“তিমির”পর্ব ৮

0
1257

“তিমির”পর্ব ৮

আমি প্রথমবারের মতো আবির স্যারদের বাসায় পা রেখেছি। বাসার চারিদিকের প্যাটার্ন পুরনো ধাঁচের হলেও খুব সুন্দরভাবে সজ্জিত। আমি বেশিকিছু লক্ষ করতে পারলাম না। কারণ এসব বিষয়বস্তু সাবিলাকে কাছ থেকে দেখার উত্তেজনায় চাপা পড়েছে। ওরাও সম্ভবত আমার কথা জেনে ফেলেছে।
আমি আবির স্যারদের সাথে সিঁড়ি বেয়ে ওপরের একটি ঘরে যাচ্ছি। দুপুরে এই ঘরেই আমি তাদের দেখেছিলাম। আমি ঘরে যেই ঢুকি, বিস্ময়ে কবে আমার মুখটা খোলা রয়ে গেল টেরই পাইনি। আবির স্যার তো আমার সাথে সবে এসেছেন। তবে বিছানায় শায়িত মেয়েটির পাশে কে বসে আছে? আমি অবাক চোখে চেয়ে রয়েছি। আবির স্যার আমার পাশ কাটিয়ে বিছানার দিকে তড়িঘড়ি করে গেলেন।
বিছানার কাছে ভিড় হয়ে আছে। আমি এখনও দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছি। হতে পারে, ইনি আবির স্যারের জমজ ভাই। কিন্তু এটা হতেই পারে না। এতটা মিল আমি কোনো জমজে আদৌ দেখিনি। হতে পারেই না। কারণ যিনি বিছানার একপাশে বসে আছেন, তিনি ধ্রুবের মতোই যেন স্বর্গীয়। তারা জমজ হলে একজন মানুষ, আরেকজন জ্বীন কী করে হতে পারে?
আমি এবার এই ব্যাপারটা থেকে চোখ সরিয়ে দেখলাম, বিছানার পাশে রাখা লম্বা টুলে সজীব স্যার বসে আছেন। আজ তাঁকে অনেকদিন পর দেখছি। কারণ আসিয়ার নিখোঁজ হওয়ায় বাবা তাঁকে কিছুদিন যেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তা নয়। স্যার এখানে কী করছেন? আমি আরও দেখলাম, স্যারের পাশে তাঁর স্ত্রী তাঁর কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকপাশে আরিয়ান স্যার দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর সাথে একটি মেয়ে কথা বলছে। সম্ভবত তার স্ত্রী। বিছানার যে পাশে আবির স্যারের বহুরূপী বসে আছেন, তার ঠিক বিপরীতে এক অপরূপ সুন্দর মেয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে। কোনো মেয়েকে এতটা সুন্দর হতে আমি এই প্রথমবারই দেখছি। আমি মনে হয়, জীবনে কিছু দেখিইনি। আমার কেন যেন হিংসা হচ্ছে। এই মেয়েটির চুল কোমর অবধি ছড়িয়ে পড়েছে। তার পরা সাদা ড্রেসটা তার গায়ের রঙের সাথে পারফেক্টলি মিলে গেছে। তার চোখ, ভ্রূ, ঠোঁট, মুখের আকার সবই দেবদূতের ন্যায়। তার বয়স হয়তো বিশ-একুশই হবে। আবির স্যার ইতোমধ্যে গিয়ে বিছানার কিনারায় বসে পড়েছেন। আমি এতক্ষণ অন্যদের লক্ষ করায় বিছানার মানুষটিকে দেখিনি। এখন স্যারের কারণে দেখতে পারছি না। আমি একটু এগিয়ে যাই, ভয়ে, বিস্ময়ে ছোট ছোট পদক্ষেপ নেই। আমি এদের মাঝে একদমই মানানসই নই।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


ঘরের চারিদিকটা সুগন্ধে টগবগ করছে। এতক্ষণে বিছানায় বসে থাকা দেবদূত দুটো আমার দিকে তাকিয়েছে। তাদের চোখে রাগ স্পষ্ট। আবার তারা আবির স্যারের দিকে তাকান। এরপর তাদের চোখের নম্রতা ফিরে আসে, যেন আমি কে, কেন এসেছি, তা বিনা বাক্যব্যয় করে আবির স্যারের মাইন্ড থেকে জেনে নিয়েছেন। আমার কমন সেন্স বলছে, তারা এবং ধ্রুব একই হলে, তাদের জাতের বাকিরাও হয়তো মাইন্ড পড়তে পারে।
আমি বিছানার কাছে গিয়ে দেখলাম, সাবিলা উল্টো করে শুয়ে রয়েছে। তার পিঠের দিকটা উঁচিয়ে রয়েছে। সাবিলা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কী হয়েছে তার? আবির স্যার তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, “তোমার ব্যথা কি আমি কোনোভাবে কমাতে পারি না?” কি ভালোবাসা!
সাবিলা বালিশে মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায় মাথা নাড়ল। আবির স্যারের চোখেও পানি দেখতে পাচ্ছি। এতক্ষণে চোখ পড়ল সাবিলার পিঠের উপর। তার পিঠ দেখেই ভয়ে আমার অসার হওয়ার জোগাড়। জায়গাটা রক্তাক্ত! ঠিক তখনই, সাবিলা উচ্চস্বরে গুঙিয়ে উঠল। সাথে সাথে সবাই আতঙ্কিত হয়ে তার ওপর ঝুঁকে পড়ল।
সাবিলা আবারও নীরবে গুঁজে কাঁদতে লাগল। আবির স্যারের চোখগুলো যেন আপ্রাণ চেষ্টা করছে, ছিঁড়ে গিয়ে নোনতা পানি যতগুলো আছে, সবই কোটর থেকে বের করে দিতে। খেয়াল করলাম, আমিও অনেক চিন্তিত। চোখে পানিরা ভর করেছে। আরিয়ান স্যারের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, “ওর কী হয়েছে?”
তিনি বিরস মুখে বললেন, “এই কষ্টটা সে দুই বছর আগে থেকে পাচ্ছে। শুরুতে মৃদুভাবেই তার পিঠে ব্যথা করত। এরপর ক্রমশ ব্যথাটা বাড়তে থাকে। একসময় ওর পিঠে দুটো লম্বা দাগ দেখা যায়। বিগত ছয়টা মাস সে অনেক দুর্বল ছিল। হাঁটার শক্তিও পেত না। আবির সবসময় তার চলাফেরায় সাহায্য করত। এইদিন সে সাইকেল চালানোর জেদ ধরেছিল। আবির অগত্যা তাকে চালাতেও দেয়। কিন্তু সেদিনের ঘটনার পর তার এভারেজ অসুস্থতা মারাত্মক পর্যায়ে গিয়েছে। মানে সাইকেলে বল প্রয়োগ করার দরুন ওর পিঠে টান পড়েছে। সেই টানে ওর পিঠ দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করেছে। ‘ওর’ ডাক্তার দেখানো নিষেধ। সাবিলা এই যাবৎ বিছানায় আছে। রক্তগুলো নির্দিষ্ট সময় পরপর মুছে দেওয়া হয়।”
“ওর এই অবস্থায় আবির স্যারের ইনভেস্টিগেশন করতে আমাদের বাসায় যাওয়া তো উচিত নয়।”
আমার এমন প্রতিক্রিয়ায় সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়। আমি পরোয়া করলাম না।
“সাবিলার পছন্দ নয়, তার কারণে আবির কোনোপ্রকার ঘরকুনো হয়ে থাকুক। তাছাড়া নাঈমা, আমার স্ত্রী নাদিয়া ওর খেয়াল রাখে।”
আমি সাবিলার পাশে বসতে যাচ্ছি। তার পাশের অপরূপ মেয়েটি জায়গা করে দিলো। সে একভাবে আমার দিকে চেয়ে আছে, যেন আমাকে পড়ার চেষ্টা করছে। সাবিলাকে অসম্ভব মোটা দেখাচ্ছে। কিন্তু কেবল শরীরের দিক থেকেই। তার গালে হাত দিয়ে আমি তার চোখের পানি মুছে দেই। অবাক হওয়ার বিষয়, সে দেখতে ধ্রুবের মতো হলেও ওর ত্বক মানুষের মতোই। সাবিলা আড়চোখে একবার আমার দিকে তাকায়। আমি কীভাবে যেন ওর ব্যথার ধরন আন্দাজ করে ফেলতে পারছি। ওর মুখেই সেই ব্যথার ছবি স্পষ্টভাবে আঁকা। যেন ওর মাংস ছিঁড়ে কিছু একটা বল প্রয়োগ করে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
আমি ব্যথাটা যেন নিজেও অনুভব করছি। আমার ভেতরটা ছটফট করছে, অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। ঝিম ধরে ঠোঁট কামড়িয়ে বললাম, “সাইকেল চালানোর কারণে নয়, ওর পিঠে ডানা গজাচ্ছে। আই অ্যাম শিওর।”
সবাই আমার দিকে বিস্মিত হয়ে তাকালো। সামনের স্বর্গীয় রূপবতী মেয়েটি বলল, “কী বললে?”
অন্যপাশ থেকে আবির স্যারের বহুরূপী বলল, “আমি তোমাদের বলেছিলাম, ওর হয়তো ডানাই গজাচ্ছে।”
“কিন্তু আমাদের ডানা তো জন্মের সময়ই আমরা পেয়ে যাই।”
“আহ্, সাবিলা আমার মেয়ে।” হোয়াট? এই বিশ-বাইশ বছর বয়সী সুপুরুষ সাবিলার বাবা? তিনিই কি সেই ব্যক্তি, যিনি মানুষ হয়েও এক পরীকে ভালোবেসেছিলেন? “ও তো মানুষ হিসেবেও জন্মগ্রহণ করেছে। হয়তো ওই কারণেই তোমার মতো জন্মের সময়ই ডানা পায়নি।”
আর সামনের পরীটিই হয়তো সাবিলার মা। শী ইজ সো ইয়াং। তাকে সাবিলার সমবয়সীই মনে হচ্ছে।
সবাই চিন্তায় মগ্ন। একটা গন্ধে আমার ইন্দ্রিয়গুলো সজাগ হয়ে উঠল। কান আমার খাঁড়া হয়ে গেল। সাবিলার গন্ধটা ভারী মিষ্টি, ভিন্ন। পুরোপুরি ধ্রুবদের মতো স্বর্গীয় নয়। হয়তো মনুষ্য গন্ধ ওই সুগন্ধের সাথে মিশ্রিত হয়ে এই গন্ধটাকে মিষ্টি করে তুলেছে। ওর ব্যথার ধরন উপলব্ধি করে আমি এখনও কষ্ট পাচ্ছি। হাত আমার কাঁপছে। ইচ্ছে করছে বাতাসে গিয়ে বুক ভরে শ্বাস নেই। ও আচমকা আমার কাঁপা হাত শক্ত করে ধরল, “মেয়ে.. তুমি,” সে অতিকষ্টে বলল, “তোমার নামটা কী? তোমার চিন্তা পড়তে কেন পারছি না? প্লিজ, আমার সাথে থাক। তুমি অদ্ভুত ভালো।’
বিছানার বাকি দু’জন অমানব সাথে সাথেই বলল, “আমরাও ওকে পড়তে পারছি না।”
হায় কপাল! আমার মাথার কি তার ছেঁড়া? আমি কি মানসিকভাবে অসুস্থ? কেউ আমাকে পড়তে কেন পারে না?
আমার কাছে ওদের স্বর্গীয় গন্ধটা খারাপ লাগতে শুরু করছে। তবু আমি এখানে থাকতে চাই। এজন্যই মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছি। সাবিলার হাতটা সরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ওর মমতা আমাকে তা করতে দিচ্ছে না। আমাকে অদ্ভুত ভালো কেন বলেছে সে?
কিছু একটা ছেঁড়ার শব্দ হলো, যেন কাপড় ছিঁড়ছে। আমরা সকলেই সাবিলার দিকে তাকালাম। ওর ব্যথার তীব্রতা এতই বেশি যে, ও চিৎকার করতে চাইছে, কিন্তু আওয়াজটা বেরুচ্ছে না। ও বালিশ কামড়ে রেখেছে। আমি বাধ্য হয়েই আমার অন্য হাত কামড়ে রাখলাম, ওর ব্যথাটা অনুভব করে। দাঁতগুলো হাতের কামড়ানো অংশে রক্ত নিয়ে আসছে। এই শীতে ফ্যান চলার সত্ত্বেও আমরা দু’জনই ঘামছি। দু’জনই গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করছি। সাবিলা একসময় ঘর কাঁপানো একটা চিৎকার দিয়ে বিছানা থেকে মুহূর্তেই, পলক না পড়তেই দূরে দেয়ালে গিয়ে ছিটকে পড়ল। বাকি ঘটনাগুলো মুহূর্তের মধ্যেই হয়ে গেল।
সে যখন পিঠ ওপরে রেখে ফ্লোরে পড়ল, তখন আমরা দেখতে পেলাম, তার পিঠে রক্তাক্ত কিন্তু ঝকঝকে দুটো একহাত লম্বা ডানা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি অজ্ঞান হতে গিয়ে হলাম না, কারণ আমার চেতনার মাঝে বিস্ময় খেলা করছে। সাবিলা যে মুহূর্তে দেয়ালে ছিটকে পড়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই তার মা বড় বড় দুটো ডানা ঝাপটিয়ে এবং অপরদিকে তার বাবা মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে থাকা অবস্থায় বাকি মানুষের আগেই সাবিলার কাছে পৌঁছে গেল। আমি এতো বড় ঝকঝকে ডানা জীবনে এই প্রথমই দেখছি। ডানগুলোর শেষ অংশ তো ফ্লোরকে ছুঁইছুঁই।
সাবিলা বলল, “আবির, আমার ডানায় রক্ত আছে?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে একটু পরিষ্কার করে দাও।” কিন্তু তখনই দেখলাম, তার ডানাগুলো অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। বাকিরা তাকে ঘিরে থাকা অবস্থায় আবির স্যার সাবিলাকে কোলে নিলেন। এখন বুঝছি, কোলে নেওয়ার জন্যই সে ডানাগুলোকে অদৃশ্য করেছে। কিন্তু কীভাবে করে এই কাজ?
স্যার তাকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার সময় তার পিঠের দিকটা আমার চোখে পড়ল। কাপড় ওখানে ছিঁড়ে গিয়েছে। আর ওই জায়গাটি রক্তাক্ত। ডানাগুলো পিঠের উপরের যে অংশে বেরিয়ে এসেছিল, সেই জায়গার মাংস ছিঁড়ে আছে। তাহলে সাবিলা এখনও ব্যথা পাচ্ছে। ওর ব্যথার কথা ভাবতেই আবারও আমি ছটফট করতে লাগলাম। এবার আমি নিচে গিয়ে কয়েক মিনিট ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে ঠান্ডা বাতাস বুকে ভরলাম।
সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে। একটি মেয়ে আমায় পানি এনে দেয়, সজীব স্যারের স্ত্রী নাঈমা। সে হয়তো আমার ছটফটানো লক্ষ করেছে। আমি সুস্থ হয়ে ভেতরে এসে দেখলাম, আবারও সবাই সাবিলাকে ঘিরে বিছানার এধার-ওধার বসে রয়েছে। আবির স্যার তার পিঠে ব্যান্ডেজ করছেন। সাবিলার সন্ধানী চোখ দেখে আমি তার সামনে গেলাম।
“তুমি আলিয়া না? তোমাকে কেন পড়তে পারছি না?”
তার বাবা বলল, “সে হয়তো রক্তের প্রতি দুর্বল। হয়তো ও বেশি দুর্বল এজন্যই ওর মাইন্ডে ঢোকা যায় না।” তিনি হয়তো খুব বুদ্ধিমান।
“আমি কিন্তু রক্তকে ভয় পাই না।”
সাবিলা বলল, “তবে?”
“তবে কাটাছেঁড়াকে ভয় পাই।”
“না, তোমার মাঝে অন্যকিছু আছে।”
“কী?”
“আই ডোন্ট নো। আমি দেখেছি, তুমি কিন্তু আরেকজনের ব্যথা নিজের মতো করে ফিল করতে পার।” এজন্যই বুঝি সে আমাকে অদ্ভুত ভালো বলেছে। “এটি তোমার দুর্বলতা হলেও শক্তির চেয়ে কম নয়। তোমার মাইন্ড এজন্যই হয়তো স্ট্রং। তাই তোমাকে আমরা পড়তে পারছি না।”
বাকিরা আমার দিকে তাকালো। তারা আমাকে খামখা অনন্য ভাবছে। এমন কিছু আমার মনে হয় না।
আবির স্যার সহমত হয়, “হ্যাঁ, সে অনেক ধূর্ত। সাবিলার অস্বাভাবিকতা ঝট করে ধরে ফেলেছে। এজন্যই বেশিক্ষণ সত্য লুকাতে পারিনি নিষেধাজ্ঞার সত্ত্বেও।”
“কিসের নিষেধাজ্ঞা?” এতক্ষণে মনের খোরাক মেটানোর মতো একটা প্রশ্ন করতে পারলাম।
পরীটিই বলতে লাগল, “সর্দারের। আমাদের পরীলোকের সর্দারের। আমরা কেউ মাটিতে সহজে আরোহন করি না। আমাকে আমার সঙ্গি আদিলের জন্যই ভূমিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখানের কিছু লোভী লোক, আমাদের জাতের শক্তির অপব্যবহার করতে চেয়েছিল। এসবের কারণে অনেকের প্রাণও গেছে।” সে আবির স্যারের বহুরূপীর দিকে তাকায়, “আমি কয়েক বছরের জন্য আমার ভালোবাসা আদিলকে এবং ডানাকেও হারিয়েছিলাম। অনেক ভয়ানক, লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে, যা আমি মনে করতে চাই না। এটুকু অবশ্য বলছি, এসব কারণে আমাদের ভুবনে বিপত্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। এসবে কেউই সন্তুষ্ট ছিল না। মানে আমার পৃথিবীতে আসা, এতো এতো মানুষের পরীদের সম্বন্ধে অনেক গোপন তত্ত্ব জেনে ফেলা, এখানে আমার প্রভাব বিস্তার করা সবই তাদের নাখুশ করেছিল। করারই কথা। ভূমির সৃষ্ট ভূমিতে, আকাশের সৃষ্ট আকাশেই মানানসই। দুই জীবন মেলা মোটেও ঠিক নয়। কারণ দুটো দলই অনেক ভিন্ন। এজন্য সর্দার নিয়ম করেছেন, কাউকেই আর পৃথিবীর মাটিতে বেশিক্ষণের জন্য আরোহন করতে দেওয়া হবে না। আর আপাতত যেটুকু প্রভাব বিস্তৃত হয়েছে, তাতে সংযত করে চলতে হবে।
সাবিলাকে নিয়ে অনেক কথা উঠেছিল। তাকে আমাদের কাছেই নেওয়ার হুকুম সর্দার দিয়েছিলেন। কিন্তু সে মানুষও বটে। আমরা যতক্ষণ অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে থাকতে পারি, সাবিলা ততক্ষণ পারে না। আর সে বেশিক্ষণ অদৃশ্যও থাকতে পারে না। ওকে সর্দার ধ্বংস করে ফেলার কথা ভেবেছে। অনেক বুঝানোর পর ওকে আমরা রক্ষা করেছি, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে, ওরা পৃথিবীতে লুকিয়ে থাকবে। জন সাধারণের মাঝে নিজেকে মিশাবে না। আর ওকে রক্ষা করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল, ওর ভালোবাসা আবির। একজন মানুষ। সর্দার ওকে এখানে জীবিত রাখতে বাধ্য হন, কারণ আমরা কেউই একে অপরের ভালোবাসা ছিনিয়ে নেওয়া পছন্দ করি না। কারণ এটি ছাড়া আমরা অচল।
তো শহরে বাসা থাকার সত্ত্বেও ছোট্ট এই গ্রামের এই জঙ্গলের বাড়িটায় আরিয়ান, আবির, সজীব, নাঈমা, নাদিয়া আর সাবিলা থাকে। পরিবার-পরিজন থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। সাবিলাকে ওরা অনেক ভালোবাসে। ওর অনেক জোরাজুরির কারণেই ছেলেরা বেশ কিছুদিন পর থেকে কর্মস্থলে যেতে শুরু করেছে। ওর কারণে আবিরের ইনভেস্টিগেশন ছেড়ে দেওয়া সাবিলার একদম ভালো লাগেনি। পরবর্তীতে সে এখানের বেসরকারি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেছে। শুনেছি তোমাদের একটি কেস আরিয়ানের ওপর পড়েছে। কাছে হওয়ায় আবিরকে সাবিলা উদ্বুদ্ধ করায় সে যাচ্ছে। কিন্তু এসবও আমাদের বিপদে ফেলছে। তুমি আমাদের সত্য জেনে গিয়েছ। এ নিয়ে সর্দার না জানি কী করে বসবে।”
এজন্যই আমার মনে হয়েছে, আমি যেন আবির স্যারদের জীবনে কাঁটার ন্যায় আছি। সত্যিই, নিজেকেই কাঁটাই মনে হচ্ছে। “আমি সত্যিই কাউকে কিছু বলব না। বিশ্বাস করুন।”
“ভাগ্যিস, তোমার মাইন্ড পড়া যায় না। সর্দার কিছু বুঝবে না। আর আমাদের জাতের সবাই মস্তিষ্ক থেকে কেবল বর্তমানকালের চিন্তাভাবনা পড়তে পারে। কারো ইতিহাস জানতে পারে না। তবে হ্যাঁ, আমাদের ওখানে এক বিভাগ এমন আছে, যারা হাত ধরেই যে-কারো ইতিহাস জেনে ফেলতে পারে। তাদের হাতের শক্তি আমাদের বাকিদের তুলনায় খুব বেশি।”
ধ্রুব বুঝি এই বিভাগের? সে তো আমায় পড়তে পারে না। তবে সেই বিভাগের শক্তিও কি আমার সামনে অকৃতকার্য থাকবে?
“আপনারা কেমন বিভাগের?”
“বিভাগগুলো মাত্র আনুমানিক দশজনের। বিভাগ বলতে পরিবারই। আমি যে পরিবারের সদস্য, সে পরিবারে মায়ের পর আমিই অত্যন্ত ক্ষমতাধারী। ওই বিভাগের হাতের শক্তির ন্যায়, আমাদের বিভাগে আমার চোখের শক্তি বেশি। তুমি যদি স্ট্রং মাইন্ডেড না হতে, তবে আমি তোমার বায়োডাটা জেনে ফেলতাম। আমি চোখের ইশারায় সহজেই সবকিছুর ওপর অধিক নিয়ন্ত্রণ পাই, এতটা শক্তি আমার চোখের।” তিনি হাসলেন, “সাবিলাও কিছুটা পেয়েছে। সে চোখের ইশারায় ট্রাককেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।”
আমার মুখ হা হয়ে রইল।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share