জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০৯

0
906

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা-৯ম পর্ব
©শাহরিয়ার

ইকরা:- ব্যথায় কুকড়ে উঠে উফ ছাড়ো প্লীজ হাত ভেঙে যাবে।

সোহান:- আরও জোরে মোচড় দিয়ে ভেঙে যাবে যাক, তুই কার অনুমতি নিয়ে শপিং করতে বের হয়েছিলি?

— ইকরার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরছে, ব্যথায় কথা বলতে পারছে না। কোন রকমে বললো ছেড়ে দাও খুব কষ্ট হচ্ছে।

— সোহান ইকরার দিকে তাকিয়ে দেখলো চোখ দিয়ে পানি পরছে দ্রুত হাত ছেড়ে দিয়ে এই সরি সরি ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দে এমনটা আর কোন দিনও হবে না।

ইকরা:- কাঁদতে কাঁদতে তুমি এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারো আমি জানতাম না। আমার কি অপরাধ সামান্য শপিং করতেইতো গিয়েছিলাম।

সোহান:- প্লীজ মাফ করে দে রাগটা কেন জানি কন্ট্রোল হচ্ছিলো না। বলেই চোখের পানি মুছার জন্য ইকরার গালে হাত দিতেই এক ঝটকায় ইকরা সোহানের হাত ছড়িয়ে দিয়ে খবরদার আমাকে স্পর্শ করবে না।

সোহান:- ইকরার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাতে কান টেনে ধরে আর কখনো এমনটা হবে না।

— ইকরা সোহানের কথা শুনেও না শোনার মত করে নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে সোহানের কাপড় গুলো গুছাতে শুরু করলো। সোহান প্লীজ প্লীজ মাফ করে দে।

ইকরা:- তুমি সরো আমাকে আমার কাজ করতে দাও।

সোহান:- উঠে দাঁড়িয়ে ইকরার হাত থেকে জামা টান দিয়ে নিয়ে। যতক্ষণ মাফ করবি না ততক্ষণ কাজ করতে হবে না।

ইকরা:- ঠিক আছে তোমার গুলো তুমিই গুছিয়ে নিও। বলেই হাঁটা শুরু করতেই, সোহান সামনে যেয়ে দাঁড়ালো।

সোহান:- তুই যেতে পারবি না। বললামতো আমার ভুল হইছে ক্ষমা করে দে।

ইকরা:- তোমার সব সময় ভুল হয়, কেন এমনটা করবে তুমি? আমি আর তোমাকে ক্ষমা করবো না। আমাকে যেতে দাও না হলে সত্যি সত্যি আমি এখন চিৎকার করবো।

— সোহান দু’হাত একত্রে করে প্লীজ শেষ বারের মত প্রমিস করছি আর কখনো এমনটা করবো না।

ইকরা:- মনে থাকবে না তোমার এই প্রমিস আমি জানি।

সোহান:- থাকবে থাকবে এই শেষ সত্যি বলছি।

— ইকরা আর কথা না বলে আমার সোহানের জামা গুলো গুছাতে শুরু করলো।

সোহান:- কথা বলবি না আমার সাথে?

ইকরা:- মাথা নেড়ে বুঝালো না।

সোহান:- কেন কথা বলবি না? তার মানে তুই আমাকে মন থেকে মাফ করিস নাই।

ইকরা:- শোন ছেলেদের এমন অন্যায় করাও ঠিক না আর মাফ চাওয়াও ঠিক না বুঝলা।

সোহান:- হুম বুঝলাম আর হবে না।

ইকরা:- জামা গুলো ব্যাগে ভরে দিয়ে রুম থেকে বের হতে হতে মনে থাকে যেন।

সোহান:- হ্যাঁ সারা জীবন মনে থাকবে।

ইকরা:- তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে রেডি হও। সময় বেশী নেই সন্ধ্যার পর পরই বের হতে হবে। বলে রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।

— কিছুক্ষণ পরেই মিলু, মা আর বড় মা সকলে ইকরার রুমে চলে আসলো। এদিকে সোহান, আর ওর বাবা চাচারা বললো ঘটনা কি সবাই এক সাথে কি করবে?

বাবা:- কি জানি আমাকে কি বলছে নাকি?

সোহান:- তাও ঠিক আচ্ছা তোমরা রেডিতো?

বাবা:- হুম আমরা রেডি এখন ওরা রেডি হয়ে আসলেই বের হতে পারি।

— সন্ধ্যার দিকেকে চার জন একই রকম শাড়ি পরে উপর থেকে নিচে নামতে শুরু করলো। অপূর্ব সুন্দর লাগছিলো সবাইকে সোহানের চোখের পলক পরছিলোই। এক দৃষ্টিতে ইকরার দিকে চেয়ে রয়েছে। ইকরা উপর থেকে নামতে নামতে ব্যপারটা খেয়াল করলো। মনে মনে হাসছে আর বলছে পাগল একটা। নিচে নেমে আসতেই বাবা বলে উঠলো। সবাইতো পরী হয়ে গেছো।

— বাবার কথা শুনে সকলে এক সাথে হেঁসে উঠলো। ইকরা বলে উঠলো অনেক হাসা হাসি হয়েছে এবার সবাই তাড়াতাড়ি বের হও। নয়তো বাস আমাদের রেখে তার গন্তব্যে চলে যাবে। কেউ আর দেরী করলো না তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে পরলো। ঠিক সময় মত বাস কাউন্টারে চলে আসলো। সকলে বাসে উঠে নিজ নিজ সিটে বসে পরলো। সোহান বসলো ইকরা আর মিলুর পেছনের সিটে, ওদের অপর সাইটের সিট চারটায় বসলো বাবা, মা আর চাচা চাচীরা। সোহানের পাশের সিটটা খালিই রয়ে গেলো। ইকরা সোহানের দিকে ফিরে বললো দোয়া করি তোমার পাশে যেন একটা রূপসী মেয়ে বসে। যেন সারা রাত খুব গল্প করতে করতে যেতে পারো।

সোহান:- আস্তে করে তোর মাথা ফাঁটিয়ে দিবো বেশী কথা বললে চুপ করে সামনে তাকিয়ে থাকবি একবার ও পেছনে তাকাবি না। মেয়ে বসুক আর ছেলে বসুক।

— সোহানের কথা শুনে ইকরা মুচকি হাসে।

বাবা:- সোহানের দিকে তাকিয়ে এবারতো বল আমরা কোথায় যাচ্ছি?

সোহান:- উহু সকাল হলেই দেখতে পাবে।

বাবা:- যদি যাবার পর জায়গাটা আমার পছন্দ না হয় তখন তোর যে কি হাল করমু আমি এটা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।

সোহান:- আর যদি তোমার পছন্দ হয় তখন কি হবে?

বাবা:- যা তোকেকে ওয়াদা করলাম যা চাইবি তাই পাবি।

সোহান:- মনে রেখো কিন্তু।

বাবা:- অবশ্যই মনে থাকবে।

— কথা বলতে বলতে সত্যি সত্যিই সোহানের পাশের সিটে একটা মেয়ে এসে বসলো। মুহুর্তেই ইকরা ঘুরে মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটা দারুণ দেখতে ইকরার প্রচণ্ড হিংসা হলো। চোখ বড় বড় করে সোহানের দিকে তাকালো। সোহান মুচকি মুচকি হাসতে থাকলো ইকরার রিয়াক্ট দেখে।

ইকরা:- মিলু তুই পেছনের সিটে যেয়ে বস।

মিলু:- কেন?

ইকরা:- একটা থাপ্পর দিবো কোন প্রশ্ন করলে। চুপ করে চলে যা।

— মিলু নিজের সিট ছেরে উঠে সোহানকে বললো তুমি সামনের সিটে যাও আমি এখানে বসবো। সোহান তাকিয়ে দেখলো আড় চোখে ইকরা তাকিয়ে আছে। সোহান মিলুকে সিট ছেড়ে দিয়ে সামনে ইকরার পাশে যেয়ে বসলো।

সোহান:- খুব আস্তে করে কি হিংসা হয়?

ইকরা:- চুপ একদম চুপ নয়তো খুন করে ফেলবো।

সোহান:- আরে আমার কি দোষ আমি কি মেয়েটাকে বলছি নাকি আমার পাশের সিটের টিকিট কাটার জন্য। বরং তুইতো প্রার্থনা করেছিলি আমার পাশে যেন সুন্দরি একটা মেয়ে বসে।

ইকরা:- তখন কি আমি জানতাম নাকি যে সত্যি সত্যি কোন মেয়ে তোমার পাশে বসবে।

সোহান:- আমি জানিতো তোর জ্বলে।

ইকরা:- আমার না জ্বললে কি ঐ মেয়ের জ্বলবে?

— কথা বলতে বলতে গাড়ি ছেড়ে দিলো। অল্প সময়ের ভিতর গাড়ির সব লাইট অফ হয়ে গেলো। গাড়ি এগিয়ে চলছে দু’জন খুব আস্তে আস্তে কথা বলছে কথা বলতে বলতে এক সময় ইকরা সোহানের কাঁধে মাথা রেখে দু’চোখ বন্ধ করে নিলো। সোহান একটা হাত দিয়ে ইকরার চুলে বিলি কিটে দিতে এক সময় ইকরা ঘুমিয়ে পরলো। গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে তার গন্তব্যের পথে। এক সময় সোহানেরও দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসলো।

— রাত শেষে ভোরের প্রথম প্রহরের সূর্য যখন সোহানের মুখে পরলো তখন চোখ মেলে তাকাতেই ইকরার মুখটা চোখের সামনে পরলো। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো তখনো সকলের চোখ বন্ধ। সোহান অপলক ঘুমন্ত ইকরার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। ঘুমন্ত অবস্থায় একটা মেয়েকে যে এতো সুন্দর লাগতে পারে সোহান আগে জানতো না। অপলক চেয়ে থাকতে থাকতে এক সময় সোহান খুব আস্তে আস্তে ইকরাকে ডাক দিলো। বেশ কয়েকবার ডাক দেবার পর, ইকরা চোখ মেলে তাকালো।

ইকরা:- সোহানের কাঁধে মাথা রেখেই আমরা কি চলে এসেছি?

সোহান:- না আরও কিছুটা সময় লাগবে, এখন মাথাটা সরিয়ে নে। সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠবে।

ইকরা:- উফ সরি,

— ইকরা মাথা উঠিয়ে, জানালা খুলে দিয়ে বাহিরে তাকাতেই বাতাসে ইকরার খোলা চুল গুলো উড়তে শুরু করলো। সোহান মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো ইকরার দিকে। ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে এভাবে কি দেখছো?

সোহান:- অপ্সরি দেখছি একটা।

ইকরা:- ইস কি সব বলো তুমি।

— বলেই আবার ইকরা বাহিরের দিকে তাকিয়ে আজকের সকালটা অনেক সুন্দর। কত বছর পর প্রকৃতির মাঝে আছি আমরা।

সোহান:- হ্যাঁ অনেক বছর পর, তখন তুই খুব ছোটই ছিলি যখন শেষ বার এসেছিলাম।

ইকরা:- হ্যাঁ অনেক গুলো বছর কেটে গেছে।

— দু’জন কথা বলতে বলতে গাড়ি এসে পৌঁছালো গন্তব্যস্থলে। একে একে সবাই নামতে শুরু করলো।

বাবা:- গাড়ি থেকে নেমে, জায়গাটা কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে আমার কাছে।

— সোহান আর ইকরা হাসতে হাসতে নিজের জন্মস্থানকে তোমার শুধুই চেনা চেনা লাগছে?

বাবা:- কি আমরা নীলাঞ্জনায় চলে এসেছি? সত্যিই এটা আমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ। আহ কত গুলো বছর কেটে গেলো। আচ্ছা তোরা কি ফোন দিয়েছিলি আমরা যে এখানে আসছি?

সোহান:- না সারপ্রাইজটা শুধু তোমাদের জন্যই কেন হবে? ফুপুর জন্যও থাক কিছুটা।

— অল্প সময়ের ভিতর অটো চলে আসলে সকলে অটোতে উঠে বসলো। বাবা গ্রামের মুগ্ধতায় গান শুরু করলো।

“সুন্দর, সুবর্ণ, তারুন্য, লাবন্য
অপূর্ব রূপসী রূপেতে অনন্য
আমার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন
ও দেশ, তোমারই জন্য।।
থাকবে নাকো দুঃখ দারিদ্র
বিভেদ-বেদনা-ক্রন্দন
প্রতিটি ঘরে একই প্রশান্তি
একই সুখের স্পন্দন।।”

— গান গাইতে গাইতে অটো এগিয়ে চললো বাড়ির উদ্দেশ্যে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে