চন্দ্র’মল্লিকা পর্ব-০১

0
307

চন্দ্র’মল্লিকা ১
লেখা : Azyah (সূচনা)

“এই যুগে এসে এত স্বল্প আয়ের মানুষের সাথে আর যাই হোক;সংসার করা যায়না।আপনি তালাকনামায় সই করে দিন।নিজেও মুক্ত হন আমাকেও মুক্ত করুন”

মাহরুর ইবনাতের চক্ষু সম্মুখে তালাক নামা। ইংরেজিতে যাকে বলে ডিভোর্স পেপার। খরখরে কাগজে কালিতে খচিত কিছু লেখা।সেগুলো পড়ে দেখার কোনো দরকার নেই এখানে। জানা আছে সবটাই।এত বিশ্লেষণ জেনে আর কি হবে?ছয় বছরের সংসারের ইতিনামা এটা। দীর্ঘশ্বাসের সাথে দৃষ্টি তোলে আরেকবার। হিরার দিকে।

হিরা রুঢ়।দেখেও দেখলো না মাহরুরের করুন দৃষ্টি। বিরক্তি নিয়ে বললো, “তিন বেলা খাইয়ে পড়িয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেয়েও উর্ধ্বে কিছু আছে।কত শখ ছিল আমার।আপনার মা মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে আমাকে বউ করে আনে।আমাকে রাজরানী বানিয়ে রাখবে।রাখলো কোথায়?এই ছোট্ট পুরোনো আমলের চিলেকোঠায়?জানেন আজ পর্যন্ত আমি বাচ্চা নেইনি কেনো?আমি চাচ্ছিলাম না আমার সন্তান আমার মতই কষ্ট করুক।তার ছোটছোট শখ আহ্লাদ পূরণ না হোক।দিনদিন অবস্থার উন্নতি হয় অবনতি হচ্ছে।আপনি আমাকে ভালো রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন কিন্তু হচ্ছে না মাহি।আমাকে মুক্ত করুন।”

কয়েকবার চোখের পলক পড়ে মাহরুরের।এই মুহূর্তে মন আর মস্তিষ্ক উভয়ই কোনো চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থাকতে চাইছে।কোনো অনুভূতি নেই তার।কোনো আক্রোশ,কষ্ট নেই।এক না একদিন হিরা ছেড়ে যাবে।এটা বিয়ের প্রথম দিনই জেনেছে সে।শুধু প্রশ্ন একটাই তার নিজের মনের বিরুদ্ধে তাকে সবটা দিয়ে পূর্ণ রাখতে চেয়েছে।অবশেষে পারলো না?

লাল রঙের আবরণে আবৃত কলম তুলে সই করলো। স্বাভাবিক গলায় হিরার উদ্দেশ্যে বললো, “ফিরে আসতে চাইলে আসতে পারো।কিন্তু সময়ের একটা সীমা থাকবে এখানে।”

“কঠিন কিছু কথা বলবো।মনে কষ্ট নিবেন না।আপনি সারাজীবন আমার অপেক্ষা করলেও ফিরবো না আমি।”

“ঠিক আছে।”

ছয় বছরে কতদিন হয়?কত ঘন্টা?কত সেকেন্ড? মস্তিকে যেনো বেশি চাপ না পড়ে তাই বছরের হিসেব রাখে মানুষ। চিলেকোঠার ছাদটায় হেলান দিয়ে বসেছে মাহরুর। খটখট আওয়াজ আসছে ঘর থেকে।ছয় বছরের সঙ্গিনী যাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতিতে। আটকানোর সাধ্য নেই।চেয়েছিলো একটা সংসার।ভালোবাসায় না হোক।সম্মানে,হাসিতে?সেটাও হলো না?কেনো? দুরাকাশের চাঁদের দিকে চাইতেই কর্নে নারী কণ্ঠ এসে বারি খায়,

“চলে যাচ্ছি ভালো থাকবেন।আমাকে ক্ষমা করবেন পারলে”

এক চিলতে হাসি নিয়ে হিরার সামনে এসে দাঁড়ায় মাহরুর।না রাগ দেখিয়ে বিদায় দিবে না কষ্ট।হাসিমুখে বিদায় দেবে।সেতো দারিদ্র্য নামক জঞ্জাল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে যাচ্ছে।

“দেখা করো সময় হলে কেমন?স্বামী স্ত্রী না হোক একে অপরের পরিচিত হিসেবে সাক্ষাৎ হতেই পারে।”

“হয়তো চাইলেও হবে না।আমি আগামী মাসে কানাডা যাচ্ছি”

“ওহ!আচ্ছা সাবধানে যাবে।”

উচু স্থানে দাড়িয়ে ল্যাম্পপোস্ট এর আলোয় এগিয়ে চলা নারীর দিকে চেয়ে রইল মাহরুর।কালো লাগেজে ভরে ছয় বছরের বন্ধুত্ব নিয়ে যাচ্ছে। দৃষ্টির আড়ালে যেতেই পা বাড়ালো ঘরের দিকে।ছোট্ট ছিমছাম ঘরটা।এখানে অস্তিত্ব ছিলো দুজনের।কিছু মুহূর্ত আগেও। এখন থেকে আজীবন একাকিত্বকে সাথে নিয়ে থাকবে মাহরুর।কালো আস্তরণ পড়া ঢাকা স্টিলের পাতিল হাতে তুলে নিল।দুপুরে বেচে যাওয়া ভাত আর একটু ডাল আছে।খাওয়ার রুচি নেই।কিন্তু এগুলো নষ্ট করা তার স্বভাব বিরোধী।কালচে চুলোয় গরম করে নির্লিপ্ত খেয়ে নেয়।চোখ বুজে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে।

“কাউকে কাঁদিয়ে ভালো থাকা যায়?”

___

ক্লান্ত বিকেলে হেঁটে চলেছে রাস্তায় মাহরুর।চেক শার্টটা ভিজে লেপ্টে আছে শরীরে। অফিসের কালো ব্যাগটাও আজ কাঁধে বেশ ভারী মনে হচ্ছে।শরীর দূর্বল তাই? হাটতে হাটতে পা জোড়া থামে একটা বাড়ির কাছে।নাম ‘ বাগানবাড়ি ‘।লোহার দরজায় ছোট্ট বালিকার দেখা মিলতেই পায়ের গতি বাড়ায়।

“এই মিষ্টি!মিষ্টি?এখানে বসে আছিস কেনো?”

পাঁচ বছরের আনমনা মেয়েটি চোখ তুলে তাকায়।সবুজ ফ্রক গায়ে গালে হাত রেখে সদর দরজায় বসে ছিল। মাহরুরকে দেখে চোখ তুলে।কাপড় ঝাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে।ঝুঁকে বসলো মাহরুর।

গাল টেনে দিয়ে বললো, “কেমন আছিস?তোকে অনেক দিন পর দেখলাম”

বাচ্চা কন্ঠস্বরে মিষ্টি উত্তর দেয়, “ভালো আছি মামা”

“দুপুরে খেয়েছিস?”

খাওয়ার কথা শুনতেই মুখটা চুপসে গেলো মিষ্টির। শিশু মনে কষ্ট জমেছে।ভার বহন করতে পারবে কি?অভিমান করে বললো,

“আজ সরষে ইলিশ রান্না হয়েছে।আমিতো কোনো মাছ খাই না।তবে আমার ইলিশ অনেক পছন্দের।দাদীর কাছে চেয়েছিলাম দেয়নি।তাই রাগ করে ভাত খাইনি।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহরুর।চোখটা শক্ত করে বুজেছিলো সামান্য ক্ষনের জন্য।পরপর খুলেই উঠে দাড়ালো।সামান্য নিচু হয়ে হাতটি ধরে মিষ্টির।বলে,

“চল আমার সাথে”

“কোথায় যাবো মামা?মা আমাকে না দেখলে বকে দিবে কিন্তু”

ততক্ষনে দুজোড়া পা চলমান।খানিকটা চলার গতিতে স্থিরতা আসলো।পূনরায় এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে উত্তর দিলো,

“ইলিশ খাবি না? মামা আজ বেতন পেয়েছি।মোল্লা হোটেলে গিয়ে দুজনে মিলে ইলিশ খাই চল”

টিনের চারদেয়ালে ঢাকা ছোট্ট হোটেলটি বেশ জনপ্রিয়।বাঙালি খাবারের জন্য সর্বদা জমজমাট থাকে।সব শ্রেণীর মানুষের আনাগোনা।সেখানেই কাঠের তৈরি টেবিলে মুখোমুখি বসেছে মাহরুর আর মিষ্টি।হোটেলের ছেলেকে ডেকে প্রশ্ন করলো,

“রবিন সরষে ইলিশ আছে?”

“না ভাই ইলিশ ভাজা আছে আর দোপেঁয়াজা”

রবিনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মিষ্টির দিকে চেয়ে মাহরুর প্রশ্ন করে, “ইলিশ ভাজা খাবি? সরষে অনেক ঝাল হয় তুই খেতে পারবি না।”

মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় মিষ্টি।উত্তর দেয়, “খাবো মামা”

দুই পিস মাছের সাথে গরম গরম ভাত। ভাগ্যিস বেতনটা পেয়েছে আজ।নাহয় মেয়েটির মুখে হাসি ফুটানো হতো না। তৃপ্তি পাচ্ছে চোখ দুটো।মিষ্টি মেয়েকে হাসতে দেখে। শার্টের হাতা গুটিয়েছে।যত্ন করে মাছ বেছে দিচ্ছে মিষ্টিকে।তার নাকি মাছ বেশি পছন্দ আগ্রহ দেখে ভেবেছিলো এক পিস মাছে হবে না।কিন্তু মাহরুরকে হাসিয়ে এই ছোট্ট মাছের টুকরো শেষ করতে পারলো না। বাকিটা মাহরুরের পাতেই পড়েছে।পকেটে রাখা টিস্যুর সাহায্যে মিষ্টির মুখটা মুছে তাকে কোলে তুলে নেয়।খাবারের টাকা মিটিয়ে হাটতে লাগলো তাদের বাগানবাড়ির দিকে।

কিছু পথ আগেই ভরকে উঠে মাহরুর।শাড়ি পরিহিতা এক রমণীকে দেখে। মাহরুর চেনে তাকে।ভীষণ ভালোভাবেই চেনে। হুড়মুড়িয়ে তাদের দেখে এগিয়ে এলো।এই তাড়াহুড়োর কারণটাও জানা আছে। শাড়ির আঁচল সামলে এসে মিষ্টিকে ছিনিয়ে নেয়।বুকে চেপে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে যেনো।

ভয়ার্ত গলায় প্রশ্ন করলো ছোট্ট মেয়েকে, “কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই?তোকে আমি সারা মহল্লা খুঁজছি।সন্ধ্যা পড়ছে খেয়াল আছে তোর?”

“আমি মামার সাথে ইলিশ ভাজা খেতে গিয়েছিলাম মা। দাদীতো দিলো না।” উত্তর দেয় মিষ্টি।

মিষ্টির মা মাথা ঝুকায়। ভাজে কুচকে থাকা কপাল নিয়ে চোখ বুজলো।কি ভয়টাই না পেয়েছিলো।তার মেয়েটা বড্ড অভিমানী। দাদীর সাথে অভিমান করে দরজায় বসেছিলো।হটাৎ তাকে না দেখতে পেয়ে ভরকে যায়।একদিন রাগ দেখিয়ে বলেছিলো মিষ্টি ‘ থাকবো না এই বাসায়।আমাকে কেউ ভালোবাসে না।একদিন চলে যাবো ‘ ছোট্ট মেয়ের কথা তখন কানে না নিলেও আজ ভীষণ রকমের ভয় হানা দিয়েছিল অন্তরের গভীরে।মা মেয়ের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে থাকা নির্বাক মাহরুর।একই বোধহয় বলে ভালোবাসার টান।মেয়ের টানে এদিক ওদিক ফিরতে থাকা মেয়েকে দেখে মুখের সস্তি।

মাহরুর নিজ থেকে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে মিষ্টির মাকে,

“কেমন আছিস?”

“জ্বি ভালো।আপনি?”

“আছি।বাড়ি যাস?”

“না”

“আমিও যাই না।” স্বাভাবিক কণ্ঠেই উত্তর দেয় মাহরুরও।

উত্তর দিচ্ছে।তবে সম্পূর্ণ মেয়ের দিকে মনোযোগী হয়ে। গালে লেগে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে দিচ্ছে। মাহরুরওতো দিয়েছিল পরিষ্কার করে। বোধহয় তার পরিষ্কারে ঘাটতি রয়ে গিয়েছিলো।যেটা তার মমতাময়ী মার চোখে স্পষ্ট ঠেকেছে।

__

“এসেছে মহারানী!কই! কার সাথে রাস্তায় নষ্টামি করতে গিয়েছিলি মা মেয়ে?”

দাদীর এমন রুঢ় বাক্যে মায়ের দিকে তাকায় মিষ্টি।তার দাদী মোটেও ভালো না।শুধু রাগ দেখায়।মাকে ব্যথা দেয়।তার মায়ের যে তার জন্য কোনো সময় নেই।সারাদিন কাজে ব্যস্ত সে।একাকী বাচ্চা মেয়েটা মাকে চায়!সেটা কি সে বোঝে?আশপাশে ঘুরাফেরা করলেই বকে দেয়।

“আমি ইলিশ খেতে গিয়েছিলাম দাদী।”

মেয়েকে চেপে ধরে।ইশারা করে না করে কিছু বলতে। মেয়েটিও যেনো মায়ের ইশারা বুঝলো চুপ করে গেলো।রেহালা দাঁত কিড়মিড় করে প্রশ্ন করলো,

“ইলিশ! কোথায় গিয়েছিলি ইলিশ খেতে? কার সাথে গিয়েছিলি?”

“আম্মা খেতে চেয়েছিল।কিভাবে খাবে?ওর কাছে টাকা আছে?বাহিরেই বাচ্চাদের সাথে খেলতে খেলতে মাঠে দিকে চলে গিয়েছিল।ধরে এনেছি।”

“শখ কত!ইলিশ খাবে? মাইয়া জন্ম দিয়েছ ঘরে বসিয়ে ইলিশ আর মজার মজার খাবার খাওয়ার জন্য নাকি?দুইবেলা কপালে ভাত জোটে এটাই শুকরিয়া আদায় কর!”

বলতে বলতে চলে গেলেন রেহালা।শক্ত মুখে চেয়ে থাকা মায়ের গালে হাত বুলিয়ে মিষ্টি বললো, “তুমি কষ্ট পেয়েছো মা?তুমি আমাকে বকলেও কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি।তুমি কষ্ট পেও না”

ফিক করে হেসে মেয়েকে জড়িয়ে নিলো বুকে।বললো, “বোকা মেয়ে।আমিতো তোকে মিছেমিছি বকি।আমিও তোকে অনেক ভালোবাসি।”

“মামা অনেক ভালো মা!আমাকে এত্ত বড় ইলিশ মাছ খাইয়েছে।”

“এভাবে কারো সাথে গিয়ে কিছু খেতে হয়না মিষ্টি। লোকে খারাপ বলবে।ভালো অভ্যাস না।”

“আমি যাইনি।আমাকে মামা নিয়ে গেছে।”

“আচ্ছা আগামীবার যাবি না।এখন আয় মাথায় তেল দিয়ে বিনুনী করে দেই”

জীবনে হয়তো কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি এমন পরিস্থিতি আসবে জীবনে।একরাশ স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল এই ঘরে।সেটা যে বিয়ের এক বছরে ভেঙে চুরমার হবে কে জানতো? নারীরাই নারীর চির শত্রু।কথাটি যে বলেছে হয়তো সে এই সমাজ,এই পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞানী।অনেকটা জ্ঞান অর্জন করেইতো বলেছে।অনেকাংশে সত্যি বলেছে।এই যুগে এসে কন্যা সন্তানের প্রতি এত ক্ষোভ?সারাদিন কাজ করে মেয়ের পেটে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য?এটা কেমন জীবন?কেমন স্বভাব আচরণ মানুষের?

___

অতীত,

“কাউকে ভালোবাসলে মনের মধ্যে প্রজাপতি উড়ে?”

শীতের দুপুরে পুকুরপাড়ে ক্লান্ত মাহরুর। পুকুরের দিকে ইট ছুঁড়ে মজার খেলায় একাকী মত্ত ছিলো। মেয়েলি কণ্ঠে ফিরে চায়।সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় এর পরীক্ষা শেষে এসেছে নিজের পুরোনো বাড়িতে।এখানেই আপন পরিজনের বসবাস।

তেরছা হাসে মাহরুর।এইটুকু মেয়ে ভালোবাসার প্রকাশ করতে কি অদ্ভুত সংজ্ঞাই না দিলো। প্রজাপতি উড়ে মনে?কথাটি ভেবে আরেকদফা হাসে।উঠে দাঁড়িয়ে পেছনে হাত বেঁধে দাঁড়ালো। লজ্জিত মুখশ্রীর দিকে চেয়ে বলল,

“তোর বয়স কতোরে?”

“সতেরো”

“বয়সটা প্রজাপতি উড়ানোর জন্যে অনেক কম”

“বয়স বাড়লে তোমাকে পাবো?”

“তখন আমার বয়স হবে তোর থেকে দ্বিগুণ।আমাকে ছুতে পারবি না কখনো চন্দ্র।”

আঁধার ঘনিয়ে এলো সুশ্রী মুখমণ্ডলে।যতই বড় হোক সে।কখনোই মাহরুরকে ধরতে পারবে না।যত এগোবে তত দূরে যাবে।

“তাহলে আমি কি সারাজীবন নিঃসঙ্গ রয়ে যাবো?” মাথা তুলে প্রশ্ন করে।

“তা কেনো হবে?সময়মত নিজের যোগ্য কাউকে পাবি।আর এখন যে কথা বলছিস সেটা ভুলে যাবি। হাসবি বড় হয়ে।কি বোকামিটাই না করতি।বলদ মেয়ে একটা!” বলে হাসিতে ফেটে পড়লো মাহরুর।

অপমানজনক এই হাসি।কিশোরী মনে ছুরিআঘাত।এই বয়সে আঘাতটা বেশ গাঢ়ভাবেই লেগেছে।তারপরও মুখ স্বাভাবিক রাখলো।সেতো পন করেছে। মাহরুরকে না পেলে সঙ্গীহীন থাকবে সারাজীবন।দেখা যাক তার ইচ্ছে পূরণ হয় নাকি মাহরুরের কথা।

পুরোনো স্মৃতির ঘোর কাটলো মাহরুরের।উত্তেজিত মেয়েলি গলায়।দরজা ধরে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে।দেখে বোঝা গেলো ভীষণ অস্থির সে।পাঁচ তলা বেয়ে উঠে অস্থিরতার ঊর্ধ্বগতি।

“মাহি ভাই!”

“শিরীন?এতরাতে এখানে কি করছিস?”

প্রশ্নের উত্তর দিলো না শিরীন।এই প্রশ্নের চেয়ে তার প্রশ্ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।বিছানার কোণে বসতে বসতে বললো,

“ভাবি চলে গেছে?”

“হ্যাঁ”

“তুমি তাকে আটকাওনি মাহি ভাই?”

উঠে বসেছিলো শিরীনকে দেখে।ভেবেছিল অন্য কোনো কারণে তার আগমন।এখন তার কথা শুনে মনে হলো এতো বিশেষ কোনো কারণ না তার সাথে অস্থির হওয়ার।মাথার পেছনে হাত ঠেকিয়ে পূনরায় শুয়ে পড়লো। তাচ্ছিল্যময় হেসে বললো,

“আটকানোর পথ বন্ধ।”

“কেনো মাহি ভাই?ছয় বছরের জীবন সঙ্গীকে ফেলে রেখে যেতে ছয় সেকেন্ড সময় নেয়নি হিরা ভাবি।আর তুমি এত স্বাভাবিক আছো কি করে?”

“সম্পর্কটা জোর জবরদস্তির ছিলো।আমার জন্মদাত্রী মা মিথ্যের সাহায্য নিয়ে ওই নির্দোষ মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে।আমি জানতাম আজ হোক কাল সে আমাকে ছেড়ে যাবে।আমি পূর্বপ্রস্তুত ছিলাম।”

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে