গোধূলির_আলোয় পর্ব-০৯

0
1069

#গোধূলির_আলোয়
#পার্টঃ৯
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
শীতের হালকা হাওয়া বইছে চারপাশে৷ আকাশ থেকে কুয়াশা বৃষ্টির মতো পড়ছে৷ সাদা ধোঁয়ার মতো দেখাচ্ছে৷ ঠান্ডা হাওয়া গায়ে এসে লাগতেই সবাই কেঁপে কেঁপে উঠছে৷ চারদিকে আলো আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে৷ ফুলের সুন্দর গন্ধে নিনীতার মন, প্রাণ সব আনন্দে নেচে বেড়াচ্ছে৷ তাকে হালকা একটা লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে সাথে কাঁচা ফুলের সাজ৷ লালা টকটকে লেহেঙ্গা সাথে গোলাপ,গাধা ফুলের সাজ৷ হালকা আলো গুলো নিনীতার উপর পড়তেই তার হাসি মুখটা দেখে আদ্রের মনের মাঝের বোঝা কিছুটা হালকা হয়৷ আজ পরিবারের সবাই এখানে উপস্থিত৷ আদ্রের বাবা-মা সাথে আত্নীয় স্বজন আর নিনীতার বাবা-মা আর তার আত্নীয়রা৷ আদ্র প্যারিসে থাকতেই তার গার্ডদের দিয়ে সমস্ত কিছু করে রেখেছিলো৷ফুল গাড়ির সামনে তাকে নিয়ে যেতেই এসেছিলো৷ তাকে সাজানোর দায়িত্ব তার উপর আদ্র দিয়েছে৷ ফুল মুখ বুজে নিনীতাকে সাজিয়ে রিসোর্টে নিয়ে এসেছে৷ আদ্র নিনীতার সামনে এসে তার মা’র উদ্দেশ্য বলে,

–‘আম্মু,দেখো তো তোমার ছেলের বউ পছন্দ হয়েছে কিনা?’

আদ্রের মা নিনীতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

–‘এইটা তো আমার মেয়ে! মেয়ে পছন্দ হয়েছে কিন্তু আমার মেয়ের জামাইটাকে একদম পছন্দ হয় নি৷ মেয়ের জামাইয়ের ভাগ্য ভালো পুতুলটাকে পাচ্ছে সে৷’

–‘আম্মু!আমি না তোমার ছেলে? এখন’ই দল পাল্টে ফেলেছে৷ ব্যাপার না আমারও কাকি সর‍্যি মা আছে৷’ নিনীতার মায়ের
কাছে গিয়ে দাঁড়ায় আদ্র তারপর আদুরে সুরে বলে,

–‘তাই না মা?’

–‘হ্যাঁ,এইটা আমার ছেলে আর ওইটা তোমার মেয়ে রাবেয়া৷ ভাগ হয়ে গেছে৷ তোমার মেয়েকে নিয়ে তুমি বাড়িতে চলে যাও আমার ছেলেকে নিয়ে আমি৷’

আদ্র মন খারাপ করে বলে,

–‘বুঝেছি!সবাই হচ্ছে এই নুনতা জামের পক্ষে৷ থাকো থাকো,আমার প্রব্লেম নেই৷ আমার কাছে আবার কেও আসলে আমি কাওকে নিবো না বলে দিলাম৷’

আদ্রের কথা শুনে সবাই হেসে উঠে৷ ছেলেটা বড্ড অভিমানী!অল্পতে অভিমান করে বসে থাকে৷ নিনীতা আড়চোখে আদ্রকে দেখে৷ সিল্কি চুল গুলো কপালের উপর দোল খাচ্ছে৷ মুখে অমায়িক হাসি৷ হালকা গ্রীন কালারের পাঞ্জাবি তে সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে৷ বহু বছর পর আবার আদ্রকে পাঞ্জাবি তে দেখে নতুন করে প্রেমে পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে তার৷ এই পাঞ্জাবি পড়া আদ্রকে দেখেই তো আদ্র নামক অনুভূতির প্রেমে পড়েছিলো সে৷ ঈদের দিনে সকাল সকাল আদ্রদের বাড়িতে কাকি’কে ড্রেস দেখাতে গিয়ে নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় হয়েছিলো তার কিশোরী মন৷ ড্রেস সামলাতে সামলাতে গেট দিয়ে ডুকতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতেই কেও তার কোমর ধরে পড়ে যাওয়া থেকে বাচিয়ে নেয়৷ চিৎকার দেওয়ার কথা ভুলে চোখ বন্ধ করে বিরবিরিয়ে বলে চলেছিলো ‘আল্লাহ!আল্লাহ,বাচাও প্লিজ!হেল্প মি,পড়ে গেলে আমার সুন্দর ড্রেস টা নষ্ট হয়ে যাবে৷’

–‘নিজের চিন্তার নেই!ও আছে ওর এই মশারি মার্কা ড্রেস নিয়ে৷ ডাফার মেয়ে একটা,চোখ কি তোর সাথে থাকে না?হুট হাট ঝড়ের গতিতে এসে ধুম ধাম পড়ে যায় শুধু৷ তাও পড়বে তো পড়বে আমার উপর৷’

আদ্রের ধমকানি শুনে একচোখ খুলে নিজের অবস্থান বুজে আবারও চোখ বন্ধ করে দাত বের করে বলে,

–‘আদ্র ভাদ্র মুখ সামলে কথা বল৷ আজ ঈদের দিন ভেবে ভাবিস না আমি তোকে ছেড়ে দিবো৷ ছোলা মুরগীর মতো ছুলবো তোকে৷’

–‘তোর ছাড়াছাড়ির ধার কে ধারে?আপতত আমি তোকে ছেড়ে দিই….

আদ্র হাত আলগা করতেই নিনীতা ওকে জাপটে ধরে৷ আতরের সুন্দর সুভাস নাকে লাগতেই ফট করে চোখ খুলে নিজেকে আদ্রের একদম কাছে আবিষ্কার করে সে৷ আদ্র অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে চেয়ে আছে৷ সেই চোখে কিছু একটা ছিলো যা নিনীতা তখন বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারে৷ তার জন্য হাজার খানিক ভালোবাসা ছিলো ওই চোখে৷ নিনীতা অপ্রস্তুত ভাবে বলে,

–‘আদ্র হাতের বাধন ছাড়,আমি কাকি’র কাছে যাবো৷’

–‘আমার কাছে থাকলে কি হবে?’

–‘কিছু বললি?’ আদ্রের আস্তে বলা কথা নিনীতা শুনতে পায় নি৷ আদ্র ওকে ছেড়ে দিয়ে বলে,

–‘কিছু না!রাস্তা ছাড় আমি বাইরে যাবো৷’

সাদা কালার পাঞ্জাবি সাথে কালো জিন্স, মাথায় সাদা টুপি৷ নিনীতার মনের মাঝে কিছু একটা হয়৷ অনেকটা সময় তাকিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে সে৷ নিসন্দেহে তার সামনে একজন সুন্দর কিশোর দাঁড়িয়ে আছে৷ যাকে দেখলে প্রেমে পড়া যায়, ভালোবাসা যায়৷ এইভাবে তো আগে আদ্রকে নিয়ে ভাবে নি সে? তাহলে আদ্রের জন্য তার মনে ভালোবাসা আছে?

–‘হ্যাঁ প্রচুর ভালোবাসা আছে! এইবার কবুল টা বলে ফেল মেরি বহু রাণী৷’

পাশে থেকে আদ্রের এমন কথা শুনে ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসে নিনীতা৷ কোনো কিছু না ভেবেই গটগট করে তিনবার কবুল বলে হাফ ছাড়ে৷ আদ্র বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে নিনীতার কানের কাছে গিয়ে বলে,

–‘একবার বিয়ে করে লজ্জা শরমের মাথা কি খেয়ে ফেলেছিস নাকি? একটু লজ্জা নিয়ে আস্তে আস্তে কবুল বললে কি হতো তোর?আমি একটু ফিলিংস বুঝতাম বৌয়ের মুখের লজ্জামাখা কবুল কেমন লাগে৷ সব আশায় পানি ঢেলে দেওয়ার এতো তাড়া কেন তোর?’

আদ্রের কথা শুনে নিজের বোকামো বুঝতে পেরে আশেপাশের মানুষের হাসি মাখা মুখ দেখে লজ্জায় কুকড়ে যায় নিনীতা৷ হালকা করে আদ্রের পেটে গুতা দিতেই আদ্র বলে,

‘আউচ কবুল’

নিনীতা সহ সবাই হাসিতে ফেটে পড়ে৷ কাজী সাহেব পানের পিক ফেলে হে হে করে হেসে বলে,

–‘বাবা আরেকবার বলো,আউচ কবুল৷’

আদ্র নিনীতার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে গটগট করে কবুল বলে ফেলে৷ ফাজিল মেয়ে একটা বিয়ের দিনেও জ্বালাতে ছাড়ে না তাকে৷ বাসর ঘরে সব সুদে আসলে মিটিয়ে নিবে সে৷

‘আদ্র ইজ আদ্র! তার কথার খেলাপ করে না সে৷ নুনতা জাম বি রেডি বেব!’
চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে