“তিমির”পর্ব ১০

0
1176

“তিমির”পর্ব ১০

আমি বারান্দায় এলে দূরে অন্য এক ভবনের সামনে ধ্রুবকে দেখতে পেলাম। সে হয়তো জিসান ভাইয়ার সাথে সাথে আমার জন্যও অপেক্ষা করছে। আমার হাঁটার গতি কমল না। যত দ্রুত সম্ভব, নিচের দিকে তাকিয়ে আমি বারান্দা পার করলাম।
ধ্রুব বিস্ময় নিয়ে বলল, “তুমি কি কাঁদছ?”
আমি কোনো জবাবদিহি করতে চাই না। এমন পরিস্থিতি আমার জীবনে আর কখনও আসেনি। আমি গেইটের দিকে পা বাড়াই। অমনিই ধ্রুব আমার হাতের কনুই ধরল। আমি ঘুরে তাকালে সে হাতটা নামিয়ে ফেলল।
“তোমাকে আমিই নিয়ে এসেছিলাম। আমি ড্রপ করে দেবো। তার আগে বলো, কী হয়েছে? কেউ কি কিছু বলেছে?”
“কে বলেনি তাই জিজ্ঞেস কর।”
সে অবাক হয়, “কী হয়েছে?”
“আমার কাছ থেকে নাকি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।” দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, “বিশ্বাস করো, আমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছি। এই যাবৎ আমি পারফিউম ছাড়া কি চলাফেরা করিনি?”
“ওহহো, তুমি এই সামান্য বিষয় নিয়ে কেঁদো না প্লিজ। দেখো, গন্ধটা আমার কাছে তো লাগছে না।”
লাগবেই বা কী করে। তোমাদের সুগন্ধ এতই তীব্র যে, তোমাদের নাকে সহজেই অন্য কোনো গন্ধ পৌঁছবে না। আমার হঠাৎ মনটা অস্থির হয়ে উঠল। কপালের দুই পাশে ব্যথা করতে লাগল। “তাহলে সকালে আসার সময় গাড়িতে অমনটা বললে কেন?”
“ড্রাইভার আর ভাইয়া অস্বস্তি বোধ করছিল বলে। ওসব ছাড়। তুমি বলো, তুমি সুস্থ আছ তো?”
“হ্যাঁ।”
“কেমন? তোমার চোখের নিচে তো কিছুটা কালচে দেখাচ্ছে।”
“হয়তো আসিয়াকে মিস করার কারণে।”
“সে কি আর দেখা দেয়নি?” সে খুব স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করল।
“কালরাত আরেকবার দেখেছিলাম। কিন্তু সে অনেক দূরে ছিল।”
“ওহ্। দেখ, কী হয়। তবে প্লিজ বলব, নিজের খেয়াল রেখ। উল্টাপাল্টা কিছু করো না।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

জিসান ভাই এলে বললেন, তিনি বন্ধুর সাথে বাইকে করে চলে যাবেন। হয়তো গন্ধটা তিনি সইতে পারবেন না। তার সাথে আমি রাগ করতে পারলাম না। কারণ তার সোনালি মুখখানা দেখে একজনের পরম ভালোবাসায় বলা একটি কথা মনে পড়ে গেল, Sun my sun. আমি ধ্রুবের সাথে গাড়িতে উঠলাম। সে বলল, “তোমার হাতটা একটু দেবে?”
“কেন?”
“তোমার স্বাস্থ্য পরখ করব। দেখি, কাজ হয় কিনা।” তাকে আমার বামহাতটা দিলে সে বলল, “সুতাটি কোথায়?”
“ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে।”
“আমার মনেও হয়েছিল।” হুম, আমার হৃদস্পন্দনের আওয়াজ কম কেন পাচ্ছ, তা থেকে হয়তো অনেক আগেই আন্দাজ করেছ যে, ওটা আমি পরছি না।
“মন খারাপ করো না।”
“আরে না। তোমার নিজ স্বাধীনতা অনুযায়ী তোমার যা ইচ্ছা হয়, করতেই পারো।”
আমার হাতটা ওর অদ্ভুত কোমল দুটো হাতের মধ্যে বন্দি হওয়ার পর সে চোখ বন্ধ করে গভীরভাবে মনোনিবেশ করল। কয়েক মিনিট পর পর আমার অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। ইচ্ছে হয়, হাতটা টেনে নেই। মনে হচ্ছে, ওর কাছ থেকে কেমন এক বিকর্ষণ কাজ করছে। কিন্তু আমি ওকে অপছন্দ করি না। বরং সব ফ্রেন্ডের চেয়ে বেশি পছন্দ করি। আজকের দিনে সে একজনই ছিল, যে কিনা আমার সাথে অনেকক্ষণ নিঃসঙ্কোচে থাকছে।
মাত্র দশ মিনিটের রাস্তা ছিল। আমার বাসার সামনে গাড়ি থামলে দুইজনই নেমে পড়ি। এতক্ষণ আমার হাতটা ওর হাতেই ছিল। সে বলল, “আমি কি তোমার বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ বসতে পারি?”
“কেন নয়?”
আমরা বাসায় চলে এলাম। মনে হচ্ছে, আমার কপালটা ফেটেই যাবে। মাথাটা ভারীও হয়ে আছে। ধ্রুব কী ভাববে তার পরোয়া না করে আমি অ্যাপ্রোন না খুলেই বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আমি যেন একটা রোগী, এমন ভাব নিয়ে ধ্রুব বিছানার একপাশে বসল।
“তো কী জেনেছ? আমার হাত কী জানিয়েছে?”
“তোমার কি ঘুম আসছে?”
“না, মাথাটা ভারী হয়ে আছে।”
“এমনি কি ঘুমে কোনো পরিবর্তন এসেছে?”
“হ্যাঁ, আমি আজকাল বেশি ঘুমাই।”
“মিলে যাচ্ছে। আই থিংক, আমার লজিক কিছুটা কাজ করবে। দেখ, আমি গোটা দশটা মিনিট ফিল করেছি, তোমার মস্তিষ্ক স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উত্তেজিত। আমি অবাক আর চিন্তিত, একটা সেকেন্ডের জন্যও তোমার মস্তিষ্ক স্বাভাবিক ছিল না, যেন তুমি কিছু একটার বিরুদ্ধে লড়ার প্রবল চেষ্টা করছ, হয়তো সফলও হচ্ছ। এটা যে কারো দ্বারা সম্ভবও নয়। তোমার কাজটা অনেক কঠিন, যে কারণে তোমার মস্তিষ্ক বেশিক্ষণ লড়ে যেতে পারছে না। মস্তিষ্কের ক্লান্তির কারণে তুমি অসুস্থ বোধ করছ। মাথা ভারী লাগা, কপাল ব্যথা হয়ে যাওয়া এসব মস্তিষ্কের পরিশ্রমের কারণেই হচ্ছে। তুমি কি ভাবছ একটু বলো? তুমি কি অনেক বেশি চিন্তিত?” আমি কিসের বিরুদ্ধে লড়ছি?
“না তো।”
“তবে তুমি স্বাভাবিক মানুষের মতো কেন বেহেভ করছ না? তুমি কি আসিয়াকে বেশি মিস করছ?”
“হুম। যদিও সে আমার সাথে নেই, আমি ওকে অনেক ভালোবাসি।”
“কীভাবে পার?” ওদের জগতে হয়তো ওদের পরস্পরের সঙ্গ থাকা লাগে।
“আসল ভালোবাসার জন্য শরীরের প্রয়োজন হয় না।”
“তাই?” সে বিড়বিড় করল, “মানুষের মাঝে কত ইন্টারেস্টিং ব্যাপারই না থাকে।”
আমি শুনেও না শোনার ভান করে রয়েছি। ধ্রুব একভাবে বসে রয়েছে। সে আমার কপাল টেপে দিতে লাগল। কি যত্ন। এমন সময় বাবা এলেন। ধ্রুব একবিন্দুও নড়ল না। বাবা ডাক্তার আনতে চাইলেন, আমি নিষেধ করে দেই। তিনি ধ্রুবের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে চলে গেলেন। ধ্রুবের অদ্ভুত কোমল হাতের স্পর্শে আমি অনেকটাই রিলেক্সড ফিল করছি। তারপর আবারও বিকর্ষণ কাজ করায়, ওর হাতটা সরিয়ে দেই।
আমি বেশ কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। তার সত্য জানার পর এখনই তাকে ভালোভাবে দেখার সুযোগ পাচ্ছি। অনেক সুন্দর সে। তার মনটা আরও বেশি সুন্দর। কে হবে এই মনের অধিকারিণী? কোন সৌভাগ্যবতী? যদি ক্ষমতা থাকত, তবে তার মনটা স্বচক্ষে একবার দেখে নিতাম।
“এভাবে কী দেখছ?”
“তোমাকে।”
সে ভ্যাবাচ্যাকা খায়, “কেন?”
“তোমাকে এঞ্জেল হিসেবে কখনও দেখিনি। তাই।” আমার মুখ ফসকেই বেরিয়ে যায়।
সে আরও অস্বস্তি ফিল করল, “মানে? বুঝিনি।”
“ধ্রুব, ভয় পেয়ো না প্লিজ… আমার বন্ধু। আমি কাউকে কিছু বলব না।”
সে ঢোক গিলল, “তুমি আজকাল কি আবির স্যারদের বাসায় যাও?”
“হ্যাঁ। ওদের সত্যও আমি জানি। তুমি ওদের ওপর নজর রাখছিলে। রাতে ওখানে আমার যাওয়াও দেখেছিলে। তাই না?”
ধ্রুব অন্যদিকে মুখ ফেরাল। অনেক বড় একটা শক সে কাটিয়ে উঠতে পারছে না।
“তুমি ওদের ভয় কেন পাও বল তো। সাবিলা প্রায় তোমারই মতো।”
“তুমি অনেককিছুই জানো না। আমি আমার নিজের জাতের লোকের আশেপাশে যেতে চাই না।”
“কেন?”
“এটা বলো, সাবিলার সত্য তোমায় কে বলেছে?”
“ওর ডানা গজিয়েছে। আমি ওর মা-বাবাকেও দেখেছি।”
ধ্রুবের মুখে আতঙ্ক ছেয়ে গেল, “ওরা কবে কীভাবে এসেছে?”
“সাবিলাকে দেখতে এসেছিল। হয়তো অদৃশ্য হয়ে। তোমরা কি একে অপরকে দেখতে পাও না?”
“পাই। অদৃশ্য কয়েকভাবে হওয়া যায়। একভাবে, মানুষ দেখতে না পেলেও আমরা আমাদের দেখতে পাই। অন্যভাবে, আমাদের জাতের অদৃশ্য কাউকে মানুষ কি আমরাও দেখতে পাই না। আমি বুঝছি না, আমাদের তো নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে ওরা তোমায় সত্য কেন বলেছে?”
“ওরা বলেনি। আমি নিজেই জেনেছি।”
“ইউ আর ইম্পসিবল।” ওর কণ্ঠে কিছুটা রাগ মিশ্রিত ছিল।
“ওদেরও জানিয়েছি, আমি কাউকে কিছুই বলব না। ওরা বলেছে, তোমাদের সর্দার হয়তো আমাকে পড়তে পারবে না। আর আমি এতটা জ্ঞানী নই। আমি তোমাকে আসল রূপে জঙ্গলে দেখে তোমার সাথে সাবিলার মিল পেয়ে তোমাদের চিনতে পেরেছি।”
“ওহহো, কেন জঙ্গলে কেউ নেই ভেবে নিজের শক্তির ব্যবহার করছিলাম!”
আমি হাসলাম। “জানো, সাবিলা আমার ভালো এক বন্ধু হতে চলেছে।”
“অভিনন্দন”, ব্যঙ্গ করে সে বলল, “মনে হয়, পৃথিবীতে এসেছ কেবল অমানুষদের সাথেই বন্ধুত্ব করতে।”
“হা হা হা। তুমি জানো, তুমি আর সাবিলা আমার পাশে থাকলে আমার খুব ভালো লাগে। মনে হয় আমি কখনও কিছু হারাইনি। হারালেও হারানোর বিনিময়ে পেয়েছি।”
“আচ্ছা, প্লিজ, ওদের আমার কথা জানাবে না।”
“ঠিক আছে।”
ওর মুখে স্বস্তি ফিরে এলো। “কালও কি আমি তোমায় পিক করব? যদি মাইন্ড না করো।”
আমি ঠোঁট কামড়ালাম, “আমি কলেজে যাব না।”
“কেন?”
“আজকে যা হয়েছে তা আমি আর রিপিট করতে চাই না। পড়াশোনা তো কোথাও চলে যাচ্ছে না। আমি নিজেকে রিকভার করতে চাই। অন্তত একটি মাস।”
“তাই ভালো। তোমার রেস্ট করা উচিত। আমিও কলেজে তেমন যাই না। পরীক্ষার এখনও অনেক সময় বাকি আছে। আমি তোমার আশেপাশেই থাকব।”
“এই, আমার ওপর নজর রাখার দরকার নেই। আমি সত্যিই কাউকে কিছু বলছি না।”
“আই রিয়েলি কেয়ার ফর ইউ। আমরা মানুষের মতো স্বার্থপর নই।”
“তাহলে তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য।”
“মানুষগুলো ভালোও বটে।”
আমি হাসলাম। এটা আমাকেই মিন করে বলা হয়েছে। আমি অনেক নিশ্চিন্ত বোধ করছি। এতটাই করছি যে, ওর গন্ধটা আমার খারাপ লাগলেও তা টের পাইনি।
ধ্রুব চলে গেলে আমি একা হয়ে পড়লাম। নিরুপায় হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম থেকে উঠে বিকেলেই লাঞ্চ করি। আবির দুইদিন আসবে না। আমার আজকের দিনটা বিরক্তিকর ভাবে কাটছে। রাত আসে। ঘুমাই। আবারও দিন হয়। দুপুর ফুরায়।
খুব শূন্যতা অনুভব করছি। সাবিলার কথাই সর্বপ্রথম মনে পড়ল। আমি কাউকে না জানিয়ে বেরিয়ে গেলাম। আগে জঙ্গলের যেদিক দিয়ে ঢুকে পড়তাম, সেদিকে আমায় পশুরা ধরতে পারে। বাড়িটায় যাওয়ার আরেকটা পথ পরশু দেখেছি। আমি সেই অনুযায়ী চলছি। জঙ্গলে ঢোকার পর আমার অস্বস্তি বোধ হতে লাগল। কারণ এসব গাছেও অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। এরা সাক্ষী, অমানবের বসবাসের। আমার শূন্য মন কেবলই উল্টাপাল্টা কথা ভাবছে। মনে হচ্ছে, এই যেন কেউ এসে পড়বে, মানুষ… অমানুষ। আমি এই নিস্তব্ধ জায়গার একটি গাছের নিচে মৃদু শব্দ পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কোনো পশু লুকিয়ে আছে নাকি? চারিদিকে তাকানোর পর কী ভেবে হঠাৎ গাছের ওপরে তাকালে ভয়ে আঁতকে উঠি। মুখ থেকে অস্ফুট এক শব্দ বেরিয়ে এলো। পরক্ষণে আদিলকে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করলাম।
“আপনি তো আমায় ভয় পাইয়ে দিয়েছেন।”
“হা হা হা।” কি সুন্দর এই হাসি! তার গালেও দুইপাশে টোল পড়ে। তিনি আর আবির একই কেন, তাই জানা হলো না।
“কী করছেন ওখানে?”
“আমার কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা করতে এসেছি। কারো মানে তোমার হাঁটার আওয়াজ শুনে লুকিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু তাও ধরে ফেললে। অগত্যা দৃশ্যমান হতে হয়েছে।”
“কেমন বন্ধু?”
“বাঘ, ভাল্লুক, হরিণ, সাপ, শেয়াল..”
আমি তাকে থামাই, “এগুলো আপনার বন্ধু?”
তিনি উঁচু গাছটা থেকে লাফ দিয়ে মাটিতে দাঁড়ালেন। দেখে মনে হয়, একটুও ব্যথা পাননি। বাতাসে তার মিষ্টি স্বর্গীয় সুগন্ধ আমার নাকে এলো। “হু, সাবরিনা আমাদের নিঃসঙ্গতা দূর করতে এনেছিল। তুমি বোধ হয়, এখানে আসা-যাওয়া করবে। আমি পরিচয় করিয়ে দেই।”
“মিনু, রুশু, সারা, হ্যাপী, টুটু…” তিনি অদ্ভুত সব সুন্দর নামে ডাকছেন। মুহূর্তেই আমি চারিদিক থেকে নানা আওয়াজ শুনতে পেয়ে বরফের ন্যায় জমে গেলাম। একটু আগের নিস্তব্ধতা দেখে মনেই হচ্ছিল না, এখানে এতগুলো পশু থাকতে পারে। সেদিনের দেখা অস্পষ্ট অবয়বের প্রাণীসহ আমি অনেকগুলো প্রাণী দেখতে পাচ্ছি। একটা চিড়িয়াখানার দেখা পেয়ে গেলাম যেন। কেবল খাঁচাই নেই। তিনি আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, “এ হলো এখন থেকে আমাদের নতুন বন্ধু, আলিয়া। কেউ ওর ক্ষতি করবে না বুঝলে?”
আমি অবাক হই, “ওরা আপনার ভাষা বুঝে?”
“কেন বুঝবে না? সাবরিনা ওর শক্তির কিছুটা আমাকে দিয়েছে। ও যেভাবে আরেকজনকে অনুভব করিয়ে নিজেও অনুভব করতে পারে, ঠিক সেভাবেই আমি ওদের মাইন্ডের সাথে কমিউনিকেট করতে পারি। তুমি ভুলো না, আমরা মানুষের জন্য যেমনটা এলিয়েন, তেমনটাই ওরাও আমাদের জন্য এলিয়েন। এখানে কিন্তু পশুগুলোও অন্তর্ভুক্ত। তাই সবারই মস্তিষ্ক পড়তে পারি। যদিও ওদেরগুলো স্পষ্টভাবে না।”
“দারুণ!”
“তোমাকে আরেকটা সুন্দর জায়গা দেখাই। চল।”
আমি তার সাথে যেতে থাকি। পশুগুলো স্থিরভাবে দাঁড়িয়েছিল, যেন আমরা সত্যিই বন্ধু। আমরা জায়গাটায় পৌঁছনোর পর বিস্ময়ে আমার মুখ হা হয়ে গেল। আমার সামনে কুয়োর ন্যায় গোল একটি ছোট পুকুর। আশেপাশে গোল করে গাছেরা কুয়োটাকে আবৃত করে রেখেছে। কি মনোমুগ্ধকর জায়গা! আমি ততক্ষণে খেয়াল করলাম, একপাশে সাবরিনা দাঁড়িয়ে আছে। আদিল তার পেছনেই, কবে গিয়েছে টের পাইনি, সাবরিনাকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে। ইশ, তারা কি ভুলে গিয়েছে, আমি এখানে আছি? মানতে তো হবে, দৃশ্যটা অনেক রোমান্টিক। ওদের প্রাইভেসি দিয়ে আমি বাড়িটির দিকে পা বাড়ালাম। এখান থেকেই সেটি দেখা যাচ্ছে।
বাড়িটায় গেলে আরিয়ান স্যাররা কুশলাদি বিনিময় করলেন। একটা ব্যাপার লক্ষ করলাম, এরা সবসময় জোড়ায় জোড়ায় থাকে। কে তাদের দেখছে তার কেয়ার করে না। কেবল ভালোবেসে যায়। আরিয়ান স্যারের কাঁধে হাত রেখে তার পাশে নাদিয়া সোফায় বসে রয়েছে। স্যার কেস নিয়েই ডিসকাস করছেন। অপরদিকে সজীব স্যার নাঈমার কোলে মাথা রেখে গেমস খেলছেন, নাঈমা তার চুলে হাত বোলাচ্ছে।
আমার স্থির চাহনি দেখে আরিয়ান স্যার হাসলেন, “প্লিজ, মাইন্ড করো না। আমাদের এখানে সবসময় আসল ভালোবাসার পাখিরা যাতায়াত করে, যাদের ভালোবাসার বন্ধন কেউই ভাঙতে পারে না। তাদের সাথে থাকতে থাকতে আমরাও কবে এমনটা হয়ে গিয়েছি বুঝতে পারিনি।” নাদিয়া খেয়াল করে লজ্জা পেয়ে হাত নামিয়ে ফেলল। স্যার বুঝি আবির, সাবিলা, সাবরিনা ও আদিলের কথা বলছেন। সত্যিই তাদের মতো অনন্য ভালোবাসার জুটি আমি আর দেখিনি। ইশ, আমিও যদি এমন ভাগ্যবতী হতাম!
সাবিলাকে আবির ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। দরজার কাছে যেতেই আমি লজ্জায় লুকিয়ে পড়ি। সাবিলা ভেতর থেকে ডাক দিলো, “ওহ্ আলিয়া। তুমি এতো দেরি কেন করেছ?”
দেখে ফেলেছে! আমি ভেতরে ঢুকলাম। আবির একটুও ইতস্তত করছে না। আমি বসার পর সাবিলা আমার হাত ধরল। সে আচমকা বলল, “তুমি খুব সুন্দর, আলিয়া। তোমার চুলগুলোও। চুল সবসময় আমার মতো এভাবে খোলা রাখতে পার না?”
আমি দ্বিধাবোধ করলাম। কেউ আমাকে সুন্দর বলেছে। “এমনিই। আসার সময় গোসল করে এসেছিলাম।” কারণ এখানে দুর্গন্ধ নিয়ে আসতে চাইনি। তাদের হয়তো দুর্গন্ধ লাগছে না। ওহ্, তারা তো ধ্রুবের মতো তীব্র সুগন্ধধারী।
আবির বলল, “আলিয়া, তুমি সত্যিই খুব সুন্দর আই মিন সুন্দরী।” আরেকটা কমেন্ট। এই দুইদিনের অবসাদ নিমিষে দূর হয়ে গেল।
সাবিলার খারাপ লাগল না। সে হয়তো জানে, আবিরের মনে তাকে নিয়ে কতটা ভালোবাসা আছে।
আমি কী ভেবে, আমার মনের কোন এক জায়গায় ভালোবাসা উঁকি দেওয়ায় আমার অন্য হাত তুলি। হাতটা সাবিলার মুখে আলতো করে ছোঁয়াই। ওর সুন্দর কপাল, ভ্রূ, চোখ, নাক, গাল, ঠোঁট সবকিছুই ছুঁয়ে দেখি। শী ইজ রিয়েল! এটা সত্যই, আমি যেন একটি দেবদূতের সামনে বসে আছি।
আবির আমাদের একা থাকতে দিয়ে চলে গেল। আমরা একে অপরের সাথে কথা বলতে লাগলাম। আমি জিজ্ঞেস করি, “তোমাদের বংশ নিয়ে যে বিবাদগুলো হয়েছিল, সেগুলোর কারণে তোমাদের জীবনে অনেক প্রভাব পড়ছে। তাই না?”
“অনেক।” সাবিলার কণ্ঠস্বর নম্র হয়ে এলো, “আমি আর আবির স্বামী-স্ত্রী হয়েও আলাদা ঘরে থাকি।” আমি থ হয়ে গেলাম। “কারণ আমাদের বংশ বাড়ানোর আর অনুমতি নেই। মা-বাবার কূলে আমাকে নিয়ে আগে থেকেই তারা যথেষ্ট অসন্তুষ্ট।”
“ওহহো। তা কীভাবে পারো?”
“আমি পারি। আমার ভালোবাসা তুমি দেখনি। ও মাত্র একহাত দূরে থাকলেও, আমি ওকে না ছুঁয়ে থাকতে পারব। কেবল ওকে স্বচক্ষে দেখা চাই। এটাই মাদকের মতো। ওকে বলি, তোমার বাহুতে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি। রাতেও পারব। কিন্তু আবির নিজের ওপর বিশ্বাস করে না। সে বলে, আমি মানুষ। তোমার মতো ধৈর্য আমার নেই।” দুইজনই হাসলাম। সে আমাকে সত্যিই বন্ধুর মতো ভাবছে। আমার খুব ভালো লাগল। এতটাই যে, আমি ভুলে গেলাম আমার হাত ওর হাতে।
আমি বাসায় ফেরার পর বাবা জেরা করল। ইচ্ছে করল, কিছু একটা দিয়ে তার মাথায় আঘাত করি। কিন্তু তা না পারায় চিৎকার করে উঠলাম, “বাবা, আমাকে আমার মতো করে থাকতে দিন। আমি যেখানেই থাকি না কেন, আপনার কী?”
তিনি চুপসে গেলেন। আমি হঠাৎ আমার ঘরের দিকে আসিয়াকে দেখতে পেলাম। দৌড়ে গেলাম আমি তার কাছে। কিন্তু ততক্ষণে সে প্রতিবারের মতো উধাও হয়ে গিয়েছে। আমি খাবার খেয়ে ক্লান্ত থাকায় শুয়ে পড়ি।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর একটি চিঠি পেয়ে আমি অবাক বনে গেলাম।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share