ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব-৪৫+৪৬

0
1067

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_৪৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

নোমান,তানিশা,আমান আর শিরিন জিসানকে সাথে করে নিয়ে নীলাদের বাড়িতে চলে গেলো।জিসানের কথায় ঠিক হলো।আসলেই নীলার বাবা একজন নামকরা সন্ত্রাসী। আশেপাশের লোকেরা সেটাই জানালো নোমানদের।তবে নীলা যে খারাপ মেয়ে সে কথা একজন লোকও বললো না।তবে কেউ কেউ মনে করে বাবা খারাপ তাহলে মেয়ে ভালো হয় কি করে?
সেজন্য অনেকের ধারণা নীলাও খারাপ মেয়ে।কিন্তু বাস্তবে নীলা আসলেই ভালো আর সরল প্রকৃতির।

নীলাদের বাড়ি একদম অজপাড়াগাঁয়ে।ছোট্র চার টি ঘর নীলাদের।পাশে একটা ডোবা।আর পুরো বাড়িটি কেমন যেনো অন্ধকারের মতো।কারণ চারপাশে গাছপালা দিয়ে ঘেরা।তবে নীলা গ্রামে থাকে না।সে ঢাকায়, কলেজে পড়াশোনা করে আর মেসে থাকে। এইজন্য জিসানের সাথে তার পরিচয় হয়।তারপর পরিচয় থেকে প্রেম ভালোবাসা শুরু হয়।

জিসান মোটেও রাজি নয় নীলাকে বিয়ে করতে।সে কখনোই ভাবতে পারে নি এইরকম একটা ছোট পরিবারের মেয়ের সাথে তার বিয়ে হবে।সে নীলার চালচলন আচার আচরণ দেখে ভেবেছে সে কোনো বড়লোক ঘরের মেয়ে।
আসলে নীলার বাবা নীলাকে কোনো দিক দিয়ে কমতি রাখে নি।ভালো কলেজে ভর্তি করিয়েছে,ভালো ভালো পোশাক কিনে দিয়েছে।দেখলে যে কেউ ভাববে উচ্চ বংশের মেয়ে সে।

তানিশা আগেই নীলাকে বলেছে যে তারা আসবে আজ।সেজন্য নীলার পরিবারের সবাই ওয়েট করে আছে তানিশাদের জন্য।তানিশারা বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই সবাই বের হয়ে আসলো রুম থেকে।অনেক বড় পরিবার নীলাদের।

নীলা সবাইকে দেখামাত্র রুমে নিয়ে গেলো।আর এক এক করে তার পরিবারের লোকদের সাথে পরিচয় করে দিলো।

হঠাৎ এক পিচ্চি ছেলে জোরে চিৎকার করে বললো,ডাক্তার ম্যাডাম আপনি এখানে?

তানিশা সহ বাকি সবাই পিচ্চির কথা শুনে চমকে উঠলো।

নোমান আর তানিশা তো সাথে সাথে দৌঁড়ে পিচ্চির কাছে চলে গেলো।আর বললো,
আদ্রিয়ান!তুমি এখানে?তোমার আম্মু কই?
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো,আম্মু তো রান্নাবান্না করছে।ডেকে দিবো আম্মুকে?

নীলা তখন বললো ম্যাডাম আপনি আদ্রিয়ান কে চেনেন?

তানিশা বিস্ময় ভরা মুখ নিয়ে ভয়ে ভয়ে বললো,এ কে হয় তোমার?

নীলা তখন বললো আমার ভাই হয় ম্যাডাম।

তানিশা তখন বললো, তোমার বাবার নাম কি আকবর?

–হ্যাঁ ডাক্তার ম্যাডাম।কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন?

নীলার কথা শুনে তানিশা আর নোমানের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।এ তারা কি শুনছে?নোমান তো এই কথা টা শুনেই মাটিতে বসে পড়লো আর বললো, মা তুমি এটা কি করেছো?আমি তো ভাবতেই পারছি না কিছু।আমার বাবার এখন কি হবে?কত আশা করে ছিলাম আমরা যে বাবার জীবনে আবার সুখ ফিরে আসবে।

আমান,শিরিন আর জিসান কিছুই বুঝতে পারছে না।হঠাৎ তানিশা আর নোমান এই পিচ্চিটাকে দেখে এতো ইমোশনাল কেনো হলো?কিন্তু আমান মনে মনে ভাবলো ইনি আবার কোন আকবর?
আমান সেজন্য তানিশাকে বললো,তানিশা হয়েছে টা কি?নোমান এরকম করছে কেনো?

তানিশা তখন বললো, আমান ভাইয়া সর্বনাশ হয়ে গেছে।মা তো আকবর কে সত্যি সত্যি বিয়ে করেছে।আদ্রিয়ান আর নীলা মা আর আকবরের সন্তান।

আমানের মাথাতেও এবার আকাশ ভেঙে পড়লো।সবাই কিছুক্ষনের জন্য চুপচাপ থাকলো।

এদিকে আকবর নীলাকে ডেকে নিয়ে বললো, এনারা এসব কি বলছে?তুই না বললি বিয়ের মানুষ আসবে।কিন্তু এনারা তো পাগলের মতো ভুলভাল বকে যাচ্ছে।

নীলা তখন বললো হ্যাঁ ঠিকই তো বলেছি।কিন্তু এনারা কেনো যে এমন করছে সত্যি আমি বুঝতে পারছি না।

হঠাৎ মালিহা চৌধুরী শরবতের গ্লাস নিয়ে রুমের ভিতর প্রবেশ করলো।আর সবাইকে সালাম দিলো।কিন্তু তিনি যখন আমান,নোমান,তানিশা আর শিরিন কে দেখলেন সাথে সাথে শরবতের গ্লাস রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।

তানিশা তখন বললো মা দাঁড়ান।কই যাচ্ছেন?সেদিন ওভাবে কেনো পালিয়ে এসেছেন?আপনার ছেলেরা আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে একদম পাগল হয়ে গেছে।এইভাবে ছেলেদের কে একা রেখে এসে কাজ টা ঠিক করেন নি আপনি?

মালিহা তানিশার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলেন না।

নোমান তখন দৌঁড়ে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,তুমি কি করে আমাদেরকে রেখে এভাবে চলে এসেছো মা?আমরা তোমাকে খোঁজার জন্য এমন কোনো জায়গা বাদ রাখি নি।

মালিহা সেই কথা শুনে বললো, কেনো খুঁজেছিস তোরা?এতোদিন তো মা ছাড়াই ছিলি?তাহলে আজ কেনো মাকে খোঁজার প্রয়োজন মনে হলো তোদের?

আমান সেই কথা শুনে বললো, মা আমরা কি জানতাম নাকি তুমি বেঁচে আছো?জানলে তো কবেই নিয়ে যেতাম আমাদের কাছে।এখন যখন তোমার দেখা পেয়েছিই আর কিছুতেই এভাবে দূরে থাকতে দেবো না।

আকবর তখন এগিয়ে এসে বললো,মালিহা এরা তোর আমান আর নোমান?
মালিহা কথা বলতে পারতেছিলো না।তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, হুম।এরাই আমার সেই আমান আর নোমান।

মালিহার কথা শুনে বাড়ির সবাই অবাক হলো।এ কি শুনছে তারা?পুরো এলাকা জুড়ে হই হই পড়ে গেলো।সবাই শুধু বলতে লাগলো এতো বছর পর মালিহার সন্তানরা ফিরে এসেছে।কেউ কেউ তো আফসোস করতে লাগলো।কেউ কেউ মালিহাকে পোড়াকপালি বলেও সম্বোধন করলো।এতো বড় বড় ছেলে থাকতে সে কি কষ্ট করে জীবন যাপন করছে।আর যখন শুনলো মালিহার বড় ছেলে পুলিশ অফিসার আর ছোট ছেলে ডাক্তার সবাই আরো বেশি হা হুতাশ করতে লাগলো।

হঠাৎ একজন বয়স্ক মহিলা লাঠিতে ভর দিয়ে এগিয়ে এসে বললো,কই আমার আমান নোমান?দেখি?
আমান আর নোমান সেই কথা শুনে মহিলাটির কাছে গেলো।মহিলাটি তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,একটু নিচু হ তোরা।আমি একটু তোদের মুখ খানা বুলিয়ে দেই।তোদের দেখার জন্যই বুঝি আমার মরন হয় নি।এটাই আমার বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা।

আমান আর নোমান সেই কথা শুনে ঝুকে গেলো।আর মহিলা টি আমান নোমান কে চুমু খেয়ে বললো, আমি তোদের অভাগা নানী হই রে।

আমান আর নোমান তখন তাদের নানীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।একদিকে মালিহা কাঁদছে তো অন্যদিকে তার ছেলেরা।এ দৃশ্য দেখে পুরো বাড়ির লোকজন কাঁদতে লাগলো।কারণ এ যে অবিস্মরণীয় ঘটনা।তারা কেউ ভাবতেই পারে নি এতো বছর পর এভাবে মালিহার সন্তানদের সাথে দেখা হবে।

এবার নোমানের নানী বললো, ওই শয়তান,পাষান আর নির্দয়ালু তায়েব কই?ও কি বেঁচে আছে না মরে আছে?একদিনের জন্যও কি ওর মনে হয় নি যে তার বউ সত্যি সত্যি কারো সাথে ভেগে গেছে না কেউ ষড়যন্ত্র করেছে?এতই পাষাণ ওই?আমার মেয়ের জীবন টা একদম ছারখার করে দিলো?শয়তান টা কি ফির বিয়ে করেছে?

নোমান তখন বললো নানি মনি এভাবে বলো না আমার বাবাকে।আমার বাবা এখনো মায়ের স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছে।বাবা এখন পর্যন্ত মাকেই ভালোবাসে।সেজন্যই তো দ্বিতীয় কোনো নারীকে গ্রহন করে নি।আমার বাবার মতো ভালো মানুষ দ্বিতীয় টি আর কেউ খুঁজে পাবে না।

নোমানের নানী তখন বললো, তো আমার মেয়ে কি খারাপ?আমার মেয়েও তায়েবের স্মৃতি আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছে।সে এতো অপমান আর লাঞ্চনা সহ্য করেও বেঁচে আছে শুধুমাত্র তায়েব কে সত্য কথা টা বলবে বলে।তা না হলে কবেই নিজের জীবন টা শেষ করে ফেলতো।

তানিশা তখন নীলাকে বললো তাহলে নীলা তুমি যে বললে আদ্রিয়ান তোমার ভাই হয়।আমরা তো জানি আদ্রিয়ানের আম্মু মিসেস মালিহা চৌধুরী। মা নিজের মুখে বলেছিলো।

নীলা তখন বললো হ্যাঁ ঠিকই তো।আদ্রিয়ানের আম্মু তো আমার ফুপিই।কারণ আদ্রিয়ান হওয়ার সময় আমার মা মারা যায়।তখন ফুপি বাবার কাছে আবদার করে আদ্রিয়ান কে তিনি নিবেন।ওনার পরিচয়ে বড় করবেন।আদ্রিয়ান তো ফুপির কাছেই থাকে।আদ্রিয়ান ফুপিকে মা বলেই ডাকে।আজ আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে শুনে সবাই এসেছে।

নীলার কথা শুনে অবশেষে সবাই চিন্তামুক্ত হলো।তা না হলে তো সবাই একদম চিন্তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলো।অবশেষে সবার চিন্তা দূর হলো।

এবার সবাই জিসান আর নীলার বিয়ের কথাবার্তা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো।তবে নীলার প্রেগন্যান্ট হওয়ার ব্যাপার টা লুকায়িত রাখলো সবাই।কারণ এটা দুই পরিবারেরই মানসম্মানের ব্যাপার।তানিশা আর নোমান ঠিক করলো বিয়ের পর প্রকাশ করবে এটা।মুহুর্তের মধ্যে বাড়িটা আবার খুশিতে ভরে উঠলো।

এদিকে নোমান তার বাবাকে ফোন করে বললো যে তাদের মাকে তারা খুঁজে পেয়েছে।তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে নিজেও ভীষণ খুশি হলেন।কারণ তিনি নিজেও মালিহার জন্য টেনশন করছিলেন।

সবাই সবার কাজে ব্যস্ত থাকলেও আমান কিন্তু আকবরের দিকে শুধু নোটিশ করতে লাগলো।আমানের কেনো জানি মনে হচ্ছে তার মাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পিছনে আকবরেরই হাত আছে।সেজন্য আমান শুধু বার বার আকবরের দিকে দেখতে লাগলো।

আকবর আবার আমানকে এভাবে দেখা দেখে ভাবতে লাগলো, এই ছেলে টা তার দিকে বার বার কেনো তাকাচ্ছে?কিছু আবার বুঝতে পারলো না তো?কারণ পুলিশ দের চোখ তো খুবই খারাপ।ঠিক বুঝে যায় কে অপরাধী আর কে সাধু?

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪

আমান আর নোমান আজকেই মিসেস মালিহাকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে চাইলেন।কিন্তু মালিহা বললেন না তিনি কিছুতেই যেতে পারবেন না।তানিশা তখন নোমানের কানে কানে বললো, আরে পাগল,তোমাদের কথা তে তিনি যাবেন নাকি?বাবাকে পাঠাতে হবে।বাবা এসে ওনার বউকে নিয়ে যাবেন।

নোমান তানিশার কথা শুনে আবার আমানকে বললো কথাটা।আমান সেই কথা শুনে বললো এটা তো ভেবে দেখি নি।আচ্ছা আমরা তাহলে কাল বাবাকে পাঠাবো।

এদিকে নীলা আর জিসানের বিয়ের দিন ঠিক করা হলো।শিরিন তার বাবার সাথে কথা বলেই কনফার্ম করেছে ডেট।মিঃ শফিক সাহেব জানেন যেখানে তার মেয়ে আর মেয়ে জামাই আছে সেখানে তিনি না থাকলেও চলবে।তবে শিলা ভীষণ আফসোস করতে লাগলো।তাকে কেনো নিয়ে যাওয়া হলো না?তাদের একমাত্র ভাই এর বউ দেখতে কেমন হবে তা দেখার জন্য সে অস্থির হয়ে রইলো।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

নোমান আর আমান মিঃ তায়েব চৌধুরী কে একা একা পাঠালেন মালিহা চৌধুরী কে আনার জন্য।সেজন্য মিঃ তায়েব চৌধুরীর ভীষণ লজ্জা লাগতে লাগলো।তিনি কিভাবে মালিহার রাগ ভাংগাবেন সত্যি বুঝতে পারছিলেন না।আবার ভয় ও হচ্ছে যদি আবার মালিহা না আসে তার সাথে?

তায়েব চৌধুরী কে দেখার জন্য পুরো গ্রামের লোক ছুটে আসলো।কারণ এ যে সত্যি অবিশ্বাস্য ব্যাপার।কত বছর পর মালিহার স্বামী ফিরে এসেছে।কিন্তু মালিহা ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকলো।সে আর তায়েবের সংসারে যাবে না বলে জানিয়ে দিলো।

তায়েব চৌধুরী তার শাশুড়ীর কাছে যেতেই তার শাশুড়ী সেখান থেকে সরে গেলেন।তায়েব চৌধুরী পড়ে গেলো মহা বিপদের মধ্যে।তার ছেলেরা কিভাবে এই রকম একটা সিচুয়েশনের মধ্যে তাকে একাই পাঠিয়েছে।কারণ সবাই যে তায়েবের উপর ভীষণ রেগে আছে।এখন তায়েব কিভাবে মা মায়ের রাগ ভাংগাবে?

নীলা এবার তায়েব চৌধুরী কে রুমে নিয়ে গেলেন।সে নিজ দায়িত্বে সেবা করতে লাগলো তায়েব চৌধুরীর।নীলা হঠাৎ করেই বললো ফুফা ফুফির সাথে কথা বলতে চাইলে এই সাইটের দরজা দিয়ে চলে যান।এই দরজা টা খোলা আছে।

তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে সেই দরজা দিয়েই মালিহার রুমে প্রবেশ করলো।রুমে গিয়ে দেখে মালিহা অঝোর ধারায় কাঁদছে।তায়েব তখন ধীরে ধীরে মালিহার কাছে গিয়ে তার হাত ধরে বললো, মালিহা! আমাদের সবার জীবনে আকস্মিকভাবে এরকম অনেক ঘটনাই ঘটে। যে ঘটনার জন্য কাউকেই দোষ দেওয়া যায় না।আমাদের এই বিচ্ছেদে না আছে তোমার দোষ?না আছে আমার দোষ?তবুও আমি তোমার কাছে মাথা পেতে নিচ্ছি আর আবারও বলছি সব দোষ আমার।আমার জন্যই এসব কিছু হয়েছে।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমার সাথে চলো প্লিজ।

মালিহা তায়েবের কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমি কি একবারও তোমাকে দোষারোপ করেছি?না বলেছি তোমার জন্য এসব কিছু হয়েছে।

তায়েব চৌধুরী তখন বললো তাহলে তুমি কেনো এভাবে সেদিন চলে আসলে?তুমি জানো না আমি তোমাকে কত টা ভালোবাসি?এতোদিন পর তোমাকে দেখে আমার মনের অবস্থা কেমন হয়েছে?

মালিহা তখন বললো বেশি ভালোবাসো দেখেই তো আজ আমার এই পরিনতি।জীবন থেকে কতগুলো বছর এভাবে হারিয়ে গেলো।না পেলাম স্বামী সুখ,না পেলাম সন্তানদের নিজের হাতে বড় করতে।আমার মতো পোড়াকপালি আর কে আছে?এই বলে মালিহা চৌধুরী আবার কাঁদতে লাগলেন।

তায়েব চৌধুরী এবার মালিহাকে জড়িয়ে ধরে বললো, সব কিছু ভুলে যাও মালিহা।অতীত কে ভেবে কান্না করলেই কি আর অতীত ফিরে আসবে?বাকি জীবন টুকু তোমার সাথে থাকার সুযোগ করে দাও প্লিজ।তোমার ছেলেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।তুমি বাসা থেকে চলে আসাই ওরা তো পাগলের মতো খুঁজে বেড়িয়েছে তোমাকে।খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে দিনরাত খুঁজে ছে।

মালিহা সেই কথা শুনে আরো জোরে জোরে করে কাঁদতে লাগলো।কত বছর পর প্রিয় মানুষের বুকে সে মাথা রাখার সুযোগ পেলো।তার কান্না যেনো থামছেই না।
এইভাবে মালিহা চৌধুরী আর তায়েব চৌধুরীর মান অভিমানের পালা শেষ হলো।তায়েব চৌধুরী এবার তার শাশুড়ীর রাগ টাও ভাংলেন।তায়েব চৌধুরী এবার মালিহাকে তার সাথে নিয়ে যাওয়ার পারমিশন চাইলেন।
সবাই ভীষণ খুশি হলেন এই কথা শুনে।এতো বছর পর মালিহা তার হারানো সংসারে ফিরছে এর চেয়ে খুশির খবর আর কি হতে পারে?
তবে মালিহার একটাই আবদার তিনি আদ্রিয়ান কেও সাথে নেবেন।কারণ আদ্রিয়ান যে তাকেই মা বলে ডাকে।আদ্রিয়ান ও যে তার আরেক সন্তান।

তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো শুধু আদ্রিয়ান না।তোমার মাকেও সাথে করে নাও।যে কয় দিন বাঁচবে মেয়ের সাথেই থাকবে।এই অবস্থায় ওনাকে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না।

কিন্তু মালিহার মা এই প্রস্তাবে রাজি হলেন না।তবে তিনি জামাই এর কথা শুনে ভীষণ খুশি হলেন।আর বললেন বাবা আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।আমার ছেলে আর ছেলের বউ তো আছেই।ওরাই দেখবে আমাকে।তুমি শুধু আমার মেয়েটাকে দেখে রাখিও।তবে মাঝেমধ্যে মালিহাকে নিয়ে আসবে কিন্তু।

অবশেষে তায়েব চৌধুরী মালিহা আর আদ্রিয়ান কে নিয়ে বাসায় ফিরলেন।

চলবে,

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_৪৬
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

মানুষের জীবন বড়ই বৈচিত্র্যময়। কার জীবনে কখন কি ঘটবে কেউ বলতে পারবে না।
নোমান আর তানিশা কখনোই ভাবে নি তারা সারাজীবনের জন্য দুইজনের হয়ে যাবে।অন্যদিকে তন্নি কখনোই ভাবে নি বান্ধুবীকে ঠকানোর ফলে তার জীবন টা এমন ছন্নছাড়া হবে।যদিও তার দ্বিতীয় স্বামী ইকবাল যথেষ্ট ভালো একজন মানুষ তবুও তাকে সারাজীবন শুনতে হবে তার দুই টা বিয়ে হয়েছে।আর সে ইকবালের দ্বিতীয় স্ত্রী।

অন্যদিকে তায়েব চৌধুরী আর মালিহা চৌধুরীর এতো বছর পর দেখা হওয়া টা সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যের। তারা কখনোই কল্পনা করে নি আবার তারা একসাথে সংসার করতে পারবে।

একসময় যে আমান তানিশার জন্য পাগলামি করেছিলো আজ সে শিরিন কে বিয়ে করে অতীতের সেই আবেগ সম্পূর্ণ ভুলে গেছে।সে আর ভুল করেও তানিশার কথা মনে করে না।

জিসান অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করবে বলে প্রেমিকা নীলাকে ঠকাতে চাইছিলো।কিন্তু তার ভাগ্য তাকে এমন ভাবে বেঁধে দিলো যে জিসান চাইলেও আর নীলাকে ঠকাতে পারবে না।কারণ নীলার পেটে যে তারই সন্তান।

আর সবচেয়ে অবাক করা দুইজন চরিত্রের মানুষ হলো শিলা আর সিফাত।যারা প্রচন্ড ভাবে কাউকে ভালোবেসেও তাদের মনের মানুষ কে পেলো না।শিলা নোমানকে ভালোবেসে তো নিজের মূল্যবান জীবন টাই শেষ করতে চাইছিলো।
অন্যদিকে সিফাত তানিশাকে একতরফাভাবে দশটি বছর ভালোবেসেও নিজের জীবনের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করে নি।বরং সে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছে সব।সে জানে ভাগ্যে যা লেখা আছে তা ব্যতীত সে বিন্দুমাত্র বেশি কিছু পাবে না।

শিলা আর সিফাত আদৌ কি তাদের অতীত ভুলে নতুন কোনো সম্পর্কে জড়াতে পারবে এটাই এখন দেখার পালা।
তবে এটা ঠিক যে শিলার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে।সে আর নোমানকে মিস করে না।কারন যে তার নয় তার কথা সে কেনো ভাববে?এই কৃতিত্ব টা সম্পূর্ণ সিফাতের পাওয়া উচিত।কারণ সিফাত তাকে শিখিয়েছে যে ভালোবাসলেই কি তাকে পেতে হবে?কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ থাকাই ভালো। যে যাকে ভালোবাসতো তাকেই যদি পেয়ে যেতো তাহলে তো দুনিয়ায় ভালোবাসা বলতে কোনো শব্দই থাকতো না।মানুষ ভালোবেসে ব্যর্থ হয় দেখেই ভালোবাসার আজ এতো মূল্য।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

জিসান আর নীলার বিয়ের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে।

তবে তানিশা আর নোমান ঘরের মধ্যে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে।তারা কিছুতেই একটা অংক মেলাতে পারছে না।এজন্য দুইজন মিলে চিন্তা করতে লাগলো কিভাবে এর সমাধান করা যায়?অবশেষে তারা অংক টা সমাধান করতে সফল হয়েও গেলো।
তাদের অংক টা হলো শিলা আর সিফাতকে নিয়ে।যে করেই হোক এক দুইটাকে তাদের মিলাইতেই হবে।শিরিন বলবে শিলাকে আর তানিয়া বলবে সিফাতকে।এর ফলাফল কি হতে পারে নোমান আর তানিশার আর তর সইছে না।

সেইজন্য নোমান আর তানিশা তাদের রুমের মধ্যেই থাকলো।তারা এখন পর্যন্ত বিয়ে বাড়িতে যায় নি।হঠাৎ দুইজন দুইজনার অজান্তেই একে অপরের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো।স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার এই পবিত্র তম ভালোবাসা যেনো দুনিয়ায় সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এই ভালোবাসার সত্যি কোনো তুলনা হয় না।ভালোবাসা সত্যি সুন্দর!
||
||
তানিশা?নোমান?এই তোরা কি আজ ঘর থেকে বের হবি না?বিয়ে বাড়িতে যাবি কখন?শিরিন আর আমান বার বার ফোন করে আসতে বলছে।আমরা কিন্তু রেডি হয়েছি।

তানিশা মিসেস মালিহা চৌধুরীর ডাক শুনে নোমান কে বললো, ছাড়ুন এখন।উঠতে হবে আমাকে।মা ডাকছে তো।

নোমান তখন তানিশাকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরে বললো, মা জানে, এখন ওনার ছেলে কাজে ব্যস্ত আছে।সো নো ডিস্টার্ব!এখন শুধু ভালোবাসার সময়।
তানিশা সেই কথা শুনে জোর করেই নোমান কে সরিয়ে দিয়ে বললো,ভুল কথা বললেন আপনি।এখন ভালোবাসার সময় নয়,এখন বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময়।এই বলে তানিশা দরজা খুলে বাহিরে চলে গেলো।
আর মালিহা চৌধুরী কে বললো, মা!আপনি আর বাবা চলে যান।আমরা একটু পড়ে আসছি।

মালিহা চৌধুরী আর তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে চলে গেলো।তবে তাহমিনা গেলো না।সে বললো সবাই চলে গেলে বাসায় থাকবে কে?এভাবে সবার বাসা ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না।

তানিশা মেরুন কালারের একটা জামদানী শাড়ি পড়লো।বিয়ে বাড়ি বলে কথা।সেজন্য আজ একটু ভালোভাবেই সাঁজগোজ করলো সে।লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে শুধু কানের দুই সাইটে দুইটা করে ক্লিপ মেরে দিলো।যাতে চুলগুলো বার বার সামনে না আসে।অন্যদিকে নোমান হোয়াইট কালারের একটা শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পড়ে নায়কদের মতো হয়ে তানিশার সামনে এসে দাঁড়ালো।নোমানকে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছিলো দেখতে।কিন্তু নোমানের ভাব বেড়ে যাবে দেখে তানিশা আর মুখে কিছু বললো না।তবে মনে মনে বললো মাশাল্লাহ! আমার ডাক্তার সাহেব আসলেই সুন্দর।
তানিশা কে চুপচাপ থাকা দেখে নোমান বললো,কেমন লাগছে তোমার হাজব্যান্ড কে?

তানিশা সেই কথা শুনে বললো, রোজ যেমন লাগে আজও তেমনি লাগছে।

নোমান তখন বললো,একটুও চেঞ্জ লাগছে না?

“না,লাগছে না।চলেন এখন।এই বলে নোমান তানিশার হাত ধরে রুম থেকে বের হলো।

নোমান তখন বললো,তানিশা তোমাকে কিন্তু পেত্নীর মতো দেখা যাচ্ছে।

তানিশা সেই কথা শুনে নোমানের হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।আর বললো, কি? আমাকে ভালো লাগছে না?সত্যি পেত্নির মতো লাগছে?

নোমান তখন বললো, আগে সত্যি কথা বলো আমাকে কেমন লাগছে?তারপর বলবো তোমাকে কেমন লাগছে।

তানিশা তখন বললো, ওকে।জোর করেই প্রশংসা শুনতে চাচ্ছেন তো?তাহলে বলেই দিচ্ছি।আপনাকে
বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে।

নোমান সেই কথা শুনে বললো, তাহলে এখন হ্যান্ডসাম জামাই এর কি করা উচিত?

–কি?

নোমান তখন তানিশার কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো আর বললো,তোমাকে না আজ একদম অপ্সরাদের মতো লাগছে।তোমার দিকে আজ সারাক্ষণ শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করছে।আমার সুন্দরী লক্ষ্ণী বউ টা।এই বলে নোমান তানিশাকে কিস করতে ধরলো।

তানিশা তখন বললো হইছে হইছে আর প্রশংসা করতে হবে না।তা না হলে আবার অঘটন ঘটে যেতে পারে।
এই বলে তানিশা গাড়িতে গিয়ে বসলো।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

বিয়েটা ঘরোয়াভাবে হচ্ছে বিধায় নিকটতম আত্নীয় দের শুধু ইনভাইট করা হয়েছে।নীলাদের পরিবারের সবাইকে জিসানের বাসাতেই আনা হয়েছে।কারণ বিয়ে জিসানের বাসায় হচ্ছে।
হঠাৎ সিফাত বললো,ডাক্তার ম্যাডাম!আপনাদের দুইজনার একটা ছবি তুলি?

–হ্যাঁ হ্যাঁ।কেনো নয়?

সিফাত ছবি তুলছে আর বলছে আমাকে যে কেনো ডাকলে তোমরা?আমি কার ছবি তুলবো সেটাই তো বুঝছি না।
আর এটা কোনো বিয়ে বাড়ি হলো?কোনো আয়োজনই নাই।কেমন যেনো নীরব নীরব লাগছে চারপাশে।আর বিয়ে বাড়িতে মিউজিক না বাজলে কি ভালো লাগে?

হঠাৎ শিলা আসলো সেখানে।সে সিফাতকে দেখে অনেক বেশি অবাক হলো?কারণ তার বিশ্বাসই হচ্ছে না সিফাতও এসেছে।কারণ সে তো ইনভাইট করে নি সিফাতে কে।তবে শিলা সিফাতকে ইনভাইট করতে চাইছিলো কিন্তু যেহেতু বাহিরের কোনো রিলেটিভদের ইনভাইট করা হয় নি সেজন্য সে ও আর কিছু বলে নি সিফাতকে।

সিফাত তানিশা আর নোমানের ছবি তোলার পর শিলাকে বললো দেখি তোমার কয়েকটা ছবি তুলি।এই বলে সিফাত শিলার ছবি তুলতে লাগলো।

অন্যদিকে তানিয়া তানিশার কানে কানে বললো,আমি কিন্তু সিফাতকে এখনো কিছু বলি নি।তুই বল।আমার কেনো জানি সাহস হলো না।অন্যদিকে শিরিন নোমানকে বললো, আমিও কিন্তু শিলাকে কিছু বলি নি।কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।

নোমান সেই কথা শুনে বললো,বাহঃ খুব ভালো হয়েছে।এখন জিসান আর নীলার বিয়ে পড়ানো হবে।আর তোমরা ওদের কে এখনো বলোই নি।তা বলবে টা কখন?আমি তো ভেবেছিলাম আজ একসাথে দুইজোড়া বিয়ে হবে।

তানিশা তখন বললো, নোমান তুমি শিলাকে গিয়ে বলো।আর আমি সিফাতকে গিয়ে বলি।আমরা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান আর কেউ করতে পারবে না।

তানিশার কথা শুনে নোমান শিলাকে বললো, শিলা!একটু এদিকে আসবে?
শিলাকে নোমান ডাকা দেখে সিফাত বেশ অবাক হলো।কিন্তু কিছু বললো না।শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।অন্যদিকে শিলা নিজেও ভীষণ অবাক।নোমান তাকে আবার একাকি ভাবে কি বলবে?

–কি হলো?এসো?
শিলা সেই কথা শুনে চলে গেলো নোমানের সাথে।

তানিশা এবার সিফাত কে বললো,তুমি ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?তুমি আমার সাথে এসো।

সিফাত সেই কথা শুনে বললো কেনো?

তানিশা তখন বললো এসোই আগে।সিফাত এবার চলে গেলো।

নোমান শিলাকে কোনো সংকোচ ছাড়াই সরাসরি জিজ্ঞেস করলো,তুমি কি সিফাত কে পছন্দ করো?
শিলা সেই কথা শুনে বললো হঠাৎ এ কথা?
নোমান তখন বললো, এটা রেপিড ফায়ার চলছে।সরাসরি উত্তর দাও।
শিলা তখন বললো, হ্যাঁ।
নোমান সেই কথা শুনে বললো তাহলে আমি সবাইকে বলছি কিন্তু।আজকেই তোমার সাথে সিফাতের বিয়ে হবে।

শিলা তখন বললো, না।এক্ষুনি না।কথাটা শুধু আমার আর আপনার মধ্যে থাকবে।কারণ আমি আরো কিছুদিন সময় নিতে চাই।দেখতে চাই এটা ভালো লাগা,না ভালোবাসা?এতো তাড়াতাড়ি আমি ভালোবাসার বন্ধনে নিজেকে জড়াতে চাই না নোমান।
–ওকে।তোমার যতদিন মন চায় তুমি সময় নাও।

অন্যদিকে তানিশা সিফাতকে বললো, তুমি বিয়ে কেনো করছো না?

সিফাত সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো যেভাবে বলছো মনে হয় বিয়ের জন্য মেয়ে রেডিমেড পাওয়া যায়।

–ইচ্ছা করলেই পাওয়া যায়।যদি তুমি রাজি থাকো আমি ঘটকালি করতে পারি।

সিফাত সেই কথা শুনে বললো তাই নাকি ম্যাডাম?তাহলে এ তো আমার অনেক বড় সৌভাগ্য।

তানিশা তখন হঠাৎ করেই বললো আচ্ছা তোমার শিলাকে কেমন লাগে?

–শিলা,,,,মানে বুঝলাম না।

“না বোঝার কি আছে?তুমি যে শিলাকে পছন্দ করে ফেলছো তা কিন্তু আমি বুঝে ফেলছি।

সিফাত তানিশার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।

তানিশা তখন বললো ওকে।ধীরে সুস্থে সিদ্ধান্ত নিও।এতো তাড়াহুড়োর কিছু নাই।

নোমান আর তানিশা এবার একসাথে হয়ে বললো,দুইজন দুইজনরেই পছন্দ করে।বাট বোঝা যাচ্ছে তারা একটু সময় নিতে চায়।

জিসান আর নীলার বিয়ে ভালোভাবেই সম্পন্ন হলো।এবার নীলার ফ্যামিলির লোকজন তাদের বাড়ি চলে যাবে বলে রাস্তায় বের হলো।

কিন্তু হঠাৎ আমান আকবরকে বললো,আপনি আগেই যাবেন না।আমার সাথে থানায় যেতে হবে আপনাকে।

–থানায়।কিন্তু কেনো?

আমান তখন বললো প্রয়োজন আছে বিধায় নিয়ে যাচ্ছি।
আকবর সেই কথা শুনে চিল্লায়ে বললো আমি কি চোর না ডাকাত যে আমাকে থানায় যেতে হবে?
আমান এবার কোনো কথা না বলে আকবরকে জোর করেই গাড়িতে ওঠালো।

ওদিকে মালিহা শুধু বলছে কি হয়েছে বাবা?আকবর কি করেছে?
আমান মালিহার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।

আমান এবার সোজা তাদের বাসায় চলে গেলো।আর তাহমিনা চৌধুরী কে বললো ফুপি!মাফ করবে আমাকে।কিন্তু কিছুই করার নাই আমার।তোমাকে আমার সাথে থানায় যেতে হবে।

তাহমিনা সেই কথা শুনে বললো তোরা কিন্তু আমাকে অযথায় সন্দেহ করছিস আমান।

আমান সেই কথা শুনে বললো তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেনো ফুপি?তুমি তো কোনো অন্যায় করো নি।

তাহমিনা সেই কথা শুনে বললো আগে ভাই বাসায় ফিরুক।তারপর যাবো তোর সাথে।

আমান সেই কথা শুনে বললো লিমা আর মিরা তাড়াতাড়ি এসো বাসার মধ্যে।আর মিসেস তাহমিনা চৌধুরী কে নিয়ে যাও।

তাহমিনা সেই কথা শুনে বললো, আমান!এবার কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে।

আমান তখন বললো এটা আমার ডিউটি মিসেস তাহমিনা চৌধুরী। এখন তুমি আমার ফুপি নও।আর আমিও তোমার ভাতিজা না।এই বলে আমান গাড়িতে গিয়ে বসলো।

আকবর আর তাহমিনা কেউই সত্য টা স্বীকার করতে চাইছিলো না।তারা দুইজনই শুধু বলছে তারা মালিহাকে বাসা থেকে উঠে নিয়ে যায় নি।তখন আমান চিৎকার করে বললো,স্টপ।দুইজনই চুপ হয়ে যাও।আমি সাক্ষী প্রমান যোগাড় না করেই কি ধরে নিয়ে এসেছি তোমাদের।

চাচা!এদিকে এসো।

একজন বয়স্ক লোক রুমে প্রবেশ করলো।ইনি সেই লোক যিনি মালিহা আর আকবরকে তিন বেলা খাবার দিয়ে এসেছেন রুমে।সেই চাচাকে খুঁজে বের করেছে আমান।এই চাচাই সব সত্যি বলে দিয়েছে।তাহমিনা আর আকবর প্লান করেই এই কাজটা করেছে।তাহমিনা মালিহা কে তার ভাই এর জীবন থেকে এমন ভাবে সরাতে চাইছিলো যাতে করে তার ভাই সারাজীবন তাকে শুধু ঘৃনায় করে।অন্যদিকে আকবর মালিহাকে তার জীবনে আবার ফেরত নিতে চাইছিলো।সে ভেবেছিলো মালিহার নামে এসব কুৎসা রটালে সে হয় তো আবার আকবরের জীবনে ফিরে আসবে।কিন্তু মালিহা আর আকবরকে গ্রহন করে নি।আকবর মালিহার পিছে পিছে অনেক ঘুরেছে তবুও মালিহা আর আকবরের জীবনে ফেরে নি।

অনেক টর্চার করার পর অবশেষে আকবর আর তাহমিনা মুখ খুললো।

সত্য টা জানার পর সবাই ভীষণ অবাক হলো।কারণ তাহমিনাকে সবাই অপরাধী ভাবলেও আকবরকে কিছুতেই অপরাধী ভাবতেই পারছে না।সবচেয়ে বেশি অবাক হলো মালিহা।কারণ মালিহা কখনোই কল্পনা করি নি আকবর এইভাবে তার জীবন থেকে এতোগুলো বছর কেড়ে নিয়েছে।যে আকবর একসময় তাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছিলো।আর এটাই কি কারো ভালোবাসার নমুনা?যে ভালোবাসার মানুষ কে না পেলেই তার ক্ষতি করার ধান্দায় থাকবে।যে মন থেকে কাউকে ভালোবাসবে সে তাকে না পেলেও তার কখনোই অনিষ্ট করতে চাইবে না,তার ভালোই চাইবে সবসময়।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

রাতের পর দিন এলো।আর দিনের পর রাত।এইভাবে দিন পেরিয়ে মাস আর মাস পেরিয়ে বছর চলে গেলো।অবশেষে দীর্ঘ এক বছর পর শীলা আর সিফাত বুঝতে পারলো তারা দুইজন দুইজনকে সত্যি ভালোবাসে।এই এক বছরে তারা কেউ কারো সাথে কথা বলে নি।তারা দেখতে চেয়েছে এই এক বছরে দুইজন দুইজনকে কত টা মিস করে।
এই দূরত্বের কারণ আছে।কারন যেহেতু তারা দুইজনই অন্য আরেকটা সম্পর্ক থেকে বের হয়ে এসেছে সেজন্য তারা এই সময় টা নিয়েছিলো।তারা দেখতে চেয়েছিলো এটা কি সত্যি লাভ ছিলো না এট্রাকশন ছিলো?

কিন্তু তারা বুঝতে পারলো আসলেই দুইজন দুইজনকে ভীষণ ভাবে ভালোবেসে ফেলেছে।আর এখন তারা বিয়ে করতে চায়।
অবশেষে সবার সম্মতিতে শিলা আর সিফাতের বিয়ে হয়ে গেলো।

#চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে