তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-৭+৮

0
194

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৭
#মেহরিন_রিম
_তুই সিওর পূর্ণ আসবে? দেখ ও কিন্তু আমার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি।

ড্রাইভ করার মাঝেই সামনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল আদৃত। সায়ান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আদৃত এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_১১০% সিওর, ও যখন একবার বলেছে আসবে তখন আসবেই।

আদৃত আর কিছু না বলে ড্রাইভ করায় মনোযোগ দিলো। আদৃত,সায়ান,পূর্ণ তিনজনই কলেজ ফ্রেন্ড। পূর্ণ ওদের থেকে এক বছরের সিনিয়র হলেও তাদের আচরণে কেউ সেটা বুঝতে পারবে না।
আদৃত ভার্সিটি লাইফ থেকেই গানবাজনা করছে,অনার্স শেষ করার পর বাবার বিজনেস এও জয়েন্ট করে। সায়ানের চাকড়ি করাটা কখনই পছন্দ ছিল না তাই সে বাড়িতে থেকেই ফ্রিল্যান্সিং করে।
ছোটবেলা থেকে পূর্নর ইচ্ছে ডিটেকটিভ হওয়ার, সেই কাজই করছে সে। নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখার জন্যই মাঝে মধ্যে তাকে বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতে হয়, যা সে এবং তার এসিস্টেন্টরা ছাড়া আর কেউ জানেনা বললেই চলে। এমনই আজ সে কোন দেশ থেকে আসছে সেটাও জানা নেই কারো।

এয়ারপোর্ট এ এসে অপেক্ষা করছে আদৃত,সায়ান। আদৃত এর একটা কল আসায় সে উল্টো দিকে ঘুড়ে ফোনে কথা বলতে লাগলো। আর সায়ান বরাবরের মতোই ফোনের মাঝে ডুবে রইলো। ইদানিং তাকে একটু বেশি ই ফোনের সাথে দেখা যাচ্ছে, বিষয়টা নিয়ে খুব বেশি ভাবেনি আদৃত।

_মুঝে ওয়েলকাম নেহি কারোগে কেয়া?

পূর্ণর কণ্ঠস্বর শুনে সায়ান দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। আদৃত ফোন কেটে দিয়ে পূর্নর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। পূর্ন ও সায়ানকে জড়িয়ে ধরে আদৃত এর দিকে তাকায়। তারপর নিজে থেকে গিয়ে আদৃত কে জড়িয়ে ধরে বলে,
_হোয়াটস আপ ব্রো?

_তুই বল।

পূর্ন আদৃত এর কাধে হাত রেখে বলে,
_চলছে বেশ ভালোই।

সায়ান এবার পূর্নর সামনে এসে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
_তা মামা, কোন কোন দেশে ঘুরলা? নিশ্চই অনেক ধরনের মেয়ে দেখছোস, বল এবার তোর বিয়া খাইতাছি কবে?

পূর্ন একনজর আদৃত এর দিকে তাকিয়ে দেখলো সেও তার দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ন কিছু বললো না, আদৃত দুজনের উদ্দেশ্যে বললো,
_কথা পড়ে হবে,আগে বাসায় চল।
পূর্নর দিকে তাকিয়ে বলল,
_কী?তুই আমার সাথে যাবি তো?

_হ্যা আজকে এখানেই থাকবো, কাল একবার বাড়িতে গিয়ে আব্বু আম্মুর সাথে দেখা করে আসবো।

সবাই এবার গাড়িতে গিয়ে বসলো। সায়ান মনের আনন্দে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো,এতদিন পর বন্ধুকে পেয়েছে।
সায়ান বরাবরেই অনেক হাসিখুশি মানুষ,বন্ধুমহল সে একাই মাতিয়ে রাখতে পারে। তবে পূর্ন আর আদৃত এর মধ্যে কিছুটা মিল রয়েছে, কেউই খুব বেশি কথা বলেনা।

____
_এই শাড়ি পড়ে নাচতে গিয়ে যদি আমি পড়ে যাই? পড়ে গিয়ে যদি আমার পা ভেঙে যায়? তারপর যদি আমাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়? আমি যদি কোনো পড়াশোনা না করতে পারি? তখন কিভাবে পরীক্ষা দিবো বলতো!

অতি চিন্তিত সুরে কথাটা বললো ইশা। ফাইজা মুচকি হেসে তার সামনে বসে বললো,
_এমনভাবে বলছিস যেন আগে কখনো শাড়ি পড়ে নাচ করিস নি তুই?

_ব্যাপার টা তেমন না। আসলে আমি অলওয়েজ একটু অ্যাডভানস চিন্তা করি তো তাই আরকি।

ইশার কথায় সে নিজে এবং ফাইজা দুজনেই হাসতে লাগলো। এমন সময় নিচ থেকে রুকসানা পারভিন রাগী সুরে বললেন,
_তোরা কী সারাদিন ছাঁদেই থাকবি? তাহলে আমি আর কাল থেকে নাস্তাই বানাবো না।

_এইরে ইশা,ছোট আম্মু সেই খেপেছে।

_চলো চলো নিচে যাই।

কথাটা বলেই ফাইজা আর ইশা দ্রুত নিচে চলে যায়। ফাইজা রুকসানার এমন আকস্মিক রাগের কারণ বুঝতে না পেরে তার কাছে গিয়ে বলে,
_কি হলো বলতো ছোট আম্মু? ছোট আব্বু কি আবারো আসার ডেট পিছিয়েছে নাকি?

রুকসানা হাতের চামচ টা ঠাস করে টেবিলে রেখে বললেন,
_ওনার কথা একদম বলবিনা আমার সামনে। সারাজীবন খালি কাজই করে গেলেন উনি,পরিবার বলতে যে কিছু আছে ওনার এটা তো উনি ভুলেই গেছেন।

ফাইজা পিছন রুকসানার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
_আহারে,খুব মিস করছো বুঝি ছোট আব্বুকে? থাক আর করোনা,ছোট আব্বুও নিশ্চই সবাইকে মিস করছে কিন্তু কাজের প্রেশারে আসতে পারছে না। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি বরং ছোট আব্বুকে ফোন করে বলবো যতই কাজ থাকুক না কেন খুব তাড়াতাড়ি চলে আসতে। এবার খুশি?

_আর খুশি, যাক বাদ দে। তুই বল, তোর আম্মু আব্বু যএ তোর বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছে জানিস?

ফাইজা রুকসানার গলা ছেড়ে দিয়ে অবাক চোখে তার দিকে তাকালো। রুকসানা নিজের কাজ করতে করতে বললেন,
_আমি যদিই বলেছি,এখনকার ছেলেমেয়েদের জন্য আবার পাত্র দেখতে হয় নাকি? তারা নিজেরাই পছন্দ করে আনবে, তোর তেমন কোনো পছন্দ থাকলে বলতে পারিস আমাকে। আমি তোর আম্মুকে ঠিক বুঝিয়ে নিতে পারবো।

ফাইজা এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
_ন না,আমার তেমন কিছুই নেই। কিন্তু তুমি প্লিজ আম্মু আব্বুকে বলো,আমি এখন ই বিয়ে করতে চাইনা।

_আচ্ছা আচ্ছা তা নাহয় বলবো। কিন্তু…

আর কিছু বলতে পারলেন না রুকসানা,তার আগেই ফাইজা দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। রুকসানাও আর মাথা ঘামালেন না, ভাবলেন হয়তোবা লজ্জা পেয়েছে তাই পালিয়ে গেলো।

___
_ওই তুই সারাদিন ফোনের মধ্যে ঢুকে কি করছিস বল তো? দেখি তোর ফোনটা দে।
কথাটা বলে সায়ান এর হাত থেকে টান দিয়ে ফোনটা নিয়ে নিলো আদৃত। তারপর ফোনটা দেখে হা করে সায়ান এর দিকে তাকিয়ে রইলো,আদৃত কে চুপ করে থাকতে দেখে পূর্ন ওর হাত থেকে ফোনটা নিলো। এবার দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো,
_এঞ্জেল মিম..

কথাটা বলে দুজন একসঙ্গে হাসতে লাগলো। সায়ান কিছুটা লজ্জা পেয়ে ফোনটা এক টানে নিয়ে নিলো। পূর্ন হাসতে হাসতে বলল,
_তুই আর ঠিক হলিনা সায়ান। এই দিনে এসেও সেই আদিকালের জাতীয় আইডির সাথে চ্যাট করছিস? এই ব্যাটা,তুই জানোস এটা ছেলে নাকি মেয়ে?

_যাই হোক না কেনো,দুইটা মিষ্টি মিষ্টি কথা যে বলে এটাই অনেক। একটা তো গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করে দিতে পারলিনা, বন্ধু নামের কলঙ্ক হয়ে আবার মজা নিতে আসছে হাহ।

আদৃত ব্যালকনির দিকে যেতে যেতে বলল,
_তুই থাক তোর এঞ্জেল মিম কে নিয়ে, দুই দিন পর আবার ম*রা কান্না কাঁদতে আসিস না তাহলেই হবে।

আদৃত ব্যালকনি তে যাওয়ার পর পূর্ন দু হাতে দুটো কফির মগ নিয়ে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আদৃত মগটা হাতে নিতেই পূর্ন জিজ্ঞেস করে,
_তা মিস্টার আদৃত মেহরাজ, বিয়ে করছেন না কেন? এত মেয়ে যে আপনার অপেক্ষায় বসে আছে।

আদৃত বিরক্তিসূচক চোখে তাকিয়ে কফিতে সিপ দিয়ে বললো,
_তুই আবার কবে থেকে সায়ান এর মতো প্রশ্ন করা শুরু করলি?

পূর্ন সামান্য হাসলো। আদৃত পূর্নর দিকে তাকিয়ে বললো,
_তুই বিয়ে করছিস না কেন?

_উম,পছন্দ হচ্ছে না।

আদৃত পূর্নর দিকে ঘুরে বলল,
_পছন্দ হচ্ছে না নাকি পছন্দ করতে চাচ্ছিস না?

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৮
#মেহরিন_রিম

_জানি উত্তর দিবিনা। সত্যি করে একটা কথা বল তো, ফাইজা কে তুই ভালোবাসিস না?

পূর্ন কেবলই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আদৃত তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পূর্ন বলে উঠলো,
_বাস্তবতা এত সহজ নয় আদি।

_কিন্তু তুইতো আরো বেশি কঠিন বানিয়েছিস। মেয়েটা তো কোন ভুল করেনি, তুই ওকে এতটা কষ্ট না দিলেও পারতি।

পূর্ন আদৃত এর দিকে তাকিয়ে ওর কাধে হাত দিয়ে সামান্য হেসে বলল,
_ভালোর জন্য হলেও মাঝেমধ্যে কাউকে কষ্ট দিতে হয়। নিজে কখনো কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে ব্যাপারটা বুঝতে পারবি।

কথাটা বলেই পূর্ন ঘরে চলে গেল। আদৃত পূর্নর বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলো। হঠাৎ করেই যেন সকালের সেই মেয়েটার কথা মাথায় এলো আদৃত এর। নিজের উপর বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলল,
_কি হচ্ছে আমার সঙ্গে এসব? কেন বারবার সেই মেয়েটার কথা মনে পড়ছে আমার?

কফির মগটা পাশে রেখে পকেট থেকে সিগারেট এর প্যাকেট টা বের করলো আদৃত। সিগারেট এর ধোঁয়া ছাড়তেই তার অবাধ্য মনে আবারো চিন্তা এলো,
_মেয়েটা কি রোজ ছাঁদে আসে?

____
দীর্ঘ ত্রিশ মিনিট যাবৎ দুরবিন নিয়ে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে আদৃত। কোন বাড়ির ছাঁদে যে মেয়েটাকে দেখেছিল তাও ঠিক মনে করতে পারছেনা। তাই একই দিকে নজর রাখছে, যদি সেই মেয়েটি আসে। নিজের এরূপ কাজে আদৃত ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে, একটা মেয়েকে দেখার জন্য তার মন এতটা উতলা হয়ে উঠছে কেন? বারবার নিজেকে আটকানো চেষ্টা করেও পারছে না, যেখানে মেয়েটার মুখ অবধি দেখেনি সে।

আরো দশ মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পর আদৃত বুঝতে পারে হয়তোবা আজ আর মেয়েটি আসবেনা ছাঁদে। অত:পর মেয়েটির দেখা না পেয়েই নিজের ফ্লাটে চলে আসে সে।

পূর্ন সকাল সকাল ই গ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেছে,আর সায়ান ও নিজের বাড়িতে চলে গেছে। আদৃত এর বাসায় যে মহিলা কাজ করে তিনিও চলে এসেছেন, আদৃত ঢাকাতে আসার পর থেকেই তিনি এখানে কাজ করছেন। আদৃত তার কাছে ফ্লাটের চাবিও দিয়ে রেখেছে, কেননা অনেক সময়ই আদৃত বাসায় থাকে না। আন্টি নিজের মতো এসে সব কাজ করে দিয়ে যায়।

আদৃত ফ্লাটে এসে আগে শাওয়ার নিয়ে নেয়। তারপর রেডি হয়ে অফিস এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।

___
_কতবার বলবো আম্মু, আমার ডিম খেতে ভালো লাগেনা।
ডাইনিং টেবিলে বসে মুখ ফুলিয়ে কথাটা বলল ইশা। রুকসানা পারভিন খুন্তি হাতে নিয়ে তার সামনে এসে বললেন,
_একদম বাচ্চাদের মতো খাওয়া নিয়ে টালবাহানা করবিনা ইশা।

ইশা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
_তুমি কি চাও আমি ডিম খেয়ে পরীক্ষায় ও ডিম নিয়ে আসি?

_পড়াশোনা না করলে এমনিতেও ডিম ই পাবি। এখন চুপচাপ খেয়ে নে,নাহলে…

_রাগ করো কেন,খাচ্ছি তো আমি…

কথাটা বলেই মুখ গোমড়া করে খেতে লাগলো ইশা। খাওয়া শেষে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
_আম্মু,ফাইজা আপু চলে গেছে?

_হ্যা,ওর নাকি ভার্সিটি তে কাজ আছে তাই চলে গেলো।

_আচ্ছা ঠিক আছে।
কথাটা বলে নিজের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে কোচিং এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো ইশা।

দুপুর ১২ টা বাজে-
ইশা পড়া শেষ করে একা একাই বাড়ি ফিরছে। মোহনার একটু শরীর খারাপ থাকায় সে আসতে পারেনি আজকে, তাই একা একাই যেতে হচ্ছে ইশাকে। বাড়ির কাছাকাছি রাস্তা দিয়ে যেতে যেতেই ইশার চোখ পড়লো পাশের আশ্রমের দিকে। আশ্রমের দিকে তাকাতেই সেদিনের সেই মহিলাকে দেখতে পেলো সে। ইশা ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টেনে সেদিকে পা বাড়ালো।

_হাই আন্টিমনি,কেমন আছো?

আশ্রমের উঠোন ঝাড়ু দিচ্ছিলেন আয়শা। ইশার ডাকে তার দিকে তাকালেন তিনি, কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর চিনতে পাড়লেন ইশাকে। ঝাড়ুটা পাশে রেখে মুচকি হেসে ইশার কাছে গিয়ে বললেন,
_আরে মা তুমি? আমি ভালো আছি,তুমি কেমন আছো?

_আমি অলওয়েজ ভালো থাকি। বসতে বলবে না?

আয়শা ইশার দিকে একটা চেয়ার টেনে দিলেন। নিজেও একটা চেয়ার এনে বসলেন তার পাশে।

ইশা চেয়ারে বসে চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। তারপর আয়শার দিকে তাকিয়ে বলল,
_এখানে তো অনেক বয়স্ক লোকজন থাকে, তাহলে তুমি এখানে থাকছো কেন?

আয়শা নিজের চশমাটা টেনে বললেন,
_আমি এখানে টুকটাক কাজ করি,সেই সূত্রেই থাকতে পারি এখানে।

_তোমার বাড়ির লোকজন?

_আমার বাড়ি? হাসালে মা, বাড়ি থাকলে বুঝি এখানে থাকতাম আমি!

_তোমার কোনো ছেলে মেয়েও নেই বুঝি?

আয়শা খানিকটা হকচকিয়ে উঠলেন। আশেপাশে তাকিয়ে নজর লুকিয়ে ধীর কণ্ঠে বললেন,
_ন না নেই।

ইশার খুব খারাপ লাগলো আয়শার জন্য। আয়শা ইশার দিকে তাকিয়ে বললেন,
_তোমার নামটাই তো জানা হলোনা মা।

_হ্যা তাইতো, আমার নাম ইসরাত আনজুম ইশা। সবাই ইশা বলেই ডাকে।

_ভারি মিষ্টি নাম তোমার।

হঠাৎ কেউ একজন আয়শাকে ডাক দিতেই আয়শা ইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমার আজ একটু কাজ আছে মা, অন্য একদিন এসো তুমি হ্যা।

_ঠিক আছে আন্টিমনি,অবশ্যই আসবো।

আয়শা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ভিতরে চলে গেলো। ইশাও নিজের ব্যাগ নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।

____

টেবিলের উপর হাত রেখে মাথা চেপে ধরে বসে আছে আদৃত। তার সামনে অনেকগুলো ফাইল এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা আছে। কিছুতেই কাজে কনসেন্ট্রেট করতে পারছে না আদৃত,বারবার সেই মেয়েটার নাচের দৃশ্যই চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ফোনে কল আসতেই চিন্তা ভঙ্গ হয় আদৃত এর,ফোনটা সবসময় ভাইব্রেশন এই রাখে সে।

ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠে, “মিস্টার শাহাদাত” নামটা। চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে আদৃত এর। অনিচ্ছাকৃত ভাবেই ফোনটা রিসিভ করে সে।

_কেমন আছিস বাবা?

_হুম ভালো।

_একবার তো ফোন করে আমার খবরটাও নিতে পারিস।

_তেমন সম্পর্ক আপনার সঙ্গে আমার নেই। আপনার কিছু দরকার হলে বলুন।

_কিছু দরকার নেই আদি। তুই শুধু একবার বাড়িতে আয়। এবার ঈদে আসছিস তো তুই?

_ইচ্ছে নেই।

_এভাবে বলিস না আদি…

_একটু ব্যাস্ত আছি আমি। আর কিছু বলার আছে আপনার?

_নাহ..

হতাশ সুরে কথাটা বলে ফোনটা কেটে দিলেন শাহাদাত সাহেব। সোফায় বসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি। নিজের অপরাধ এর শাস্তিই পাচ্ছেন তিনি, নিজের ছেলে তাকে বাবা বলে ডাকে না। এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে! নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত তিনি, অনেকবার ক্ষমাও চেয়েছেন আদৃত এর কাছে। কিন্তু আদৃত যে ছোটবেলা থেকে নিজের মায়ের মৃ*ত্যুর জন্য তাকেই দায়ী করে আসছে। শত চেষ্টা করার পরও আদৃত তাকে ক্ষমা করেনি।

চশমাটা খুলে চোখে জমে থাকা জলটুকু মুছলেন শাহাদাত সাহেব,আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে