন্তদন্ত হয়ে পাগলের মতো দৌড়ে উপরে যেতে দেখলে কে অবাক হবে না তারপর হৃদিতা চৌধুরী কে কোলে নিয়ে বের হচ্ছে। রিয়া কিছুদূর যেতেই আবার থেমে গেল। স্টাফদের কাছে যেয়ে বলল

সামনে আরো কিছু দেখার বাকি আছে এখন আপনারা কাজে মন দিন। ভালো থাকবেন আসি

বলেই মুচকি হেসে চলে আসলো। হৃদান গাড়িতে গিয়ে বসেছে। হৃদিতাকে ফন্ট সিটে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে হৃদিতাকে বুকে টেনে নিলো। হৃদিতাও চুপটি মেরে বুকে মুখ গুজে রইলো। এই জায়গাটা যে খুব শান্তির জায়গা। রিয়া তাড়াতাড়ি এসে পেছনে বসতেই হৃদান গাড়ি স্টার্ট দিলো। পূর্ব থেকে একহাতে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা ছিলো বলে হৃদিতাকে জড়িয়ে ধরে গাড়ি চালাতে হৃদানের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দূর্বল থাকায় হৃদিতা হৃদানের বুকেই ঘুমিয়ে গেছে। তাই হৃদান আর হৃদিতা কে জাগালো না ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে তুলে নিলো। এই ভাবে হুট করে কোলে তুলায় হৃদিতা পিটপিট করে একটু তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। হৃদান হালকা হেসে এগিয়ে গেলো। রিয়া ব্যাগ নিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। পরশী চৌধুরী আর নিশি চৌধুরী ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলো তার পাশেই কয়েকজন মেইড ও বসে ছিলো। অনেক আগে থেকেই এমন করেন। তারা অন্যের বাড়িতে কাজ করে বলে কি তারা মানুষ না? তারা খেটে খায় তাদের আত্মসম্মান আছে বলেই। আত্মসম্মান না থাকলে মানুষের কাছে হাত পাততো। প্রথম প্রথম বাড়ির মালকিনদের সাথে বসে টিভি দেখতে ইতস্তত করলেও এখন আনন্দেই দেখে। এইভাবে মেয়েকে হৃদানের কোলে দেখে পরশী চৌধুরী আর নিশি চৌধুরী বিচলিত হয়ে যায় সাথে মেইড গুলাও। পরশী চৌধুরী কিছু বলবে তার আগেই হৃদান ইশারা করে কিছু না বলতে।

মামুনি হৃদপরীর কিছু হয়নি। ঘুমিয়েছে তাই আমি ওকে রুমে শুয়িয়ে দিয়ে আসি। তারপর তোমার সাথে কথা বলছি

বলেই হৃদান উপরে চলে যায়। রিয়া কিছু না বলেই আগে ফ্রেস হবে বলে চলে যায়। হৃদান হৃদিতাকে ভালো করে শুয়িয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থেকে প্রেয়সীর কপালে দুই গালে চুমু দিয়ে বের হয়ে আসে। এসেই সোফায় ধপ করে বসে পড়ে।

ছোট আম্মু তোমার হাতের স্পেশাল কফিটা খাবো আর মামুনি তোমার হাতের মজার নুডলস টা -হৃদান

তুমি বস আমি এখনি নিয়ে আসছি বানিয়ে আমার সোনা ছেলে -নিশি চৌধুরী

আচ্ছা তুমি রিয়ার সাথে গল্প করো আমিও আসছি -পরশী চৌধুরী

হৃদান কথা না বলে মুচকি হাসলো একটু রিয়াও এসে পড়লো।

হৃদ ভাইয়া তুমি জানলে কেমনে হৃদরানী অসুস্থ হয়ে পড়েছে -রিয়া

তোদের পিছে আমার গার্ড অলটাইম থাকে।তোরা যখন গাড়িতে উঠছিলো তখনি আমাকে গার্ড ফোন দিয়ে বলে হৃদপরীর আচরণ স্বাভাবিক লাগছে না। কেমন যেন হাত পা কাঁপছে। তারপর ও তুই চিন্তিত হয়ে পড়বি বলে নিজেই ড্রাইভ করেছে। যখন গাড়ি পার্ক করে নামলি তখনি হৃদিতার চোখ দেখে বুঝে যায় অসুস্থ আর আমাকে জানায়। আমি ছিলাম ইমপরটেন্ট একটা মিটিংয়ে নিউজটা জানার সাথে সাথে দৌড়ে চলে আসি। এতক্ষণে মনে হয় ম্যানেজার মিটিং কেন্সেল করে দিয়েছে -হৃদান

মিটিং কেন্সেল করেছ সমস্যা হবে না ওনারায় বা কি ভাবলো -রিয়া

মানুষ কি ভাবলো না ভাবলো আমার কিছু যায় আসে না। আমার কাছে সবার আগে আমার হৃদপরী। আর হৃদান চৌধুরীর সাথে ডিল করা এ সহজ না বনু -হৃদান

আই সি -রিয়া

ওদের আড্ডা দেওয়ার মাঝখানেই নিশি চৌধুরী হৃদানের জন্য কফি আর রিয়ার জন্য চা নিয়ে আসলো।

নাও বাচ্চা তোমার কফি -নিশি চৌধুরী

হ্যাঁ দাও ছোট আম্মু। আর তুমি বসো -হৃদান

হুমম বসছি। তা তোমার ব্যবসায় কেমন চলছে -নিশি চৌধুরী

আমার ব্যবসায় বরাবর ই বিন্দাস চলে ছোট আম্মু -হৃদান

হাহাহা -নিশি চৌধুরী

নাও বাচ্চা তোমার নুডলস। নিশি তুই ও নে। আর রিয়ু আম্মু তুমিও খাও সেই কখন খেয়েছো -পরশী চৌধুরী

যদিও আমার খিদে নেই বাট বড় আম্মু তোমার হাতের স্পেশাল নুডলস তো মিস করা যায় না। দাও দাও -রিয়া

হাহাহা নাও আম্মু -পরশী

ওয়াও মামুনি তোমার হাতের ননুডলস আর ছোট আম্মুর হাতের কফি সত্যিই অসাধারণ। এখন আমাকে উঠতে হবে। মামুনি ছোট আম্মু আমি এখন আসি রাতে আসবো আরেক বার। বাই -হৃদান

বলেই আর দেরী করলো না বেরিয়ে গেল। মিটিং টা এটেন্ড করতে হবে। রিয়া চলে গেল হৃদিতার ঘরে। পরশী চৌধুরী আর নিশি চৌধুরী বসে পড়লো টিভির সামনে। হৃদান গিয়ে মিটিং টা কমপ্লিট করে ডেস্কে এইমাত্র বসেছে তখনি হৃদানের পিএ আহাদ খবর দিলো কে যেন দেখা করতে এসেছে। হৃদান ভাবলো এখন আবার কে এসেছে। দেখার জন্য বললো পাঠিয়ে দিতে। পিএ বসের অনুমতি পেয়ে লোকটাকে পাঠিয়ে দিলো। হৃদান বসে একটা ফাইল দেখছিলো। কালকে আরেকটা মিটিং আছে। তখনি বাইরে থেকে আওয়াজ আসলো

মে আই কামিং মি চৌধুরী

আওয়াজ শুনে হৃদানের মনে হলো কোথাও শুনেছে উপরে তাকাতেই লোকটাকে দেখে চমকে উঠলো হৃদান। আহিল খান এসেছে। এই সকালেই তো কথা হলো। চমকানো ভাবটা প্রকাশ না করে স্বাভাবিক ভাবে হালকা হেসে এগিয়ে গেলো।

আরে মি খান আপনি -হৃদান

চলে আসলাম মি চৌধুরী। বিরক্ত করলাম নাতো -আহিল

নো নো বিরক্ত কেন? আপনি এসেছেন আমি খুব খুশি হয়েছি। কি নিবেন চা না কফি? লাঞ্চ করেছেন? -হৃদান

মি চৌধুরী আপনি এত বিচলিত হবেন না আমি লাঞ্চ করেই এসেছি। কফি উইথ সোগার হলে ভালো হয়। দু চামিচ চিনি -আহিল

আচ্ছা আমি বলে দিচ্ছি। হ্যাঁ আহাদ আমার রুমে দুটো কফি পাঠাও উইথ সোগার। একটাতে দু চামিচ আরেকটিতে এক চামিচ -হৃদান

আপনার সাথে আমার কিছু ইমপরটেন্ট কথা ছিলো মি চৌধুরী -আহিল

আমি বুঝতে পারছি আমি কি বলতে এসেছেন। তার আগে আম সরি ফর দেট আমরা আপনাকে একটু ঠকিয়েছি কিন্তু সেটি ইতিবাচক নেতিবাচক নয় -হৃদান

বুঝলাম না -আহিল

আপনি অরনির কথায় বলতে এসেছেন তাইনা -হৃদান

হৃদানের সোজাসাপ্টা কথা শুনে আহিল একটু থতমত খেলো। হৃদান ব্যাপার টা বুঝতে পেরে হালকা হাসলো। আহিল এবার হৃদানের দিকে ভালো করে মনোযোগ দিলো। হৃদান কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুমে পিয়াস প্রবেশ করলো। হৃদানের সামনে আহিলকে বসে থাকতে দেখে ও বিরক্ত হলো। বিরক্ত হলো বলতে গেলে রাগ হলো। যখন থেকে শুনেছে ওর ভালোবাসার মানুষটাকে এই লোকের জন্য হারাতে পারে তখন থেকে অনেক রাগ। কোনো কিছু না বলে ধপ করে আরেক চেয়ারে বসে পড়লো। বসেই আবার হৃদানের পিএ আহাদ কে ফোন দিলো

এই পাহাদ আমার জন্য কফি পাঠাও চিনি বেশী দিবা। মেজাজ খারাপ বুজছো

পাহাদ নামটা শুনে আহাদের খুব রাগ হলো। এই পিয়াস আর মেয়ে বান্ধুবী মানে অরনি সোহা পিয়ানি এই চারজন শুধু শুধু ওর নামটাকে এমন ভাবে ব্যাঙ্গায়। এর জন্য এই চারজনের উপর ওর খুব রাগ। একটু সহজ সরল বোকা বলে সবাই একটু বেশীই ভালোবাসে অফিসের। রাগ করে বলেই ফেললো

ওই মিয়াস ব্যাটা আমার নাম আহাদ পাহাদ না

বলেই খট করে কেটে দিলো। পিয়াসের খুব হাসি পেলো আহাদের সরলতা দেখে কিন্তু এই মুহূর্তে হাসলে চলবে না। হৃদান আর আহিল দুইজনেই ওর মতিগতি লক্ষ্য করছে। হৃদান ওর ব্যবহারের মানে ঠিক ধরতে পেরেছে তাই মুচকি মুচকি হাসছে। কিন্তু আহিল তো কিছু বুঝতে পারছে না তাই বেচারা চুপ করে আছে। অন্যদিকে আহাদ খুব রেগে আছে আজকে। তাই মনে মনে ফন্দী আটলো পিয়াসকে জব্দ করার।

আমাকে পাহাদ বলা এই আহাদ কে পাহাদ বলা। আমি কিছু বলি না বলে শুধু আমার পেছনে লাগা আজকে ব্যাটা মিয়াস কে যদি শিক্ষা না দিয়েছি আমার নাম পাহাদ এই না না আহাদ না হুমম

বিড়বিড় করতে করতে আহাদ নিজেই কিচেনের দিকে গেলো। এইদিকে পিয়াস মুখ গোমড়া করে আহিলের দিকে একবার তাকাচ্ছে আরেকবার হৃদানের দিকে তাকাচ্ছে। হৃদান এবার শব্দ করে হেসে দিলো। হৃদানের হাসির শব্দে আহিল চমকে উঠলো। সামনের মানুষ টা হাসছে মানে হৃদান চৌধুরী হাসছে সে বিশ্বাস ই করতে পারছে না। পিয়াস বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। এবার হৃদান হাসি থামিয়ে নড়েচড়ে বসলো

মি খান আপনি অরনির খোঁজে এসেছেন বুঝতে পারছি। সত্য কথা বলতে অরনি আপনাকে পছন্দ করে ভালোবাসে কিনা জানি না। হয়তো ভালোও বাসে। কারণ আজ পযর্ন্ত ওকে কোনো ছেলেকে নিয়ে এত ইনটারেস্ট হতে দেখি নি। ক্রাশ ও খেতে দেখিনি। কিন্তু আজ সকালে আপনার পিক দেখেই ক্রাশ খেয়েছে। আস্তে আস্তে ভালোবেসেও ফেলবে। এখন আপনার কি মতামত। আমি যেমন সোজাসাপ্টা কথা বলছি আপনিও কোনো ইতস্তত না করে বন্ধু ভেবে বলে ফেলুন

আসলে মোট কথা বলতে বাবা শুধু বলতো এই স্বার্থপর পৃথিবীতে নিজের জন্য নিজেকেই তৈরী করতে হবে। কেউ কারো জন্য না। ভালোবেসে তোমার জন্য কয়দিন করলে তারপর অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। তাই নিজেকে এমন ভাবে তৈরী করো যাতে কারো কাছে কখনো হাত পাততে না হয়। তাই নিজেকে সেই ভাবে তৈরী করতে পড়াশুনা নিয়ে এতই বিজি ছিলাম যে এসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভাবার সময় পাইনি। ভেবেছিলাম বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করবো। কিন্তু আজকে সকালে অরনিকে দেখে জানিনা কি হলো মনের মধ্যে অচেনা সেই অনুভূতিটা টের পেলাম। কত মেয়ে প্রপোজ করেছে। কত মেয়ের টানা টানা চোখে কত ছেলে হারিয়েছে কিন্তু আমার কোনো দিন কাউকে দেখে বা কারো টানা টানা চোখে দেখে হারাতে ইচ্ছে করেনি কিন্তু আজ সকালে অরনির সেই ছোট ছোট চোখেই নিজেকে ডুবিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। চলে আসার সময় মনে হচ্ছিলো কোনো দামী কিছু রেখে যাচ্ছি। এখন এগুলোকে যদি ভালোবাসা বলে আমি ভালোবাসি তাহলে অরনি। লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলতে পারেন

আহিলের কথা শুনে হৃদান পিয়াস যেমন অবাক হয়েছে তেমনি মুগ্ধ ও হয়েছে। ওদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। পরশ আর না বসে আহিল কে জড়িয়ে ধরলো। আহিল প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও পরে ভ্রু কুচকালো।

মি খান আপনি আমার কতবড় উপকার করেছেন আমি বলে বুঝাতে পারবো না।আমি আপনার উপর যতটা বিরক্ত ছিলাম এখন তার চেয়ে বেশী ভালো লাগছে। আপনি চিন্তা করবেন না অরনি আপনার -পিয়াস

মানে আপনাদের আচরণ গুলো কেমন যেন বুঝতে পারছি না -আহিল

আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলছি মি খান তার আগে বলে রাখছি আপনি পুরোটা শুনে তারপর বিচার করবেন -হৃদান

আচ্ছা বলুন আপনি -আহিল

আপনার যে বিয়ে ঠিক সেই বিষয়ে আপনার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন -হৃদান

না মানে আসলে অরনির কথাটা চিন্তা করতে করতে আর মনেই ছিলো না এই বিষয়ে। আর অরনি বললো দেখতে আসবে ওকে তাই চিন্তাই ছিলাম না পেরে আপনার কাছে আসলাম -আহিল

সত্যি কথা বলতে অরনিকে কেউ দেখতে আসবে না -হৃদান

হোয়াটটট ও যে বললো -আহিল

মিথ্যে বলেছে আপনাকে -হৃদান

কেন? কি এমন কারণে এই মিথ্যেটা বললো -আহিল

আসলে আপনার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে আপনার পাশের জনের গার্লফ্রেন্ড। আপনার বাবার বন্ধুর মেয়ে রোহানি। একটা অনুষ্ঠান রোহানিকে দেখে আপনার বাবার খুব পছন্দ হয় সেখান থেকে তিনবছর আগে আপনার বাবা রোহানির বাবাকে অনেক অনুরোধে রাজি করিয়ে আপনাদের বিয়ে ঠিক করে। এই বিষয়ে কেউ জানতো না। রোহানিও সেদিন শুনেছে। এখন কথা হচ্ছে পরশ আর রোহানি একে অপরকে চার বছর ধরে ভালোবাসে। রোহানির বাবা মনে করেছে রোহানির কোনো পছন্দ নেই আর তিনি কিছুতেই ওনার কথা ভাঙবেন না। তাই আমরা ছেলেমানুষি করেই একপ্রকার এই প্লেন টা করেছি। অরনি কে যে চারজন ছেলে সকালের ইভটিজিং করছিলো তারা আমার বন্ধু দুইজন সাগর সোহান আর রোহানির দুই বন্ধু আধির সাহিল। কিন্তু অরনির তোমাকে বলা কথা গুলো অভিনয় ভেবো না।

থেমে আহিলের দিকে তাকালো হৃদানের। আহিলের কোনো হেলদোল নেই। মুখের এক্সপ্রেশন দেখেও কিছু বোঝা যাচ্ছে না।হঠাৎ হৃদান পিয়াসকে অবাক করে দিয়ে আহিল হেসে উঠলো। হৃদান ওরা একটু হালকা হলো।

কি ভেবেছেন মি চৌধুরী আমি আপনার কাছে কোনো খোঁজ খবর না নিয়েই এসেছি -আহিল

মানে -পিয়াস

আসলে সকালেই আপনাদের উপর একটু সন্দেহ হয়েছিলো। আপনাদের আচরণ গুলো খুব ভাবাচ্ছিলো আমাকে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম মি সাগর মি সোহান আপনার বন্ধু। তখন একটু খটকা লাগলো তাই বাবা কে বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করায় বাবা মিস রোহানির কথা বলে। রোহানির খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মিস অরনির যে বোন সে রোহানির বন্ধু। তাই আমার কাছে অর্ধেক ক্লিয়ার হলো। আরো ক্লিয়ার করতে খোঁজ করতে লাগলাম। মি পিয়াস আর মিস রোহানির ব্যাপারটা জানতে পারলাম। তখন সবটা ক্লিয়ার হলো। তখন একটু রাগ হয়েছিলো পরে অরনির কথা মনে হওয়ায় সে রাগটা চলে গেছে। কারণ আপনারা এই প্লেন টা না করলে আমি অরনি কে পেতাম না। তবুও একটা ভয় ছিলো অরনির কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা। এটাও খোঁজ নিলাম। নাহ নেই। তখন ভাবলাম এখন ভালো না বাসলেও আমি ঠিক ভালোবাসাটা অর্জন করে নিবো। এখানে এসে জানতে পারলাম অরনিও আমাকে ভালোবাসে। আপনাদের উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। বরং খুশি।

তাহলে বিয়েটা ভাঙার ব্যবস্থা করতে হবে -পিয়াস

এখন রোহানি ওর বাবাকে বলবে ও পিয়াসকে ভালোবাসে আমি বলবো আমি অরনি কে ভালোবাসি। তাই দুপরিবার ই এক থাকবে। কেউ কারোর কথা খেলাপ হবে না -আহিল

হ্যাঁ তাই হবে। আজকেই গিয়ে কথা বলতে হবে -হৃদান

তখনি বাইরে নক করার শব্দ হলো।

মে আই কামিং স্যার -আহাদ

ইয়েস কাম -হৃদান

হাই পিয়াস তোমার জন্য আমি নিজের হাতে কফি বানিয়েছি নাও খাও -আহাদ

আহাদের এত ভালো ভালো কথা শুনে পিয়াস আর হৃদানের একটু খটকা লাগলো

কি ব্যাপার পাহাদ তুমি এত ভালো ব্যবহার করছো আমার সাথে ব্যাপার কি -পিয়াস

কি যে বলো না আমি আবার কবে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করি। আমি নিজে বানিয়েছি খাও না। খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে -আহাদ

পিয়াস আর কিছু ভাবলো না। আহাদ এমনিতেই সহজ সরল তাই ওত কিছু না ভেবে কফির মগটা হাতে নিলো। পিয়াসের হাতে কফির মগ দেখেই আহাদের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। হৃদান ঠিক খেয়াল করেছে ব্যাপার টা। অন্যদিকে আহাদ মনে মনে বলছে

খাও না খাও মিয়াস ব্যাটা আমার সাথে ফাযলামি করা।আজকে টের পাবে হুমম। এমন মরিচ আর লবন দিয়েছি না একবার শুধু মুখে দাও তখন বুঝবা এই আহাদ কি জিনিস। হাহাহাহা

এরপর যেই পিয়াস কফি টা মুখে দিয়েছে পিয়াসের মুখের এক্সপ্রেশন টা দেখে আহাদ এক দৌড়ে বাহিরে চলে গেছে আর হৃদান শব্দ করে হেসে দিলো। আহিল কিছু না বুঝে চুপ করে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে দেখলো মুখটি বাংলার পাঁচের মতো হয়ে আছে। এক চুমুক দেওয়ায় জ্বালটা ওতটা না পেলেও লবনের জন্য মুখটা তিতা হয়ে আছে।

মি পিয়াস কি হয়েছে -আহিল

পিয়াস কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেইড মিষ্টি নিয়ে আসলো। তাড়াতাড়ি একটা মিষ্টি মুখে পুরে নিলো। আহিল বুঝতে পারলো কফিতে গড়মিল আছে। হাসলো আহিল। মিষ্টি খাওয়ার পরে পিয়াস ও হাসলো ওর কান্ড দেখে। আর কিছু বললো না।

আচ্ছা মি চৌধুরী এখন আসি। দেখা হবে -আহিল

ওকে মি খান সি ইউ সোন -হৃদান

মি খান থ্যাংকস -পিয়াস

আই এম অলসো বাই -আহিল

আহিল চলে গেল। হৃদান আর পিয়াস কিছুক্ষণ শান্তিতে আড্ডা দিলো। তারপর দুইজন ই হৃদিতার দের বাড়ি যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পড়লো।
হৃদিতাদের বাড়ি আসতেই ড্রয়িং রমে তাকাতেই দুজনের চক্ষু চড়কগাছ…

চলবে….?

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২৬
Tahrim Muntahana

ড্রয়িং রুমে সোফার উপর দাড়িয়ে হৃদিতা রাইসা রোহানি রিয়া লুঙ্গি, শার্ট আর মাথায় গামছা পড়ে উরাধুরা ডান্স করছে। হৃদান আর পিয়াস এসব দেখে আর ভেতরে গেলো না। একটু পর পরশ আর নাশিন এসে উপস্থিত হলো ওরা দেখে কিছু বললো না দাড়িয়ে রইলো। হৃদান আসার সময় সাগর সোহান কেউ আসতে বলছে তারাও এসে গেছে। ওরাও অবাক হয়ে গেছে এসব দেখে। এইভাবে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে বাঁকা হেসে রুমের মধ্যে ঢুকে গেলো হৃদান। ওর দেখাদেখি সবাই। নাচের মাঝখানে ওদের দেখে ওরা নাচ বন্ধ করে দিলো। নিজেদের অবস্থা দেখে কারো লজ্জা পাওয়ার কোনো লক্ষণ ই দেখা গেলো না। তা দেখে হৃদান ওরা টাসকি খেলো। ওরা গিয়ে সোফায় বসলো। হৃদিতা গিয়ে নাশিনের টোনায় বসে পড়লো আর রিয়া পরশের টোনায়। হৃদিতা কিছুক্ষণ পর হৃদানের দিকে তাকালো

কি ভেবেছিলে হৃদরাজ তোমাদের দেখে এই অবস্থায় লজ্জা পাবো -হৃদিতা

আমি তো ভুলেই গেছি আমি কার সামনে দাড়িয়ে আসি -হৃদান

কই দাড়িয়ে আছিস আমি তো দেখছি তুই বসে আছিস -সাগর

আব্বে শালা তোরে তো -হৃদান

হাহাহা -সবাই

তোমরা সবাই একসাথে -রাইসা

হুমম দরকার আছে -হৃদান

কি হয়েছে হৃদ ভাইয়া -রোহানি

তোমাদের বাড়ি যাবো চলো -হৃদান

কেন ওদের বাড়ি যাবো কেন এখন -সোহান

সেখানে গেলেই জানতে পারবি চল -হৃদান

দাড়াও আমরা রেড়ি হয়ে আসছি -হৃদিতা

হৃদিতারা রেড়ি হতে যাবে তার আগেই সোহানকে রাহির সামনে বসতে দেখে দাড়িয়ে গেলো। রাহিও চমকে গেছে। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক করে সোহানের দিকে তাকালো

কিছু বলবেন মি সোহান -রাহি

রাহু তুমি আমাকে ভুল.. -সোহান

কি বলতে এসেছেন তাই বলুন -রাহি

রাহু বিশ্বাস করো তুমি আমাকে যার সাথে দেখেছিলে সে আমার ফুফাতো বোন। বায়না ধরেছে শপিং এ যাবে। আমাকে জোর করে নিয়ে গিয়েছিলো। আর তুমি যখন বললে তখন ভাবলাম যদি ভুল বুঝো আমাকে তাই আমি মিথ্যে বলেছি। প্লিজ ফরগিভ মি -সোহান

আশ্চর্য আপনি নিজেকে এত ইমপরটেন্ট ভাবছেন কেন আমার জিবনে। আর আপনি বোনের সাথে যান বা গার্লফ্রেন্ডের সাথে যান তাতে আমার কি বলুন তো। আর আপনিই বা আমাকে এসব এক্সপ্লেইন করছেন কেন -রাহি

রাহির কথা শুনে সোহানের বুকটা ধক করে উঠলো আর কিছু বললো না উঠে দাড়ালো। রাহিরও কষ্ট হয়েছিলো তখন।
সবাই কে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাহি ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকালো

তোরা দাড়িয়ে আছিস কেন যা রেড়ি হয়ে আয় যেতে হবে তো আমাদের -রাহি

ওরা চলে গেলো। আর কেউ কোনো কথা বললো না। হৃদিতিরা রেড়ি হয়ে আসতেই ওরা বেড়িয়ে পড়লো। বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় হেঁটেই গেলো। আজকে রোহানির বাবা অফিসে যায়নি। তাই আজকেই কথা বলা দরকার। কলিং বেল বাজতেই রোহানির বাড়ির কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিলো। একসাথে এতগুলা মানুষ দেখে হাকডাক শুরু করে দিলো

আম্মা গো দেহেন দেহেন কারা আইসে। হৃদিতা বুবু রাইসা বুবু রাহি বুবু পরশ ভাইজান নাশিন ভাইজান আরো কারা কারা আইসে তাড়াতাড়ি আহেন গো আম্মা

এই অতি তুই চীৎকার করছিস কেন। দে ভেতরে ঢুকতে দে -হৃদিতা

ওহহ হো আহেন আহেন বুবু

অতি যা নাস্তার ব্যবস্থা কর। আমি আম্মু আব্বুকে ডেকে নিয়ে আসছি -রোহানি

অতি চলে গেলো রান্না ঘরে। রোহানি তার বাবা মাকে ডেকে নিয়ে আসলো। তারা ঘরেই ছিলো। হৃদিতিরা আসছে শুনে তাড়াতাড়ি আসলো।

আরে মামুনিরা আজকে কি মনে করে বুড়ো বাবাটার কথা মনে পড়লো -রোহানির বাবা

তোমার উপর খুব রেগে আছি আমি -হৃদিতা

আমিও খুবববব রেগে আছি তোমার উপর। কথা বলবো না কেউ -রিয়া

শুধু ওরা না সবাই খুব রেগে আছি -রাইসা

এখন কি করলে আমার মায়েদের রাগ ভাঙবে। আর এই অধম সন্তান টা কি দোষ করেছে -রোহানির বাবা

আপনিই তো সব নষ্টের মূলে আছেন -পিয়াস

বিড়বিড় করে বলে উঠলো পিয়াস। সাথে সোহান আর নাশিন ছিলো ওরা ফিক করে হেসে উঠলো। তা দেখে রোহানির বাবা ভ্রু কুচকে তাকালো

হেই আস্তে যে হিটলার শশুড় আমার না জানি শোনার পর আমাকেই উড়িয়ে দেই -পিয়াস

কি হয়েছে। এত হাসাহাসি কেন -রোহানির বাবা

এই তুমি চুপ করো আচ্ছা তোরা হঠাৎ এইভাবে আসলি -রোহানির মা

বারে এখন তোমাদের বলেও আসতে হবে দেখছি -পরশ

আরে ছেলের কথা শুনছো আমি কি সেটা বলেছি। অনেক দিন ধরে তো আসিছ না তাই বললাম -রোহানির মা

তোমার মেয়ে কে দেখতে এসেছি বিয়ের জন্য -হৃদিতা

কিহহহ -রোহানির বাবা

আরে আস্তে আংকেল। এখনি এত গরম হচ্ছো কেন আমাদের কথা আগে শুনো -রাইসা

আংকেল আমি বলছি আপনি যে রোহানিকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেছেন সেটা আপনার একদম উচিত হয়নি। রোহানি আর পিয়াস একে অপরকে ভালোবাসে। এখন আপনি বলুন কি করবেন -হৃদান

আর যা ডিশিসন নিবে আংকেল ভেবে নিবে -নাশিন

ওদের কথা শুনে রোহানির বাবার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো। রোহানির বেশ ভয় করছে। রোহানির বাবা কিছুক্ষণ ভেবে থমথমে মুখে রোহানি কে ডাকলো। এরকম আওয়াজ শুনে রোহানি চমকে উঠলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে উত্তর দিলো

জি আব্বু -রোহানি

ওরা যা বলছে তা ঠিক -রোহানির আব্বু

ভুল বললে আমি নিশ্চয় প্রতিবাদ করতাম -রোহানি

মানে তুমি বিয়েটা করছো না -রোহানির আব্বু

তো তুমি কি বলতে চাইছো একজন কে ভালোবেসে আরেকজন কে বিয়ে করে সংসার করবো যেখানে না আমি নিজে কোনো দিন সুখি হতে পারবো, না অন্যকে সুখি করতে পারবো -রোহানি

তা সে কে? কি তার পরিচয়? কি করে? -রোহানির আব্বু

ছেলের নাম পিয়াস আনাফ। বাবা কাওসার আনাফ মা পিয়ালি শেখ। নিজ ব্যবসায় আছে। আলহামদুলিল্লাহ ব্যবসায়টা অনেক ভালো চলে। আর বাবা আর ছেলের যে টাকা আছে আপনার মেয়ে কোনো পরবর্তী অনেক প্রজন্ম বসে খেতে পারবে-পিয়াস

তুমি বলছো কেন -রোহানির আম্মু

কারণ শাশুড়ি আম্মু ছেলেটা আমিই। তাই নিজের পরিচয় নিজেই দিলাম -পিয়াস

এখন যদি আমার মেয়ের বিয়ে তোমার সাথে না দেই তাহলে কি করবে -রোহানির আব্বু

বেশী কিছু করবো না শশুড় আব্বু প্রথমে আপনার মেয়ের হাত টা ধরবো, তারপর কিছুক্ষণ হাঁটবো যখন দেখবো আপনি একেবারেই মেনে নিচ্ছেন না তখন আর কি করার দিবো দৌড়। দুজন যাবো ছয় সাত জন হয়ে ফিরবো তখন আপনি এমনিই মেনে নিবেন -পিয়াস

পিয়াসের কথা শুনে রোহানি আর ওর আব্বু চোখ বড় বড় করে তাকালো কি বলে এই ছেলে । আর সবাই বেশ মজা নিচ্ছে। রোহানি তো বিড়বিড় করে গালিও দিয়ে ফেলছে অনেক গুলো। রোহানির আব্বু থম মেরে বসে থেকে উঠে চলে গেলো। রোহানির আম্মু তো খুব খুশি। উনি পিয়াসের কাছে এগিয়ে গেলেন

আমার মেয়েকে ভালো রাখবে তো বাবা -রোহানির আম্মু

কিযে বলেন না শাশুড়ি আম্মু আপনার মেয়ে ভালো না থাকলে তো আমিও ভালো থাকবো না আর আমার হিটলার শশুড় আব্বু তো আছেই যদি শুনে ওনার মেয়ে ভালো নেই তাহলে আমাকে আর আস্ত রাখবে না হাহাহা -পিয়াস

হাহাহা পাজি ছেলে -রোহানির আম্মু

এতক্ষণ এসব কথা রোহানির আব্বু আড়াল থেকে শুনছিলো। আর রেগে ফেটে পড়ছিলো। ঘর থেকে বের হয়ে একপলক ওদের দিকে তাকিয়ে হনহন করে বাইরে চলে গেলো। ওরাও হেসে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। এখন যাবে আহিল খানের বাড়ি। আজকেই এই ব্যাপারটা ডিসমিস করে তারপর খান্ত হবে। আহিল খানের বাড়ি আসতেই দেখলো আহিল বাইরে দাড়িয়ে আছে। ওরা কুশল বিনিময় করে ভেতরে গেলো। বাড়িতে আগেই বলে রেখেছিলো ওর কিছু গেস্ট আসবে আর আজকে আহিলের খালার পরিবার এসেছে তাই আগেই ব্যবস্থা করে রেখেছে আহিলের মা। ওরা গিয়ে সোফায় বসলো। এখানে রোহানি আসে নি। রোহানি আসলে ব্যাপারটা অন্যরকম লাগে। আহিল গিয়ে ওর বাবা চাচা মা চাচী আর বড় ভাই ভাবী কে ডেকে আনলো। জয়েন ফ্যামেলী। আহিলের বড় ভাবী তো বাস্কেট বল খেলোয়াড় দেখে খুশি তে গদগদ হয়ে কথা বলতে শুরু করলো। হৃদান চৌধুরী কে নিজেদের বাড়িতে দেখে আহিলের বাবা চাচা ভাই তো টাসকি খাইছে। কেমনে কি ভাই। হৃদানের এসব ভালো লাগে না। আরে ও এতবড় বিজনেস ম্যান হইছে বলে কি আকাশে উড়তে হবে।

বাবা চাচা উনাকে তো চিনই হৃদান চৌধুরী । ওরা আমার নতুন ফ্রেন্ড -আহিল

আই সি কেমন আছো তোমরা -আহিলের বাবা

সবাই একে একে পরিচিত হয়ে নিলো। তার হালকা নাস্তা দিলো কিন্তু ওরা কেউ খেলো না। মনের মধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে কিভাবে কি শুরু করবে তারমধ্যেই

বাবা মা তোমরা চিনতে পারছো না ওদের ও হৃদিতা রাইসা রাহি রিয়া ওরা বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন। আমি তো ভাবতেই পারছি না ওরা আমার সামনে -আহিলের ভাবী

আমরা তেমন কোনো সেলিব্রেটি নয় যে আমাদের দেখলে এমন করতে হবে মিসেস খান -হৃদিতা

আমরা যে কারণে এসেছি সেই দিকেই এগোয় -সাগর

হুমম বলুন -আহিলের চাচা

আহিলের বিয়ে ঠিক করেছেন আপনার বন্ধুর মেয়ের সাথে মি খান -হৃদান

হুমম আপনি জানলেন কেমন করে মি চৌধুরী -আহিলের বাবা

মি খান আমি আপনার থেকে ছোট তাই তুমি আর নাম ধরে ডাকলেই খুশি হবো। আমি বড় বিজনেস ম্যান হয়েছি বলে নিজের মনুষত্য ভুলি নি তাই প্লিজ কল মি -হৃদান

হৃদানের ব্যবহার দেখে সবাই মুগ্ধ হলো। কে বলবে এই রাগি গম্ভীর মানুষ টা এইভাবে কথা বলতে পারে। এত উচু মানের ভাবতে পারে। হৃদিতাও মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দেখলো। হৃদান দুষ্ট হেসে দুই ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। হৃদিতা মুচকি হেসে অন্যদিকে তাকালো।

আচ্ছা আচ্ছা তাই ডাকবো এখন বলো -আহিলের চাচা

আমরা আপনার ছেলের মানে আহিলের বিয়ের কথা বলতে এসেছি -পরশ

আমার ছেলের বিয়ে তো ঠিক হয়ে আছে -আহিলের আম্মু

কিন্তু ওই বিয়ে হচ্ছে না কারণ মেয়ে রাজী না বিয়েতে আর আপনার ছেলেও -রাইসা

তোমাদের কে বললো এসব -আহিলের বাবা

মেয়ের কথা বললে বলবো আপনি যে মেয়ের সাথে আপনার ছেলের বিয়ে ঠিক করেছেন সে আমাদের কলিজার বান্ধুবী। আর ওই যে হৃদরাজের পাশে বসে আছে পিয়াস আমার মামাতো ভাই। আর পরশ চৌধুরী আর নাশিন চৌধুরী কে তো চিনেনই আমার ভাইয়া। কথা হচ্ছে আমার মামাতো ভাই পিয়াস আর রোহানি একে অপরকে ভালোবাসে। সেই চারবছর ধরে। যেখানে আপনি বিয়ে ঠিক করেছেন তিন বছর আগে। তাই এই বিয়ে বন্ধ করুন -হৃদিতা

আর এই ব্যাপার টা আমরা আংকেল মানে রোহানির আব্বুকে জানিয়েছি। কিছু বললো তার মুখ দেখে মনে হলো মেনে নিবে শুধু আপনাকে কথা দিয়েছে বলে চুপ করে আছে -রিয়া

আর আপনার ছেলে আহিল একজন কে ভালোবাসে জানেন আপনারা -পরশ

পরশের কথা শুনে আহিলের পরিবারের সবাই বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। ওরা বিশ্বাস ই করতে পারছে না।

কি বলো তাই নাকি দেবরজি তলে তলে এত দূর -আহিলের ভাবী

আহ তুমি চুপ করে শেলী আমাকে কথা বলতে দাও। আহিল ওরা যা বলছে সত্য? -আহিলের ভাই

জি ভাইয়া আমি একজন কে ভালোবাসি। এমনকি তার সাথে আমার আজকেই দেখা। কিন্তু ওকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করতে পারবো না -আহিল

আর আংকেল যেহেতু মেয়ে ছেলে কেউ রাজী নয় সেহেতু আপনাদের না আগানোই ভালো হবে -রাহি

এখন আপনি যদি জেদ ধরে বসে থাকেন তাহলে কেউ সুখি হতে পারবে না একজন কে ভালোবেসে অন্য জনের সাথে সুখে সংসার করা যায় না -নাশিন

তাহলে দেখবেন ওরা নিজেরা কখনো সুখি হতে পারবে না, না আপনারা ভালো থাকবেন -সোহান

মেয়েটা কে আহিল -আহিলের আব্বু

আব্বু ওর নাম অরনি রহমান। বাবা আকাশ রহমান। তুমি যদি সোসাইটির কথা বলো তাহলে আগে বলবো আমার কাছে সোসাইটি প্রাধান্য পায় না তারপর বলবো ওরা আমাদের মতোই হাই সোসাইটি -আহিল

মেয়েটা গরিব হলেও আমার কিছু যায় আসেনা আহিল তুমি সেটা জানোই। কিন্তু মেয়ে ভালো হতে হবে -আহিলের বাবা

রান্না বান্নার কথা যদি বলো না জানলেও চলবে আমি আমার বউমাকে শিখিয়ে নিবো কিন্তু আমার কথা হলো চারিত্রিক গুনাবলি আর ব্যবহার ভালো হতে হবে -আহিলের আম্মু

চিন্তা করার কিছু নেই আন্টি অরনি বিদেশে বড় হলেও বাঙালিদের মতো আচার আচরণ ওর। রান্নাও পারে কিছুটা। আর চারিত্রিক দিক দিয়ে খুব ভালো। আমরা কিছু ছেলে বেস্টফ্রেন্ড ছাড়া কোনো ছেলের সাথে চলাফেরা নেই। ডিস্কেও যায় না। চরিত্রে কোনো গাপলা নেই আর ব্যবহারো অমায়িক -পিয়াস

এখন আপনারা বলতে পারেন যে আমাদের বন্ধু ভেবে আমরা বেশি বেশি বলছি। না বেশি বলছি না আমরা। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। আর আহিলের খোঁজ নেওয়া শেষ -হৃদান

বুঝলাম আমার রোহানির আব্বুর সাথে কথা বলতে হবে -আহিলের বাবা

বাবা চাচা ভাইয়া তোমরা কি রাগ করেছো -আহিল

আরে পাগল ছেলে বলে কি? আমরা রাগ করবো কেন ভাই। তুই যাকে নিয়ে সুখে থাকবি আমরা তাকেই মেনে নিবো। আমাদের কাছে তোর সুখ টাই বড় -আহিলের ভাই

হ্যাঁ ভাইয়া আমি সবসময় বোকা বোকা কথা বলি বলে ভেবোনা আমি ওতটা বোকা। আর আমরা তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমরা চাই তুমি সবসময় ভালো থাকো। আর আমার তো কোনো ভাই নেই তোমাকেই ভাই মানি তাই আমার ভাই যেটাতে খুশি সেটাতে আমরাও খুশি -আহিলের ভাবি শেলী

ওহ হাউ সুইট ভাবী। লাভ ইউ -আহিল

তাহলে এখনতো রোহানির আব্বুর সাথে কথা বলতে হবে -আহিলের চাচা

এখনি ফোন করেন -রাহি

এখন? -আহিলের ভাই

হুমম দেখি আমার হিটলার শশুড় মশাই কি বলে -পিয়াস

হাহাহা আচ্ছা করি -আহিলের আব্বু

আহিলের বাবা রোহানির আব্বু কে ফোন দিলো। অন্যদিকে রোহানির আব্বু অনেকক্ষণ ধরে আহিলের বাবাকে ফোন দিবে দিবে করে দিচ্ছে না। যদি রিয়েক্ট করে তার জন্য । অনেকক্ষণ ভেবে যখনি ফোন দিতে যাবে তখনি ফোনটা বেজে উঠলো। স্কিনে নামটা দেখে বিষ্ময়ে মুখ হা হয়ে গেলো।

চলবে…?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে