“তিমির” পর্ব ৬…

0
1181

“তিমির” পর্ব ৬…

সে গর্ত দেখতে গিয়েছিল? সে সম্ভবত মিথ্যা বলছে না।
“আমি ওই গর্তটা কখনওই দেখব না, যেখানে আসিয়ার লাশকে ফেলা হয়েছিল। আমি যাস্ট ওকে হারানোর কারণে হুঁশ হারিয়ে ওখানে গিয়েছি।”
“আহ্! তুমি কি নিজের কথা একটুও ভাবো না? আসিয়া যদি থাকত, তবে তার কি তোমার এসবকিছু ভালো লাগত?”
“না।”
“তোমার আংটির সুতাটি কোথায়?”
“ইশ, জঙ্গলে পড়ে গেছে। আচ্ছা, তুমি আমাকে কীভাবে এনেছ?”
প্রসঙ্গ পাল্টানোয় ধ্রুব একটু ইতস্তত করল, “অন্য কেউ থাকলে যেভাবে আনত।”
“ওহ্।”
“তোমার বাবা কিন্তু মাইন্ড করেননি। এজন্যই কোলে…”
আমি ঠোঁট কামড়ালাম। “প্লিজ, তাঁর কথা বলবে না।”
“কী হয়েছে?”
“তোমাকে কেন বলব?”
বিরক্ত প্রকাশ করায় সে সরাসরি বলল, “আমি যাচ্ছি।”
“সরি। আসলে বাবার সাথে রাগারাগি হওয়ায়..” কথাটা শেষ করতে পারলাম না। ধ্রুব উঠে চলে গেল। ছেলেটি আমার জন্য এতকিছু করছে, আমি কিনা এভাবে বিরক্ত প্রকাশ করলাম।
রাত এখন বারোটা বাজছে। আমার ঘুম না এলেও ঘুমাতে হবে। কারণ আমি এখন অনেকটাই অসুখী। ঘুমালে আমি দুঃস্বপ্ন দেখব। দুঃস্বপ্ন হলেও, অন্তত আমি আসিয়াকে দেখতে পারব। কারণ আমার মন কেবল তাকে নিয়েই ভাবছে। আমি ঘুমাতে গেলে ক্লান্ত থাকায় ঘুম এসে গেল। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
রাতে আচমকা ছটফট করে আমার ঘুম ভেঙে যায়। চারিদিকে কেমন এক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে আছে। আমার বমি আসার জোগাড় হলো। আমি তড়িঘড়ি করে বাতাস নিতে দরজা খুলে বেলকনিতে চলে গেলাম। ঠান্ডা বাতাস আমার মুখ, গলা, খোলা চুল এবং শরীরকে ছুঁয়ে গেলে ছটফটানো কমল। এখনের সময়টা ভোরের আগের ঝাপসা রাতের। আমি মনে করে আশ্চর্যান্বিত হলাম, স্বপ্ন আমি দেখিনি। কী করে সম্ভব? আমার মন ক্লান্ত, ক্ষত, ভাঙা ছিল। দেখারই কথা। আবারও অদ্ভুত গুমট গন্ধটা আমার নাককে ছুঁয়। এটা স্বপ্নের মাধ্যমে অনেকখানিই পরিচিত। আমার এখন আর কেন যেন খারাপ লাগছে না। আমি এসে শুয়ে পড়ি। বাকিটা রাত ঘুমাইনি।
সেরাত পার্টিতে থাকা মানুষগুলো আজ বিকেলে আমাদের বাসায় একত্রিত হয়েছে। কয়েকটা ইন্সপেক্টর এসেছে। একটি লোকও এসেছেন। তাদের মধ্যে যে আসিয়ার মৃত্যুর কেসটা হেন্ডেল করবে, তার নাম আরিয়ান মেহবুব, এখানে দুই বছর আগে বদলি হয়েছেন। সাথে আবির স্যারও এলেন। তাঁরা দু’জন আপন ভাই।
বাবার বয়সী লোকটিকে বাবা আজাদ বলে সম্বোধন করলেন। আমাদেরই প্রতিবেশী। তিনি বললেন, “তুমি তো জানো, আবির লাশটা কোথায় পেয়েছে। তোমরা হয়তো মনে মনে সন্দেহ করতেই পার, আবির জঙ্গলে কী করছিল। সেই কেন লাশটা পায়। আসলে ও ওর ভাই দু’জন আমার খুবই পরিচিত। জঙ্গলের কিছু অংশ আমিই ওদের দিয়েছি। সেই তাগিদে আবিরের ওদিকে যাওয়া। আবিরকে সন্দেহ করো না। সেও আরিয়ানের সাথে এই কেসটা দেখবে।”
“আমি কেন সন্দেহ করব? বরং ওর কাছে আমি আগেই শুকরিয়া আদায় করেছি, আমার নিখোঁজ মেয়েকে সময় থাকতে আমার কাছে পৌঁছানোর জন্য। নইলে ওই নির্জন জঙ্গলে কে ওকে পেয়ে আনত।”
আজাদ চাচা নিশ্চিন্তে বিদায় নিলেন। যে দু’জন আবির স্যার আর আরিয়ান স্যার রয়ে গেলেন, তারা সবার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল। আমিও যতটুকু সম্ভব সহযোগী হতে চেষ্টা করলাম।
আরিয়ান স্যার বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, “শেষবার আসিয়াকে রাত কয়টায় দেখা যায়?”
বাবা আমার দিকে তাকালেন। আমি মুখ ফিরিয়ে নেই। লক্ষ করলাম, ফুফি আমার দিকে বিরক্তিকর ভঙ্গিতে চেয়ে আছেন। আমি তাঁর সাথে এখনও পরিচিত হইনি। হতেও চাই না। তাঁর মেয়েই যতসব কিছুর জড়তা।
বাবা সময়টা আন্দাজ করে বললেন, “খাওয়ার পর পার্টি আবারও শুরু হলে।”
“কয়টায় খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়?”
“এই, সাড়ে দশটার দিকে।” তিনি আরও বিশদভাবে কাহিনিটি বললেন। ভাগ্যিস, এখন হলঘরে মুনতাহা নেই। নইলে আমার ভেতরের চিনচিনে রাগটা ওকে দেখলে উবলে উঠত। তখন আমি কেয়ার করতাম না, সে আমার এক বছরের সিনিয়র।
আবির এবং আরিয়ান স্যার সেই আন্দাজে সবাইকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। বাবার বন্ধুরা বলছেন, তাঁরা খাওয়ার পর বিদায় নিয়েছেন, ছোটদের ফুর্তি করতে দিয়ে। আমার সহপাঠীরা বলল, তারা এগারোটা পর্যন্ত পার্টিতে মশগুল ছিল। কেবল দুইজন আসিয়াকে তার ঘরের দিকে চলে যেতে দেখেছে। আর বেরুতে দেখেনি। আমি সেসময় ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় ঘরে ঘুমাচ্ছিলাম। বরকত সাহেব মুখকে কঠিন করে বললেন, আমি আসতে চাইনি। এসব হবে জানলে আসতামই না। মেহজাবিন আপু, মুনতাহার বড়বোন, আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ফুফিও এগারোটার দিকে চলে যান। মুনতাহাকে জিসান ভাই পরে বাসায় দিয়ে আসে। ফুফাতো ভাই মাহিন বললেন, আমার গানবাজনা ভালো লাগে না। মাথা ব্যথা শুরু হওয়ায় আমিও এগারোটার আগে বেরিয়ে পড়লাম।
বাবা দশটা চল্লিশের দিকে শুয়ে পড়েছিলেন বিধায়, তিনি আর কিছুই জানাতে পারলেন না। কে আসিয়ার ঘরে গেল, আসিয়া কবে বেরুল, কীভাবে বেরুল কেউই জানে না। মজিদ ভাই জানালেন, তিনি সবাই চলে যাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বাসার এবং গাড়ির একটি করে চাবি বাবার পর তাঁর কাছেই আছে এবং তিনি বাবার নির্দেশ ছাড়া কাউকে তা দেন না। সবশেষে আবির স্যাররা আমার কাছে বসলেন, কারণ বাবার চেয়ে আমিই আসিয়ার অতিরিক্ত ক্লোজ ছিলাম। ইতোমধ্যে অতিথিরা যেতে শুরু করেছে।
শুরুতেই প্রশ্ন শুনলাম, “আসিয়া কেমন মানসিকতার ছিল?”
তার স্মৃতিতে ডুবে গিয়ে বললাম, “ও অনেক ভালো। অনেক। আমাকে সৎবোন বলে কখনও ভাবেনি। কারও প্রতি ওর হিংসা ছিল না। তবে আপনারা তো জেনেছেন, মুনতাহাকে সে অপছন্দ করত। এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া ওর আর কোনো নেগেটিভ দিক ছিল না।”
তাদের আমি জানাই, আমাদের সম্পর্কের ইতিহাস, বাবা কীভাবে এখানে এক পরিবার নিয়ে থেকেছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর কীভাবে আমায় নিয়ে এলেন, সংক্ষেপে জানাই।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

আরিয়ান স্যার আবির স্যারকে বললেন, “কেসটা ততটা সিরিয়াস নয়।” যেন আমি অনুপস্থিত। “সম্পত্তির কারণেই হয়তো খুনটা হয়েছে।”
“তাহলে আমি কেন জীবিত আছি?”
আবির স্যার আরিয়ান স্যারের দিকে তাকিয়ে হাসলেন, “ভালো প্রশ্ন করল। জবাব দে।”
“আজকাল অনেককিছুই সম্ভব। এসবকিছুতে আগে যার অধিকার, যে এতদিন কিছুই পায়নি, শেষেও এখানে এসে দেখল উত্তরাধিকার আরেকটি আছে, সেও তো কাজটা করতে পারে।”
আরিয়ান স্যার আমাকে মিন করলেও আমি রাগলাম না। কারণ এটাই হয়তো ইনভেস্টিগেশনের অংশ, কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখা যাবে না। আমি দূরে তাকিয়ে দেখলাম, ধ্রুব একদৃষ্টিতে আবির স্যারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম। কারণ সে পারফেক্ট একটা কাজ করছে। আমিও আবির স্যারের চিন্তার সম্বন্ধে জানতে চাই। কেন কাল তিনি জঙ্গলে ছিলেন? বাসাটি কি তাদেরই? ওই রূপবতী মেয়েটিই কি তার স্ত্রী? আজাদ চাচাই কি বাসাটি ওদের দিয়েছেন? আমার দৃষ্টি লক্ষ করে আবির স্যার ধ্রুবকে ডাকলেন।
তিনি আচমকা আমাকে বললেন, “আমি এই পর্যন্ত ঘটা এখানের প্রতিটা ঘটনার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, কালরাত তুমি জঙ্গলে গিয়েছিলে। কী দেখতে গিয়েছিলে? ওখানে কী দেখেছিলে?”
এটা কেমন প্রশ্ন? কেস-এর প্রয়োজনে নাকি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে? “কিছুই দেখতে যাইনি।”
“তুমি জানো না, জঙ্গলটা ভয়ানক? ওখানে যে-কারো জান যেতে পারে?”
“রাগের ওপর কন্ট্রোল ছিল না।”
ধ্রুবকে প্রশ্ন করলেন, “তুমি জঙ্গলে ওকে কীভাবে পেলে?”
আমিও জানতে চাই।
“আমার সন্ধ্যার পর কাজ থাকে না। একটু বেরুই। তখন আসিয়ার লাশ পাওয়া জায়গাটা আমার দেখতে ইচ্ছে করল। আমি ওখানে গিয়ে কিছু দেখলাম না। মানে গর্তটা খুঁজে পেলাম না। তবে কিছু একটা ঝোপ করে পড়ার আওয়াজ শুনলাম। দৌড়ে গিয়ে দেখি, আলিয়া বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে।”
এটাই সত্য। কিন্তু কিছু কি বাদ দিয়েছে?
স্যার বললেন, “আলিয়া, তুমি কী কী দেখেছ?”
ঘুরেফিরে একটাই উত্তর জানতে চাওয়া, আমি তাদের দেখেছি কিনা। দেখলেও এখানে লুকানোর কী আছে? “সাপ, বাঘ, হরিণ,’ আমি উত্তরটা চালাকি করে দিচ্ছিলাম, “গাছ, মাটি, ঝোপঝাড়, অন্ধকার, কিছু কিছু জায়গায় চাঁদের আলো… ”
আবির স্যার রসিকতা মনে করে বিরক্ত হয়ে আমাকে থামালেন। হ্যাঁ, আমি এটাই চেয়েছিলাম। আমি কিন্তু শেষের দিকে আরও চারটির কথা বলতাম, সুন্দর একটি বাসা, একটা পিংক সাইকেল, এক অপরূপ মেয়ে এবং তার সাথে আপনি। কিন্তু উত্তরটা এভাবে দিয়ে যাই, যাতে তাকে এগুলো বলতে না হয়।
দুজনই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তবে কি ওই বাড়িতে আরিয়ান স্যারও থাকেন? তারা আজকের মতো এটুকু জিজ্ঞাসাবাদ করে তাড়ায় চলে গেলেন। আমি ধ্রুবকে জিজ্ঞেস করলাম, “আবির স্যার কী ভাবছিলেন?”
“বাপরে!”
“কী?”
“তার মাইন্ডকে পড়ার কথাটা ধরে ফেলেছ?”
“বলো না, প্লিজ।”
“তিনি ভাবছিলেন, কালরাত পশুগুলো কাকে দেখে হিংস্র হয়েছিল এবং কেউ তাদের দেখে ফেলেছে কিনা।”
“তোমার কিছু উদ্ভট লাগছে না?”
আমার চিন্তাটাই ওর মুখ দিয়ে শুনলাম, “পশুগুলো থাকার সত্ত্বেও ওরা কীভাবে ওই জঙ্গলে থাকছেন? আর বাস করলেও এতে লুকানোর কী আছে?”
“ওইগুলো হয়তো পালিত পশু।”
সে উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, “তুমি ওখানে আর কী কী দেখেছ?”
গেলাম আমি। “স্যারকে তার স্ত্রীর সাথে দেখেছি। কেন?”
“না, এমনিই। তার স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসা দেখে আমি রীতিমতো অবাক হয়েছি। দেখনি, কীভাবে এখান থেকে যাওয়ার তাড়ায় ছিলেন? তার স্ত্রীর জন্যই।”
“সে হয়তো অসুস্থ।”
“তুমি কী করে জানো?”
“কারণ সে পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারছিল না।”
“ওহ্। মেয়েটিকে আমার একবার দেখতে ইচ্ছে করছে।”
“কেন?”
“তোমাকে কেন বলব?”
হুহ্, প্রতিশোধ। আমারই প্রশ্ন আমাকে? “সরি। সকালের জন্য।”
সে হাসিমুখে সুতার ওই অংশটা বের করল, “আমি আবারও জঙ্গলে গিয়েছি। ওখানে পেয়েছি।”
“অসম্ভব। এতবড় জঙ্গলে..”
“যেখানে তোমার ওড়না, হেয়ার ব্যান্ড পেয়েছিলাম, ওখানেই পেয়েছি। একটু আগেই বলেছি, আমার সন্ধ্যার পর কোনো কাজ থাকে না। কোনো একটা কিছু নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখি।”
আমি আংটিটা আগে খুলে ফেলেছিলাম। সে এইবার নিজ হাতে পরাতে আমার হাত ধরল। আমার কেন যেন ইচ্ছে করল, ওর হাতটা দূরে সরিয়ে দেই। এমনটা আগে কখনও হয়নি। আমি তো ওকে ঘৃণা করি না! অপরদিকে সেও কিছুক্ষণ ইতস্তত করল। সে গম্ভীর হয়ে কিছু একটা ভেবে এইবারও সুতাটি পরায়নি, “তুমি নিজে পরে নাও।”
“এটুকু কিন্তু একটি আঙুলে পেঁচানোর জন্য যথেষ্ট লম্বা না।”
“হুম, তবু এটা সাথে রাখবে।” সে সুতাটি সোফায় আমার পাশে রেখে চলে যায়।
আমি সুতাটি নিজের হাতে নেই। কিন্তু সেটি ধরে এক ধরনের বাজে অনুভূতি হলো। আমার বিবেক বলছে, এই জিনিসটা ডাস্টবিনে ফেলে দিতে। মন বলল, এটা ধ্রুব দিয়েছে, তোমার বন্ধু। ওর অনুরোধটা কি তুমি রাখতে পারবে না? আমার বিবেক মনকে পরাজিত করল। কিন্তু আমি সুতাটি ডাস্টবিনে ফেলিনি। রুমালের ভেতর রেখে ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখলাম। আমি নিজের ওপর আশ্চর্যান্বিত হচ্ছি। এমনটা কেন করেছি, তারই সংজ্ঞা পাচ্ছি না। আর ধ্রুবের হাতটাই বা আমি এবার কেন দূরে ঠেলে দিতে চেয়েছি? আমার কী হয়েছে?
নিজেকে প্রশ্ন করতে করতে বেলকনিতে গেলাম। আবারও সেই বীভৎস গন্ধ আমার খোলা চুলের আশপাশ দিয়ে ছেয়ে গেল। আমার কেন যেন খারাপ লাগছে না। কিছুক্ষণ পর ঘরের দিকে যাব, এমন সময় আমি আসিয়ার চেহারা দেখতে পেলাম। এটা কি আমার চোখের ভুল? স্বাভাবিক মানুষের মতো চিৎকার করা উচিত হলেও আমি ভয়ে, আনন্দে জমে রইলাম। আসিয়ার শরীরটা অদ্ভুত দেখাচ্ছে, যেন সে বাতাসের সাথে মিশে রয়েছে। ওর শরীরকে বেধ করে ওর পেছনের দরজাটাও দেখতে পাচ্ছি। আসিয়ার চোখ নমনীয় হয়ে আছে। আমিও খুশিতে ওকে জড়িয়ে ধরতে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু যেই ওর পাশে যাই, অজ্ঞাত এক ঘৃণায় ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেললাম। আসিয়া ফ্লোরে পড়ে গিয়ে মুহূর্তে উধাও হয়ে গেল।
আমি বসে পড়লাম। আমার শুকনো গালদুটো ভিজতে শুরু করেছে। এটা কী করেছি? ও মোহ হোক বা আত্মা, ওর আত্মা আমার কাছে এসেছিল। আমি ওকে ধাক্কা দিয়েছি। কেন দিয়েছি? কিসের ঘৃণা? ও যখন পড়ে গিয়েছিল, তখন মুখকে মলিন করে রেখেছিল, যেন ধাক্কা দেওয়ায় কষ্ট পেয়েছে।
কী করব? কী করব? কেউ একজনকে এসব জানাতে হবে। কে আমাকে বিশ্বাস করবে? আমি তড়িঘড়ি করে ধ্রুবকে কল দেই। রিসিভ হওয়ার পর কাঁপতে কাঁপতে গড়গড় করে মুহূর্তটার কথা বলে গেলাম।
সে আতঙ্কিত হয়ে বলল, “তুমি কি নিশ্চিত ওকে দেখেছ?”
“হ্যাঁ। আমাকে প্লিজ পাগল ভেবে ব্যাপারটা উড়িয়ে দেবে না।”
“না, না। মানুষের ভ্রম হয় ঠিক, কিন্তু তুমি যেভাবে ব্যাখ্যা দিচ্ছ, আমার মনে হচ্ছে তুমি সত্যই দেখেছ। আমাদের মাঝে অনেকসময় এমন কিছু ঘটে, যা অকল্পনীয়। অনেক মৃতের অতৃপ্ত আত্মা ফিরে আসে। আমার মনে হচ্ছে, আসিয়ার আত্মা সন্তুষ্ট নয়। অনেকের মার্ডার হলেও খুনিদের ধরিয়ে দিতে আত্মা ফিরে আসে না। কিন্তু ওর এসেছে। বোধহয় ওর কিছু চায়। তুমি চেষ্টা করো ওকে আনার। হয়তো সে খুনিদের ধরিয়ে দিতে চায়, নয়তো অন্য কিছু।”
আমি কেঁদে কেঁদে বললাম, “আমার বোন হয়তো আর আসবে না। আমি ওকে ধাক্কা দিয়েছি।”
“হোয়াট? কেন?”
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার
[ধ্রুব কোনো ভ্যাম্পায়ার নয়। এমনটা কোনদিক থেকে লাগছে?]