গোধূলির_আলোয় পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
1300

#গোধূলির_আলোয়
#পার্টঃ১০
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
ঘণ কুয়াশায় চারদিক মুড়িয়ে আছে৷ রাস্তার সাইডের সোডিয়ামের আলো ঘণ কুয়াশা ভেদ করে বারান্দায় আসতে অলসতা দেখাচ্ছে৷ বারান্দায় থাকা দোলনায় বসে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে আছে নিনীতা আর আদ্র ওর পাশে বসে ওকে হাতে জড়িয়ে রেখেছে৷ নিনীতা রেলিঙের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে৷ আদ্র ভাদ্র পুরো খোলা রেলিঙ আটকে দিয়েছে৷ সেদিনের কথা মনে হতেই নিনীতার বুকের মাঝে কষ্ট হয় পায়ে তীব্র ব্যাথা অনুভব হয়৷ এই শীতের মধ্যেও তার হঠাৎ গরম লাগতে শুরু হয়৷ নিনীতা আদ্রের হাত খামচে ধরতেই আদ্র আৎকে উঠে৷ নিনীতা ভয় পেয়ে গেছে৷ আদ্র বুঝতে পেরে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে একদম মিশিয়ে নেয়৷ পপরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বলে,
–‘আজ কিন্তু আমাদের বাসর রাত৷’
নিনীতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
–‘ওহ,জানতাম না তো৷’
–‘সিরিয়াসলি?’
–‘তোমার বোকা বোকা কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি ভীনদেশ থেকে মাএই আসলাম৷’
আদ্র বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে নিনীতাকে উঠিয়ে বলে,
–‘এই তুই কি বললি?’
নিনীতা বুঝতে পেরেও না বোঝার মতো বলে,
–‘কই কি বললাম!’
–‘তুই আমাকে তুমি বলেছিস৷ হাও ফানি নুনতা! তোর মুখে তুমি শুনা আর বোম ফাটানো এক লেগেছে আমার৷ নুনতা জাম জীবনেও তুমি বলতেই পারে না৷’
নিনীতা মেকি রাগ দেখিয়ে বলে,
–‘ওকে ফাইন!আদ্র ভাদ্র তোকে এখন থেকে সবার সামনে তুই তুই বলবো৷ বড় ছোট সবার সামনে৷ এমনকি তোর ছেলে-মেয়ের সামনেও বলবো তুই৷’
আদ্র দুষ্টুমি করে নিজের ঠান্ডা হাত নিনীতার কোমরে রাখতেই নিনীতা কেপে উঠে৷ রেগে আবারও কিছু বলতে গেলে আদ্র ওকে থামিয়ে বলে,
–‘ছেলে-মেয়ের সামনে তুই বলবি ঠিক আছে৷বাট ছেলে-মেয়ে…..
আদ্র আর কিছু বলার আগেই নিনীতা ওর ঠান্ডা হাত আদ্রের গালের উপর রাখে৷ আদ্র নিনীতার হাতের উপর নিজের হাত রেখে ওর সামনে ঝুকে বলে,
–‘নুনতা জাম তুই কি আমার তুমি নামক বউ হবি?’
নিনীতা পিছনে সরে বলে,
–‘হ্যাঁ!তুই যদি তুমি নামক জামাই হতে পারিস তাহলে হবো৷’
–‘তাহলে তো হলোই বাসর ঘর শুরু হোক৷’
–‘হ্যাঁ,হোক৷’
নিনীতা আদ্রের কথার পৃষ্ঠে উত্তর দিতে গিয়ে ফেসে গেছে৷ নিজের বোকামির কথা বুঝতে পেরে লজ্জায় মুখ নিচু করে ফেলে৷ আদ্র মুচকি হেসে বলে,
–‘রুমে যাই?এখানে অনেক ঠান্ডা৷’
–‘হু!’
আদ্র ওকে কোলে তুলে রুমের দিকে পা বাড়ায়৷তার নিজের মনে প্রশান্তি কাজ করছে৷ এই মেয়েটার মাঝে তার সব ভালোলাগা লুকায়িত আছে৷ এক ভালোবাসার রাজ্য আছে তার নুনতার মাঝে৷ আর সেই ভালোবাসার রাজ্য আজ সে তার নুনতাকে ভাসাবে৷ যেখানে সে আর তার নুনতার অস্তিত্ব থাকবে৷ শুধুই তাদের৷
.
.
.
সময়ের স্রোতে ভেসে গেছে চারটি বছর৷ আজ আদ্রের জন্মদিন৷ নিনীতা আজ দুটো সারপ্রাইজ দিবে তার আদ্রকে৷ আদ্র অফিসে! কাল রাতে নিনীতা ইচ্ছা করে আদ্রের সাথে ঝগড়া করেছে৷ঝগড়া করে নিজেই কথা বলা অফ রেখেছে৷ আদ্র বারবার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করেও সফল হয় নি৷ সকাল থেকে কয়েক বার জিজ্ঞেস করেছে,
–‘আজ কি কোনো স্পেশাল ডেট কিনা৷’
নিনীতা বহু কষ্টে মুখে রাগী ভাব এনে বলেছে,
–‘আজ আবার কি ডেট আজকে আজকের ডেট না হয়ে কালকের ডেট হবে নাকি?’
আদ্র মুখ গোমড়া করে অফিসে যেতেই হাসিতে ফেটে পড়ে সে৷ ছাদে হাজার গুলো লাল গোলাপ আর সাদা বেলুন দিয়্র নিজের হাতে ডেকোরেশন করেছে সে৷ আদ্রকে ফোন করে গম্ভীর ভাবে বলেছে,
–‘আজ আটটা সময় তোমার সাথে আমার বোঝাপড়া আছে৷ আটটা বাজার এক মিনিট হেরফের হলে বুঝে নাও তোমার সাথে সম্পর্ক যেটুকু আছে সে টুকুও শেষ হবে৷’
আদ্র কিছু বলার আগেই খট করে লাইন কেটে দেয় সে৷ এখন শুধু রাতের অপেক্ষা৷

নিনীতা ব্ল্যাক শাড়ি পড়ে সেজেছে আগে থেকে৷ আদ্র আটটা সময় এসে রুমের দরজা বন্ধ পেয়ে ঘাবড়ে যায়৷ নিনীতার মোবাইলে ফোন দিতেই সে রিসিভ করে ছাদে যেতে বলে৷ আদ্র মুচকি হেসে এক দৌড়ে ছাদের সিড়ি বেয়ে উঠে৷ ছাদের দরজা খুলতেই নিনীতাকে নিজের পায়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একছুটে তার কাছে যায়৷ খুশিতে কি করবে বুঝতে না পেরে জড়িয়ে ধরে৷ আর সবাই তখন একসাথে বেরিয়ে বার্থডে উইশ করে৷ আদ্র সবার উপস্থিতি টের পেয়ে নিনীতাকে ছেড়ে দূরে চলে যায়৷ সত্যি সে এতোবড় একটা সারপ্রাইজ পাবে ভাবতেই পারে নি৷ তার নুনতা আবার আগের মতো তার সাথে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে পারবে৷ আবার আগের মতো নদীর পাড় ঘেষে একসাথে হাটতে পারবে ভেবেই খুশিতে তার চোখের কোণায় পানি এসে জমা হয়৷ নিনীতা সেটা লক্ষ্য করে ইশারায় বলে,
–‘আরো সারপ্রাইজ আছে ওয়েট এন্ড সি৷’
আদ্র নিজেও ইশারায় বলে,
–‘সারপ্রাইজ দিতে দিতে আজ সারপ্রাইজের গোডাউন বানাবে নাকি? তোমার নিজের পায়ে হাটতে পারা এটার চেয়ে আর বড় সারপ্রাইজ আর হতেই পারে না৷’
আদ্রের ইশারায় বলা কথা বুঝতে পেরে পাশে থেকে রায়হান বলে,
–‘এর চেয়ে বড় সারপ্রাইজ পেয়ে তুই আজ পাগল হয়ে যাবি ব্রাদার৷’
নিনীতা রায়হানের কথায় লজ্জা পেয়ে কেকের সাইডে চলে যায়৷ সবার সাথে হই হুল্লোড় করতে করতে রাত বারোটা পার হয়ে যায়৷ সবাই ঘুমানোর জন্য যেতেই আদ্র আর নিনীতা নিজেদের জন্য আলাদা সময় পেতেই আদ্র নিনীতার কাছে গিয়ে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–‘আর কি সারপ্রাইজ দিবে আমার বউটা?’
নিনীতা কিছুক্ষণ ভেবে কি বলবে খুজে না পেয়ে আদ্রের হাতের উপর হাত রেখে লাজুক ভাবে বলে,
–‘তোমার হাতের নিচে তোমার আর আমার অস্তিত্ব বেড়ে উঠছে একটু একটু করে৷’
আদ্র থমকায়!তার ভেতরে কিছু একটা হয় এই ছোট কথাটা শুনে৷ হাতের বাধন আলগা করে কাঁপা কন্ঠে বলে,
–‘আমার পুচকু আসতে চলেছে?’
নিনীতা মাথা ঝাকায়৷ আদ্র খুশিতে নিনীতাকে কি বলবে ভেবে পায় না৷ তার কান্না পাচ্ছে৷ নিজেকে বোকা বোকা মনে হচ্ছে৷ বাবা হওয়ার অনুভূতি এতোটা মধুর কেন?তার অস্তিত্ব বেড়ে উঠছে তার নুনতার মাঝে ভেবেই হাটু মুড়ে বসে নিনীতার পেটের উপর নিজের মাথা রেখে বলে,
–‘আরেকটা স্পেশাল মূহুর্ত তোর মা আমাকে উপহার দিচ্ছে বাবু৷ এতোটা খুশি কি আদেও আমার প্রাপ্য ছিলো?’
নিনীতা আদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
–‘হ্যাঁ!প্রাপ্য ছিলো বাবুর আব্বু৷’

আদ্র উঠে নিনীতার হাতদুটো ধরে বলে,

‘গোধূলির আলোয় এসেছিলি আমার জীবনটাকে রাঙাতে৷ সমস্ত কিছু ভালোবাসার ছোয়া আছে তোর জন্য৷ তুই না আসলে জীবনের মানে টা হয়তো বুঝতেই পারতাম না আমি৷তোকে আর এই ছোট প্রাণ টাকে নিয়েই আমি আমার শেষ গোধূলির আলো পাড়ি দিতে।’
সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে