চুপিসারে ভালবাসি পর্ব-০৯(অন্তিম পর্ব)

0
3230

#চুপিসারে ভালবাসি
–পর্বঃ৯ (অন্তিম পর্ব)
সাদিয়া আফরিন নিশি
—————————-

“কীসের গল্প?”

ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল সোহা। জিসান প্রসন্ন হেসে বলল,

“মনে কর এক পাগল প্রেমিকের গল্প।”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সোহা রাজি হয়ে গেল শুনতে। নয়তো উপায় কী এখানে তার বোরিং লাগছে। আর যতটা এটেনশন অন্য দিকে রাখা যায় ততই তার জন্য ভালো। সোহা রাজি হতেই জিসান বলল, চল হাঁটতে হাঁটতে বলি। দু’জনে হাঁটছে সবার থেকে আলাদা হয়ে।

“এক ছিল এক প্রেমিক রাজা। বয়স তার তখন সবে আট বছর। তখনই রাজার জীবনে এন্ট্রি হয় আমাদের রানি সাহেবার। প্রেমিক রাজা রানি সাহেবার জন্মের পর থেকেই তাকে খুব করে নিজের ভাবতে শুরু করে। অন্য কেউ তাকে ছুঁলেও যেন প্রেমিক রাজার গায়ে ফোসকা পড়ে এমন। ছোট থেকেই সবসময় প্রেমিক রাজা তার রানি সাহেবাকে আগলে আগলে রেখেছে। সবসময় চুপিসারে ভালবেসে গেছে। ঠিক যখন সময় হয়েছে প্রেমিক রাজা তার মনের কথা তার রানি সাহেবাকে জানানোর ঠিক সেসময়ই আগমন ঘটে ভিলেনী শাঁকচুন্নির। এই ভিলেনী শাঁকচুন্নি যবে থেকে প্রেমিক রাজার দর্শন পেয়েছে তবে থেকে তার পেছনে পড়ে আছে। প্রেমিক রাজা হাজার চেষ্টা করেও তাকে দূর করতে পারে নি। বড্ড বেহায়া মেয়ে কীনা। হঠাৎই একদিন হুট করে ওই ভিলেনী শাঁকচুন্নি প্রেমিক রাজাকে জড়িয়ে ধরে। প্রেমিক রাজা আচমকা অপ্রস্তুত হয়ে কিছু বলতে নেবে ঠিক তার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় রানি সাহেবার। রানি সাহেবা শুধু শুধুই ভুল বোঝে আমাদের প্রেমিক রাজাকে। তারপর তো প্রেমিক রাজা রানি সাহেবাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। উপায়ন্তর না পেয়ে মনের কষ্টে সে নিজেকে সবার থেকে দুরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।”

“গল্প শেষ এখন তুই বল প্রেমিক রাজার এখন করণীয় কী? রানি সাহেবা তাকে ভুল বুঝে দুরে সরে না গিয়ে একটি বার তাকে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ তো দিতেই পারত তাই না?”

সোহা এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনছিল। তার আর বুঝতে বাকি নেই যে জিসান নীলের কথা বলছে। তবুও সোহা সিওর হওয়ার জন্য বলল,

“তুমি কার কথা বলছো বলতো?”

জিসান কিঞ্চিৎ হেসে বলল,

“নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস।”

সোহা কিছু বলল না। চুপচাপ দাড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর আবার নিজে থেকেই জিসানকে বলল, বাড়ি যাব। জিসান সোহার মন পড়ার চেষ্টা করেও অক্ষম। অগত্যা বাড়ি নিয়ে গেল জিসান সোহাকে। ওদের সঙ্গে সঙ্গে বাকিরাও ফিরে এলো। রিয়ার অবশ্য ঘোর বিরোধিতা ছিল তবুও কেউ তা পরোয়া করে নি।

___

কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে মুখশ্রীতে কাঠিন্যতা এসে ভর করল নীলের। আজ আর সে ছাড় দেবে না। ঠাটিয়ে কয়েকটা চর বসিয়ে দিবে। উদ্দেশ্য সফল করতে প্রস্তুত নীল যখন পেছন ফিরে চাইলো ততক্ষণাৎ তার মনের কোণে হানা দিল এক অবিশ্বাস্য ভাবনা। সোহা এখানে? সে তো ভেবেছিল রিয়া। নীল অবিশ্বাস্য চাহনিতে চেয়ে আছে সোহার পানে। নীলকে চেয়ে থাকতে দেখে সোহা করুন কন্ঠে বলল,

“কী দেখছ?”

“তোকে। সত্যিই কী এটা তুই?”

সোহা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“ছুঁয়ে দেখো।”

নীল একটানে সোহাকে বুকে জড়িয়ে নিল। সোহাও শক্ত করে চেপে ধরল নীলকে। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।

___

ড্রয়িং রুমের পরিবেশ নিস্তেজ। সকলেই চুপচাপ। সোহা ভয়ে গুটিসুটি মে’রে দাড়িয়ে আছে। নীলের হাবভাব নির্বিকার। নিরবতা ভেঙে নীলের বাবা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

“কী আর করা যাবে। অন্যায় যখন করেছে তখন শান্তি তো ওদের পেতেই হবে। আর ওদের শাস্তি হলো….”

সকলে অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে নীলের বাবার মতামত শোনার জন্য। তিনি একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,

“ওদের শাস্তি হচ্ছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওদের বিয়ে।”

সকলে ভীষণ ভাবে পুলকিত হয় নীলের বাবার মন্তব্যে। অতঃপর বিয়ের কথা একরকম পাকা হয়ে যায়। সোহার বাবা বাড়িতে না ফেরা অব্দি
আপাতত বিয়ের কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। সোহা লজ্জায় লাল হয়ে আছে। সকলে ওদের বিয়ে নিয়ে নানারকম আলাপ করছে।

সকলে খুশি হলেও খুশি হতে পারল না কেবল রিয়া। সে সবার মধ্যে চিৎকার করে নীলের কলার টেনে ধরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বসল। উপস্থিত সবাই হতভম্ব। অতঃপর জিসান সকলে খুলে বলে রিয়ার নীলের পেছনে পরে থাকার ঘটনাটা। সূর্যের মা নিজের ভাগ্নির এমন বেহায়াপনার কথা শুনে ভীষণ ভাবে লজ্জিত হন। তিনি ততক্ষণাৎ তার বাপের বাড়ির লোকজনকে রিয়া সমেত চলে যেতে বলেন। অবশেষে আপদ বিদায় নেয়।

___

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন আগত। সোহার বাবারও এ বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই। নানাপ্রকার আচার অনুষ্ঠানের পর সেই কাঙ্খিত মুহূর্তের সম্মুখীন নীল ও সোহা। এই মুহুর্তে সোহা এক হাত ঘোমটা টেনে বসে আছে তার প্রিয় মানুষটির আগমনের অপেক্ষায়। কিয়ৎক্ষণ পরেই নীল ঘরে প্রবেশ করে। সোহা কিঞ্চিৎ নড়েচড়ে বসে।

একটানে সোহার মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে নেয় নীল। ভীত সোহা নীলের দৃষ্টি পানে দৃষ্টি রাখে। সোহার চোখে একরাশ নার্ভাসনেস। নীল সোহার সম্মুখে বসে পড়ে। সোহার মুখটা দু-হাতে আগলে নেয়। ইতোমধ্যে সোহার শরীরে কম্পন শুরু হয়ে গেছে। এই কম্পন নীলকে আরও গভীর ভাবে আকৃষ্ট করছে সোহার প্রতি। সময় অতিবাহিত না করে নীল এই প্রথম বারের মতো প্রেয়সীর অধরে অধর ছোঁয়ালো। সোহা খামচে ধরল নীলের পাঞ্জাবির কলার। ধীরে ধীরে স্পর্শ আরও গভীর থেকে গভীরে পৌছতে লাগল। কারো মুখে কোনো কথা নেই। দুটি হৃদয় জুড়ে শুধু অনুভূতির আধিপত্য।

___

সকাল থেকে সূর্যের ন্যাকামো স্টার্ট হয়ে গেছে। তার কারণ হলো সে তার সুয়োরানীকে কিছুতেই ভাবি ডাকতে পারবে না। ওদিকে সোহা গো ধরে বসে আছে সূর্যের মুখ থেকে ভাবি ডাক শুনবেই নয়তো নীলের কাছে নালিশ ঠুকবে। দু’জনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া-ঝাটি চলছে এটা নিয়ে। এরই মাঝে নীলের মা এসে দুজনকে থামিয়ে দেয়। দু’জনের মন রাখতে তিনি বলেন,”একদিন সূর্য সোহাকে ভাবি ডাকবে তো পরদিন আবার সুয়োরানী ডাকবে। এভাবে পালা করে ডাকলেই সমস্যা মিটে গেল।” নীলের মায়ের কথায় দু’জনেই অসন্তুষ্ট তবুও মেনে নিল। গুরুজন বলে কথা। মুখগোমরা করে বসে পরল সোহা। নীল ডাইনিং টেবিলের কাছে যেতে যেতে আড়চোখে সোহাকে একবার দেখে নেয়। অতঃপর গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে,

“আমার বউকে কে কী বলেছে?”

সোহা কিছু বলে না। কাঁদো কাঁদো ফেস করে চেয়ে থাকে। সূর্য ততক্ষণে দৌড়। যেতে যেতে তার উত্তর, আমি নির্দোষ বাচ্চা।

নীল গ্লাসের পানিটা খেতে গিয়েও থেমে যায়। অস্ফুট স্বরে বলে,

“কে বাচ্চা?”

সোহা মুখ টিপে হেসে দেয়।

এভাবেই দিন চলতে থাকে তাদের।

………………..সমাপ্ত…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে