ছোঁয়ার শিহরণ ২য় খন্ড পর্ব-০৪

0
1768

#ছোঁয়ার_শিহরণ_২য়_খন্ড
#ফাতিমা_আক্তার_অদ্রি

পর্ব-০৪

সাবিহা সাবরিন মুখ গোমড়া করে বসে আছেন নিজের বিছানায়। শিহরণ তার সামনে মুখ নত করে দাঁড়িয়ে আছে। গম্ভীর গলায় তিনি বললেন, ‘মান্নাতের সাথে তুমি মিসবিহেভ করেছ কেন?’

শিহরণ ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না। মায়ের সাথে তো আর উঁচু কণ্ঠে কথা বলা সম্ভব নয়। মান্নাতের বাচ্চি কি না কি এসে বলেছে কে জানে! শিহরণ খুব ভেবে বলল, ‘আম্মু, আমি কোনো মিসবিহেভ করিনি। আমি শুধু বলেছি ওকে নিজ উদ্দ্যোগে নিজ গন্তব্যে চলে যেতে।’

‘ওটা কি মিসবিহেভ নয়?’ সাবিহা সাবরিন রাগান্বিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, ‘ও যেহেতু তোমার সাথে গিয়েছে তাই ওর দায়িত্ব তোমার উপর ছিল। ওকে পৌঁছে দেয়া ছিল তোমার দায়িত্ব। তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করোনি। বরং তাকে অপমান করেছ নিজের গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে। এটা তুমি একদম ঠিক করোনি। ও তোমার কাজিন এটা ভুলে যেওনা।’

সাব্বির আহমেদ রুমে ঢুকতেই নিজের স্ত্রীর এমন রূপ দেখেই বুঝতে পেরেছেন যে কিছু একটা ঘাপলা হয়েছে। তাই তিনি পরিস্থিতি সামাল নিতে বললেন, ‘সাবিহা, তুমি দিন দিন প্রচণ্ড মেজাজী হয়ে যাচ্ছ! আগে তো এমন ছিলে না।’

সাথে সাথেই সাবিহা সাবরিন অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন সাব্বির আহমেদের উপর। তিনি মিইয়ে যাওয়া কণ্ঠে পুনরায় বললেন,’ ওরা তো বড় হয়েছে এখন। ওদের এমন ছোটোখাটো ঝামেলা ওদেরকেই মেটাতে দাও।’ শিহরণের কাঁধে হাত রেখে তাকে আশ্বস্ত করতে বললেন, ‘আমি চিনি আমার ছেলেকে। সে আর যাই করুক কোনো মেয়েকে অপমান করবে না বলেই আমার বিশ্বাস।’

বাবার কথা শুনে শিহরণের ভালো লাগার পাশাপাশি খানিকটা খারাপও লাগছে। কারণ সে আসলেই মৃদু অপমান তো করেছিলই। কিন্তু এখন সেই বিষয়টার জন্য মনের মধ্যে আক্ষেপ হচ্ছে। তার বাবার বিশ্বাস সে ভেঙ্গেছে ভাবতেই একরাশ কষ্ট দলা পাকিয়ে বুকের উপর জমাট বাঁধছে ।

সাবিহা সাবরিন বললেন, ‘তাহলে কি মান্নাত আমাকে মিথ্যা বলেছে?’

সাব্বির আহমেদ তৎক্ষনাত বললেন, ‘মিথ্যে অথবা সত্যের প্রশ্নে আমি যাব না। আমি শুধু তোমাকে একটা কথাই বলতে চাই যে, এরকম ছোটোখাটো একটা বিষয় নিয়ে তোমার কাছে নালিশ করে মান্নাত একদম ঠিক করেনি। এসব বিষয় নিজেরাই মিটিয়ে ফেলা যায় ।’

সাবিনা সাবরিন খুব অবাক হলেন। তবে তিনি কেন যেন আর কিছুই বললেন না। সাব্বির আহমেদ শিহরণকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, ‘এবার তুমি যেতে পারো, শিহরণ।’

‘ওকে, আব্বু।’ শিহরণ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল । ভাগ্যিস, তার বাবা সঠিক সময়ে রুমে এসেছিলেন। নয়তো সে কোনো উত্তর খুঁজে পেত না। মনে মনে সে তার বাবাকে অনেক ধন্যবাদ দিল।

______________________

ছোঁয়া আজ শপে না গিয়ে সোজা অফিসে চলে এলো। সাইফ তো আছেই। তাই তেমন একটা চিন্তা করতেও হচ্ছে না তাকে । আজ নতুন বসের সাথে পরিচয় হবার কথা। তাছাড়া নতুন একটা প্রজেক্টের প্রেজেন্টেশনও করতে হবে তাকে। তাই সে তার ডেস্কে বসে ল্যাপটপে প্রেজেন্টেশন স্লাইডগুলো তৈরী করছিল।

এবারের প্রেজেন্টেশন নিয়ে ছোঁয়ার বেশ ভালো প্রস্তুতি আছে। এসবিএ এন্টারপ্রাইজের সাথে তাদের কোম্পানি কাজ করছে মাসখানেক হচ্ছে। এতদিন তাদের কোম্পানির বসের সাথেই তাকে কাজ করতে হয়েছে। এসবিএ এন্টারপ্রাইজের বেশ কিছু ছোট প্রজেক্ট সে অবশ্য হ্যান্ডল করেছে। তবে এসবিএ এন্টারপ্রাইজের এমডি সাব্বির আহমেদের সাথে তার মাত্র দু’বার দেখা হয়েছে। ভদ্রলোকের ব্যাবহার অত্যন্ত অমায়িক। তবে কাজের ব্যাপারে তিনি খুবই স্ট্রিক্ট। এইতো বেশ কিছুদিন আগে একজনের ফাইল এরেঞ্জমেন্টে কী যেন সমস্যা হয়েছিল! তাতে তিনি প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলেন। ছোঁয়া সেই মুহূর্তটা যেন কেঁপে উঠেছিল। আর এখন সেই স্ট্রিক্ট মানুষটির ছেলে আসবে তার জায়গায় । ভাবতেই তার কেমন যেন অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হচ্ছে। সে ভাবছে এই মহোদয় না জানি কেমন হবে! স্ট্রিক্ট, এরোগ্যান্ট, রুথলেস আর কেমন হতে পারে! না-কি উদারনৈতিক, সহযোগিতাপ্রবণ মানসিকতার হবে?

এরকম আকাশ পাতাল ভাবনা ভাবতে ভাবতে ছোঁয়া নিজের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ ল্যাপটপ হাতে নিয়ে প্রেজেন্টেশন হলের দিকে হাঁটতে থাকল। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কয়েকবার লম্বা করে দম নিল। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে চলেছে সে। তারপর আলতো হাতে ধাক্কা দিল কাচের তৈরী দরজায় । ধাক্কা দিতেই ক্যাচ করে আওয়াজ হলো। আর সেই আওয়াজ শুনতে পেয়ে প্রেজেন্টেশন রুমে বসে থাকা সকলের দৃষ্টি দরজার দিকেই এসে পড়ল। ছোঁয়া এক নজরেই সকলের অভিব্যক্তি দেখে নিল। তবে একজনের চেহারা দেখে সে স্তব্ধ হয়ে গেল । এ কাকে দেখছে সে! কতগুলো বছর পর দেখছে। ছোঁয়া যেন হার্টের একটা বিট মিস করল। সেই হালকা সবুজাভ চোখ, সেই কোঁকড়ানো ঝাঁকড়া চুল, ফর্সা মুখ। এখন দেখতে আরো অনেক বেশি হ্যান্ডসাম হয়েছে। ছোঁয়া নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগল। প্রেজেন্টেশন রুমের সবাই যেন তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

আর ওই বিশেষ মানুষটা গভীর চোখে তাকে যেন পরখ করেই চলেছে। তবে তার দৃষ্টি স্বাভাবিক । যেন ছোঁয়াকে দেখে সে কোনোপ্রকার অনুভূতি অনুভব করছে না। যেন তাকে দেখা অন্য সব ঘটনার মতো এক স্বাভাবিক ব্যাপার!

ল্যাপটপ অন করতে করতেই সে কয়েকবার লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করল। তারপর প্রেজেন্টেশন শুরু করল। প্রেজেন্টেশন করার সময় সচরাচর চোখ থাকতে হয় সমান তালে সকল অডিয়েন্সের দিকে পাশাপাশি মনোযোগ থাকতে হয় স্লাইড শো করা ও তার যথাযথ ব্যাখ্যার দিকে । ছোঁয়া এই কাজে বেশ পটু। কিন্তু আজকের প্রেজেন্টেশনে তার চোখ জোড়া হালকা সবুজাভ চোখ জোড়ার সাথে না চাইতেও বারংবার মিলিত হচ্ছে। কী অদ্ভুত! এরকম যে কেন হচ্ছে ছোঁয়া বুঝতে পারছে না। তারপরেও নিজেকে সামলে নিয়ে প্রেজেন্টেশন শেষ করল। সবাই হাত তালি দিয়ে তাকে বাহ্বা দিল। মিটিং শেষ হতেই তার অফিসের এমডি জনাব আশফাক হক নতুন এমডির সাথে পরিচয় করানোর পর্ব শুরু করলেন। বললেন, ‘রাইয়ান আহমেদ শিহরণ হচ্ছেন এই কোম্পানির নতুন এমডি।’

শিহরণকে একে একে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন জনাব আশফাক হক। সব শেষে ছোঁয়ার সাথে পরিচয় পর্ব শুরু করতেই শিহরণ তার হাত এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘হ্যালো, ম্যাম। ইটস্ নাইস টু মিট ইউ ।’

ছোঁয়া ভাবছে এত স্বাভাবিক কীভাবে যে থাকে! তার ক্ষেত্রেই সব উল্টাপাল্টা ঘটনা ঘটে চলেছে। সেই নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। ছোঁয়া পরক্ষণেই নিজের চিন্তা সংযত করে হাত এগিয়ে দিল শিহরণের দিকে। বলল, ‘হাই, স্যার। ইটস্ নাইস টু মিট ইউ টু।’

প্রেজেন্টেশন শেষ হতেই ছোঁয়া যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল । মুহূর্তেই সে প্রচণ্ড তেষ্টা অনুভব করল। নিজের ডেস্কে গিয়েই ল্যাপটপ রেখে পানির বোতল থেকে ঢকঢক করে পানি পান করল। তারপর কফি খাওয়ার জন্য কফি কর্নারে গেল।নিজ হাতে কফি বানানো শেষ হতেই সে ফিরে আসার জন্য উদ্যত হতেই তার কানে আসলো একটা অনুরোধের ভাষা।

‘ক্যান আই হ্যাভ আ কাপ অব কফি, প্লিজ?’ ছোঁয়া মুহূর্তেই ফিরে তাকাল । দেখতে পেল সবুজাভ চোখ জোড়ার অধিকারী ওই ছেলেটি তার থেকে ঠিক এক হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে মুচকি হাসি লেগেই আছে । ছোঁয়া তৎক্ষনাত বলল,’হুয়াই নট? আমি এখনই বানিয়ে দিচ্ছি। জাস্ট ওয়েট ফর সাম টাইম।’

‘ওকে।’ শিহরণ দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল, ‘এই অফিসে ঠিক কতদিন যাবৎ আছেন?’

ছোঁয়া একটু বিষম খেল। ‘আছেন’ সিরিয়াসলি? পরক্ষণেই আবার মনকে বুঝাল যে তারা তো অফিসে আছে। সো, অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ মাস্ট। থতমত খেয়ে সে বলল, ‘ইটস্ অ্যারাউন্ড সিক্স মানথ।’

‘ইম্প্রেসিভ ।’ শিহরণ এবার সোজা হয়ে দাঁড়াল। ছোঁয়া ততক্ষণে কফি তৈরী করে নিয়েছে। সে ছোঁয়ার হাত থেকে কফির মগ নিতে নিতে বলল, ‘আই নিড সো মেনি ইনফর্মেশন এবাউট অল অব দ্যা এমপ্লয়ি । ক্যান ইউ হেল্প মি এবাউট দিস?’

‘অফকোর্স।’ ছোঁয়া হেসে বলল, ‘নো প্রবলেম। কজ ইটস্ মাই জব আফটার অল।’

‘ওকে, সি ইউ লেটার।’ শিহরণ কফি শেষ করেই লম্বা পা ফেলে চলে গেল তার নিজের রুমের দিকে। ছোঁয়া তাকিয়ে ছিল তার যাওয়ার পানে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

__________________

অহনার মেজাজটা এখন প্রায় সময়েই বিগড়ে থাকে। বাসায় থাকলে তো কথাই নেই। ছোঁয়ার প্রতি মায়ের আদিখ্যেতা দেখতে দেখতে তার মেজাজটাই খিটখিটে হয়ে গেছে। সে এসব একদমই সহ্য করতে পারছে না। অনেক বার গলাবাজি করেও কাজ হলো না। সামনেও যে হবে না তাতে সে একেবারেই সুনিশ্চিত। কিন্তু চোখের সামনে এসব সহ্য করাটাও দুষ্কর । মাঝেমধ্যে তার মনে হয় সে তার মায়ের আপন মেয়েই না। ছোঁয়া হচ্ছে তার মায়ের আপন মেয়ে । স্কুলের দিনগুলিকে সে ভীষণ রকমের মিস করছে। তখন মাকে ইচ্ছেমতো যা-তা বুঝিয়ে দেয়া যেত। ফলস্বরূপ ছোঁয়াকে দিতে হতো মাশুল। অথচ এখন সম্পূর্ণ চিত্রই পাল্টে গেল।ছোঁয়া কোন জাদুর কাঠি তার মাকে ছুঁইয়েছে কে জানে! এখন ফাহমিদা বেগম যতটা না তার নিজের মা তার চাইতেও বেশি ছোঁয়ার মা হয়ে গেছে ।

তাও তো নাহয় মানা যেত । কিন্তু হিয়াটাও যে কেন ছোঁয়ার পিছনে ঘুরঘুর করে অহনা তা একদমই বুঝতে পারে না। এখন তার নিজেকে বড্ড একা মনে হয়। হিয়া এখন ছোঁয়া বলতে পাগল। অহনা কত কথা বলে ছোঁয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু কোনো কথাতেই কাজ হয় না। আরও তার সমস্ত বিরুদ্ধাচারণ কাজের প্রতিক্রিয়া হিসেবে হিয়া তাকে উপদেশ দিতে প্রস্তুত হয়ে যায় । এই দুঃখ যে কাকে বুঝাবে অহনা তা বুঝতে পারে না। নিজের রুমের ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে এসব ভাবছিল অহনা।

‘হেই আপু! কি করছ?’ হিয়ার ডাকে ফিরে তাকাল অহনা।

হিয়া একটা সোনালি রঙের গাউন পরেছে। গাউনের উপরে নীল রঙের সুতির কাজ ও বেশকিছু নীল রঙা পাথর বসানো আছে।

অহনা তাকে দেখে অবাক হয়ে বলল, ‘হিয়া! তোকে যা সুন্দর লাগছে ড্রেসটাতে। কবে কিনেছিস এটা?’

‘আমি কিনি নাই তো, আপু।’ হিয়া অহনার পাশে বসতে বসতে বলল।

‘মা এনেছে? আমার জন্যে আনেনি। তাই না?তার সাথে আমি প্রচণ্ড রাগ করব । কথাই বলব না । তোর জন্য এনেছে অথচ আমার জন্য আনেনি।’ অহনা তিরিক্ষি মেজাজে বলল।

হিয়া বসা থেকে দাঁড়িয়ে গাউনের দুপাশ একটু উঁচু করে ধরে ঘুরতে ঘুরতে বলল, ‘এত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? এটা মা আনেনি। এটা আমার জন্য ছোঁয়া আপু কিনে এনেছে।’

অহনা মুখ বেঁকিয়ে বলল, ‘ওহ্! আচ্ছা, এভাবেই তাহলে সে আমার মা আর বোনকে হাত করছে? ওকে বলে দিস ওর এসব হাত করার ধান্দা আমার ক্ষেত্রে কোনো কাজ করবে না।’

হিয়া থমথমে গলায় বলল, ‘ছোঁয়া আপু যদি জীবনেও আমাকে এক টাকাও না দেয় না তবুও সে আমার জন্য আপন বোনের চাইতেও বেশি থাকবে। তাকে আমি যতটা না ভালোবাসি তার চাইতেও বেশি শ্রদ্ধা করি তার মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি ও উদারতার কারণে। মায়ের দিকটা আমি ব্যাখ্যা করব না। তবে এটুকু জেনে রাখ ছোঁয়া আপুকে যদি কাছ থেকে একবার জানার সুযোগ পাস তবে তা মিস করিস না। আমি জানি সে আমার জন্য কি করেছে! আমি জানি সে আমার জন্য কী!’

‘কী এমন করেছে তোর জন্য যে তুই দিনরাত খালি ওর গান গাইতে থাকিস? আমাকে বল । আমিও একটু শুনে দেখি।’ অহনা চুলটা উঁচু করে বেঁধে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে উঠে বলল।

‘আমার হাত বাঁধা । তাই তোকে বলতে পারছি না। হয়তো কখনোই বলতে পারব না। তবে জানলে বোধহয় ছোঁয়া আপুর সাথে মিসবিহেভ করতি না।’ হিয়া গম্ভীর কণ্ঠে বলল।

‘তোর এসব লেকচার আমার একদম ভালো লাগছে না। তুই যা এখান থেকে।’ বিরক্তি মিশ্রিত কণ্ঠে বলল, অহনা।

ঠিক সেই মুহূর্তে ছোঁয়া একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে ঢুকল অহনার রুমে। অহনার কাছে গিয়ে বলল, ‘অহনা, এটা তোমার জন্য। পছন্দ হয়েছে কি না বলো।’

এটা বলে ছোঁয়া একবার হিয়ার দিকে আর একবার অহনার দিকে তাকাল। সে বুঝতে পারল যে এরা তার বিষয়েই ঝগড়া করছিল। তারপর সে হেঁটে অহনার রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে হিয়া বলল, ‘আপু, তুমি তো বললে না আমাকে কেমন লাগছে?’

ছোঁয়া দাঁড়িয়ে পড়ল। হিয়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল , ‘আমার পিচ্চি বোনটাকে দেখতে একমদ মিষ্টি লাগছে। ঠিক যেন কোনো পরী!’

‘এবার কিন্তু বেশিই বলে ফেললে আপু। মিষ্টি ঠিক ছিল কিন্তু পরী বেশি হয়ে গেল না?’ হিয়া বলল, অভিযোগের সুরে।

‘একদম বেশি বলিনি।’ প্রগাঢ় কণ্ঠে বলল, ছোঁয়া।

‘কিরে ছোঁয়া, হিয়া, অহনা তোরা কই গেলি? আমি খাবার নিয়ে বসে আছি। এই নিয়ে দুবার খাবার গরম করলাম। আবার ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।’ ফাহমিদা বেগমের কণ্ঠ শুনে ছোঁয়া বলল, ‘চল খেতে যাই। নয়তো মা খুব রাগ করবে।’

ছোঁয়া আর হিয়া বেরিয়ে যেতেই অহনা ধপাস করে শব্দ করে নিজের বিছানায় বসে পড়ল। বিড়বিড় করে বলল, ‘এ কোন ঝামেলায় পড়লাম আমি! এখানে তো আর আমার কোনো গুরুত্বই নেই। আমার অতি দ্রুত কিছু একটা করতে হবে। আই হ্যাভ টু ডু সামথিং টু গেট ব্যাক মাই পজিশন।’

______________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে