তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-৩৭+৩৮

0
185

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩৭
#মেহরিন_রিম
ইশার কথা শুনে রিফাত যেন আকাশ থেকে পরলো। ইশা চোখের ইশারায় তাকে হাতের দিকে তাকাতে বলল। রিফাত ইশার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার অনামিকা আঙুলে হালকা গোলাপি রঙের স্টোন বসানো আংটি। রিফাত শুকনো ঢোক গিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে বললো,
_ত ত তুই এনগেইজড কি করে হলি? আমি তো কিছুই জানতাম না।

_জানবে কি করে! আসলে আব্বু আম্মু এখনো কাউকেই জানায়নি বিষয়টা আর আমিও জানাইনি। আব্বুর এক বন্ধুর ছেলের সাথে আরো চার বছর আগেই আমার এনগেইজমেন্ট হয়ে আছে,যদিও সেটা ভার্চুয়াল। বিদেশে থাকে তো তাই, এমনকি আমি ওনাকে এখন পর্যন্ত দেখিও নি জানো।
এবার ইশা কিছুটা লজ্জা পাওয়ার ভাব নিয়ে বলে,
_তবে না দেখলে কি হয়েছে,আমিতো মনে মনে তাকে বর হিসেবে মেনেও নিয়েছি।

রিফাত হতাশ হয়ে বললো,
_তুই সত্যিই এনগেইজড?

_হ্যা গো,নাহলে তোমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলেকে কেউ রিজেক্ট জরতে পারে বলো?

রিফাতকে হতাশ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশা আবারো বললো,
_থাক ভাইয়া,তুমি মন খারাপ করোনা। আমি বরং তোমার সাথে আমার এক ফ্রেন্ড এর কথা বলিয়ে দেবো,ভীষণ সন্দরি জানো তো!

রিফাত কিছুটা খুশি হয়ে বলে,
_সত্যি?

_হ্যা হ্যা সত্যি।

রিফাত আচ্ছা বলে ইশার থেকে ফুলটা নিতে চাইলে ইশা বাধা দিয়ে বলে,
_সুন্দর তো ফুলটা। থাক আমার কাছে।

রিফাত সেখান থেকে চলে যেতেই ইশা মোহনার দিকে তাকিয়ে দেখে সে অতি কষ্টে নিজের হাসি আটকে রেখেছে। রিফাত কিছুটা দূরে চলে যেতেই সে উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে বলে,
_মনে মনে বর বানিয়ে ফেলেছো তাইনা?

_একদম…

ইশা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
_দেড়ি হয়ে গেলো রে, অন্য একদিন দেখা করাবো আন্টিমনির সাথে। আজ বাসায় যাই বরং।

মোহনা হাসি থামাতে চেষ্টা করে বললো,
_চল।

বলেই বাসার দিকে হাটা শুরু করলো ইশা এবং মোহনা। এদিকে আদৃতের মাথা ভনভন করে ঘুরছে। কি বলে এই মেয়ে! ও আবার এনগেইজড হলো কবে?
রিফাত এর চিন্তা মাথা থেকে নেমে গেলেও এবার তার চেয়ে আরো বড় চিন্তা মাথায় চলে এলো। কার সাথে এনগেইজমেন্ট হয়েছে ইশার!
ইশা আর মোহনা কিছুদূর চলে যেতেই আদৃত বাইকের সামনে এসে দাঁড়ায়। ওর এত প্রশ্নের উত্তর একজনই দিতে পারবে। আর অপেক্ষা করতে পারলো না আদৃত, ফোন বের করে ফাইজার নম্বরে ডায়েল করলো। দুটো রিং হতেই কলটা রিসিভ করলো ভাইয়া।

_হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।

_ওয়ালাইকুম আসসালাম। ফাইজা আমি আদৃত..

_হ্যা ভাইয়া বলুন,কোনো দরকার?

_ইশা কি এনগেইজড?

ফাইজা অবাক হয়ে বলে,
_মানে! ও এনগেইজড হতে যাবে কেনো?

আদৃত এবার ফাইজাকে কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা খুলে বললো। সবটা শুনে ফাইজা কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে দম ফাটিয়ে হাসতে লাগলো। ফাইজার হাসির শব্দ শুনে আদৃত ভ্রু কুঁচকে বলে,
_আরে তুমি হাসছো কেন?

_হাসবো না আবার? আপনি ভেবে নিয়েছেন ইশা সত্যি সত্যি এনগেইজড?

_তো ও নিজেই তো রিফাতকে বললো।

_আরে ভাইয়া, ওর হাতে যে রিংটা আছে ওটা আমার ভাইয়ের দেওয়া। ভাইয়া আমাদের দুজনকেই সেইম রিং কিনে দিয়েছিল, আর এই আইডিয়া টাও ভাইয়ার ই দেওয়া। কেউ প্রপোজ করলে তাকে বলে দেবো আমি এনগেইজড,তাহলে আর সে কখনো বিরক্ত করবেনা। সেই আইডিয়া ফলো করেই ইশা এই কাজ করে, স্কুল এ থাকতেও ওকে কয়েকজন প্রপোজ করেছিল। তখন ও একই কথা বলেছে,যে আমি এনগেইজড।

ফাইজার কথা শুনে আদৃত হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ফাইজা নিজের হাসি থামিয়ে বললো,
_এত চাপ নিয়েন না ভাইয়া,আপনার লাইন এখন পর্যন্ত ক্লিয়ার আছে।

কথাটা বলে আবারো হাসতে লাগলো ফাইজা। আদৃত অন্যহাতে মাথা চুলকিয়ে বলে,
_আমি এখন রাখছি হ্যা।

_ঠিক আছে।
ফোনটা কেটে দিলো আদৃত। আর ফাইজা ফোনটা হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে পূর্ণকে কল দিলো, মজার কথাটা তাকেও জানানো উচিৎ।

____
এরই মাঝে আরো বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে। আদৃত অনেক চিন্তা করেছে কিভাবে ইশার সাথে বন্ধুত্ব করা যায় কিন্তু কিছুই তার মাথায় আসছেনা। অবশেষে একটা বুদ্ধি আসে তার মাথায়,সেই অনুযায়ী ই কাজ করবে সে।

ফাইজা পূর্ণর ব্যাপারে এখনো ইশাকে কিছুই বলেনি, কিছুটা লজ্জাই পাচ্ছে বলতে। ইশা ওকে ফোনে কথা বলতে কয়েকবার দেখেও নিয়েছিল,তবে অত বেশি কিছু জিজ্ঞেস ও করেনি।

কলেজ শেষে বাইরে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো ইশা আর মোহনা। তখনি তাদের সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। ইশা চেনে এই গাড়িটা,এটা আদৃতের গাড়ি এটা ধরতে তার খুব বেশি সময় লাগেনি। ড্রাইভিং সিটের পাশে জানালা খোলা থাকায় আদৃতকে ভালো করেই দেখা যাচ্ছিল। তবে মোহনার নজর ঠিকই পিছনের সিটের দিকে যায়,সেখানে সায়ান বসে বসে ফোনে কোনো একটা গেইমস খেলছে। গাড়ি থামার পরই সায়ান গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে মোহনার সামনে এসে দাঁড়ায়। মোহনা অবাক হয়ে বলে,
_আপনি এখানে কি করছেন?

_আমি নিজেও জানিনা।

_জানেন না মানে?

আদৃত এবার গাড়ি থেকে নেমে ইশার সামনে দাঁড়ায়, সে মাস্ক পড়া থাকায় আশেপাশে থাকা লোকজন খুব বেশি খেয়াল করেনি। আদৃত মোহনার উদ্দেশ্যে বলে,
_আমি নিয়ে এসেছি, আর এখন তোমরাও যাবে আমার সঙ্গে।

ইশা অবাক হয়ে বলে,
_কোথায় যাবো? এই আপনি কি আমাদের কিডন্যাপ করার প্ল্যান করছেন নাকি? আমি কোথাও যাবোনা আপনার সঙ্গে।

_না গেলে সারপ্রাইজ ও মিস করবে।

সায়ান এবার আদৃতের দিকে তাকিয়ে বলে,
_তুই আমাকেও বললি সারপ্রাইজ,কিন্তু কি সারপ্রাইজ সেটাই তো বুঝলাম না।

_মেইন সারপ্রাইজ ই তোদের দুজনের জন্য। (সায়ান আর ইশাকে উদ্দেশ্যে করে)

_আমি যাবোনা..

আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
_লাস্ট বার বলছি, যেতে পারো.. যারা যাবি গাড়িতে উঠে বস(সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে)

আদৃত গাড়িতে উঠে বসার পর সায়ান আর মোহনাও গাড়িতে উঠতে যায়। ইশা হতভম্ব হয়ে বলে,
_মেহু তুইও যাবি!

মোহনা মেকি হেসে বলে,
_যাই না,সারপ্রাইজ পেতে কার না ভালো লাগে!

মোহনাও সায়ান এর সাথে পিছনে গিয়ে বসে পড়লো। ইশা এবার বাধ্য হয়ে আদৃত এর পাশে সিটে উঠে বসে পড়লো। সারপ্রাইজ এর কথা শুনে যেতেও ইচ্ছে করছে বটে,তবে সেটা প্রকাশ করা যাবেনা।
আদৃত মাক্স এর আড়ালে মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

____
কোনো একটা পার্কের সামনে এসে গাড়ি থামালো আদৃত। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো সায়ান,মোহনা,ইশা। আদৃত ও নামলো গাড়ি থেকে। সবাই একসঙ্গে অবাক হয়ে আদৃতের দিকে তাকালো। আদৃত চোখে থাকা সানগ্লাসটা খুলে সবাইকে চোখের ইশারায় একটু সামনে বামপাশে থাকা বেঞ্চের দিকে তাকাতে বললো।
আদৃতের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকালো সবাই। সঙ্গে সঙ্গেই তাদের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। কারণ বেঞ্চে ফাইজা আর পূর্ণ পাশাপাশি বসে হেসেহেসে কথা বলছে। ইশা আর সায়ান ধীর পায়ে হেটে যথাক্রমে ফাইজা আর পূর্ণর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
পূর্ন,ফাইজার মধ্যে কেউই ওদের এখানে আশা করেনি। দুজনে একসঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তাকায় আরেকবার একে অপরের দিকে তাকায়।
ইশা কিছুক্ষন হা করে দুজনের দিকে তাকিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,
_নেহি… নেহি…নেহি…

ওর দেখাদেখি সায়ান ও একই কাজ করে। আশেপাশের মানুষ ওদের দিকে অবাক হয়ে দাঁড়ায়। পূর্ণ কটমট চোখে সায়ান এর দিকে তাকায় বলে,
_এমন করতেছিস কেন?

_তাহলে কেমন করবো ভাই? তুমি তলে তলে টেম্পো চালাবা আর আমরা জানতেও পারবো না?

ইশাও ফাইজার দিকে তাকিয়ে ঠোট উল্টে বলে,
_তোমার থেকে এটা আশা করিনাই আপু।

মোহনা এসে পূর্ণ আর ফাইজার দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে বলে,
_ও মাই গড ও মাই গড! নতুন একটা কাপল!

ফাইজা ইশার হাত ধরে বলে,
_আমি না তোকে আজকেই জানাতে চেয়েছিলাম বোন..

পূর্ণ সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_কিন্তু তোরা এখানে কি করে এলি,তাও একসাথে?

সায়ান উত্তর দেওয়ার আগেই মোহনা বলে,
_আরে আমাদের তো আদৃত ভাইয়া নিয়ে এসেছে, বললো আমাদের সারপ্রাইজ দেবে।

ইশা ফাইজার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলে,
_তুমি এটা ঠিক করোনি আপু,আমি তোমাকে কিছুতেই ক্ষমা করবো না।

ফাইজা একনজর পূর্ণর দিকে তাকায়। পূর্ণ এবার ইশার উদ্দেশ্যে বলে,
_কেন ইশা? আমাকে কি তোমার আপুর পাশে মানায় না?

ইশা পূর্ণকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পরখ করে বলে,
_ঠিক তা নয়,ভালোই মানিয়েছে।

_তাহলে আর সমস্যা কোথায়? আচ্ছা,জেনেই যখন গেছো তখন একটা ট্রিট তো তোমার পাওয়া উচিৎ তাইনা? ঠিক আছে,আমি আজকে সবাইকে আইসক্রিম খাওয়াচ্ছি।

ইশা আর সায়ান একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে বলে ওঠে,
_তাহলে ঠিক আছে।

এবার সবাই একসঙ্গে হেসে উঠলো। ইশা যে এত সহজে রাগ কমিয়ে নেবে এটা ফাইজা আশা করেনি,তবে এখন সে খুশিই হয়েছে।
পূর্ণ সায়ান কে নিয়ে সবার জন্য আইসক্রিম আনতে চলে গেলো। মোহনা তখনি ফাইজার সামনে এসে উৎসাহ নিয়ে বললো,
_জানো আপু,আরেকটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটেছে আজকে।

_কি ঘটনা?

_নিরব ভাইয়া ইশাকে প্রপোজ করেছে!

ফাইজা অবাক হয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
_তুই এক্সেপ্ট করলি?

ইশা নিচের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে বলে,
_হ্যা, কালই কাজি অফিসে গিয়ে আমরা বিয়ে করে নিচ্ছি। তোমরা সবাই ইনভাইটেড।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩৯ (বোনাস পর্ব) (প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য উন্মুক্ত)
#মেহরিন_রিম
অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটলো। উভয় পক্ষের সম্পতিতে কবুল বলার মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা। ফাইজা হয়তো একসময় ভাবতেই পারেনি এই দিন তার জীবনে আসবে। তবে ঐযে, তার ভাগ্যে হয়তো পূর্ণর নামটা অনেক আগে থেকেই লেখা ছিল। তাই তাদের পরিণতি টাও হয়েছে ততটাই সুন্দর।

পূর্ণর সঙ্গে তার বোন আসতে চেয়েছিল,তবে ছোট বাচ্চা থাকায় তার পক্ষে আসাটা সম্ভব হয়নি। আর পূর্ণ নতুন জামাই হিসেবে একা শশুর বাড়িতে থাকতেও ইতস্তত বোধ করছিল, তাই আদৃত আর সায়ান কেও থাকতে বলেছে। সায়ান আগে থেকেই রাজি ছিল কারণ ফাইজার বিয়ে উপলক্ষে মোহনাও এ বাড়িতেই আছে। তবে আদৃত কিছুটা আপত্তি জানিয়েছিল,পরবর্তীতে রুকসানা জোড় করায় আর কিছু বলতে পারেনি।

শালা শালিদের আবদার মিটিয়ে অবশেষে ঘরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় পূর্ণ। ঘড়ে ঢুকেই বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পূর্ণ। এরপর দড়জা লক করে বিছানার দিকে তাকায়। ঘরটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। বিছানার উপর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ শেইপ আকা আর তার মধ্যে (F+P) লেখা। তার ঠিক পিছনেই হাটু ভাজ করে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে ফাইজা। মুখের উপর নাক অবধি লম্বা ঘোমটা টানা।
পূর্ণ স্মিত হেসে এগিয়ে যায়, ফাইজা সামনে বসে বলে,
_বিয়ে করলে যে এত ঝামেলা পোহাতে হয় সেটা জানলে ঠিকই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম।

ঘোমটার আড়াল থেকেও ফাইজার হাসিমাখা মুখখানা সামান্য দেখা গেল। পূর্ন মুচকি হেসে তার ঘোমটা মাথার উপর তুলে দিতেই ফাইজাও ধীরে ধীরে তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। ঠিম তখনি পূর্ণ বলে ওঠে,
_আরে,তাকালে কেন?

ফাইজা অবাক হয়ে বললো,
_তো,কি হয়েছে?

_তুমি আবার নিচের দিকে তাকিয়ে থাকো।

ফাইজা কিছু না বলে আবারো আগের মতো নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। পূর্ণ এবার ধীরেধীরে তার থুতনি টে হাত দিয়ে মুখটা উপরে তুলে বললো,
_মাশাল্লাহ…এইযে এবার ঠিক আছে।

ফাইজা এবারো ফিক করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বললো,
_শুধু মাশাল্লাহ বললে চলবে না, নতুন বউয়ের মুখ দেখলে কিছু উপহার দিতে হয়।

_পুরো আমিটাই তো তোমার উপহার। যেকোনো ভাবে ইউজ করতে পারো আমাকে,আই ডোন্ট মাইন্ড।

_পূর্ন.. এসব বললে চলবে না,আমার উপহার দাও।

_আচ্ছা চোখ বন্ধ করে হাত পাতো।

ফাইজা পূর্ণর কথামতো চোখ বন্ধ করে হাত পাতলো। পূর্ণ বিছানা থেকে উঠে কিছু একটা এনে তার হাতে দিয়ে চোখ খুলতে বললো। ফাইজা হাসিমুখে চোখ খুললেও উপহার টি দেখে তার হাসি মিলিয়ে গেলো। চমকিত চোখে পূর্ণর দিকে তাকিয়ে বললো,
_বই!

_হ্যা বই..আগের বইটা তো পড়েছিলাম ই। তাই এই নতুন বইটা,ভীষণ ইন্টারেস্টিং। আমি দু পেজ পড়েছিলাম, তারপর রেখে দিয়েছি। ভাবলাম বিয়ের দিন রাতে একসাথে পড়বো,ভালো হবেনা বলো?

ফাইজা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললো,
_মানে আমরা সারারাত জেগে বই পড়বো?

_হ্যা,কোনো সমস্যা আছে?

ফাইজা দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় পূর্ণর দিকে। তারপর পূর্ণদ হাতটা টেনে বইটা ঠাস করে হাতের উপর রেখে বলে,
_নাহ কোনো সমস্যা নেই। তুমি পড়ো বই,আমার ঘুম পেয়েছে। আমি ঘুমোবো..

_আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমোও,এমনিতেও সারাদিন এ অনেক ধকল গেছে তোমার উপর দিয়ে।

ফাইজা এবার আরো বেশি অবাক হয়ে যায় তার সঙ্গে রেগেও যায়। ফাইজা চোখ সরিয়ে নেয় পূর্ণর থেকে। মাথায় থাকা ওড়নাটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে নেমে দাঁড়ায়। আবারো পূর্ণর দিকে তাকায়,তবে তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই। ফাইজা কটমট চোখে তার দিকে তাকিয়ে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে গিয়ে টুলটা টেনে বসে পড়ে।
পূর্ণ এতক্ষন ঠোট কামড়ে নিজের হাসি আটকে রেখে ফাইজার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। তবে এখন তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়বে। হাতে থাকা চুড়িগুলো টেনে টেনে খুলছে আর ড্রেসিং টেবিল এর উপর ছুড়ে ফেলছে। গলার হারটা নিয়েও টানাটানি করছে তবে খুলতে পারছে না।

পূর্ণ এবার বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় ফাইজার দিকে। ফাইজা নিচের দিকে তাকিয়ে থাকায় পূর্ণর অবস্থান লক্ষ্য করেনি।
ফাইজা এখনো হারটা নিয়ে টানাটানি করছে। পূর্ণ মুচকি হেসে ওর হাতটা সরিয়ে দেয়। ফাইজা চোখ তুলে তাকায় আয়নার দিকে। পূর্ণর ঠোঁটের কোণে হাসি স্পষ্ট, ফাইজা ছোটছোট চোখে তাকিয়ে থাকে আয়নার দিকে। পূর্ণ সেকেন্ডের মধ্যেই হারটা খুলে এনে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দেয়। স্থির কণ্ঠে বলে,
_ম্যাডামের আমার উপর রাগ হয়েছে বুঝি?

_র রাগ হতে যাবে কেন?

পূর্ন নিজের চোখে থাকা চশমাটা খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দেয়। এরপর ফাইজার দু’কাধে হাত রেখে আয়নার দিকে তাকায়। দুজনেই এখন দুজনকে আয়নায় দেখতে পাচ্ছে। পূর্ণ বাকা হেসে বলে,
_চশমা পড়লে নাকি আমাকে ভীষণ ভদ্র ভদ্র লাগে, তাই ভেবেছি চশমা পরে সবসময় নিজের ভদ্র রুপটাই প্রকাশ করবো। তবে তোমার বোধ হয় আমার ভদ্র রুপটা পছন্দ হচ্ছে না।
কিছুটা ঝুকে আসে পূর্ণ। ধীরেধীরে ফাইজার খোপায় থাকা ক্লিপগুলো খুলতে শুরু করে,কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্লিপগুলো খুলেও ফেলে। এরপর আয়নার দিকে তাকিয়ে খোপাটা এক টানে খুলে ফেলে। কোমড় অবধি চুলগুলো ছড়িয়ে পরে,কিছুটা চুল সামনেও এসে পড়ে। পূর্ন সম্পূর্ন চুল একপাশে সরিয়ে ফাইজার ঘাড়ে মুখ ডোবায়,চোখ বন্ধ করে নেয় ফাইজা। পূর্ণ এবার ফাইজার কাণের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
_আমার অভদ্র রুপটা দেখতে চান ম্যাডাম।

ফাইজা আমতা আমতা করে বলে,
_আ আমি ব বলেছি কিছু?

_না বললে এখন বলো।

এক ঝটকায় পূর্ণকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় ফাইজা। অন্য দিকে ঘুড়ে বলে,
_বই পড়বে না তুমি?

পূর্ণ শব্দ করে হেসে ফাইজার সামনে এসে দাঁড়ায়। ফাইজার গলা জড়িয়ে তাকে কিছুটা কাছে টেনে নিয়ে বলে,
_বই পড়া ছাড়াও অনেক ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে, সেগুলো আগে কমপ্লিট করা উচিৎ?

এবার আর কথা বলতে পারলো না ফাইজা। পূর্ণ দিকে তাকাতেও পারলো না,তাই নিজের আশ্রয় খুজে নিলো পূর্ণর বুকে। মুচকি হাসে পূর্ন, অত:পর তার প্রেয়সী কে জড়িয়ে নেয় নিজের সঙ্গে। আজ রাতটা নাহয় তাদের নামেই হোক।

____
সোফায় সারিবদ্ধভাবে বসে আছে আদৃত,সায়ান, ফায়াজ। আর তার অপর পাশেই বসে আছে ইশা আর মোহনা। ঝামেলা হয়েছে এখানেই, ছেলেরা তিনজন আর মেয়েরা দুজন। ছেলেদের দলে একজন বেশি হয়ে যাচ্ছে।

ফায়াজ এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
_তোরা খেল,আমি বরং ঘুমোতে যাই হ্যা।

ইশা দোড়ে গিয়ে ওর হাত ধরে আটকে দিয়ে বলে,
_না না না,আজকে তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না। সেই তো ভাবির সাথেই কথা বলতে যাবে। একদিন কথা না বললে কিছু হবে,এসো এখানে।

_কিন্তু মেম্বার তো মিলছে না।

_কোনো সমস্যা নেই,তুমি থাকবে নিরপেক্ষ দলে। আর নাহলে ছেলেদের দলেই থাকো। আমরা মেয়েরা দুজন ই যথেষ্ট। তাইনা মেহু?

মোহনা উচ্চস্বরে বলে,
_ইয়েস ইয়েস।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে