জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-১০

0
1041

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা-১০ পর্ব
©শাহরিয়ার

— গ্রামের মেঠো পথ ধরে অটো এগিয়ে চলছে, সকলে অনেক আনন্দ করছে গান গেয়ে চলছে।

সোহান:- কেমন লাগছে বাবা?

বাবা:- সবুজ অরণ্যের মাঝে ভেজা তাজা মাটির ঘ্রাণ আহ দারুণ অনুভুতি। তোকে বলে বুঝাতে পারবো না। তোদের দু’জনকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সোহান:- শুধু ধন্যবাদে কাজ হবে না। মনে আছে কি বলছিলা?

বাবা:- হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে, যা সময় হলে চেয়ে নিস।

— কথা বলতে বলতে অটো চলে আসলো চেনা সেই কাঠের তৈরী দুচালা বাড়ির গেটের সামনে। অনেক গুলো বছর কেটে গেলেও বাড়িটা সেই আগের মতই সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। কাঠ গুলো কয়েক রকম রঙ দিয়ে রাঙানো। চালটা টিনের। ভাবতে পারেন একটা কাঠের তৈরি বাড়ি যার চালটা টিনের ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে আপনি দক্ষিনের জানালা খুলে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন অনেকটা দূরে আর আপনার কানে বেজে চলেছে টিনের চালে পরা ঝুম বৃষ্টির টং টং শব্দ। হারিয়ে যাওয়া যায় সত্যিই হারিয়ে যাওয়া যায়। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বাবা বাড়ির গেটে ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। রাতে বেশ ভালোই বৃষ্টি হয়েছে যার কারণে বাড়ির কেউ এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই।

— বাবা সোহানের দিকে তাকাতেই সোহান বলে উঠলো বুঝে গেছি কি করতে হবে। বলেই সোহান যেয়ে ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে বাড়িতে কেউ আছেন? তিন চার টোকা দিতেই ভিতর থেকে কেউ একজন বলে উঠলো কে?

সোহান:- আপনার বাসায় মেহমান এসেছে দরজা না খুললে দেখবেন কি করে?

— ফুপু এসে দরজা খুলতেই সবাই কে এক সাথে দেখে চমকে যায়। চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরতে থাকে। তবে তা আনন্দের পানি। ফুপু চিৎকার করে ডাকতে থাকে রাসেলের বাবা দেখো কারা এসেছে তাড়াতাড়ি উঠো। সোহান ফুপুকে জড়িয়ে ধরে কেমন আছো ফুপু?

ফুপু:- সোহানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আমি ভালো আছি তোরা কেমন আছিস কত বড় হয়ে গিয়েছিস।

সোহান:- কোথায় বড় হইছি দেখ আমি তোমার সেই আগের ছোট সোহানই আছি।

ফুপু:- পাগল ছেলে একটা।

— পুরো বাড়িতে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে সকলের মিলন মেলায়। বেশ কয়েক বছর পর ভাই বোনের দেখা। এমন মুহুর্ত যারা নিজের চোখে দেখে নাই তারা কখনোই বুঝবে না এই মুহুর্তটা কত আনন্দের। বাড়ির পরিবেশটাই মুহুর্তে বদলে গেলো এই মিলন মেলায়। বোন কি থেকে কি করবে এতো দিন পর ভাইয়ের আগমনে বুঝে উঠতে পারছিলো না। এদিকে ভাইয়েরা বোনের এমন বিচলতা দেখে বলতে শুরু করলো আরে পাগলি বোন এতো অস্থির হবার কিছু নেই। ততক্ষণে ফুপা সকলের জন্য ঘরের ভিতর থেকে চেয়ার নিয়ে হাজির হলো। সবাই বসে যখন গল্প করতে ব্যস্ত তখন ফুপু ভিতরে ঢুকে বাড়ির সব গুলো ঘর গুছাতে শুরু করে দিলো। ইকরা লক্ষ করে দেখলো ফুপুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ইকরা আড্ডার আসর থেকে উঠে ফুপুকে খুঁজতে শুরু করলো। বিছাল বড় বাড়ি অনেক গুলো ঘর কোথায় আছে ফুপু খুঁজতে খুঁজতে এক সময় দক্ষিনের শেষ কর্ণারের রুমে যেয়ে ফুপুর দেখা পায় ইকরা। ফুপুকে দেখে পেছন থেকে যেয়ে চোখ চেঁপে ধরে ইকরা।

ফুপু:- পেছনে না ঘুরেই আমি জানি এটা আমার ইকরা মা।

ইকরা:- হাত ছেড়ে দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ফুপু তুমি কি করে বুঝলে এটা আমি?

ফুপু:- সামনের দিকে ঘুরে পাগলি মেয়ে বলে কি? মেয়ের গায়ের গন্ধ মা চিনবে না?

ইকরা:- এতো দিন পরেও তুমি আমাকে এতোটা মনে রেখেছো?

ফুপু:- পাগলি কোথাকার।

ইকরা:- আচ্ছা ফুপু রাসেল ভাইয়া আর জুহি কোথায়?

ফুপু:- ওরা বেড়াতে গিয়েছে ওদের চাচার বাড়িতে। আমি ঘর গুলো গুছিয়ে ওদের ফোন করে দিবো চলে আসার জন্য। দুপুরের ভিতর চলে আসবে।

ইকরা:- আচ্ছা ফুপু এই ঘরটা কার জন্য এতো সুন্দর পরিপাটি করে গুছাচ্ছো?

ফুপু:- কার জন্য আবার এ ঘরে সব সময় যে থাকে তার জন্য। সোহান ছাড়া আর কে হতে পারে?

ইকরা:- এটা মোটেও ঠিক না ফুপু তুমি সব সময় সোহানকেই বেশী ভালোবাসো,এবার এ ঘরে আমি থাকবো। এতো সুন্দর ঘরটা ঐরকম ফাজিল ছেলের জন্য হতেই পারে না। একটুও গুছিয়ে রাখবে না। প্রতিদিন তোমাকে এসে গুছাতে হবে। তারচেয়ে বরং রুমটা আমাকে দিয়ে দাও। আমি সব সময় গুছিয়ে রাখবো।

ফুপু:- হয়েছে তোর আর মিলুর জন্য আমি সামনের রুমটা গুছিয়েছি আরও সুন্দর করে। দু’জন দুই পাশে থাকবি। দু’জনের জন্যই একই রকম ঘর দিয়েছি তোরা ছোট বেলা থেকেই সব কিছু নিয়ে লেগে থাকিস তাই এ ব্যবস্থা করেছি।

— কথা বলতে বলতে দু’জন বাড়ির বাহিরে বের হয়ে আসলো। ফুপু সবাইকে নিজের নিজের রুমে যেতে বললো। ছেলেরা সবাই নিজেদের রুমে চলে আসলো। মেয়েরা সকলে চলে গেলো রান্না ঘরে নাস্তা বানানোর। অল্প সময়ের ভিতর সকলে মিলে নাস্তা বানিয়ে ফেললো। নাস্তা রেডি করে ইকরা সবাইকে ডাক দিলো। সোহানের রুমে যেতেই সোহান ইকরার হাত ধরে টান দিয়ে। কিরে গ্রামে এসে দেখি আমাকে ভুলেই গেছিস।

ইকরা:- সোহানের নাক টিপে ধরে ভুলবো কেন? আসলাম কিছুক্ষণ হলো, সারা রাততো তোমার বুকের মাঝেই ছিলাম। এখন ছাড়া আর নাস্তা খেতে আসো।

— দু’জন নাস্তার জন্য বের হয়ে আসলো। এতো লোক এক সাথে খেতে হবে তাই বারান্দায় বড় করে মাদুর বিছানো হলো। সকলে গোল হয়ে সেখানে নাস্তা খেতে বসলো। অনেক দিন পর সকলে এক সাথে খেতে খেতে নানান রকম গল্প শুরু হয়ে গেলো। পুরনো দিনের গল্প।গল্প করতে করতে এক সময় বাবা বলে উঠলো আচ্ছা পুকুরে কি এখনো মাছ আছে? ইস কতদিন মাছ ধরি না।

ফুপা:- জ্বি ভাইজান অনেক মাছ আছে পুকুরে। চলেন আজ সবাই মিলেই মাছ ধরবো। অনেক দিন আপনার সাথে মাছ ধরি না।

বাবা:- হ্যাঁ চলো আজ সকলে মিলে মাছ ধরবো।

সোহান:- তোমরা মাছ ধরো আমি একটু গ্রামটা ঘুরে দেখবো ইস কত বছর পর গ্রামে আসছি না ঘুরলে চলবে?

ইকরা:- আমিও যাবো তোমার সাথে।

মিলু:- আমিও যাবো আমাকেও নিতে হবে।

সোহান:- না তোদের দু’বোনের কাউকেই নিবো না।

ইকরা:- নিবানা মানে আমাকে না নিলে তুমিও বের হতে পারবে না। আমরাও অনেক বছর পরে আসছি। আর তাছাড়া মিলুতো গ্রাম তেমন ভালো করে দেখেইনি। ও যখন এসেছিলো তখন ওর বুঝার মত বয়সই হয়নি।

সোহান:- হয়েছে এতো বাহানা দেখাতে হবে না। যেতে হলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।

ফুপু:- যেখানেই যাস না কেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি।

— মিলু আপু আমাকে তুমি সাজিয়ে দিবা। কথা বলতে বলতে দু’বোন সোহানের পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলো। সোহান তখনো জানে না ওর সামনের রুমেই ইকরা আর মিলু থাকবে। সোহান ওরা পেছন পেছন আসছে দেখে ঘুরে দাঁড়িয়ে তোরা আমার পিছু পিছু আসছিস কেন?

ইকরা:- তোমার পিছু পিছু আসবো কেন? আমরা আমাদের রুমে যাচ্ছি।

সোহান:- তোদের রুম কোনটা?

ইকরা:- কেন তোমার সামনে যে রুমটা আছে ওটাই আমাদের দু’বোনের রুম।

সোহান:- হ্যাঁ,

ইকরা:- হুম হুম।

— কথা বলতে বলতে যার যার রুমে ঢুকে পরলো। সোহান পাঞ্জাবী চেঞ্জ করে টিশার্ট পরে নিলো। আর ইকরা মিলু শাড়ি চেঞ্জ করে জামা পরে নিলো। একদম সাধারণ সাজেও ইকরাকে অপূর্ব লাগে। যে কোন কেউ ইকরাকে দেখলে মুগ্ধ হবে। বিশেষ করে ইকরার মিষ্টি হাসি আর ঠোঁটের নিচের কালো তিলটা যে কারোরো হৃদয় মুহুর্তেই গায়েল করে ফেলবে। ইকরা নিজেও চোখের নিচে কাজল নিলো সাথে মিলুকেও চোখে কাজল দিয়ে দিলো। দু’জনের সাজা শেষ হতেই সোহান বাহির থেকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো হয়েছে কিনা।

ইকরা:- দুই মিনিট ভিতরে আসো হয়ে গেছে।

সোহান:- তোরা বাহিরে আয় আমি দাঁড়াচ্ছি বলে সোহান হাঁটা শুরু করলো। দু’মিনিটের ভিতর মিলু আর ইকরা বের হয়ে আসলো।

সোহান:- ইকরার দিকে তাকিয়ে দুই বোন তো পরী হয়ে গেছিস। গ্রামের ছেলেরা সব পিছু লাগবে।

ইকরা:- কেন হিংসা হচ্ছে নাকি?

সোহান:- হিংসা জানি কার হয় মিলু?

মিলু:- উফ তোমরা কি ঘুরতে যাবে নাকি?

— তিনজন মিলে বের হয়ে গেলো গ্রাম ঘুরার জন্য। সবুজ শ্যামল অপরূপ সুন্দর্যে ঘেরা গ্রাম দেখলেই দু’চোখ জুড়িয়ে যায়। দু’বোন ব্যস্ত হয়ে পরলো ছবি তুলা নিয়ে। আর সোহান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছে ওদের দু’জনের চঞ্চলতা। তবে খুব বেশী সময় ওরা ঘুরতে পারলো না পুরো আকাশ কালো অন্ধকার মেঘে ঢেকে পরায় দ্রুত তিনজন বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো। হাঁটতে হাঁটতে ইকরা বলে উঠলো ইস এতো সুন্দর মুহুর্তে বৃষ্টি না আসলে কি পারতো না? সোহান তাতে কি হয়েছে বৃষ্টিওতো তোর খুব পছন্দের। বলেই ইকরার দিকে অপলক চেয়ে রইলো। একে অপরের দিক থেকে দৃষ্টি সরাতে পারছে না। এর মাঝেই শুরু হলো ঝুম বৃ্ষ্টি।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে