তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-৪৪ এবং শেষ পর্ব

0
258

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৪৪ (শেষ পর্ব)
#মেহরিন_রিম
মাথায় হাত দিয়ে হতাশ ভঙ্গিতে বসে আছে সায়ান। তার আশেপাশে বসে আছে পূর্ণ, ফাইজা,মোহনা। মাঝখানে টি টেবিল এর উপর বসে খেলছে প্রজ্জল। মোহনা আর ফাইজা টাকা গোনায় ব্যাস্ত, পূর্ণ সায়ান কে এমন চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বলে ওঠে,
_এমন প্যাঁচার মতো মুখ করে বসে আছিস কেন তুই?

সায়ান মাথা থেকে হাত নামিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
_তাহলে কি নাচবো আমি? শা*লা সবার আগে প্রেম করলাম আমি কিন্তু বিয়ে করে নিলি তোরা। আমি আর কতকাল নিঃসঙ্গ জীবন পার করবো?

ফাইজা হাসতে হাসতে বলে,
_তা তুমি বিয়ে করে নিচ্ছোনা কেন ভাইয়া? মেয়েতো তোমার সামনেই বসে আছে।

_মেয়েতো সমস্যা না,সমস্যা তো মেয়ের বাপ।

মোহনা রেগে গিয়ে বলে,
_আমার বাবাকে নিয়ে একদম বাজে কথা বলবেন না।

_তাহলে কি বলবো আর? উনি মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছেনা কেন! আরে ওনার কি ইচ্ছে করেনা নাতি নাতনির নানা হতে!

মোহনা কড়া চোখে তাকায় সায়ান এর দিকে। তারপর ফাইজার দিকে টাকাগুলো দিয়ে বলে,
_এখানে দশহাজার আছে।

ফাইজা টাকাটা নিয়ে বাকি টাকাগুলো একসাথে নিয়ে বলে,
_মোট হলো ত্রিশহাজার। এবার প্ল্যান করতে হবে এগুলো দিয়ে আমরা কি কি করবো.. আগেই বলে রাখি, আমার ছেলেকেও কিন্তু ভাগ দিতে হবে।

সবাই এবার প্লান করতে শুরু করে টাকা দিয়ে কি কি করবে। টাকাগুলো সব আদৃত এর থেকেই নেওয়া হয়েছে।
মোহনা কিছুটা হতাশ হয়ে বলে,
_ইশাকে ছাড়া আড্ডা জমছে না। ওকে নিয়ে আসতে পারতাম!
মোহনার কথা শুনে সবাই শব্দ করে হেসে দিলো। সবার হাসি দেখে ছোট্ট প্রজ্জল ও ফিক করে হেসে দিলো।

_____
বিছানার ঠিক মাঝখানে বসে আছে ইশা, আদৃত বসে আছে সামনের সোফায়। গত পনেরো মিনিট যাবৎ একইভাবে বসে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইশা এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বলে,
_আপনি কি সারারাত এভাবেই বসে থাকবেন?

_তাহলে…কি করবো?

সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায় আদৃত। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে ইশার পাশে বসে পড়ে। ইশা শুকনো ঢোক গিলে অন্য দিকে চোখ সরিয়ে নেয়।

_ইশা, এখন থেকে তুমি সবসময় চোখে মোটা করে কাজল পড়ে থাকবে বুঝলে।

ইশা অবাক হয়ে বলে,
_সবসময় কেন পড়বো? আর এখনকার মেয়েরা কাজল নয় চোখে আইলাইনার বেশি পড়ে।

_তোমাকে এখনকার মেয়েদের মতো হতে বলিনি, আমার পছন্দের হলেই চলবে।

আদৃতের চোখের দিকে তাকায় ইশা, ইদানিং ওর কথাগুলো শুনতে বেশ ভালোই লাগে। কিছু সময় পর আদৃত চোখ নামিয়ে নিয়ে বলে,
_ইশা,আই ওয়ান্ট আ পারমিশন ফ্রম ইউ..

এইটুকু শুনেই ইশার মস্তিষ্ক অনেক কিছু ভেবে নিলো। চোখ নামিয়ে নিয়ে কাপাকাপা গলায় বললো,
_ক কিসের পারমিশন?

আদৃত ইশার দিকে কিছুক্ষন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো,
_এত লাল নীল হওয়ার মতো কিছু বলিনি আমি, আর তুমি যেটা ভাবছো তার জন্য আমি পারমিশন নিতে যাবো না।

ইশা চোখ বড়বড় করে বলে,
_আ আজব তো,আমি কিছু বলেছি আপনাকে?

মৃদু হাসে আদৃত। ইশার দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে ওর চোখে চোখ রেখে বলে,
_আই জাস্ট ওয়ান্ট টু ক্রাই, অনুমতি দেবে প্লিজ?

ইশা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো আদৃত এর দিকে। আদৃত কিছুটা থেমে আবারো বললো,
_অল্প কিছুক্ষন,তোমার কোলে মাথা রেখে একটু কাঁদতে চাই। প্লিজ..

ইশা কিছু বুঝতে না পেরে সামান্য ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। আদৃত আর এক মুহূর্ত ও অপেক্ষা করলো না, ইশার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। ইশার এখন কি বলা উচিৎ সে বুঝতে পারছে না। আদৃত ইশার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
_একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে প্লিজ..

ইশা কাপাকাপা হাত ছোঁয়ায় আদৃতের মাথায়। চুলের মাঝে ধীরে ধীরে আদৃতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আদৃত এবার আকষ্মিকভাবে ইশার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,
_মা ঠিক এইভাবেই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো জানো তো। ইন ফ্যাক্ট যখন মা অনেক বেশি অসুস্থ, সেই সময়ও আমাকে কিছু বুঝতে দিতো না। হাসিমুখে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতো। মায়ের কখনো কোনো কথা বলার সঙ্গি ছিলো না। মা থাকলে তোমায় পেয়ে অনেক খুশি হতো নিশ্চই।

চোখ চুপ করে রইলো আদৃত, কাঁদবে বললেও সে একটুও কাঁদেনি। তবে চোখে জল চলে আসছে ইশার। অনেক চেষ্টা করেও আটকাতে পারছেনা নিজেকে।
নিজের গালে শীতল কিছু অনুভব করতেই চোখ খুলে তাকায় আদৃত, ইশার চোখে জল দেখা মাত্রই তড়িঘড়ি করে উঠে বসে। ইশার দু’গালে হাত রেখে বলে,
_হেই..কি হয়েছে? কাঁদছো কেন?

ইশা আদৃতের দিকে টলমলে চোখে তাকিয়ে বলে,
_আপনি জানেন আমার মন কত বড়, অন্য কাউকে কষ্ট পেতে দেখলে আমারো কষ্ট হয়।

আদৃত ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলে,
_আচ্ছা,তাহলে আমার জন্য তোমার কষ্ট হচ্ছে?

_তো আপনি এত ইমোশনাল কথা বলছেন কেন!

_তাহলে রোম্যান্টিক কথা বলবো?

_আমি কি সেটা বলেছি?

এবার কিছুটা শব্দ করে হেসে ওঠে। যা দেখে ইশা সরু চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। আদৃত তার হাসি থামিয়ে ইশার কপালের সঙ্গে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে,
_কাজল ল্যাপটানো চোখে কিন্তু তোমায় আরো সুন্দর লাগে। তবে তুমি যে লজ্জাও পাও,এটা কিন্তু জানা ছিলোনা।

_কে বলেছে আমি লজ্জা পাচ্ছি?

_পাচ্ছো না?

_উম হু..

_তাহলে তো তোমাকে আরো বেশি লজ্জা দেওয়া দরকার।

ইশা আদৃতকে সরিয়ে দিয়ে নামতে গেলেই আদৃত তাকে আটকে দেয়। পিছন থেকে ইশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
_উম হু, পালাতে পারবেনা।

থেমে যায় ইশা। কিছুক্ষন পর আদৃত বলে ওঠে,
_ইশা..

_হুম।

_ভালোবাসো আমায়?

_জানিনা..

_নো প্রব্লেম, আমি ভালোবাসা আদায় করে নেবো।

মুচকি হাসে ইশা। তাই হবে হয়তো, আদৃত আগে থেকে ভালোবেসেছে। ইশা নাহয় এখন থেকে বাসলো। যেই মানুষটা ওকে এতটা ভালোবাসে,তাকে ভালো না বেসে থাকার কোনো কারণ ই নেই।

_____

চার বছর পর….

_ভাইয়া তোমার হাতেও কিন্তু নাম লিখতে হবে, এই আপু ওনার হাতে বড় করে মোহনা নামটা লিখে দিন তো।

মেহেন্দি পড়ানো মেয়েটাও ইশার কথায় মুচকি হেসে সায়ান এর হাতে মোহনা নামটা লিখে দিলো।
মোহনা আর সায়ান এর বিয়ে হয়েছে আরো দু বছর আগে, তবে মোহনা অনার্স কমপ্লিট করার পর বিয়ের অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।

ইশা হাসিমুখে অন্যদিকে যেতে নিলেই আদৃত এসে তাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়। রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,
_তুমি কি ভুলে গেছো যে তুমি প্রেগন্যান্ট? ছোটাছুটি না করে একটু চুপচাপ বসে থাকতে পারোনা?

_আরে আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ে বলে কথা, আমি বসে থাকলে চলে?

আদৃত কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় প্রজ্জল,ফাইজা আর পূর্ণ।
প্রজ্জল সামনের দিকে গাল ফুলিয়ে হাটছে, আর পূর্ন,ফাইজা তার পিছনে ছুটছে।
প্রজ্জল ইশার সামনে আসতেই ইশা তাকে আদর করে দিয়ে বলে,
_কি হয়েছে পুচকু? এত রেগে আছো কেন?

_আমি কারো সাথে কথা বলবো না।

_কিন্তু কেন?

_আদৃত চাচ্চু তোমাকে গান শোনায়। বাবাই আম্মু কে গান শোনায়। আমিও দুটো নতুন গান শিখেছি,কিন্তু আমাল গান কেউ শুনছেই না।

মোহনা পাশ থেকে নিজের মেহেদী পড়া হাতদুটো থেকে চোখ সরিয়ে প্রজ্জল এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_আমার কাছে আইডিয়া আছে, এইযে তোমার পিপির পেটে যেই বাবুটা আছেনা? তুমি ওকে যত খুশি গান শোনাও।

ইশা কিছুটা হতাশ হয়ে বলে,
_তুই যা ভেবে কথাটা বলছিস তা আর হচ্ছেনা রে মেহু..

_কেন কেন?

আদৃত প্রজ্জল এর গালে হাত বুলিয়ে বলে,
_কারণ প্রজ্জল এর একটা ছোট্ট ভাই আসছে।

পূর্ন, ফাইজা সহ উপস্থিত সকলে কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে প্রজ্জল এর দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে বলে উঠলো,
_ব্যাড লাক…

প্রজ্জল রেগে গিয়ে বুকে হাত গুজে মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। তা দেখে সবাই আরো জোড়ে হাসতে শুরু করলো।
আদৃত এসে ইশার পাশে বসতেই ইশা ওর হাতটা নিজের পেটের উপর রেখে বলে,
_আদৃত..

_হুম বলো..

_ও আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি তাইনা?

আদৃত ইশার চোখে চোখ রেখে বলে,
_যদি হয়েও থাকে,তবুও সেটা তোমার জন্য। এই প্রাপ্তির সঙ্গে তুমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এই প্রাপ্তি হলো, তুমিময় প্রাপ্তি~~

#সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে