তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-৯+১০

0
175

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৯
#মেহরিন_রিম
সকাল থেকে স্কুলে এসে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে ইশা। অধিকাংশ স্টুডেন্টস স্কুল ড্রেস এ এলেও ইশা আর বাকি কয়েকজন পারফর্ম করবে বলে সিভিল ড্রেস এই এসেছে। স্কুলে আসার পর থেকে নিরব এর খোজ করে চলেছে ইশা,তবে তার দেখা এখনো পাওয়া যায়নি। মোহনা স্কুল ড্রেস এ এলেও তার মেকআপ দেখে যে কেউ মনে করবে সে যেকোনো পার্টিতে এসেছে।

অনেকক্ষণ খোজ করার পর নিরব এর দেখা পেলো ইশা। ফোনের দিকে তাকিয়ে গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকলো সে। নিরব কে আসতে দেখে ইশা ছুটে যায় তার কাছে। তারপর খানিকটা রাগী সুরে বলে,
_আর আসার কি দরকার ছিল? একেবারে এসে স্টেজ এ উঠতে তাহলেই তো হতো।

নিরব ফোনের দিকে তাকিয়েই হাটতে হাটতে বললো,
_আমার ঘুম অনেক ইম্পর্টেন্ট বুঝলি।

ইশা নিরবের পাশে হাটতে হাটতে বললো,
_ফোন থেকে একটু চোখটা সরাও তো। এভাবে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলে তোমার চোখে সমস্যা হবে। আর চোখে সমস্যা হলে তোমার চোখে পাওয়ার চলে আসবে, তারপর তোমাকে চশমা পড়তে হবে। আর চশমা পড়লে মানুষ তোমাকে কানা বলে ক্ষ্যাপাবে। তারপর…

_হ্যা হ্যা বুঝেছি বুঝেছি,আর বলতে হবেনা।

_হ্যা তো বুঝে থাকলে ফোনটা রেখে প্রাকটিস করতে চলো।

_আরে বাবা এখন আবার প্রাকটিস করার কি দরকার?

_এখন একবার রিহার্সাল না করছে যখন স্টেজ এ উঠে গান গাইতে নেবো তখন মাঝখানে আটকে যাবো। তুমি একলাইন গাইবে আর আমি ভুল করে অন্য লাইন গেয়ে ফেললে…

_আর বলতে হবেনা, চল…

____
_তুই আবার ফেয়ারওয়েল প্রোগ্রাম এ কবে থেকে গান গাওয়া শুরু করলি?

আদৃত একটা জলপাই রঙের পাঞ্জাবী পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছিল। পূর্নর প্রশ্নে বিরক্তির সুরে বলে ওঠে,
_আমাদের কলেজ এরই প্রোগ্রাম। জয়নাল স্যার এর মুখের উপর আমি আর আপত্তি জানাতে পারিনি বুঝলি।

_হুম বুঝলাম।

আদৃত চিরুনিটা ড্রেসিং টেবিল এ রেখে পূর্নর দিকে তাকিয়ে বলল,
_বাই দা ওয়ে, তুই যাচ্ছিস তো আমাদের সাথে?

_যদিও একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ ছিল আমার। বাট অনেকদিন হলো কলেজ এ যাওয়া হয়না।

_আমরা কি প্রোগ্রাম শেষ হওয়া পর্যন্ত বসে থাকবো নাকি? কিছুক্ষন থেকেই চলে আসবো।

_ঠিক আছে,তাহলে আমিও যাচ্ছি। আর সায়ান?

আদৃত হাতে ঘড়ি পরতে পরতে বললো,
_ও তো বললো বাসা থেকেই চলে যাবে। দেখ গিয়ে এতক্ষনে হয়তো চলেও গেছে।

___
এতদিন ধরে কান্নার প্রাকটিস করলেও আজ মোহনার একটুও কাঁদতে ইচ্ছে করছেনা। এত সুন্দর করে সাজলো, যদি কেঁদেকেটে সব মেকআপ নষ্টই করে ফেলে তাহলে আর লাভ কি হলো সাজার।
ক্যামেরাম্যানকে সাথে নিয়েই পুরো মাঠে ঘুরে বেরাচ্ছে মোহনা। কখনো গাছের সাথে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে আবার কখনো স্টেজ এর আসেপাশে গিয়ে ছবি তুলছে।

_আপু আপনি এখন পর্যন্ত কম করে হলেও ১০০ টা ছবি তুলেছেন। এবার অন্তত অন্যদের ছবি তুলতে দিন।

_আরে ভাইয়া আপনি তুলুন তো ছবি। বাকিদের টা অন্য কেউ তুলে নেবে। অন্তত ৫০০ ছবি তো তুলতেই হবে। এর মধ্য থেকে ৫০ টা ছবি যদি আমার পছন্দ হয় তাহলে সেগুলো আগামী ৫ মাস যাবৎ একটা দুটো করে আপলোড দিতে হবে,আবার স্টোরি ও দিতে হবে। আপনি তুলুন তো।

কথাটা বলেই আরো বিভিন্ন পোজে ছবি তুলতে লাগলো মোহনা। সায়ান মাত্রই পিঠে গিটার ঝুলিয়ে চোখে সানগ্লাস দিয়ে খানিকটা হিরো হিরো ভাব নিয়ে প্রবেশ করলো কলেজে। আজকে অন্তত একটা মেয়েকে তো ইম্প্রেস করতেই হবে তার।
দূর থেকে মোহনাকে দেখতে পেয়েই সায়ানের সেদিনের ঘটনা মনে পড়ে যায়। মনে মনে ভাবে,
_এই মেয়ের জন্য আমাকে পুরো দুদিন কোমড় ব্যাথায় ভুগতে হয়েছে। এত সহজে তো ওকে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয়।
সায়ান মোহনাকে বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে তার পাশে গিয়ে দাড়ালো। তারপর ফোন্টা কানে ধরে জোড়ে জোড়ে বলল,
_বুঝলি আদি,আমি বোধহয় ভুল যায়গায় চলে এসেছি। কলেজ এ আসার বদলে কোনো পার্টিতে চলে এসেছি মনে হচ্ছে। কেন? আরে আমার আশেপাশে কিছু মানুষ মুখের উপর প্রায় কয়েকশো স্তুপ ময়দা মেখে এসেছে। হ্যা হ্যা জোকারের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

মোহনা সেলফি তোলা বাদ দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো সায়ান এর দিকে। এসব কথা শুনে বেশ ভালোই বুঝতে পারলো যেয়ে সায়ান তাকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলছে।
মোহনা মুখ ফুলিয়ে সায়ান এর সামনে তুড়ি বাজালো। সায়ান তবুও না দেখার ভান করে আপন মনে কথা বলতে লাগলো। মোহনা আবারো তুড়ি বাজিয়ে বলল,
_এইযে, হ্যালো..

সায়ান মোহনার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বোঝালো,
“আমাকে বলছো?”

_হ্যা হ্যা আপনাকেই বলছি।

_আচ্ছা আদি কোন এক জোকার আমাকে ডাকছে বুঝলি, আমি একটু পড়ে কল করছি তোকে।

_এই এই আপনি জোকার কাকে বললেন হ্যা?

সায়ান গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,
_যাকে বলেছি সে ঠিকই বুঝেছে।

_সাহস তো কম নয় আপনার। কতক্ষন ধরে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কিসব কথা বলে চলেছেন। সমস্যা কি আপনার?

_আমার আবার কি সমস্যা হবে? আমি তো যা দেখেছি তাই বলেছি।

_মানে টা কি? আপনি আমাকে জোকার বলছেন?

_শুধু জোকার নয় সঙ্গে পাগল ও মনে হচ্ছে। নাহলে স্কুলে কেউ এভাবে ময়দা মেখে আসেনা।

_আপনি নিজে একটা পাগল,শুধু পাগল নয় মস্ত বড় পাগল।

কথাটা বলেই মোহনা রেগে হনহন করে চলে গেলো সেখান থেকে। মোহনাকে এমন রাগতে দেখে পিছনে দাঁড়িয়ে হাসতে লাগলো সায়ান। মোহনাকে বিরক্ত করতে পেরে বেশ মজাই লাগছে তার।

___
গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে ফাইজার জন্য অপেক্ষা করছে ইশা। নিজে তাড়াতাড়ি চলে আসায় সাজগোজ কিছুই করেনি সে। নিজের সাজ তার খুব বেশি পছন্দ হয়না,তাই ফাইজাকেই বলেছে সাজিয়ে দিতে।

_সরি সরি,একটু দেড়ি হয়ে গেলো।
ইশার সামনে এসে কথাটা বলল ফাইজা। ইশা বেশ তড়িঘড়ি করে বলল,
_একটু না অনেক দেড়ি করেছো। একটু পড়েই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। এখন জলদি চলো আমাকে সাজিয়ে দেবে।

_হ্যা হ্যা চল।

বাইকের হর্ন এর আওয়াজে পিছনে ফিরে তাকালো ইশা। আদৃত নিজের বাইক নিয়েই এসেছে। পূর্নর একটা ইমার্জেন্সি কল আসায় ও বাইরে দাঁড়িয়েই পিছনে ফিরে ফোনে কথা বলছে।
বাইক থেকে নেমে নিজের হেলমেটটা খুললো আদৃত। আদৃত কে দেখেই খানিকটা ভয় পেলো ইশা,ফাইজা এতক্ষনে কিছুটা দূরেও চলে গেছে। ইশাও সেদিকে যেতে নিবে তখন ই পিছন থেকে আদৃত তাকে আদৃতের ডাকে থেকে যায় সে। আদৃত তার পিছনে এসে বলে,
_এই মেয়ে আমি তোমাকে দাঁড়াতে বললাম না,তারপর ও..

_কিরে ইশা থেমে গেলি কেন চল…
পিছন থেকে ফাইজা এসে ইশার হাত ধরে বলল কথাটা। আদৃত এর এবার চোখ পড়ে ফাইজার উপর, তাকে চিনতে খুব বেশি সময় লাগেনি আদৃত এর। অস্ফূটস্বরে তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,
_ফাইজা!

ঠিক সেই মুহূর্তেই পূর্নও সেখানে উপস্থিত হয়। ফাইজার দিকে না তাকিয়েই বলে,
_হ্যা আদি চল এবার..
কথাটা বলতেই তার নজর যায় ফাইজার দিকে।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১০
#মেহরিন_রিম
একদৃষ্টিতে পূর্নর দিকে তাকিয়ে আছে ফাইজা। এতগুলো দিন পড়ে যে আবারো পূর্নর সাথে দেখা হয়ে যাবে এটা কখনো ভাবতেও পারেনি সে, আগে জানলে হয়তো এখানে আসতোই না। সবকিছু থেকে তো দূড়ে সরে গিয়েছিল ফাইজা, ভুলতে না পারলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে পূর্নকে ভুলে থাকার।

চোখে অশ্রুরা এসে ভিড় জমাতে লাগলো,তবে ফাইজা সেটা কাউকে বুঝতে দিতে চাইলো না। অন্যদিকে ঘুড়ে কাপাকাপা গলায় বলল,
_ই ইশা তুই আয়,আমি যাচ্ছি।

কথাটা বলেই সেখান থেকে পালিয়ে গেলো ফাইজা। এমন আকষ্মিক ঘটনার ঘটনার জন্য পূর্নও প্রস্তুত ছিলোনা। এখানে আসার জন্য মনে মনে নিজেকেই দুষতে লাগলো সে, তবে পূর্নই বা কি করে জানবে এখানে ফাইজার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।

পূর্ন একনজর আদৃতের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে নেবে তখন ই সেখানে সায়ান উপস্থিত হয়। আদৃত আর পূর্নকে দেখে বলে,
_তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখানে? ভিতরে চল।

আদৃত ইশার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_হ হ্যা আসছি আমি,তোরা যা।

_আচ্ছা আয়, পূর্ন তুইতো চল।

পূর্ন আমতা আমতা করে বলল,
_না আসলে আমার কিছু কাজ…

_কাজ পড়ে করবি এখন চলতো।

কথাটা বলেই পূর্নকে নিয়ে ভিতরে চলে যায় সায়ান।

_ডাকলেন কেন আমাকে? কিছু বলবেন? দেখুন আমার অনেক কাজ আছে যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।

ইশার ডাকে ধ্যান ভাঙলো আদৃত এর। আসলে যে কেন ইশাকে ডেকেছিল তা সে নিজেই জানে না। আদৃত কে চুপ থাকতে দেখে ইশা বিরক্ত হয়ে বলল,
_কিছু না বলার হলে আমি গেলাম।

কথাটা বলেই সেখান থেকে চলে যেতে নেয় ইশা। আদৃত তখনি পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,
_এই মেয়ে দাড়াও..

ইশা কোমড়ে হাত দিয়ে পিছনে তাকিয়ে বিরক্তির সুরে বললো,
_আবার কি হলো? আর শুনুন,আমার একটা সুইট নাম আছে।

_আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু একটা কথা বলতো, একটু আগে যেই মেয়েটা তোমার সাথে ছিল ও তোমার কি হয়?

_ওহ ফাইজা আপু? আমার চাচাতো বোন হয়। কিন্তু আপনি জিজ্ঞেস করছেন কেন?

আদৃত কিছুটা আমতা আমতা করে বলে,
_তেমন কিছুনা, আচ্ছা তুই যাও।

ইশা ভেংচি কেটে চলে গেলো সেখান থেকে। ফাইজা আদৃত কে না চিনলেও আদৃত ফাইজা কে খুব ভালো করেই চেনে। এভাবে হুট করে ফাইজা কে দেখে আদৃত নিজেও বেশ অবাক হয়েছে।

_আদৃত,তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? অনুষ্ঠান একটু পড়েই শুরু হয়ে যাবে,তুমি ভিতরে চলো।

স্যার এর ডাকে নিজের চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসে আদৃত। সামান্য হেসে স্যার এর সাথে ভিতরে যায় সে। মনে মনে ভাবে,
_প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার আগে পূর্নর সাথে একবার কথা বলতেই হবে।

____
_আপু,কিছু হয়েছে? তুমি এভাবে চলে এলে যে।

ইশার ডাকে চমকে ওঠে ফাইজা। হাত দিয়ে চোখ মুছে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে সে। ইশার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে,
_আরে না,আমার আবার কি হবে।

_কিন্তু তোমার চোখমুখ এমন লাগছে কেন? কেমন লাল হয়ে আছে চোখদুটো।

_কোথায়? আমিতো ঠিক ই আছি। তুইতো জানিস ই আমার কেমন এলার্জির প্রবলেন,তাই হয়তো এমন লাগছে। বাদ দে এসব,তোর না দেড়ি হয়ে যাচ্ছে? আয় তোকে সাজিয়ে দেই।

ফাইজা কথাবার্তা অন্যরকম মনে হলেও ইশা তার কথাই বিশ্বাস করে নিলো। এমনিতেও অনেক দেড়ি হয়ে গেছে, তাই ভদ্র মেয়ের মতো বসে পড়লো ইশা। আর ফাইজাও নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে ইশাকে সাজিয়ে দিতে লাগলো।

___
_এমন কাজ করলি কেন যার জন্য এখন পালিয়ে যেতে হচ্ছে?

স্টেজ এর পাশে এসে টিচার দের সাথে দেখা করেই কলেজ থেকে বেরিয়ে যেতে নিয়েছিল পূর্ন। ঠিক সেই মুহূর্তেই আদৃত তাকে আটকে দিয়ে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেয় তার দিকে। পূর্ন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
_আমি পালিয়ে যাচ্ছিনা আদি। আমি শুধু একটা অস্বস্তিকর সিচুয়েশন এ পড়তে চাইছিনা। ফাইজার সামনে আসাটা আমার এবং ওর দুজনের জন্যই অস্বস্তিজনক। আর আমি কি করেছি আর কেন করেছি সবটা তুই খুব ভালো করেই জানিস। তারপর ও…

_হ্যা আমি জানি,কিন্তু এই বিষয়ে আমি কখনই তোকে সাপোর্ট করিনি আর করবো ও না। যেই ব্যাবহার টা তুই ফাইজার সাথে করেছিস,এটা ও কোনোভাবেই ডিজার্ভ করেনা।

_দেখ আদি, যা হয়ে গেছে সবটাই পাস্ট। ওর লাইফ ও এতদিনে অনেকটা বদলে গেছে নিশ্চই।

_বাট আই থিংক, তোর ওকে অন্তত একবার সরি বলা উচিৎ।

_আদি তুই কি দাঁড়িয়েই থাকবি নাকি স্টেজ এও যাবি? সবাই ওয়েট করছে তোর জন্য।

পূর্ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়ান এসে পড়ায় আর কিছু বলতে পারেনা সে। আদৃত যেতে যেতে আরো একবার পূর্নর কাছে এসে বলে,
_ইটস মাই ওপিনিয়ন, বাকিটা তোর ইচ্ছে।

পূর্ণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো আদৃত এর কথাগুলো। আদৃত ভুল কথা বলেনি, ফাইজার সাথে করা ব্যাবহারের জন্য পূর্ন নিজেও অনুতপ্ত। তবে এছাড়া যে ফাইজার থেকে দূড়ে সরে যাওয়ার আর কোনো উপায় ছিলোনা তার কাছে। সত্যি ই একবার সরি বলা উচিৎ?

____
_ভারি মিষ্টি লাগছে আমার বোনটাকে,কারোর নজর না লাগে যেন।

ইশার সামনে নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে কথাটা বলল ফাইজা। ইশা কিছু বলবে তখন ই আরেকজন মেয়ে এসে বলে,
_আর কতক্ষন লাগবে তোর ইশা?

_এইতো এক্ষুনি আসছি তুই যা।
ইশা তাড়াতাড়ি যেতে নেবে তখন ই ফাইজা বলে ওঠে,
_শোন ইশা,আমার না শরীরটা ভালো লাগছে না। আমি বরং বাসায় চলে যাই,তুই প্রোগ্রাম শেষ করে আসিস।

_ওমা এ কেমন কথা,আমি পারফর্ম করবো আর তুমি বলছো আগেই চলে যাবে! একদম না।

ফাইজা বুঝতে পারলো ইশাকে বলে কোনো লাভ নেই। তাই বাধ্য হয়ে মুচকি হেসে বলল,
_আচ্ছা ঠিক আছে। তোর না দেড়ি হয়ে যাচ্ছে, তুই যা জলদি। আমি আসছি।

_ওকে..
কথাটা বলেই স্টেজ এর পিছনের দিকে যেতে লাগলো ইশা। ফাইজা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখেমুখে পানি দেওয়ার জন্য ওয়াশরুম এর দিকে চলে গেলো।

____
গান গাওয়া শেষে স্টেজ থেকে নামার পড়েই অনেকজন মিলে ঘিরে ধরেছিল আদৃত কে। বহু কষ্টে তাদের মাঝ থেকে বেড়িয়েছে আদৃত।
এখানে থাকার আর কোনো ইচ্ছেও নেই আদৃত এর। তাই বড়বড় পা ফেলে চলে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো আদৃত। তবে হঠাৎ করেই পা দুটো থেমে গেলো আদৃতের। কানে বাজতে লাগলো মেয়ের কণ্ঠে গান,

“আমার চোখে তো সকলই শোভন
সকলই নবীন, সকলই বিমল
আমার চোখে তো সকলই শোভন
সকলই নবীন, সকলই বিমল
সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন
বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল
সকলই আমার মতো

তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়
হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়
কেবলই হাসে, কেবলই গায়
হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়
না জানে বেদন, না জানে রোদন
না জানে সাধের যাতনা যত”

এতক্ষনে সেই কণ্ঠের খোজ করতে স্টেজ এর সামনে চলে এসেছে আদৃত। তবে সেখানে ইশাকে গান গাইতে দেখে আরো বেশি অবাক হয় সে।

_আরে আদৃত তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো এখানে।

নিজের অজান্তেই চেয়ারে বসলো আদৃত। এই কণ্ঠ যেন তাকে আটকে রাখছে। কেন হচ্ছে এমন? নিজেকে প্রশ্ন করতে চাইলো আদৃত, তবে আপাতত সেই উত্তর খুজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লোনা । একদৃষ্টিতে ইশার কাজল কলো চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো সে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে